![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আসসালামু আলাই্কুম..............
মহাগ্রন্থ, আল-কুরআনের ‘বর্ণনানুযায়ী’ ইসলামী সার্বভৌমত্বের কতিপয় বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠে। নিম্নে এ সকল বৈশিষ্ট্য পেশ করা হল:
১। স্থায়িত্ব : (Permanence) :
ইসলামী সার্বভৌমত্বের প্রথম ও প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর স্থায়িত্ব। স্থায়িত্ব বলতে তাই বুঝায় যার কোনো ক্ষয়, লয় নেই, কোনো কমতি নেই। সকল অবস্থা ও পরিস্থিতিতে এর অবস্থান ও গুণসমূহ অটুট থাকে। আয়াতুল কুর্সীতে এ বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে ‘আল হাইয়্যু’ চিরঞ্জীব শাশ্বত সত্তা শব্দ ব্যবহত হয়েছে, আল্লাহ চিরঞ্জীব যার জীবনের শুরুও নেই শেষও নেই। তিনি চিরন্তন অনাদি এবং চিরস্থায়ী। মহান আল্লাহ তা‘আলার সার্বভৌমত্ব এককভাবে অন্য কারো এক বিন্দু অংশীদারিত্ব ব্যতীতই। সেই অবিনশ্বর সত্তার জন্য চির নির্দিষ্ট। যিনি অন্য কারো দেওয়া জীবন দ্বারা নয়, নিজস্ব জীবন দ্বারাই চিরঞ্জীব এবং যার অনুগ্রহ শক্তির উপর ভর করে বিশ্ব নিখিলের এ গোটা ব্যবস্থা সুপ্রতিষ্ঠিত রয়েছে। কোনো ব্যক্তি বা কোনো শাসক এ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হতে পারে না। কারণ এ ব্যাপারে সে সম্পূর্ণ অযোগ্য, অক্ষম, কাজেই সে সার্বভৌমত্বের দাবীদার হতে পারে না।
২। চির প্রতিষ্ঠিত (Al quayaum Endlessly Established) এ প্রসঙ্গে আয়াতুল কুরসীতে ‘আল কাইয়্যুম’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। কাইয়্যুম শব্দ কেয়াম শব্দ হতে উৎপন্ন। এর অর্থ হচ্ছে এ যে, নিজে বিদ্যমান থেকে অন্যকেও বিদ্যমান রাখেন এবং নিয়ন্ত্রণ করেন। তার সত্তা স্থায়ীত্বের জন্য অন্য কারো মুখাপেক্ষী নয়। অর্থাৎ আল্লাহ শুধু চিরঞ্জীব শ্বাশত সত্তাই নন তিনি ক্ষমতায় চির প্রতিষ্ঠিত। মূহুর্তের জন্যও তিনি সার্বভৌম কর্তৃত্ব প্রয়োগ কার্য থেকে অবসর গ্রহণ করেন না। এ বৈশিষ্ট্যের দিক থেকেও মানুষ একবারেই অযোগ্য।
৩। সর্বব্যাপকতা/সার্বজনীনতা (Universality):
ইসলামী সার্বভৌমত্বের অপর বৈশিষ্ট্য হলো এর সর্বব্যাপকতা বা সার্বজনীনতা। সার্বজনীনতা হলো ইসলামী সার্বভৌমত্বের অসীমতার পরিচায়ক। সৃষ্টিজগতের এমন একটি প্রাণীও নেই, থাকতে পারে না যারা তার সার্বভৌম শক্তির অধীন নয়। আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর মধ্যে যা কিছু আছে সবকিছু সৃষ্টিকর্তা, প্রতিপালক ও মা`বুদ আল্লাহ। তাঁর ক্ষমতা সর্বত্র। সৃষ্টিজগতের প্রতিটি প্রাণী আল্লাহর এ সার্বভৌম শক্তির অধীনতা স্বীকার করতে বাধ্য। এর গতি সৃষ্টি জগতের সর্বস্তরে অবাধ ও অপ্রতিহত। একথা বুঝানোর জন্যই আয়াতুল কুরসীতে বলা হয়েছে।
﴿ لَّهُۥ مَا فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَا فِي ٱلۡأَرۡضِۗ ٢٥٥ ﴾ [البقرة: ٢٥٥]
‘‘আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর সবকিছুই তার।” সূরা আল বাকারাহ:২৫৫।
তাঁর ক্ষমতা কোনো পরিসীমার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।’’ সবচেয়ে বড় ক্ষমতার যিনি মালিক তার ক্ষমতা কোনো বিশেষ এলাকার মধ্যে হলে চলবে কি? তার ক্ষমতা হতে হবে সর্বত্র, যার মালিক হওয়া মানুষের জন্য কোনদিনই সম্ভবপর নয়। যেমন বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অধিকারী ব্যক্তি অন্যদেশের একটি চৌকিদারের চাকুরী ও বাতিল করতে পারবে না। তাই বলা যায়, দুনিয়ার প্রতিটি রাজা-বাদশাহরই ক্ষমতা এমন একটা নির্দিষ্ট পরিসীমার মধ্যে সীমাবদ্ধ।
৪। মৌলকথা, চরমতা ও সীমাহীনতা : (original, Absolute and Unlimited)
আয়াতুল কুরসীর বর্ণনা হতে এটি প্রতীয়মান হয় যে, সার্বভৌম ক্ষমতা মৌলিক চরম ও সীমাহীন। বিধান দেয়ার ক্ষমতা সার্বভৌম শক্তির চরম ক্ষমতা। এ ক্ষমতা কোনো কিছুর দ্বারা সীমিত নয়। সৃষ্টি জগতে এর সমকক্ষ বা এর উর্ধ্বে কোনো ক্ষমতা থাকতে পারে না। সার্বভৌম সত্তা আল্লাহ চূড়ান্ত ক্ষমতার আঁধার। তিনি সমস্ত শক্তি ও ক্ষমতার উৎস। তাঁর ক্ষমতা শুধু কোনো পূর্ণ সত্তার উপরই নয়। বরং এ সত্তার সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম একক তাঁর ইচ্ছা ও আদেশ প্রতিফলিত হয়। আরো সহজভাবে বলতে গেলে, মানুষ অন্য যে কোনো প্রাণী বা উদ্ভিদ তাঁর নির্দেশেই পরিচালিত হয়, বিষয়টি এটিই নয় বরং ঐ প্রাণীর প্রত্যেকটি কোষ বা তাঁর ক্ষুদ্রতম একক মহান আল্লাহর ইচ্ছা ও আদেশে পরিচালিত হয়। ঠিক তেমনিভাবে এ মহাবিশ্বের প্রত্যেকটি অনু-পরমানু তাঁর নিয়ন্ত্রনাধীন।
৫। অবিভাজ্যতা ও একত্ব (Indivisibility and unity):
ইসলামী সার্বভৌমত্ব একক ও অবিভাজ্য এ সার্বভৌমত্বকে বিভক্ত করা যায় না। আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর চূড়ান্ত ক্ষমতা একটিমাত্র কেন্দ্রেই কেন্দ্রীভূত এবং এর কেন্দ্রবিন্দুতেই রয়েছেন আল্লাহ। যদি দু বা ততোধিক ক্ষেত্রে তা ন্যস্ত হত তাহলে স্বাভাবিকভাবেই বিরোধ ঘটত। চরম ও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণে সমস্যা হত। এজন্যই আল্লাহর সার্বভৌমত্বকে সম্পূর্ণ বলা হয়। এর বিভাজনের চিন্তা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও নাফরমানির শামিল। আল্লাহ তাঁর ক্ষমতা কোনো ফেরেশতাকে বা কোনো নবীকে বা কোনো রাষ্ট্র প্রধানকে কিংবা কোনো পীর, সূফী, দরবেশকেও ভাগ করে দেন নি। সৃষ্টিকূলের কেউ সার্বভৌমত্বের অধিকারী হতে পারে না, যে কোনো বাদশাহ বা রাষ্ট্র প্রধান তাঁর ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার উপর নির্ভরশীল। আবার তার ক্ষমতা ও আদেশ নিজ ভুখণ্ডের বাইরে সম্পূর্ণরূপে অকার্যকর। একথাই কুরআনে বলা হয়েছে:
﴿مَن ذَا ٱلَّذِي يَشۡفَعُ عِندَهُۥٓ إِلَّا بِإِذۡنِهِۦ ٢٥٥ ﴾ [البقرة: ٢٥٥]
“কে আছে এমন (স্বীয় ক্ষমতা, অধিকারী বলে) আল্লাহর নিকট কোনো সুপারিশ করতে পারে তার অনুমতি ছাড়া।’’
মহান আল্লাহ আরো বলেন :
﴿ وَسِعَ كُرۡسِيُّهُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضَۖ وَلَا ئَُودُهُۥ حِفۡظُهُمَاۚ ٢٥٥ ﴾ [البقرة: ٢٥٥]
‘‘তাঁর কুরসী আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর সর্বত্রই পরিব্যাপ্ত হয়।’’ তাঁর এ সার্বভৌম ক্ষমতা প্রয়োগ ও সংরক্ষনে তিনি হিমশিম খান না; ক্লান্ত শ্রান্ত হওয়ার প্রশ্নই আসে না।
পবিত্র কুরআনের বাণী:
﴿ ۖ وَلَا ئَُودُهُۥ حِفۡظُهُمَاۚ ٢٥٥ ﴾ [البقرة: ٢٥٥]
‘‘আসমান ও যমীনের প্রতিটি বিষয়কে সংরক্ষণ ক্রমবিকাশ ও ক্রমোন্নতি দানে তিনি ক্লান্ত হয়ে পড়েন না, বা এসব তাকে ক্লান্ত করতে পারে না।’’৫
কারণ তিনি মহান ও শ্রেষ্ট সত্তা।
﴿وَهُوَ ٱلۡعَلِيُّ ٱلۡعَظِيمُ ٢٥٥ ﴾ [البقرة: ٢٥٥]
‘‘তিনি পরাক্রমশালী ও অসীম মর্যাদাবান।’’৬
©somewhere in net ltd.
১|
০৬ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ৭:৫৩
কি করি আজ ভেবে না পাই বলেছেন: কোনো ব্যক্তি বা কোনো শাসক এ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হতে পারে না। কারণ এ ব্যাপারে সে সম্পূর্ণ অযোগ্য, অক্ষম, কাজেই সে সার্বভৌমত্বের দাবীদার হতে পারে না।
"হুওয়াল হাইয়ুল কাইয়ুম"