নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অন্ত্যজ বাঙালি আতরাফ মুসলমান

"হরি আছেন পূর্বে, আল্লা আছেন পশ্চিমে, তুমি তোমার হৃদয় খুঁজে দেখ- করিম ও রাম উভয়েই আছেন হৃদয়ে; এ জগতের সমস্ত মানব-মানবীই তাঁর অংশ।" (সন্ত কবীরের গান; তর্জমা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)

ইরফানুর রহমান রাফিন

"অন্ত্যজ বাঙালি আতরাফ মুসলমান" নামটা ব্লগার ইমন জুবায়েরের স্মরণে...

ইরফানুর রহমান রাফিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

বীরাঙ্গনাঃ শব্দ প্রসঙ্গে

২৯ শে নভেম্বর, ২০১২ দুপুর ১২:১৬

মুক্তিযুদ্ধ কখনোই অতীত হয় না, হবে না, হওয়া সম্ভব না; মুক্তিযুদ্ধ সর্বসাময়িক সমসাময়িক। সেই ভরসাতেই, আজ ছাব্বিশে মার্চ বা ষোলই ডিসেম্বর না হওয়া সত্ত্বেও, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কিছু কথা লিখছি।



১৯৭১এ পাকিস্তান সেনাবাহিনী তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার-আলবদর'দের সক্রিয় সহায়তায় নারী-পুরুষ-শিশু-বৃদ্ধ নির্বিশেষে এক অবিশ্বাস্য নৃশংস গণহত্যা চালিয়েছিলো। সর্বসাকুল্যে প্রায় তিরিশ লাখ মানুষ শহিদ হয়েছিলেন ১৯৭১এ। এছাড়াও করেছিলো লুটতরাজ ও অগ্নিসংযোগ। কিন্তু পাকিস্তান সেনাবাহিনী আরো একটি অপরাধ করেছিলো, যেটা বিশেষায়িত, অর্থাৎ সার্বজনীন নয়। সেটি হচ্ছে ধর্ষণ। নারীরা, শুধু নারীরাই এই পৈশাচিক নৃশংসতার শিকার হয়েছিলেন। সেই নারীদের নাম দেওয়া হয়েছে "বীরাঙ্গনা"।

নামটি কি যথার্থ? আমার মতে, না। সেই কারণেই এই লেখাটির অবতারণা।



"বীরাঙ্গনা" শব্দের আক্ষরিক অর্থ "বীরত্ব যে নারী অঙ্গে ধারণ করেন"।

ব্যবহারিকভাবে এই শব্দের দুটি অর্থ হতে পারে। যে নারী নিজে বীরত্বের কাজ করেছেন, এবং সেই কারণে যিনি বীরত্ব অঙ্গে ধারণ করেন তিনি বীরাঙ্গনাঃ এই অর্থে ঝাঁসির রাণী লক্ষী বাঈ-কে বীরাঙ্গনা বলা যায়, বলা যায় জোয়ান অফ আর্কে-কে, এবং বলা যায় দুনিয়ার যেকোনো দেশের স্বাধীনতাসংগ্রামে অংশ নেয়া নারী মুক্তিযোদ্ধাদের। কিন্তু বীরাঙ্গনা শব্দের আরেকটি অর্থও হয় (এবং এই অর্থেই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যে নারীরা ধর্ষিতা হয়েছিলেন তাঁদেরকে বলা হয় বীরাঙ্গনা, যদি আমরা মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী বাংলাদেশে তাঁদের প্রতি তাঁদের পুরুষ কাউন্টারপার্টদের অধিকাংশের আচরণ কি ছিল সেটা স্মরণ করি তাহলে এই দাবীর স্বপক্ষে যথেষ্টের চেয়েও বেশি প্রমাণ পাওয়া যাবে। আগ্রহীরা দেখতে পারেনঃ নীলিমা ইব্রাহিমের বই "আমি বীরাঙ্গনা বলছি" এবং সৈয়দা ইয়াসমিন সাইকিয়ার আর্টিকেল "সাইলেন্সিং দা ন্যারেটিভস অফ ভায়োলেন্স অফ 1971"।); সেই অর্থটা কি? সেই অর্থটা হচ্ছেঃ যে নারীর সাথে বীরত্বের কাজ করেছে কেউ, এবং সেই কারণে যিনি বীরত্ব অঙ্গে ধারণ করেন তিনি বীরাঙ্গনা। আর এই অর্থটাকে স্বীকার করে নেওয়ার অর্থ হচ্ছে, এটাকেই অঘোষিতভাবে স্বীকৃতি দেওয়া যেঃ ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এদেশের নারীদেরকে যে ধর্ষণ করেছিলো সেটা ছিল একটা বীরত্বের কাজ, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বীর এবং ধর্ষণ হচ্ছে বীরত্ব, এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বীরত্বকে ধারণ করে বলেই যাঁরা ধর্ষিত হয়েছিলেন তাঁরা বীরাঙ্গনা !!! এর চেয়ে বড় অপমান আর কি হতে পারে সেই নারীদের জন্য ??? অথচ সেই অপমানই এই শব্দপ্রয়োগের মাধ্যমে তাঁদের প্রতি দিনের পর দিন করে চলেছি আমরা সবাই।



যাঁরা ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক খুন হয়েছিলেন, আমরা যদি তাঁদের সবাইকে "শহিদ" বলতে পারি এবং শহিদ শব্দটি উচ্চারণ করতে পারি শ্রদ্ধার সাথে; তাহলে যাঁরা ধর্ষিত হয়েছিলেন, কেন তাঁদেরকে বীরাঙ্গনা বলে অপমান করবো আর বোকার মত শ্রদ্ধা করে যাবো ধর্ষক পাকিস্তানি শূয়োরগুলোকে? এটা কি ব্যাটাগিরি ও নির্বুদ্ধিতা নয়? মুক্তিযুদ্ধকে ঢাল হিশাবে ব্যবহার করে ব্যাটাগিরি দ্যাখানো কি প্রশ্রয় পেতে পারে? আমরা সেই নারীদের বলতে পারি ধর্ষিতা বা নির্যাতিতা বা নিপীড়িতা, শহিদ শব্দটা যেই শ্রদ্ধার সহিত উচ্চারণ করি তার সমান শ্রদ্ধা হৃদয়ে নিয়ে। কাজটা কি খুব কঠিন? পারতে হবে। ধর্ষিত হওয়া কোনো অপরাধ না, ধর্ষণ করা যেমন অবশ্যই অপরাধঃ এটা যদি কথার কথা বা বইপুস্তকের কথা না হয়, এটা যদি আমরা প্রাণেমনে বিশ্বাস করি; তাহলে আমরা পারবো। ধর্ষিতা/নির্যাতিতা/নিপীড়িতা শব্দগুলো শহিদ শব্দের সমান শ্রদ্ধার সাথে উচ্চারণ করতে। পরিহার করতে বীরাঙ্গনা শব্দটি।



১৯৭১এ যাঁরা শহিদ হয়েছেন, এবং যাঁরা ধর্ষিত হয়েছেন; আমাদের প্রমাণ করতে হবে আমরা তাঁদের শ্রদ্ধা করি সমানভাবে। আর ঘৃণা করি শুধু পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আর রাজাকার-আলবদরদের'কে।



শহিদ বুদ্ধিজীবী আনোয়ার পাশা তাঁর "রাইফেল, রোটি, আওরাত" উপন্যাসটি লিখেছিলেন ১৯৭১ সালের এপ্রিল-জুন মাসে; যিনি শহিদ হয়েছিলেন চৌদ্দই ডিসেম্বরে। সেই উপন্যাসের শেষটা তিনি করেছিলেন একটি আশায়ঃ নতুন মানুষ নতুন পরিচয় নিয়ে দাঁড়াবে নতুন সকালের সামনে। আমরা যে নতুন মানুষ, পাকিস্তানের কোনো বিষ যে বাংলাদেশের মানুষ এই আমাদের মধ্যে আর নেই, সেটা আমাদেরকে কথায় ও কাজে প্রমাণ করতে হবে। সকল সম্পর্কের ক্ষেত্রে। হ্যাঁ, সকল সম্পর্কের ক্ষেত্রেই।



আর তখনই পূরণ হবে আনোয়ার পাশা-মুনির চৌধুরী-শহিদুল্লাহ কায়সার'দের স্বপ্ন। নইলে সবই কেবল পর্যবসিত হবে আনুষ্ঠানিকতায়, যেমনটা হয়তো ইতিমধ্যেই হয়ে গেছে অনেকের ক্ষেত্রেই...



২৯.১১.২০১২

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে নভেম্বর, ২০১২ দুপুর ১২:২৪

সাদা মুখোশ বলেছেন: অসাধারণ

২৯ শে নভেম্বর, ২০১২ দুপুর ১:০৩

ইরফানুর রহমান রাফিন বলেছেন: :)

২| ২৯ শে নভেম্বর, ২০১২ দুপুর ১:১১

ইরফানুর রহমান রাফিন বলেছেন: ফেসবুকে "সুব্রত শুভ" ও "বন্ধু বাংলা"-র সাথে এই লেখা নিয়ে আমার আলাপচারিতাঃ

সুব্রত শুভঃ এই বিষয়ে ফারুক ওয়াসিফের একটা লেখা পড়েছিলাম। আপনারটাও ভাল লাগল।

শহীদ শব্দটা নিয়েও কিন্তু আপত্তি তুলেছিলেন হুমায়ুন আজাদ স্যার। আর বিরাঙ্গনা শব্দটি তো শুনলেই এর অর্থ বের হয়ে আসে গভীর ভাবে চিন্তা করার দরকার নেই।

অনেকেই বিষয়টি বোঝে না সমস্যা সেখানে। আমার কথা হল ৭১ পর কী কোন বুদ্ধিমান মানুষ ছিল না এই শব্দ ব্যবহার করার সময় তাদের মাথায় কী কোন কিছু আসে নাই?।

আমিঃ বুদ্ধিমানেরা কেউ ব্যস্ত ছিলো হিন্দু সম্প্রদায়ের যাঁরা একাত্তরে পশ্চিমবঙ্গে শরণার্থী হয়েছিলেন সেগুলো নিজেদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করতে, আর কেউ ব্যস্ত ছিলো "সমাজতন্ত্র"(?)-এর নামে পাকিস্তানি শিল্পপতিদের ফেলে যাওয়া সম্পত্তি দখলে। ধর্ষিতাদের কথা চিন্তা করার সময় ছিল তাদের?

বন্ধু বাংলাঃ বীরঙ্গনার ব্যবচ্ছেদ করলে যা হয়, বীর + অঙ্গনা(নারী) = বীরঙ্গনা। অর্থাৎ বীর যে নারী। সে মতে ইলামিত্রও একজন বীরঙ্গনা। প্রয়োগিক অর্থ সে যাইহোক, আমরা বীরঙ্গনা বলতে ধর্ষিতা নারী বুঝি এটা আমাদের বুঝার অক্ষমতা। আমাদের সমাজের যে কাঠামো তাতে এর বেশি বুঝা আর হয়ে উঠে নি। এখানে রাষ্ট্রেরও কিছু দায় ছিল। রাষ্ট্র এদের বীরঙ্গনা খেতাবই দিয়েছে সম্মান দিতে পারে নি আমাদেরও শিখায় নি। বরং ধামাচাপা দিয়ে রাখার একটা চেষ্টা ছিল এবং এখনো আছে। এ প্রসঙ্গে আরো যেটা আছে তা হল ৩-৪ হাজার যুদ্ধ শিশু( war baby) , এই যুদ্ধ শিশুদের ভার বহন করতে এ জাতি রাজি ছিল না। তাই সব দত্তক দিয়ে বিদেশে পাচার করে দিল। তাই যতই বলি বা বলা যেমন হয়েছিল,বীরঙ্গনাদের ঠিকানা ধানমণ্ডি৩২ নম্বর, এটা আসলে শুভঙ্করের ফাকি দেয়া গলা কপচানো বুলি ছারা কিছু নয়।

আমিঃ হ্যাঁ, ধানমণ্ডি ৩২নম্বরের মিথ কিছুদিন আগে দেখলাম ফেসবুকে খুব চলেছে। অথচ এটা কিন্তু কেউ বলছে না যে যখন নীলিমা ইব্রাহিম ধর্ষিতা ও তাঁদের সন্তানদের পুনর্বাসনের জন্য শেখ মুজিবের কাছে গিয়েছিলেন তখন শেখ মুজিব বলেছিলেন যুদ্ধশিশুদেরকে বিদেশে পাঠিয়ে দিতে কারণ তিনি "এসব নষ্ট রক্ত দেশে রাখতে" চান না।

সুব্রত শুভঃ যুদ্ধ শিশু কী ও কারা এই নিয়েও কিন্তু আমাদের কোন ধারণা নেই।....... আর যুদ্ধ শিশুদের প্রতি সুন্দর দৃষ্টি তো অনেক পরের বিষয়।!! সত্যি অদ্ভূত জাতি আমরা। শুধু ভাবের মানুষ

আমিঃ "বীরঙ্গনার ব্যবচ্ছেদ করলে যা হয়, বীর + অঙ্গনা(নারী) = বীরঙ্গনা। অর্থাৎ বীর যে নারী।"

আপনার এই ব্যবচ্ছেদ ও অর্থটা সম্ভবত সঠিক নয়। নারী অর্থে অঙ্গনা শব্দটি ব্যবহৃত হয়, কারণ অঙ্গনা মানে "যে অঙ্গনে/আঙ্গিনায় আবদ্ধ থাকে"।
নারী অঙ্গনা, কারণ সামন্তবাদী পুরুষতান্ত্রিকতা চাইতো না নারী অঙ্গনের/আঙ্গিনার বাইরে বেরুক (পুঁজিবাদী পুরুষতন্ত্র অবশ্য চায়, তবে সে ভিন্ন আলোচনা)।
আর তাই, বীরাঙ্গনা অর্থ; শুধু সামাজিক কাঠামোতেই নয়, ভাষার কাঠামোতেও; "যে বীরের আঙ্গিনায় আবদ্ধ থাকে"।
ফলে বীরাঙ্গনার অর্থ কখনোই "বীর নারী" না, অর্থাৎ এই অর্থে শব্দটা ব্যবহৃত হয় নাই, এবং শব্দটার ভাষিক নির্মাণেও "বীর নারী"-র চিন্তাটা ছিল না। আর ভাষা সমাজ থেকে উঠে আসে কেবল তাই তো নয়, সমাজও প্রভাবিত হয় ভাষা দ্বারা। @ Bondhu Bangla

বন্ধু বাংলাঃ সন্ধিতে সমাধান খুজুন

আমিঃ হ্যাঁ, আপনি শব্দটা একটু বদলে দিয়েছেন, এই বদলটা গ্রামারিটিক্যালি ঠিক নয়, অ-কারান্ত শব্দের পরে অ-কারান্ত শব্দ থাকলে উভয়ে মিলে আ-কার হয়, সেই দিক দিয়ে "বীরঙ্গনা" নয় "বীরাঙ্গনা" শুদ্ধ, অবশ্য আপনি যদি বীর নারী অর্থ দাঁড় করাতে ইচ্ছেকৃতভাবে এই ভুলটা করে থাকেন তাহলে আপনাকে অভিনন্দন...

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.