![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১
কেন হুমায়ুন আহমেদ হইলামনা ইহা ভাবিয়া আজ কিছুটা দুঃখ বোধ হইতেছে, হইলে পরে আমার ক্ষুদ্র শব্দ ভান্ডারে হাত পাতিয়া শব্দ খুঁজিয়া ফিরিয়া এই বিবাহ গাঁথা লিখিতে হইতো না। সাধু ভাষায় আরম্ভ করিলাম, ভুল যখন হইবেই তখন তাহা গুরুচন্ডালী না অন্য কোন দোষে দূষিত হউক কি বা আসে যায়।
বিবাহ নাকি প্রজাপতির নির্বন্ধ (predestined), ইহা জানিলেও হয়তো পুরাপুরি মানিয়া লই নাই। কিছু অনিচ্ছায় অনাকাঙ্কিত ইতিহাসের পর ইহা প্রজাপতির (পরম করুনাময় আল্লাহ) উপরই ছারিয়া দিয়া ছিলাম। দেখিবনা, জানিবনা, শুনিবনা যাহা হইবে মানিয়া লইব- ইহাই ছিল পন। হঠাৎ ই পিতৃদেবের ইচ্ছায় কিছু না জানিয়াই রাজী হইলাম এবং বিবাহের প্রাথমিক আয়োজনও (আংটি বদল) সম্পন্ন হইলো।
অপর পক্ষও যে অনেকটা উপরআলার ভরসাতেই ছারিয়া দিয়াছিলো তাহা বুঝিতে পারিনাই। বুঝিলাম যখন অঙ্গুঠি বদল হইবার পর সে আমার পুরা নাম জানিতে চাহিয়াছিল!! সেই ছিল আমাদের প্রথম দেখা ও কথা। কিছুতা বিষ্মিতও হইয়া ছিলাম।
২
আর সাধু ভাষার শব্দজোট সামলাইতে পারিতেছিনা। চলিত ভাষায় চলিতে শুরু করিলাম। একটা অনিশ্চয়তার ভয় সব সময়ই ছিল। নতুন মানুষ,নতুন সবকিছু, অজানা অচেনা…কিন্তু পরিচয়ের পর সব কেমন জানি সহজ হয়ে গেলো। যে সমঝোতা, শ্রদ্ধা, ভাললাগা অজান্তেই তৈ্রী হয়েছে তা পরম করুনাময়ের ইচ্ছা ছাড়া সম্ভব না। তার প্রতি কৃ্তজ্ঞতা সব সময়।
৩
একটা মজার ব্যপার হচ্ছে…খালু, ফুফা, দুলাভাই-নিজেই যে কখন এইসব হয়ে গিয়েছি বুঝতে পারিনাই।প্রথম প্রথম শুনলেই এদিক ওদিক তাকাতাম, কাকে ডাকা হচ্ছে? পরে দেখি সে যে আমিই :-p।
৪
বিবাহের মুল গল্পটা শুরু হোক…তারিখ দুইজন মিলেই ঠিক করা। ২১শে ফেব্রুয়ারী হলুদ, ২২ শে বিয়ে, ২৩শে বৌভাত। সব সহজভাবেই হচ্ছিল।অনেক আগে থেকে গ্রামে ফেরার টিকেট ও কাটা ছিল। কিন্তু ঝামেলার শুরু রওয়ানা হওয়া থেকে। ঢাকার বিখ্যাত ট্রাফিক জ্যাম এবং যথারীতি বাস ধরতে না পারা । বিয়ের আগের দিন কেউ বাস মিস করে কিনা আমার জানা নেই। রাত ২টা পর্যন্ত আমি আর জীম (কাজিন) গাবতলী থেকে শ্যামলী ব্যাগ বস্তা নিয়ে অন্য বাস খুঁজে বেড়ালাম। ইচ্ছে ছিলো ইঞ্জিন এমনকি পাদানিতেও বসে যাব, কিন্তু বিফলে আবার বাসায় ফেরত । পরদিন সকালের দুইটা টিকেট অনেক কষ্টে জোগার হয়েছিল। কিন্তু সকালে আর বাসের দেখা নাই, চার ঘন্টা দেরি হবে ছাড়তে, রাস্তায় বিশাল জ্যাম।
ওই দিন গায়ে হলুদ ছিল। এক পর্যায়ে ঠিক হলো বাড়ীতে আমার ছবি ঝুলায়ে হলুদ হবে!! আর রাধুনী গুড়া হলুদ দিয়ে নিজেরাই বাসের লোকজন নিয়ে আনুষ্ঠান করে ফেলবো। এমনকি অনেক বেশী দেরি হওয়ায় একবার হলুদ বাদ দিয়ে ফোনেই বিয়ে সেরে ফেলা যায় কিনা সে আলোচনাও হয়েছে!!!
মজার ব্যাপার হচ্ছে আশেপাশের যাত্রীরা আমাদের ভাঙ্গা কথায় কিছুটা ভুল বুঝে আলোচনা করছিলো, যে বরযাত্রী এখানে আটকে আছে আর বেচারা বরের না জানি কি অবস্থা, কোথায়, কিভাবে আছে? একবার আমাদের জিজ্ঞাসাও করেছিল …victim যে সামনেই বসে আছে সে কথা আর বলা হয়নি।তারপর গভীর রাতে বাসায় পৌছানো, গায়ে হলুদের আয়োজন, বিবাহ ও বধূবরন সম্পন্ন, কোন ঝামেলা ছাড়াই!!
৫
শুধু যাত্রা বিঘ্নই নিয়তি লিখন কিনা কে জানে…ছুটির শেষ দুইদিন ছিল মধূচন্দ্রিমার জন্য!-কক্সেসবাজার এ। দেশের বাড়ী থেকে ফিরে ওই দিন রাত ১১টায় বাস। কিন্তু ফেরার পথে মাঝ রাস্তাতেই ফোন আসলো রাত এগারোটার বাস ছারবে ৮ টায়। কারন পরদিন হরতাল এবং মহামান্য সাঈদী!! সাহেবের রায় ঘোষনার দিন । ঢাকায় ফিরে বাস ধরতে পারাটা কিছুটা অসম্ভবই ছিল। সেই থেকে অনিশ্চয়তার হৃদকম্পন বাস ধরতে না পারা পর্যন্ত আর থামাতে পারি নাই। পৃথিবী সবচেয়ে কঠিন একটা কাজও করতে হয়েছে-বাথরুম চেপে রাখা । বাসে উঠে মনে হয়েছিল, যাক ঝামেলা শেষ।।কিন্তু এটাই যে শুরু তা বুঝতে পারি নাই। শুরু হলো আবার সেই জ্যাম, তারপর রাতে ডাকাতের হামলা। পাশের জানালার গ্লাস ভেঙ্গে দিয়ে ছিল। কপালজোরে কোন আঘাত লাগে নাই।
তখনও আশা ছিল কক্সেসবাজার পৌছাতে পারবো। কিন্তু ভোর হতেই দেখি চট্টগ্রামে আটকে আছি, হরতাল ও ভাঙ্গচুর শুরু হয়ে গিয়েছে। বাসওয়ালারা জানিয়েছে সন্ধার আগে আর যেতে পারবেনা। বাধ্য হয়েই বাস কাউন্টারের পাশের এক হোটেলে রুম নিতে হয় এবং এক ঘন্টার মাঝেই সেখানে পুলিশের হামলা!! সাথে আই ডি কার্ড এবং দুই জন ডাক্তার পরিচয় দেয়ার পর ঝামেলা থেকে বেঁচে যাই। (বাংলা jab we met)
এরমাঝে একটা ভালো ব্যাপার হলো হরতালের মধ্যেই Foy’s lake ভ্রমন। may be this was a gift from god.
সন্ধায় কক্সেসবাজারের উদ্দেশ্যে বাস ছাড়ার কথা…ছেড়েও ছিল। কিন্তু একঘন্টা পর আবার কখন যে চট্টগ্রামে ফেরত এসেছিল বুজতে পারি নাই। হঠাৎ ই দেখি বাস আবার সেই কাউন্টারে।সব জায়গায় কঠিন মারামারি চলছিল। ঢাকায় ফেরার পথও বন্ধ। কোথায় যাব, কি করব বুঝতে পারছিলামনা। এই বিপদের সময় যার কথা না বললেই নয়…অনন্যা ও তার পরিবার, যে আতিথীয়তা ও আন্তরিকতা তারা দেখিয়েছেন…আমরা চিরকৃতজ্ঞ।
পরদিন সকালে অতি অনিশ্চয়তার মাঝেও আবার ঢাকার পথে যাত্রা শুরু। জালাও পোড়াও, মারামারি, কাটাকাটি কাটিয়ে অবশেষে ৫ ঘন্টার পথ ১৪ ঘন্টায় শেষ করে ঢাকা পৌছানো। আলহামদুলিল্লাহ। যে ভাবে প্লান ছিল তা হয়তো হয় নাই but it was a life time thrilling experience. এতো বিপদের মাঝেও যে সুস্থ ও নিরাপদে ফিরতে পেরেছি এর জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে চিরকৃ্তজ্ঞতা। সবশেষে তুলিকে ধন্যবাদ, এই গল্পের শুরুটা সেই করেছিল, পরে জানতে পারি।
একজন ভালো মানুষের সঙ্গী করার জন্য আল্লাহকে ধন্যবাদ। আমাদের ভালোলাগার অনুভূতি গুলো পার্থিব ও অপার্থিব জীবনে থেকে যাক সব সময়, এই প্রার্থনায় শেষ করছি। শুভ কামনা সবার জন্য।
©somewhere in net ltd.