নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নুসরাতের ব্লগ

আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগে অধ্যয়ন করছি।

নুসরাত জাহান ডায়না

আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগে অধ্যয়ন করছি।

নুসরাত জাহান ডায়না › বিস্তারিত পোস্টঃ

পরিবর্তনের পথে দরকার ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির বিকাশ-৩ : ৫২'র ভাষা আন্দোলন

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৩:১৮





...... ফেব্রুয়ারি মাস আসলেই প্রতিবছরের ন্যায় এবারও ফেব্রুয়ারী মাসের পহেলা তারিখ থেকেই বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গনে শুরু হয়ে 'একুশে বইমেলা'।এই অমর একুশে বইমেলা নামকরন করা হয় ১৯৫২সালে ২১ফেব্রুয়ারী বাংলা ৮ই ফাল্গুন মহান ভাষা আন্দোলনে ভাষার জন্য শহীদদের স্মরণে।যা পরবর্তীতে ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' হিসেবে ঘোষণা করে ।প্রতিবছর পৃথিবীতে অনেক দেশেই এই শহীদ দিবসে শহীদ রফিক,জব্বার,বরকত,শফিউলসহ মহান ভাষা শহীদের স্মরণে নির্মিত 'শহীদ মিনারে' ফুল দিয়ে মহান ভাষা শহীদদের স্মরন করে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়।

এই ভাষা শহীদদের স্মরনে লিখা হয় কত গান ,কবিতা।লিখা হয় সেই অমর গান,

"আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারী ,আমি কি ভুলিতে পারি, ছেলেহারা মায়ের যত .........।"

এছাড়াও কত কবিতা,গান,উপন্যাস ,প্রবন্ধ,নাটক লিখা হয়েছে তার কোন ইয়ত্তা নেই। ভাষা আন্দোলনের উপর লিখার কথা বললেই প্রথমে আসে মনির চৌধুরীর সেই নাটক 'কবর' এর কথা। যেটা আমরা অনেকেই পরেছি ।



মুনির চৌধুরী জন্মগ্রহন করেন ২৭শে নভেম্বর ১৯২৫ সালে মানিকগঞ্জে ।তার অন্যতম নাটক 'রক্তাক্ত প্রান্তর' কায়কোবাদের 'মহাশশ্মান' মহাকাব্য অনুকরনে লিখা।যা ১৯৬২ সালে রচিত ।ভাষা আন্দোলনকে উপজীব্য করে রচিত তার কবর নাটকএর জন্য তিনি সমধিক পরিচিত ।এটা রচিত হয় ১৯৬৬সালে ।তার অন্যান্য নাটকের মধ্যে ,চিঠি(১৯৬৬),দন্ডকারণ্য(১৯৬৬),পলাশী ব্যারাক ও অনন্যা (১৯৬৯),মুকরা রমণী বশীকরণ (১৯৭১) এবং নষ্টছেলে ।১৯৭১ সালে ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্থানী হানাদারদের বাঙালি মেধাশুন্য করার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তাকেও সেদিন অপহরন করা হয় এবং নিখোঁজ।

ভাষা আন্দোলনের কথা উঠলেই মুনির চৌধুরীর নাম চোখের সামনে ভেসে উঠে । যেন ভাষা আন্দোলন আর মুনির চৌধুরী নামটি আন্তঃসম্পরকিত।

কবর নাটকটির কয়েকটি উক্তি নিম্নে দেওয়া হল যে কয়টি উক্তি আমার মনে হয়েছে ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটকে তুলে ধরার জন্য যথেষ্টঃ

নেতাঃ এর মধ্যে গোলমালটা কিসের? আপত্তি উঠল কোথায়?

হাফিজঃ এ্যা ?ওহ !ইয়ে মানে ঐ গোর-খুড়ে,বজ্জাত ব্যাটারা বলে কিনা'কাভি নেহি'।বলে কিনা 'মুসলমানের মুর্দা, দাফন নেই,কাফন নেই ,জানাজা নেই?তার উপর একটা আলাদা কবর পর্যন্ত পাবে না ?এ হতে পারে না ,কাভি নেহি।" গো ধরে বসে রইল ।ক্ত বোঝালাম ।

নেতাঃ আহাম্মকি করেছেন।সরকারি কাজ করেন কিনা,পাবলিক সেন্টিমেন্ট বোঝে না ।বোঝাতে গিয়ে সময় নষ্ট না করে ওদের খুশিমত কাজ করতে দিলে আপনার ইজ্জত ডুবত? কাজ আদায় করা নিয়ে আপনার কারবার ।সমাজ সংস্কারের বক্তৃতা দেবার জন্য আপনাকে সরকার বেতন দেয় না। আর ঘণ্টাখানেকের মধ্যে আকাশ ফরশা হয়ে যাবে -আযান পড়িবে -কারফিউ শেষ হবে ।লাশগুলু নিয়ে আপনি এখনও মিটিং করছেন?...............।।

নেতাঃ ......।পুঁতে ফেল ।দশ-পনেরো-বিশ-পচিশ হাত ।যত নিচে পার ।একেবারে পাতাল পর্যন্ত খুঁড়তে বলে দাও ।পাথর দিয়ে,মাটি দিয়ে ,ভরাট করে গেঁথে ফেল ।কোনদিন যেন ওপরে উঠতে না পারে ।কেউ যেন টেনে তুলতে না পারে।যেন চ্যাচাতে ভুলে যায় ।

'কবর' নাটিকাটি 'কবর' নাট্যগ্রন্থের (মানুষ, নষ্টছেলে,কবর)তৃতীয় ও শেষ নাটিকা। রাষটভাষা বাংলার দাবিতে ১৯৫২'র ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার আকাশ বাতাস স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে ।এ পরিস্থিতিকে আয়ত্তে আনতে তৎকালিন পাকিস্তানি মুসলিম লীগ সরকারের নির্দেশে পুলিশ বাহিনী ছাত্রজনতার মিছিলের উপর গুলিবর্ষণ করে ।গুলিতে সালাম,বরকত,রফিক,শফিক,জব্বারসহ অনেক ছাত্রজনতা মারা যায়।

অথচ,এই মহান ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস যখন আমরা ভুলে যাই,আমাদের একুশে বইমেলার প্রেক্ষাপট যখন ভুলে যাই তখন আমরা নুতন প্রজন্মকে কি শেখাব?!!!এই প্রশ্নটা আমাকে খুরে খুরে খাচ্ছে আমাকে কয়দিন আগে দেখা একুশে বইমেলার আগত দর্শনারথিদের উপর একটি প্রতিবেদনের পর থেকে। 'সময়' নিউজ এর সেই রিপোর্টারের একটি প্রশ্ন "সেদিন কি হয়েছিল?" ।ওঁই বেচারা এত কষ্ট বোধহয় জীবনে আর পায়নি ।একজন দর্শকও সদুত্তর দিতে পারে নি ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী কি হয়েছিল ।!!!!!!!

ভিডিওটার সংলাপ আমি তুলে ধরছি নিচেঃ

রিঃ আমাদের একুশে ফেব্রুয়ারী কেন জান?

দর্শক-১(শিশু) না।

রিঃ কি হয়েছিল সেদিন?

দর্শক-২(শিশু)ঃসেদিন যুদ্ধ হয়েছিল!!!!!

দর্শক-৩(মহিলা)ঃভাল করে বলতে পারব না।আমরা সবসময় একুশে ফেব্রুয়ারীতে যারা আত্ম (ত্যাগ শব্দ বলেন নি ) করেছেন তাদের ......

রিঃ কোথায় ,কি হয়েছিল?

দর্শক-৩(মহিলা)ঃ না,সেটা তো আমি সঠিক বলতে পারব না কি হয়েছিল সেদিন ।

দর্শক-৪(পুরুষ)ঃ এটা আমাদের এই ৯মাস ৭ মাস যুদ্ধ করে আমরা এটা অর্জন করেছি ।

রিঃ একুশে ফেব্রুয়ারী ?!!!!!!আমরা কি জন্য পালন করি এটা ?

দর্শক-৪(পুরুষ)ঃআমরা আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধা মারা গেছে তাই এই দিনকে শোক হিসেবে পালন করি ।

রি ঃ ২১ ফেব্রুয়ারী অমর শহীদদের রক্তে রাঙ্গানো ,কি হয়েছিল সেদিন?

দর্শক-৫(ছেলে)ঃসেদিন যুদ্ধ হয়েছিল জাস্ট!!!!

দর্শক-৬(ছেলে)ঃএখানে আমাদের ভাষা নিয়ে মারামারি মানে আমরা ভাষার জন্য যুদ্ধ করেছি ।

রিঃ কবে,কথায়,কখন,কার সাথে ?

দর্শক-৬(ছেলে)ঃভাইয়া,এত ডিটেলস জানিনা।

রিঃ আচ্ছা,২১ ফেব্রুয়ারীতে কি হয়েছে সেটা জানেন?

দর্শক-৭(শিশু)ঃ এটা আমাদের স্বাধীনতা ,স্বাধীন ......।।

রিঃ সেদিন কি হয়েছিল?

দর্শক-৮(শিশু)ঃসেদিন?(লম্বা বিরতি দিয়ে) আমি বলতে পারি না ভাইয়া !!!!!

ভিডিও দেখে কাঁদবো কি হাসব প্রথমে বুঝে উঠতে পারিনি। এটা ছিল এবারের একুশে বইমেলার উপর একটি প্রতিবেদন ।এই যদি হয় আমাদের নুতন প্রজন্মের দেশের ইতিহাস জ্ঞান?তাহলে তারা বইমেলায় গিয়েইবা কি শিখছে।তাদের ডিজিটাল স্কুলের মাস্টারগুলুও বা তাদের কি পড়াচ্ছে ?আরও দেখুন তারা একুশে বইমেলায় গেছে!!!!!!!!!!!!!

বাংলা একাডেমীর প্রতি আমার অনুরোধ ,বাংলা একাডেমির বইমেলার প্রাঙ্গনে যেন বিশাল বিশাল পোস্টারে ভাষা শহীদদের ছবি সংবলিত ,২১ ফেব্রুয়ারী ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস সংবলিত করে সাঠান হয় যেখানে সহজে চোখে পরে ।শিশুরা যেন হাটতে হাটতে শিখে নিতে পারে। বইমেলা প্রাঙ্গনে উপস্থিত বুদ্ধিজীবী,শিক্ষক, লেখকদের প্রতি অনুরুধ,ওনাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ছোট আকারে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস সন্নিবেশিত বই ফ্রিতে আবাল-বৃদ্ধ-নারী-পুরুষ-ধর্ম-বর্ণ-শিশু নির্বিশেষে বিলি বন্টনের ব্যাবস্থা করে। অবশ্যই colourful page এবং ভাষা আন্দোলনের এডিটিং ছবি সংযজিত করতে হবে যাতে সবাই আকৃষ্ট হয়।

আমি ভাবছি ,এটা কতটা লজ্জার যে,প্রাপ্তবয়স্ক নারীপুরুষ পর্যন্ত ভাষা আন্দোলন কেন হয়েছিল ,কি হয়েছিল এসব জানে না......। !!!!!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.