![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ঢাকার আশপাশ ও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কেনা কোরবানির পশুর চামড়া রাজধানীতে আসছে। ঈদের দিন মধ্যরাত থেকে চামড়া বোঝাই ট্রাক ও পিকাপ ভ্যান আসতে দেখা যায়। তবে শনিবার সকাল থেকে পুরোদমে আসা এসব চামড়া বিক্রি হচ্ছে রাজধানীর কয়েকটি স্থানে বসা চামড়ার অস্থায়ী বাজারে। শুধু দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকেই নয় রাজধানীর পাড়া-মহল্লার কোরবানি দেয়া ব্যক্তিদের কাছ থেকেও কেনা কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রির জন্য আনা হচ্ছে এসব অস্থায়ী বাজারে। তবে অভিযোগ উঠেছে, চামড়া শিল্পের সংগঠনগুলো চামড়ার সর্বনি¤্ন দাম ঠিক করে দিয়ে নিজেরাই তা মানছে না। তবে চামড়া ব্যবসায়ীরা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এমনকি ঘোষিত দরের চেয়ে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বেশিতে চামড়া কেনা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সভাপতি।
এদিকে দাম নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বের কারণে মুখভার পশুর চামড়ার মৌসুমী ব্যবসায়ীদের। তাদের অভিযোগ, পেশাদার চামড়া ব্যবসায়ী ও ফড়িয়াদাররাই সিন্ডিকেট করে তাদের ঠকিয়েছেন। কোরবানি এলেই নি¤্নবিত্তের মানুষেরা যেমন কসাই বনে যান, তেমনি স্বল্প পুঁজি নিয়ে অনেকেই চামড়া ব্যবসা শুরু করেন। এদের বেশিরভাগই চামড়ার দর, দাম, গুণাগুণ ও আকার নিয়ে অনভিজ্ঞ। কিন্তু অল্প পুঁজিতে বেশি লাভের আশায় তারা এ ঝুঁকি নেন। ২০ হাজার টাকা পুঁজিতে এবারই প্রথম কাঁচা চামড়া ব্যবসা শুরু করেন কমলাপুরের বাসিন্দা জাহেদুল ইসলাম। তিনি ১০০০ থেকে ১৬০০ টাকা দরে মোট ১২টি চামড়া সংগ্রহ করেছেন। জানালেন, পরিবহনসহ অন্যান্য খরচ বাদ দিয়ে চামড়া বিক্রি করে তার আয় হয়েছে মাত্র ১৫০০ টাকা। কিন্তু তার আশা ছিল চামড়া বিক্রি করে অন্তত পাঁচ হাজার টাকা আয় হবে। জাহেদের অভিযোগ, তিনি যে দামে সংগৃহীত চামড়া বিক্রি করেছেন তার চেয়ে বেশি দামে পরিচিতদের কাছ থেকে চামড়া কিনেছেন পেশাদার ব্যবসায়ীরা। একই অভিযোগ শোনা গেল পল্টনের নজরুলের মুখে। তিনি জানালেন, চামড়ার দর কমে গেছে অজুহাতে চামড়ার আশিক নামের এক ফড়িয়াদার তাকে ঠকিয়েছেন। তবে চামড়া ব্যবসায়ীরা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাদের দাবি, অনভিজ্ঞতা ও চামড়ার দর না জানার কারণে এসব মৌসুমী ব্যবসায়ীরা হয়ত লাভ করতে পারেননি।
তবে চামড়া ব্যবসায়ীরা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এমনকি ঘোষিত দরের চেয়ে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বেশিতে চামড়া কেনা হয়েছে বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সভাপতি শাহীন আহমেদ। তারা জানিয়েছেন, এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হলে চামড়া সংগ্রহকারীরা যেন সরাসরি ট্যানারিতে যোগাযোগ করে। প্রয়োজনে চামড়া বিক্রি না করে সংগ্রহকারীদের লবণ দিয়ে তা সংরক্ষণের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
জানা যায়, বিভিন্ন মহল্লা ও বড় রাস্তার মোড়ে নিজেদের লোক বসিয়ে ভ্যান ও পিক-আপ থেকে চামড়া কিনছে ঘোষিত দামের দ্বিগুণ দরে। ট্যানারি মালিকরাও বিভিন্ন মহল্লায় অগ্রিম টাকা দিয়ে স্থানীয়দের দিয়েও চামড়া কিনছেন। তবে অন্যদের চাপে ফেলতে আড়ত ও ট্যানারিতে নিয়ে আসা চামড়ার ক্ষেত্রে দাম হাকছেন ঘোষিত রেট অনুযায়ী। কোরবানির ঈদের দিন শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন জায়গা এবং হাজারীবাগের ট্যানারি ঘুরে মিলেছে চামড়া নিয়ে এমন নানা বিভ্রান্তকর সব তথ্য।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর সাইন্সল্যাব এবং ঢাকেশ্বরী মোড়ে ফড়িয়া ও মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চামড়া কেনেন ট্যানারি এবং আড়ত মালিকরা। বেচা কেনায় হরদম দর কষাকষি চলছে বলেও জানিয়েছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। বাজারে চামড়া নিয়ে আসা বেশিরভাগ মৌসুমি ব্যবসায়ীদের দাবি, লোকসানে চামড়া বিক্রি করতে হচ্ছে। যে দামে তারা চামড়া কিনেছেন সে দামই তুলতে পারছেন না অনেক ব্যবসায়ী।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজধানীতে এক শ্রেণীর মৌসুমী ব্যবসায়ী বাড়ি বাড়ি ঘুরে চামড়া কিনছেন পানির দরে। একটি বড় গরুর চামড়ার দর গৃহস্তরা পেয়েছেন আটশ’ টাকা থেকে ১৫শ’ টাকা পর্যন্ত। এ প্রভাবশালী ক্ষমতাধরদের কাছ থেকে চামড়া যাচ্ছে ট্যানারির ঠিক করা ফড়িয়াদের কাছে। ট্যানারির মালিকরা সেই চামড়া কিনে নিচ্ছেন ২২শ’ থেকে ২৮শ’ টাকা দিয়ে। তবে তাদের কাছে ভিড়তে পারছেন না প্রকৃত চামড়া ব্যবসায়ী, পোস্তার ফড়িয়া ও আড়তদাররা। ফলে প্রকৃত ব্যবসায়ীদের অবস্থা করুণ। কেউ কেউ আগের অভিজ্ঞতার জায়গা থেকে ট্যানারি মালিকদের সঙ্গে টেক্কা দেওয়ার ঝুঁকি নিচ্ছেন। তবে যারা শখে চামড়ার ব্যবসায় নাম লিখিয়েছেন তাদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা। কারণ, তারা এমনিতেই মহল্লা থেকে চামড়া কিনেছেন বেশি দামে। আড়তদাররা এখন সে দামে চামড়া নিতে চাচ্ছেন না। ঢাকার বাইরের চামড়া আসা শুরু হলে ট্যানারি মালিক ও আড়তদারদের খেলায় তাদের অবস্থা আরো করুণ হয়ে উঠে।
দেশে সারা বছরে মোট জবাইকৃত পশুর অর্ধেকের বেশি জবাই হয় ঈদুল আজহায়। সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও এ সংখ্যা ৩০ লাখের কম নয়। তাই সময়টাকে পশুর চামড়া সংগ্রহের প্রধান মৌসুম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ মৌসুমে অনেকেই নিজ নিজ পেশা ছেড়ে চামড়া সংগ্রহকারী বনে যান। কিন্তু প্রতিবারই বিভিন্ন অজুহাতে তাদের ঠকিয়ে আড়তদাররা কম দামে চামড়া কিনে নেন। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। আড়তদারদের এবারের অজুহাত হলো-চামড়া সংরক্ষণের প্রধান উপাদান লবণের অভাব। রাজধানীর হাজারীবাগ ও পোস্তার একাধিক চামড়া সংগ্রহকারীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আড়তদারেরা ঘোষিত দামে চামড়া কিনছেন না।
সংগ্রহকারীরা জানান, বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশন (বিএফএলএলএফইএ), বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ) ও বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএইচএসএমএ) ঘোষিত দর অনুযায়ি গরুর চামড়া ১৫০০ টাকা হলেও তার জন্য ১১০০ টাকার বেশি দিতে চাইছেন না আড়তদারেরা। অন্যদিকে আড়তদাররা বলছেন, লবণের অভাবে চামড়া কেনা বন্ধ আছে। কম দামে কেনা হচ্ছে না।
এ ব্যাপারে বিটিএ’র সাথে যোগাযোগ করা হলে সংগঠনটির সভাপতি শাহীন আহমেদ দাবি করেন, কম দামে চামড়া কেনার খবর সত্য নয়। তিনি বলেন, আমরা যতদূর জানি চামড়া ঘোষিত দরের চেয়ে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বেশিতে কেনা হচ্ছে। এ ব্যাপারে তথ্য রয়েছে বলে জানানো হলে তিনি বলেন, কোনো অসাধু চক্র এমনটি করে থাকতে পারে। তবে সে ক্ষেত্রে চামড়া সংগ্রহকারীরা যেন সরাসরি ট্যানারিতে যোগাযোগ করে। শাহীন আহমেদ আরও বলেন, যদি কেউ নির্ধারিত দামে চামড়া বিক্রি করতে না পারেন, তবে তারা সহজেই নিজেরা লবণ দিয়ে তা সংগ্রহ করতে পারেন। এ চামড়া পরবর্তীতে যে কোন ট্যানারিতে বিক্রি করা যাবে।
পোস্তার সোবহান নামের এক চামড়া ব্যবসায়ীর মতে, অল্প পুঁজিতে বেশি লাভের আশায় অনেকেই কোরবানির ঈদে বিক্রির জন্য কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করেন। কিন্তু এরা না চামড়া বোঝে, না দর জানে, না সাইজ আন্দাজ করতে পারে। এজন্যই তারা ঠকে। তবে তার সাথে একমত নন মান্নান নামের মৌসুমী ব্যবসায়ি। তিনি প্রায় তিন বছর ধরে রাজধানীতে কোরবানির সময় চামড়া সংগ্রহ করে আসছেন।
তার মতে, কোরবানির অন্তত পাঁচ দিন আগে কাঁচা চামড়ার দর ঘোষণা করা উচিত। তিনি জানান, সবাই যখন পশু কেনা নিয়ে ব্যস্ত তখন চামড়ার দর ঘোষণা করাতে পশু কোরবানি দাতাদের অনেকেই তা জানতে পারেননি। যার কারণে দাম কমানো হয়েছে বললেও অনেকেই বিশ্বাস করেননি। এতে বাধ্য হয়ে বেশি দামে চামড়া কিনতে হয়েছে। এ কারণেই এবার মৌসুমী ব্যবসায়িরা চামড়া নিয়ে লোকসানে পড়েছেন।link
©somewhere in net ltd.