![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সিভিল কোর্টস এক্ট ১৮৮৭ এ আনা হয়েছে সংশোধনী , এরই মধ্যে প্রস্তাবিত সংশোধনী মন্ত্রী পরিষদের অনুমোদন পেয়েছে (১৪ই সেপ্টেম্বর) এবং এই সংসদ অধিবেশনেই তাহা নিশ্চিত আইনে পরিনত হল। আসলে এই সংশোধনীতে কি কি আছে? আছে মুলত দেওয়ানী আদালত গুলুর এখতিয়ার বৃদ্বি এবং এইখানে সহকারী জজের আর্থিক এখতিয়ার বাড়িয়ে ১৫ লক্ষ টাকা, সিনিয়র সহকারী জজের আর্থিক এখতিয়ার বাড়িয়ে ২৫ লক্ষ টাকা করা হচ্ছে আর যুগ্ন জেলা জজের আর্থিক এখতিয়ার বাড়িয়ে ২৫ লক্ষ টাকা থেকে অসীম করা হচ্ছে ( আগেও অসীম ছিল)। এত টুকু পর্যন্ত ঠিক আছে । বিতর্কিত হল জেলা জজের আপীল এখতিয়ার বাড়িয়ে ৫ কোটি টাকা করা ।
এইবার আসি জেলা জজের এখতিয়ার ৫ কোটি টাকা করলে কি কি সুবিধা হতে পারে? এতে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হবে। কারণ, বর্তমানে যে মামলা উচ্চ আদালতে হয় তা এখন নিম্ন আদালতে বিচারের জন্য যাবে। এতে মানুষের কষ্ট অনেকখানি কমবে। হাইকোর্টে অনেককেই আসতে হবে না। দেশের দূর-দূরান্তের মানুষকে কষ্ট করে ঢাকায় আসতে হবে না। আপিল আদালতের ক্ষেত্রে এখন জেলা জজের আর্থিক এখতিয়ার পাঁচ লাখ টাকা। এটি বাড়িয়ে পাঁচ কোটি টাকা করা হয়েছে। অর্থাৎ যে সম্পত্তির মূল্য পাঁচ কোটি টাকা পর্যন্ত, তার আপিল মামলার শুনানি হবে জেলা জজ আদালতে। এর উপরে হলে তা হাইকোর্ট বিভাগে যাবে। এখন সম্পত্তির মূল্য পাঁচ লাখ টাকার বেশি হলে হাইকোর্টে আসে, সংশোধিত আইন কার্যকর হলে পাঁচ কোটি টাকার বেশি হলে হাইকোর্টে আসবে। এই বক্তব্য টুকু মন্ত্রী পরিষদ সচিবের, তিনি এই সংশোধনীর পক্ষে এই কথা টুকুই বললেন। লাভও ঠিক অতটুকুই এর চেয়ে বেশী না । আপীল করার জন্য শুধুমাত্র ঢাকায় যাওয়া আসার ঝামেলাটা ছাড়া আর কোন লাভ নেই। আরও দুইটা লাভ আছে আর তাহল দুইটা বিশেষ শ্রেণীর মানুষের, ১। জজ আদালতের উকিলদের কিছু ওকালতি বাড়বে কিছু আয় রোজগার বাড়বে। ২। জেলা জজ সাহেবদের আর্থিক এখতিয়ার বাড়বে তাতে তাদের মানসিক প্রশান্তি বাড়বে। সাময়িক ভাবে হাইকোর্টে আপীল মামলার চাপ কমবে। আমি হলফ করে বলতে পারি এছাড়া আর কোন লাভ হবে না।
এইবার দেখুন এই সংশোধনী কার্যকর অর্থাৎ আইনে রূপান্তরিত হলে কি কি অসুবিধা হতে পারে?
জেলা জজ আদালত গুলুতে যেই পরিমান আপীল মামলা জমা আছে বা সেইগুলু নিশপত্তির চাপ আছে তা বেড়ে আরও বেশ কয়েকগুন হয়ে যাবে। আপীল মামলার সংখ্যাবৃদ্বির ফলে আগে যেই গতিতে আপীল নিস্পত্তি হত বা আপীল নিস্পত্তিতে আগে যেই পরিমান সময় লাগতো এখন তা বেড়ে কয়েক গুন হয়ে যাবে, আপীল নিস্পত্তি বিলম্বিত হবে। তাতে জেলা জজ সাহেবদের আদালতে যেই মামলা গুলুর মুল বিচার হত ( original Jurisdiction) সেইগুলু নিশপত্তিতে অনেক দীর্ঘ সুত্রিতা হবে।
সবচেয়ে বড় সমস্যা যেইটা হবে সেইটা হল মুল মামলার রায় হয়ে যাবার পরে উচ্চ আদালতের সংখ্যা বৃদ্বি পেল। আগে সহকারী ও সিনিয়র সহকারী জজের রায় এবং যুগ্ন জেলা জজের ৫ লাখ টাকার নিচে মুল্যমানের রায় গুলুর বিরুদ্বে আপীল হত জেলা জজ আদালতে , তারপরে হাইকোর্টে তারপরে আপীল বিভাগে এর পরে ফোরাম নাই তাই মামলা চুড়ান্ত নিশপত্তি। কিন্তু ৫ লাখ টাকার বেশী মুল্যমানের মামলা গুলুর রায়ের বিরুদ্বে আপীল চলত হাইকোর্টে, তারপরে আপীল বিভাগ এর পরে ফোরাম নাই তাই মামলা চুড়ান্ত নিশপত্তি। অর্থাৎ বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে আপীল ফোরাম দুইটা আদালতঃ ১। হাইকোর্ট, ২। আপীল বিভাগ।
কিন্তু এখন সব আপীল ( খুব কম মামলা পাওয়া যার যার মুল্যমান ৫ কোটির বেশী) হবে প্রথমে জেলা জজ আদালতে তার রায়ের বিরুদ্বে পরে হাইকোর্টে আসা যাবে তারও পরে আপীল বিভাগে আসা যাবে তারমানে এখন আপীল ফোরাম বেড়ে হয়েছে তিনটা কোর্ট যথাঃ জেলা জজ- হাইকোর্ট - আপীল বিভাগ। মামলা করে তার চূড়ান্ত ফল ঘরে আনতে সময় লাগবে আগের তুলনায় আরও অনেক বেশী । এই সংশোধনীর ফলে হঠাত করে হাইকোর্টে দেওয়ানী আপিলের সংখ্যা কমতে থাকবে তাতে হাইকোর্টে মামলার চাপ একটু কমবে যেহেতু সব আপীল একবার জেলা জজ আদালতে ফাইল হবে তবে তা সাময়িক। কিন্তু এই আপীল মামলা গুলু যখন জেলা জজ আদালতে নিশপত্তি শুরু হয়ে যাবে তারপরেই তো হাইকোর্টে জেলা জজের রায়ের বিরুদ্বে আসা শুরু হয়ে যাবে কারন জেলা জজের রায়ের পরের ফোরাম হল হাইকোর্ট। হাইকোর্টের মামলা জট আবার শুরু হয়ে যাবে । আগে যেইখানে হাইকোর্টের আপিলের রায়ের পরেই সরাসরি আপীল বিভাগে চলে যাওয়া যেত সেই জায়গায় জেলা জজে একবার আপীল, তার রায়ের বিরুদ্দ্বে হাইকোর্টে রিভিশন, তার রায়ের বিরুদ্বে আপীল বিভাগে যেতে হবে। অর্থাৎ এই সংশোধনীর ফলে ফোরামের সংখ্যা অর্থাৎ কোর্ট বৃদ্বি পাবে এবং ন্যায় বিচার আরও বেশী দীর্ঘায়িত হবে। বিচারপ্রার্থীকে একটা কোর্ট বেড়ে যাওয়ায় কোর্ট ফি দিতে হবে আগের চেয়ে বেশী, একটা কোর্ট বেড়ে যাওয়ায় উকিলের খরচ দিতে হবে আগের চেয়ে বেশী সর্বোপরি আপীল বিভাগ পর্যন্ত যেতে সময় লাগবে আগের চেয়ে বেশী এবং মামলা চুড়ান্তভাবে নিশপত্তি হতে সময় লাগবে আগের চেয়ে বেশী। অতএব আমার জিজ্ঞাস্য এই সংশোধনী কার স্বার্থে? এইক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে যে বাইপাস কোন সমস্যার আসল বা চুড়ান্ত সমাধান নয়।
©somewhere in net ltd.
১|
০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:০০
হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
কোন বিকেন্দ্রীকরণ চেষ্টাই সফল হচ্ছে না, দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটের কারনে।