| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দূরবীক্ষণ
আমি একজন ভবঘুরে। এদিক সেদিক ঘুরি ফিরে দিন কাটাই। যেখানে রাত সেখানে কাত।
সাংবাদিকতা পেশায় আমার আজকের এই অবস্থানে আসা এতো সহজ ছিলনা। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে, চড়াই উৎরাই পেরিয়ে আমার এই অবস্থানে আসা। মূলত মানুষের সেবা করার ইচ্ছা ছিল সেই ছাত্র জীবন থেকে । ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে সেই শৈশবে একবার সেনা বাহিনীতে যোগ দেয়ার জন্য মাইজদী শহীদ ভূলু স্টেডিয়ামে গিয়ে ছিলাম। সেদিন দূর্ভাগ্য আমার, ছোট কালে মা মারা যাওয়া অযন্তে অবহেলায় বেড়ে উঠা শুকনো শরীরে দাগ থাকায় আমি বাদ পড়ি। ফলে বিপল হয়ে বাড়িতে ফিরে আসতে হলো। এর পরও সামনসেবার সেই ইচ্ছা আমার দমে যায়নি। ইচ্ছে করলে পুলিশে বা অন্য কোন সংস্থায় যেতে পারতার ঘুষ দিয়ে। কিন্তু আস্তা ছিলনা বলে যাইনি। সেনা বাহিনীতে যেতে না পারায় সমাজ সেবার বিকল্প পন্থা খুঁজতে থাকি। পত্রিকা পড়ে ও টিভিতে খবর দেখে সাংবাদিক হওয়া বাসনা জাগলো আমার মনে। তাই দেরি না করে বাবাকে বললাম, আমি সাংবাদিক হবো। বাবা প্রথমে শুনে একটু বিচলিত হলেও পরে অবশ্য আমাকে অনেক সহযোগীতা করেছেন। আমি প্রথমে ১৯৯৮ সালে দৈনিক ইনকিলাবের চিঠিপত্র কলামে এলাকার সমস্যা নিয়ে লেখা শুরু করি। পরে স্থানীয় দৈনিক জাতীয় নিশান পত্রিকায় লিখি ( যেটি তখন লেটার প্রেসে বের হতো)। এর পর সাপ্তাহিক পূর্বশিখা, দৈনিক সচিত্র নোয়াখালী, এলাকার জনৈক বড় ভাইয়ের মাধ্যমে ঢাকার দৈনিক ভোরের ডাকে (তখন ভোরের ডাক সাদাকালো বের হতো) লেখা পাঠাই। এর পর একাধারে দৈনিক দেশ বাংলা, দৈনিক ইত্তেসাল, সাপ্তাহিক অপরাধ বিচিত্রা, দৈনিক আমার দেশ, বাংলাদেশ সময়, বার্তা সংস্থা শীর্ষ নিউজ ডটকমসহ একাধিক জাতীয় পত্রিকায় সাংবাদিকতা করি। অবশ্য মাঝে গত বছর দৈনিক জাতীয় নিশান পত্রিকা সম্পাদনা করি প্রায় ১ বছর। যেটি ছিল আমার জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ। তবে আমি সফল হয়েছি বলতে পারি। ১৯৯৮ সাল থেকে ২০১৩ দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছরের সাংবাদিকতা জীবণে কি পেয়েছি, আর কি পাইনি তা নিয়ে হিসেব কষলে অনেক সঙ্গতি, অসঙ্গতি, দু:খ বেদনা হৃদয় পটে ভেসে উঠে। মফস্বল সাংবাদিকতা করতে গিয়ে প্রথমে আমি সে সমস্যা পড়েছিলাম তা হলো অসহযোগীতা, অনৈক্য, অসদাচরণ। কোন ব্যাক্তি নতুন সাংবাদিক হতে আসলে আমরা তাকে অসহযোগীতা করি না। অবজ্ঞা করি। প্রাতিষ্ঠানিক অনৈক্যও আমাদের সাংবাদিকতা প্রশ্নবৃদ্ধ করে। আমরা একে অপরের সাথে সোহার্দপূর্ন আচরণ করিনা। জুনিয়ররা সিনিয়রদের সম্মান করিনা। সব চেয়ে বড় সমস্যা হলো আমাদের অনৈক্যের সুযোগ নেয় কুচক্রি মহল। প্রশাসনের অমলাসহ সমাজের দুষ্ট শ্রেনীর লোকেরা। আর ঢাকার সাংবাদিকরাতো মফস্বল সাংবাদিকদের সাংবাদিকই মনে করেননা। তারা মনে করে আমরা টাউট বাটপার। ঢাকার অফিসে গেলে এমইনি আচরণ পাওয়া যায় তাদের কাছে। কয়েক দিন আগেই আমি যে পত্রিকায় কর্মরত সেই পত্রিকার অফিস থেকে রাত ৯ টায় আমাকে ফোন দিয়ে বলা হয় ’একটি বিষয়ের উপর রিপোর্ট পাঠানোর জন্য। আমি যথারিতি রিপোর্ট পাঠাই, সাথে ছবিও। কিছুক্ষন পর অফিস থেকে ফোন করে একজন সাব এডিটর বললেল, ’এই মিয়া বাটপারি করের নাকি, রিপোর্টে ছবি কই। আমি বললাম, ছবিতো সাথে পাঠাইছি। উনি বলেন পাওয়া যাচ্ছেনা আমার পাঠান, নিউজটি ভালো টিটমেন্ট হবে। আমি যথারিতি ছবিটি আবার পাঠাই কিন্তু পর দিন নিউজটি এসেছে ঠিকই, ছবিটি নাই। ছবি যদি নাই দেবেন ওই সাব এডিটর কেন আমার কাছ থেকে ছবিটা নিল। এই হল মফস্বল সাংবাদিকদের সাথে ঢাকার সাংবাদিকদের আচরণ। তবে এর জন্য আমরা মফস্বল সাংবাদিকরাই দায়ী। কারণ এখন যে ছেলেটি বেকার সেই সাংবাদিকের সাইনবোর্ড বিক্রি শুরু করে। অশিক্ষিত-স্বশিক্ষিত, চোর, বাটপার, খুনি এই পেশায় এখন দেদারছে ঢুকে পড়ছে। ফলে দিন দিন আমাদের সাংবাদিকতার মান কমছে বই বাড়ছেনা। অবশ্য মফস্বল থেকে বের হওয়া পত্রিকার সম্পাদকরাও এই অপসাংবাদিকতার দৌরাত্ব বৃদ্ধির জন্য দায়ী। একটি সিগারেট খাওয়ালে, বাসায় বড় একটা মাছ নিয়ে গেলে, ২-৩শ টাকা হাতে ধরিয়ে দিলেই পত্রিকার একটি কার্ড দেয়া হয়। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে যাকে কার্ডটি দেয়া হয় সম্পাদক সাহেব একটু ভাবেননা বা খোঁজ নেননা যে লোকটি কেমন। অথচ সংবাদপত্র হচ্ছে সমাজের দর্পন। তাই নিজেদের পেশাগত উৎকর্ষের স্বার্থে অবিশ্যই আমাদের এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
লেখক:-
সাবেক সাধারণ সম্পাদক
চৌমুহনী প্রেসক্লাব
ও প্রতিনিধি, দৈনিক আমার দেশ
©somewhere in net ltd.