![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ইসলামে নারীকে অন্যান্য অধিকারের পাশাপাশি অর্থনৈতিক অধিকারও দেয়া হয়েছে। ইসলাম ব্যতীত অন্য কোনো ধর্ম বা মতবাদে নারীকে আর্থিক দিক দিয়ে তেমন স্বাধীনতা দেয়া হয়নি। বিবিন্ন ভাবে ইসলাম নারীদেরকে আর্থিক আয়ের সুযোগ সুবিধা দিয়েছে। নিম্নে এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা কুরআন ও হাদিসের আলোকে উপস্থাপন করা হল।
স¦ামী কর্তৃক স্ত্রীকে মহরানা প্রদান
একজন পুরুষ কোনো নারীর সাথে বিবাহ বন্ধন শুদ্ধ হওয়ার পূর্বশর্ত স্ত্রীকে মহরানা প্রদান করা। এটাকে ইসলামে সালাত, হজ্জ ও যাকাতের ন্যায় ফরজ করা হয়েছে। আল্লাহ তা’আলা এ প্রসঙ্গে বলেন, “তোমরা নারীদেরকে মহর স্বতঃস্ফূর্তভাবে দিয়ে দাও।” [সূরা নিসা-০৪]
রাসূলুল্লাহ সা. এ ব্যাপারে কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, “য়েব্যক্তি কোনো নারীকে মহর প্রদানের শর্তে বিয়ে করেছে অথচ মহর আদায়ের নিয়ত তার নেই তবে সে ব্যভিচারী। আর য়েব্যক্তি কোনো ঋণ এই নিয়তে গ্রহণ করে য়েতা শোধ করবে না সে চোর।” [মুসনাদে আহমদ]
সম্পদ অর্জনের স্বাধীনতা
ইসলাম নারীদেরকে সম্পদ অর্জনের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা দান করেছে।
একজন পূর্ণবয়স্ক মুসলিম নারী, তিনি বিবাহিত হন বা নাই হন, কারো সাথে পরামর্শ ব্যতিরেকেই সম্পদের মালিক হতে পারেন, বিলি বন্টন করতে পারেন, মালিকানা আদান-প্রদান করতে পারেন। ১৮৭০ সালে প্রথম ইংল্যান্ডে বিবাহিত মহিলাকে কারো সাথে পরামর্শ ব্যতিরেকে সম্পদ অর্জন ও বন্টন করার আইনগত অধিকার দেয়া হয়। অথচ ইসলামে আজ থেকে প্রায় ১৫০০ বছর পূর্বেই এ অধিকার দেয়া হয়েছে। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, ‘পুরুষেরা যা কিছু অর্জন করে, তা তাদের জন্যে আর নারীরা যা উপার্জন করে তা তাদের প্রাপ্য অংশ। [সূরা নিসা-৩২]
ইসলামে একজন নারী যদি পরিশ্রমের মাধ্যমে উপার্জন করতে চায়, তাহলে এ ব্যাপারে ইসলামে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই, যদি এতে ঘরের বাহিরে যেতে চায় তাও যেতে পারবে, তবে অবশ্যই তা ইসলামী শরীয়াহ্ মোতাবেক হতে হবে। রাসূলুল্লাহ সা. এর স্ত্রী যয়নব রা. কুটির শিল্পে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি চামড়া পাকা করার কাজে দক্ষ ছিলেন। এ কাজে য়েঅর্থ উপার্জিত হত, তা তিনি আল্লাহর পথে ব্যয় করতেন। [সহীহ মুসলিম]
কিন্তু একজন মহিলার অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কোনো বাধ্যবাধকতা বা দায়-দায়িত্ব নেই। অর্থনৈতিক দায়-দায়িত্ব পরিবারের পুরুষের ওপর ন্যস্ত। বাস্তব ক্ষেত্রে যেখানে অর্থনৈতিক সংকট আছে, সেখানে তার কাজ করার সুযোগ আছে। এখানেও তাকে কাজ করতে বাধ্য করা যাবে না, তিনি তার নিজস্ব সম্পূর্ণ স্বাধীন ইচ্ছায় কাজ করবেন।
আল্লাহ তা’আলা বলেন- “পুরুষ নারীর কর্তা, কারণ আল্লাহ তাদের একজনের ওপর অন্যের শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন এবং এ জন্য যে, পুরুষ তাদের জন্য ধন-সম্পদ ব্যয় করে। [সূরা নিসা-৩৪]
এই আয়াত থেকে প্রমাণিত হয় যে, ইসলাম পুরুষকে নারীদের জন্য আর্থিক উপার্জন ও ব্যয়ের দায়-দায়িত্ব দিয়েছে।
উত্তরাধিকার সম্পদ লাভ
‘উত্তরাধিকার’ বলতে বুঝায়, মৃতের রেখে যাওয়া সম্পদে জীবিতদের অধিকার। ইসলামের দৃষ্টিতে উত্তরাধিকার বা মিরাস লাভের মূল ভিত্তি হচ্ছে জন্মগত সম্পর্ক ও নিকটাত্মীয়তা। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ ঘোষণা করেছেন- “পিতা-মাতা ও আত্মীয় স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে পুরুষের অংশ আছে এবং নারীদেরও অংশ আছে। তা কম হোক অথবা বেশি (অল্লাহর পক্ষ থেকে) নির্ধারিত অংশ। [সূরা-নিসা:৭]
উত্তরাধিকার স্বত্ত্ব লাভ করা তো দূরের কথা, তাদের কোনো সামাজিক মর্যাদাও ছিল না। কন্যা সন্তান জন্ম গ্রহণ করেছে বলে সংবাদ পেলে পিতার মুখমন্ডল দুঃখে বিবর্ণ হয়ে যেত। কখনো কখনো পিতা তার কন্যা সন্তানকে জীবন্ত কবর দিত। সারা জাতির যখন এই অবস্থা তখন বিশ্ব মানবতার মুক্তির দূত নারী মুক্তির দিশারী হযরত মুহাম্মদ সা. পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়ে নারী জাতিকে সেই দুর্বিসহ জীবন থেকে উদ্ধার করে পারিবারিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে শুধুমাত্র মাতৃত্বের আসনেই প্রতিষ্ঠিত করেননি; বরং উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রেও তাদের শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, “ভূমন্ডল ও নভোমন্ডলে যা কিছু আছে সব কিছুর মালিক হলেন আল্লাহ।”
যেহেতু ধন সম্পদের প্রকৃত মালিক আল্লাহ তাই কোনো ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার ধন সম্পদ কারা কতটুকু অংশ ভোগ করতে পারবে এ সম্পর্র্র্কিত আইন তৈরী করে দেবার অধিকারও একমাত্র আল্লাহরই। তাই আল্লাহ তা’আলা নিজেই
পবিত্র কুরআনে ইনসাফের ভিত্তিতে মৃত ব্যক্তির পরিত্যক্ত সম্পদের উত্তরাধিকারী মনোনীত করেছন এবং তাদের অংশের পরিমাণও নির্ধারণ করে দিয়েছেন। খোদায়ী আইনের উপর হস্তক্ষেপ করার অধিকার মানুষের নেই। সুতরাং মহান আল্লাহ কর্তৃক প্রদত্ত উত্তরাধিকার আইন তার পক্ষ থেকে দয়া ও ইহসান হিসেবে দ্বিধাহীন চিত্তে অবনত মস্তকে গ্রহণ করে নেয়াই মু’মিন হিসেবে আমাদের কর্তব্য। কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার হলেও এ কথা সত্য যে, বর্তমানে ইসলাম না বোঝার কারণে এক শ্রেণীর লোক বলেন, পিতার সম্পদ বন্টনের ক্ষেত্রে এক ভাইয়ের সমান দু’বোন; অর্থাৎ ভাই-বোনের দ্বিগুন সম্পদ লাভ করে থাকে। এতে নারীদের প্রতি ইসলাম অবিচার করেছে। কিন্তু তাদের চিন্তা করা উচিত। একজন মেয়ে পিতার কাছ থেকেই শুধু পায় না স্ত্রী হিসেবে স্বামীর কাছ থেকেও পেয়ে থাকে।
আল্লাহ তা’আলা বলেন, “আল্লাহ তোমাদের সন্তান সম্বন্ধে নির্দেশ দিচ্ছেন; এক ছেলের অংশ দু’মেয়ের সমান। তবে যদি শুধু মেয়েই থাকে এবং তারা দুইয়ের বেশি হয় তাহলে তাদের জন্য পরিত্যক্ত সম্পত্তির দু’তৃতীয়াংশ। মেয়ে একজন হলে তার জন্য অর্ধাংশ। মৃতের সন্তান থাকলে তার মা-বাবা প্রত্যেকের জন্য পরিত্যক্ত সম্পত্তির এক ষষ্ঠাংশ। মৃত ব্যক্তি নিঃসন্তান হলে এবং মা-বাবাই তার উত্তরাধিকারী হলে মা পাবে এক তৃতীয়াংশ। মৃতের ভাই-বোন থাকলে মা পাবে এক ষষ্ঠাংশ । এ সবই বন্টিত হবে মৃতের করা ওসিয়ত পূরণ ও ঋণ পরিশোধের পর।” [সূরা-নিসা:১১]
এর পরের আয়াতে আল্লাহ বলেছেন-“তোমাদের স্ত্রীদের পরিত্যক্ত সম্পত্তির অর্ধাংশ তোমদের জন্য, যদি তাদের কোনো সন্তান না থাকে। আর যদি তাদের সন্তান থাকে তবে তোমাদের জন্য পরিত্যক্ত সম্পত্তির এক চর্তুথাংশ। ওসিয়ত পূরণ ও ঋণ পরিশোধের পর। তোমাদের সন্তান না থাকলে তোমাদের পরিত্যক্ত সম্পত্তির এক চতুর্থাংশ স্ত্রীদের জন্য, আর যদি সন্তান থাকে তবে তাদের জন্য এক অষ্টমাংশ; তোমরা যা ওসিয়ত করবে তা আদায় ও ঋণ পরিশোধের পর।” [সূরা নিসা : ১২]
এছাড়া কন্যা সন্তান স্বামীর ঘরে না যাওয়া পর্যন্ত ভরণ-পোষণের দায়িত্ব সম্পূর্ণ পিতার উপর। আবার সে স্বামীর ঘরে গেলে তার ভরণ-পোষণের দায়িত্ব স্বামীর ওপর। আবার স্ত্রী স্বামীর ঘরে যা উপার্জন করবে সর্ম্পূণ মালিকানা তার। সে ইচ্ছা করলে স্বামীর ঘরে ব্যয় করতে পারে, আবার না করলে তাকে বাধ্য করা যাবে না। এটাই ইসলামের বিধান। বর্তমানে যারা নারী-পুরুষ সমঅধিকারের নামে বিভিন্ন সভা সেমিনারে বক্তৃতা দিয়ে চিৎকার করে মুখে ফেনা তুলছেন তাদের বুঝা উচিত- একজন পুরুষকে পিতা-মাতার অবর্তমানে বা বর্তমানে প্রয়োজনের ক্ষেত্রে পরিবারের দায়িত্বশীলের ভূমিকা পালন করতে হয়। যদি তার ছোট ভাই-বোন থাকে তাদের ভরণ-পোষণ, লেখা-পড়া, বিয়ে-শাদী বাবদ খরচ এবং বৃদ্ধ বাবা-মায়ের দায়িত্ব গ্রহণ, আত্মীয়- স্বজনের হক পালন আবার নিজে বিয়ে করে একজন নারী, সন্তান-সন্ততির দায়িত্ব গ্রহণসহ সকল আর্থিক ও সামাজিক দায়িত্ব পুরুষদেরকেই পালন করতে হয়। আর কন্যা সন্তান পিতৃ সম্পত্তিতে ভাইয়ের অর্ধেকসহ আরো স্বামীর সম্পদের অষ্টমাংশ পেয়ে থাকেন। আবার উত্তরাধিকার ব্যতীত স্বামীর কাছ থেকে পান মহরানা (যা অবশ্য আদায় যোগ্য)।
এবার দেখা যাক, অন্যান্য ধর্ম নারীদের কেমন উত্তরাধিকার প্রদান করেছে। ইসলাম ব্যতীত অধিকাংশ ধর্মে নারীদের উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। হিন্দু আইনে একজন বাবা এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে মারা গেলে এ ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ সম্পত্তি পাবে ছেলে, মেয়ে কোনো অংশই পাবে না। আর খ্রিস্টান ধর্মে ১৯২৫ সালের পূর্ব পর্যন্ত নারীরা উত্তরাধিকার লাভ করেনি। অথচ ইসলাম নারীদের আজ থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর পূর্বে নারীদের উত্তরাধিকার প্রদান করেছে। আবার বৌদ্ধ ধর্মে নারীরা পিতা-মাতার কোনো সম্পত্তির ভাগ পায় না। [নারী ও রাজনীতি-পৃ: ৩৫২-৩৫৫]
একটি উদাহরণের সহায়তা নিলে আরেকটু স্পষ্ট হয়ে উঠবে।
ধরা যাক, কোনো মৃত ব্যক্তি একটি ছেলে আরেকটি মেয়ে রেখে মারা যায় এবং তার পরিত্যক্ত টাকার পরিমাণ ৭৫,০০০ টাকা। ইসলামী শরীয়াহ অনুযায়ী মেয়ে ২৫,০০০ টাকা ও ছেলে ৫০,০০০ টাকা লাভ করে । উভয়ের বিয়ের সময় উপস্থিত হয়। ছেলে ৫০,০০০ টাকা নির্ধারিত মহরের বিনিময়ে বিবাহ সূত্রে আবদ্ধ হওয়ায় পিতা থেকে যা ওয়ারিশ পেয়েছে তা স্ত্রীকে মহর দেয়ায় তার কাছে আর কিছুই অবশিষ্ট থাকলো না; উপরন্তু বিয়ের পর স্ত্রীর ভরণ-পোষণ তথা পানাহার বাসস্থানের দায়-দায়িত্ব তার ওপরই ন্যস্ত।
পক্ষান্তরে মেয়ে ৫০,০০০ টাকা মোহরের বিনিময়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। সে পিতা থেকে ২৫,০০০ টাকা ওয়ারিশ, স্বামী থেকে মোহর বাবদ ৫০,০০০ টাকা সর্বমোট ৭৫,০০০ টাকার অধিকারিনী হয়। কিন্তু এ অর্থের মালিক হওয়া সত্ত্বেও সে ভরণ-পোষণের দায়িত্ব থেকে মুক্ত। কেননা, তার ভরণ-পোষণ, বাসস্থান, সকল প্রকার খরচের দায়-দায়িত্ব স্বামীর ওপর ন্যস্ত। সুতরাং এ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে যে, স্ত্রী পিতার সম্পদের সাথে স্বামীর সম্পদসহ মোহরানা পেয়ে অবশিষ্ট থাকলো এবং বৃদ্ধি পেলো। পক্ষান্তরে স্বামীর সম্পদ বিলুপ্ত হল এবং আরো দায়িত্ব মাথায় চাপলো। এ ক্ষেত্রে কে সৌভাগ্যবান- তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কারো মনে প্রশ্ন আসতে পারে ইসলামে নারীর এতো অধিকার দেয়ার পরও তাদের আজ দুরাবস্থা কেন? তাদের প্রশ্নের উত্তর খুবই সহজ। ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা সত্ত্বেও তা মান্য করা হচ্ছে না। ইসলামী আইন দ্বারা সমাজ পরিচালিত হচ্ছে না। যেমন- মোহর আজ মুখে-মুখেই নির্ধারণ করা হয় কিন্তু বাস্তবে দেয়ার প্রয়োজন কেউ মনে করে না। অথচ এটি একটি ইসলামের ফরজ বিধান। তা ছাড়া আজকাল স্বামী তার স্ত্রীর ভরণ-পোষণ প্রদান করছে না; কিন্তু যদি সমাজে ইসলামী আইনের বাস্তবায়ন থাকতো তাহলে এগুলো করার কারো সাহস হতো না।
©somewhere in net ltd.