নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মুখ ফেরানো মুখ

দীপঙ্কর বেরা

আমি ভাষা বাংলা ভালোবাসি

দীপঙ্কর বেরা › বিস্তারিত পোস্টঃ

খিদে

১৬ ই নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:২৮

পৃথিবীতে এমন কোন মা আছে যে তার শিশুর কাঁদা পর্যন্ত অপেক্ষা করে তারপর খেতে দেয় না হলে দেয় না? কেউ আছে?
আমার তো মনে হয় কেউ নেই।
তাহলে শিশু না কাঁদলে মা স্তন্যপান করায় না। কথাটা মা শিশুকে নিয়েই কি?
একটু সাধারণ মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত পর্যন্ত প্রতিটি বাবা মা আপ্রাণ চেষ্টা করে তার শিশুটি যেন আর কিছু হোক বা না হোক খাওয়ার কষ্টে যেন না থাকে। এই ভাবনা ভেবে বেশিরভাগ বাবা মা শিশুকে খিদে কি জিনিস বুঝতেই দেয় না।
আজকালকার শিশুরা অনেকেই খিদে কি জিনিস ভাল করে জানেই না। বরং মুখে গুঁজে একটু বেশি একটু বেশি করে খাওয়াবেই।
ডাক্তারের কাছে কোন শিশুকে দেখাতে নিয়ে গেলে প্রথম আবদার - ডাক্তারবাবু, দেখুন না, সারাদিন কিছুটি খেতে চায় না। কিংবা ডাক্তারবাবু, এর জন্য একটা ভিটামিন বা হজমের ওষুধ লিখে দিন।
অনেকক্ষেত্রে দেখা যায় সারাদিন শিশুটির খাওয়া নিয়ে সবাইয়ের ব্যস্ততা। ফলে শিশুদের খিদে পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হয় না। তার আগেই মুখের কাছে খাওয়ার চলে আসে। সারাদিন টুকটাক খাওয়াতেই আছে। শিশু বুঝতেই পারে না খিদে কি? ফলে সারাদিনে মোট তিন বা চার বার আসল খাওয়ার সময় সে তো একটু তো কম খাবেই।
তার মানে এই নয় যে খিদে পাক কাঁদুক তারপরে খেতে দেব। তা তো নয়। তবু খিদে বা কষ্ট করে পাওয়ার আনন্দের জন্য সময় দিতে হয়।
যাদের একেবারেই সংস্থান নেই তারাও যে করেই হোক প্রথমে শিশুটির খাওয়ার বন্দোবস্ত করে। এবং সেটাই নিয়ম। আগামী প্রজন্মের জন্য সেটাই আমাদের প্রাথমিক কর্তব্য।
তবু আমাদের কর্তব্য হল প্রজন্মের কাছে খিদে লাগা এবং তাকে কষ্ট সাধনের মাধ্যমে নিবারণের যে পরিতৃপ্তি তা বুঝতে দেওয়া উচিত।
যে শিশু খিদের মর্ম, খিদের উপলব্ধি, খিদে নিবারণের যে আকুতি তা যদি না বুঝতে পারে তাহলে পরবর্তীতে সে যখন সমাজ জীবনে একা প্রবেশের ছাড়পত্র পাবে তখন বুঝতে চাইবে না এই কষ্ট, এই খিদে ও তার উপলব্ধি। ফলে সমাজ চিত্রে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ফোকটে পাওয়া নিয়ে মেতে থাকবে।
খিদে সহ্যের অবস্থান তার জানা নেই। তাই সে 'পাব না মানে?' এই ভাবনায় যা কিছু করে ফেলতে পারে তা কখনই সমাজের মঙ্গল নয়।
আমরা প্রত্যেকে চাইব আমাদের প্রজন্মকে ভালোবাসতে। সেই সাথে চাইব ভালোবাসার মর্যাদা বোঝাতে, উপলব্ধ করাতে। এই মর্যাদা বা উপলব্ধি প্রজন্ম তখনই বুঝতে পারবে যখন সে খিদের( সে পেটের হোক কিংবা মনের) সঙ্গে কিভাবে কষ্ট জড়িয়ে থাকে। কষ্টের সাথে পরিতৃপ্তি।
'জানেন, আমার ছেলে না আটার রুটি একদম খেতে পারে না', 'আমার মেয়ে ভাজাভুজি ছাড়া একদম খেতে পারে না', 'আমার মেয়ে আবার খুব বিরিয়ানির ভক্ত', 'আমার ছেলে একটু চিকেন পেলে আর কিছুটি চায় না' - এই যে বক্তব্যগুলো ভেবে দেখুন এইসব ছেলে মেয়ে কি পেট থেকে এসব শিখে আসে? নাকি জন্মের পরেই খাদ্যের সব স্বাদ বুঝে যায়?
তা নয়। বাড়ির পরিবেশ, বাবা মায়ের খাওয়া উঠা বসা সংস্কারে এসব গড়ে ওঠে। বিশেষ করে মায়েদের খাওয়ানোর পদ্ধতিগত ভাবনায় ছেলে মেয়েদের এই ন্যাচার গড়ে ওঠে। আরে বাবা, খিদে পেলে খাদ্যের গুণ বিচারের দরকার পড়ে না। যার পেটে খিদে নেই মনের খিদের খবর রাখে না সে বলে, 'না বাবা, আমি কুমড়ো পুঁইশাক খাই না', 'ইলিশমাছে কেমন একটা গন্ধ' 'তোমরা রোজ রোজ শাক খাওয়া কেন গো', 'এমা, তুমি উচ্ছে খাও কি করে?'।
আবার উল্টো দিকে আছে। খাওয়ার যোগাড়ের কষ্ট চিন্তায় যদি জীবন কেটে গেল তো ভাল কিছু ভাবব কখন? যে কাজ করছি তাতে মনঃসংযোগ করব কি করে? আমি যদি জানি আমার খাওয়ার রেডি আছে তাহলে কাজে মন বসবে। তাই খাওয়ারের সংস্থান ঠিক ভাবে করে দেওয়া উচিত। খিদের কষ্টের মধ্যে জীবন উপলব্ধি সরিয়ে দেওয়া ঠিক না।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:৩৯

আর্কিওপটেরিক্স বলেছেন: ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়
পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি......

২০ শে নভেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৫২

দীপঙ্কর বেরা বলেছেন: ধন্যবাদ
ভাল থাকবেন

২| ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:৫১

রাজীব নুর বলেছেন: ধনীদের খিদে কম।
দরিদ্র লোকদের খিদে বেশি।
ধনীদের টাকা পয়সার খিদে বেশি।

২০ শে নভেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৫৩

দীপঙ্কর বেরা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ
ভাল থাকবেন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.