![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমাদের সময় জে এসসি, পি এস সি ছিল না। তবে বৃত্তি পরীক্ষার জন্য ২০% ছাত্রছাত্রী বাছাই করত ৫ম শ্রেণী আর ৮ম শ্রেণী থেকে। অর্থ্যাৎ ১ম সারির স্টুডেন্টগুলো নিয়ে। যখন পরীক্ষা দিতে যেতাম তখন নিজের পরিবারের কেউ যাক বা না যাক আশেপাশের বড় বড় ভাই (?) খুব আগ্রহ সহকারে যেত। অন্য সময় যারা বড় ভাইত্ব দেখানোর জন্য অকারণ শাসন করত তারা ঐ সময়েই বেশ আপন হত। পারলে কিছু কিনে দেবার চেষ্টা দেখাত। ভাবতাম তারা ঠিকঠাক পড়াশুনা না করতে পারলেও আমরা যারা ছোট থেকে মেধাবী আছি তাদের মনে হয় কেয়ার নিচ্ছে। আর এই কেয়ারটা অন্তত অষ্টম শ্রেণীর বান্ধবীদের প্রতি বেশি হত। বার বার ডেকে ডেকে পরীক্ষা কেমন হয়েছে সেটা জানতে চাইত, কোশ্চিন (গ্রাম্য ভাষায় কোয়েশ্চেন) নিয়ে পড়ত। তবে পড়ার সময় প্রশ্নটার চেয়ে আশে পাশে ওড়নাওয়ালীদের দিকে নজর বেশি থাকত। বিষয়টা এসএসসি দেবার সময় পরিস্কার হয়েছিল। কেন তারা এত আগ্রহ সহকারে পরীক্ষা দেখতে আসে। বিশেষ করে প্রথম ২-৩ টা পরীক্ষা আর গণিত পরীক্ষায় তাদের হাজির থাকাটা বেশ জরুরী ছিল।
বোঝবার পর থেকে ওদের টালবাহানা দেখে হাসতাম। আজব কিসিমের মানুষের দেখা মেলে রাস্তা-ঘাটে, বাজার-হাটে। এদের স্বভাব সহজে পাল্টে না। তবে মধ্য বয়স্ক অনেকেই যারা যেত আসলে প্রকৃত কেয়ার নিতেন। কাছে ডেকে কথা বলতেন, সামনে কি পরীক্ষা আছে জানতে চাইতেন, প্রশ্ন কেমন কমন হল জানতে চাইতেন, আমাদের যারা ভাল ছিল তাদের প্রতি তাদের প্রত্যাশার কথা বলতেন। রাস্তা ঘাটে অন্য সময় দেখা হলেও বেশ আদর করতেন।
এখনকার যুগে সেটা অনেক কমে গেছে। কিন্তু সেই বড় ভাই রুপি মানুষগুলো পাল্টে গেলেও তারা এখন বখাটেতে পরিণত হয়েছে। ইয়ো ইয়ো স্টাইলে চুল ছাটা, মুখে দাড়ি গোফ গণনার মত সংখ্যা রেখে স্টাইলিশ ভাব, হাতে ঠেলা মোবাইল, কারও বা স্টাইলিশের বাই সাইকেল, বাইক, কয়েকজন মিলে সিগারেট টানে ভিন্ন কায়দায়, তবে সব মিলিয়ে এদের নজর থাকে মেয়েদের দিকে। ঘুরে ফিরে কত স্টাইলে এরা হাটে আর কথা বলে আমি লিখে প্রকাশ করতে পারব না।
আমার মেসের খুব কাছেই জে এস সির একটা কেন্দ্র হয়েছে আজ। বাইরে গিয়ে দেখলাম সেই বড় ভাই স্টাইলের কয়েক জটলা। এদের ভাব দেখে ওদের মতিগতি বুঝতে দেরি হয়নি। তবে বয়সটা সেই মাত্রায় বড় ভাই গোছের না হলেও ভাবে ঠিকঠাক আছে। আশেপাশে পরীক্ষার্থীদের সাথে আসা কিছু মা বাবা বড় ভাই বোন আছেন। তাদের আশেপাশে এসব বড় ভাইদের বেশ বেমানান দেখায়।
আমাদের থেকে ৫-৭ বছর ছোট যে প্রজন্ম গড়ে উঠছে তাদের অনেককেই দেখে আমার খুব ভয় হয় (আমার বর্তমান প্রজন্ম নিয়েও খুব বেশি গর্ব করার নেই তারপরও এরা আরও ভয়ংকর) বর্তমান অগোছালো আর আইনের প্রয়োগহীন রাষ্ট্রব্যবস্থায় এরা যেভাবে চলছে, বেড়ে উঠছে তাতে এরা জাতির কর্ণধার তো হবেই না বরং জাতির কান ধরে পচা ডোবায় ফেলাবে। এরা প্রযুক্তিকে কেয়ার করে কিন্তু পিতৃব্য, মাতৃব্য বা প্রৌঢ় বা বয়োজেষ্ঠদের কেয়ার করে না। সম্মান দেয়া নেয়ার মধ্য দিয়ে মানুষের বাচ্চাগুলো মানুষ হয়ে উঠে। এছাড়া মানবীয় হবার কোন উপায় নাই। আমরা বড়রা নিজেদের সম্মান বাঁচাতে ওদের কাছে ঘেষিনা! আমরা নিজেদের ঘরের ছোট ভাইবোন দের যদি নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারি, দুধ কলা দিয়ে নিজের ঘরেই যদি কাল সাপ পুষি তাইলে বাইরের কাল সাপকে ঘৃনা করে কি হবে? আগে নিজের ঘরের ছোট ভাইবোনদের প্রতি কেয়ার নেন! তারা কি করছে? কোথায় যাচ্ছে? কাদের সাথে মিশছে? নইলে অচিরেই আমাদের পরিবার নয়, সমাজ নয় পুরো জাতিই কাল সাপের ফণায় আটকে পড়বে!
©somewhere in net ltd.