নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তবু আজও স্বপ্ন দেখার নেই মানা ........

শহুরে আগন্তুক

নিজের কাছে নিজেই অচেনা রয়ে গেছি আজো । চেনার চেষ্টা করছি । মানুষ হিসেবে কেমন তা অন্যরাই ভাল বলতে পারবে । আমার কাছে আমি আমার মতোই । আশাবাদী , স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি । সুন্দর এবং শুদ্ধ অনুভূতিময় স্বপ্ন ।

শহুরে আগন্তুক › বিস্তারিত পোস্টঃ

কুঁড়িয়ে পাওয়া ফুল

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:১৮



রাত বাড়লেই শহীদ মিনারে হানা দেবে সিটি কর্পোরেশনের সব ঝাঁড়ুদারের দল । উপচে শ্রদ্ধার জঞ্জাল পরিষ্কার করতে আজ তাদের ডবল খাঁটুনি । পয়সাও হাতে দুটো বেশী আসবে বোধহয় । স্তুপ করে রাখা রাজনৈতিক ফুলের গাঁদির কিছু ফুল হয়তো কালকেও বিকোবার মতো তাজা থাকবে... ঝাঁড়ুদারের দল সেসব আলাদা করে তুলে দেবে ঝুঁড়ি নিয়ে আসা পথ কলিদের কাছে । গোলাপ প্রতি তিনটাকা, পুরুষ্ট কলির দাম একটু বেশী । রজনীগন্ধার দাম যা পাওয়া যায় । দূর্মূল্যের এ যুগে হাত পেতে নগদে যা পাওয়া যায় তাই লাভ । গ্লাডিওলাসের মতো দুর্বল কিছু বিজাতীয় ফুলও এখন শহীদ মিনারের বেদীতে দেখা যায়। অবশ্য ফুল তো ফুলই ... তার আবার জাত-পাত কিসের?

তবুও কেন যেন মনে হয় শহীদ মিনারের বেদীতে শিমুলই মানায় সবচেয়ে বেশী । কিন্তু শিমুলের বড়ো অকাল ইদানীং । সমগ্র নগরী হন্যে হয়ে ঘুরেও প্রেমিকরা নাকি এখন ভালোবেসে প্রেমিকার খোঁপায় গুঁজে দেওয়ার শিমুল আনতে পারে না ।

নষ্ট হয়ে যাওয়া গোলাপ, রজনীগন্ধা সহ যারা আর বিকোবে না, তাদের গাদা করে নিয়ে তোলা হবে শহীদ মিনারের গেটের সামনে দাড়ানো বিশাল ময়লার ট্রাকটাতে, যার পেছনের গহ্বরটা ব্ল্যাক হোলের কথা মনে করিয়ে দেয় আর বয়স - অবয়ব স্মরণ করায় কোন গম্ভীর, অভিজাত প্রাচীণ অশ্বত্থের । ব্ল্যাকহোল উপুড় করে দেয়া হবে শহরের বাইরের কোন ভাগাড়ে, সেখানে আবারও নামবে নতুন একদল ফুল কুড়ানি । যদি রাতের অন্ধকারে ঝাঁড়ুদারের চোখ এড়িয়ে যাওয়া কোন উচ্ছিষ্ট মেলে! .... দুর্গন্ধময় সে ভাগাড়ের পাশ দিয়ে রুমালে নাক চেপে দূরগামী বাসে করে যাওয়ার সময় একবার চটের বস্তা কাঁধে এক কৃষ্ণবর্ণ কিশোরীকে দেখেছিলাম পায়ের নিচের আবর্জনা হাতড়ে হাসিমুখে এক সূর্যমুখী ফুল কানে গুঁজে দিতে । আমার চোখে তাকে তখন দেবী ভেনাসের চেয়েও মোহনীয় লেগেছিলো । সূর্যমুখী ফুল নাকি সবসময় সূর্যের দিক মুখ করে পাঁপড়ি মেলে । কৃষ্ণাঙ্গী এ ভেনাসেরও নিশ্চয়ই কখনো কখনো সূর্য মুখী হয়ে জেগে উঠতে ইচ্ছে হয় ।

...... অবশ্য দেখেশুনে যা মনে হলো, এবছর পুষ্পবৃষ্টির পরিমান যেন একটু কমই । খুব শীঘ্রই কোন নির্বাচন নেই কিনা! ভাড়ায় জোগাড় করা দলবল নিয়ে অমুক নেতা - তমুক ভাইদের এবার বিশাল কালো ব্যানারে গৎবাঁধা শোকের বানী লিখে দামী পাঞ্জাবী গায়ে হাসিমুখে ক্যামেরার সামনে শোক জানাতে আসার প্রকোপো তাই অতোটা নেই এবার ।

থাক, এসব কথা না হয় আর নাই বললাম । তারচেয়ে বরং সাম্প্রতিকতম মুগ্ধতার কথা হোক । গিয়েছিলাম মাঝ দরিয়ায় । আকাশে পূর্ণ গোলাকার চাঁদ, যার আলো ফিনিক ফোঁটা উজ্জ্বল রুপালি নয়, হালকা লালচে । লালাভ গ্রহ মঙ্গলের দুই চাঁদ ফবোস আর ডিমোসও এমন রহস্যময় লাল আলো ছড়ায় কিনা কে জানে .... অস্পষ্ট জ্যোছনায় ঝিকমিক করে উঠছে নদীর পানি । বসন্তের রাতের বাতাস ছুঁয়ে যাচ্ছিলো চিবুক, অগোছালো চুল । দৃষ্টি খুব বেশী দূর যায় না, অন্ধকারে হারিয়ে যায়। মনে হচ্ছিলো, নদীর বুক চিরে আমরা বুঝি এগিয়ে চলেছি অনন্তকাল যাবত । আমাদের কোন অতীত নেই, নেই ভবিষৎ-ও। আছে কেবল বৃত্তের বুকে থাকা ছোট্ট কোন বিন্দুর মতো বর্তমানে অবস্থান .... বেঁচে থাকার এমন মুহূর্তগুলোতে কেন যেন নিজেকে একই সাথে খুব তৃপ্ত আর দুঃখী মনে হয় । আমরা আনন্দ নিয়ে বুকের খুব গভীরের হাহাকারের কোন এক জায়গা থেকে বিচ্ছেদের গান গাইছিলাম .... এখনও শব্দ আর সুরের আবেদন আমাদের কাছে নষ্ট হয়ে যায় নি ।

হঠাৎ কানে আসলো তরুন বাবা তার আঙ্গুল ধরে দাড়িয়ে থাকা দেবশিশুকে আকাশের দিকে ইশারা করে বলছেন - " বাবা দেখো, চাঁদ মামা তোমার পেছন পেছন আসছে । "

ছেলে অবাক বিস্ময়ে মুখ তুলে তাকিয়ে রয় রাতের আকাশের চাঁদের দিকে । হ্যা, চাঁদটা তো আসলেই তার সাথে সাথে এগোচ্ছে .. তারপর অন্য কোন জগতের সারল্যমাখা রিনরিনে গলায় সে চাঁদকে শুধোয় - " চাঁদ মামা, তুমি আমার পেছন পেছন কেন আসো? "

প্রশ্নের জবাব আমার জানা নেই । আমরা, মানবজাতি, নিজেরা সারাজীবন কিসের পেছন ছুটে চলি - তাই তো জানি না, বহুদূরের ঐ চাঁদের পথ চলার খবর জানবো কি করে??

মন্তব্য ২০ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (২০) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৪০

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:০৩

শহুরে আগন্তুক বলেছেন: ধন্যবাদ :)

২| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:২৫

সুমন কর বলেছেন: দুর্গন্ধময় সে ভাগাড়ের পাশ দিয়ে রুমালে নাক চেপে দূরগামী বাসে করে যাওয়ার সময় একবার চটের বস্তা কাঁধে এক কৃষ্ণবর্ণ কিশোরীকে দেখেছিলাম পায়ের নিচের আবর্জনা হাতড়ে হাসিমুখে এক সূর্যমুখী ফুল কানে গুঁজে দিতে । আমার চোখে তাকে তখন দেবী ভেনাসের চেয়েও মোহনীয় লেগেছিলো । -- লেখা ভালো লেগেছে।

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:০৩

শহুরে আগন্তুক বলেছেন: ধন্যবাদ :)

৩| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১:৪৬

আব্দুল্লাহ তুহিন বলেছেন: ভালো লাগা রেখে গেলাম, ভ্রাতা।

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:০৩

শহুরে আগন্তুক বলেছেন: ভালো লাগা নিয়েও যাবেন ভ্রাতা :)

৪| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ২:২৬

প্রবাসী পাঠক বলেছেন: চমৎকার লিখেছেন। আমরা মনে হয় দিনে দিনে শহীদ বেদিতে ফুল দেয়ার মাঝেই নিজেদের আঁটকে ফেলেছি। ভাষা আন্দোলনের শিক্ষা আমাদের কাছে মনে হয় মূল্যহীন।

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:০৫

শহুরে আগন্তুক বলেছেন: হয়তো সময়টাই এমন চায় ।

৫| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:০০

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:



আপনার ভাবনার সাথে সহমত।

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:০৫

শহুরে আগন্তুক বলেছেন: ধন্যবাদ !

৬| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:৩৪

উল্টা দূরবীন বলেছেন: খুব সুন্দর লিখেছেন। ভালো লাগা রেখে গেলাম।

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:০৫

শহুরে আগন্তুক বলেছেন: ধন্যবাদ !

৭| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:১২

মৃদুল শ্রাবন বলেছেন: আমরা আসলেই কিসের পিছে ছুটে চলছি এই প্রশ্নের কোন উত্তর নেই।

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:০৬

শহুরে আগন্তুক বলেছেন: কখনও জানলে জানাবেন তো ...

৮| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:০৯

রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: বেশ ভালো লাগলো। একুশের শুভেচ্ছা।

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:০৬

শহুরে আগন্তুক বলেছেন: শুভেচ্ছা আপনাকেও .....

৯| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:১৪

পুলহ বলেছেন: "ফুল তো ফুলই ... তার আবার জাত-পাত কিসের?"
"কৃষ্ণাঙ্গী এ ভেনাসেরও নিশ্চয়ই কখনো কখনো সূর্য মুখী হয়ে জেগে উঠতে ইচ্ছে হয়"
"প্রশ্নের জবাব আমার জানা নেই । আমরা, মানবজাতি, নিজেরা সারাজীবন কিসের পেছন ছুটে চলি - তাই তো জানি না, বহুদূরের ঐ চাঁদের পথ চলার খবর জানবো কি করে??"

ব্যতিক্রম একটা লেখা, সত্যি খুব ভালো লাগলো। পড়ে আমার মনে হয়েছে- লেখকের দেখার চোখ আর মনের চোখ- দু'টোর দৃষ্টিই বড় তীক্ষ্ণ। সাথে সেটাকে গোছানো আর পরিপাটি ভাষায় উপস্থাপনা করবার দক্ষতা সংক্ষিপ্ত পোস্টটাকে একটা 'কোয়ালিটি পোস্ট' বানিয়ে ছেড়েছে...

সব থেকে বড় কথা, আপনার দরিয়া ভ্রমনের মত একটা ভ্রমন করতে যখন আমার নিজেরো ইচ্ছে হতে লাগলো- তখনই বুঝলাম- লেখক আসলে কতটা সফল...

শুভকামনা :)

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:০৭

শহুরে আগন্তুক বলেছেন: চমৎকার উৎসাহব্যঞ্জক মন্তব্যটা পড়ে অনেক বেশীই ভালো লাগলো ... দরিয়ায় ভ্রমণ হয়েই যাক :)

১০| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:০৪

দিশেহারা রাজপুত্র বলেছেন:

বেশ তীক্ষ্ণ উপস্থাপন। ২১ পরবর্তী আমাদের অবহেলা ফুটে উঠেছে। সাথে দারুণ লেখনী।

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:০৮

শহুরে আগন্তুক বলেছেন: ধন্যবাদ রাজপুত্র ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.