![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই ব্লগের সব লেখার সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত। লেখকের অনুমতি ব্যাতিত কোন লেখার সম্পুর্ণ অথবা অংশ বিশেষ পরিবর্তন, পরিবর্ধন, পরিমার্জন অথবা সম্পাদনা করে কোথাও প্রকাশ করা যাবে না।
লজ্জাবতী গাছকে গাছ বলা হলেও, এটি বড় ধরনের বৃক্ষ নয়। এটি লতা ঘাস জাতীয় এক প্রকারের উদ্ভিদ। তবে একটি বিশেষ চারিত্রিক বৈশিষ্ঠ্যের জন্য এরা মনুষ্য সমাজে, বিশেষ করে উদ্ভিদ বিঙ্গানী মহলে বেশ সুপরিচিত। এ চারিত্রিক বৈশিষ্ঠ্য হলো লজ্জা পাওয়া। লজ্জাবতী নামকরণ করা হয়েছে এদের বৈশিষ্ঠ্যের সাথে মিল রেখেই। লাজুক মানুষ যেমন কারো সাথে কথা বলতেই লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে। এরাও কারো শরীরের স্পর্শ পেলেই লজ্জায় জড়োসড়ো হয়ে পড়ে। পাতগুলো যায় নুইয়ে, সারা শরীরটা গুটিয়ে আসে। অনেকে এক লাজুক মেয়ের সাথে তুলনা করে থাকেন। লজ্জাবতীর বোটানিক্যাল বা বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে ‘মিমোসা পুডিকা’। আদি নিবাস মধ্য আমেরিকার মেক্সিকোতে। তবে বর্তমানে বিশ্বের প্রায় সবখানেই এ গাছ ছড়িয়ে রয়েছে। বিভিন্ন অঞ্চলে গাছটি বিভিন্ন নামে পরিচিত। এটি বর্ষজীবী উদ্ভিদ। কাণ্ড খাড়া, শাখান্বিত এবং ছোট ছোট কাঁটা আছে। সাধারণত গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে এ গাছে ছোট ও গোলাকার ফুল ফোটে। ফুলের রঙ হয় গোলাপি ও সাদা। গাছের পাতাগুলো দেখতে ছোট এবং রঙ গাঢ় সবুজ। গাছটি দেড় থেকে দু’ফুট পর্যন্ত উঁচু হয়। লজ্জাবতী গাছগুলো কেন এরকম আচরণ করে থাকে, তা’ নিয়ে বিঙ্গানীরাও খুব চিন্তা ভাবনা, গবেষণা করেছেন। তাদের মতে, লজ্জাবতী গাছের পাতার গোড়াটা একটু ফোলা থাকে। এই ফোলা অংশের ভিতর থাকে বড় বড় কোষ। এসব কোষ যখন পানি ভর্তি থাকে তখন গাছের পাতার বোটা ফুলে ওঠে এবং ডাঁটা সোজা হয়। কিন্তু লজ্জাবতী গাছে কেউ হাত দিয়ে স্পর্শ করলেই তার সাড়া গায়ে একটা বিদ্যুৎ প্রবাহের সৃষ্টি হয়। এদের শরীরে এ্যাসিটাইলিন নামে এক প্রকারের রাসায়নিক পদার্থ আছে। এই এ্যাসিটাইলিন কোলিন পদাথের্র মাধ্যমেই এই বিদ্যূৎ প্রবাহ ছডড়য়ে পড়ে ওদের সাড়া অঙ্গে। তখন এই রাসায়নিক পদার্থই দ্রুত এক কোষ থেকে আরেক কোষে ছুটতে থাকে। এ ফলে লজ্জাবতী গাছের কোষ থেকে খনিজ লবন বেরিয়ে আসে। খনিজ লবন বের হয়ে আসার সঙ্গে কোষে যে পানি জমা ছিল তাও বেরিয়ে আসে। পানি বের হয়ে যাওয়ার ফলে কোষগুলো চুপসে যায়। ফলে তাদের শক্তি ও চাপ কমে যায়। তখন গাছের পাতাগুলোও শক্তি হারিয়ে ফেলে এবং দুর্বল হয়ে নুয়ে পড়ে। এই অবস্থা কিছুক্ষণ থাকে। আবার বিদ্যুৎ প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেলে ধীরে ধীরে কোষে পানি জমতে থাকে, গাছটি ও তখন পুনরায় সোজা হয়ে উঠে।
বহু প্রাচীনকাল থেকেই লজ্জাবতী গাছ অনেক রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এর রয়েছে অনেক ভেষজ গুণ। কাঁচা গাছ বেটে শরীরে লাগালে লাবণ্য ফিরে আসে। গাছ শুকিয়ে গুঁড়া করে ১০ গ্রাম গুঁড়া দু’কাপ পানির সঙ্গে মিশিয়ে ১৫ দিন সেবন করলে চর্মরোগ সেরে যায়। গাছের শিকড় বেটে দুধ ও পানির সঙ্গে মিশিয়ে সেবন করলে অর্শ্বরোগে ভালো ফল পাওয়া যায়। এছাড়া কুষ্ঠ, বসন্ত, একশিরা, ভগন্দর ও পাণ্ডু রোগ নিরাময়েও লজ্জাবতীর রয়েছে বিরাট অবদান।
বেশিরভাগ মানুষের কাছে এ গাছ কাঁটাওয়ালা আগাছা হিসেবে পরিচিত হলেও থাই লজ্জাবতী গাছকে কাজে লাগিয়ে এখন জৈব সারও তৈরি করা হচ্ছে। এ সার ফসলের জন্য যথেষ্ট উপযোগী। এতে রয়েছে নাইট্রোজনে ২.০৩ থেকে ২.০৬, ফসফরাস ০.১৭৫ থেকে ০.২৩, পটাশিয়াম ১.২৩৭ থেকে ১.৭৪১ ভাগ। লজ্জাবতী গাছের শিকড়ে জন্মানো লালচে রঙের গুটি বাতাস থেকে নাইট্রোজনে সঞ্চয় করে আম বাগানের মাটিতে সরবরাহ করা হয়। এটি মাটির উবর্রতা বৃদ্ধি করে। থাইল্যান্ডে ভুট্টার জমিতে আগাছা নিয়ন্ত্রণে এভাবেই লজ্জাবতী গাছ লাগানো হয় এবং মাটির উবর্রতা ঠিক রাখা হয়।
আমাদের গ্রামগঞ্জে বাড়ির আনাচে-কানাচে একসময় প্রচুর দেখা যেত এ গাছ। বর্তমানে বাসস্থানের প্রয়োজনে ও বন ধ্বংসের কারণে অসংখ্য প্রজাতির গাছপালার সঙ্গে এ লজ্জাবতী গাছটিও হারিয়ে যেতে বসেছে। তবে এর গুণাগুণের কথা মাথায় রেখে কোনো কোনো বৃক্ষপ্রেমিক নিজ উদ্যোগে পারিবারিকভাবে নার্সারি তৈরি করে গাছটির অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছেন।
২| ২৫ শে এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১০:৫৯
সরল পথের পথিক বলেছেন: জানলাম। তবে একটি প্রশ্ন হলো, লবণের পাশাপাশি যে পানি বের হওয়ার কথা বলা হলো এটা বোধগম্য নয়। কারণ, এই গাছ অনেক ছুঁয়েছি কখনো তা বের হতে দেখিনি।
©somewhere in net ltd.
১|
২৫ শে এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১০:৫৯
সরল পথের পথিক বলেছেন: জানলাম। তবে একটি প্রশ্ন হলো, লবণের পাশাপাশি যে পানি বের হওয়ার কথা বলা হলো এটা বোধগম্য নয়। কারণ, এই গাছ অনেক ছুঁয়েছি কখনো তা বের হতে দেখিনি।