নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

র্ভাবনা আমার ,ভাবনা আপনার। কিছু শব্দের প্রয়াস ।

ঁ নবায়ন পারভেজ

এই যে আমি ০০৭

শৌখিন কবি ও গল্পকার

এই যে আমি ০০৭ › বিস্তারিত পোস্টঃ

খোপ

১৩ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:৩৪


০১.
২৩৭১ সাল ।
লালন সাম্প্রতিক প্রাচীন সমাজব্যবস্থা ,রাজনীতি ,সংস্কৃতি ইত্যাদি প্রসঙ্গে পাঠ করছে ।তার মত সদ্য পঞ্চাশোর্ধ যুবা যে কি না উত্তেজনা ,রোমাঞ্চ ,প্রযুক্তির নব নব আহভানে ব্যস্ত হয়ে উন্নত জীবনকে উন্নততর করবে সে কি না এমন নিরামিষ হয়ে গেল! এইসব ভেবে ত্রারা বিমর্ষ হয় ।কেন যে সেদিন ত্রারা লালনের নাম নিয়ে ঠাট্টা করেছিলো!
পক্ষকাল পূর্বে ত্রারা; লালন সহ গ্রুপ ৭৮৬ এর প্রাক আন্তঃনক্ষত্র শিক্ষাসফর কমিটির সবাই মিটিং এ বসেছিলো ।সেদিন লালন একটি অদ্ভুত কথা বলল "সব গ্রুপ মেম্বারদের একদিন সামনাসামনি বসা উচিত ।২২বছর ধরে ভার্চুয়াল গ্রুপে শিক্ষালাভ করছি "-কি হাস্যকর কথা!
ভার্চুয়ালি বিয়ে শুরু হয়েছে আরও ১০০ বছর আগে । নারীপুরুষের স্টিমুলেশানমাত্রা সঠিক হলে স্পার্ম ব্যাংক থেকে সন্তান জন্ম দেয়া হয় ।ত্রারার দুটি সন্তান আছে; এরমধ্যে একটি তার ও লালনের নিজেদের সন্তান ।নিজের পূত্রের সাথে ভার্চুয়াল গসেপিং কি আনন্দের লালন জানেনা !আগে কত কস্ট করতে হত ছেলেমানুষ করতে ..এখন শুধু আনন্দ ।সবকিছু থেকে দুঃখ বাদ দিয়ে আনন্দ টা পরিমার্জন করা হচ্ছে ..কি আনন্দ! ত্রারার মন ভালো হয়ে যায় ।
লালন ত্রারাকে বিয়ে করতে চায় ।ত্রারা বলেছে
-" তোমার নাম যেমন অদ্ভুত কথাবার্তাও দিনদিন অদ্ভুত হয়ে যাচ্ছে ।"
এইটুকুই কথা তাতেই কি ক্ষেপে গেল লালন; ফ্রিকোয়েন্সি এত বেড়ে গেল যে ত্রারা রীতিমতো ঘেমে গিয়েছিল ।মডিউল অফ করে দিলো লালন ।
ইউনিভার্সাল মডিউলেও লালনকে খুঁজে পেলনা ত্রারা ।এটা নিশ্চয়ই যান্ত্রিক ত্রুটি ,তাই লালনের রোবটগুলির ডাটাবেজ চেক করে ত্রারা জানলো সে এখন সাড়ে চারশ বছরের পুরনো একটি বই পড়ছে ।বইটির নাম মজার "লালনগীতির সংকলন ।"
লালনটা মাঝে মাঝে খুব পাগলামি করে; ওকে মাইন্ড কন্ট্রোল এন্ড মনিটরিং প্রসেসে রাখেনা ওর রোবটগুলো !
ত্রারা চিন্তিত হয় ।
০২.
ত্রারা এখন সত্যিই চিন্তিত ;৫সেকেন্ড দুশ্চিন্তায় ভুগেছে ।রক্তে এন্টি ডিপ্রেসিভ তরল স্বংয়ক্রিয় কাজ শুরু করায় এখন নার্ভ স্বাভাবিক কিন্তু তবুও চিন্তা হচ্ছে ।
লালনকে খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছেনা ।শেষ যোগাযোগের সময় সে তার নামের মাহত্ত্ব্য বর্ণনা করেছিল ।বাংলাদেশ যা একটি প্রাচীন জনপদ প্রযুক্তি বিপ্লব-পূর্ব অর্থাৎ প্রায় সাড়ে পাঁচশত বছর আগে সেখানে এক মরমী সাধক ছিলেন ।তার নাম লালন ।এই বছর বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ৪০০ বছর পূর্ণ হবে।এটি নিয়েও লালন কিছু কথা বলেছিলো .,ত্রারা কিছুই বোঝেনি ।লালন একপর্যায়ে বলেছিল
-"চল আমরা বাংলাদেশে যাই ;আমাদের পূর্বপুরুষেরা বাংলাদেশী ছিলেন! "
কি পাগলাটে কথা ।
ত্রারা বলেছিল
-"ক্রেডিট
এর অভাবে কেউ বিয়ে করে না এখন আর তুমি কোথায় কি জানি কোন দেশে যাবে?
স্বপরিকল্পিত ভ্রমণ তো অনুমোদিত হবেনা হলেও বহু ব্যায় সাপেক্ষ ."

লালন কিছু বলতে চেয়েছিলো ফ্রিকোয়েন্সি হাই হয়ে গিয়ে লাইন কেটে গেছে ...
লালনের তথ্য গুলো বিশ্লেষণ করে ত্রারা ..কি অদ্ভুত সব তথ্য!পরিত্যক্ত প্রাচীন এক জনপদ .. যুদ্ধ হত্যা ...লালন নামের কবিটি নাকি নিরক্ষর ,তবে এসব সে কিভাবে বলল?
ত্রারা নিঃসন্দেহ হয় এইগুলোও অন্য পৌরাণিক গল্পের মতই নিশ্চয়ই ।
এমন সময় সেন্ট্রাল সিস্টেম জানালো লালনের অকাল সিস্টেম ক্রাশ করেছে ।
ত্রারা কেদে ফেলে ।একসাথে মহাকাশ স্টিমুলেটিং জার্নি হলনা; কতকিছুই হলনা; কত পরিকল্পনা করেছিলো দুজনে ।
একটু পরই মন স্বয়ংক্রিয় ভাবে ভালো হয়ে যায় ।এখন সঙ্গী খুজতে হবে ।পূর্ব ভালোবাসার স্মৃতি মডিউলে থাকলে ভালো সঙ্গী পাওয়া যায় না ।
ত্রারা সব স্মৃতি মুছার জন্য আবেদন করে ।এটাতে কিছু সময় লাগে ।
০৩
লালন অদ্ভুত একটি কোড দিয়ে যোগাযোগ করছে; কিছুক্ষণ আগেই প্রথম ম্যাসেজ টি আসল ।কোডিং সিস্টেম হল ফেসবুক; বিলুপ্ত প্রাচীন একটি প্রযুক্তি ।-"তুমি কোথায়? "
-"লালনের মাজারে ।বাংলাদেশে ।অনেক মজা হচ্ছে ।তুমিও চলে আস.."

ত্রারা বাংলাদেশ কি ভুলে
গেছে ।লালন ম্যাসেজ দেয় ,"মনে আছে রুখের জন্মের পরে বলেছিলে আমাকে ছেড়ে কখনো কোথাও যাবেনা? "
"-রুখ কে? "
"আমাদের সন্তান" ।বিস্ময়বোধক চিহ্ন সহকারে জানায় লালন ।
ত্রারার কিছুই মনে পড়ছে না ।কিছুই না ।কিন্তু খুব কস্ট হচ্ছে ।এই তীব্র অনুভুতি আগে তার হয়নি ।
রক্তে উত্তেজক বাড়িয়ে দেয়া হয় আরও ।ত্রারার রোবট অবাক হয়ে খেয়াল করে ত্রারা কাদছে ।রোবট মনিটরিং করল কোন স্মৃতিই অবশিষ্ট নেই ....রক্তে উত্তেজক আরও বাড়ানো হল।
১৫মিনিট পর ত্রারার রোবট জিজ্ঞেস করল -আপনি কেমন বোধ করছেন ?
উত্তর আসল
"-জানিনা ।"
অস্বাভাবিক একটি উত্তর ।রোবট সেন্ট্রালে রিপোর্ট করে.."অস্বাভাবিক মানবীয় আচরণ পরিলক্ষিত হচ্ছে ...."

০৪
লালন গান শুনছে
"আমি অপার হয়ে বসে আছি .."
আজ সে সুনামগঞ্জ যাবে; আবদুল করিমের গান শুনতে ...
ত্রারা নতুন সঙ্গীর সাথে নতুন একটি গ্রুপে যোগ দিয়েছে; তাদের কাজ হল বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ করা ।
নতুন সঙ্গীটি একদিন বলল "উনবিংশ শতাব্দীতে বাংলাদেশ নামের একটি দেশ এর একজন কবি মানবাধিকার এর স্বপ্ন দেখেছিলেন ..."
কে সে?
-"অদ্ভুত নাম ।লালন ।"
লালন চোখে জল নিয়ে শুনছে ..
"কেমনে ভুলিব আমি বাঁচিনা তারে ছাড়া .."
লালন এর সবই মনে আছে তবু সে জানে না কেন কাদছে ।একি স্মৃতি; প্রকৃতি নাকি সুর ।
কাদছে ত্রারাও অজ্ঞাত কারণে ।মানুষ কখনোই জানবে না ঠিক কেন যে চোখে এত জল আসে!
তা হোক না; ত্রারা লালন আর প্রশান্ত মহাসাগরের অশ্রু আজো সমানুপাতি ।
অন্তত কালব্যাপি তা এমনই লবনাক্ত থাকবে ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.