নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তবু আজও স্বপ্ন দেখার নেই মানা ........

শহুরে আগন্তুক

নিজের কাছে নিজেই অচেনা রয়ে গেছি আজো । চেনার চেষ্টা করছি । মানুষ হিসেবে কেমন তা অন্যরাই ভাল বলতে পারবে । আমার কাছে আমি আমার মতোই । আশাবাদী , স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি । সুন্দর এবং শুদ্ধ অনুভূতিময় স্বপ্ন ।

শহুরে আগন্তুক › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইদানীং জীবনযাপন

১৪ ই আগস্ট, ২০২২ সকাল ১০:৫১

ছুটির দিনগুলোতে বিকেলবেলা আমার সহধর্মিণী আর আমি প্রায়ই হাঁটতে বের হই। পৈতৃকসূত্রে আমার এবং আমার সূত্রে তার- দুজনেরই বসবাস নারায়ণগঞ্জের না শহর, না গ্রাম এক এলাকায়, যাকে আবার ঠিক মফস্বলও বলা যায় না পুরোপুরিভাবে। ঘোরার জায়গা বলতে হাঁটার দূরত্বে শীতলক্ষ্যা নদী, ২ টাকা করে পারানিতে যার অপর পাড়ে গেলে সাদা বালু ফেলা বিস্তীর্ণ এক খোলা জায়গা আছে - যার নাম আমরা দিয়েছি সেন্টমার্টিন। এলাকার বাজারগুলোতেও আমরা কখনো কখনো ঘুরতে যাই। লাউ, কলমির ডগা উঁকি দিয়ে থাকা চটের ব্যাগ হাতে মানুষের ছোটাছুটি, প্রাণচাঞ্চল্যের অংশ হতে ভালোই লাগে। তখন অকারণ কেনাকাটাও করা হয় বেশ।

এই অকারণ কেনাকাটার জন্যে আমার স্ত্রী খুঁজে খুঁজে বের করেন বয়ঃবৃদ্ধ আনাজপাতি বিক্রেতাদের। এদের সাথে সে কখনো দামাদামি করে না। নিজের অস্তিত্ব নিয়ে সংকুচিত হয়ে থাকা এ মানুষগুলোর অধিকাংশেরই চোখে থাকে ভারী ঘোলাটে চশমা যা তার ছানি পড়তে থাকা দৃষ্টিকে প্রসারিত করে, নাকি ঘোলাটে করে তা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। তাদের কেউ হয়তো নিয়ে বসেছেন ছোট এক ঝুঁড়ি বাতাবি লেবু, কিছু ধনে পাতা, কয়েক কেজি আমড়া, পেয়ারা, নয়তো এক/দুই কাদি ছোট ছোট চম্পা কলা নিয়ে।

নিজের পসরা নিয়ে তারা বাজারের এক কোনে পড়ে থাকেন। অন্য বড় বিক্রেতাদের মতো তারা কখনোই হাঁকডাক করে ক্রেতা ডাকেন না। জীবনযুদ্ধে তারা যেন এমন সৈনিক, যারা বহু আগের কোন যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাণ দিয়েছেন; পথ ভুলে পেছনে রয়ে গেছে কেবল তাদের ছায়া।

আজ যাকে পাওয়া গেলো, তার বয়স হবে আশিরও বেশী। শীর্ণ শরীর, ভাঙা লম্বাটে মুখ, রগ ওঠা হাত। তার থেকে নেয়া গেলো এক কেজি আমড়া আর ছোট একটা লাউ। তিনি দাম চাইলেন মাত্র নব্বই টাকা। তার কাছে একটা দাড়িপাল্লাও নেই, মাপতে হলো পাশের দোকানে।

কোটি কোটি টাকার ফ্ল্যাট, বিলাসবহুল গাড়ি কেনার ঋণের মহাজনী করতে করতে সংখ্যার সাথে আমার কিছুটা হৃদ্যতা আছে। মনে মনে হিসাব করে দেখলাম তার পুরো দোকানের চালানের দাম হাজার খানেকও হবে না।

অনভ্যস্ততায় জিজ্ঞাস করে জানতে পারি তিনি আর কিছু করেন না। পারেন না, কারণ এ বয়সে শরীরে আর কুলোয় না। ভোরে বের হয়ে বড় বাজার থেকে মাল কেনেন আর বিকেলে সেসব বিক্রি করেই তার জীবন-জীবিকা। সংসারে তিনি আর অসুস্থ স্ত্রী। আমার চেয়েও বয়সী তার দুইজন সমর্থ ছেলেও আছে বটে, তবে তারা বাবা-মায়ের কোন খোঁজ রাখে না আজ বছর পাঁচেক। কেমন আছেন প্রশ্নের জবাব তিনি হেসে বলেন ভালো আছেন। আল্লাহ্ চালিয়ে নিচ্ছেন। ভিক্ষা তো করা লাগছে না। আলহামদুলিল্লাহ্।

কিছু টাকা বেশী দিতে চাইলে তিনি হাসিমুখে ফিরিয়ে দেন। বাবা সম্বোধণে বলেন বরং দোয়া করতে, আল্লাহ্ যেন ভালোয় ভালোয় দুনিয়া থেকে তুলে নেন। তার নির্মোহ ব্যক্তিত্বের সামনে আমি নতজানু হই ... মাথায় হিসাব কষি এই দুর্মূল্যের বাজারে তিনি কীভাবে বেঁচে আছেন? হিসাব মেলে না।

ইচ্ছা করে যৎসামান্য এই বিক্রি শেষে তিনি যখন গভীর রাতে শ্রান্ত শরীরে অন্ধকার হাঁতড়ে বাড়ির পথ ধরবেন, পিছু পিছু তার মাথা গোঁজার আশ্রয়টাতে যাই।
লুকিয়ে থেকে একটু দেখি তারা দুইজন টিমটিমে আলোয় কী দিয়ে রাতের খাবার খান, দেখি তাদের এতো বছরের সংসারের ঘরটাতে কী কী আছে? কান পেতে শুনি দীর্ঘসময় পর দেখা হওয়ার পরে তারা দুজন একে অপরের সাথে কী নিয়ে কথা বলেন, জীবনের শেষ বেলায় তারা কী ভাবেন পরের দিনটাকে নিয়ে?

যাদের সব থেকেও দিবা-রাত্র না থাকার দীর্ঘশ্বাস, অনেকের থেকে বেশী থাকার পরও আরও অর্থ-বিত্তের জন্যে জীবের লালা ঝড়ানো কুৎসিত লোভ, সেই গোত্রের একজন আমি ফেরার পথে মৌণতায় ভাবি জীবনে এতো অল্পেও কি তবে সন্তুষ্টি নিয়ে বাঁচা যায়?

এমন কি ধৃষ্টতাও দেখানো যায় অবলীলায় ভালো আছি বলার, যা সুখের অসুখে ভোগা আমরা অনেকে চাইলেও পারি না?



(ছবি স্বত্ব:the daily star)

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই আগস্ট, ২০২২ সকাল ১১:৩৬

সৈয়দ মশিউর রহমান বলেছেন: হৃদয় ছোঁয়া লেখা।

১৬ ই আগস্ট, ২০২২ সকাল ১০:৩৪

শহুরে আগন্তুক বলেছেন: ধন্যবাদ।

২| ১৪ ই আগস্ট, ২০২২ দুপুর ১২:৪৯

জোভান আহমেদ বলেছেন: প্রচুর মানুষ পড়া হয় আমার।
অনেক সুন্দর অনুধাবন আপনার।

১৬ ই আগস্ট, ২০২২ সকাল ১০:৩৪

শহুরে আগন্তুক বলেছেন: ধন্যবাদ।

৩| ১৪ ই আগস্ট, ২০২২ রাত ৯:৩৯

মনিরা সুলতানা বলেছেন: অভিনন্দন !
আপনাদের যুগল জীবনের জন্যে শুভ কামনা।

১৬ ই আগস্ট, ২০২২ সকাল ১০:৩৪

শহুরে আগন্তুক বলেছেন: আশা করি ভালো আছেন।

৪| ১৪ ই আগস্ট, ২০২২ রাত ৯:৫০

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: ভালো লাগলো লেখাটা।

১৬ ই আগস্ট, ২০২২ সকাল ১০:৩৪

শহুরে আগন্তুক বলেছেন: ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.