![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আজ এবং গতকাল মা দিবস নিয়ে বেশতোতে, ফেসবুকে অনেকের অনেক পোস্ট, আর্টিকেল পড়লাম। পছন্দ করলাম। লেখা আর মানসিকতার জন্য প্রশংসাসুচক কমেন্টও করলাম। ভালো বেশ ভালো। কিন্তু অন্তরালে আমি কিছু লিখেনি, বরং একটা প্যাচ ঘুরছে মাথায়।
কাল বেশতো ডট কমে একজন সবাইরে ট্যাগ দিয়ে জানিয়ে দিল আসুন পশ্চিমাদের, ইউরোপীয়দের মত আমরাও বাবা দিবস মা দিবসগুলো পালন করি। ভালো লাগেনি, বরং তখন থেকে এই যুক্তিটা মাথায় ঘুরে চলেছে!!
আরে পশ্চিমা, ইউরোপীয়রা তাদের পিতামাতা, সন্তান, স্বামী-স্ত্রীদের তুলনায় পোষা কুত্তাগুলোরে বেশি ভালোবাসে! তাই ঘটা করে একেকটা দিন ঠিক করে রেখেছে শুধুমাত্র্র সেই দিনগুলোতেই দায়সারা কিছু, লোক দেখানো কিছু দায়িত্ব পালনের জন্য(অবশ্যই ব্যতিক্রম আছে তবে সামান্য।) আমাদের এই উপমহাদেশে কিন্তু তার উল্টা। এখানে এখনও মানবিকতা, স্নেহ-ভালবাসা, সম্মান আছে যারপরনাই।ওসব দেশের তুলনায় বৃদ্ধাশ্রম অনেক অনেক কম এদেশে। সুতরাং কেন এসব দিবস নিয়ে এত মাতামাতি??? মন থেকে সদা সর্বদা ভালবাসেন কাছের মানুষগুলোকে। নিজেকে ভালবাসবেন, ভালো লাগবে নিজেকেও। ভালবাসতে পারবেন অপরকেও।
বাবা দিবসে আমি এই করেছি! সেই করেছি, এত্তগুলো ভালোবাসা দেখিয়েছি। তারপর বাবা দিবস শেষে- বাবা কোন কিছু সময়মত দিতে না পারলে, মনেমনে অথবা প্রকাশ্যে রাগ দেখানো, কিসের বাবা তুমি, কি দায়িত্ব পালন করেছ আমার জীবণ গঠনে, ক্যারিয়ার গঠনে ইত্যাদি,,,,
মা দিবসে মা ই আমার জীবণ, আমার স্বর্গ! ব্যস দিবস শেষ মায়ের অবাধ্য হওয়া, কোন কাজে বললে হাজারটা অজুহাত দেয়া, মাকে এড়িয়ে যাওয়া,,,,,
ভালোবাসা দিবস! সবথেকে বাজে একটা দিবস! কাজকর্ম পড়াশুনা ফেলে, ভদ্রতা-শ্লীলতা ছেড়ে, অন্যান্য দিনগুলোর থেকে বেশি বেশি বেয়াদবী করে, বাবা মায়ের মাথা খেয়ে ধেই ধেই করে উড়ে বেড়ানো! ব্যস দিন শেষে নিজের সতীত্বকে বিসর্জন দিয়ে, পরদিন নতুন কারো সাথে আবার জোড় বাধা,,,,,
আসুন বধু দিবস পালন করি! সারাবছর বউকে নির্যাতন করে, প্রাপ্য অধিকার না দিয়ে, প্রাপ্য সম্মান না দিয়ে, বউকে সন্দেহের উপর রেখে নিজে সন্দেহের কাজ করে অবশেষে বধু দিবসে বউকে এত্ত এত্ত ভালবাসা দেখিয়ে, সুন্দর শাড়ী, গহণা ইপহার দিই। দিবস শেষে আবার শুরু করব আগের যাপিত দিন গুলো।
আসেন স্বামী দিবস পালন করি! স্বামীকে প্রাপ্য সম্মান না দিয়ে, বলি আমার মত মেয়ে বলে তোমার সংসারে আছি অন্য কেউ হলে এতদিন রক্ত চুষে খেত, স্বামীর ভালো কোন কাজের বা পরামর্শের বাইরে চলা, সিরিয়ালের জন্য রিমোর্ট নিয়ে টানাটানি,,,,,। স্বামী দিবসে গলা জড়িয়ে ধরে, তুমিই আমার সুখ, আমার পৃথিবী, আমার সবকিছু,,,, । দিবস শেষে আয় শালার ব্যাটা, বউ পোষার মুরদ নেই তো বিয়া করছস কেলা??
দাদা/দাদী দিবস: বুড়ো/বুড়ি তোমার মরণ হয়না?? এত জ্বালাও কেন?? আমার বাবারে কি দেছ?? কাশাকাশি বন্ধ করো, পান আনতে পারব না। ওযুর পানি এনে দিতে পারব না। অকথ্য গালি সময়ে অসময়ে, কারণে অথবা অকারণে! দিবস গুলোেতে আমার দাদা/দাদী কত্ত ভালো,,,,,
আপনি কি নিজেকে ভালবাসেন?? যদি ভালবাসেন তবে অবশ্যই অপরকে ভালবাসতে পারবেন। নিজেকে সম্মান করলে অবশ্যই অপরকে সম্মান করতে পারবেন। নিজেকে ভালবাসতে পারলে নিজের মা বাবাকে ভালবাসতে পারবেন। তখন আপনার আশেপাশের সকলকে ভালবাসতে পারবেন। নিজের ধর্মকে সম্মান করতে পারলে অপরের ধর্মকে সম্মান করতে পারবেন। নিজের দেশকে ভালবাসলে, দেশের পতাকাকে ভালবাসলে অপর দেশকে ভালবাসতে পারবেন। অপর দেশের পতাকাকে ভালবাসতে পারবেন। তখন অপর দেশের পতাকার মাপ কে অবমাননা করে রেকর্ড পরিমান লম্বা পতাকা তৈরির অপকর্ম মাথায় আসবে না। পতাকা উড়ানোর সময়কে হেলা করে দিনরাত সমান করে সারাক্ষণ অপর দেশের পতাকাকে উড়িয়ে সে দেশের পতাকাকে অবমাননা করা তখন আপনার কাছে শোভা পাবে না। নিজের বিবেককে তখন আর পাংশে মনে হবে না। একজন খাটি মানুষ মনে হবে তখন।
আমাদের মুসলিম সমাজে দেখা যায়, প্রতিদিনের পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ না পড়ে কয়েকটি বিশেষ নফল রাতে রাতভর ইবাদত করে, কত অনুনয় বিনয় করে পাপ মোচনের আশায় কান্না করে, এবার থেকে ভালো পথে চলবার শপথ নিয়ে ঘুমিয়ে গিয়ে সকালে ফরজ নামাজ কাযাও পড়িনা।
বুঝতে পারলেন কি?? বাবা অথবা মা দিবস গুলো এখন এমনি নফল ইবাদতের রাতের মত হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের উচিৎ পিতামাতাকে সদা সর্বদা ভালবাসা। ঠিক প্রতিদিনকার ফরজ নামাজ যেমন একজন খাটি মুসলিমের অবশ্য কর্তব্য তেমনি একজন প্রকৃত সন্তানের কাছে মা বাবার প্রতি ভালবাসা অবশ্যই কর্তব্য। আর মা বাবাকে আপনার ভালবাসা দেখানো লাগেনা চিরকুটে লিখে। তারা আপনার ব্যবহারেই, আদেশ-উপদেশ পালনেই বুঝবে আপনার ভালবাসা!!
©somewhere in net ltd.