মধ্যবিত্তের নীরব আর্তনাদ

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৪৭

আব্বু ৮ টার দিকে স্কুলের সামনে আসতে বললো...
সকাল থেকে অঝোর ধারায় বৃষ্টি হচ্ছে..
থামছেই না। ছোট বোনটা বাসায় থাকা অবশিষ্ট ছাতাটা নিয়ে চলে গেছে কোচিং এ। আমি পড়লাম মহাবিপাকে। এই বৃষ্টির মধ্যে কিভাবে যাবো?

শেষ পর্যন্ত লুঙ্গিটা কাছা মেরে, ছেড়া শার্ট আর বাজারের ব্যাগ নিয়ে স্কুলের সামনে গেলাম..

আব্বু আগেই বাজার করে রেখেছেন।গিয়ে দেখি দুইটা ছোট্ট ছোট্ট পোটলা,একটা দোকানের পাশে রাখা।
সেটা নিয়েই বাসায় ফিরলাম। দুপুরে আব্বু খাবার টেবিলে বসে বললেন, আজ এক হাজার টাকার বাজার করলাম, সপ্তাহ পার হবেতো?(আম্মুকে জিজ্ঞেস করলেন)।

আম্মু এমনিতেই রগচটা, দুচোখ কপালে তুলে বললেন, কি???
এইখানে এক হাজার টাকার বাজার?

আমিও চমকে গেলাম। দুইকেজি মুরগী, কিছু ছোট চিংড়ি মাছ আর সবজি।
সর্বোচ্চ ৫০০ টাকার মনে হয়, কিন্তু সেখানে চলে গেল ১০০০ টাকা।
আমাদের মত মধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষে এভাবে বাজার করে খাওয়াটা সম্ভব হবে ঠিকই, কিন্তু বাসা ভাড়াটা আর দেয়া সম্ভব হবে না। তাই কিছু ক্ষোভ নিয়েই লিখতে বসলাম।
একটি পরিসংখ্যান লক্ষ্য করুন:
কাঁচা মরিচ,
সবজি,
পেঁয়াজসহ সব
ধরনের
নিত্যপণ্যের
দাম চড়া হলেও
মাসওয়ারী
জুলাই থেকে
আগস্ট মাসে
সাধারণ, খাদ্য ও খাদ্য বহির্ভূত খাতে
মূল্যস্ফীতির হার কম দেখালো বাংলাদেশ পরিসংখ্যান
ব্যুরো (বিবিএস)।
বুধবার পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলন কে মিট দ্য
প্রেসে বিবিএস’র দেওয়া ভোক্তা মূল্য সূচকের
(সিপিআই) সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্য তুলে প্রকাশ করা
হয়। বিবিএস তাদের হালনাগাদ তথ্যে জানায়, মোটা
চালের দাম কমার কারণে মূল্যস্ফীতির হার নিম্নমূখী
হয়েছে। জুলাই মাসে মোটা চালের কেজি ছিল ৩৮
টাকা, আগস্টে কমে হয়েছে ৩৭ টাকা।
বিবিএসের হালনাগাদ তথ্যে দেখা গেছে, মাসিক
ভিত্তিতে জুলাই মাসে সাধারণ মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৬
দশমিক ৩৬ শতাংশ, আগস্ট মাসে কমে হয়েছে ৬ দশমিক ১৭
শতাংশ।
এছাড়া, বিবিএস মূল্যস্ফীতির হার সাধারণ, খাদ্য এবং
খাদ্যবহির্ভূত তিন ভাগে আলাদাভাবে প্রাক্কলন করা
হয়। এতে দেখা গেছে, জুলাই মাসে খাদ্যে মূল্যস্ফীতির
হার ছিল ৬ দশমিক ০৭ শতাংশ, আগস্ট হয়েছে ৬ দশমিক ০৬
শতাংশ।
খাদ্য বহির্ভূত খাতেও মূল্যস্ফীতির হার কমেছে। এ
খাতে জুলাই মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ দশমিক ৮০ শতাংশ,
আগস্টে কমে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
বিবিএস বলছে, মাছ, মাংস, সবজি, মসলা ও তামাক
জাতীয় পণ্যের দাম কমায় খাদ্যে মূল্যস্ফীতির হার
কমেছে। অন্যদিকে বাড়িভাড়া, আসবাবপত্র, গৃহস্থালি,
চিকিৎসাসেবা, পরিবহন ও শিল্প উপকরণের দাম কম দেখায়
বিবিএস।


মুদ্রাস্ফীতি বিষয়টা নিয়ে মন্ত্রীসাহেবকে প্রশ্ন করা হলে, তিনি জানান চালের দাম কম আছে, পিয়াজ মরিচের দাম বাড়লে কিছু হবে না।

যাক মন্ত্রী সাহেবের উত্তরে কিছুক্ষণের জন্য হলেও সন্তুষ্ট হলাম। পেট যায় যাক দেশ ঠিক থাকলেই চলে।

কিন্তু মন্ত্রী সাহেবকে যদি প্রশ্ন করি, তেল গ্যাসের দাম বাড়ায় কি মুদ্রাস্ফীতিতে প্রভাব পড়বেনা?

বুঝলাম মন্ত্রী সাহেব, পিয়াজ মরিচ বন্যায় পঁচে গেছে, কিন্তু তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ কোন বন্যায় পঁচেছে তা আমার আদও জানা নেই। দেশ বিদ্যুৎ স্বংয়সম্পূর্ণ। অনেক আগে থেকেই আপনারা বলে আসছেন কথাগুলি, কিন্তু কত দফায় যে আপনারা বিদ্যুৎ বিল বাড়ালেন, গ্যাস বিল বাড়ালেন সে তথ্য হয়ত গুগল ও দিতে ব্যার্থ..

গত মাসেও প্রায় দেড় হাজার টাকা বিদ্যুৎ বিল এসেছে, বাসা ভাড়ার সাথে এটাচটেড বিদ্যুৎ বিল। একটু ভাবুন মন্ত্রীসাহেবরা, আমাদের ২০-২৫ হাজার টাকার মাসিক ইনকামে ৫-৬ সদস্যের শিক্ষিত পরিবার কিভাবে সমাজে চলে?

আমাদের কথা বাদই দিলাম দেশে আমাদের চেয়ে অনেক লো ক্লাস ফ্যামিলি রয়েছে, যারা দিন আনে দিন খায়..


তাদের অবস্থাটাই বা কত শোচনীয়?
মন্ত্রীসাহেবরা! আপনারা শেরাটনে গিয়ে ৩৫০ টাকার নান-রুটি খান, মাসে নাস্তা বাবদ দেড় কোটি টাকা বিল করেন!
মন্ত্রীসাহেবরা, আমাদের নাস্তার জন্য দেড় হাজার টাকাটাও কি যথেষ্ট হবেনা?

জানি, দেশের এমপি মন্ত্রীদের বিবেক আগে থাকতেই বিয়ার,শ্যাম্পেইন, ভোডকার কাছে নিলামে বিক্রি হয়েছে,
তাই এখন ব্লোগের কোণে এসে নিরব আর্তনাদ ছাড়া আমাদের কি ই বা করার আছে?

জেগে থাকা বাঙালির ঘুম কেই বা ভাঙাবে?সেটা আজো অজানা

০ টি +০/-০