নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০

রাজা সরকার

আমি একজন সামান্য লেখক।

রাজা সরকার › বিস্তারিত পোস্টঃ

প দা তি ক

১৮ ই আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১:৫৬


লিংক---পদাতিক/২২
২৩
সুবোধ জাহানারাকে এতটাই কম লক্ষ্য করেছে যে এখন কাঁদতে থাকা জাহানারার মুখ লণ্ঠনের মৃদু আলোয় আবার খুব অচেনাই ঠেকতে লাগলো। ক’দিন আগে কিনে আনা শাড়িটাই দেখছি আজ পরনে। গা’এ ব্লাউজও আছে। সন্ধের দিকে সে একটু সাজ- গোজ করে বুঝি। কী দিয়ে আর সাজ-গোজ করবে—ঘরে তো ছোট এক খান আয়না, বেড়ার গা’এ ঝোলানো। মাথায় দেয়ার নারকেল তেল ছাড়া প্রসাধনের দ্রব্যাদি-ত কিছু কিনেছি বলে মনে পড়ে না। বোধ হয় গা’ ধোয়, মাথা আঁচড়ায়, সিঁদুর পরে, পরিষ্কার দেখে শাড়ি ব্লাউজ পরে—এ ছাড়া আর কী করবে। আঃ না বুঝে এ আমি কী করলাম—সামান্য এই মানুষটির প্রাণে আঘাত করে বসলাম? আমার এই কর্তৃত্ববাদী কথা-ক’টি না বললেই হতো। আমার এই উদ্ধার কর্তা ভাবটা, আশ্চর্য আমারও যে সব সময় ভাল লাগতো তা নয়। তবু আমি এই ভুলটাই করলাম। আর এদিকে কাঁদছে-তো, কাঁদছেই। কেঁদেই চলেছে। চোখের সামনে একজন কাঁদছে—এ যে সহ্য করা কি ভীষণ কঠিন !

এরপর আর করার কিছু থাকে না এক অসহায়তা ছাড়া। হয়তো সেই অসহায়তাই সুবোধকে চালিত করে থাকবে। সুবোধ একটু কাছে এগিয়ে জাহানারার হাত ধরে বলতে গেলো—ঠিক আছে, ঠিক আছে---। বলা সে শেষও করতে পারলো না, জাহানারা তাকে জড়িয়ে ধরে প্রায় ভেঙে পড়লো। ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলতে শুরু করলো—না না আমি কোথাও যামু না—ক্যান যামু—আমি কী দোষ করছি—আমারে পাঠানোর লাইগ্যা আপনে ভাবলেন ক্যামনে----।
সুবোধ জাহানারার এই প্রতিক্রিয়ায় তড়িতাহতের মতো বসে রইল। কোন উত্তর নেই তার কাছে এই প্রশ্নের। শুধু তার দুই কাঁধে বেষ্টন প্রয়াসী জাহানারার দুটো দুর্বল হাত তির তির করে কাঁপতে লাগলো। তবু একসময় জাহানারাকে কাছে টেনে তার চোখ দুটো নিঃশব্দে মুছিয়ে দিল। ঘোমটা ছাড়া ছোট্ট মুখখানা তুলে নিজের মুখের খুব কাছাকাছি নিয়ে এলো। বললো—না, এই কথা আর বলব না। কথা দিচ্ছি। কিন্তু তুমি কথা দাও—তুমি আর কাঁদবে না। বলে জাহানারার মুখ নিজের মুখের আরো কাছে নিয়ে এলো। জাহানারা এই অনাস্বাদিত স্পর্শে নিঝুম হয়ে গেল। সুবোধের বুকে মাথা রেখে বন্ধ করলো ফোঁপানো। সুবোধের সান্ত্বনার হাত তার পিটে আশ্বাসের মত সচল থাকলো। কতক্ষণ এভাবে কাটে তাদের তার আর হিসেব করে না কেউ। এক সময় ভাঙা গলায় জাহানারা বললো—আইজ এইখানেই শুইয়া পড়েন। সুবোধও এক কথায় সম্মতি জানালো। বললো—হ্যাঁ, তুমি বিছানা করো— আমি আসছি। এই বলে সুবোধ বাইরে গেল।

আবছা অন্ধকার ঘরে আজ এই রাতের কোন সাক্ষী নেই। তারাই বক্তা, তারাই শ্রোতা। তারাই বাদী, তারাই বিবাদী। জলস্রোতের মতো সমস্ত উঁচু নিচু ডুবিয়ে তারা বইতে লাগলো পরস্পরের দিকে আপন গতিতে । পাশাপাশি শায়িত তাদের এতদিনের রক্ত-চোয়ানো ভাবনার জগতে হঠাৎ-ই কখন যে শরীর এসে ঢুকে পড়েছে টের পায় নি। টের পায়নি কখন তাদের রক্ত মুছিয়ে, স্নান করিয়ে, পরম যত্নে একসময় ঘুম পাড়িয়ে শরীর শরীরের কাছে ফিরে গেছে।

ভোর রাতের দিকেই তারা ঘুমোয়। ফলে তাদের ঘুম ভাঙে বেলা করে। সুবোধ আগে উঠে চা বসিয়ে দেয়। চোখ খুলে জাহানারা সে দৃশ্য দেখে লজ্জায় মরে যায়। তাড়াতাড়ি উঠে সে বাইরে গিয়ে চোখে মুখে জল দিয়ে এসে দেখে সুবোধ চা খাচ্ছে। প্যান্ট শার্ট পরা। তার চা আর বিস্কুট সাজানো টুলের উপর । সে চা না খেয়ে সুবোধের পেছনে দাঁড়িয়ে রইলো। সুবোধ বেরনোর আগে তাই দেখে বললো—কী হলো চা খাও। আমি বের হবো। জাহানারা বললো—আপনে খান, আমি পরে খাবো। সুবোধ আর কথা না বলে জাহানারাকে জড়িয়ে ধরলো, বললো—ঘরে আর মাথায় কখনো ঘোমটা দিয়ে থাকবে না। আর আমাকে ‘আপনি’ ‘আপনি’ করে বলবে না। ঠিক আছে?—বলে, আরো কাছে টেনে এনে মাথার ঘোমটা নিজের হাতেই সরিয়ে দিয়ে সে আস্তে আস্তে বেরিয়ে গেল কাজে। অতঃপর একা একা কয়েক মুহূর্ত জাহানারা ঘরে মধ্যে ছবির মত দাঁড়িয়ে থাকলো। কিন্তু এইসব মুহূর্তগুলো যে সে খুব বেশি উপভোগ করতে পারলো তা না। চা বিস্কুট খেয়ে তাকেও কাজের বাড়ি চলে যেতে হলো। আর আজ থেকেই তারা ভেবে নিতে চাইলো যে এটা তাদের কাছে এক নতুন করে শুরু করা।(ক্রমশ:)

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ২:০৮

ফারহানা তাবাসসুম বলেছেন: বাহ,,, দারুন!!

১৮ ই আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৩:৫৭

রাজা সরকার বলেছেন: মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ ভাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.