![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর গত চার বছরে চারটি বড় গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে বাংলাদেশে। এসব গণহত্যায় জীবন গেছে নিরীহ মানুষ, পোশাক শ্রমিক, আলেম, সেনা কর্মকর্তা, পুলিশ ও বিডিআর সদস্যদের। তবে সবচেয়ে বেশি প্রাণ গেছে আলেম-ওলামাদের। রোববার মাঝ রাতে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে জিকিররত আলেমদের বুকে একযোগে গুলি চালিয়েছে র্যাব, পুলিশ, বিজিবি ও সরকারি দলের সশস্ত্র ক্যাডাররা। চারদিক
থেকে আসতে থাকে ঝাঁকে ঝাঁকে হাজার হাজার রাউন্ড গুলি। কিছু বুঝে ওঠার আগেই গুলি এসে বিঁধতে থাকে আলেমদের বুকে। গুলিবিদ্ধ পাখির মতো রক্তাক্ত অসংখ্য আলেমকে পড়ে থাকতে দেখা যায় রাস্তায়। আলেমদের সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবি আর তসবিহ রক্তে ভিজে চুবচুব করছিল। মতিঝিলের পিচঢালা কালো রাস্তা আলেম-ওলামাদের রক্তে লালে লাল হয়ে যায়। এত রক্ত ধুয়ে রাস্তা পরিষ্কার করতে হিমশিম খেতে হয় সরকারি কর্মচারীদের। আল্লাহ-রাসুল (সা.)-এর ইজ্জত রক্ষার দাবি নিয়ে এসে এসব আলেমকে জীবন দিতে হলো।
রাত আড়াইটার দিকে সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন পড়ে আছে অনেকের নিথর দেহ। আবার অনেকে বেঁচে থাকার আকুতি জানাচ্ছিলেন সরকারি বাহিনীর কাছে। বাধার কারণে ছবি তুলতে পারেনি ফটোসাংবাদিকরা। দিগন্ত টিভি কিছু কিছু ফুটেজ সরাসরি দেখাচ্ছিল বলে চ্যালেনটি তাত্ক্ষণিক বন্ধ করে দেয়া হয়। একই কারণে বন্ধ করে দেয়া হয় ইসলামিক টিভির সম্প্রচার।
কত লোককে হত্যা করা হয়েছে, সে হিসাব এখনও মেলেনি। হেফাজতের দাবি, শত শত আলেম ও ধর্মপ্রাণ মুসলমান হত্যা করা হয়েছে। একই দাবি প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের। তবে প্রত্যক্ষদর্শীদের সবাই একমত যে, মহাজোট সরকারের এ গণহত্যা ১৯৭১ সা
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ-এর কেন্দ্রীয় নেতারা ঢাকা অবরোধ ও পরবর্তী পরিস্থিতি সম্পর্কে এক বিবৃতিতে বলেন, গত ৫ মে ১৩ দফা দাবিতে ঢাকা অবরোধ শেষে রাজধানীর শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে, রাতের অন্ধকারে বিদ্যুত্ সংযোগ বন্ধ করে দিয়ে লাখো জনতার ওপর পুলিশ, বিজিবি, র্যাব ও বিশেষ পোশাকধারী সশস্ত্র কিলিং স্কোয়াডের যৌথ অভিযানের নামে ইতিহাসের বর্বরতম গণহত্যা, লাশ গুম ও নজিরবিহীন পুলিশি নৃসংশতার ঘটনা আড়াল করতে কিছু পক্ষপাতদুষ্ট মিডিয়া ‘কোরআন পোড়ানো’ সম্পর্কিত নির্জলা মিথ্যাচার শুরু করেছে। যার ফলে জনমনে মারাত্মক বিভ্রান্তি সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষত, বায়তুল মোকাররম এলাকায় বিভিন্ন অস্ত্রে সজ্জিত স্বেচ্ছাসেবক লীগের একটি ক্যাডার বাহিনী দক্ষিণ গেটের ফুটপাতে বন্ধ থাকা ইসলামি বই ও কোরআন শরিফের দোকানে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এছাড়াও ১৫-২০টি জুতার দোকানেও তারা একইভাবে আগুন দেয়। এতে পুড়ে যায় কোরআন শরিফসহ বিভিন্ন ধর্মীয় পুস্তকের দোকান। পাশাপাশি সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয় স্বল্প আয়ের এসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর রুটি-রুজির এই অবলম্বন। বহুসংখ্যক প্রত্যক্ষদর্শীর মতে, ওই সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন বেশ কয়েকজন সাংবাদিক এবং সেই দোকানগুলোর দু-একজন মালিকও। কিন্তু দুষ্কৃতকারীদের সহায়তার জন্য অস্ত্র হাতে দাঁড়িয়ে থাকা সন্ত্রাসী ও পুলিশের ভয়ে কেউ প্রতিবাদের সাহস পায়নি। আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা দেবাশীষের নেতৃত্বে এই জঘন্য অপকর্ম ঘটানো হলেও অত্যন্ত দুঃখজনকভাবে তা হেফাজতে ইসলাম ঘটিয়েছে বলে মিথ্যাচার করা হচ্ছে। ৭ মে’র দৈনিক ইনকিলাবসহ বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় এতদসংক্রান্ত তথ্য-উপাত্তসহ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
তারা আরও বলেন, অনুরূপভাবে পুরো ঢাকায় সেদিন আওয়ামী লীগের গুণ্ডাবাহিনীর চালানো তাণ্ডবকে হেফাজতের কর্মীদের দ্বারা সংঘটিত বলে সরকার সমর্থক মিডিয়াগুলোতে ব্যাপক অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। আমরা এ ঘটনার এবং এর সঙ্গে জড়িত আসল অপরাধীদের আড়াল করার উদ্দেশে পরিচালিত সিন্ডিকেটেড অপ্রপ্রচারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অন্যদিকে দেশবাসীর অবগতির জন্য ৭ মে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পুরো ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা তুলে ধরা হয়। যা এরই মধ্যে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের কোটি কোটি নবীপ্রেমিক জনতার প্রাণের সংগঠন হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে পুরো দেশের নবীপ্রেমিক ও শান্তিপ্রিয় জনতা ছিল, আছে এবং থাকবে। গণহত্যা, তথ্যসন্ত্রাস কিংবা কোনো ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে দলমত নির্বিশেষে তৌহিদি জনতার এই মহাজাগরণ নস্যাত্ করা যাবে না। বৃথা যাবে না, হাজার হাজার আলেম-ওলামা ও তৌহিদি জনতার শাহাদত। অন্যদিকে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচির পর এখন পর্যন্ত নিখোঁজ মাদরাসা ছাত্র, শিক্ষক ও বিভিন্ন লোকজনের তথ্য সংগ্রহ ও সরবরাহের জন্য অনুসন্ধান সেল খোলা হয়েছে। হেফাজতে ইসলামের জেলা, থানা, ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও বিভিন্ন মাদরাসাভিত্তিক সমন্বিত অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সংশ্লিষ্ট শাখার দায়িত্বশীলের প্রতি নির্দেশ ও প্রতিষ্ঠানপ্রধানদের প্রতি বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হচ্ছে। জনসাধারণের তথ্য আদান-প্রদানের জন্য এই ওয়েবপেজটিতে তথ্য আপলোড করা যাবে। ভরহফযঁসধহ.রহভড়
বিবৃতিদাতারা হলেন, হেফাজতে ইসলামের সিনিয়র নায়েবে আমির, আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী, নায়েবে আমির মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী, উপদেষ্টা মাওলানা আহমদুল্লাহ আশরাফ, নায়েবে আমির মাওলানা আবদুল মালেক হালিম, মাওলানা তাজুল ইসলাম, মাওলানা ইদরিস, মাওলানা সলিমুল্লাহ ও মাওলানা জায়নুল আবেদীন প্রমুখ।
ঢাকা মহানগর : এদিকে হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগর নেতারা বলেছেন, সরকার মুসলমানদের রক্ত নিয়ে হোলি খেলতে শুরু করছে। মতিঝিল শাপলা চত্বরে ঈমানদার জনতার শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচিতে মধ্যরাতে নিরীহ জনতার ওপর সরকারি বাহিনী দিয়ে নারকীয় অভিযান চালিয়ে তিন হাজার মুসলমানকে শহিদ করেও দানব সরকারের রক্ত পিপাসা মেটেনি। তারা আলেম-ওলামাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দিয়ে লাখ লাখ জনতাকে আসামি করে এদেশে ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। দেশের আলেম-ওলামা ও আপামর জনতার কাছে এর জন্য অবশ্যই একদিন তাদের জবাবদিহি করতে হবে।
তারা বলেন, একটি মহল ফেসবুকে হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগরের সদস্যসচিব মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীবসহ নেতাদের মৃত্যুর সংবাদ ছড়াচ্ছে। এটি নিছক গুজব ছাড়া কিছু নয়। এছাড়া হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করে ৯ দিনের রিমান্ডে নিয়ে নির্মম নির্যাতন শুরুর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান তারা। গতকাল বাদ আছর লালবাগ কার্যালয়ে জরুরি সভায় নেতারা এসব কথা বলেন। মাওলানা আলতাফ হোসাইনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা মহানগরীর অন্যতম নেতা মাওলানা ফারুক আহমদ, মাওলানা হাফেজ আবুল ফারাহ আমিনী, মাওলানা নাছির উদ্দীন, মাওলানা কাজী আজিজুল হক, মাওলানা আবদুল আজিজ, মাওলানা সাইফুল ইসলাম, মাওলানা সোহরাব হোসাইন প্রমুখ।
স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে মতিঝিল শাপলা চত্বরের হত্যাযজ্ঞের তদন্ত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে লন্ডনভিত্তিক খ্যাতনামা মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
৬ মে ভোরে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে শত শত নিরস্ত্র ও নিরীহ ধর্মপ্রাণ হেফাজতকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেছে হেফাজতে ইসলামের নেতারা। দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি, মানবাধিকার সংগঠন এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন এবং অধিকারও একই তথ্য জানিয়েছে।
মঙ্গলবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে অ্যামনেস্টি বলেছে, ‘পুলিশের সঙ্গে হেফাজতে ইসলামের সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত ৪৪ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে একটি নিরপেক্ষ ও স্বাধীন তদন্ত কমিটি অবশ্যই গঠন করতে হবে।’
গত ৫ মে হেফাজতে ইসলাম ১৩ দফা দাবি বাস্তবায়নের জন্য ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি পালন করে। এরপর তারা মতিঝিলের শাপলা চত্বরে অবস্থান নেয়।
সেদিন ভোরে (৬ মে) নিরাপত্তা বাহিনীর অন্তত ১০ হাজার সদস্য হেফাজতকর্মীদের ওপর ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। এ সময় শত শত হেফাজতকর্মী নিহত হয় বলে বিভিন্ন সংগঠন বলছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘সেখানে কী ঘটেছিল এবং কেন এ মৃত্যুর ঘটনা ঘটল, তা নিয়ে ব্যাপক বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনার অবশ্যই স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত করতে হবে। পুলিশের শক্তি প্রয়োগের বিষয়টিও তদন্ত করতে হবে। অভিযুক্তদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ৫ মে সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ চারজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করলেও ৬ মে প্রথম প্রহরে মতিঝিলে এবং ওইদিন অন্যান্য স্থানে ঠিক কতজনের মৃত্যু হয়েছে, সে ব্যাপারে পুলিশ নীরব। গণমাধ্যম এখন পর্যন্ত ২২ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে। তবে বিভিন্ন হাসপাতাল এবং অন্যান্য সূত্র থেকে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ৫ ও ৬ মে’র ঘটনায় সাধারণ নাগরিক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ মোট ৪৪ জনের মৃত্যুর ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছে।
বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিকে চরম সহিংসতাপূর্ণ উল্লেখ করে বিবৃতিতে অ্যামনেস্টি বলেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবশ্যই আন্তর্জাতিক রীতি-নীতি ও নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হবে। এ বিষয়ে তাদের নিশ্চয়তা দিতে হবে যে, তারা কারও ওপর জোর-জবরদস্তি করবে না।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, নিতান্ত বাধ্য না হলে অর্থাত্ নিজেদের জীবন রক্ষার্থেই কেবল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করতে পারে; অন্যথায় নয়।
গত ৫ ও ৬ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে আলেম হত্যাযজ্ঞ কার নির্দেশে হয়েছে? এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। এ হত্যার জন্য কেউ কেউ পুলিশের আইজি হাসান মাহমুদ খন্দকার ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীরকে দায়ী করেছেন। তবে বেশিরভাগের অভিমত হলো, সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ছাড়া এতো স্পর্শকাতর সিদ্ধান্ত গ্রহণ অর্থাত্ ইতিহাসের এমন ভয়ানক গণহত্যা সংঘটিত করা সম্ভব নয়। এরই মধ্যে এ হত্যাযজ্ঞের কারণ ও নির্দেশদাতাদের খুঁজতে শুরু করেছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও সংগঠন। হয়তো একদিন বের হয়ে আসবে আসল রহস্য। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি মতিঝিল অপারেশনের নিরপেক্ষ তদন্ত চেয়েছে। তদন্ত চেয়েছে এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন। প্রধান বিরোধীদল বিএনপি এ হত্যাযজ্ঞের আন্তর্জাতিক তদন্ত দাবি করেছে। বিএনপি স্পষ্ট করে বলেছে, তাদের দল ক্ষমতায় এলে এসব আলেম-ওলামা হত্যার বিচার করা হবেই।
দু’দিন পার হয়ে গেলেও মতিঝিলে আলেম হত্যার নৃশংসতা ভুলতে পারছেন না দেশের মানুষ। মাদরাসা পড়ুয়া ছাত্র ও আলেমদের ঘরে ঘরে কান্নার রোল পড়েছে। নিহতের জন্য ঘরে ঘরে দোয়া হচ্ছে। সন্তানহারা মায়ের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে বাতাস। মাদরাসায় পড়ুয়া অতি দরিদ্র লাখ লাখ ছাত্রের পরিবারে দেখা দিয়েছে চরম উদ্বেগ-উত্কণ্ঠা। তাদের মা-বাবা ও আত্মীয়-স্বজনরা দুশ্চিন্তায় ঠিকমতো ঘুমাতে পারছেন না।
৬ মে মধ্যরাতে ঢাকার মতিঝিলে যে ন্যক্কারজনক হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হয়েছে তা দেশের মানুষকে বেদনায় কাতর করেছে। কেন আলেমদের এভাবে হত্যা করা হলো? এর কোনো জবাব খুঁজে পাচ্ছেন না তারা।
মহানবীর (সা.) ইজ্জত ও ইসলামের মর্যাদা রক্ষায় ১৩ দফা বাস্তবায়নের দাবি নিয়ে ৫ মে সারাদেশ থেকে কয়েক লাখ আলেম এসে জড়ো হয়েছিলেন মতিঝিলের শাপলা চত্বরে। তাদের প্রায় সবার সঙ্গে ছিল জায়নামাজ, তসবিহ আর পানির বোতল।
দুপুরে শাপলা চত্বরমুখী লাখো আলেমের স্রোত সহ্য করতে পারেনি সরকার। জিকির করতে করতে একদল আলেম যখন বিবি অ্যাভিনিউর পাশ দিয়ে আসছিলেন, আকস্মিকভাবে হায়েনার মতো তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা। পিটিয়ে হত্যা করা হয় এক আলেমকে। আহত হন আরও অনেকে। রক্তাক্ত এসব আলেমের কেউ কেউ সমাবেশস্থলে আসার পর উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এরপরও আলেমরা সর্বোচ্চ ধৈর্য ধারণ করেন। এরই মধ্যে শুরু হয়ে যায় বিভিন্ন স্থানে আলেমদের মিছিলে হামলা। শত বাধা পেরিয়ে লাখ লাখ আলেম সমবেত হন মতিঝিলে। আলেমদের এ স্রোত মতিঝিল শাপলা চত্বর ছাপিয়ে দৈনিক বাংলা মোড়, বায়তুল মোকাররম হয়ে পল্টন পর্যন্ত কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। তখনও আলেমদের মিছিল আসছিল। এরই মধ্যে শুরু হয় পুলিশের অ্যাকশন। পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন নিরস্ত্র আলেমরা। পুলিশের গুলিতে বেশ ক’জন আলেম নিহত হন। বিনা উসকানিতে পুলিশ ও সরকারি দলের ক্যাডার কর্তৃক নিরীহ আলেমদের হত্যার ঘটনায় সমাবেশস্থলে যখন উত্তেজনা দেখা দেয় ঠিক তখনই (বিকালে) আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফ এক সংবাদ সম্মেলনে সব সন্ত্রাসী তত্পরতার জন্য হেফাজতে ইসলামকে দায়ী করেন। তিনি তাদের ‘রাজাকার-আলবদরের নতুন প্রজন্ম’ বলে উল্লেখ করে সন্ধ্যার মধ্যে সমাবেশ শেষ করে ঢাকা ছাড়ার নির্দেশ দেন। অন্যথায় হেফাজতে ইসলামকে গর্তে ঢুকিয়ে দেয়ার হুমকি দেন তিনি। সৈয়দ আশরাফ বলেন, হেফাজতকে দমন করতে আওয়ামী লীগই যথেষ্ট। তাদেরকে ঘর থেকেও বের হতে দেয়া হবে না বলেও হুংকার দেন সরকারের দায়িত্বশীল এ মন্ত্রী ।
এ ধরনের হুমকিতে আরও বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন ইসলামের খাদেম ওলামা-মাশায়েখরা। তারা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ঘরে না ফেরার ঘোষণা দেন।
রাতে সমাবেশস্থলে চলছিল জিকির ও নফল নামাজ আদায়। রাত আড়াইটার দিকে কেউ কেউ জিকির করছিলেন, অনেকে ক্লান্ত হয়ে রাস্তায় ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। এরই মধ্যে হঠাত্ করে ‘ঘুমন্ত ও জিকিররত’ আলেমদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে র্যাব, পুলিশ, বিজেপি ও সরকারি দলের সশস্ত্র ক্যাডাররা।
সরকারের সর্বোচ্চ মহলের নির্দেশ পাওয়ার পর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার শেখ মারুফ হাসান রাত ২টা ১০ মিনিটে মাইকে ঘোষণা দেন, আমরা এখনই অভিযান শুরু করছি। কোনো সাধারণ মানুষ এখানে থাকলে সরে যান। ডিএমপির আইন অনুযায়ী শাপলা চত্বরের আশপাশে যারা বসে আছেন, তারা অবৈধভাবে অবস্থান করছেন। আমরা কোনো গুলি করব না, শুধু শাপলা চত্বর খালি করতে এবং অবৈধ অবস্থানকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে যা যা করা দরকার, তা-ই করা হবে। এই ঘোষণার কিছুক্ষণ পরই অভিযান শুরু করে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির যৌথবাহিনী। সঙ্গে সরকারি দলের ক্যাডাররা যোগ দেয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
গুলি, টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেডের আওয়াজে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে মতিঝিল ও এর আশপাশ এলাকা। গুলি আসতে থাকে চার দিক থেকে। এপিসি নিয়ে যুদ্ধসাজে সজ্জিত যৌথবাহিনী বেপরোয়া গুলি চালিয়ে হত্যা করে অজানা সংখ্যক আলেমকে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন, হেফাজতে ইসলাম ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট দাবি করেছে শাপলা চত্বর গণহত্যায় প্রায় ৩ হাজার আলেমকে হত্যা করা হয়েছে। তবে সরকারের তরফ থেকে ডিএমপি কমিশনার বেনজীর আহমেদ ৮ জনের লাশ উদ্ধারের কথা স্বীকার করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালো রাতে ঘুমন্ত মানুষের ওপর যে পৈশাচিক গণহত্যা চালানো হয়েছিল ৫ মে কালো রাতে তার চেয়েও নৃশংস গণহত্যা সংঘটিত হয়। এ বর্বরতা ঔপনিবেশিক ভারতের কুখ্যাত ‘জালিয়ানওয়ালাবাগের’ হত্যাকাণ্ডকেও হার মানিয়েছে। মানবতার ইতিহাসে ক্ষমাহীন এ জঘন্য হত্যাযজ্ঞ কলঙ্কের এক নতুন অধ্যায় হয়ে থাকবে।
জঘন্যতম এ হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে বিভিন্ন সংগঠন। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এক বিবৃতিতে দাবি করেছে, হত্যাযজ্ঞটি সম্পূর্ণভাবে ঠাণ্ডা মাথায় সুপরিকল্পিতভাবে ঘটানো হয়েছে। আওয়ামী সশস্ত্র ক্যাডারদের আগে থেকে মোতায়েন করা, তাদের পরিকল্পিত তাণ্ডব, হেফাজতের ওপর এর দোষ চাপানো, বিদ্যুত্ সরবরাহ বন্ধ করা, অভিযানের আগে ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকদের ঘটনাস্থল থেকে বিতাড়িত করা থেকে তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
মধ্যরাতের এই নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে আধা-সামরিক বাহিনীকে রণসজ্জায় সজ্জিত করে অভিযানে নামানো হয়। আর্মড পারসোনেল ক্যারিয়ারসহ (এপিসি) যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহৃত ভয়ঙ্কর সব মারণাস্ত্র ও সাজ-সরঞ্জাম নিরস্ত্র জনগণের সমাবেশ ভাঙতে ব্যবহার করা হয়। অথচ দেশবাসী জানেন, বিডিআর বিদ্রোহের সময় পিলখানায় আটক সেনা কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের রক্ষার জন্য শতমুখী করুণ ফরিয়াদ সত্ত্বেও এই সরকার এ ধরনের কোনো অভিযান পরিচালনার অনুমতি দেয়নি।
গভীর উদ্বেগ জানিয়ে বিএনপির বলেছে, ‘এ হেফাজত কর্মীদের বেশিরভাগই গ্রামের দরিদ্র পরিবার থেকে আসা মাদরাসা ছাত্র, যাদের একটি বিরাট অংশ এতিম। কিশোর ও বৃদ্ধরাও ছিলেন তাদের মধ্যে। সারাদিনের পথশ্রমে ক্লান্ত-শ্রান্ত এসব মানুষ ছিলেন ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত। দেশনেত্রী খালেদা জিয়া নগরীর এই মেহমান ও মুসাফিরদের খাদ্য ও পানীয় সরবরাহের জন্য ঢাকাবাসী ও দলীয় নেতাকর্মীদের আহ্বান জানালেও সরকারি দলের সন্ত্রাসী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বেষ্টনীর মধ্যে তা সরবরাহ করতে তারা ব্যর্থ হন।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘পৈশাচিক ঘটনা সম্পর্কে সরকারের তরফ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বিবরণ বা প্রেসনোট দেয়া হয়নি। হতাহতের কোনো সঠিক পরিসংখ্যানও দেশবাসীকে জানানো হয়নি। বিদেশি গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন সূত্রে আড়াই থেকে ৩ হাজার লোককে হত্যা এবং ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হওয়ার কথা জানা যাচ্ছে। বিভিন্ন আলোকচিত্র ও ভিডিও ফুটেজে অভিযানে বেপরোয়া গুলিবর্ষণ, অসংখ্য লাশের ছড়াছড়ি, মৃতদেহের ওপর দিয়ে ভারি যানবাহন চালিয়ে দেয়া এবং ট্রাকভর্তি লাশ সরিয়ে নেয়ার নৃশংস দৃশ্য দেখে দেশবাসীর সঙ্গে আমরাও শিউরে উঠেছি।
হেফাজতে ইসলামের নেতারা গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছেন এদেশের আলেম সমাজ ইতিহাসের এক নিষ্ঠুরতম নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার। এমন নিষ্ঠুরতম পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশে এর আগে আর ঘটেছে বলে আমাদের জানা নেই। এদেশের নিরীহ আলেম ও ধর্মপ্রাণ মানুষের রক্তের দাগ এখনও রাজপথে লেগে আছে, লাশ পড়ে আছে হাসপাতালে মর্গে, অজানা স্থানে। মহান আল্লাহ ও তার রাসুলের ভালোবাসার টানে ঘর থেকে বের হওয়া হাজার হাজার নিরীহ ধর্মপ্রাণ মানুষ এখনও ঘরে ফেরেনি। তারা কোথায়, কী অবস্থায় আছেন, জীবিত আছেন কী না আমরা কিছুই জানতে পারছি না। এক চরম বিভীষিকাময় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে দেশ অতিক্রম করছে। তারা দাবি করেন, রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বর এলাকায় ৫ মে রাতে ঘুমন্ত, জিকিররত নিরীহ, নিরস্ত্র লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ আলেম-ওলামার ওপর সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশের মুসলমান নামধারী সরকার রাতের আঁধারে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও দলীয় সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে নৃশংস, নির্মম, বর্বর অমানবিক হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে। সেখানে কত লোক শহীদ হয়েছেন, সেই পরিসংখ্যান যাতে না পাওয়া যায়, সেজন্য সঙ্গে সঙ্গেই লাশ গুম করা হয়েছে। ট্রাকভর্তি করে লাশ নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এই লাশের সংখ্যা আড়াই হাজার থেকে ৩ হাজার পর্যন্ত হতে পারে। সেখান থেকে আলামত দ্রুত সরিয়ে নেয়া হয়েছে। হাজার হাজার মানুষকে আহত করা হয়েছে। আলেমদের বেইজ্জতি করে ঢাকা থেকে বের হতে বাধ্য করা হয়েছে। আমাদের রাজধানীতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ দেয়া হয়নি। হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা বাবুনগরীকে গ্রেফতার করে নির্যাতন করা হচ্ছে। অন্য শত শত আলেমকে গ্রেফতার করার জন্য মিথ্যা মামলা করা হচ্ছে।
মতিঝিলের শাপলা চত্বরে ৬ মে রাতে আসলে কত লোক নিহত হয়েছে এর সঠিক হিসাব এখনও মেলেনি। বিভিন্ন সামাজিক গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন জানায়, নিহতের সংখ্যা ২,৫০০ এরও বেশি হতে পারে। হেফাজতে ইসলামের হিসাবে নিহতের সংখ্যা ৩০০০-এরও বেশি হবে। বিরোধী দল বিএনপিও বলছে, শাপলা চত্বরে আড়াই থেকে তিন হাজার লোককে হত্যা করেছে নিরাপত্তা বাহিনী।
মার্কিন টিভি স্টেশন সিএনএন বার্তা সংস্থা এপির বরাত দিয়ে জানায়, ৬ মে রাতের নিহতের প্রকৃত সংখ্যা হয়তো কখনোই জানা যাবে না। বামপন্থী রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও নিউ এজ সম্পাদক নুরুল কবির বাংলাভিশনের টকশোয় বলেছেন, সাংবাদিকদের কাছে তিনি শুনেছেন, শত শত লোককে হত্যা করা হয়েছে। তবে তার ব্যক্তিগত ধারণা, অন্তত শতাধিক লোককে হত্যা করা হয়েছে।
মানবাধিকার কর্মীদের ধারণা, নিহতের সংখ্যা এত বেশি যে সরকার কোনো দিনই তা প্রকাশ হওয়ার সুযোগ দেবে না। বিবিসি বলেছে, পুরো মতিঝিল এলাকার পরিবেশটা একটা যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকার মতোই লাগছিল। একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, শাপলা চত্বরে তিনি ১৫টি লাশ পড়ে থাকতে দেখেছেন। তিনি নিজে গুণে দেখেছেন।
মতিঝিলের শাপলা চত্বরে ৬ মে মধ্যরাতে শত শত নিরস্ত্র হেফাজতে ইসলামের কর্মীকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে জানিয়ে দেশের শীর্ষস্থানীয় মানবাধিকার সংগঠন অধিকার বলেছে, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালোরাতের পর গত ৪২ বছরে ঢাকায় এমন হত্যাকাণ্ডের ঘটনা আর ঘটেনি।
অধিকারের এক বিবৃতিতে বলা হয় গুলি, রাবারে ঢাকা স্টিলের বুলেট, টিয়ারগ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেডের হামলা চালিয়ে নির্বিচারে নিরস্ত্র হেফাজত কর্মী ও নেতাদের হত্যা করা হয়েছে। এ সময় তাদের অনেকেই দিনব্যাপী কর্মসূচির শেষে ঘুমাচ্ছিলেন। হামলায় পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির ১০ হাজার সদস্যের পাশাপাশি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ক্যাডাররাও অংশ নেয়। হামলার আগেই মিডিয়াকর্মীদের সরিয়ে নেয়া হয়। এরপর পরিপূর্ণ অন্ধকারের মধ্যে নিরস্ত্র জনতার ওপর হামলা চালানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, এটা অবধারিত যে অভিযানের বর্বরতা এবং হতাহতের সংখ্যা লুকানোর জন্যই এ কাজ করা হয়েছে। জানা গেছে শত শত লোককে হত্যা করা হয়েছে। হেফাজত দাবি করেছে ২ হাজারেরও বেশি লোককে হত্যা করা হয়েছে। অধিকার নিহতের প্রকৃত সংখ্যা জানার চেষ্টা করছে। তবে এ মুহূর্তে বস্তুনিষ্ঠ প্রমাণাদি পাওয়া খুবই কঠিন।
ঢাকা মেডিকেলে চিকিত্সাধীন একজন আহত ব্যক্তি রহমাতুল্লাহ অধিকারকে জানিয়েছেন, হামলার পর তিনি রাস্তায় অনেক লাশ পড়ে থাকতে দেখেছেন।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ট্রাক ও কভার্ড ভ্যানে করে লাশ সরিয়ে নিয়েছে।
বাংলাদেশের চলমান সহিংসতা, বিশেষ করে গত রোব ও সোমবার ব্যাপক হতাহতের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও শোক জানিয়ে অবিলম্বে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতাদের সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন। উদ্বেগ জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের ৯ রাষ্ট্রদূত। এ ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত চেয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি।
রোববার রাতে শাপলা চত্বরে হেফাজতের নেতাকর্মীদের ওপর ফ্যাসিবাদী সরকারের যৌথ বাহিনীর অভিযানে অসংখ্য লোকের নিহতের ঘটনাকে ‘গণহত্যা’ বলে অভিহিত করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন (এএইচআরসি)। ‘বাংলাদেশ : বিক্ষোভকারীদের ওপর গণহত্যা’ শীর্ষক এক বিবৃতিতে সংস্থাটি বলেছে, বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য ‘সংবাদ সূত্রগুলো’ (গণমাধ্যম) নিহতের সংখ্যা নিয়ে নীরব থাকলেও ইন্টারনেটে বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া খবরে এ সংখ্যা ২৫০০ বা তার বেশি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অনেক ছবিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে।
এএইচআরসি আহ্বান জানিয়ে বলেছে, বাংলাদেশে চলমান সহিংসতা এখনই বন্ধ করতে হবে।
©somewhere in net ltd.