নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ব্লগব্লগানি

যা বুঝি, যা দেখি, যা শুনি এবং যা বলতে চাই

শোহেইল মতাহির চৌধুরী

মানুষের অগ্রযাত্রার ধারাবাহিকতা আমার রক্তে ও মননে। মানুষ ও মানুষের নিরন্তর সংগ্রাম ছাড়া আর কোনো ইতিহাস আমি জানি না। আজন্ম মানুষকে জানি সর্বশ্রেষ্ঠ হিসেবে আর বাকী সব মানি অহেতুক ধুম্রজাল।

শোহেইল মতাহির চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

সত্যের পোষাক ধার নিয়ে মিথ্যার বাণিজ্য

০৭ ই জুন, ২০০৬ রাত ৮:৫৭

শিশুশিক্ষার কালে আমরা প্রথম যে আদর্শ শিক্ষা পাই তা হলো,"সদা সত্য কথা বলিবে"। কিন্তু যত বড় হতে থাকি তত আমরা বুঝতে পারি যে সত্য বড় কঠিন। সত্য স্বীকার করা কঠিন। সব পরিস্থিতিতে সত্য বলাটা নিরাপদও নয়। এমনকি খোদ গৌতম বুদ্ধও বলেছেন, "কদাপি অপ্রিয় সত্য বলিও না"। সত্য বলার শিক্ষা দিলেও আমাদের পৃথিবীটা মিথ্যার কারখানা। নানা রকম মিথ্যার বাজার পৃথিবী জুড়ে। মিথ্যাকে চেনাটাও সহজ নয়। মিথ্যা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নানা রূপে। মিশে আছে সত্য বা অর্ধ-সত্যের সাথে। তার মাঝ থেকে মিথ্যাকে ছেঁকে বের করা খুবই কঠিন। তা ছাড়া সত্য যেমন এক নয়, সব মিথ্যাই সবার কাছে মিথ্যা নয়। মিথ্যা, নির্জলা মিথ্যা, নির্দোষ মিথ্যা, পরিসংখ্যানের মিথ্যা, গুজব, রটনা আর রাজনৈতিক প্রচারণা বা মিডিয়ার প্রোপাগান্ডাই শুধু নয় মিথ্যার রয়েছে আরো অনেক রূপ। মিথ্যার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠিত রূপের কামড় থেকে বাঁচতে সত্য-মিথ্যার আবেগ-আলুলায়িত মনটাকে আরেকটু শক্ত ও বাসত্দবানুগ করা দরকার সবার।



যখন একজন উকিল আদালতে তার মক্কেলের সদচরিত্র আর পরোপকারের বর্ণনা দিয়ে মুখে ফেনা তুলে ফেলে তখন আমরা বুঝতে পারি এসবের পেছনে টাকা কথা বলছে। কিংবা যখন সরকারী প্রতিষ্ঠান মিডিয়ায় ঢোল-বাদ্য বাজিয়ে সোনালী সোনালী স্বপ্নের বর্ণনা দিয়ে 'গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের' মাহাত্ম্য তুলে ধরে তখন অনেক নিরূপায় কর্মচারী বুঝতে পারেন তাদের জীবিকার উপর নামতে যাচ্ছে খড়গ। রিয়েল এস্টেটের মালিকরা যখন বাহারি বিজ্ঞাপনে আপনার মত চড়ুই পাখির জন্য বাবুই পাখির বাসা বানিয়ে দেয়ার অঙ্গীকার করে তখন আসলে তারা নিজেরাই নিজেদের আখের গোছাতে ব্যসত্দ। আখেরের কথা যখন এলো তখন আখেরাত নিয়ে ধর্মের আর ধর্মগ্রন্থের প্রতিশ্রম্নতির সত্য-মিথ্যার কথা উঠতেই পারে। তবে মানুষকে যে সবসময়ই মিথ্যা প্রতিশ্রম্নতির আশ্বাস দিয়ে বিভ্রানত্দ করা যায় না তার একটা বেশ মজার প্রমাণ আজানের দোয়া। যার শেষ লাইনে ঈশ্বরকে স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়, "নিশ্চয়ই তুমি ভঙ্গ করনা অঙ্গীকার"।



মিথ্যা আমাদের জীবনের অংশ হয়ে গিয়েছে নানাভাবে। টেলিভিশনে যেকোনো চ্যানেলে সংবাদ শুনুন দেখবেন মিথ্যার ধারাপাত কত সসত্দা। ব্যবসায়ীরা তাদের প্রচারণায়, রাজনৈতিক নেতারা তাদের বক্তৃতায় সত্যের ময়দার দলার মধ্যে চেপে চুপে ঢুকিয়ে দিচ্ছে মিথ্যার ভেজাল পামওয়েল। ইরাক ধ্বংস হয়ে গেলো 'ওয়েপন অব মাস ডিস্টাকশন' থেকে বিশ্বকে বাঁচানোর আশ্বাস দিয়ে। পৃথিবীর বড় বড় নেতারা, টনি বেস্নয়ার আর জর্জ বুশের মত বিরাট দেশের বিরাট প্রেসিডেন্ট বিশাল প্রাইম মিনিস্টাররা যদি দিনে দুপুরে এমন মিথ্যার বাজার বসান তবে সাধারণ মানুষের উপায় কী? তাদের জীবনী গ্রন্থই তো একসময় পাঠ করবে শিশুরা। যেমন আমরা পাঠ করেছি তাদের পূর্ববর্তীদের। এসব থেকে পরিত্রাণ হয়তো নেই তবে একথাও ঠিক, মহানেতা, মহাপুরম্নষদের কথাকে অমৃতবাক্য হিসেবে বিনাপ্রশ্নে মেনে নেয়ার যুগ শেষ হয়ে আসছে। একটু সচেতন মানুষ এখন সহজেই ধরতে পারে সত্যের মূর্তির কোথায় কোথায় লুকিয়ে থাকতে পারে মিথ্যার কাদামাটি।



কিন্তু সহস্র মিথ্যার পলিথিনে আমাদের বর্তমান সমাজ ও বিশ্ব ভরে গেলেও সত্যের প্রয়োজন একেবারে ফুরিয়ে যায়নি। মিথ্যা কাউকেই চিরকাল চালকের আসনে রাখতে সক্ষম হবে এমন আশা করাটা বোকামিই হবে। মিথ্যার পক্ষে অনেক যুক্তিই হয়তো দাঁড় করানো যায়, কিন্তু শেষ বিচারে সেগুলো অজুহাতই থেকে যায়:

1. সব মানুষই নানা রকম মিথ্যা কথা বলে।

2. মিথ্যা নানা রূপে আমাদের জীবনের অংশ হয়ে গেছে।

3. কিছুটা সময়ের জন্য হলেও মিথ্যা আমাদের জীবনের গতিকে বাধাহীন করে।

4. মিথ্যা হতে পারে খুব মজার (ক্ষেত্র বিশেষে)।

5. মিথ্যা কল্পনা ও চিনত্দা-ভাবনা আপনাকে আশ্বসত্দ করতে পারে যে আপনার জীবনটা যতটা খারাপ দেখা যাচ্ছে ততটা খারাপ না।

6. মিথ্যা আপনাকে একটা আড়াল দেয় যার পেছনে আপনি নিজেকে বা সত্যকে লুকাতে পারেন।



অস্বীকার করবো না এর সবই সত্য। কিন্তু এর অনেক কিছুই সাময়িক। আপনি যদি আপনার সফলতাকে দীর্ঘসময় ধরে রাখতে চান তবে তাকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে সত্যের উপর। কেন সত্যকে ভালবেসেই জীবনকে সাজাতে হবে, তার সুবিধার কয়েকটি কারণ হলো:



1. মার্ক টোয়েনের কথাটাই সবচে জরম্নরি। তিনি বলেছেন, "যদি আপনি সত্য বলেন তবে আপনাকে কোনোকিছুই মনে রাখার কষ্ট করতে হবে না"।

2. আপনার গাল-গল্পগুলোকে যৌক্তিক করার জন্য বিশদ কিছু আপনাকে মনে রাখতে হবে না কারণ আপনার কাহিনীগুলো সত্যি, সুতরাং এর সত্যতা প্রমাণে আপনাকে পাহাড় কাটার কষ্ট করতে হবে না।

3. আপনি যদি ন্যায় বা সত্যের পক্ষে অবস্থান নেন তবে নিজের কাজ নিয়ে পরে আপনি অনুশোচনার কষ্টে ভুগবেন না।

4. মানুষ আপনাকে অনেক বেশি বিশ্বাস করবে যা আপনাকে অনেক সহজে সফলতা এনে দেবে।

5. অন্যান্যদের সাথে আপনার ব্যক্তিত্বের সংঘাত কম হবে।



সত্য-মিথ্যার সুবিধা-অসুবিধার এই যে ফারাক তা বাসত্দবে নিশ্চয়ই এতোটা স্পষ্ট না। সত্য-মিথ্যার সংজ্ঞা ও পার্থক্য করাটাও সহজ নয়। সার্বজনীন সত্য ও সার্বজনীন মিথ্যা খুঁজে পাওয়াটাও কষ্টকর। সত্যকে তাই আবিষ্কার করতে হয় নিজের মত করেই। মিথ্যাও তাই ব্যক্তিগত বিচারে মাত্রা পায়। আদর্শ লিপির সত্য-মিথ্যার জ্ঞান ও ধারণা থেকে আসলেই আমরা অনেক অনেক দূরে সরে এসেছি। আদর্শের সত্য-মিথ্যা বিচার করার অবশ্য জোরালো কারণ নেই। তবুও আমরা তা করি।

মন্তব্য ১৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই জুন, ২০০৬ রাত ৩:০৬

হযবরল বলেছেন: চুলচেরা বিশ্লষনী লিখা।

২| ০৮ ই জুন, ২০০৬ ভোর ৬:০৬

উৎস বলেছেন: মিথ্যার সাথে সৃষ্টিশীলতা জড়িত। সত্য বলার শিক্ষা দেয়াটাই আংশিক ভুল। আগে একটা টিভি প্রোগ্রামে দেখেছিলাম 3/4 বছর বয়সে শিশুরা মিথ্যা বলা শুরু করে, বুদ্ধিব ৃত্তির বিকাশের সাথে সাথে আমরা একসময় মিথ্যা বলা ছেড়ে দেই, কমিয়ে দেই, বা কৌশলে বলি। মিথ্যা এমন একটা ব্যাপার আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এখনো এ রাস্তায় সুবিধা করতে পারছে না। যদ্দিন না পারবে ততদিন আমরা পৃথিবীতে নিশ্চিন্তে রাজত্য করতে পারব।

৩| ০৮ ই জুন, ২০০৬ ভোর ৬:০৬

উৎস বলেছেন: রাজত্য -> রাজত্ব

৪| ০৮ ই জুন, ২০০৬ ভোর ৬:০৬

অতিথি বলেছেন: নির্মান মিথ্যা, স্বপ্ন মিথ্যা, কল্পনাও মিথ্যা, কিন্তু এই সবই আমাদের বস্তবকে নির্মিত করে প্রতি দিন,
সত্য কি যা ঘটেছে তার নিরাবেগ বর্ননা?
যা দেখছি তাই বলে ফেলা সত্য হতে পারে কিন্তু উপকারি সত্য সবসময় প্রতিশ্রুতির মতো, আশ্বাসের মতো।
আমি বিপন্ন কোনো এক জনের পাশে দাড়িয়ে বললাম সব ঠিক হয়ে যাবে- যদিও পৃথিবীর ঘটনা নিয়ন্ত্রনের ভার আমার উপরে নয় তারপরও এই আশ্বাস দিতে ভালো লাগে। মানুষের অবস্থান বলিষ্ঠ হয়, মিথ্যা না থাকলে এ জিনিষ কখনও সম্ভব হতো না।
আমি সত্য বলা পছন্দ করি না। যদি কোনো প্রয়োজ ন না থাকে তাহলে সত্য বলিও না।

৫| ০৮ ই জুন, ২০০৬ সকাল ১১:০৬

অতিথি বলেছেন: হযবরল, উৎস ও রাসেল (......) কে ধন্যবাদ।
প্রকাশ্যে মিথ্যার সুনাম করতে ভয় পাচ্ছিলাম। কিন্তু আপনাদের মত সৃষ্টিশীল মানুষ মুদ্রার ওপর পিঠও দেখতে পান। তাই মিথ্যার প্রয়োজনীতা ও সুষমাও আপনাদের চোখ এড়ায় না। সে এক অসম্ভব আশার কথা।

মূল্যবোধের ভিত্তিগুলো নিয়ে তখনই কেবল আমরা প্রশ্ন তুলতে পারি।...

৬| ০৮ ই জুন, ২০০৬ দুপুর ১:০৬

অতিথি বলেছেন: কবিতার লুকানো ভাব নাকি নানা ধরনের পাঠক টানে। পাঠক তার মত করে অর্থ তৈরি করে নেয়।
ভাবলাম কবিতার মত করে যদি প্রবন্ধ মার্কা লেখাও লিখি মানুষ পছন্দমত লাইনগুলো নিয়ে বা পড়ে সন্তুষ্ট হবে।

কিন্তু পাঠকের আগ্রহ থেকে বঞ্চিত এই লেখাটি।...

৭| ০৮ ই জুন, ২০০৬ দুপুর ১:০৬

অতিথি বলেছেন: পাউল গগার একটা উদৃতি দিয়ে বলছি
'জীবন হচ্ছে সংগীত ও ভালবাসার থাকার জন্যে।'
সেটুকো নষ্ট না করে মিথ্যা বলা যায়। তবে আমি সে মিথ্যা থেকেও দুরে থাকার চেষ্টা করি।

৮| ০৮ ই জুন, ২০০৬ বিকাল ৩:০৬

সাইফ ভুইয়া বলেছেন: এখানে সত্য ও মিথ্যা , ভাল ও খারাপ, শ্লীলতা ও অশ্লীলতা , সদব্যবহার ও দূর্ব্যবহার এক ও অভিন্নমনে হচ্ছে। আলো ও আধর, দিন ও রাত, চক্ষুস্মান ও অন্ধ এক কতারে শামিল। কাপুরুষতা ও সাহসিকতা , নির্মলজ্ঞান ও মূর্খতা একই সূতয় বাধা। উপর নীচ লন্ডভন্ড বাতুলতা আপনার লেখায় ভরপুর। শব্দ শব্দচয়ন বেশ প্রশংসার দাবীদার। ধন্যবাদ আপনার লেখার জন্য।

৯| ০৮ ই জুন, ২০০৬ সন্ধ্যা ৬:০৬

অতিথি বলেছেন: প্রয়োজন হল সমচেয়ে বড় সত্য। এর উপর আর কোন সত্য নাই।

১০| ১০ ই জুন, ২০০৬ রাত ১২:০৬

অতিথি বলেছেন: স্বরহীন এখানে সত্যকে নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে সংজ্ঞায়িত করেছেন। বিস্তৃত বললে ভালো হতো। কারণ তার কথা যদি আমি ভাবসম্প্রসারণ করি তবে তা আমার মত হয়ে যাওয়ার আশংকা থেকে যায়।

তবু বিষয়টি নিয়ে আলোচনার আগ্রহ আমার প্রবল। স্বরহীনের বক্তব্য হলো যখন যা প্রয়োজন তাই সত্য। এতে কথাটাকে বেশি সুবিধাবাদী ও নৈরাজ্যকর শোনায়। তা না করে আরেকটু মর্যাদা বজায় রেখে বলা যায়, প্রয়োজনই নির্ধারণ করে কোনটা সত্য কোনটা মিথ্যা।

নাহ, প্রয়োজনের একটা বিরাট ভূমিকা আছে। কিন্তু মূল্যবোধ, নীতিই আসলে নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা নিয়ে নেয়। এমনকি প্রয়োজনেরও।

১১| ১০ ই জুন, ২০০৬ রাত ১২:০৬

অতিথি বলেছেন: হমম, আমি আপনার সাথে এক মত।

১২| ১০ ই জুন, ২০০৬ রাত ১:০৬

অতিথি বলেছেন: আমি দু#খিত, আমার একটু ভুল হয়েছে....মানুষ তআর চরয়োজন অোানুসারে নীতি বা মূল্যবোধ ফিক্স করেছে, এটা একটা সার্ভের মত, যদি মনে করেন, তবে দেখবেন, যুগে যুগে কিছু নীতি বদলায়, সমাজের বিভিন্নস্তেরর মানুষ দেখেন তা হলে ও একটা ধারনা পাওয়া যাবে যে, প্রয়োজন মানুষের সব কিছুকে কতটা প্রভাবিত করে।কিছু নীতি বা মূল্যবোধ সব সমসয় সব সমাজের , সব স্তরের জন্য প্রযোজ্য, কারন তা মানুষের প্রয়োজন টা পরিপূর্ন করতে সে সহায়ক। তাই সবাই সেটা মেনে নেয়।

আমি চাহিদা বলি নি, বালেছি পড়য়োজন, যা না হলে ই নয়। একটা মানুষ বেচে থাকতে চাইবে, সেটা যে করে ই হোক, এই বেছএ থাকার জন্য তার পক্ষে যতটা করা সম্ভব তা করবে। তার পক্ষে সম্ভব নয় বলতে বুঝাচ্ছি, বাকী গুলো সে করতএ পারবে না কারন তখন অন্যের প্রয়োজন এ সে হয়ত হস্তক্ষেপ করবে।তা বাকীরা মেনে নিবে না ।

আমি ঠিক গুছিয়ে বলতে পারছি না.।মানে হয়...।দআরান একটু পর হয়ত আর একটু গুছিয়ে বলব.।

১৩| ১০ ই জুন, ২০০৬ রাত ১:০৬

অতিথি বলেছেন: এখন কিছুটা বুঝা যাচ্ছে স্বরহীন।
তবে গুছিয়ে বলতে যখন চেয়েছেন, বলুন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.