নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তবু আজও স্বপ্ন দেখার নেই মানা ........

শহুরে আগন্তুক

নিজের কাছে নিজেই অচেনা রয়ে গেছি আজো । চেনার চেষ্টা করছি । মানুষ হিসেবে কেমন তা অন্যরাই ভাল বলতে পারবে । আমার কাছে আমি আমার মতোই । আশাবাদী , স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি । সুন্দর এবং শুদ্ধ অনুভূতিময় স্বপ্ন ।

শহুরে আগন্তুক › বিস্তারিত পোস্টঃ

কিছু প্রিয় বইয়ের রিভিউ ১১ঃ সংশপ্তক

২১ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১০:৫৬



" সংশপ্তক " শব্দটার অর্থ জানা ছিলো না । অন্তর্জালে খোঁজ নিয়ে জানা গেলো। নির্ভীক।

আজ শেষ পাতাটুকু উল্টিয়ে রেখে মনে হলো বইটার নাম এছাড়া বুঝি ভিন্ন কিছু হওয়ার ছিলো না।

সেই সাথে একই সাথে মনে প্রশ্ন জাগে নির্ভীক আসলে কে?

মালু? কথায় কথায় ছোট বয়সে সবার জন্যে চোখের পানি ফেলা মালু, যে জীবনের নানা ঘাত প্রতিঘাতের মুখোমুখি হয়ে দাড়ায় এক ফিনিক্স পাখির প্রতিরুপ, যে আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে থাকা নিজের ভগ্নাবশেষ থেকে আবারও মহাশূণ্যে ডানা মেলে। একবার, দুইবার... বারবার! মালুর জীবনের এই বিনির্মাণ, স্বপ্ন, স্বপ্নভঙ্গ, সকল বাধাবিঘ্ন, প্রতিকূলতার উজানে দাড়িয়ে সংগ্রাম করে এগিয়ে চলার এই গল্প কি শাশ্বত মানবজীবনেরই আখ্যান নয়?

মেঝো ভাই আর সেকান্দর মাস্টার? অকারণে সর্বস্ব ত্যাগ করে কী এক ঘোর লাগা চোখে যারা ছুটে বেড়ায় সর্বত্র? তারা রুখে দাড়াতে জানে অন্যায়ের, আবার আপ্রাণে এগিয়ে আসতে জানে আর্তের। চরিত্রে, প্রেক্ষাপটে, জীবনের গন্ডি আর বাস্তবতায় দুজনের মাঝে অমিল অনেক, কিন্তু কোথায় যেন তারা আসলে একই মানুষ। সংশপ্তক মানুষের একই মনেরই দুই পৃথক অংশের প্রতিরূপ। সন্ন্যাস আর সংগ্রামের প্রতিচ্ছবি।

কিংবা রাবু? একটু একটু করে ক্ষয়ে যেতে যেতেও যে কখনো জ্বলতে জানে এক মুঠো জোনাকের পেলব আভার মতো, কিংবা কখনো মশালের আগুন হয়ে; যখন যেমন দরকার ... রাবু যেন ম্রীয়মান হয়েও সরব, ক্ষুরধার হয়েও কোমল। প্রতিকূলতার মাঝে সে কখনো কখনো নতজানু হলেও এগিয়ে গেছে আপন মনে, মুখ থুবড়ে পড়ে নি।

বলা উচিত হুরমতী বুয়া, লেকুদের কথাও.. জীবন এদের কাছে কখনও পুষ্পিত সৌরভে ধরা দেয় নি, বরং এগিয়ে এসেছে বিকট ক্লেদ, ক্ষুধা আর অত্যাচারির রূপে। এরাও অবলীলায় জীবনের সাথে খাপ খাইয়ে নিয়েছে জীবনের মতো করেই। লেকু তাই নির্মম ভাবে বউকে পেটায় জান্তব বোবা রাগে, আবার তাকে জড়িয়ে ধরে অনুতপ্ত হয়, পরমুহূর্তে তা ভুলেও যায়। হুরমতী ভরা মজলিশে ব্যভিচারের একপেষে শাস্তি মাথা পেতে নেয় পরম অবহেলায়, কিন্তু দ্বিচারিণী সমাজের চোখ কলুষ যে জীবন, তা থেকে সে বেরিয়ে আসে না। ভেসে বেড়ায় শিকড়বিহীন জলজের মতো।

এরা সবাই মচকেছে, কিন্তু কখনো ভাঙ্গে নি। মানবজনমের কাঙ্খিত প্রতিরূপ এমনই।

খলনায়ক রমজানও তো আক্ষরিক অর্থ বিবেচনায় সংশপ্তক। ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎ শক্তি হয়ে ওঠা রমজানের অপ্রতিরোধ্যতার কাছে অনেক শুভশক্তিই তো পরাজিত হয়।

অনুভব করি সংশপ্তক একক কোন চরিত্র নয়, সবাই। সামষ্টিক এবং একক, দুইভাবেই।

...... তবুও কিছু কথা বলতেই হয়। শহীদুল্লা কায়সারের সংশপ্তক যেন কিছুটা শহুরে মানুষের চোখে দেখা গ্রামের আখ্যান। ঔপন্যাসিক চরিত্রগুলোর সাথেও সুবিচার করেন নি অনেকাংশেই। তাদের জীবনের পূর্ণাঙ্গ চিত্র তিনি আমাদের দেন নি, দিয়েছেন বিক্ষিপ্ত ছাড়া ছাড়া ছবি। তাই হুট করে বইয়ের পাতা থেকে সুপরিচিত কোন চরিত্রকে সরিয়ে দিয়েছেন এক লাইনেই, ধীর মন্থর গতিতে এগোনো কাহিনী পরম্পরাকে কয়েক পাতার ব্যবধানে বেখাপ্পা ভাবে টেনে নিয়ে গেছেন দীর্ঘপথ। অস্পষ্ট সে পথে হেঁটে পাঠক কিছুটা খেই হারাবেন। বোধকরি কিছুটা বিরক্তও হবেন। পাঠককে দোষ দেয় যায় না, কারণ এতো বৃহৎ প্রেক্ষাপটের উপন্যাসে এমন সুর কেটে দেওয়া সংক্ষিপ্ততা বিরক্তির উদ্রেক করারই কথা। তবে এমনটা ঘটার দায় যতোটা লেখকের, তারচেয়ে বেশি সম্ভবত প্রকাশকের। এর আঁচ পাওয়া যায় শুরুতে লেখকের সংক্ষিপ্ত ভুমিকাতে। তিনি সেখানে পরোক্ষভাবে অনুযোগ করেছেন বড় উপন্যাস ছাপাতে প্রকাশকদের অনীহার কথা। সেজন্যেই হয়তো মাঝেমাঝেই ছন্দপতনের সুর।

তাই কিছুটা অতৃপ্তি নিয়েই আমার কাছে শেষ হলো বাংলা সাহিত্যে ধ্রুপদী সৃষ্টির মর্যাদা পাওয়া এ উপন্যাস ।

তারপরও অতোটুকু খুঁত নিয়েও শহীদুল্লা কায়সারের সৃষ্টি " সংশপ্তক " কালোত্তীর্ন, অবশ্যপাঠ্য।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১১:৫৬

রাজীব নুর বলেছেন: পড়েছি এবং নাটকও দেখেছি।

২২ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ৯:৫৯

শহুরে আগন্তুক বলেছেন: আপনার বয়সী সকলেই মনে হয় বিটিভিতে সংশপ্তকের নাটক দেখেছে।

২| ২২ শে আগস্ট, ২০২০ দুপুর ১:২৫

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: সংশপ্তক সদ্য স্বাধীন পূর্ববঙ্গের (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) হাটি হাটি পা পা করে অগ্রসর হয়ে চলা বাংলা সাহিত্যের নিদর্শন, সেদিক থেকে উপন্যাসটির ঐতিহাসিক তাৎপর্যও অনেক। সেসময়কার লেখকদের কাজ আমাদের জেনারেশন খুব একটা নাড়াচাড়া করেন না। আপনি করেছেন, পড়েছেন - এই মর্মে আপনাকে সাধুবাদ জানাই। পাঠ প্রতিক্রিয়া ভালো লেগেছে। শুভকামনা।

২২ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ৯:৫৬

শহুরে আগন্তুক বলেছেন: ধন্যবাদ।
হ্যাপি রিডিং!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.