![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মকবুলের জীবনটা সত্যিই অনেক কষ্টের। চার মাসের অন্তঃসত্বা মাকে যখন তার বাবা নেশার টাকা না দেয়ায় ঘর থেকে বের করে দেয় তখন তার মা আর ফিরে যায়নি তার স্বামীর ঘরে। শুনেছে সে, তার এক বছর পরই তার বাবা মারাত্নক দূরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।
মকবুল যখন এই ধরিত্রীতে আসে তখন সে কোন সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মায়নি বরং অজপাড়া গাঁয়ের একটা ময়লা স্যাতসেঁতে চার ফালি চেঁড়া ছালা দিয়ে ঘেরা আঁতুড় ঘরেই জন্মেছে।
সারাদিন হাড় ভাঙ্গা খাটুনি তো তার সেই সাত বৎসর বয়স থেকেই শুরু হয়েছে যখন মায়ের নানান অসুখে তার ঔষুধ কেনার টাকা না জোটে, তখন থেকে আক্কাস আলীর ইটালিয়ান হোটেলে কাজ শুরু করে সে । বয়স বাড়ার সাথে সাথে তার জ্ঞানের পরিধিও বাড়ছে কিন্ত রুঢ় বাস্তবতা তাকে বারবার বিপথে ঠেলে নিয়ে যায়।
হোটেলের কাজ ছেড়ে দিয়ে রাজের কাজ করে দেবার জন্য যখন তাকে মায়ের ঔষুধের টাকা প্রতিদিন দেবার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়, তখন সে রাজের সেই টুইন ফিঙ্গারিঙের ( পকেটমার) কাজ শুরু করে।
বিশে পা দেয়া একজন পরিণত যুবক মকবুল যখন সালমাকে সকাল - সন্ধ্যায় দৌড়ে গার্মেন্টসে যেতে দেখে, ঘরে ফিরতে দেখে, তখন তার মনের গহীনে কিসের এক অজানা সুর বেজে ওঠে।
পঁচিশে পা দেবার ঠিক সাত দিন আগেই সে সালমাকে বউ হিসেবে ঘরে তোলে।
জীবনের উথান পতনের এক আশ্চর্য খেলায় একদিন সে ঠিকই পাবলিকের হাতে বেদম মার খায়। মনে মনে আরো হিংস্র হয়ে উঠবার কথা ভাবতে ভাবতে যখন বাড়ীতে পৌছে, ওপারে চলে যাবার জন্য হাঁসফাঁস করতে থাকা মায়ের শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করবার দৃশ্য দেখে মাথা ঘুরে পড়েই যায় সে।
(নাহ, এভাবে চলে না) এই ভাবনা থেকে বিত্তশালী হবার ধান্ধায় নেমে পড়ে মকবুল। ভাগ্যগুণে লটারীতে যখন এক লাখ টাকা পায় তখন তার খুশী আর দেখে কে?? তিন চাকার মোটর রিকশা কিনে সারাদিনে তার যা আয় হয়, তাতে তার মন ভরে না। ( বিত্তশালী তো হতে হবে, তাই না??)
কে ভেবেছিলো এই মকবুলই একদিন মকবুল সাহেব লাট বাহাদুর হবে??
কে ভেবেছিলো ঐ মকবুলই এদিন ছ' ছয়টা আ্যাপার্টমেন্টের মালিক হবে???
কে ভেবেছিলো মকবুলের সন্তান আজ বিদেশে যাবে হানিমুন করতে??
হ্যাঁ, সে পেরেছে।
হ্যাঁ, মিঃ মকবুল আজ একান্নতে পা দিয়ে সফল বিজনেসম্যানন।
তার হালাল ট্যাগ লাগানো ব্যবসা যেরকম অনেক আছে ঠিক তার গোপন ব্যবসার লিষ্টে দিনের পর দিন নতুন নতুন বহু কিছুই যোগ হচ্ছে যা তার উপরি হালাল ট্যাগধারী ব্যবসার চেয়েও বহুগুণে বড় বড় হারাম ব্যবসা।
আজ মকবুল একজন সফল ড্রাগ ডিলার। নিজ এলাকায় এমপি পদে দাঁড়িয়েই এক চান্সে বিনা ভোটে পাশ করবার চাঞ্চল্যকর গল্প তার আগে আর কেউ রচনা করতে পারেনি তার নির্বাচনী এলাকায় কিন্ত সে পেরেছে।
আজ মকবুল সাহেব একজন সম্মানিত এমপিও বটে।
কোকেন আর আফিমের চালান আসবার সময় যখন পুলিশ ইন্সপেক্টরের কাছে ফোনে গুরুগম্ভীর কন্ঠে বলা হয় যে,
( ছেড়ে দে চালানটা, সময় মত সব পেয়ে যাবি) তখন সেই ইন্সপেক্টরের লোভাতুর চোখে এগুলো আর অবৈধ মনে হয় না।
কেনই বা অবৈধ মনে হবে, যখন প্রতি সপ্তাহে নিজের বিছানায় নতুন দেহসুখ দানকারী রমণী আর একটু - আধটু মাতাল হবার উপকরণগুলো বিনাপয়সাতেই পাওয়া যায়!
কি দরকার এমপির কাজে বা '" হাত দেবার।
ডান হাতের বাম দিকের ঝাপটায় চালান খালাসের ইঙ্গিত দিয়ে ভাবে,
( এবারে সুখের ডিমান্ডটা আরেকটু বাড়িয়ে করতে হবে।)
আজ এমপি মকবুল সাহেবের একটি জনসভা আছে। যাবার পথে পুলিশ প্রোটোকোল আর নিজস্ব বডিগার্ডের চোখ ফাঁকি দিয়ে কিভাবে যেন একটা তরুণ ছেলে তার পাশে পৌছে যায়।
টুইন ফিঙারিঙ্গের কাজ করতে যেয়ে যখন সে এমপি মকবুলের কাছে ধরা খায়, তখন সেই ছেলের একটা হাড্ডিও আস্ত রাখবার প্রয়োজন আছে বলে মনে করেনি সেই ইন্সপেক্টর হিমেশ কুমার বাবু।
চারিদিকে দুঃখ প্রকাশের শব্দ শুনে জনাব মকবুল মুচকি হাসতে হাসতে ভাবেন তার সেই কারিশম্যাটিক চুরির কথা আর সকলের অজান্তেই কোমরে হাত বুলিয়ে দেখেন হাড়টাতে এখনো কোন ব্যথা আছে কি না।
না নেই।
কিন্ত তিনি তো এটা কখনো কল্পনাও করেন নি যে, তারই ব্যবসায়িক পার্টনার আজগর মিঁয়ার একদল চ্যালা তাকে আজ ওপারের বাসিন্দা করতে হাই রেঞ্জের রাইফেল নিয়ে দূর থেকেই তাক করে আছে এবং সফলভাবেই কাজটি শেষ করতে পেরেছে তারা।
মরহুম মকবুল সাহেবের কুলখানি অনুষ্ঠানে তার সন্তান উপস্থিত সকলের কাছে তার বাবার রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়ার আয়োজন করলে আজগরও তখন চোখের পানি ছেড়ে আমীন আমীন রব তুলে আর ভাবে,
এবারের এমপি নির্বাচনে তার এন্টি পার্টি বলে আর কেউই রইলো না।
মনে মনে হেসে লুটোপুটি খায় আর হাতে হাতে জিলাপীর প্যাকেট বিলিয়ে বেড়ায়।
শেষ হয়ে যায় মরহুম এমপি মকবুল চ্যাপ্টার.........।
আজগর তার পরবর্তী পথসভায় তার ব্যবসায়িক পার্টনারকে বিনম্র শ্রদ্ধায় স্বরন করে আর বলে,
" এজাতি আজ এমন একজন মাটির মানুষকে হারিয়ে শোকাহত''''।
সত্যিই আজ যে সে তার মৃত্যুতে আনন্দিত..... এটা আর প্রকাশ করেনি এক কালের মকবুলের বাল্যকালীন পকেটমার বন্ধু ছ্যাচড়া চোর মিষ্টার আজগর।
( সমাপ্ত)
©somewhere in net ltd.