নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফরহাদ উদ্দীন

ফরহাদ উদ্দীন › বিস্তারিত পোস্টঃ

শবে বরাতের তাৎপর্য

২৪ শে জুন, ২০১৩ সকাল ১০:১৪





মহান আল্লাহ রাব্বুল আল আমিন পবিত্র কোরআন মজিদের অনেক সূরায় ঘোষণা করেছেন, ‘আমি সর্বজ্ঞ, সর্বশ্রোতা এবং মহাপরাক্রমশালী। আবার বলেছেন, ‘আমি পরম দয়ালু এবং ক্ষমাশীল।’



আল্লাহ পাক প্রতিনিয়ত আমাদের গোনাহ মাফ করে দিচ্ছেন। তবে যে গোনাহার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা হয়েছে আল্লাহর দরবারে মানুষ হিসেবে আমরা বুঝতেও পারছি না মহান আল্লাহ সেই অপরাধ মার্জনা করে দিয়েছেন। কিন্তু যে অপরাধের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা হয়েছে বা হচ্ছে ক্ষমা প্রার্থনাকারী যদি পুনরায় সেই অপরাধ কর্মটি করেন; তাহলে তার পূর্বের ক্ষমা তো বাতিল করাই হবে এবং এজন্য সেই ক্ষমা প্রার্থনাকারী ব্যক্তির গোনাহের পাল্লা আরও বেশি ভারী হবে। আল্লাহ রাব্বুল আল আমিনের দরবারে সেই ব্যক্তির ক্ষমা প্রার্থনার দরজা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।



সুতরাং মার্জনা প্রার্থনাকারীকে এ ব্যাপারে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। আল্লাহ রাব্বুল আল আমিনের কাছে সব সময় তওবা করে ক্ষমা প্রার্থনা করা যায়। এর জন্য কোনো নির্দিষ্ট সময় নেই।



তবে, কোনো কোনো বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদদের মতে, মধ্য দুপুরে এবং মধ্য রাতে কোনো প্রার্থনা না করাই শ্রেয়।



শুরুতেই বলেছি, আল্লাহ পাকের কাছে যে কোনো সময় নিজ অপরাধের জন্য ক্ষমা চাওয়া যায়। তারপরও আল্লাহ পাক আলিমুল গায়েব কয়েকটি রাতকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। এই রাতসমূহকে বলা হয় মহিমান্বিত রাত বা রজনী। এই রাতে আল্লাহ রাব্বুল আল আমিন সর্বশেষ আসমানে নেমে আসেন।



বলা যায়, বান্দার খুব নিকটবর্তী হন আল্লাহ পাক এবং নিজেই আহ্বান করেন, ‘আছো কি কোনো গোনাহগার, কোনো মজলুম। যে তার গোনাহর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে, মজলুম নির্যাতনের হাত থেকে রেহাই পেতে আমার করুণা কামনা করবে। আমি আল্লাহ তার প্রার্থনা মঞ্জুর করবো।’

এই বরকতময় রাতের জন্য আমরা অপেক্ষায় থাকি। এই বরকতময় রাতের মধ্যে শবেবরাত এবং শবে ক্বদর ও পবিত্র দুই ঈদের আগের রাত।

আমরা বিশ্বাস করি, এই মহিমান্বিত রাত সম্পর্কে সবাই কমবেশি জানেন।



শাবান মাসের ১৫ তারিখ শবেবরাত। চন্দ্র মাসের হিসাব অনুসারে শবেবরাত আমাদের খুব নিকটবর্তী। আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে এই রাতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছ থেকে ক্ষমা পাওয়ার জন্য।



এই রাতে আগামী এক বছরের জন্য আমাদের ভাগ্যলিপি নির্ধারণ করা হবে। এই সময়ের মধ্যে পৃথিবীতে আল্লাহ রাব্বুল আল আমিন যত আত্মা পাঠাবেন অর্থাৎ নবজাতকের জন্ম হবে তারও ভাগ্য নির্ধারণ করে দেবেন।



এবার আসুন আমরা শবেবরাত মানেটা জেনে নেই । ‘শবে’ পারস্য অঞ্চলের প্রচলিত শব্দ। অর্থাৎ ফার্সি শব্দ। বাংলায় এই শব্দের অর্থ হলো রাত। কোরআন মজিদে শবে শব্দটি নেই। লাইলাতুল ক্বদর আছে। আর বরাত আরবী শব্দের অর্থ হলো মুক্তি।



ইসলামী পরিভাষায় এর অর্থ হলো জাহান্নাম থেকে মুক্তি। বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ, কোরআনে পাকের তাফসিরকারী বিজ্ঞজনেরা দু’ভাবেই এর ব্যাখা করেছেন। একটি শব্দের নানা অর্থ হতে পারে।



বাক্যে ব্যবহৃত দিক বিবেচনা করে অর্থ করলে বিভ্রান্তি দূর হয়ে যায়। একটু অপ্রাসঙ্গিক হলেও এটুকু বলেই শবে বা লাইলাতুল বরাত নিয়ে আলোচনা করবো।



ইংরেজি উড অর্থ কাঠ। এখন যদি বলা হয় ‘ক্যাট লিভস ইন দ্য উড।’ এর মানে কী করবেন? বিড়াল কাঠে বাস করে। তা নয়।



এই বাক্যে উড শব্দের প্রায়োগিক দিক বিবেচনা করে এর অর্থ হবে বিড়াল বনে বাস করে। লাইলাতুল বরাতকে মুক্তি এবং সৌভাগ্য রজনী বলা হয়েছে।



শবে শব্দটি কোরআন মজিদে নেই। এটা ঠিক। এর কারণ হলো কোরআন মজিদ নাযিল হয়েছে আরবী ভাষায়। পারস্য বা অন্য কোনো ভাষায় নয়। তাই শবে শব্দটি থাকবে না এটাই স্বাভাবিক।



কোরআন মজিদে ‘শবে’ শব্দ নেই এদিক ধরে মুসলমানদের মধ্যে ফেৎনা, ফ্যাসাদ, বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে এক শ্রেণীর লোক আছেন।



যারা মনে করেন যেহেতু শবে শব্দ নেই। তাই শবেবরাত পালন না করলেও চলে। যারা এ কথা বলেন, খুব স্পষ্ট করে বলি, ‘তারা আল্লাহ এবং রাসূলের সাথে শুধু বেয়াদবি করেন না, তারা মুসলমানদের মধ্যে ফেৎনা-ফ্যাসাদ এবং বিভ্রান্তি তৈরি করতে চান।



একজন প্রকৃত মুসলমানের উচিত এদের থেকে দূরে থাকা। এই শ্রেণীর লোকজনকে ইসলাম বিদ্বেষীরা ইসলাম শান্তি ও সাম্যের ধর্ম এই জায়গায় কীভাবে ফ্যাসাদ তৈরি করা যায় সে কাজে এদের সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন।



আবারও জোর দিয়ে বলি, এদের থেকে দূরে থাকুন। আমরা নামাজ আদায় করি, রোজা পালন করি; কোরআন পাকে নামাজ-রোজা শব্দ নেই। কিন্তু আছে। সালাত, রামাদান মোবারক। সালাত অর্থ নামাজ, রামাদান অর্থ রোজা। এখন কোরআনে পাকে নামাজ শব্দ নেই, রোজা নেই তাই বলে কী একজন মুসলামান নামাজ পড়বেন না। তা কি হয়। বিভিন্ন দেশে শবেবরাত বিভিন্ন নামে পালিত হয়।



আমাদের এই উপমহাদেশে আমরা লাইলাতুল বরাত এবং শবেবরাত নামে এই সৌভাগ্য মহিমান্বিত রজনী পালন করে আসছি। শবেবরাত নিয়ে হাদিসে অনেক বর্ণনা পাওয়া যায়। হাদিস রাসূল পাকের বাণী। যা আলিমুল গায়েবের কাছ থেকে আল্লাহর হাবিব আখেরি নবী হযরত মোহাম্মাদ (স.) জ্ঞাত হয়ে বর্ণনা করেছেন।



শবেবরাত নিয়ে অনেক হাদিস আছে। এর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য কয়েকটি হাদিস নিম্নে উদ্ধৃত করছি- ‘হযরত আলী বিন আবে তালীব (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূল (সা.) এরশাদ করেছেন, যখন শাবান মাসের অর্ধেক রজনী আসে (শবেবরাত) তখন তোমরা রাতে নামায পড়, আর দিনে রোজা রাখ। নিশ্চয়ই আল্লাহ এ রাতে সূর্যাস্তের সাথে সাথে পৃথিবীর আসমানে এসে বলেন, কোনো গোনাহ ক্ষমাপ্রার্থী আছে কি ‘আমার’কাছে? ‘আমি’তাকে ক্ষমা করে দিব। কোনো রিজিক প্রার্থী আছে কি? ‘আমি’তাকে রিজিক দিব। কোনো বিপদগ্রস্ত মুক্তি পেতে চায় কি? ‘আমি’তার বিপদ মুক্ত করে দিব। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পরম দয়ালু, ক্ষমাশীল নিজে থেকে এই ঘোষণা দিতে থাকেন ফযর পর্যন্ত।’



হযরত আয়শা (রা.) থেকে বর্ণিত এক রাতে রাসূল (সা.)-কে না পেয়ে তিনি খুঁজতে বের হলেন। তিনি দেখলেন রাসূল (স.) মদীনার জান্নাতুল বাকী কবরস্থানে অবস্থান করছেন। রাসূল (স.) আয়শা (রা.)-কে বললেন, যখন শাবান মাসের ১৫ রাত আসে অর্থাৎ শবে বরাত হয়, তখন আল্লাহ পাক এ রাতে প্রথম আসমানে নেমে আসেন তারপর বনু কালব গোত্রে বকরীর পশমের চেয়ে বেশি সংখ্যক বান্দাদের ক্ষমা করে দেন। (সুনানে তিরমিযী )



প্রখ্যাত তাবেঈ হযরত ইকরামা (রহ.) বলেন, সূরা আদ দুখানের ৩ নম্বর আয়াত শরিফ হচ্ছে ১৫ শাবানের রাত তথা শবেবরাতের রাত। এ রাতে সারা বছরের কাজ-কর্মের ফায়সালা করা হয় এবং কতজন জীবিত থাকবে ও কতজন মারা যাবে তারও ফায়সালা করা হয়। অতঃপর এ ফায়সালা থেকে কোনো কিছু বেশি করা হয় না এবং কোনো কমতিও করা হয় না। অর্থাৎ কোনো প্রকারের পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করা হয় না।



হযরত ইমাম বাগবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেছেন, হযরত মুহাম্মদ ইবনে মাইসারা ইবনে আখফাশ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে। তিনি বলেন, হাবীবুল্লাহ হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, শাবান মাস থেকে পরবর্তী শাবান মাস পর্যন্ত মৃত্যুর ফায়সালা করে দেয়া হয়। এমনকি লোকেরা যে বিবাহ করবে, সেই বছর তার থেকে কত জন সন্তান জন্মগ্রহণ করবে তার তালিকা এবং তার মৃত্যুর তালিকাও প্রস্তুত করা হয় ওই বছরের অর্ধ শাবানের রাতে অর্থাৎ শবেবরাতে।



পবিত্র কোরআন মজিদের ২৬তম পারায় সূরা ‘দুখান’-এর ৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেন, “ইহা আমি অবতীর্ণ করেছি এক মোবারক রজনীতে, অবশ্যই আমি সতর্ককারী। এই রজনীতে ‘আমার’আদেশেক্রমে প্রত্যেক গুরত্বপূর্ণ বিষয় স্থিরকৃত হয়।’



মুফাসসিরে কোরআন ও হাদিস বিশারদগণ এই আয়াত শরীফকে বরকতময় রাত বলেছেন। এই বরকতময় রাত বলতে শবেবরাত ও শবে ক্বদর উভয় রাতকেই গ্রহণ করেছেন।



শবেবরাতের তাৎপর্য



রাসূল (সা.) হাদিসে এবং প্রখ্যাত আলেম-ওলামা ও তাফসীরকারীগণ শবেবরাতের বহু তাৎপর্য এবং এই রাতের মহিমার কথা উল্লেখ করেছেন।



এই রাত সম্পর্কে হযরত মোহাম্মদ (সা.) এরশাদ করেছেন, এই রাতে ইবাদতকারীদের গুনাহরাশি আল্লাহ তা’আলা ক্ষমা করে দেন। তবে কেবলমাত্র তারা ক্ষমার অযোগ্য যারা আল্লাহর সাথে শিরিককারী, সুদখোর, গণক, যাদুকর, কৃপণ, শরাবী (মদ্যপানকারী), জিনাকারী এবং পিতা-মাতাকে কষ্টদানকারী।



অপর এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘জিব্রাইল (আ.) আমাকে বলেছেন, আপনি আপনার উম্মতদের জানিয়ে দিন, তারা যেন শবেবরাত রাতকে জীবিত রাখে।’



অর্থাৎ তারা যেন ইবাদতের মাঝে কাটিয়ে দেয়।



রাসূল (সা.) আরেকটি হাদিসে বলেছেন, ‘এই রাতে আসমান থেকে ৭০ হাজার ফেরেশতা জমিনে এসে ঘুরে ফিরে ইবাদতকারীগণকে পরিদর্শন করেন এবং তাদের ইবাদতসমূহ দেখেন।’



অন্য হাদিসে এসছে, ‘যে ব্যক্তি শাবান মাসের ১৫ তারিখ রাতে ইবাদত করবে এবং দিনে রোজা রাখবে, দোজখের আগুন তাকে স্পর্শ করতে পারবে না।’



পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মুসলমানরা শবেবরাত পালন করেন। এক এক দেশে এই মহিমান্বিত রজনীর নাম আলাদা আলাদা।



আমাদের দেশে এই রাত ‘শবেবরাত’এবং লাইলাতুল বরাত নামে পরিচিত।



ইরান ও আফগানিস্তানে শবে বরাত নিসফে শাবান, মালয় ভাষাভাষীর কাছে নিসফু শাবান এবং আরবী ভাষাভাষীর কাছে এই বরকতময় রজনী নিসফ শাবান নামে পরিচিত। কোনো কোনো অঞ্চলে লাইলাতুল দোয়াও বলা হয়।



তাই আসুন, এই বরকতময় রজনীতে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে আমরা আমাদের গোনাহ মাফের সর্বোচ্চ সুযোগ কাজে লাগাই।



এই রাতে অনেকে আতশবাজি করেন। এটা অনুচিত কাজ। ইসলামের দৃষ্টিতে এটি বেদআদ কাজ। এই রাতে ইবাদত-বন্দেগিতে নিজেকে নিয়োজিত করুন। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে সব মানুষের কল্যাণের জন্য প্রার্থনা করছি। সেই সাথে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমার/আপনাদের শত্রুদের ক্ষমা করে দিয়ে তাদের সুপথে চালিত করুন। আমিন।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.