নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বপ্ন আর বাস্তবতা যার মেলেনা সেই মানুষটিই আমি

হাসান বিন নজরুল

আসুন সুন্দরের বীজ বুনি আর আগাছা গুলোকে উপড়ে ফেলি- সুন্দরের চাষ করতে হয় আর আগাছা এমনি জন্মায়।

হাসান বিন নজরুল › বিস্তারিত পোস্টঃ

লা-জবাব (ছোট গল্প)

০২ রা জুন, ২০১৫ সকাল ১১:২৩


পৃথিবীতে আল্লাহর প্রতিনিধি দাবীকারী মুসলিম সম্প্রদায় আজ বহু এজেন্সিতে বিভক্ত অনেকটা তিরমীযি শরীফে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর এই হাদীসের মত "আমার উম্মতের মাঝে ৭৩ টি দল হবে এদের মাঝে মাত্র একটি দল জান্নাতে যাবে"। তাই তাদের ভেতরেই চলছে হানাহানি-মারামারি-হত্যা গুম ইত্যাদি।

আজ এমনই এক ক্লান্তি লগ্ন যেখানে মুসলমান দাবী করলেই বিপদ। শুধু নামে মুসলিম হলেই সাম্রাজ্যবাদী ষড়যন্ত্রের ক্রীড়নক হতে হবে বা বিকল্প পথ হয়রানী,মৃত্যু বা অধিকার হারা হয়ে আল্লাহর জমিনে আধুনিক ক্রীতদাশ, শরনার্থী বা পতিতালয়ের পতিতা হয়ে জীবন কাটাতে হচ্ছে (যেমন কাটাচ্ছে আফগান, ফিলিস্তিন, উইঘুর, রোহিঙ্গা, ইরাকী, সিরিয়ান ও অসংখ্য প্রান্তরের মুসলমানেরা)। এমনই এক ক্রান্তি লগ্নে অজানা-অচেনা এক ধনবান বিশ্ব জুড়ে বিশাল এক মুসলিম সম্মেলনের আয়োজন করলেন। রহস্য মানব জানেন- আত্ম ধ্বংসে লিপ্ত এই অভাগা ভঙ্গুর জাত এমনি এমনি (অচেনা মানুষের ডাকে) সম্মেলনে আসবেনা; তাই তিনি মোটা অংকের হাদিয়া ঘোষণা করলেন হাদিয়ার পরিমাণ মাথাপিছু ১০ মিলিয়ন ডলার! এই পুরুষ্কারের কথা শুনে পঙ্গপালের মত মুসলিম নেতারা পুরো বিশ্ব হতে সম্মেলন স্থলে আসতে লাগলো। সম্মেলন স্থল একটি অসাধারণ প্রাসাদ যে প্রাসাদ পৃথিবীর মানুষ কোনদিন দেখেনি- সেখানে অবাক করা চোখ ধাঁধানো চিন্তার অতীত এক আয়োজন!

সম্মেলন স্থলে আপ্যায়ন পর্ব শেষ- আপ্যায়নে ছিল বিশেষ ধরণের শরাব! যে শরাব খেয়ে কেউ মনে করতে পারলো না তারা এমন শরাব আগে কখনো খেয়েছে বা এটার কাছাকাছি কোন স্বাদ কখনো পেয়েছে! শরাব ও বিভিন্ন পদের অজানা অদেখা নাস্তার পর তারা প্রাসাদের বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখলো কিন্তু তারা শুধু অবাকই হল কারণ তারা এসবের কিছুই কোনদিন দেখেনি!
সবাই যখন মাইকের আহবানে প্রাসাদের অডিটোরিয়ামে জড় হল সেখানে তারা খুবই সুন্দর এক পুরুষের দেখা পেল এবং তারা তাকে ঐ বিস্ময় মানব মনে করলো কিন্তু তাদের চিন্তার ডালপালা গজানোর আগেই সে নিজেকে বিস্ময় মানবের সেক্রেটারী হিসেবে পরিচয় দিলো এবং সে সম্মেলন স্থলে জড় হওয়া লক্ষ লক্ষ নেতা-পাতি নেতা হতে সকল মুসলিম সম্প্রদায়ের তিনজন করে নেতাকে মঞ্চে গোল টেবিল বৈঠকে আমন্ত্রণ জানালো এবং বাকীদের ভালো মানের হাদিয়া দিয়ে স্থান ত্যাগের আহ্বান জানানো হলো। হাদিয়া পেয়ে পাতি নেতারা খুশিতে সম্মেলন স্থল ত্যাগ করলো আর সকল সম্প্রদায়ের প্রভাবশালী ও সিদ্ধান্ত নেয়ার মত নেতারা মঞ্চে বসে রইল।

অতঃপর...
প্রধান আলোচক আসার আগে মুসলিম নেতাদের মধ্যে ইসলাম ও মুসলমানদের অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যত নিয়ে আলোচনা শুরু হলো। আলোচনা ভালোই চলছিল... কিন্তু আলোচনায় একসময় এলো মতপার্থক্য বিষয়ক ব্যাপার গুলো এসব বিষয় আসার পর পরই সভায় উত্তেজনা বাড়তে লাগলো। এক পর্যায়ে মুসলিম নেতারা একে অপরকে কাফের-ফাসেক-মুনাফেক ইত্যাদি আখ্যা দিয়ে তুমুল মারামারিতে লিপ্ত হলো এবং তারা সম্মেলনে আসার উদ্দেশ্যই ভুলে গেল। মারামারি যেহেতু খালি হাতে হচ্ছিল তাই কেউ মারা না গেলেও সবাই ক্লান্ত হবার আগ পর্যন্ত কারো চুল চলে গেল কারো দাড়ি চলে গেল আবার কারো বা চেহারা মোবারকের নুরানী ভাব নষ্ট হলো। সবাই যখন বিশ্রাম নিচ্ছিল তখন এক অপরূপ সুন্দর মানবের আগমন ঘটলো... উপস্থিত সকলে তন্ময় হয়ে সেই ব্যক্তিকে দেখতে লাগলো। ফলে সম্মেলন কক্ষে সুনসান নিরবতা বিরাজ করলো... কিছুক্ষন পর নিরবতা ভেঙ্গে সেই বিস্ময় মানব বললেন “আমার নাম মুসলিম আমিই আপনাদের এখানে ডেকেছি। এতক্ষণ উপরের ফ্লোর থেকে আপনাদের আমি দেখছিলাম। আহ! আপনাদের ইসলাম প্রেম দেখে আমি অভিভূত!!! অবশ্য আমার মনে হয় রাসুল (সঃ) যদি দেখতেন আপনাদের এই অবাক করা ইসলাম প্রেম! তবে তিনি নিশ্চয় ব্যাথিত হতেন। আচ্ছা তবে আজকের আলোচনা শুরু করা যাক। আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় ইসলাম ও মুসলমান যা আপনারা ব্যানারেই দেখতে পাচ্ছেন... আগত সবাই ব্যানারের দিকে তাকালেন আসলেই তো এখানে একটা ব্যানার আছে! (মূলত কেউই নিজেদের মারামারি ও বাহাসের ফাঁকে এই ব্যানার দেখার সময় পাননি)।

সভা শুরু...
সবাই একে একে নাম বলে পরিচিত হওয়া শুরু করলেন এবং নিজেকে সুন্নী, আহলে সুন্নী, মুয়াবিয়ার সুন্নী, ওহাবী-সালাফী, শিয়া, ইমামী শিয়া, যাইদি শিয়া সহ নিজেদের আরও অনেক গোত্রে ভিন্ন করে করে গর্বের সাথে পরিচয় দিতে লাগলেন। পরিচয়ে যারা কাদিয়ানী, বাহাই, মাজার ও পীর পুজারী বলে প্রতীয়মান হলো প্রধান অতিথির আপত্তির মুখে ও অন্যদের সম্মতিতে তাদেরকে সভাকক্ষ থেকে বের করে দেয়া হল।

সভায় ইসলাম ও মুসলমানদের নিয়ে সকল বক্তা অনেক সুন্দর সুন্দর আলোচনা করলেন কোরআন হাদিসের রেফারেন্স ও যুক্তি দিয়ে সাথে ইহুদী, নাসারা, গণতন্ত্রী, নাস্তিক ও মুরতাদদের কঠিন ভাষায় সমালোচনা চলল। আরো আলোচনা হলো মুসলমানদের সোনালী অতীত ও পূর্বের সকল অর্জন নিয়ে সাথে বর্তমানের সীমাহীন দুরাবস্থা নিয়ে।

সবার শেষে প্রধান অতিথি বক্তব্য শুরু করলেন আর নিজের পরিচয় হিসেবে শুধু নাম- মুসলিম ও মাজহাবে ইসলাম হিসেবে নিজেকে উল্লেখ করলেন, (সভায় এ নিয়ে শুরু হলো কানাকানি ফিসফাস- সভায় আগত অধিকাংশই তাকে লা মাজহাবী ট্যাগ দিয়ে দুঃখ প্রকাশ করলো এবং তার হেদায়াত ও নাজাতের জন্য সকল ইসলামের এজেন্সির নেতারা একযোগে দোয়া করল তবে প্রকাশ্যে কিছু বললো না বক্তার ব্যক্তিত্ব ও সম্মোহনী শক্তির প্রভাবে)। বক্তা একটু চুপ হয়ে তাদের বিষয়টি আঁচ করতে পারলেন এবং বড় গলার খ্যাঁক দিয়ে নিজের সংক্ষিপ্ত বক্তব্য শেষ করলেন।

সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি বললেন-
‘প্রিয় ভাইয়েরা এতক্ষন আপনারা ইহুদী, নাসারা, নাস্তিক ও আপনাদের ভাষায় অন্যান্য ভ্রান্ত পথ অনুসরণকারীদের যে কঠোর সমালোচনা করলেন তা আমার ভালো লেগেছে বিপরীতে আপনারা কেউ কিন্তু মুসলিমদের করণীয় ও সীমাহীন অযোগ্যতা নিয়ে কিছু বলেননি।
প্রিয় ভাইয়েরা নিজেদের দূরাবস্থার জন্য শুধু বিধর্মীদের দোষ দিলেই হবে? পাশাপাশি মোকাবেলার জন্য নিজ নিজ করণীয় ঠিক করে তা বাস্তবায়নের কাজ কে করবে? আজকে আমার কোন বক্তব্যই আসলে নেই আমার আছে শুধু প্রশ্ন তাই শেষ প্রশ্ন- আপনারা আমি মুসলিম এবং আমার ধর্ম ও মাজহাব ইসলামের উন্নতির জন্য অনেক সুন্দর সুন্দর বক্তব্য রাখলেন। কিন্তু আপনারা নিজেরাই তো ইসলাম হতে Mitosis পদ্দততিতে নতুন অনেক ধর্মীয় সেট তৈরি ও অনুসরণ করেছেন যা রাসুল (সঃ) করে যাননি- তো আপনাদের ধর্মের জন্য আপনারা কি করবেন বলে ঠিক করেছেন? এই উত্তরটা এখন দিতে হবেনা নিজেরা নিজেরা ভেবে সিদ্ধান্ত নেয়ার আহ্বান রইল। কারণ সবার কাছেই আল্লাহ বিবেক দিয়েছেন আর আল্লাহর কাছে উপযুক্ত উপায়ে সিদ্ধান্ত চাইলে আপনারা উত্তর পাবেন তখন বিবেকই উত্তম আদালত হয়ে প্রতীয়মান হবে।’

শেষ প্রশ্নে সভায় আগত সবাই খুব বিবৃতবোধ করলো এবং সবাই অজান্তে একযোগে নিজ নিজ জিহ্বায় কামড় দিলো আর নিজ নিজ বাড়ীতে/আস্তানায়/আলয়ে জিহ্বার ব্যাথায় কুকিয়ে চিৎকার করে ঘুম ভেঙ্গে উঠে বসলো আর স্বপ্নে দেখা সেই বিস্ময় যুবকের কথাগুলো এবং শেষ প্রশ্নের সম্ভ্যাব্য উত্তর বিবেচনা করতে লাগলো প্রায় একসাথেই।

পুনশ্চ...
হয়ত সেই স্বপ্ন যুবকের ছুড়ে দেয়া প্রশ্নের উত্তর আমাদের পীর, মাশায়েখ, অলী-বুজুর্গ, শায়খ, আয়াতুল্লাহ ও হযরতেরা একদিন অবশ্যই খুঁজে পেতে সক্ষম হবেন এবং তারপর হতেই হয়ত মুসলিমদের ভাগ্য ইউটার্ণ করবে... কারণ মহান আল্লাহ আমাদের শ্রেষ্ট ও বিজয়ী জাতি হিসেবে প্রেরণ করলেও আমাদের নিজেদের সীমাহীন অযোগ্যতা, মতভেদ, হানাহানি ও অনৈক্যের কারণে আমরা বিজয় অর্জনে ব্যর্থ হচ্ছি; যেদিন থেকে আমরা মহানের রজ্জু সবাই মিলে একসাথে ধরে সীসাঢালা প্রাচীর গড়তে সক্ষম হবো সেদিন থেকেই নতুন সূর্যের আবীর দেখা যাবে বলে আমার বিশ্বাস।

০১.০৬.২০১৫

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা জুন, ২০১৫ সকাল ১১:৩০

ভয়ংকর বিশু বলেছেন: ব্লগ দিয়া ইন্টারনেট চালাও চান্দু?

০২ রা জুন, ২০১৫ সকাল ১১:৩২

হাসান বিন নজরুল বলেছেন: হুম ভাইজান... ক্যান জানবার চাইলেন?

২| ০২ রা জুন, ২০১৫ দুপুর ১২:০১

জিয়া উদ্দিন আহমেদ বলেছেন: দেখা যাক কি হয়। :)

০২ রা জুন, ২০১৫ দুপুর ১২:২১

হাসান বিন নজরুল বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.