![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন সাধারণ মুসলমান। ভালবাসি ইসলামী জীবনযাপন। আমার জীবনের লক্ষ্য মাওলা আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি অর্জন করেই এই রংতামাশার ভুবন, মুসাফিরখানা ছেড়ে আমাদের আসল বাড়ি কবর, হাশর, পুলছেরাত হয়ে জান্নাতের পথে পাড়ি দেয়া। দীর্ঘ পথ। কিন্তু পথের রসদ কম। অবশ্য কম হলেও দামী। এর নাম নবীজী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নত। আমি চাই আমার জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে আমার পরিবার, বন্ধুমহল, পাড়া-প্রতিবেশি, সমাজ, রাষ্ট্র, অতঃপর দেশ থেকে দেশান্তরে, যুগ থেকে যুগান্তরে, কাল থেকে কালান্তরে, কিয়ামত পর্যন্ত ছড়িয়ে দিতে। কারণ ইসলাম পেয়ে আমি খুশি। আমার মনে আনন্দ। আমার স্ত্রীর মনে, আমার বাচ্চার মনেও আনন্দ। আমার সুখ, আমার আনন্দ আমি সকল মানুষের সাথে শেয়ার করতে চাই। মানুষ কেন কষ্টে থাকবে? মানুষকে কষ্ট দেয়ার জন্যতো রব্বুল য়ালামীন মানুষ সৃষ্টি করেন নাই। তুমি আল্লাহর হুকুম মান, নবীজী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পথে চল তাহলে শান্তি পাবে, সম্মান পাবে, সব পাবে। আর যদি না মান তাহলে আমি তোমাদের জন্য এক মহাশাস্তির আশংকা করতেছি। সিম্পল এ কথাটাই আমি মানুষের কাছে পৌঁছাতে চাই। যাহোক আমি আমার জীবনের লক্ষ্য উদ্দেশ্যকে খুঁজে পেয়েছি। আলহামদুলিল্লাহ। তবে সত্যি বলতে কি আমি কোন বুদ্ধিজীবীর কাছ থেকে, আমার স্কুল কলেজ মেডিকেল কলেজের কোন শিক্ষক অথবা বন্ধু, শার্ট পেণ্ট পরা আধা ইংরেজ আধা বাংলা কোন লোকের কাছ থেকে আমি আমার জীবনের ভালো কিছুই শিখিনি। যাকিছু আমার জীবনে কল্যাণকর ও সুন্দর আমি পেয়েছি, অন্তরের প্রশংসা মানুষের কাছ থেকে যতটুকু পেয়েছি সবকিছু আমি মসজিদ থেকে, দ্বীনী প্রতিষ্ঠান থেকে, হুজুরদের থেকে, নায়েবে রসূল আলেম ওলামা ও চার আনার মোল্লাদের কাছ থেকে শিখেছি। জাহান্নামের পথ থেকে তারা আমাকে জান্নাতের পথ চিনিয়েছে। আলেমতো হতে পারবনা। কিন্তু সারাজীবন আল্লাহ, আল্লাহর রসূল ও নায়েবে রসূলদের গোলাম হয়ে থাকতে চাই। আর এর বরকতে যদি রব্বুল য়ালামীন কুরআন শরীফের নূরওয়ালা একটু জ্ঞান আমাকে দান করেন তবে আর কিছুই চাইনা।
لا اله الا الله محمد رسول الله
“আল্লাহ্তায়ালা ছাড়া কোন মা’বুদ নেই। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ্তায়ালার রসূল”।
এ কালিমায় তিনটি অংশ রয়েছে।
(১) মা'বুদ হিসেবে মহান আল্লাহ্তায়ালা ব্যতীত অন্য সকল কিছুকে অস্বীকার করা।
(২) আল্লাহ্তায়ালাই একমাত্র মা'বুদ।
(৩) চিন্তা, চেতনায়, ধ্যানে, জ্ঞানে, কথায় ও কর্মে আল্লাহর রাসূল হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণ করা।
মা'বুদ কি?
যার জন্য আমাদের ইবাদত বা উপাসনা তাকে বলে মা'বুদ। যেহেতু আল্লাহ রব্বুল য়ালামীনই একমাত্র ইবাদত পাওয়ার যোগ্য তাই তিনিই হলেন মা'বুদ।
ইবাদত বা উপাসনা কি?
আল্লাহর রসূল হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া সাল্লামের পথনির্দেশের সাথে একমত হওয়া,
আল্লাহর রসূল হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া সাল্লামের পথনির্দেশ মুখে স্বীকার করা ও
আল্লাহর রসূল হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া সাল্লামের পথনির্দেশ ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাষ্ট্রীয় ও বৈশ্বিক জীবনে রসূল সাল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া সাল্লামের পদ্ধতিতে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করাকে ইবাদত বা উপাসনা বলে।
এই কালিমা পড়ে আমরা মুসলমান হয়েছি। এই কালিমা আমরা অন্তরে বিশ্বাস করি, মুখে সহি-শুদ্ধভাবে বলতে শিখি, এই কালিমার ওপর আমরা আ’মল করি এবং সমগ্র দুনিয়ার সকল মানুষকে এই কালিমার দাওয়াত দেই।
এই কালিমার চাহিদা এই যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওপর আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস থাকার কারণে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের যেসব বিষয়ে ঈমান আনতে নির্দেশ দিয়েছেন, সেসব বিষয়ে পরিপূর্ণ ঈমান আনা, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাজকে কাজ বানানো এবং রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পথকে আমার নিজের পথ বানানো। অর্থাৎ নিজের ইচ্ছা ও অনিচ্ছার বিপরীতে আল্লাহ্তায়ালা ও তাঁর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য উৎসর্গীত হওয়া।
এই কালিমাটিকেই কালিমা তাইয়্যিবা বলে। এই কালিমাটির মধ্যেই রয়েছে মা’বুদ মহান আল্লাহ্তায়ালার একত্ববাদ এবং হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রিসালাতের সুস্পষ্ট বর্ণনা। অর্থাৎ ইবাদতের যোগ্য একমাত্র মহান আল্লাহ্তায়ালা, এবং হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ্ প্রেরিত সর্বশেষ রসূল। তাই আমরা একমাত্র মহান আল্লাহ্তায়ালার ইবাদত করি ও রসূল হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পথনির্দেশ দ্বিধাহীন চিত্তে অনুসরণ করি। একজন মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত, কবর থেকে হাশর পর্যন্ত, হাশর থেকে জান্নাতে পৌঁছানো পর্যন্ত তার সমস্ত প্রয়োজন পূরণ এবং সমস্ত সমস্যার সমাধান এই কালিমার মধ্যে নিহিত আছে। এই কালিমার সাথে সংযুক্ত হওয়ার মাধ্যমেই একজন মানুষ দুনিয়া ও আখিরাতে সমস্ত কল্যাণ লাভের নিশ্চয়তা পেতে পারে। এই কালিমা থেকে বিযুক্তিই নিশ্চিতভাবে একজন মানুষকে সমস্ত কল্যাণ থেকে বঞ্চিত করে তার দুনিয়া ও আখিরাত বরবাদ করে দেয়। একজন মানুষ, সে যেই হোকনা কেন, যেখানেই থাকুকনা কেন, এটাই তার জন্য সবচেয়ে জরুরী যে সে এই কালিমার সাথে সংযুক্ত হবে। এই কালিমার সাথে সংযুক্ত হওয়া ব্যতীত জরুরী কাজ একজন মানুষের জীবনে আর কিছুই নেই। তিনটি সম্মিলিত উপায়ে এই কালিমার সাথে সংযুক্ত হতে হয়ঃ
প্রথমতঃ মা’বুদ হিসেবে একমাত্র মহান আল্লাহ্তায়ালা ব্যতীত অন্য সমস্ত কিছুকে অস্বীকার করা। আল্লাহ্তায়ালা ব্যতীত অন্য সমস্ত কিছুকে বলে ‘গাইরুল্লাহ’। আল্লাহ্তায়ালার হুকুম ব্যতীত নিজ থেকে তারা আমার কোন উপকার করতে পারে না, আমার কোন ক্ষতিও করতে পারে না। কারণ গাইরুল্লাহর কোন ক্ষমতা নেই। তারা কোন কিছু সৃষ্টিও করতে পারেনা, কোন কিছু ধ্বংসও করতে পারেনা। আমি নিজেও গাইরুল্লাহর অন্তর্ভুক্ত। আমি যেমন তুচ্ছ, ক্ষমতাহীন, গাইরুল্লাহও তেমনি তুচ্ছ, ক্ষমতাহীন। এরা আল্লাহ্তায়ালার রাজত্বে, একমাত্র তাঁরই দয়ায় প্রতিপালিত হয়। আবার তাঁরই হুকুমে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। তাই একমাত্র মহান আল্লাহ্তায়ালা ব্যতীত অন্য কিছুকে ইবাদতের যোগ্য মনে না করা। একমাত্র মহান আল্লাহ্তায়ালা ব্যতীত অন্য কারো সামনে মাথা নত না করা। এজন্যই দেবদেবী, সূর্য্য, আগুন, পানি, গাছ, মাজার, সাপ, বানর, হনুমান, মানুষ ইত্যাদি দৃশ্যমান বস্তুর উপাসনাকে অস্বীকার করা। আবার অদৃশ্য বস্তু যেমন ফেরেশতা, জ্বীন, বাতাস ইত্যদির উপাসনাকে অস্বীকার করা। অথবা কোন তত্ত্ব যেমন কোন রাজনৈতিক তত্ত্ব, কোন সামাজিক দর্শন, কোন বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব ইত্যাদি যদি ইসলামী আকীদার সাথে সাংঘর্ষিক হয় তবে তা গ্রহণ না করাও কালিমা তাইয়্যিবার চেতনার অন্তর্ভুক্ত। এমনকি কখনো কখনো নিজের নফস্ বা প্রবৃত্তির অথবা কোন সামাজিক রীতির আনুগত্য করতে অস্বীকার করা। আল্লাহ রব্বুল য়ালামীন সমস্ত সৃষ্টিজগতকে মানুষের জন্য নিয়োজিত করেছেন। আর মানুষকে হুকুম করেছেন একমাত্র আল্লাহতায়ালার আনুগত্য করার জন্য। তাই সৃষ্টিজগতের কেউ ইবাদতের যোগ্য তো নয়ই বরং এরাও আল্লাহ্তায়ালার হুকুম মেনে চলে। আল্লাহ্তায়ালার হুকুমেই এদের জন্ম, বিকাশ ও ধ্বংস। আল্লাহ্তায়ালার হুকুমেই এরা আমাদের নিকট উপকার বা অপকার পৌঁছায়।
জমি আমাদের খাদ্য দেয় না, গাছ আমাদের রিযিক পৌঁছায় না, নদী আমাদের জীবনদায়িনী নয়, গাভী থেকেও আমরা দুধ পাই না, সূর্য্যও আলো প্রদান করে না। বরং এ সকল কিছুর পেছনে রয়ে গেছে আল্লাহ রব্বুল য়ালামীনের কুদরতী হুকুম।
তাই এ কালিমার হাকীকত হলো,
আল্লাহ রব্বুল য়ালামীন আমাদের জীবনদাতা,
তিনিই মৃত্যুদাতা,
তিনিই রিযিকদাতা,
তিনিই একমাত্র উপাস্য।
তিনি সকল কিছুর ওপর ক্ষমতাবান।
তাই আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে দেবদেবীরূপে পূজা-অর্চনা করা শিরক। আল্লাহ ব্যতীত অন্য কিছুর প্রতি এমন আস্থা ও বিশ্বাস রাখা যা আল্লাহর গুণের সাথে সম্পর্কিত নাজায়েজ ও শিরক। আল্লাহ যাকে হালাল বলেছেন তাকে হারাম সাব্যস্ত করা ও আল্লাহ যাকে হারাম করেছেন তাকে হালাল সাব্যস্ত করা শিরক। ইসলাম ব্যতীত অপর কোন তত্ত্ব, রীতি বা দর্শনকে মানব জীবনের সফলতা অথবা ইহলৌকিক বা পারলৌকিক মুক্তির উপায় জ্ঞান করে তার আনুগত্য করা শিরক। যেমন সুদযুক্ত অর্থনীতি, পর্দাহীন শিক্ষা ও কর্মব্যবস্থা, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, সেক্যুলারিজম ইত্যাদি। কালিমা তাইয়্যিবার চাহিদা এই যে, একমাত্র মহান আল্লাহ্তায়ালা ব্যতীত অন্য সকল ধ্যান-ধারণার আনুগত্য করতে অস্বীকার করা। অতএব একমাত্র মহান আল্লাহ্তায়ালা ব্যতীত আর কেউ ইবাদতের যোগ্য নয়।
দ্বিতীয়তঃ মা’বুদ হিসেবে একমাত্র মহান আল্লাহ্তায়ালাকে স্বীকার করা। অর্থাৎ একমাত্র মহান আল্লাহ্তায়ালার ইবাদত করা এবং তাঁর কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করা।
তৃতীয়তঃ হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ্তায়ালার শেষ নবী ও সর্বশ্রেষ্ঠ রসূল বলে স্বীকার করে তাঁর নিকট মহান আল্লাহ্তায়ালা যে দ্বীন প্রেরণ করেছেন তথা ইসলামকে মহান আল্লাহ্তায়ালা কর্তৃক মনোনীত একমাত্র জীবনবিধান তথা দ্বীন স্বীকার করা। অতঃপর ইসলামের ওপর নিজ ও অধীনস্তদের জীবন পরিচালনার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করা এবং নিজ সাধ্যানুযায়ী জান, মাল ও সময় ব্যয় করে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তরীকায় ইসলামের প্রচার ও প্রসার এবং ইসলামের মহান মর্যাদা সমুন্নত রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করা।
এরূপে কালিমার সাথে যুক্ত কোন ব্যক্তিকে বলা হয় ঈমানদার বা মু’মিন। একজন মু’মিন ব্যক্তির প্রধান কাজ হলো সারাজীবন ঈমানের ওপর অবিচল থাকা, গুনাহ্ থেকে বেঁচে থাকার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করা, একনিষ্ঠতার সাথে ফরয, ওয়াজিব, সুন্নত ও মুস্তাহাব আমলগুলো করা এবং ইচ্ছা-অনিচ্ছায় কোন গুনাহ্ হয়ে গেলে বিগলিতভাবে তওবা করা।
এভাবে আল্লাহ্তায়ালা একজন মু’মিন ও নেককার ব্যক্তিকে দুনিয়া ও আখিরাতের সমস্ত অকল্যাণ, বরবাদী ও ক্ষতি থেকে হেফাজত করেন। তার জন্য দুনিয়ায় রয়েছে সম্মানজনক রিযিক ও আখিরাতে আছে ক্ষমা ও মহাপুরস্কার।
আর কালিমা থেকে বিযুক্ত কোন ব্যক্তিকে বলা হয় কাফির বা অবিশ্বাসী। তারা দুনিয়া ও আখিরাতের সমস্ত কল্যাণ থেকে বঞ্চিত। তাদের জন্য দুনিয়ার জীবন পেরেশানী ও হতাশার এবং আখিরাতের জীবনে রয়েছে জাহান্নাম।
©somewhere in net ltd.