নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

\"বেঁচে থাকার আদব\"

ডা: মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম

আমি একজন সাধারণ মুসলমান। ভালবাসি ইসলামী জীবনযাপন। আমার জীবনের লক্ষ্য মাওলা আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি অর্জন করেই এই রংতামাশার ভুবন, মুসাফিরখানা ছেড়ে আমাদের আসল বাড়ি কবর, হাশর, পুলছেরাত হয়ে জান্নাতের পথে পাড়ি দেয়া। দীর্ঘ পথ। কিন্তু পথের রসদ কম। অবশ্য কম হলেও দামী। এর নাম নবীজী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নত। আমি চাই আমার জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে আমার পরিবার, বন্ধুমহল, পাড়া-প্রতিবেশি, সমাজ, রাষ্ট্র, অতঃপর দেশ থেকে দেশান্তরে, যুগ থেকে যুগান্তরে, কাল থেকে কালান্তরে, কিয়ামত পর্যন্ত ছড়িয়ে দিতে। কারণ ইসলাম পেয়ে আমি খুশি। আমার মনে আনন্দ। আমার স্ত্রীর মনে, আমার বাচ্চার মনেও আনন্দ। আমার সুখ, আমার আনন্দ আমি সকল মানুষের সাথে শেয়ার করতে চাই। মানুষ কেন কষ্টে থাকবে? মানুষকে কষ্ট দেয়ার জন্যতো রব্বুল য়ালামীন মানুষ সৃষ্টি করেন নাই। তুমি আল্লাহর হুকুম মান, নবীজী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পথে চল তাহলে শান্তি পাবে, সম্মান পাবে, সব পাবে। আর যদি না মান তাহলে আমি তোমাদের জন্য এক মহাশাস্তির আশংকা করতেছি। সিম্পল এ কথাটাই আমি মানুষের কাছে পৌঁছাতে চাই। যাহোক আমি আমার জীবনের লক্ষ্য উদ্দেশ্যকে খুঁজে পেয়েছি। আলহামদুলিল্লাহ। তবে সত্যি বলতে কি আমি কোন বুদ্ধিজীবীর কাছ থেকে, আমার স্কুল কলেজ মেডিকেল কলেজের কোন শিক্ষক অথবা বন্ধু, শার্ট পেণ্ট পরা আধা ইংরেজ আধা বাংলা কোন লোকের কাছ থেকে আমি আমার জীবনের ভালো কিছুই শিখিনি। যাকিছু আমার জীবনে কল্যাণকর ও সুন্দর আমি পেয়েছি, অন্তরের প্রশংসা মানুষের কাছ থেকে যতটুকু পেয়েছি সবকিছু আমি মসজিদ থেকে, দ্বীনী প্রতিষ্ঠান থেকে, হুজুরদের থেকে, নায়েবে রসূল আলেম ওলামা ও চার আনার মোল্লাদের কাছ থেকে শিখেছি। জাহান্নামের পথ থেকে তারা আমাকে জান্নাতের পথ চিনিয়েছে। আলেমতো হতে পারবনা। কিন্তু সারাজীবন আল্লাহ, আল্লাহর রসূল ও নায়েবে রসূলদের গোলাম হয়ে থাকতে চাই। আর এর বরকতে যদি রব্বুল য়ালামীন কুরআন শরীফের নূরওয়ালা একটু জ্ঞান আমাকে দান করেন তবে আর কিছুই চাইনা।

ডা: মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

জয় পরাজয়ের কিসসা, একটি ভবিষ্যৎবানী এবং এক বিষ্ময়কর বালকের গল্প

১৩ ই মে, ২০১৪ রাত ১১:২৩

[সমস্ত প্রশংসা একমাত্র মহান আল্লাহতায়ালার জন্য। দরূদ ও সালাম আল্লাহর রসূল, দোজাহানের সর্দার, বিশ্বশান্তির একমাত্র আদর্শ হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর। আমরা দোয়া করি আল্লাহতায়ালা লেখক ও পাঠক উভয়পক্ষকেই হেদায়াত দান করুন। আমীন]



মানুষ জয়ী হতে চায়। পরাজিত কেউই হতে চায় না। জয়ীকে সবাই পছন্দ করে, ভালবাসে, পরাজিতকে কেউ কেউ করুণা করে। দুই গ্রাম্য লোক কুস্তি লেগেছে। কুস্তির নিয়ম অনুযায়ী ধরাশায়ী ব্যক্তি পরাস্ত হয় আর যে ধরাশায়ী করে তাকে বিজয়ী বলা হয়। তো ঐ কুস্তিতে যে ধরাশায়ী হলো সে আর পরাজয় মানতে চায়না। সে বলতেছে রোদটা এখন কার গায়ে লাগে। এ হল অবস্থা। আমরা বলি, তুমি পরাজিত হয়েছ পরাজয় মেনে নাও। এতেই শান্তি ও কল্যাণ।



তো সব ক্ষেত্রে জয় পরাজয়ের মীমাংসাটা এত সরলরৈখিক নয়। ইসলাম আমাদের শিক্ষা দিয়েছে জয় পরাজয়ের সঠিক নিরীক্ষণ ও যথাযথ মীমাংসা করতে। আমাদের পরবর্তী আলোচনায় আমরা কুরআন ও হাদীসের আলোকে এক দীর্ঘ ও মনস্তাত্ত্বিক লড়াইয়ের গতি-প্রকৃতি বিশ্লেষণ করব ইনশা'আল্লাহ।



আজকে মুসলমানদের চরম দুর্দিন ও বেহাল অবস্থায় কুরআনের একটি ঘোষণা ও হাদীসের একটি ভবিষ্যৎবানীকে আমরা সামনে আনব। এটি একটি বৈশিষ্ট্যমন্ডিত ব্যাপার যা মুসলমানদেরকে অন্য সমস্ত জাতীয়তাবাদ, ধর্ম ও মতবাদ থেকে পৃথক করে দেয়। তারা তাদের দ্বীনের ব্যাপারে এত অধিক পরিমাণে আস্থাশীল ও নিঃশঙ্কচিত্ত যে অন্য কোন মতবাদ বা চেতনাধারীরা তাদের স্ব-স্ব মত, পথ ও চেতনায় এতটা নয়। হাজার বছরের আঁধারের বুক চিরে ইসলাম তার তীব্র আলোকরশ্মি নিয়ে এল। সে এল এবং জয় করল। এরপর আবার ধারাবাহিক ব্যর্থতার অমানবিক ইতিহাস। কখনো তা সমাজতন্ত্রের নামে, কখনো সেক্যুলারিসম, কখনো গণতন্ত্রের নামে, কখনো নারীবাদ, পুঁজিবাদ, কাব্যকলা, শিল্পকলার নামে, হাজার বছরের ইতিহাস বা সংস্কৃতির নামে, কখনো আঞ্চলিকতা বা ভূ-ভিত্তিক অথবা ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদ, কখনো রেনেসাঁ, কখনোবা গণজাগরণের নামে। সমাজতন্ত্র আজ এক বস্তাপচা ইতিহাস। গণতন্ত্রে সবচেয়ে উপেক্ষিত হয়েছে জনগণ। নারীবাদ, সেতো হল নারীকে ভোগের মতবাদ। আর ধর্ম? ইসলাম বাদে কোন ধর্মে জীবনের সঠিক দিকনির্দেশনাই নেই। আছে কিছু আনুষ্ঠানিকতা যেগুলো শিরক আর কুফরীতে ভরা। এরকমভাবে ইসলাম পরবর্তী প্রতিটি 'ধর্ম' 'তন্ত্র' আর 'বাদ' সবাই রচনা করেছে মানবতাকে অপমান করার নিকৃষ্ট ইতিহাস। সকলেই যখন ব্যর্থ তখন ধরাশায়ী কুস্তিগীরের ঐ বাক্যবাণ সকল তন্ত্র ও মতবাদের ধ্বজাধারীরা ছুঁড়ে দেয় ইসলামকে লক্ষ্য করে, কুরআনকে লক্ষ্য করে, নবীজিকে লক্ষ্য করে (তার উপর শান্তি বর্ষিত হোক) , "এখন রোদটা লাগে কার গায়ে?" কিন্তু তাতে ইসলামের কোন ক্ষতি হয়না, তাদের মুখের ঐ বুলিতেই আল্লাহর দল পরাজিত হয়না।

দেখা যাক কুরআন কি বলে? সূরা মায়েদার ৫৬ নং আয়াতে আল্লাহপাক বলেনঃ



وَمَن يَتَوَلَّ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ وَٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ فَإِنَّ حِزۡبَ ٱللَّهِ هُمُ ٱلۡغَٰلِبُونَ



"আর যারা আল্লাহ, তাঁর রসূল ও বিশ্বাসীদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করে তারাই আল্লাহর দল, তারাই বিজয়ী।"



আল্লাহর রসূল জনাবে মুহাম্মদ (আল্লাহপাক তার উপর শান্তি ও রহমত বর্ষণ করুন) শত শত ভবিষ্যৎবানী করেছেন যা হাদীসের বইগুলোতে স্বর্ণাক্ষরে জ্বলজ্বল করছে। একটি হাদীসে তিনি উল্লেখ করেছেন, তোমাদের মধ্যে একটি ছোট দল থাকবে, একটি ছোট জামাত - যারা সবসময় বিজয়ী থাকবে। পৃথিবীর কোন শক্তি, কোন বদদ্বীনী এই কাফেলার কোন ক্ষতি করতে পারবেনা। তাদের হাতে দ্বীনের পতাকা পতপত করে উড়বে। সে পতাকা চির উড্ডীন থাকবে। কোন রাজন্য, কোন দন্ডাদেশ, কোন এটম এ পতাকাকে নামাতে পারবেনা। বরং যারা এদের ক্ষতি করতে চাইবে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ ছোট্ট কাফেলার কোনই ক্ষতি হবেনা।



আল্লাহর পাক কালাম আর আল্লাহর রসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাদীস। সত্য। বর্তমান বাস্তবতায় যখন সারা পৃথিবীর সমস্ত শক্তি মুসলমানদের বিরুদ্ধে একাট্টা, রাজনীতীবিদ থেকে দোকানদার, শিক্ষক থেকে খেলোয়াড়, শিল্পী সাহিত্যিক কবি বুদ্ধিজীবি সুদি কারবারী বিজ্ঞানী ঘুষখোর মদ্যপ সকলেই যখন নিজ নিজ সামর্থানুযায়ী ইসলামের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে, পৃথিবীর অস্ত্রভান্ডারের সবগুলো অস্ত্র যখন মুসলমানদের হৃৎপিন্ড বরাবর তাক করা আছে তখন কুরআন ও হাদীসের এই ভবিষৎবানী ভীষণ তাৎপর্যময় অর্থ বহন করে। হতে পারে অন্ধকার রাতে এক আলোকবর্তিকা। "চারদিকে যখন গাঢ় আঁধার, তখন একটি শক্তিশালী মশালই যথেষ্ট পথ দেখাতে।" আর মুসলমানদের কাছে আছে এমনই শক্তিশালী মশাল যা সম্পর্কে প্রতিটি সাধারণ মুসলিম অবগত তো বটেই, প্রতিটি কাফেরও অবগত। প্রতিটি কাট্টা কাফেরও জানে যে আল্লাহ ও আল্লাহর রসূলের বানী সত্য সত্য সত্য।



জয় কাকে বলে আর পরাজয় কাকে বলে এ বিষয়ে সঠিক শিক্ষাদানের জন্য কুরআন মজীদে আল্লাহপাক সূরা বূরূজে বহু প্রাচীন একটি ঘটনার অবতারণা করেছেন। আল্লাহর রসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘটনাটির বিস্তারিত বিববরণ পেশ করেছেন যার বর্ণনা মুসলিম শরীফে এসেছে।



ঘটনাটি এরকমঃ

বহুকাল পূর্বে কোন এক রাজ্য এক মুশরিক বাদশাহ শাসন করত। তার রাজদরবারে ছিল এক যাদুকর। সে কুফরীবিদ্যা দিয়ে রাজাকে রাজ্য পরিচালনায় সাহায্য করত। যাদুকর বুড়ো হলে সে রাজাকে পরামর্শ দিল, আপনি আমাকে একটি বুদ্ধিমান বালক দিন যাকে আমি আমার যাদুবিদ্যার উত্তরাধিকারী করব। আমার মৃত্যুর পর সে আপনাকে রাজকাজে সাহায্য করবে। বাদশাহ রাজকর্মচারীদের ভেতর থেকে কোন একজনের ট্যালেণ্ট, ইণ্টেলিজেণ্ট এক বালককে যাদুশিক্ষার জন্য মনোনীত করলেন। ঐ বালক প্রতিদিন যাদুকরের বাসায় যাওয়া আসা করতে লাগল। বালকের আসা যাওয়ার পথে একজন আলেমের খানকাহ ছিল। ঐ আলেমের ছিল ইলমে ইলাহী তথা তৌহিদ বা একত্ববাদের জ্ঞান। ঘটনাক্রমে ঐ আলেমের সাথে বালকের পরিচয় হল। আলেমের ব্যবহারে বালক মুগ্ধ হল। আলেম বালকের ভিতর তালিবে ইলমের গুণ খুঁজে পেলেন। বালকের অনুসন্ধিৎসা তাকে মুগ্ধ করল। আলেম তাকে ইলমে ওহী তথা দ্বীনশিক্ষা দিতে লাগলেন। তৌহিদের শিক্ষা পেয়ে বালকের হৃদয় তাতে সাড়া দিল। তবে তার হৃদয় এই নতুন জ্ঞানকে পরীক্ষা করে নিতে চাইল। সে উপায় খুঁজতে লাগল। একদিন একটা সিংহ বা অনুরূপ হিংস্র পশু রাস্তার উপর বসে মানুষের চলচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করছিল। সে একটা ছোট কঙ্কর নিয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করল। "হে আমার পরম প্রিয় পরওয়ারদেগার, আমার উস্তাদ আলেমের শিক্ষা যদি সঠিক হয়ে থাকে তবে এই কঙ্করের আঘাতে তুমি ঐ বন্যপশুকে বধ কর।"

বালক অতঃপর আল্লাহর নামে কঙ্করটি ছুঁড়ে মারল। যে পাথরের আঘাতে একটা চড়ুইপাখি মরার কথা না, আল্লাহর কুদরতে মুহূর্তে পশুটি বধ হয়ে গেল। বালকের অলৌকিক ক্ষমতার কথা আস্তে আস্তে রটে গেল। তার কাছে মানুষজন নানা সমস্যা সমাধানের জন্য আসতে লাগল। তৌহিদের আদর্শ প্রচারের জন্য বালক একে মোক্ষম সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করল। সে প্রচার করতে শুরু করল তার নিজস্ব কোন ক্ষমতা নেই। বরং আল্লাহতায়ালাই করনেওয়ালা, যিনি ক্ষমাশীল, প্রেমময়। তোমরা যদি একত্ববাদে বিশ্বাসী হয়ে যাও তবে আমি তোমাদের জন্য দোয়া করব রব্বুল য়ালামীন যেন তোমাদের সকল সমস্যা সমাধান করে দেন। মানুষজন একে একে তার কাছে তৌহিদের দীক্ষা নিতে শুরু করল। আল্লাহর রহমতে তাদের জাগতিক সমস্যারও সমাধান হতে লাগল। এসব কথা এককান, দুকান করে রাজার কানে পৌঁছল। শুনেত রাজা "রাগিয়া মাগিয়া আগুন।"



রাজার মনে ভয় ঢুকল। অন্ধকারের পোকারা হঠাৎ আলোর ঝলকানিতে যেমন ভীত হয় তেমন। তৌহিদের আঘাতে তার কুফরীর জালিমশাহী নড়বড়ে হয় যায়। সিংহাসন হারানোর ভয়ে ভীত বাদশাহ জুলুমের পথ বেছে নেয়।



আলেমকে ফাসি দেয়া হয়। এক অন্ধ ব্যক্তি ঈমানদার হয়ে চোখ ফেরত পেয়েছিল তারও ফাসি হয়ে যায়। আর বালককে ক্রসফায়ারের জন্য পাঠিয়ে দেয়া হয় এক উঁচু পাহাড়ের চূড়ায়। কিন্তু আল্লাহর ফয়সালা ছিল অন্যরকম। আল্লাহ সত্যকে বাঁচিয়ে রাখতে চান বিজয়ী করবেন বলে। ফলে পাহাড় দুলে উঠল। রক্ষী সৈনিকেরা ছিটকে ছিটকে পড়ল পাহাড় থেকে। বালক সোজা নেমে এসে তখন রাজদরবারে। বালককে দেখিয়া বাদশাহ পুনরায় "রাগিয়া মাগিয়া আগুন।"



বাদশাহ ভাবলেন এ ছোকড়া বড় যাদুকর। পাহাড়কে বশীভূত করেছে। কাজেই ক্রসফায়ার হোক সমুদ্রে। বালককে তোলা হল নৌকায়। অতঃপর নৌকা ভাসান হলো গহীন সাগরের দিকে। সাথে চলল রাজার পাইক পেয়াদা ভৃত্য। উদ্দেশ্য বালককে সমুদ্রের পানিতে ফেলে দেয়া হবে। সমুদ্রের অতলে ডুবে যেন যায় দ্বীনের সূর্য। কিন্তু আল্লাহ তার দ্বীন নিজেই হেফাজত করেন। হেফাজত করেন দ্বীনের কর্মীদের প্রচেষ্টাকেও। এবার সাগরে ঝড় উঠল। পাইক পেয়াদা সকলেই প্রাণে মরল। বালকটি অক্ষত অবস্থায় ফিরে এল রাজদরবারে। বাদশাহর মুখোমুখি। বাদশাহ ততক্ষণে রেগেমেগে অগ্নিশর্মা। বালকটি নির্বিকার। সে বলল, হে বাদশাহ নামদার, আপনার কোন শক্তি, আপনার কোন কৌশল আমার কোন ক্ষতি করতে পারবেনা। আপনি কিয়ামত পর্যন্ত চেষ্টা করেও আমার এতটুকু ক্ষতি করতে পারবেননা। কারণ আমার সাথে আমার আল্লাহ আছেন, যিনি ক্ষমাশীল, প্রেমময়। আপনি তওবা করলে আমার আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করে দিবেন।



কিন্তু কপালপোড়া বাদশাহ তওবার পথে, সহজ সরল পথে হাঁটলেননা। বালক তখন দেখতে পেল অন্য এক অপার সম্ভাবনা। জীবনের চেয়ে মৃত্যু যদি সত্য প্রতিষ্ঠায় অধিক কার্যকরী হয় তবে জীবনের থেকে মৃত্যুই শ্রেয়। দ্বীনের পথে, সত্যের পথে নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার আনন্দে সে আত্মহারা হল। বাদশাহকে সে বলল, বাদশাহ নামদার, একমাত্র আমার পরামর্শ মত কাজ করলেই আপনি আমাকে হত্যা করতে পারবেন। বাদশাহ বললেন, হে নাবালক ছেলে, কি সে পরামর্শ বল। তোমাকে হত্যা করতে সব পরামর্শই আমি শুনতে রাজি আছি। বালক বলে চলল, আপনাকে যা করতে হবে তাহলো একটি চত্বরে দেশের সব মানুষকে আপনি জড়ো করবেন। অতঃপর সবার সামনে আপনি পাঠ করবেন একটি কালিমা। বাদশাহ বললেন ওহে ছেলে, তোকে হত্যা করতে যে কালিমা পড়া লাগে আমি পড়ব, যে জিকির করা লাগে আমি করব। অতঃপর সেমতে বাদশাহ একটি চত্বরে দেশের সব মানুষকে দাওয়াত করলেন। আজ আমাদের জানা নেই সেটি কোন চত্বর ছিল। হতে পারে সেটি বেলীর চত্বর, সেটি হতে পারে গোলাপের চত্বর অথবা হতে পারে শাপলা চত্বর। তবে নাম যাই হোক উক্ত চত্বরে সবাই যখন উপস্থিত তখন বালক বাদশাহকে বলল, আপনি পাঠ করবেন, বিসমিল্লাহি রব্বি হাযাল গোলাম। এই গোলাম বালকটির মহান প্রতিপালক আল্লাহর নামে শুরু করলাম। অতঃপর তীর নিক্ষেপ করবেন। ইনশা'আল্লাহ আপনি আমাকে মৃত পাবেন। লাখো জনতার সামনে বাদশাহ উচ্চারণ করলেন এক মহান কালেমা বিসমিল্লাহ••• জগৎসমূহের একমাত্র প্রতিপালক দয়াময় আল্লাহর নামে। অতঃপর তীর নিক্ষেপ করলেন। বালকের ডান দিকের কান ও কপালের মাঝ দিয়ে তীরবিদ্ধ হল। রক্তাক্ত বালক মাটিতে লুটয়ে পড়ে শহীদের অমৃত সুধা পান করে নিল। এ ঘটনা উপস্থিত জনতার মাঝে জোয়ার সৃষ্টি করল। তাদের চোখ ফেটে অশ্রূ বেরুলো।

লাখো কন্ঠ ঘোষণা করল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ•••আল্লাহ ছাড়া কোন মা'বুদ নেই।



ওদিকে বাদশাহ তার কল্পিত বিজয়ের আনন্দে উদ্ভাসিত। সে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল। তার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। নিরীহ বালকটিকে খুন করার মাধ্যমে সত্যের পতাকাকে নামিয়ে ফেলে নিজের ক্ষমতার মসনদকে দীর্ঘস্থায়ী ও নিরাপদ করার খুশিতে সে পুনরায় অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল।



কিন্তু বাদশাহ নামদার জানলনা, সে বুঝতেও পারলনা, ছোট্ট মায়াবী মুখের সেই তালিবে ইলম বালকটির কোন ক্ষতি হয়নি। চির উড্ডীন তৌহিদের পতাকা এক মুহূর্তের জন্য নামেনি। বরং এক কন্ঠ থেকে লাখো কন্ঠে, এক হৃদয় থেকে অজস্র হৃদয়ে ছড়িয়ে পড়েছে তৌহিদের মহান কালেমা। এক ফুলের সুঘ্রাণ তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে গুলবাগিচার সমস্ত ফুল থেকে।



আচ্ছা ছোট্ট সেই বালকটি আমাদের কোন শিক্ষা দিয়েছে? হ্যাঁ, শিক্ষা দিয়েছে বটে, তবে, জীবনকে যারা ভোগ বিলাসের সামগ্রী বানিয়েছে, যারা দুর্নীতির পাহাড় বানিয়েছে, ওই বাদশাহর মত যারা জেনেশুনে খোদাদ্রোহীতায় লিপ্ত রয়েছে এবং অহংকার করেছে এ শিক্ষা তাদের কোন কাজে আসেনা।



বালকের এ ঘটনা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করার জন্য পরম দয়াময় আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুরআনে এ ঘটনার অবতারণা করেছেন। যা বহু ইমাম সাহেব আজো নামাজে পাঠ করে থাকেন। মুমিনেরা তিলাওয়াত করে থাকেন। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদীসে যা বর্ণনা করেছেন মুহাদ্দিসরা তালিবে ইলমদের নিকট তা পাঠদান করে থাকেন। আর ওলামায়ে কেরামগণ মানুষের ময়দানে ওয়াজ নসিহত পেশ করেন। কোন সে প্রেরণা এই বালককে উদ্বুদ্ধ করল বাদশাহর সাথে টক্কর দিতে? বাতিলের সাথে হক্বের লড়াই এরকমই হয়। বাতিল তার ভয়াবহ রূপ নিয়ে জলোচ্ছ্বাসের মত আসে। হক্বও দাড়িয়ে যায় তার সীমিত আসবাব-উপকরণ নিয়ে। বাতিল যখন আসে ফেরাওনের রূপ নিয়ে, মূসা ও হারূন আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাতে থাকে হক্বের ঝান্ডা। বাতিল যখন আসে নমরূদের রূপ নিয়ে দাড়িয়ে যান ইবরাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম। বাতিল যখন আসে আবু জাহেল ও তার দোসরদের রূপ ধরে দ্বীনের পতাকা ওড়ে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ও তার সাহাবীদের হাতে। দ্বীনের পতাকা ওড়তেই থাকে। কখনো নামে না। একমুহূর্তের জন্য নামে না। আজও দেখি নাস্তিকতাবাদ, নারীবাদ, মোমবাতি প্রজ্জ্বলন, পান্তাভাত, সূর্য্যপূজা নানাভাবে যখন বাতিল করে আস্ফালন তখনও নায়েবে রসূল আলেম ওলামারা দাঁড়িয়ে যান, বেরিয়ে পড়েন তাদের প্রিয় কুরআনের দরস থেকে বাতিলের মুখোমুখি দাঁড়াতে। চির উন্নত এই কাফেলার ঝান্ডা থাকে কখনো হোসাইন আহমদ মাদানীর হাতে, কখনো শায়খুল ইসলাম আল্লামা আযিযুল হক্বের হাতে, কখনো মুফতী ফজলুল হক আমিনীর হাতে, কখনোবা আল্লামা আহমদ শফির হাতে। রক্ত ঝরে, প্রাণও ঝরে, কিন্তু দ্বীন থাকে চির উড্ডীন, চির বিজয়ী।।



আমাদের জীবন আল্লাহতায়ালারই জন্য। আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য আল্লাহর দ্বীনকে মানার মাধ্যমে নিজে সংশোধিত হওয়া এবং দ্বীনের পতাকা বহন করা অর্থাৎ আল্লাহর দ্বীনকে মানুষের কাছে তুলে ধরা যেন মানুষ নিজেকে সংশোধন করে এক আল্লাহর হয়ে যায়। মানুষ যেন নিজের আমিত্বকে বিসর্জন দিতে পারে। মন চাহি জিন্দেগী ছেড়ে রব চাহি জিন্দেগীর অনুসরণ করতে পারে। জাহান্নামের দিকে দৌড়াচ্ছে যে লোকগুলো, তারা যেন পথ ঠিক করে জান্নাতের পথকে চিনে নিতে পারে। এটাই মহান দাওয়াতের কাজ। এ কাজে যদি বাঁধা আসে, যদি এমন হয় মৃত্যুর মাধ্যমে এ কাজকে আরো সফলভাবে এগিয়ে নেওয়া যায় তবে সেদিন আমরা আর বাঁচতে চাইনা, চাইনা। মৃত্যুই তখন একমাত্র কাম্য।



______________________________________________________________________





بِسۡمِ ٱللَّهِ ٱلرَّحۡمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ



وَٱلسَّمَآءِ ذَاتِ ٱلۡبُرُوجِ

وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡمَوۡعُودِ

وَشَاهِدٖ وَمَشۡهُودٖ

قُتِلَ أَصۡحَٰبُ ٱلۡأُخۡدُودِ

ٱلنَّارِ ذَاتِ ٱلۡوَقُودِ

إِذۡ هُمۡ عَلَيۡهَا قُعُودٞ

........

........



وَمَا نَقَمُواْ مِنۡهُمۡ إِلَّآ أَن يُؤۡمِنُواْ بِٱللَّهِ ٱلۡعَزِيزِ ٱلۡحَمِيدِ

ٱلَّذِي لَهُۥ مُلۡكُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِۚ وَٱللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٖ شَهِيدٌ

إِنَّ ٱلَّذِينَ فَتَنُواْ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ وَٱلۡمُؤۡمِنَٰتِ ثُمَّ لَمۡ يَتُوبُواْ فَلَهُمۡ عَذَابُ جَهَنَّمَ وَلَهُمۡ عَذَابُ ٱلۡحَرِيقِ

إِنَّ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَعَمِلُواْ ٱلصَّٰلِحَٰتِ لَهُمۡ جَنَّٰتٞ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُۚ ذَٰلِكَ ٱلۡفَوۡزُ ٱلۡكَبِيرُ

إِنَّ بَطۡشَ رَبِّكَ لَشَدِيدٌ

إِنَّهُۥ هُوَ يُبۡدِئُ وَيُعِيدُ

وَهُوَ ٱلۡغَفُورُ ٱلۡوَدُودُ



আমার আল্লাহ কেমন ক্ষমাশীল ও প্রেমময়! তিনি বলতেছেন, তোমার প্রতিপালকের ধরা বড় কঠিন। যারা মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদের নির্যাতনের পর তওবা করেনি, তাদের জন্য আছে জাহান্নামের শাস্তি, আগুনের শাস্তি। সুবহানাল্লাহ! এত বড় অপরাধের পরও তাদের জন্য তিনি তওবার দাওয়াত দিচ্ছেন।



সূরা বূরূয আমি মুখস্থ করে নিয়ছি। মুসলমানদের চরম দুর্দিনে কুরআন ও হাদীসের বানীগুলো আমাকে পরম নিশ্চিন্ত করে, নির্ভয় করে। হে আল্লাহ! একদা এক ক্ষুদ্র বালক ও তার কতিপয় অনুসারীর আত্মত্যাগের বরকতে অগণন মানুষকে তুমি হেদায়েত দিয়েছিলে। আত্মত্যাগের এই ধারা আজও বহমান। হে আল্লাহ, তুমি আমাদের হেদায়েত দান কর।

__________________________________

(মাওলানা মামুনুল হকের এক ভাষণ অবলম্বনে রচিত)

__________________________________

বিঃদ্রঃ

হাদীস শরীফে এসেছে দ্বীনের একটি কথা তোমরা যদি জান তাহলে মানুষের কাছে পৌঁছে দাও। হয়তো পরবর্তীরা পূর্ববর্তীদের থেকে ভাল স্মরণ রাখতে পারবে। তাই দয়া করে হাদীসের উপর সওয়াবের নিয়তে আমল করি।

শেয়ার করুন বিভিন্নভাবে।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই মে, ২০১৪ রাত ১১:৩৬

একজন ঘূণপোকা বলেছেন:
প্লাস।

অনেক ভালো লেগেছে।

২| ১৩ ই মে, ২০১৪ রাত ১১:৫৩

ডা: মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেছেন: আলহাদুলিল্লাহ। দোয়া করি ভাই আল্লাহ সুবহানু ওয়া তায়ালা আপনাকে হেদায়েত ও নূরওয়ালা এলেম দান করুন। যে হেদায়েত ও এলেম আল্লাহ রব্বুল য়ালামীন তার প্রিয় বান্দাদের দান করে থাকেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সাথে আদায়ের চেষ্টা করবেন ভাই। এবং আল্লাহর স্মরণ থেকে কখনো বিমুখ হবেন না। দুনিয়ার চাকচিক্যের লোভে কখনো পড়বেন না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.