নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তবু আজও স্বপ্ন দেখার নেই মানা ........

শহুরে আগন্তুক

নিজের কাছে নিজেই অচেনা রয়ে গেছি আজো । চেনার চেষ্টা করছি । মানুষ হিসেবে কেমন তা অন্যরাই ভাল বলতে পারবে । আমার কাছে আমি আমার মতোই । আশাবাদী , স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি । সুন্দর এবং শুদ্ধ অনুভূতিময় স্বপ্ন ।

শহুরে আগন্তুক › বিস্তারিত পোস্টঃ

কিছু প্রিয় বইয়ের রিভিউ ১০ঃ The Little Prince

১৩ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১০:৫৭



বইয়ের নাম: The Little Prince
লেখক: Antoine de Saint-Exupéry

বলা হয় যে, ছোট রাজপুত্রের গল্প জীবনে পড়া উচিত কমপক্ষে তিনবার - প্রথম শৈশবে, তারপর যৌবণে আর সব শেষে প্রৌঢ়ত্বে । কারণ তিন বয়সে এ গল্পের আবেদন তিন রকম । নিজের মনকে আবার চিনতে পারার আয়নার মতো ছোট রাজপুত্তুরের এ গল্প ভাষান্তরিত হয়েছে পৃথিবীর ২৫০ টিরও বেশি ভাষায় যা একে বানিয়েছে বিশ্বের সর্বকালের সবচেয়ে বেশী ভাষান্তরিত গ্রন্থের তালিকায় চতুর্থ । আর ১৯৪৩ সালে প্রকাশিত ফরাসি সাহিত্য তথা বিশ্ব সাহিত্যের এ অমূল্য রত্ন এখন পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে ১৪০ মিলিয়ন কপিরও বেশী, যা একে করেছে সর্বকালের বেস্ট সেলার । প্রতি বছর সারা বিশ্বে গড়ে বিক্রি হয় ২ মিলিয়ন কপি ।

..... আমাদের মতো বড়দের জন্যেই ছোটদের এ বই, যারা সবকিছুর বিশেষত্ব নির্ধারণ করে সংখ্যা দিয়ে, মাত্র যেমন করলাম আমি নিজেই ।

ছোট্ট এক গ্রহে বাস করতো ছোট রাজপুত্তুর । এইটুকুন সেই গ্রহে একমাত্র মানুষ সে, আর আছে তিনটা ছোট ছোট আগ্নেয়গিরি যার একটা আবার শান্ত হয়ে গেছে বহু আগেই । বৈমানিক ছোট্ট সে গ্রহের নাম সংখ্যায় জানালেন B - 612. গ্রহটার যে নাম আছেই এমন নয়, ওটা তার বানিয়েই দেওয়া । কারণ বড়রা সংখ্যাকে খুব ভালোবাসে, হৃদয়ের অনুভূতিদের চেয়েও । তাই তাদের ছোট রাজপুত্তুরের কথা বিশ্বাস করাতে হলে সে যেখান থেকে এসেছে তার নাম কোন একটা সংখ্যা দিয়েই বলা ভালো । নয়তো কেই-বা বিশ্বাস করবে চমৎকার এক গোলাপের উপর অভিমান করেই কিনা রাজপুত্র তার গ্রহ ফেলে পাখির ঝাঁকের সাথে উড়ে বেড়িয়ে পড়েছিলো বাইরে?

ওদিকে ধুঁ ধুঁ মরুভূমি সাহারার মাঝে বিকল হয়ে গিয়েছিলো এক বৈমানিকের উড়োজাহাজ । সাথের খাবার, পানি ফুরিয়ে যাবে কয়েকদিন পরেই। প্লেনটা ঠিক না হলে তার বেঁচে থাকার কোন সম্ভবনাই নেই । প্রখর রোদে প্লেনটা ঠিক করতে থাকার সময় একদিন বৈমানিক শুনতে পেলেন ছোট এক ছেলের কন্ঠস্বর! অথচ আশেপাশের শত শত মাইলের মধ্যেও কোন মানুষ নেই । অবাক বিস্ময়ে বৈমানিক দেখেন মরুভূমির মাঝখানে রাজকীয় পোশাক গায়ে দাড়িয়ে ছোট্ট এক বাচ্চা, যে বলছে তাকে একটা ভেঁড়ার ছবি এঁকে দিতে ।

মানুষ আসলে যখন খুব বেশী অবাক হয়ে যায় তখন আর যুক্তি কাজ করে না । মৃত্যুর সামনে দাড়িয়ে, জনমানবহীন মরুভূমিতে বসে বৈমানিক একটা কাগজে একটা ভেড়ার ছবি এঁকে দিলেন । কিন্তু ওটা রাজপুত্রের পছন্দ হয় না, কারণ ভেড়াটার শিং ছিলো । খুব ভালো আঁকতে পারতেন না বৈমানিক, ছোট বেলাতেই বড়রা তার ছবি আঁকার খাতা কলম তুলে রেখে হাতে ধরিয়ে দিয়েছিলো ব্যাকরণ আর গনিতের বই । কাজেই পরের ভেড়াটা হয় একদম থুড়থুড়ে বুড়ো । রাজপুত্র বলে তার এমন একটা ভেড়া চাই যেটা অনেকদিন বাঁচবে । তখন তিনি এঁকে দিন একটা চার কোনা বাক্স, বলেন ভেড়াটা আছে এর ভিতরে । রাজপুত্র বলে ঠিক এমনটাই সে চেয়েছিলো । বাক্সটাতেই ভেড়াটা থাকতে হবে, তারজন্যে আলাদা কোন ঘর বানাতে হবে না । এমনিতেই তার গ্রহটা একদমই ছোট ।

এভাবেই বৈমানিকের সাথে পরিচয় হয় ছোট রাজপুত্রের । ধীরে ধীরে একটু একটু করে রাজপুত্র তাকে বলে তার গ্রহের কথা, হঠাৎ জন্মানো এক গোলাপ ফুলের কথা যে নিজেকে দাবী করেছিলো জগতের সবচেয়ে সুন্দর গোলাপ বলে । নিজের রূপের গড়িমায় তার এতোই দেমাগ যে তাকে রাজপুত্র ভালোবাসলেও অভিমানে ছেড়ে চলে এসেছিলো । তারপর প্রজাবিহীন রাজার গ্রহ, দিনরাত তারার হিসেব করে বড় লোক হতে থাকা ব্যবসায়ীর গ্রহ যে জীবনে কখনো ভালোবাসেনি, মদ খাওয়ার লজ্জা ভুলতে মদ খেয়ে বেঁহুশ হয়ে থাকা মাতালের গ্রহ, এক ভৌগলিকের গ্রহ যার কাছে ফুলের চেয়ে পাথরের মূল্যই বেশী - সহ কত গ্রহই দেখলো সে!

ঘুরতে ঘুরতে একদিন সে চলে আসে পৃথিবীতে । নামে সাহারার বুকে । চারপাশে কোথাও কোন মানুষ নেই । বালির বুক থেকে ফণা তোলা বিষাক্ত সাপকে সে তার নিঃসঙ্গতার কথা জানায় । সাপ তাকে বলে যে মানুষের মাঝেও সে নিঃসঙ্গ বোধ করবে । দেখা হয় শেয়ালের সাথে যে ভালোবাসলে কাঁদতে হয় জেনেও রাজপুত্রের পোষ মানে, তাকে ভালোবাসে ।

মন খারাপ হলে রাজপুত্র সূর্যাস্ত দেখতো । তার গ্রহটা এতোই ছোট যে সূর্যোদয় দেখে চেয়ারটা একটু সরিয়ে বসলেই আবার সূর্যাস্ত দেখা যেতো । একদিন সে বেয়াল্লিশবার সূর্যাস্ত দেখেছিলো । " কেন? কি ঘটেছিলো সেদিন?? " - বৈমানিকের এসব প্রশ্নের জবাব রাজপুত্র দেয় না । সে গল্প করে, তার ফেলে আসা গ্রহের গল্প ; যেখানে কাঁটা নিয়ে ফুঁটে আছে সুন্দরতম এক গোলাপ, নিয়মিত যেখানকার মাটি থেকে থেকে বাওবাবের বীজ তুলে না ফেললে গ্রহটাই নষ্ট হয়ে যাবে পুরোপুরি ।

রাজপুত্র একসময় বুঝতে পারে গোলাপকে তার ছেড়ে আসা ঠিক হয় নি । কিন্তু তার কি দোষ? সে তো তখনও ভালোবাসতে শেখে নি ..... এখন সে ভালেবাসতে শিখেছে, গোলাপও তাকে ভালোবাসতো - তাও সে বোঝে । তাই সে ঠিক করে আবার ফিরে যাবে নিজের গ্রহে । কিন্তু কিভাবে? পাখির ঝাঁক তো নেই । নেই পৃথিবীতে বেশীদিন বেঁচে থাকার মতো রসদ । আবার ওদিকে বৈমানিকও যে তাকে ভালোবেসে ফেলেছেন!

...... ছোট রাজপুত্তুরের এ গল্প সব বয়সের, সব দেশের, সব মানুষের । কারণ এ মানুষের হৃদয়ের গল্প যাতে ধীরে ধীরে মরচে ধরিয়ে দেয় বাস্তবতার অভ্যস্ততা । ছোট রাজপুত্র তার ভাবনার সারল্য দিয়ে, চিন্তার ও মনের পবিত্রতা, সৌন্দর্যবোধ দিয়ে সবাইকে মুগ্ধ করবে, ভাবাবে । এমন কি ছোট রাজপুত্র আপনার চিন্তাকে বদলে দেওয়ার ক্ষমতাও রাখে ।

হ্যাপি রিডিং :)

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১১:০১

বিজন রয় বলেছেন: ভাল লিখেছেন।
++++

১৩ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১১:০৮

শহুরে আগন্তুক বলেছেন: বইটা অসাধারণ বলেই ভালো হয়েছে ।

২| ১৩ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১১:৫১

সায়ান তানভি বলেছেন: দারুন রিভিউ। আফসোস বইটা পড়া হয় নি।

৩| ১৪ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ৩:৪৩

সোজোন বাদিয়া বলেছেন: পরিচয় করিয়ে দেবা জন্য ধন্যবাদ। বইটা পড়ব পড়ব করে পড়া হয় নি। অবশ্যই পড়ব, বাচ্চাদেরও পড়াব। ভাল থাকুন।

৪| ১৪ ই মার্চ, ২০১৬ দুপুর ২:১২

হাসান মাহবুব বলেছেন: রিভিউ লোভ জাগানিয়া। বাংলায় ভালো অনুবাদ কে করেছে?

৫| ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ৮:৫১

খেপাটে বলেছেন: অসাধারন বইটা

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.