নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফাহীম সিদ্দিকী

ফািহম িসিিদ্দকী

ফািহম িসিিদ্দকী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভারতীয় এক হকি তারকার ইসলাম গ্রহণ।

১৭ ই মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৪:৩৩

স্বত্ত্বাগত প্রকৃতি ও ফিত্রতের সাক্ষাত্ ঃ ইস্লামের ছায়াতলে।



ইসলাম গ্রহণ করার পূর্বে আফিফা একজন মুক্ত মনের ও স্বাধীনচেতা হিন্দু মেয়ে ছিলেন। একজন ভাল হকি খেলোয়াড় হিসেবে তার ছিল অনেক খ্যাতি। কিন্তু যখন ইসলামকে সে স্বত্ত্বাগত প্রকৃতি ও ফিত্রতরে অতি কাছে পেলেন এবং অনুভব করলেন নিজের হৃদয় গহীনে স্পন্দিত অনবদ্য অচেনা কোন ডাক ও আহবানের অনুরূপ, তখন সাগ্রহে তা কবুল করে নিলেন। ইসলাম গ্রহণ করার পর প্রসিদ্ধ ধর্ম প্রচারক মোহাম্মদ কলিম ছিদ্দিকীর মেয়ে আসমা তার সরাসরি সাক্ষাতকার গ্রহণ করেন। যার সারাংশ পাঠক সমীপে পেশ করা হল।

প্রশ্ন : আমাদের বলা হয়েছে একজন প্রসিদ্ধ ভারতীয় হকি তারকা আপনাদের সাথে সাক্ষাতের জন্য আসছেন, তখন আমরা ভেবেছিলাম আপনি অবশ্যই হকির পোষাকেই আমাদের মাঝে উপস্থিত হবেন। কিন্তু মাশা’আল্লাহ! আপনিতো দেখছি বোরকা পরিহিত পরিপূর্ণ ইসলামী পোশাকে এসেছেন। আপনি নিজ ঘর থেকে বোরকা পরিধান করে কিভাবে বের হলেন?

উত্তর : আলহামদু লিল্লাহ (সকল প্রশংসা আল্লাহর) আমি গত দু’মাস যাবৎ শরীয়ত সম্মত পর্দার সাথে জীবন যাপন করছি।

প্রশ্ন : এখনো পর্যন্ত আপনার পরিবাবে কেউ তো ইসলাম গ্রহণ করেননি?

উত্তর : না, আমার পরিবারে আমি ব্যতীত এখনো কেউ ইসলাম গ্রহণ করেননি। তবে আল হাম্দুলিল্লাহ আমি বিনিড়ভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, যদিও আমি একাই মুসলমান, কিন্তু আমি যেন আধা বা অপূর্ণাঙ্গ মুসলমান হয়ে না পড়ি। অর্ধেক এদিকে, অর্ধেক ওদিকে; এমন হওয়া তো কোন ভাবেই উচিত নয়।

প্রশ্ন : আপনার মাঝে হকি খেলার আগ্রহ কিভাবে সৃষ্টি হয়? এটাতো আসলে পুরুষ বা ছেলেরা খেলে থাকে।

উত্তর : আসলে আমি হরিয়ানা অঙ্গরাজ্যের সূনিপূত জেলার এক গ্রামের অধিবাসী। আমাদের পরিবারের সকল পুরুষ বা ছেলেরা পড়া-লেখা করা শিক্ষিত এবং অধিকাংশই কাবাড়ি খেলেন। আমি স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই প্রতি ক্লাসে ভাল অবস্থান দখল করতে সক্ষম হই। হাই স্কুলে সি.বি.এইচ.আই বোর্ড পরীক্ষার মেধা তালিকায় আমি এগারতম স্থান লাভ করি। জীবনের শুরু থেকেই নিজের মধ্যে যে কোন প্রতিযোগিতায় ছেলেদের অতিক্রম করার এক অদম্য স্পৃহা ছিল। তাই স্কুলে আমি হকি খেলা আরম্ভ করি। নবম শ্্েরণীতে পড়া অবস্থায় প্রথমে জেলা পর্যায়ে খেলার জন্য নির্বাচিত হই। পবর্তীতে হাই স্কুলে এসে হরিয়ানা স্টেটে মেয়েদের দলে নির্বাচিত হই। দ্বাদশ শ্রেণীতে আমি মেধা তালিকায় অন্তভূক্ত হয়ে সি.বি.এইচ.আই বোর্ড পরীক্ষায় ১৭তম স্থান দখল করি। সে বছরেই ভারতীয় মহিলা হকি দলে নির্বাচিত হই। এশিয়া কাপেও আমি মেয়ে/মহিলাদের হকিতে অংশ গ্রহণ করি। এমনকি অনেক টুর্নামেন্ট-এ আমার বিচক্ষণ ভূমিকার কারণে পূরা টিম সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। হকিতে সব চেয়ে তৎপর ও লড়াকু ভূমিকা থাকে সেন্ট্রাল ফরওয়ার্ডেও, অর্থাৎ যিনি মাঝ মাঠের সম্মুখভাগে খেলে থাকেন।

আমি সব সময় সেন্ট্রাল ফরওয়ার্ড-এ খেলতাম। নিজের মধ্যে ছেলেদের অতিক্রম করে আগে অগ্রসর হওয়ার উম্মত্ততা ছিল অপরিসীম। কিন্তু প্রতি রাতে আমার শরীর অপারগতা প্রকাশ করতঃ আমার আশা-আকাঙ্খা ও স্বপ্নের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলত, এই খেলা তোমরা মেয়েদের জন্য নয়। এই মহাবিশ্বের অধিপতি পৃথিবীতে সবার জন্য পৃথক-পৃথক কর্মক্ষেত্র ও দায়িত্ব নির্ধারণ করে রেখেছেন। খেলতে-খেলতে এক পর্যায়ে আমার হাত পা অবশ হয়ে পড়ত। তবুও আমার সে উম্মত্ততা ও অতি আগ্রহ আমাকে দৌড়াত। খেলার মাঠে সকলের ওয়াও-ওয়াও উৎসাহব্যাঞ্জক ধ্বনি ও প্রতিধ্বনি এবং সাফল্য অর্জনের অপার পাগলামি আমাকে আমার ফিত্রত তথা স্বভাবের বিপক্ষে দৌড়ার জন্য বাধ্য করে তুলত।

প্রশ্ন : ইসলাম গ্রহণ করার পূর্বে তো আপনার নাম ছিল “প্রীতি” ?

উত্তর : হ্যাঁ, তবে হযরত কলিম ছিদ্দিকী সাহেব কয়েক মাস পূর্বে নতুন করে আমার নাম রাখেন । “আফিফা”-

প্রশ্ন : আপনার পিতা কি করেন?

উত্তর : তিনি সি.বি.এইচ.আই বোর্ডের একটি স্কুল পরিচালনা করেন। তিনি সে স্কুলের প্রিন্সিপাল। আমার এক বড় ভাই ও ভাবি সে স্কুলের শিক্ষক। তারা সকলেই খেলা-ধুলার প্রতি আসক্ত। এমনকি আমার ভাবিও একজন ভাল ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়।

প্রশ্ন : এমন এক মুক্ত ও স্বাধীন পরিবেশে জীবন যাপনের পর ইসলামী পর্দাপশীদার এই নতুন জীবন আপনার কেমন লাগছে?

উত্তর : মানুষ নিজের ফিত্রত তথা প্রকৃতি ও স্বভাব হতে যতদূরই চলে যাক না কেন বা যত কালই দূরে অবস্থান করুক না কেন, যখনই সে নিজের প্রকৃতির দিকে ফিরে আসতে থাকে নিজের কাছে তা কখনও অপরিচিত বা অস্বাভাবিক বলে অনুভূত হয় না, বরং সে সর্বদা উপলদ্ধি করে যেন সে নিজের আসল ঘরে ফিরে এসেছে। প্রকৃত শান্তির ঠিকানার সন্ধান সে পেয়েছে। আল্লাহ পাক মেয়েদেরকে প্রকৃতিগতভাবে ছেলেদের থেকে পৃথক স্বভাব ও ভিন্ন মানসিকতা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। ¯্রষ্টা মেয়েদেরকে পর্দার মধ্যে থেকে পুরুষের দৃষ্টির আড়ালে জীবন যাপনের জন্য সৃষ্টি করেছেন। পরপুরুষের লোলপ কামুক দৃষ্টি থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করার মাধ্যমেই একমাত্র তাদের শান্তি, প্রশান্তি ও আত্মিক স্থিরতা ও উৎকর্ষতা অর্জন সম্ভব। ইসলাম ফিত্রত তথা প্রকৃতিজাত ধর্ম। এর সকল আদেশ-নিষেধ ও বিধি-বিধান মানব প্রকৃতির সাথে সাযুজ্য ও সংগতিপূর্ণ। পুরুষের জন্য রয়েছে তাদের ফিত্রত তথা প্রকৃতি ও স্বভাবের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিধি-নিষেধ, পাশাপাশি মেয়েদের জন্যও তাদের স্বভাবের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিধি-নিষেধ।

প্রশ্ন : আপনার বয়স কত?

উত্তর : আমার জন্ম ১৯৮৮-র জানুয়ারীতে। আমার বয়স প্রায় ২২ বছর।

প্রশ্ন : আপনি ইসলাম গ্রহণ করেছেন কত দিন হয়েছে?

উত্তর : সাড়ে ছয় মাসের কাছাকাছি।

প্রশ্ন : এত বড় সিদ্ধান্ত গ্রহণে আপনার পরিবারে কোন বিরোধ বা প্রতিবাদ হয়নি?

উত্তর : হয়েছে, অনেক হয়েছে। তবে আমার ব্যাপারে সবারই জানা রয়েছে, অদ্ভুত পাগল মেয়ে আমি। যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি তা থেকে পিছু হঠার মত আমি নই। এই জন্য শুরুর দিকে কিছুটা কঠিন হলেও পরে সকলে যখন বুঝতে পেরেছেন আমি অনেক দূর পর্যন্ত যেতে পারি বা কঠিন কোন সিদ্ধান্তও নিতে পারি, তখন সকলেই মোমে পরিণত হয়ে যায়।

প্রশ্ন : আপনি কি এখনও হকি খেলেন?

উত্তর : না, আমি হকি ছেড়ে দিয়েছি।

প্রশ্ন : আপনার পরিবারের সদস্যরা অবশ্যই এ বিষয়টি অনেক কঠিনভাবে নিয়েছন?

উত্তর : হ্যাঁ, কিন্তু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার অধিকার একমাত্র আমার নিজের হাতেই ছিল। আমি আল্লাহর হুকুম বুঝেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। আর আল্লাহর হুকুমের সামনে মানবীয় চাহিদা, আশা ও স্বপ্ন কিভাবে প্রতিবন্ধক হতে পারে।

প্রশ্ন : আপনার চাল-চলন ও চলাফেরা অবশ্যই আপনার পরিবারের সদস্যদের কাছে অনেক কঠিন ও অপ্রীতিকর মনে হচ্ছে।

উত্তর : নিজ সিদ্ধান্তে নড়বড়ে ও ঢিলেঢালাভাবে অবস্থান করা মানুষের জন্য কখনো বাঞ্চণীয় নয়। প্রতিটি মানুষের প্রথমে স্থির করা বা ভাবা উচিত যে, নিজের সিদ্ধান্ত সঠিক ও ন্যায়সঙ্গত কি না? যদি তা হক ও ন্যায়সঙ্গত হওয়া সুনিশ্চিত হয়ে যায়, তবে পাহাড়ের মত শক্তিশালী অটল বিষয় ও প্রতিবন্ধকতাও তার বিশ্বাস ও প্রত্যয়ের সামনে বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে সাহস পাবে না।

প্রশ্ন : আপনার ইসলাম গ্রহণে কোন বিষয়টি বিশেষ ভূমিকা রেখেছে?

উত্তর : আমি হরিয়ানার এমন এক অঞ্চলের অধিবাসী যেখানে কোন হিন্দু ইসলাম গ্রহণ করা তো দূরের কথা উল্টো অসংখ্যা মুসলমান হিন্দুতে ধর্মান্তরিত হয়ে পড়েছেন। এমনকি আমাদের গ্রামে তেলিউদের ( যারা তেলের ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত) বিশের অধিক পরিবার রয়েছে যারা সকলেই হিন্দু ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়ে গেছেন। তারা রীতিমত মন্দিরে আসা-যাওয়া করেন। হুলি ও দেওয়ালি উদযাপন করেন। কিন্তু আমার মনে সেখানেই সবচেয়ে বেশি ইসলামের প্রতি অধিক আগ্রহ, উৎসাহ ও উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে যেখানে মুসলমানরা অতি স্বাধীনচেতা হয়ে ইসলাম থেকে দূরে সরে যায়।

প্রশ্ন : কোথায় ও কিভাবে বলবেন কি?

উত্তর : আমি যখন হকি খেলতাম তখন সম্পূর্ণ স্বাধীন পরিবেশে জীবন যাপন করতাম। অর্ধেকেরও কম পোষাকে চলাফেরা করতে করতে ভারতীয় কালচার ও ঐতিহ্য পর্যন্ত আমার মন থেকে মুছে গিয়েছিল। আমাদের অধিকাংশ কোচ ছিলেন পুরুষ। কোচ সব সময় টিমের সাথেই থাকতেন। টিমের সবার সাথে মেলামেশা করতেন। টিমের মধ্যে এমন মেয়েরাও ছিল যারা ছেলেদের সাথে রাত্রী যাপনে অধিকন্তু মনোবাসনা চরিতার্থ করতেও নূন্যতম কুন্ঠাবোধ তারা করত না। আল্লাহ পাকের অনেক শুকরিয়া তিনি আমাকে ঐ পর্যন্ত পৌঁছা থেকে হেফাজত করেছেন। খেলায় গোল হওয়ার পরে এবং ম্যাচ জিতার পরে ছেলে-মেয়ে পরস্পর গলায় জড়ানো বা প্রতিষেধ করা কোন ব্যাপারই ছিল না। আমার কোচ কয়েকবার অনাকাঙ্খিতভাবে বা লৌকিকতাহীনভাবে আমার কাঁধে ও কোমরে স্পর্শ করে। আমি সাথে সাথে তার বিরুদ্ধে নোটিশ দিই এবং তাঁকে সতর্ক করে দেই। কিন্তু আমার সাথী ও বান্ধবীরা আমাকে অনেক কঠুকথা বলা শুরু করল যে, তুই এত ছোট্ট একটি বিষয়কে অন্যভাবে ভাবতে যাচ্ছিস!। তবে যাই হোক না কেন, এসব বিষয় আমার মনে খুবই জ্বালাতন সৃষ্টি করে।

কোন এক টুর্নামেন্ট-এ অংশ গ্রহণ করার জন্য আমরা পুরো টিম ডেনমার্ক সফর করি। সেখানে আমি জানতে পারলাম ডেনমার্ক টিমের সেন্ট্রাল ফরওয়ার্ড এর এক নামিদামি খেলোয়াড় পাকিস্তানের এক মুসলিম যুবককে বিয়ে করে ইসলাম গ্রহণ করেছেন। এক পর্যায়ে তিনি হকি খেলা পর্যন্ত ছেড়ে দেন। লোকমুখে একথা খুবই শোনা যেত যে, তিনি ঐ যুবকের প্রেমে উম্মত্ত হয়ে তাকে বিয়ে করার জন্য ইসলাম গ্রহণ করেছেন। আমার কাছে এই সংবাদ খুবই বিস্ময়কর অনভূত হল! আমরা যে হোটেলে অবস্থান করছিলাম তার কাছেই একটি পার্ক ঘেঁষে তার বসবাসের ঘর। আমি এক সকালে পার্কে হাটা-হাটি করছিলাম, তখন ডেনমার্কের এক খেলোয়াড় আমাকে বলল, সামনের ওটা ব্রিটনির বাড়ি যিনি ডেনমার্কের একজন বিখ্যাত হকি তারকা। তিনি বর্তমানে ঘরেই অবস্থান করেন। নিজের পূর্ব নাম পরিবর্তন করে নতুন করে সা’দিয়া নাম রেখেছেন। আমার মনে তার সাথে সাক্ষাতের এক তীব্র স্পৃহা ও প্রচন্ড কৌতুহল জাগে।

এক সময় আমি এক সাথী খেলোয়ড়ের সাথে তার ঘরে যাই। ঐ সময় তিনি নিজের স্বামীর সাথে বাহিরে কোথাও যাচ্ছিলেন। হাতে-পায়ে মোজা ও বোরকা পরিহিত পরিপূর্ণ ইসলামী পর্দায়। সম্পূর্ণ অন্যরকম আবেশে। তাকে দেখে আমরা রীতিমত অবাক হয়ে গেলাম। বিস্ময়ে আমরা দু’জন হাসতে লাগলাম। আমি আমার পরিচয় দিলাম। সে আমাকে আগে থেকে জানত। বলল, আমি তোমাকে খেলতে দেখেছি।

সা’দিয়া : আমার শ্বশুর বাড়ীর এক আত্বীয়ের ইন্তেকাল হয়েছে। এ মুহুর্তে আমার সেখানে যেতে হচ্ছে। তা না হলে তোমার সাথে গল্প করতাম। আমি তোমাদের খেলায় খুবই মুগ্ধ ও প্রভাবিত। আসলে হকি খেলা মেয়েদের প্রকৃতির সাথে মিলে না। আমি আশা করছি তোমার মেধা ও যোগ্যতা তোমার প্রকৃতি ও ফিত্রতের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ কাজে ব্যয় হোক। আমি তোমার কাছ থেকে হকি ছাড়াতে চাই। আমি বললাম, আপনি নিজেই আমার খেলায় মুগ্ধ ও প্রভাবিত অথচ আমার কাছ থেকে সে খেলা ছুটাতে চাচ্ছেন? বরং আমি আপনার হকি ছেড়ে দেবার কথা শুনে আপনার সাথে সাক্ষাত করতে এসেছি যে, এত বড় একজন নামি-দামি খেলোয়াড় হয়েও আপনি কেন হকি ছেড়ে দিলেন? আমি আপনাকে আবার হকির মাঠে নিয়ে যেতে চাই।

সা’দিয়া : ঠিক আছে, তাহলে আজ রাত আমার সাথে খাবারের দাওয়াত কবুল কর।

আমি বললাম, আজ না, তবে আগামী কাল হতে পারে এবং তাই নির্ধারিত হয়ে গেল।

পরের দিন রাতে আমি ডিনারের সময় তাঁর বাসায় পৌঁছি। সা’দিয়া নিজের ইসলাম গ্রহণ করার ইতিবৃত্ত শুনালেন। বললেন, আমি বিয়ে করার জন্য ইসলাম গ্রহণ করিনি। বরং নিজের লজ্জা ও সতিত্ব, মান ও সম্মান রক্ষা করার জন্য ইসলাম কবুল করেছি। পরে ইসলামের হেফাজতের জন্যে বিয়ে করি।

সা’দিয়া কেবল একজন সাধারণ মুসলিম নারী ছিলেন না, বরং তিনি ইসলামের একজন বড় দা’য়ীও। তিনি ফোন করে তার পাশবর্তি দু’জন ইংলিশ মেয়ে ও এক মহিলাকে ডেকে আনেন। তার (সা’দিয়ার) দাওয়াতে তারা ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি আমাকে সবচেয়ে বেশি ইসলামী পর্দার হুকুম তথা বিধান, এর অন্তর্নিহীত কল্যাণ, বরকতময় দিক ও গূঢ় রহস্য সম্পর্কে অবহিত করেন। আমাকে বোরকা পড়ে বের হওয়ার জন্য অনেক তাগিদ দিলেন ও গুরুত্বারোপ করলেন। পরে আমি বোরকা পরিধান করলাম। ডেনমার্কের সম্পূর্ণ প্রতিকূল পরিবেশে বোরকা পরিধান করে অলি-গলি প্রদক্ষিণ করি। কিন্তু বোরকা আমার অন্তরে স্থান করে নেয়। আমি বর্ণনা করে শেষ করতে পারব না যে, আসলে আমি উপহাস করার জন্য বেশির থেকে বেশি তার (সা’দিয়ার) ইচ্ছাটুকু পূরণ করার জন্য বোরকা পরিধান করেছিলাম। কিন্তু এতে আমার কাছে নিজের মানবীয় দেহ অনেক বড় ও মহত্বপূর্ণ অনুভূত হল। এখন আমার কাছে আমার কোচের যৌন টিপ্পনীর প্রতি আরো তীব্র ঘৃণা সৃষ্টি হল। আমি বোরকা খুললাম। সা’দিয়াকে বললাম, সত্যিই বোরকা পরিধান করে আমার কাছে অনেক মহৎ লেগেছে। কিন্তু যখন বর্তমান প্রেক্ষাপটে পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোতে বোরকার প্রতি নিষেধাজ্ঞা জারি করা হচ্ছে, তখন সেখানে তা পরিধান করা কিভাবে সম্ভব? বিশেষ করে অমুসলিমের জন্য বোরকা পরিধান করা কোনভাবেই মানায় না? তখন সে আমাকে ইসলামের দাওয়াত দেয়। এক পর্যায়ে এ বিষয়ের প্রতি অনেক গুরুত্বের সাথে জোর দেয়। আমি তার কাছে অপারগতা প্রকাশ করি যে, আমি এ সবের জন্য প্রস্তুত নই। এখন আমাকে হকির জগতে নম্বর ওয়ান তারকা হতে হবে। এ মুহুর্তে ইসলাম গ্রহণ করলে আমার সকল আশা ও স্বপ্ন পানিতে ভেসে যাবে।

সা’দিয়া : তোমাকে হকির মাঠ থেকে বোরকার পরিবেশে আনা আমার দায়িত্ব। আমি আল্লাহর কাছে তোমার জন্য দোয়াও করেছি। এমনকি অনেক জোর দিয়ে দোয়া করেছি।

এর পর আমরা শুধু দশ দিনের জন্য ডেনমার্কে ছিলাম। তিনি আমাকে বারবার ফোন করছিলেন। দু’বার আমার হোটেলে এসে আমার সাথে সাক্ষাতও করেছেন। আমাকে কিছু ইসলামী কিতাব উপহার দিয়ে যান।

প্রশ্ন : আপনি কি সে কিতাবগুলো পড়েছেন?

উত্তর : কিছু কিছু পড়েছি।

প্রশ্ন : এর পর ইসলামে আসার উপায় বা মাধ্যম কি হল?

উত্তর : আমি ভারতে ফিরে আসি। আমাদের ওখানে নিরিলার কাছে এক মেয়ে হকি খেলতেন। (তার বাবা ১৯৭৪ সালে প্রথমে হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। পরবর্তীতে আপনার বাবা মাওলানা কলিমুল্লাহ সাহেবে কাছে মুসলমান হন। এমনকি তার মুরীদ হয়ে তিনি হজ্জও পালন করে আসেন। ) তিনি দিল্লি স্ট্যাট হকি টিমের খেলোয়াড় ছিলেন। ভারতের পক্ষ হতে নির্বাচিত হয়ে তিনি রাশিয়ায় খেলতে যাচ্ছিলেন। তিনি এক দিন পরামর্শ ও খেলার পদ্ধতিগত বিষয়ে দিক নির্দেশনার জন্য আমার কাছে আসেন। আমি তার সাথে ডেনমার্কের সেই বিখ্যাত হকি তারকা ব্রিটনির কথা আলোচনা করলাম। তিনি তাঁর বাবাকে এই গল্প শুনান। বাবা নিজের মেয়েকে নিয়ে আমার সাথে সাক্ষাত করতে আসেন। তিনি আমাকে নিজের লিখিত কিতাব ‘আপ কি আমানত’ এবং ‘ইসলাম এক পরিচে’ উপহার দেন। ‘আপ কি আমানত’ অবয়বে অনেক ছোট বইটি আমার মনে বোরকার হুকুম তথা বিধান সম্পর্কে গুরুত্ব সৃষ্টি করে। এতে করে বোরকা আমার অন্তরে জায়গা করে নেয়। আমি হযরতের সাথে সাক্ষাতের ইচ্ছা পোষণ করলাম।

দ্বিতীয় দিন হযরতের পাঞ্জাব সফরের প্রোগ্রাম ছিল। কিন্তু আল্লাহ পাক কি না করতে পারেন! ভালগড় কোন এক সাহেবের বাসায় যাওয়ার পথে সাক্ষাতের সিদ্ধান্ত হয়। সেখানে হযরত ১০-১৫ মিনিট আমার সাথে কথা বলে আমাকে কলিমা পড়ার দাওয়াত দেন। তিনি বললেন, আমার মন বলছে যে, ব্রিটনি নিজের রবের কাছে আপনার বোরকার জগতে আসাটা চেয়ে নিয়েছেন। পরিশেষে আমি কালিমা পড়ে ইসলাম গ্রহণ করলাম। হযরত নতুন রূপে ‘আফিফা’ আমার নাম রাখলেন। বললেন, আফিফা পবিত্র আঁচলকে বলা হয়। যেহেতু প্রকৃতিগতভাবে আপনি ভিতর থেকে পবিত্রতাকে পছন্দ করেন,ু অন্যদিকে আমার আদরের ভাগিনীর নাম আফিফা তাই আপনার নামও আফিফা রেখে দিলাম।

প্রশ্ন : এরপর কি হল?

উত্তর : পরে আমি ব্রিটনিকে ফোন করেছি। তাঁকে ইসলাম গ্রহণের কথা জানালে তিনিু অনেক খুশি ও আনন্দ প্রকাশ করেন। যখন আমি হযরতের নাম বললাম তখন তিনি নিজের স্বামীর সাথে কথা বলান। স্বামীর নাম ছিল ড: আশরাফ। তিনি বললেন, ‘‘হযরতের বোনের কাছে থাকা এক রমনীর সাক্ষ্যদান ও তার চাচার ইসলাম গ্রহণের কাহিনী শুনে আল্লাহ পাক আমাদেরকে ইসলামের মহত্ব শিক্ষা দিয়েছেন। আর এই জন্য আমি ব্রিটনির সাথে বিয়ে বসি। এ কথা বলে যে, তুমি যদি ইসলাম গ্রহণ কর তাহলে আমি তোমার সাথে বিয়ের জন্য প্রস্তুত।’’

এরপর আমি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেই। গেজেটে নাম পরিবর্তন করি। আমার হাই স্কুল ও ইন্টারের সার্টিফিকেটেও নাম পরিবর্তন করি। এভাবে হকি থেকে অবসর নিয়ে ঘরে পড়াশুনা ও গবেষণামূলক কাজ শুরু করি।

প্রশ্ন : এখন আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি? বিয়ে নিয়ে কী ভাবছেন?

উত্তর : আমি আই.সি.এস ( ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস) এর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমি সংকল্প করেছি আমি একজন আই.সি.এস অফিসার হব। বোরকা পরিহিতা আই.সি.এস অফিসার হয়ে মেয়েদের ইসলামী পর্দার গুরুত্ব ও মহত্ব মানুষের কাছে তুলে ধরব।

প্রশ্ন : আপনি কি এর জন্য পড়াশুনা বা গবেষণা করছেন?

উত্তর : আমি বর্তমানে ইন্টার্নেটে পড়া-শুনা করছি। আল্লাহ পাক সব সময় আমার প্রতি এমনিই সহায় হয়েছেন যে, আমি যখন যা ইচ্ছা বা সংকল্প করেছি তা তিনি পূর্ণ করে দিয়েছেন। যখন আমি অমুসলিম ছিলাম তখন পুর্ণ করেছেন। আর এখন যখন ইসলামের মহত্ব ও শ্রেষ্টত্ব প্রকাশ ও এর প্রচার-প্রসারের ইচ্ছা করেছি তখন আল্লাহ অবশ্যই তা পূরণ করবেন। আমি ১০০% নিশ্চিত ও প্রত্যাশা রাখি যে, আমি প্রথম বারেই আই.সি.এস পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে যাবো।

প্রশ্ন : কিন্তু আপনার ভাইবা এর কি হবে?

উত্তর : বোরকা ও ইসলামের সকল বিরোধীরাও যদি আমার ভাইবা নেয়, ইনশা আল্লাহ্ আমাকে নির্বাচনের জন্য তারা বাধ্য হবেন।

প্রশ্ন : আপনার পরিবারের সদস্যদেরকে আপনি কি ইসলামের দাওয়াত দেননি?

উত্তর : এখনো তাদের জন্যে দোয়া করছি। সে সাথে তাদেরকে কাছাকাছি নিয়ে আসতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমি কিভাবে হেদায়াত প্রাপ্ত হয়েছি, হিন্দি ভাষায় তা পরিবারের সকলকে জানিয়েছি। সকলেই বিস্মিত হয়েছেন। আল্লাহর শুকর, ইদানিং তাদের মানসিকতার ইতিবাচাক পরিবর্তন ঘটছে।

প্রশ্ন : আপনি মুসলিম মা-বোনদের কোন বার্তা বা সুসংবাদ দিবেন কি?

উত্তর : মেয়েদের বেপর্দা হওয়া তাদের জন্য চুড়ান্ত পর্যায়ের মানহানিকর ও চরম অপমানের বিষয়। পুরুষদের উচিত আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তারা যেন নিজেদের মিথ্যা উদ্দেশ্য চরিতার্থের জন্য, নিজেদের বোঝা মেয়েদের উপর চাপিয়ে দিয়ে তাদেরকে হাট-বাজারে বেপর্দাভাবে ঘুরিয়ে-ফেরিয়ে তুচ্ছ, অসম্মান ও লাঞ্চিত করা থেকে দূরে থাকেন। আর মেয়েদের উচিত যেন তারা নিজেদের অবস্থান, মান-মর্যাদা, সততা ও পবিত্রতা হেফাজতের জন্য ইসলামী পর্দার যথাযথ ম[ংন]ূ[/ংন][ংন][/ংন]ল্যায়ন করেন।

(কৃতজ্ঞতায় : মাসিকী ‘মাসিক আরমুঘান’ জেলা: মুজাফ্ফর নগর, ইউ.পি নভেম্ব, ২০১০ইং)





[/ংন][ংন][/ংন

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.