![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সকালে কোচিং থেকে বের হচ্ছি এমন সময় রিক্সায় করে একজন গল্প করতে করতে যাচ্ছেন।
আমি ১৫ মিনিট ধরে দাড়ায়েছিলাম। তারপর তোমার মত শক্ত সামর্থ কাউকে পেলাম। আমি বুড়ো অথবা পোলাপানের রিক্সায় চড়ি না। ওরা টেনে পারেনা.....
সম্ভবত উনি সরকারী চাকুরিজীবী। যেহেতু মাসের আজ ৯ তারিখ এবং শুক্রবার সেহেতু মাসিক বাজার করার আজই ভাল দিন। তাই রিক্সায় করে একবস্তা চাল, বড় সাইজের বোতলে সয়াবিন তেল এবং আরও অনেক কিছু নিয়ে যাচ্ছেন! এক কথায় মাসিক বাজারে সম্ভাব্য যা যা নেয়া সম্ভব। রিক্সাটাতে মোটামুটি ফাকা জায়গা কমই আছে বলা চলে।
উনার কথার মূলসুর বোধকরি উনি বয়স্ক মানুষের কষ্ট সহ্য করতে পারবেন না এমন। এমন কথা অনেককেই বলতে শুনেছি, শিশু শ্রম আর বয়স্কদের শ্রম বিষয়ে অনেকের মায়া, তাই উনারা অন্তত বাহনের বেলায় শিশু বৃদ্ধদের এড়িয়ে যান, যাতে এসব খেটে খাওয়া মানুষগুলোর কষ্ট কম হয়। যাতে শিশুশ্রম বন্ধ হয় সমাজ থেকে। ধন্যবাদ এসকল মানুষের এমন অদ্ভুত মনোবাসনার জন্য। তবে এই মনোবাসনার জন্য আমি তাদের সম্মান করতে পারলাম না।
আমি কিন্তু সময় সুযোগ থাকলে শিশু বা অল্পবয়সীদের এবং বয়স্কদের ভ্যান রিক্সায় চড়ার চেষ্টা করি, প্রাপ্ত বয়স্কদের এড়িয়ে। কারণ হল আমার এত দরদ নেই। এত ভালোবাসাও নেই। খুব আজব মনে হচ্ছে তাই না?
আসুন সামান্য ব্যাখ্যা দেই আমার এই মায়া দয়াহীন হবার কারণে।
আমি নিশ্চিত যারা শিশু শ্রম এবং বয়স্কদের শ্রম নিয়ে দয়া মায়া দেখান তাদের উদ্দেশ্য এসব শ্রম বন্ধ করা। অথচ তারা নিজেরা কিছুই করেন না এদের জন্য। উচিৎ হল তাদের জন্য কিছু করা বা তাদের পুনর্বাসনের চেষ্টা করা। কিন্তু এসবের ধারে কাছে ইনারা থাকেন না। শুধু মুখে মুখে শিশু শ্রম বন্ধ করা নিয়ে লোক দেখানো লাফালাফি। রিক্সাওয়ালা বা অন্য শ্রমিক সে শিশু হোক বা বয়স্ক হোক তার জন্য অবশ্যই আমাদের কিছু করা উচিৎ। আপনি এসব বন্ধের জন্য কিছু না করে যদি এড়িয়ে চলেন তার মানে আপনি এদের কষ্ট আর অপেক্ষাটা বাড়িয়ে দিলেন। নিশ্চয়ই এসব মানুষ এমনি এমনি এসব কাজে নিয়োজিত নন। এসব শ্রমিকের দিনশেষে বাড়ি ফেরার পথের দিকে চেয়ে আছে কোন বৃদ্ধ মা বাবা, ছোট ভাইবোন। অথবা বয়স্ক কোন ব্যক্তির অবহেলিত অথবা অপ্রাপ্ত বয়সী কোন মেয়ে নতুবা তার স্ত্রী নতুবা কাজের অনুপযোগী ছেলে।
দিনশেষে যখন একজন শিশুশ্রমিক তাদের পেশি নিংড়ে, শক্তি দিয়ে, ঘেমে নেয়ে যেটুকু টাকা পয়সা বা বাজার সদাই নিয়ে বাড়িতে ফেরেন তখন হয়ত পড়াশুনা করা ছোট ভাই বোন খাতা কলম দেখে তাদের মুখে হাসি ফোটে, কিছু টাকা পেয়ে পরীক্ষার ফি দিতে পারবে ভেবে আরো মনোযোগ দিয়ে পড়ে। অসুস্থ অথবা স্বামীহীন কোন মা ভালোমত খেতে পারবে এই ভেবে একটু স্বস্তি নিয়ে কিছু রান্না করে নিয়ে আসবে! অক্ষম, বয়স্ক আর হাপানীতে জর্জরিত কোন বাবার মুখে হাসি ফোটে, নিজের অক্ষমতার কথা ভেবে আর অল্প বয়সী ছেলের পরিশ্রম করে পরিবারের দায়িত্ব কাধে নেয়া দেখে, চোখের কোনে তৃপ্তির আর ভালোবাসার অশ্রুর অবাধ্য আনাগোনা শুরু হয় যখন তার কৈশোর ছেলেকে দিনশেষে আধাব্যাগের বাজার সদাই নিয়ে ফিরতে দেখে।
অপরদিকে একজন বয়স্ক শ্রমিকের দিনশেষে বারবার নিঃশ্বাস নিতে নিতে ফেরা দেখে তার সহধর্মীনির চোখ বাষ্পাকুল হয়, তার নিরক্ষরতার জন্য একপাল অক্ষম ছেলেমেয়ের সামনে যখন চালডাল নিয়ে ফিরেন তখন সেই ছেলেমেয়ের মনে ভালো কিছু খেতে পাবার আনন্দের জোয়ার বইতে পারে। হতেও পারে পেশি নিংড়ে যে ছেলেকে এই বৃদ্ধ মানুষ করেছেন সে তাদেরকে ছেড়ে চলে গেছে। তাই হয়তো বৃদ্ধ বয়সে তাকে এখনো পেশি শক্তি ব্যয় করতে হয়,,,
এমন হয়তবা হাজারো কোন গল্প জড়িয়ে থাকে এসব মানুষদের শ্রমিক হিসেবে দিন যাপন করার পিছনে। আমি বেকার অথবা গরীবের ছেলে। আপনার হয়তবা এদের একজনকে পুনর্বাসন করার ক্ষমতা নাই। তাহলে এক্ষেত্রে আমরা সামান্য সুযোগ পাইলে কেন তাদের পরিশ্রম করাতে পিছু হব? দশ বিশটাকা বেশি দিয়েও তো আমরা তাদের মুখে হাসি ফোটতে পারি। আর সেই হাসি পরোক্ষভাবে তাদের পরিবারকে ছুয়ে যায়। আর অন্তরীক্ষে চেয়ে যিনি কলকাঠি নাড়ছেন তার অসীম রহমত আপনার উপরও পড়তে পারে।
আপনার ইচ্ছা শিশুশ্রম বন্ধ করার। আমারও ইচ্ছা বন্ধ হোক দুর্বলদের আহাজারি। কিন্তু কবে আমাদের সেই ইচ্ছা পুরণ করার সুযোগ আসবে? আদৌ আসবে কিনা্ তার নিশ্চয়তা কি? তাই আসুন আমরা এসব মানুষদের পারিশ্রমিক দর কষাকষি বাদ দিয়ে নিজের হাত প্রশস্ত করে দেই। আপনার আমার দুই পাচ টাকার ত্যাগ ওদের জন্য সামষ্টিক ভাল মানের পারিশ্রমিক।
আমার একটা নেশা আছে। মানুষের চোখে মুখে অমলিন হাসি দেখার। এক দিন একটা কাজ করুন। কোন শিশুর অথবা বৃদ্ধর রিক্সায় চড়ুন, নতুবা শিশু বা বৃদ্ধ হকারের কাছ থেকে কিছু কিনুন, নতুবা বড় বড় ঝুড়ি বয়ে নিয়ে ফেরি করা কারোর কাছ থেকে কিছু কিনুন। এরপর নায্য মুল্যের চেয়ে ৫-১০ টাকা বেশি দিয়ে বলুন ঐটা আপনার বখশিশ, ঐটা আপনার লাভ দিলাম। এরপর তাদের চোখের দিকে তাকিয়ে দেখুন। তাদের চোখে সামান্য পানিও আলোড়ন করবে, মুখে এমন হাসি আসবে যে হাসিকে আপনি সঙ্গায়িত করতে পারবেন না। এই হাসিটা, এই অশ্রবিন্দু কোটি টাকা দিয়েও কিনতে পারবেন না। আমি এমন হাসি প্রায়ই দেখার চেষ্টা করি সময় সুযোগ থাকলে। আপনি না হয় এই নেশাটা আমার কাছ থেকে শিখুন।।
একটা গল্প দিয়ে শেষ করব। একদিন বিকেলে সেই কোচিং এর সামনের গেটে আমি দাড়িয়ে ফোনে কার সাথে কথা বলছিলাম। কিছুক্ষণ পরে দেখলাম এক বৃদ্ধ হাতে লাঠি ভর দিয়ে একটা নোংরা ব্যাগে আশপাশ থেকে কিছু কাগজ কুড়িয়ে নিচ্ছেন। একটু অবাক হলাম। যারা কাগজ কুড়ায় তাদের কাছে বড় সাইজের বস্তা থাকে সাধারণত। আর উনার কাছে ব্যাগ ছিল ছোট একটা। জিজ্ঞাসা করলাম
বাড়িতে অসুস্থ বুড়ি আছে জ্বাল ধরাতে (চুলায় আগুন জ্বালাতে) ওর সুবিধা হবে তাই।
ভাবলাম উনি ভিক্ষে করে ফিরছেন। কিছু টাকা দিলাম এমনি বের করে। উনার তৃপ্তির হাসিটা নতুন করে আর বলব না। এরপর জিজ্ঞাসা করলাম
> কেউ নেই বাবা।
> ছেলে নাই। তিন মেয়ে আছে। মেয়েদের বিয়ে দিয়েছি।
> ওরা সবাই সুখে আছে।
১০ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১২:১৬
দুখোমিয়া বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ। লেখাটা কষ্ট করে পড়ে বোঝার জন্য।
২| ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৯:১৩
চৌধুরী মাহবুব বলেছেন: Very good
১০ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১২:২৩
দুখোমিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।
©somewhere in net ltd.
১|
০৯ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৮:১৯
কানিজ রিনা বলেছেন: এত ভাল লেখা পড়ে আপনাকে দননবাদ। আসলে
আমরা সাদারণ মানুষ এটুকু করতে পারব। ওদের
একটু বেশী বকশীস দিয়ে মুখে হাসি ফুটাতে।
আপনার এই জনন অনেক অনেক দননবাদ। আমার
টেলিফোন বোডে অনেক গুলো অখখর নাই বানান
ভুল মাফ করবেন।