![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের পক্ষে মামলার সাক্ষ্য প্রমাণের ওপর আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষ হয়েছে।
মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের অন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন করার সময় ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ ও তার পরিবারের সদস্যরা কান্নায় ভেঙে পড়েন।
এ সময় কাঠগড়ায় দাঁড়ানো মুজাহিদ ও তার স্ত্রী, ছেলে ও মেয়ে অঝোরে কাঁদতে থাকেন। ট্রাইব্যুনালে কিছু সময়ের জন্য নীরবতা বিরাজ করে।
মঙ্গলবার মুজাহিদের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সৈয়দ মিজানুর রহমান ও ব্যারিস্টার মুন্সি আহসান কবির যুক্তি উপস্থাপন করেন। দুই আইনজীবীর সাক্ষীর বিষয়ে যুক্তি উপস্থাপন করার পর মামলার কার্যত্রম আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মুলতবি করেন বিচারক।
বৃহস্পতিবার ট্রাইব্যুনালে ডিফেন্স টিমের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক আইনগত বিষয়ে যুক্তি উপস্থাপন করার মাধ্যমে এ মামলার কার্যক্রম শেষ হবে।
যুক্তি উপস্থাপন করে সৈয়দ মিজানুর রহমান বলেন, ‘আরেক সুখরঞ্জন বালী যাতে তৈরি না হয় সেজন্য আমরা ডিফেন্সের সাক্ষী আনিনি। আমাদের সাক্ষীদের কী ধরণের হুমকি-ধামকি দেওয়া হয়েছে তা এ ঘটনার মধ্য দিয়ে প্রকাশ হয়েছে।’
এ সময় বিচারক মো. শাহিনুর ইসলাম বলেন, ‘আপনাদের সাক্ষীরা যে চাপে রয়েছেন তা তো কোর্টে বলেননি।’
ওই সময় সৈয়দ মিজানুর রহমান বলেন, ‘কীভাবে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের চাপ দিয়ে সাক্ষ্য দিতে আনা হয়েছে তা আজ হয়তো প্রমাণ করা সম্ভব নয়। দুই বা তিন বছর পর এটা প্রমাণ হবে।’
এরপর বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, ‘আপনি যা বলছেন তা প্রাসঙ্গিক নয়, মূল্যহীন কথা। মূল্যহীন কথা বলবেন না।’ পরে মুজাহিদের আইনজীবী মিজানুর রহমান যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেন।
তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রপক্ষ এ মামলার সাতটি অভিযোগের কোনোটি ন্যূনতমভাবে প্রমাণ করতে পারেনি।’
যুক্তি উপস্থাপনের একপর্যায়ে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, ‘৪২ বছর পর এ বিচার (মানবতাবিরোধী অপরাধের) হচ্ছে। এটা সরকারের সিদ্ধান্ত। এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। যদি প্রমাণ হয় তো হবে। আর না হলে আসামি খালাস পাবেন।’
দুই আইনজীবী যুক্তি উপস্থাপন করেছেন পর্যায়ক্রমে।
যুক্তি উপস্থাপনকালে ব্যারিস্টার মুন্সি আহসান কবির বলেন, ‘এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ১৪ মাসে ২৮ ঘণ্টা ৫ মিনিট তদন্ত করেছেন। তিনি একাত্তর সালে যারা ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন তাদের কাছে যাননি। ফরিদপুরের তারাপদের পরিবারের ১৮ জন সদস্য মারা গেছেন তদন্ত কর্মকর্তা তার কাছে যাননি। আজকের আসামি ’১৯৭১ সালে হিরো হলে জিপ গাড়ি আর হাতে তলোয়ার নিয়ে ঘুরে বেড়ালে মানুষ তা দেখতে পেত। কিন্তু কেউ তা বলছে না। আমি বলব ঘটনা যেখানে ঘটেছে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সেখানে যাননি।’
ব্যারিস্টার মুন্সি বলেন, ‘মুজাহিদ ছাত্রজীবনে প্রথমে ছাত্র ইউনিয়ন করতেন, পরে বাবার অনুরোধে ১৯৬৫ সালে এসে ছাত্রসংঘে যোগ দেন। আর মুজাহিদ গত সরকারের সময় ৫ বছর একটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছেন।’
তিনি এ দরিদ্রতম দেশের একজন মন্ত্রী হওয়ার পরেও তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোনো অভিযোগ নেই। জীবনের সব ক্ষেত্রেই তিনি মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন। এমনকি সরকারের মন্ত্রী হওয়ার পরেও তিনি তার সেই মেধা ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে দেশ ও জনগণের সেবায় অসামান্য অবদান রেখেছেন। দরিদ্র এ দেশে যেখানে রাষ্ট্র ক্ষমতায় গিয়ে অধিকাংশ ব্যক্তিরাই অনিয়ম আর দুর্নীতি করে সম্পদের পাহাড় গড়ছেন সেখানে আজকের কাঠগড়ায় দাঁড়ানো এ মুজাহিদের বিরুদ্ধে বিরোধী পক্ষ থেকেও সামান্যতম অনিয়মন কিংবা দুর্নীতির কোনো অভিযোগ কেউ তুলতে পারেননি। আর এটা সম্ভব হয়েছে মুজাহিদের অসামান্য সততা ও ন্যায়পরায়ণতার কারণেই।’
মুজাহিদের সততা ও কর্মনিষ্ঠার কথা বলার সময় প্রথমে কাঠগড়ায় দাঁড়ানো মুজাহিদ কান্না শুরু করেন, ওই সময় কাঠগড়ার সামনে এজলাসে বসে থাকা মেয়ে, ছেলে ও স্ত্রী কান্নায় ভেঙে পড়েন। ঘড়ির কাঁটায় সময় তখন দুপুর ১২টা ৩৫ মিনিট।
পরে আবারও যুক্তি উপস্থাপন করেন আইনজীবী সৈয়দ মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ‘২৪ এপ্রিল দৈনিক সংগ্রামের একটি রিপোর্ট নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে রাষ্ট্রপক্ষ ওই রিপোর্টের কপি আদালতে আনেনি।’
তিনি বলেন, ‘আসামি ঘটনার সময় ছাত্র ছিলেন। ১৯৭০ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তিনি ’৭১ সালে ছাত্রসংঘের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। কিন্তু আল-বদর, আল-শামস, রাজাকার ও শান্তি বাহিনীর সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন এমন কোনো তথ্য বা ডকুমেন্ট রাষ্ট্রপক্ষ দেখাতে পারেনি।’
তিনি বলেন, ‘মুজাহিদের বিরুদ্ধে দালাল আইনে মামলা হয়নি। ’৭১ সালের কোনো ঘটনায় তাকে অভিযুক্ত করা হয়নি। এ মামলায় কয়েকজন সাক্ষী ঘুরে ফিরে কমন সাক্ষী। শাহরিয়ার কবীর ও জহির উদ্দিন জালাল একাধিক মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ মামলায় অনেক সাক্ষীকে ট্রাইব্যুনালে আনা হয়নি। কারণ তারা এ আদালতে সাক্ষ্য দিতে চাননি এ জন্য তাদের সাক্ষী করা হয়নি। মাওলানা আবুল কালাম আযাদের মামলায় সাক্ষী মুজাহিদের মামলারও সাক্ষী। কিন্তু তিনি মুজাহিদের মামলায় সাক্ষ্য দেননি। এসব সাক্ষীদের কেন আদালতে আনা হয়নি সে ব্যাখ্যাও দেওয়া হয়নি।’
©somewhere in net ltd.