নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নীলাম্বর

দিপ্তী

অামি অাকাশের উদারতাকে ভালবাসি

দিপ্তী › বিস্তারিত পোস্টঃ

নাক ফুলের নাকানাকি

১০ ই অক্টোবর, ২০১২ রাত ৮:১৪





কানে কানে যে কথা কানাকানি। নাকে নাকে নাকানাকি। নাক নিঃশ্বাস নেয় ছাড়ে। নারীর নাকের সৌন্দর্য হলো নাকফুল। যার রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস। রয়েছে রকমফের। নাক বুঝে নাকফুল। তাই জানতে হবে নাক ফুলের নাকানাকি।

নাকফুল হচ্ছে স্বামীর চিহ্ন, বাঙালি বিবাহিত নারীকে এক সময় চেনা যেত নাকফুলে। তারা বিশ্বাস করত, বিয়ের পর নাকফুল না পরলে স্বামীর অমঙ্গল হয়। যুগের পর যুগ এসব নিয়ম মেনে এসেছে বঙ্গদেশীয় নারীরা। কিন্তু এখন তাদের মধ্যে মিশ্র ধারণা দেখা যায়। আগের সে সামাজিক রীতি-নীতি পাল্টায়নি। পাল্টেছে শুধু তার ব্যবহার। এখন ফ্যাশন হিসেবে বাঙালি নারীরা নাকফুল ব্যবহার করে। শুধু সোনার তৈরি নাকফুলই নয়। এখন ফ্যাশন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে বিভিন্ন পাথর, পুতি, ইমিটেশন এমনকি রুপার উপরে স্বর্ণের প্রলেপ দেয়া নাকফুল। দক্ষিণ এশিয়ার নারীরা প্রথা হিসেবে নাকফুলকে ব্যবহারের প্রচলন করলেও পশ্চিমা দেশগুলো ফ্যাশন হিসেবে গ্রহণ করেছে। আর তার ছোঁয়া লেগেছে আমাদের দেশের ফ্যাশনেও। এখন শুধু তরুণীরাই নয়। বয়স্করাও মেকআপ এবং পোশাকের সঙ্গে মিল রেখে নাকফুল পরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে। অনেকে আবার চেহারার পার্থক্য আনতে বিভিন্ন অনুষ্ঠান ব্যতীত অন্য সময় নাকফুল ব্যবহার করে না।

যাদের নাক ছোট আর খুব বেশি খাড়া নয় তারা এক পাথরের ছোট নাকফুল বেছে নিতে পারেন। আর যাদের নাক বড় আয়তও চোখা তারা বড় নাকফুল বেছে নিলে ভাল করবে। তবে এমন নাকে যে কোন ফুলই ভাল মানাবে। তাই তারা ছোট নাকফুল ব্যবহার করলেও খারাপ লাগবে না। ছোট পাথরের সঙ্গে মুক্তা কিংবা হীরারও যুক্ত করতে পারেন। কিংবা আলাদাও ব্যবহার করতে পারেন। আবার পোশাকের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে কয়েক রঙের পাথরের নাকফুল সংগ্রহে রাখতে পারেন। এগুলো এখন বাজারে খুব সুলভমূল্যে বিক্রি হয়। তাই একাধিক নাকফুল সংগ্রহে রাখতে খুব বেশি সমস্যা হয় না। আমাদের দেশে শাড়ির সঙ্গে নাকফুল বেশ মানিয়ে যায়। তবে এখন শুধু শাড়ির অনুষঙ্গ হিসেবেই নয়, সালোয়ার কামিজ, ফতুয়া কিংবা টি-শার্টের সঙ্গেও মিলিয়ে নাকফুল ব্যবহার করে বাঙালি নারীরা।

আমাদের দেশে প্রচলিত রীতি অনুযায়ী সবাই নাকফুল পরে বাম নাকে। বর্তমানে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রমও লক্ষণীয়। জনপ্রিয় অভিনেত্রী ববিতা প্রচলিত সেই রীতির বাইরে গিয়ে ডান নাকে নাকফুল পড়ার প্রচলন চালু করেছিলেন। হাল আমলের জনপ্রিয় টিভি অভিনেত্রী নোভা সবসময় একটি হীরার নাকফুল পরেন। তিনি মনে করেন একটিমাত্র পাথর পুরো মুখের সৌন্দর্যে এক আলাদা দ্যুতির সৃষ্টি করে। এ সম্পর্কে বিউটি এক্সপার্ট আলেয়া শারমীন কচি বলেন, নাকে ঝিকিমিকি করা পাথর ফ্যাশন হলেও নাক ফোঁড়ানোর সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। তিনি আরও বলেন, আমরা অনেকেই বাড়িতে মা-চাচিদের হাতে নাক ফোঁড়াই। এটা কুব বিপজ্জনক। তাই দক্ষ হাতে পার্লারে গিয়ে নাক ফোঁড়ানোই বুদ্ধিমানের কাজ।

ধারণা করা হয়, নারী প্রথম যে অলঙ্কার ব্যবহার করেছিল সেটি ছিল নাকফুল। বাইবেলে লেখা আছে, ভ‚মধ্য সাগরীয় অঞ্চলে ছেলের বউ রেবেকাকে স্নেহ এবং ভালবাসার চিহ্ন স্বরূপ নাকফুল উপহার দেন আব্রাহাম। এর কিছু পর থেকেই বেদুইন এবং যাযাবরদের মাধ্যমে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে নাকে গয়না পরার রীতি। আর ষোড়শ শতকে ভারতীয় উপমহাদেশে মুঘলদের আগমনের পরই এ অঞ্চলে শুরু হয় মেয়েদের নাক ফোঁড়ানোর রেওয়াজ। সে সময় সেখানে নারীরা ঢাউস আকৃতির নাকফুল পরত, এখন সেখানে এর আকারে এসেছে পরিবর্তন, তবে এখনও কেউ কেউ জয়পুরি বড় নাকফুল পড়তে ভালবাসেন।

কালের বিবর্তনে একেক সময় নাকফুলের একেক রকম ধরন আসে। অনেক আগে গ্রামের মেয়েরা বড় আকৃতির নথ পরত। গোল একটি রিং কিংবা রিংয়ের মধ্যে কয়েকটি ছোট পুঁতি বা ফুল ব্যবহার করত। আবার চ্যাপটা ডিজাইনের লম্বাটে নাকফুলও পরত অনেকে। গ্রামের সেই ডিজাইনে এখন এসেছে আমূল পরিবর্তন। কনের নাকে বড় ধরনের নোলক থাকলেও দৈনন্দিন জীবনে এর ব্যবহার নেই। আগে নাকফুল হিসেবে ছোট একটা মসুর ডালের দানার মতো সাদা পাথর পরতে দেখা যেত। হীরা কিংবা ছোট জাফরান পাথরের ব্যবহারই এরমধ্যে বেশি হতো। এরপর ভারতের টেনিস তারকা সানিয়া মীর্জার মতো নাকে রিং পরার চলন এল। সোনালি, রূপালি কিংবা তামাটে রংয়ের রিং টিমদের বেশি পছন্দ ছিল। এখন জনপ্রিয়তা পাচ্ছে খুব ছোট পিনের গোড়ার মতো বিভিন্ন রঙের পাথরের তৈরি নাকফুল। এসব নাকফুলগুলোকে নথ বা নাকছাবিই বলা চলে। বর্তমানে নাকফুলের বিশাল সংগ্রহ রয়েছে আড়ংয়ে। বেইজ মেটাল হিসেবে সোনা ব্যবহার হয় প্রতিটি নাকফুলে। এর সঙ্গে যুক্ত সাদা পাথর, রুবি, জিরকন, এমারেল্ড গারনেট, এমনকি হীরা পর্যন্ত। যাত্রা ফ্যাশন হাউজে আছে রুপার তৈরি নাকের নথ, রিং। এছাড়া বসুন্ধরা সিটির নিচতলায় বেশ কয়েকটি দোকানে পাবেন একটু ভিন্নধর্মী ডিজাইনের নাকফুল।

নাকফুল পরার ক্ষেত্রে সবাই ব্যক্তিগত পছন্দকেই প্রাধান্য দেয়। কেউ খুব ছোট নাকফুল পরে। আবার কেউ নাকের সৌন্দর্য বাড়াতে বেছে নেয় বড় নাকফুল। তবে খেয়াল রাখতে হবে। নিজের সঙ্গে কতটা তা মানাচ্ছে। দাম দরের ক্ষেত্রে একটু সতর্কতা অবলম্বন করা ভাল। যেমন স্বর্ণের নাকফুলের দাম পরবে ১ থেকে ২ হাজার টাকার মধ্যে। সোনার প্রলেপ দেয়া নাকফুলের দাম ১০০ টাকা থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে। জিরকন পাথর দেয়া হলে ৫০০-৬০০ টাকা। হীরা বসানো নাকফুল ৪ হাজার টাকা থেকে শুরু করে হীরার মাপ অনুযায়ী দাম ওঠানামা করে। মুক্তা বসানো নাকফুল ৫০০-৬০০ টাকা। ইমিটেশনের নাকফুল ৩০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত। চুম্বকের টিপ নাকফুল পাবেন ৫০ টাকা থেকে ৮০ টাকার মধ্যে। নিউমার্কেট, চাঁদনীচক, মৌচাক মার্কেটসহ ছোট-বড় সব শপিং মলেই পাওয়া যাবে সিটি গোল্ড ও ইমিটেশনের নাকফুল। স্বর্ণ, হীরা কিংবা মুক্তার নাকফুল কিনতে জুয়েলারির দোকানে যেতে পারেন।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.