নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তবু আজও স্বপ্ন দেখার নেই মানা ........

শহুরে আগন্তুক

নিজের কাছে নিজেই অচেনা রয়ে গেছি আজো । চেনার চেষ্টা করছি । মানুষ হিসেবে কেমন তা অন্যরাই ভাল বলতে পারবে । আমার কাছে আমি আমার মতোই । আশাবাদী , স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি । সুন্দর এবং শুদ্ধ অনুভূতিময় স্বপ্ন ।

শহুরে আগন্তুক › বিস্তারিত পোস্টঃ

নীল অপরাজিতা রাত

০৮ ই আগস্ট, ২০২১ রাত ৩:১০

অন্ধকার, কিন্তু আঁধার নয়।
মাঝরাতে ঘুম ভেঙে একবার রক্তজমাট করা ভয় পেয়েছিলাম কৈশোরে। সে রাতে ঘুমভাঙ্গা চোখে ঘরের ভেতরের আবছা আলোয় চোখে পড়লো নীরব মূর্তি হয়ে সাদা কাপড় জড়িয়ে সম্মোহিত হয়ে বসে আছে কেউ। শরীরের প্রতিটা রোমকূপে ভয়ের শীতল স্রোত বয়ে যায়। মেঘ সরে গিয়ে চাদের আলো জোরালো হতে হতে অন্ধকারে চোখও ধাতস্থ হয়ে আসে কিছুটা। অশরীরীর বদলে ঘরের গোবেচারা সাদা তোয়ালেটা চেয়ারের উপর রাখা দেখে আমি যুগপৎ আশ্বস্ত এবং হতাশ হই।

তারপর তো বয়স বাড়লো অনেক। এখনও এমন মাঝ রাতে ঘুম ভাঙে, কিংবা কোন রাতে ঘুম আসেই না। নিজের ঘরের ভেতরটাকে খুব আর্দ্র মনে হয় তখন। নিঃশ্বাস বুক ভরে নেয়া যায় না ঠিক, ফুসফুসের অসহযোগিতায়। অনির্বাণ তখন আড়মোড়া ভাঙ্গা বেদনায় শোনায় গান।
.... সময়ের ঘষা লেগে শিলালিপি যায় ক্ষয়ে ক্ষয়ে
আমি একা বসে থাকি প্রেমিকের অপেক্ষা হয়ে,
বাতাসে প্রবাদ আর আকাশে আদিম ধ্রুবতারা....

অর্থহীণ, শ্রুতিমধুর গান। বাতাসে প্রবাদ আবার কী? পৃথিবীর আকাশে নবীণ ধ্রুবতারা বলেও কিছু আছে নাকি?

শেলফে মোঁপাসা, গোর্কি, মার্কেজ, তারাশঙ্করের মাঝে হুমায়ূণ যেন কিছুটা জুবুথুবু হয়ে থাকেন। দুই মলাটে ছোট গল্প থাকা বইটা হাতে নিয়ে পাতা উল্টাই। খোলা বারান্দায় বসে বসে নীল আলোয় ঘুরে ফিরে একই গল্পগুলো বারবার পড়া হয় - একজন ক্রীতদাস, একটি নীল বোতাম, নিমধ্যমা.... বন্দীশালার ভেতর হু হু করে মৃত্যু হয়ে বন্যার পানি ঢোকার দৃশ্যের সামনে প্রিন্সেস তারাকনোভা যে অপার বিষাদের প্রতিমূর্তি হয়ে বসে থাকেন নিশ্চল হয়ে, তা বুকের খুব গভীরে রাতের নীরবতার সাথে মিলেমিশে চাপা এক হাহাকার তৈরি করে দিয়ে যায়। নিজের ব্যাপারে স্থির সিদ্ধান্তে আসতে হয় - আমি বেশ সুখের অসুখে ভোগা দুঃখ বিলাসী মানুষ।

রঞ্জুর কথা মনে পড়ে। স্যাঁতস্যাঁতে নোনাধরা দেয়ালের ঘরে শুয়ে নির্ঘুম রাতগুলোতে একটা নীল বোতামের মাঝে যে খুঁজে পেয়েছিলো নীল অপরাজিতা ফুলের সুবাস। ভুল করে পাওয়া একটা নীল বোতামের থেকে বেশী কিছুই যে তার পাওয়ার যোগ্যতা ছিলো না বলে তার যে নীরব স্বীকারোক্তি, তার মুখোমুখি হয়ে আমি প্রতিবারই মনে মনে ভাবি জীবন এমন না হয়ে যদি অন্য রকম হতো? কেমন হতো তবে? সমান্তরালে বয়ে চলে ভিন্ন কোন বাস্তবতায় হয়তো রঞ্জু আর এষা পদ্মার বুকে জ্যোছনার রাতে বসে বসে চাঁদের আলো দেখে। সে বাস্তবের খোঁজ রঞ্জুও নিশ্চয়ই পেয়েছিলো, নিজের কল্পনায়।

আবার একটু পরেই ভাবি নীল অপরাজিতা ফুলের কি আদৌ কোন গন্ধ আছে? শৈশবের স্মৃতি হাতড়াই জবাবের খোঁজে.... চিন্তা আজন্ম লালন করা উন্নাসিকতায় জানায় এসব চন্দ্র, সূর্য, জ্যোছনা, নদী-নালা কেন্দ্রিক হুমায়ূনীয় আবেগ বড়ই গতানুগতিক, একঘেয়ে, গৃহস্থালি অমেরুদণ্ডী বাঙালীপনা। জাঁদরেল হেমিংওয়ে এসব নাটুকে আবেগী লেখা ছুঁড়ে ফেলে বলতেন - অসহ্য.. অসহ্য!

রাতের মৃদু হাওয়ায় সেসব প্রশ্নের জবাব খুঁজি। জবাব মেলে না। মাথায় ভাসে কবেকার কোন রাতের ট্রেনের অন্ধকার চিঁড়ে ছুটে চলার ছন্দময় শব্দ। সকাল হলেই আমি অচেনা এক স্টেশনে নামবো। আমার কাঙ্খিত গন্তব্যে। জীবনে সুনিশ্চিত কোন গন্তব্য থাকার চেয়ে বেশী কিছু মানুষের আর কী-ইবা চাওয়ার থাকতে পারে!

অনির্বাণের পর বব ডিলান প্রশ্ন রাখেন -
.. and how many years must a mountain exist
Before it is washed to the sea?
And how many years can some people exist
Before they're allowed to be free?
Yes, and how many times can a man turn his head
And pretend that he just doesn't see?
The answer, my friend, is blowin' in the wind
The answer is blowin' in the wind...

একসময় মসজিদে আযান দেয়া শুরু হয়। চারপাশ থেকে ভেসে আসে আহ্বাণ, নিশ্চয়ই ঘুমের থেকে নামাজ উত্তম বলে ঘোষণা। আকাশ কালিগোলা অন্ধকার থেকে আলোর আভায় আসতে থাকে। বাঁদুড়েরা ডানা ঝাপটে চলে যায়। আমার বিবেচনায় আকাশের কাছাকাছি নিজের ছোট্ট যে ঘরটা আমি বানিয়েছে নিজের জন্যে, তার বারান্দায় বসে বাইরের গাঢ় ধূসর আকাশে তাকিয়ে বিচ্ছিন্ন আচ্ছন্নতায় ভেবে চলি, নীল অপরাজিতা ফুলের ঘ্রাণ কি পেয়েছিলাম?

সেসব কথা থাকুক। বরং নতুন দিনটা ভালো যাক।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই আগস্ট, ২০২১ রাত ৩:২১

ফাহিমা আক্তার বলেছেন: Time and tide waits for none.it goes on and on.

০৮ ই আগস্ট, ২০২১ সকাল ১০:১৩

শহুরে আগন্তুক বলেছেন: তেমনটাই দেখছি।

২| ০৮ ই আগস্ট, ২০২১ সকাল ৮:৩০

শেরজা তপন বলেছেন: নিজের সাথে নিজেকে বলা আত্মকথন!
আগে পরের বিষয়বস্তুগুলো না জানলে বুঝতে কষ্ট হয়।

০৮ ই আগস্ট, ২০২১ সকাল ১০:১৩

শহুরে আগন্তুক বলেছেন: ধন্যবাদ শেরজা তপন।

৩| ১৪ ই আগস্ট, ২০২২ রাত ৯:৩৮

মনিরা সুলতানা বলেছেন: পেয়েছিলেন ঘ্রাণ ?

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ দুপুর ১:৪৮

শহুরে আগন্তুক বলেছেন: ভুলে গেছি ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.