নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি একজন সাধারণ মানুষ

ইরাইথ্রোসাইট

বাঙালী

ইরাইথ্রোসাইট › বিস্তারিত পোস্টঃ

মৃত্যুর পরে এবং বেঁচে উঠার আগে

৩০ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:১৯

হঠাৎ করেই গ্যাস বেলুনের মতো মাটি থেকে আস্তে আস্তে উড়ে যেতে শুরু করলো চৈতি। ঘটনার আকস্মিকতায় প্রথমে একটু হতভম্ব হয়ে গেলেও পরে সে 'হেল্প হেল্প' বলে চিৎকার করতে চায়, কিন্তু কেউ মনে হচ্ছে মুখটা চেপে ধরে রেখেছে। গলা দিয়ে আওয়াজ বের হচ্ছে না কিছুতেই।তার শরীরটা পাখির পালকের চেয়েও হালকা মনে হচ্ছে।উঠতে উঠতে একেবারে আকাশের মেঘের সাথে মাথা ঠেকে গেল তার। আচ্ছা, মেঘ তো অনেক ঠাণ্ডা হওয়ার কথা! তার একটুও ঠাণ্ডা লাগছেনা কেন! ও সে তো ঠাণ্ডা গরম কিছুই অনুভব করতে পারছে না!
মেঘের সাথে ভেসে বেড়াচ্ছে সে।কেউ তাকে দেখতেও পাচ্ছে না! সে কি মরে গেছে তাহলে! আচ্ছা, মৃত্যুর নাকি অনেক যন্ত্রণা? কোন কোন ধর্ম মতে আজরাইল এসে জান কবজ করে,আবার কোন কোন ধর্ম মতে যমে মানুষে টানাটানি হয়! কই তার তো এমন কিছুই হল না! ওহ এতক্ষণে বুঝতে পারছে সে- সে তো নাস্তিক, তাই যম বা আজরাইল কেউ ই হয়তো তার জান নিতে আসেনি। তাই তার কোন কষ্টও হয়নি। ভাগ্যিস সে ধার্মিক ছিল না!
আচ্ছা তার নাম কি? কিছুতেই তার নিজের নাম টা মনে করতে পারছে না সে! উফফ অসহ্য! চিৎকার করতে ইচ্ছা করছে তার, কিন্তু চিৎকার তো পরের কথা, গলা দিয়ে তো কোন আওয়াজই বের হচ্ছে না। কি নাম? নাম টা কি? চৈতি? চৈতি কি? চৈতি দেবনাথ না কি চৈতি আহমেদ? উফফ কি যন্ত্রণা, কে আমি- চৈতি দেবনাথ নাকি চৈতি আহমেদ? মনে পড়েছে- বিয়ের আগে ছিল দেবনাথ আর বিয়ের পর আহমেদ! তার চেয়ে বরং শুধু চৈতি নামটিই ভালো।
একটা চিল উড়ছে আকাশে, ঠোকর দিয়ে দিবে নাকি? চিলটা তো ঠিক তার দিকেই এগিয়ে আসছে! আ করে ভয়ে একটা চিৎকার দিল সে, না এবারও কোন আওয়াজ বের হলো না!চিলটা তার শরীরের ভেতর দিয়ে ঢুকে উড়ে চলে গেল! না কোন ব্যথা লাগেনি তার!
তাহলে সে মরেই গেছে, ওজনহীন অনুভূতিহীন হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে! মৃত্যুর পর নাকি মানুষের পাপ পুণ্যের বিচার হয়! আল্লাহ বা ভগবান কেউ একজন বিচার করে! কই তার তো এমন কিছুই হচ্ছে না! নাস্তিক হলে তার শাস্তি নাকি আরও বেশি হয়? তার তো কিছুই হচ্ছে না! সে সব সময় ঠাট্টা করে বলত যারা ধর্মে বিশ্বাস করে, তাদের ধর্ম অনুযায়ী তাদের বিচার হবে। আর যারা করেনা- তাদের কোন বিচার হবেনা।
তবে কি তার কথাই সত্যি! সে কিছুই চিন্তা করতে পারছে না, তার মতো তার চিন্তাগুলিও ভেসে বেড়াচ্ছে।
হঠাৎ করে বিশাল বড় একটা মেঘের সাথে ধাক্কা খেল সে। এইবার সে নিচে পড়ে যাচ্ছে। এত উচু থেকে পড়লে তো নির্ঘাত মৃত্যু! হুর, সে তো মরেই গেছে। মরা মানুষ আবার মরে কিভাবে?পড়তে পড়তে যে কোথায় এসে পড়ছে কিছুই বুঝতে পারছে না সে। ভয়ে সে চোখ বন্ধ করে রাখলো।
চোখ খুলে চৈতি দেখতে পেলো প্রচণ্ড আলোয় ভেসে যাচ্ছে চারিদিক। এত আলো কেন? তার তাকাতে কষ্ট হচ্ছে। তার সামনে বসে আছে অপরূপ সুন্দরী এক নারী। ধবধবে সাদা শাড়ি পরে আছে সে। সে কি স্বর্গের কোন অপ্সরী! নাকি এখনই চৈতির কৃতকর্মের বিচার শুরু হবে? শ্বেত শুভ্র এই অপ্সরীই কি তাকে নিয়ে যাবে বিচারের কাঠগড়ায়? সে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সেই অপ্সরীর দিকে। অপ্সরী হাসি হাসি মুখ করে তাকে জিজ্ঞেস করলো- কেমন লাগছে আপনার?
চৈতি তার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে তাকে প্রশ্ন করলো- আপনি আমাকে কখন নিয়ে যাবেন?
অপ্সরী হেসে বললো- আপনি যখন যেতে চাবেন। আপনি কি একটু ঘুমাবেন, একটু পরে যাবেন?
চৈতি বিরক্ত হয়ে বললো- না, আমি কেন ঘুমাবো? আপনি আমাকে বলেন- আমাকে কখন নিয়ে যাবেন?
এই প্রশ্ন শুনে অপ্সরীর মুখটা কেমন যেন গম্ভীর হয়ে গেল, অপ্সরী বললো- আমি কি আপনার হাসব্যান্ড কে ডেকে দিবো?উনি অপারেশন থিয়েটারের বাইরে অপেক্ষা করছেন, আপনাকে দেখার জন্য।
অপ্সরীর এই কথায় চৈতি যেন সম্বিত ফিরে পেলো। তাহলে সে মরে যায় নি। অ্যানেস্থেসিয়ার কারনে গভীর ঘুমে মগ্ন ছিল। আর তাই এসব স্বপ্ন দেখেছে!হায় ভগবান! হায় আল্লাহ!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.