নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০

রাজা সরকার

আমি একজন সামান্য লেখক।

রাজা সরকার › বিস্তারিত পোস্টঃ

প দা তি ক

২২ শে আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১১:২৫

লিংক---পদাতিক/২৫


২৬
ভেঙে গেল সুবোধের ঘুম। পাশে বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে থাকা জাহানারার অবস্থা দেখে সেও অবাক হয়ে গেল। জাহানারার পিঠে হাত দিয়ে সে বলতে গেল—
--কী, হয়েছে কী, এমন করছ কেন?
--কিছু না—
--‘কিছু না’ বলে আবার এমন করছ কেন—কাঁপছো কেন—বাইরে গেছিলে নাকি—বল কী হয়েছে—
কথার আর কোন উত্তর না দিয়ে জাহানারা উপুড় হয়ে মুখ গুজে শুয়েই রইলো বিছানায়। ঘরের আবছা অন্ধকারে সুবোধ কোন ধারণাই করতে পারে না । একসময় জাহানারার কানের কাছে মুখ নিয়ে আবার কিছু বলবে বলে জাহানারাকে জড়িয়ে ধরতে যেতেই জাহানারা ফুঁসে উঠলো। মুখ ঘুরিয়ে বলে উঠলো—আর না, অনেক হইছে,--আইজ তোমার হইছেটা কী—নেশা গিলছ—হু্‌শ নাই, কী করছ না করছ—হায় আল্লাহ্‌—এর নাম ঘর করা--। বলতে বলতে জাহানারা বিছানায় উঠে বসে। জাহানারার মুখ পরিষ্কার দেখা না গেলেও তাকে আবার একবার সুবোধের অচেনা মনে হতে থাকে। কী এমন হয়েছে যে জাহানারা আজ এইভাবে কথা বলছে। শান্ত, ধীর স্থির একটি মেয়ে—কী এমন ঘটলো যে এমন আহতের মত অস্থির হয়ে উঠেছে ? আগের কথার সূত্র ধরে জাহানারা আবার বলতে শুরু করলো—আর একবার অমন হইলে লাইনের উপর লাশ পাইবা কইলাম--। কথা শুনে সুবোধ একদম স্থির। এবার সে মাথা নিচু করে ফেললো। শুনতে লাগলো জাহানারার কথা । তার মুখে এমন ধরণের এত কথা এর আগে কখনো শুনেছে বলে মনে করতে পারছে না। বিস্ময়ে, লজ্জায় মাথা নিচু করে বসে থাকে সে। শুনতে থাকে জাহানারার গলা---অমন কইরবা-তো এইখানে টাইন্না আনছ ক্যান্‌?—ওইখানেই গোর লইতাম—গলায় দড়ি দিতাম । হায় আল্লাহ্‌ , পেটে এক শত্তুর বাসা লইছে। পুড়া কপাল আমার। কই যাই আমি-- আমারে বিষ আইন্যা দ্যাও--।

এই রকম ভারী পরিবেশে তারা দু’জনেই অনভ্যস্ত। কী যে হলো আজ । ঘরে যে আলো নেই তা তাদের মনেও পড়ছে না যেন। কিন্তু ‘পেটে শত্তুরের বাসা’ কথাটা শুনে সুবোধের যেন চৈতন্য ফিরে এলো। বিছানা থেকে নেমে সে দাঁড়িয়ে পড়লো । অন্ধকার ঘরের মেঝেতে কিছুক্ষণ অস্থির পায়ে পায়চারী করলো। একবার বাইরেও গেল। ফিরে এসে ঘরে লণ্ঠনটা জ্বালালো। ঘর লণ্ঠনের মৃদু আলোতে যেন আরো থমথমে হয়ে উঠলো। জাহানারার মুখের দিকে তাকাতে পারছে না সে। তবু এবার জাহানারা পাশে গিয়ে বসে জাহানারার হাত নিজের হাতে নিয়ে বললো—খুব অন্যায় করে ফেলেছি হয়তো—মাফ করে দাও। আর শত্তুর পেটে বাসা লইছে কও-নাই কেন? শত্তুরের কথাটা সুবোধের মুখে শুনে জাহানারা আবার কান্নার ভেঙে পড়লো সুবোধের কোলে। সুবোধ তখনও বলতে থাকলো—তুমি মরলে শত্তুর বাঁচবে? পাগলী ভয় কীসের? কারোর মরার জন্য এই কষ্টের, এই অজ্ঞাতবাসের জীবন-তো বেছে নিই-নি। শুধু বাঁচার জন্যই-তো এই, এত সব করে যাচ্ছি। তুমি যদি এটা না বোঝ, তবে আর কে বুঝবে বলো? হ্যাঁ, শোন কান্নাটা থামাও, দেখি মুখ দেখি—। জাহানারার মুখ তুলে ধরে চোখ মুখ মুছিয়ে দিল সুবোধ। এরপর বললো—শোন, আমরা আর এখানে থাকবো না। সময় বেশি নাই—আমরা আজ ভোর রাতেই চলে যাব। আর এই কথা বলতেই-তো আজ তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে এসেছিলাম ! কীসের থেকে কী হয়ে গেল--।

সুবোধের কথা শুনে জাহানারার সব আবেগ যেন থমকে গেল। চোখ রগড়ে ধরা গলায় প্রশ্ন করলো—ক্যান, কী হইছে?
--হয় নাই, থাকলে হইবো। এখানকার কাজটা ভাল না।এই কাজে একটা বিপদ আপদ হইতে পারে।
--অন্য কাজ নেও।
--উপায় নাই, এখানে থেকে এই কাজটা ছাড়াও যাবে না।
--হায় আল্লাহ্‌--একটু খুলেই কও না।
--সে অনেক কথা—ধীরে ধীরে কইবো পরে। এখন গোছ-গাছ করে নাও। আমি একটু ঘুরে আসছি। আর এইটা রাখ সাবধানে।
--কী এইটা?
--টাকা।
দরজা ঠেলে সুবোধ আস্তে আস্তে বের হয়ে গেল। জাহানারা হাতে সুবোধের দেওয়া কাগজে মোড়া প্যাকেটটা নিয়ে স্থির হয়ে বসে রইলো।
অল্প সময়ের মধ্যে ঘটা এই সকল ঘটনার আকস্মিকতায় জাহানারা নিজের কাছে ফিরতে বেশ সময় নিলো। ঘরের দিকে তাকিয়ে মনটাও তার একটু দমে গেল। ছেড়ে যেতে হবে এই ঘর! কাজের বাড়ি কথাও মনে পড়তে লাগলো। কী স্নেহ-ই না করতেন মাসি। কিন্তু ভাবার সময় কই। জাহানারা গোছ-গাছ করতে লেগে গেল।

চা’এর দোকানে বসে সুবোধ চিঠিটা লিখলো। খামটা সে দুপুরেই কিনেছিল। লিখলো—শ্রদ্ধেয় শিবেন মিত্র। স্যার, আপনি আমার অশেষ উপকার করেছিলেন চাকরিটা দিয়ে। এর জন্য আমি আপনার কাছে চির কৃতজ্ঞ। কিন্তু আজ আমি আপনার কাছে ক্ষমা চাইছি। কারণ আপনাকে না জানিয়ে আমি চাকরিটা ছেড়ে দিচ্ছি এবং বঙ্কু ঠিকাদারের কাছ থেকে পাওয়া ক্যাশ পেমেন্ট দশ হাজার টাকা, আপনার অফিসে জমা না দিয়ে নিজের প্রয়োজনে আমি নিয়ে যাচ্ছি। আমি জানি এই দুটো কাজই যথাক্রমে অন্যায় এবং অপরাধ। কিন্তু নিজেকে এক বিপদের মুখোমুখি দেখে আমি একান্ত নিরুপায় হয়েই এই কাজ করেছি। টাকাটা আমি ঋণ হিসেবেই নিলাম মনে করি। সুযোগ-মত তা পরিশোধ করবো বলে আমি নিজের কাছে দায়বদ্ধ। আমাকে ক্ষমা করবেন। ইতি আপনার অনুগত জয়দেব মণ্ডল। (ক্রমশঃ)



মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.