![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ভ্রমণে আপনার সেরা সঙ্গী
''এবারের ঈদের ছুটিতে পাহাড়ে যাওয়া যায়।”
চিন্তাটা মাথায় আসতে প্রথমেই মনে পড়ল কিছু ভাড়িক্কি নাম: সাকাহাফং, ডুমলং, যোগিহাফং, সিপ্পি ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু গরম আর বৃষ্টির কথা চিন্তা করতেই দমে গেলাম। এই তাল পাকা গরমে আর যাই হোক ট্র্যাকিং (আমার আবার হাইকিং বলতেই বেশি ভালো লাগে) করাটা খুব ্একটা বুদ্ধির কাজ হবে বলে মনে হয় না। এমন কোনও ট্যুরের আয়োজন কি করা যায় যেখানে পাহাড়, পর্বত, নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুর, লেক, ঝর্ণা (মরুভূমি আর মেরুভূমি ছাড়া সব কিছইু আর কি) ঘর্মগ্রন্থির অতিরিক্ত নিঃসরণ ছাড়াই দেখা যাবে?
Facebook Event Link মং রাজার দেশে আমরা ক’জনা: খাগড়াছড়ি-মারিশ্যা-রাঙ্গামাটি
ভাবতে ভাবতে খাগড়াছড়ি-মারিশ্যা-মাইনী-রাঙ্গামাটির এই রুটের কথা মাথায় এল। বর্ষা শেষ, এসেছে শরৎ, তাই পাহাড়ের গাঢ় সবুজ, লেকের বিপুল বিস্তীর্ণ জলরাশি আর ঝর্ণার প্রমত্ত প্রবাহ বিনা ক্লেশে দেখার এটাই উপযুক্ত সময়। এই তো আর মাত্র কয়েকটা দিন, নবযৌবনের উচ্ছাস স্তিমিত হয়ে আসবে, প্রমত্ত শুবলং হয়ে উঠবে শীর্ণ, কৃষকায়, পড়তে শুরু করবে ক্ষীণ ধারায়।
ঈদের পরে রবিবার থেকে অফিস খোলা, ঈদের ব্যস্ততা, পরিবারকে সময় দেয়া ও সামাজিকতা রক্ষা সব সামলে একটি দারুণ টাইমিংয়ের ট্রিপ হবে আশা করা যায়। চলুন ভ্রমণ পাগল প্রকৃতিপ্রেমি বন্ধুরা, ঘুরে আসি মং রাজার রাজ্য থেকে।
চলো যাই চেংগি
বাংলাদেশের পার্বত্য জেলাগুলো তিনটি সার্কেলের অর্ন্তভুক্ত: রাঙ্গামাটি চাকমা সার্কেলের, বান্দরবান বোমাং সার্কেলের আর খাগড়াছড়ি মং সার্কেলের। সবুজ পাহাড়ের বনানী, প্রমত্ত ঝর্ণা আর খর¯্রােতা পাহাড়ি নদী বিধৌত এই সবুজ শ্যামলিমা পর্যটকদের নিকট কিছুটা যেন অবহেলিত।
ঝর্ণা-পাহাড়-বনবনানীর সমন্বয়ে খর¯্রােতা চেংগি নদীর পাড়ে এই জেলার মূল শহরতলী। নদীর পাড় ও নদীর বুকে জেগে ওঠা চরে বহুকাল আগে সহ¯্রাব্দি প্রাচীন এই জনপদে ছোট আখের ন্যায় এক প্রকার সরু লম্বা আখ জন্মাতো, যা এখানকার ভাষায় খাগড়ানল নামে বহুল পরিচিত। খাগড়া নলের পাশেই ছড়ি অর্থাৎ ঝর্ণা; খাগড়া আর ছড়ি- দুইয়ে মিলে নাম হয়ে গেল খাগড়াছড়ি। অনেকেই এভাবে এই জেলার নামকরণের ভিত্তি খুঁজে পান।
রিছাং ঝর্ণাঃ
একটি ন্যাচারাল ওয়াটার ¯লাইড
মারমা অভিধানে ’রিছাং’ অর্থ পাহাড় থেকে পানি পড়া। স্থানীয়দের কাছে এই ঝর্ণাটি ’তেরাংতৈ কালাই ঝর্ণা’ নামে পরিচিত। খাগড়াছড়ি শহরের খুব কাছেই (প্রায় ১১ কিমি) ফলস টির অবস্থান। চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি হাইওয়ে থেকে প্রায় ২ কিঃমিঃ হাটলেই পেয়ে যাবেন ঝর্ণায় নামার সিঁড়ি।
সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমেই থমকে যেতে হয়- ”প্রথম দর্শনেই তাহার প্রেমে পড়িয়া গেলাম” টাইপ ব্যাপার। ন্যাচারাল ওয়াটার স্লাইড- আপনাকে নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারি, এমনটা বাংলাদেশের আবিষ্কৃত (অনাবিষ্কৃত গুলোর কথা জানি না) আর কোন ফলস এমনটা দেখতে পাবেন না। ঝর্ণাটি প্রায় একশ মিটার দীর্ঘ ঢাল প্রায় ৩৫ডিগ্রি কোণে বেয়ে নিচে নেমে এসেছে। একটু সাহস থাকলে ওয়াটার স্লাইড এর রোমাঞ্চের স্বাদ নিতে পারেন। বিনিময় মূল্য হিসেবে অবশ্য পরনের প্যান্ট, ট্রাউজারখানি ফেলে আসতে হতে পারে (গেলেই দেখতে পাবেন ঝর্ণার আশেপাশেই পড়ে থাকা অসংখ্য পশ্চাদ্দেশ ছেঁড়া প্যান্ট, ট্রাউজার ওয়াটার স্লাইডিংয়ের বীরত্ব জাহির করছে)।
আলুটিলার রহস্যময় গুহা
শহরে প্রবেশের পথেই পড়বে আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র: একটি ছোট্ট বিনোদন পার্ক যেখান থেকে চাইলেই এক নজরে পুরো খাগড়াছড়ি শহর দেখে নেয়া যায়। এখানেই রয়েছে সেই রহস্যময় গুহা স্থানীয়রা যার নাম দিয়েছে ”মাতাই হাকড়”, বাংলা করলে যার অর্থ দাড়ায় দেবতার গুহা। পর্যটন কেন্দ্রটির প্রবেশপথে স্বাগত জানাবে দু’টি শতবর্ষী বটবৃক্ষ। সুরঙ্গে প্রবেশ করার আগে মশাল নিতে ভুলবেন না যেন। ৩৫০ ফুট লম্বা দীর্ঘ এই সুরঙ্গটি দেখতে অনেকটা ভূগর্ভস্থ টানেলের মত। সুরঙ্গের গহীনে নিকষ কালো অন্ধকার, যাকে সাহিত্যের পরিভাষায় বলা হয় ”কালিগোলা অন্ধকার”। সুরঙ্গের তলদেশ পাথুরে ও পিচ্ছিল; তলদেশ দিয়ে একটা ঝর্ণা প্রবাহমান। সব কিছু মিলিয়ে কেমন জানি একটা গা ছমছমানি ব্যাপার।
ইতিহাস বলে পূর্বে এই পাহাড়টির নাম ছিল আরবারী পর্বত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় খাগড়াছড়িতে ভিক্ষার অভাব দেখা দিলে স্থানীয় লোকজন এই টিলা থেকে বুনো আলু সংগ্রহ করে উদরপূর্তির কাজ চালাত। তার থেকেই এই আলুটিলা নামের উদ্ভব।
সৌন্দর্য্যরে ঝর্ণা শুবলং
মারিশ্যা থেকে জলপথে মাইনী হয়ে রাঙ্গামাটি যাওয়ার পথেই পড়বে আকর্ষণীয় এই ঝর্ণাটি। রাঙ্গামাটি শহর থেকে প্রায় ১১কিঃমিঃ দূরে কাপ্তাই লেকের উত্তর-পূর্বে প্রান্তে অবস্থিত এই ঝর্ণাটি বরকল উপজেলার অর্ন্তভুক্ত। এখানে কয়েকটি ঝর্ণা রয়েছে; পাঠকবৃন্দ নিচে যে ছবিটি দেখতে পাচ্ছেন সেটি তন্মধ্যে সবচেয়ে বড় (উচ্চতা প্রায় ৩০০ ফুট)। তিনদিকে পাহাড় পরিবেষ্টিত এই ঝর্ণাটির সৌন্দর্য্য বর্ষাকালে সত্যিই অতুলনীয়, কেননা শীতকালে পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় এর আবেদন অনেকখানিই হারিয়ে যায়। ঝর্ণাটি থেকে এক কিঃমিঃ পূর্ব দিকে গেলেই পাবেন শুবলং বাজার। বাজারটির কোল ঘেষে পাহা চূড়ায় দাড়িয়ে আছে শুবলং আর্মি ক্যাম্প।
কাপ্তাই লেকের বিস্তীর্ণ জলরাশি
বিদ্যুত উৎপাদনের নিমিত্তে কর্ণফুলী নদীতে বাঁধ নির্মানের ফলেই এই বিশাল, বিস্তীর্ণ জলরাশির সৃষ্টি যা আমাদের দেশের অন্যতম প্রধান পর্যটন কেন্দ্র। লেকটির সৌন্দর্য্য বর্ণনের পূর্বে ইতিহাসটি একটু বলে নিই। ১৯৫৬ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে এর নির্মাণ কাজ আরম্ভ করে। ৬৭০.৬ মিটার দীর্ঘ ও ৫৪.৭ মিটার উচ্চতা বিশিষ্ট এ বাঁধটির নির্মাণ কাজ শেষ হয় ১৯৬২ সালে। বাঁধটির পাশে ১৬ টি জলকপাট সংযুক্ত ৭৪৫ ফুট দীর্ঘ একটি পানি নির্গমন পথ বা স্প্রিলওয়ে রাখা হয়েছে যা দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৫ লক্ষ ২৫ হাজার কিউসেক ফিট পানি নির্গমন করা যায়। নির্মান ব্যয় প্রায় ৪৮ কোটি টাকা।
সবুজ পাহাড়ের কোল জড়িয়ে থাকা এ শান্ত বিস্তীর্ণ জলরাশির বুকে নৌকা নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর যে অনুভূতি তার বর্ণনা করা কঠিন, স্বর্গীয় বললেও যেন খানিকটা কম বলা হয়। হ্রদে আছে নানা জাতের গাংচিল, বড় ও ছোট পানকৌড়ি আর বড় বড় কালচে ভোদর। শীতের আগে আগে আসে প্রচুর পরিযায়ী জলজ পাখি। রাঙ্গমাটি শহরের অদূরে হ্রদের কোলে রয়েছে রিসোর্ট পেদা টিং টিং অর্থাৎ পেট টইটুম্বুর। সাতটি ছোট ছোট ঝর্ণা প্রায় অদৃশ্য হয়ে নেমে এসেছে গাছপালার ফাঁকে ফাঁকে, কখনও গুণ গুণ করে আবার কখনও বা উচ্চস্বরে নিজেদের অস্তিত্ব ঘোষণা করে।
লেকের বুক জুড়ে জেগে আছে কিছু মৃত গাছের কান্ড যারা লেক সৃষ্টির পূর্বে এখানকার প্রাচীন বসতির অস্তিত্বের কথা নিরবে ঘোষণা করছে। কাপ্তাই হ্রদের কারণে প্রায় ৫৪ হাজার একর কৃষি জমি নিমজ্জিত হয় যা ঐ এলাকার মোট কৃষি জমির ৪০ শতাংশ। এছাড়াও সংরক্ষিত বনভূমির ২৯ বর্গমাইল এলাকা ও অশ্রেণীভূক্ত ২৩৪ বর্গমাইল বনভূমিও ডুবে যায়। বাস্তুচ্যুত হয় প্রায় ১৮ হাজার পরিবারের মোট এক লক্ষ মানুষ। ডুবুরির অনুসন্ধানে আজও তৎকালীন চাকমা রাজবাড়ির অস্তিত্বের সন্ধান মেলে। কান পাতলে যেন শোনা যায় সেইসব ভাগ্যবিড়ম্বিত মানুষের বঞ্চনার দীর্ঘশ্বাস।
একটি ঝুলন্ত ব্রীজের গল্প
বিটিভি’র সংবাদের সুবাদে ব্রীজটি দেখেন নি এমন লোক বিরল (অবশ্যই আমরা যারা ঙষফ এবহবৎধঃরড়হ এর)। কাপ্তাই লেকের বুকে মাথা তুলে সগৌরবে দাড়িয়ে থাকা দেশের একমাত্র ঝুলন্ত ব্রীজটি রাঙ্গামাটির অন্যতম একটি পর্যটন স্পট যাকে ইংরেজিতে বলে অ সঁংঃ ংবব. ভরা বর্ষা মৌসুমে ব্রীজটির পাটাতন পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সে সময় পর্যটকদের ব্রীজে উঠতে দয়া হয় না। ভাগ্যক্রমে আমাদের সে বিড়ম্বনায় পড়তে হবে না। ব্রীজে উঠার পর প্রত্যেকে নিজেদের একটি ¯œ্যাপ নিতে ভুলবেন না যেন (পরবর্তী প্রজন্মকে দেখাতে হবে না!)।
পড়ন্ত বিকালে নৈস্বর্গের রাজধানী
নৈস্বর্গিক সৌন্দর্য্যরে এক অপার লীলাভূমি এই পার্বত্য জেলাটি। পাখির কুহুতান, সবুজের মাখামাখি আর অসংখ্য নৃগোষ্ঠী এই জনপদকে দিয়েছে এক ভিন্ন মাত্রা। অনেকগুলো উপজাতির বসবাস এখানে। তার মধ্যে চাকমা, মারমা, তঞ্চইঙ্গা, ত্রিপুরা, মুরং, বোম, খুমি, খেয়াং, পাংখোয়া, লুসাই, সুজ সাওতাল ও রাখাইন অন্যতম। এ সকল নৃগোষ্ঠীর বিচিত্র জীবনাচরণ যেমন বিস্ময় জাগায়, তেমনি মুগ্ধতার বোধ জাগিয়ে তোলে শহরটির দর্শণীয় স্থানগুলো। কোনটি রেখে কোনটির কথা বলব: পর্যটন মোটেল, ডিসি বাংলো, রাজবাড়ি, রাজবন বিহার, উপজাতীয় যাদুঘর, কাপ্তাই হাইড্রো ইলেকট্রিক প্রজেক্ট, কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান ইত্যাদি ইত্যাদি। দিন ফুরিয়ে যাবে, কিন্তু দেখা শেষ হবে না।
পাহাড়ের কোল ঘেঁষে ঘুমিয়ে থাকা শান্ত জলের হ্রদ, সীমানার ওপাড়ে নীল আকাশের মিতালী হ্রদের নীলের সাথে। পাহাড়, নদী আর হ্রদের এক অপূর্ব মিলন মেলা পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজধানী খ্যাত এই শহরটি। চারপাশ যেন পটুয়ার পটে আঁকা কোন জলছবি। বর্ণিল প্রজাপতির সবুজের সাথে খেলা, রাতের আঁধারে দীপ জ্বালানো লক্ষ কোটি জোনাকির দল। এই অপরূপ সৌন্দর্য্য বর্ণনে কোন উপমাই যেন যথেষ্ট নয়। এ যেন কেবল মুগ্ধ নয়নে চেয়ে থাকা, প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য্যরে কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ।
Tour Type: Moderate (Anybody can join)
Trip Duration: 2 Days 3 Nights
Trip Cost: BDT 3700/=
Last date for Registration: 12th October'13
For registration & trip details please contact:
01714444330
২| ১১ ই অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১২:১৯
দাদুচাচা বলেছেন:
মনমুগ্ধকর ব্যবস্থা।
যেতে ইচ্ছে করছে,
কিন্তু কোরবানী ঈদ বলে কথা,
ইচ্ছে থাকলেও উপায় নেই।
পরবর্তীতে এরুপ ব্যবস্থা করলে জানাবেন,প্লিজ।
©somewhere in net ltd.
১|
১০ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৯:৫৪
ইকো ট্রাভেলার্স বলেছেন: Click This Link