![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ঠিক যে সময়ে বাইরে যাব তখনি বৃষ্টি আরম্ভ হল। আর সেই সাথে ভীষণ শব্দে মেঘ ডাকা। আমি এই মেঘ ডাকা মারাত্মক ভয় করি। যেকারণে আর সেই সময় বাইরে যাওয়া হল না। তাই ফোনে এলার্ম সেট করে মৃদুমন্দ একটা ঘুম দিয়ে উঠলাম। এরপর ফ্রেশ হয়ে প্রায় ১ কি. মি. পথ পাড়ি দিয়ে হোটেলে পৌছালাম।
এই শরতের শেষ ভাগে এসে এমন ভ্যাবসা গরম পড়াটা একেবারেই অচেনা। তবে কলিযুগে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হওয়াতে যে এমন আবহাওয়া দিনকেদিন আমরা আরো দেখব সে কথা নিশ্চিত। আর এই ভ্যাবসা গরমে আমার স্লিম শরীরেও আন্ডার আর্মেও মৃদু ঘামে জামার কিছু অংশ ঘেমে গেছে সেটা বুঝেছি।
হোটেলে বেশ ভিড়। চার পাঁচটা টেবিলের লোকগুলোকে মাত্র তিনজনে খাবার বিলিয়ে যাচ্ছে। তাদের বয়স আমার সমান বা কম। ওজনে একটু ভারি। কিন্তু তাদের দায়িত্বের কাজকর্মগুলো খুবই দ্রুততর। এদের কেউ আবার মাঝে মাঝে টেবিলে গিয়ে বিলও নিচ্ছে। একসময় আমার কিপটে মন থেকে কিছু সস্তা খাবারের মেন্যু ঠিক করে একটা টেবিলে গিয়ে বসলাম।
ওরা খাবার দিয়ে যাবার পরপরই আমার পাশ দিয়ে আমার থেকে কম বয়সী একটা ছেলে হাত ধুয়ে পানি ঝাড়া দিয়ে সামনের টেবিলে গিয়ে বসল। আপনি রগচটা হলে তারে কড়া ভাষায় গালি দিতেন, নতুবা তার আচরণ নিয়ে তার শিক্ষা বা বংশ পরিচয় নিয়ে কটাক্ষ করতেন এটা আমি নিশ্চিত। এমন সব লোক দেখছি সেই ছোট বেলা থেকে। আর আমরা বাঙালী খুবই সম্মানকামী। নিজেরা কাউকে সম্মান করি আর নাই করি অন্যের কাছ থেকে সম্মান পেতে চাইই। তা আমরা যতই জুতো চোর হয় আর পকেটমার হই (ঘুষ জালিয়াতি আর ফাইল আটকিয়ে ঘুষ দিতে বাধ্য করা এরা জুতো চোরের থেকে নিকৃষ্ট)
আমি একটু কম প্রতিক্রিয়াশীল। যদিও সায়েন্সের ছাত্র। কিন্তু নিউটনের তৃতীয় সুত্র আমি কম ফলো করি। যেকারণে যেকোন বিষয়ে ধীরে রিসপন্স করি। আমিও হয়ত বিরক্ত হয়ে ছেলেটাকে কিছু বলতে পারতাম কিন্তু যখন দেখলাম ছেলেটার গায়ের পোশাক ঘামে ভিজা তখন আর কিছু মাথায় আনতে পারিনি। হয়তবা গায়ের ঘাম ভিজিয়ে শরীরের পেশী শক্তি নিংড়ে এরা কোন ছোট ভাইয়ের মুখে ভাত তুলে দিচ্ছে, দুর্বল পিতার চিন্তাকে কিছুটা কমিয়ে দিচ্ছে, মায়ের মনে চিন্তা না বাড়িয়ে প্রশান্তি দিচ্ছে, ছোট বা বড় বোনদের হাতে কম দামি চুড়ি পরাবার ব্যবস্থাটাও করছে।
আমি তো নস্যি এদের অবদানের কাছে। আমি যেখানে ভদ্র বেশে মধ্যবিত্তের অভিনয় করে ভিতরে ভন্ডামী পুষে সমাজের সঙ্গে চলার চেষ্টা করছি সেখানে এরাই তাদের পরিবারের আয়ের অন্যতম যোগানদাতা হিসেবে খেটে যাচ্ছে। আমি বসে অবসরে অনলাইনে চুটিয়ে অবসর কাটাচ্ছি আর ওরা রোদ বৃষ্টিতে ঘেমে নেয়ে পরিবারকে সুখি রাখার বাস্তব অভিনয় করে যাচ্ছে। আমি বিরক্ত হলে তো ওদের কাছে অপরাধী হয়ে থাকব। এমনিতে অপরাধী, কি দরকার ওদের হাত ঝাড়া পানিতে বিরক্ত হবার??
ওরা ভালো থাকুক। সুখে থাকুক ওদের উপর নির্ভরশীল পরিবারের মানুষগুলো। দিনশেষে ফিরে যাক আপন পরিবারের ডেরায়। নির্ভেজাল সময় কাটাক শীর্ণদেহী মানুষগুলোর সাথে। মলিন মুখে ফুটে উঠুক কিছু ভালোলাগার শিহরণ।
ওরাই মানুষ, ওরাই দেবতা গাহী তাহাদের গান…..
বিদ্রোহী তোমায় আবারো সালাম,,,
০৫ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১২:১৪
দুখোমিয়া বলেছেন: ঠিক বলেছেন। আমরা কাজ কে মানুষ কে সম্মান করিনা। যেকারণে আমাদের উন্নতি এত ধীরে হচ্ছে। আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ২:১৮
মানবী বলেছেন: সুন্দর অনুধাবন।
আমরা খুব সহজে দরিদ্র কর্মীদের উপর চড়াও হই, ক্ষেত্র বিশেষে হাত তুলতেও দ্বিধা করিনা... এটা যে আমাদের জাতির কতো বড় দ্বীনতা তা অনুধাবনে আমরা অক্ষম!
আপনার বিচক্ষণ ভাবনার জনছ ধন্যবাদ।