নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দুঃখের কবিতাই শ্রেষ্ঠ কবিতা। ভালোবাসা হলো দুঃখ, এক ঘরে কবিতা ও নারী।
১
কোনো এক সময়ে আমার যে-কোনো লেখার প্রথম পাঠিকা ছিল আমার হবু প্রেমিকা। গল্পের নায়িকা কলাপাতারং শাড়ি পরলে হবু প্রেমিকাকে দেখতাম ঐ রঙের শাড়ি পরছে। কবিতার মেয়ে যখন গালে হাত দিয়ে মোহনীয় ভঙ্গিতে নীলাকাশ দেখতো, আমি দেখতাম আমার হবু প্রেমিকা আমার পড়ার টেবিলের জানালা বরাবর ছাদে গিয়ে প্লাস্টিকের একটা ছোটো চৌকিতে বসে আকাশ দেখছে; আমি তাকে দেখছি কি না তা সে বার বার আড়চোখে পরখ করতো; কিন্তু আমি বিটলেমি করতাম, ওর দিকে তাকাতাম না। একদিন এসে আমার খাতাপত্র ছিঁড়ে ফেললো, আর কবিতার ডায়েরিটা জানালা দিয়ে নীচে ফেলে দিল। আমি হেসে দিয়ে বললাম, ‘আজকাল কেউ ডায়েরিতে কবিতা পোষে? ওগুলো তো আমার ল্যাপটপে।’ বলে একটা মুচকি হাসি দিতেই বললো, ‘আমি তোর ল্যাপটপ ভেঙে গুঁড়ো করবো, বদমাইশ কোথাকার।’
হবু প্রেমিকা একদিন কনফার্ম্ড প্রেমিকা হলো। কিন্তু কবিতার নারী হয়ে উঠলো তার চক্ষুশূল। বলে, ‘আমি কি তোর কুঁড়েঘরে এসে চুল এলিয়ে বসি?’ আমি বলি, ‘ওটা ফ্যান্টাসি।’ ‘তোর ফ্যান্টাসির নিকুচি করি।’ সে রাগে গজগজ করতে করতে বলে, ‘আর কোনো প্রেমের কবিতা লিখবি না বলে দিলাম। কেন, দেশ নিয়া, দেশের মানুষ নিয়া লিখতে পারিস না?’ বছর তিনেক প্রেম করার পর প্রেমিকার বিয়ে হয়ে গেলো। আমার অবয়ব শ্মশ্রুমণ্ডিত হতে থাকলো ধীরে ধীরে; আমি কবিতা লিখতে থাকি। আমার সত্যিকার প্রেমিকা যেভাবে বিগতা হয়েছে, বিগতা হবার পর সে যা-যা যে-যেভাবে করে, কবিতায় তাই উঠে আসে আমার অজান্তে। কিন্তু এ কবিতা আমি ছাড়া আর কেউ নেই পড়বার।
আমার দ্বিতীয় বইটাও একটা উপন্যাস ছিল— ‘অন্তরবাসিনী’। আমাদের স্কুলজীবনের পটভূমিকায় লিখা হয়েছে গল্প। আমি তখন বিচ্ছেদকাতর, বেদনাক্রান্ত ব্যাচেলর। কোনোরকমে টিউশনি করে পেট চালাই, ফাঁকে ফাঁকে লিখি। কিন্তু পত্রিকাঅলারা লেখা ছাপেন না। তবে আমি উদ্যম হারাই না, কারণ, আমি আমার দুজন ভক্তপাঠক পেয়ে গেছি— একজন আমার স্কুলজীবনের ক্লাসমেট লোকমান হোসেন, আরেকজন হলো ওর অর্ধাঙ্গিনী। আমি দু-দিন পর পর ১৫-২০ পৃষ্ঠা লিখে ঝকঝকে ছাপায় প্রিন্ট করে সন্ধ্যায় ওর বাসায় চলে যাই। লোকমান ওর প্রাইভেটপড়ুয়া একদঙ্গল ছাত্রছাত্রী ফেলে আমার পাশে এসে বসে। ‘নে, পড় পড়। পরবর্তী আকর্ষণ কী কী আছে শোনা দেখি।’ হাসতে হাসতে লোকমান এ কথা বলতো। আমি পড়তাম আর ওরা স্বামী-স্ত্রী তন্ময় হয়ে শুনতো। সবাই নিজের কথাই শুনতে চায় অন্যের মুখে। ভাবী কান খাড়া করে থাকতেন— পারুল বা রীনার সাথে লোকমানের কোনো সম্পর্ক সংঘটিত হয়েছিল কিনা তা জানার জন্য। গল্প দ্রুতবেগে এগিয়ে চলে— ওরা দুজন গল্পের ভেতরে ডুবে যায়। কিন্তু এ গল্প লোকমানকে নিয়ে নয়, এ হলো স্বয়ং সোনাবীজের রগরগে প্রণয়কাহিনি। স্কুলজীবনে সায়ন্তনির সাথে আমার প্রেম তীব্র হয়েছিল। কাহিনির পরতে পরতে সেই প্রেমের মারাত্মক রসঘন বর্ণনা।
এইসব পাণ্ডুলিপি লোকমানের ঘরে ফেলে যাই বরাবরই। উদ্দেশ্য, ওর ছাত্রছাত্রীরা এগুলো পড়ে কী বলে তা জানা। এ ছাত্রছাত্রীদের কোনো লেখকের সাথে কোনোদিন সামনাসামনি কথা বলার সুযোগ হয় নি। আমাকে ওরা অনেক বড়ো একজন লেখক মনে করে। এটা আমাকে নির্মল আনন্দ দেয়, এবং অহংকারী করে তোলে। আমি কোনো তারকা লেখক নই, সেটা আমার চেয়ে আর কেউ ভালো জানেন না। কিন্তু ওদের কাছ থেকে আমি যা পাচ্ছি, তা থেকে আমার যে আনন্দ হয় তা একজন তারকা লেখকের প্রাপ্তির চেয়ে কোনো অংশেই কম নয়।
একদিন বাসায় এসে বসতেই ছাত্রছাত্রীরা আমাকে ঘিরে ধরলো। ভাবী এসে মিটিমিটি হাসছেন। ‘ব্যাপার কী?’ জিজ্ঞাসা করি। ওরা বলে, ‘আপনাদের স্কুল লাইফটা খুব ইভেন্টফুল ছিল।’ ‘কে বলেছে?’ ‘এই তো, এই কাগজে পড়লাম।’ বলেই ওরা আমার ‘অন্তরবাসিনী’র পাণ্ডুলিপি বের করে ধরে। ভাবী বলেন, ‘আপনি নাকি খুব ফাজিল আছিলেন স্কুলে?’ ‘ধূর, কী বলছেন এসব?’ ছাত্ররা সমস্বরে বলে ওঠে, ‘আমরা সব জেনেছি। সব জেনেছি।’ ‘আরেন্নাহ, ওসব তো গল্প। বানিয়ে বানিয়ে লেখা।’ ওদেরকে কিছুতেই বোঝানো গেলো না যে, এগুলো সত্যি নয়, বানানো গল্প।
লোকমান ওদেরকে ধমক দিয়ে পড়ার ঘরে চলে যেতে বললো। আমি বলি, ‘এসব কি তুই বলেছিস যে গল্পের সব কিছুই সত্য কাহিনি?’ ‘বলার কী আছে, সত্যই তো!’ আমি হেসে বলি, ‘মনে করিস না যে সবই বানিয়ে বলছি, এর অন্তত ১০ ভাগ ঘটনা সত্য।’ লোকমানের কণ্ঠস্বর হঠাৎ একটু চড়ে যায়। বলে, ‘তুই কি আমাগো আবাল পাইছস? সায়ন্তনিরে কতবার জঙ্গলে নিয়া গেছস তা কি আমরা জানি না ভাবতেছস?’ আমি ভাবীর সামনে ওর কথায় চরম বিব্রত হই। ওর মুখ খুলে গেলে সেই মুখে আর কিছুই আটকায় না— ভাষার শ্রী তখন আর দেখে কে! বললাম, ‘দোস্ত প্লিজ প্লিজ, মাইন্ড ইয়োর ল্যাঙ্গুয়েজ।’ ‘আরে ফাক ইয়োর ল্যাঙ্গুয়েজ। তুই বনেজঙ্গলে নিয়া মাইয়াগো বাঙ্গি ফাডাবি, আর আমরা কইবার পারুম না, এইডা কুন বালের কথা কইতেছস?’ ভাবী উঠে চলে গেছেন। সুশিক্ষিতা, ভদ্র মহিলা। আমি লোকমানকে বলি, ‘স্টুপিডের মতো কথা বলছিস কেন?’ ও ধমকে ওঠে, ‘শাটাপ। সত্য না হইলে এইসব লিখলি ক্যামনে?’ আমি বলি, ‘দোস্ত, শান্ত হ, শান্ত হ। এটা একটা গল্প। গল্পে সুড়সুড়ি না থাকলে কেউ খাবে? তুই-ই বল না? এ গল্পের এক ছটাকও সত্য না, সব বানানো। তুই আমারে চিনস না?’ ‘রাখ তর বালের চিনাচিনি। তরে আমি অনেক আগে থেকেই চিন্যা ফালাইছি।’ সরকারি হাইস্কুলের ইংলিশ টিচার মোঃ লোকমান হোসেন রাগে কাঁপতে কাঁপতে ছাত্রছাত্রীদের রুমে চলে যায়। আমি ভাবীর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসি।
হাইস্কুলে মেয়েদের সাথে পড়তে থাকা অবস্থায় ক্লাস সিক্সেই আমাদের পোলাপানেরা ইঁচড়েপাকা হয়ে গিয়েছিল। লোকমান আমাদের মধ্যে সবচেয়ে সেয়ানা ছিল, যেমন ছিল সে সবচেয়ে সুদর্শন বালক। ছেলেদের মধ্যে ক্লাসের ফার্স্ট বয় লোকমান, মেয়েদের মধ্যে সায়ন্তনি; সায়ন্তনির মেধার চেয়ে রূপের ঝাঁঝ সাতগুণ বেশি ছিল। লোকমান কেমন করে যেন সায়ন্তনির প্রেমে পড়ে গেলো। আমি আজকের মতোই তখনো স্কুলের নিরীহতম ছাত্র ছিলাম, আর ছিলাম ক্লাসের সেকেন্ড বয়। নবম শ্রেণিতে উঠবার পর জানতে পেলাম লোকমান ক্রমাগত ‘ছ্যাঁকা’ খেতে খেতে তামা হয়ে গেছে। এটা আবার আমি জানলাম কীভাবে! স্বয়ং সায়ন্তনি একদিন আমার কবিখ্যাতির কথা জানতে পেরে কবিতার খাতাটি দেখতে চাইলে আমি যখন কৃত্রিম অথচ আপাত-সহজাত রাগ প্রকাশের মাধ্যমে কোনো কবিতাই অবৈধ কাউকে দেখানো সম্ভব নয় জানিয়ে আমার ব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা করছিলাম, তখন আচমকা পুরো ক্লাসের সামনে আমার গালে একটা মস্ত কামড় বসিয়ে সায়ন্তনি বলেছিল, ‘তর কবিতার খ্যাতা পুড়ি।’ তারপর পুরো একবছর সে আমার সাথে কথা বলে নি। ক্লাসের দুষ্টের শিরোমণি ছেলেগুলো আমাকে ‘কাপুরুষ’ বলে খেপাতো, যেহেতু আমি সায়ন্তনির শরীরের কোনো মোক্ষম স্থানে অনুরূপ কোনো দংশন বা মর্দন করি নি। ও, আরেকটা কথা, আমি অষ্টম শ্রেণিতে বার্ষিক পরীক্ষায় ফার্স্ট হলাম, লোকমান প্রেমে ছ্যাঁকা খেয়ে পরীক্ষায় স্মরণকালের ভয়াবহতম খারাপ নম্বর পেয়ে অনেক পেছনে চলে গেলে ওর জন্য আমার প্রচুর মায়া হচ্ছিল। এরপর প্রেমের অমোঘ বিধানমতে যা হবার তাই হলো— আমার আর সায়ন্তনির মধ্যে এক অপ্রতিরোধ্য প্রেমের জন্ম হলো। আমরা হাবুডুবু খেতে খেতে অকূল সমুদ্রে ভাসতে লাগলাম। প্রত্যাখ্যাত হয়ে লোকমান কী যে যন্ত্রণার মধ্যে ছিল, যারা ভুক্তভোগী কেবল তারাই জানেন।
‘অন্তরবাসিনী’র রসাত্মক প্রেমকাহিনি শুনতে শুনতে লোকমান পুড়ে যাচ্ছিল। সায়ন্তনির কথা তুলতেই যেন আগুনে কেরোসিন ঢালার মতো ঘটনা ঘটে গেলো। নিজের আরাধ্য প্রেমিকা ধরা না দিয়ে অন্যের কবজাগত হলে সেই কাহিনি শুনতে কারই বা সহ্য হয়? লোকমানের হৃদয় তো আর পাথরে গড়া নয়।
ঐদিন রাত একটার সময় মোবাইলে লোকমানের কল পাই। যেন কিছুই হয় নি, এমন ভাবে বলে, ‘কী রে, তুই কই থাকস? বাসায় থেইকা চইলা গেলি ক্যান?’ লোকমান আমার ঘনিষ্ঠতম বন্ধু। ও আমার সাথে রাগ করে এমনটা আমি কখনো ভাবি না। কিশোর বয়সের সেই উদ্দাম প্রেম কৈশোরেই নিভে পানি হয়ে গিয়েছিল; তা মনে রেখে রূপবতী স্ত্রীর সামনে এভাবে বিস্ফোরিত হওয়া মোটেই স্বাভাবিক ঘটনা ছিল না। কিন্তু আমি ওর বাসা থেকে চলে আসার পর হয় ভাবীর ভর্ৎসনায়, অথবা নিজের বিবেকের তাড়নায় লোকমান নিজের ভুল বুঝতে সক্ষম হয় এবং আমার সাথে স্বাভাবিক আচরণ করতে থাকে।
‘তর নভেল শেষ করবি কবে?’ লোকমান জানতে চায়।
‘আরো কয়েকদিন লাগবে, কেবল তো মাঝপথে।’ আমি বলি।
‘জলদি শেষ কর। পুরা কাহিনি পড়ার জন্য ছটফট করতেছি।’
আচ্ছা, এই যে আমি প্রায়ই বলে থাকি আমি খুব নিরীহ, গোবেচারা টাইপের মানুষ, কথাটা মনে হয় ঠিক না। মাঝে মাঝে আমার ত্যাঁদড়ামি দেখে আমি নিজেই অবাক হয়ে যাই— এ কাজ কি সত্যিই আমি করেছি, নাকি আমার মগজে ঢুকে পড়া জনৈক বাঁদরের কাজ এগুলো?
তিনদিনের মাথায় বড়ো একটা অধ্যায় সম্পূর্ণ করে খুশিতে নাচতে নাচতে লোকমানের বাসায় উপস্থিত হলাম। ভাবী এসে একটা ভুবনমোহিনী হাসি ছড়িয়ে সামনে দাঁড়ালে মনে হলো, আমি নেই। লোকমান স্কুল থেকে ফিরে নি, ওর দুই বাচ্চার ছুটি হবে মনে হয় আরো অনেক পরে। নির্জন দুপুরে একলা ঘরে এই প্রচণ্ড রূপবতী নারী যখন হাসিমুখে আমার থেকে মাত্র ১২ আঙুল দূরে খাটিয়ার উপর পা দুলিয়ে বসে পড়লেন, মনে হলো আমি নেই— না, আমার তখন সর্বাঙ্গ কাঁপছে— ভাবীর মনের গোপন ইচ্ছেটা মনে হয় আমি টের পেয়েছি। ১২ বছরের ক্ষুধার্ত বাঘ সামনে শিকার পেলে শক্তিতে দুর্দমনীয় হয়ে পড়ে। আমি আলগোছে একটা হাত উঠিয়ে ভাবীর শরীরে স্থাপন করবো, এমন সময়ে ভাবী নিজেই একটু এগিয়ে এসে আমার কপালে হাত রাখলেন। ‘এ কী, শরীরে এত জ্বর কেন?’ বলে বুকের বোতাম খুলে হাত ঢুকিয়ে শরীরের তাপমাত্রা মাপলেন। ভাবী জানেন না আমার বুকে তখন কী ঝড়। আমি মোলায়েম ভাবে বাম হাত বাড়িয়ে তার কোমর জড়িয়ে ধরলে ভাবী বলেন, ‘কী বাচ্চা পোলাপানরে বাবা, এত অল্পতেই ভাইঙ্গা পড়ন লাগে? হাঁইটা আসলেন কেমনে? হ্যাঁ, হ্যাঁ, শক্ত কইরা ধইরা দাঁড়ান। খাটের এই কিনারটায় শুয়ে পড়েন। আমি বালতি নিয়ে আসছি মাথা ধুয়াইয়া দিতে।’ আমি চিৎ হয়ে সটান শুয়ে আছি। ভাবী আমার মাথায় পানি ঢেলে দিচ্ছেন। শান্ত শরীরে তখন কোনো উত্তাপ বা উত্তেজনা নেই; চোখদুটো যেন অবশ হয়ে আসছে। আমি যখন সাত-আট বছরের বালক, জ্বর হলে আমার মা এভাবে খাটিয়ায় শুইয়ে আমার মাথায় পানি ঢালতো। আমি অনুভব করলাম, ৩০ বছর আগে মৃত্যুবরণকারিণী আমার মা অদৃশ্য থেকে নেমে এসে আমার মাথায় পানি ঢালছে। ‘হইছে ভাবী, আর না।’ বলেই আমি শোয়া থেকে উঠে পড়ে মাথা মুছে ভাবীকে বলি, ভাবী, আমার মাথায় একটু হাত রাখুন তো। ‘কী হইছে’ বলে ভাবী তার ডান হাতটা আমার মাথায় রেখে আলতো করে চুলে বিলি কাটেন, আমি চোখ বন্ধ করে তার পেটের মধ্যে মাথা লুকোই— দ্রুত ছুটে চলছে এক টগবগে ঘোড়া— দীর্ঘ কদম ফেলে— অনেক দূরের পথ পেরিয়ে নির্জন এক বৃক্ষের তলায় আমার মা জননী মাথা নীচু করে বসে আছে। আমি তিন বছরের শিশুর মতো লাফ দিয়ে মায়ের কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ি।
ঘুম থেকে উঠে দেখি আমার সত্যিই জ্বর উঠেছে। ভাবী আর লোকমান আমার পাশে বসে কথা বলছে। আমি উঠে বসতেই দুজনে আমার দিকে ফিরে তাকায়। ‘একটা প্যারাসিটামল খাবি?’ লোকমান এ কথা বলতে বলতে হাত দিয়ে আমার গায়ের তাপমাত্রা দেখে। আমি এক লাফে খাট থেকে নেমে হড়হড় করে দরজা খুলে নীচে নেমে এসে একটা রিকশা নিয়ে সোজা বাসস্ট্যান্ডে চলে যাই। পেছন থেকে বহুদূর অব্দি শুনতে পেলাম লোকমান ডাকছে, ‘আরে ঐ ছ্যামড়া, শোন শোন, এই জ্বরের মধ্যে কেওই এইভাবে যায়?.....’
২৭ অগস্ট ২০১৩
৩০ শে এপ্রিল, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:২২
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ব্লগার নাম্বার ওয়ান রাজীব নুর ভাইয়ের জন্য শুভ কামনা থাকলো।
২| ৩০ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ১০:২১
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
ব্লগার রাজিব নুর খান ব্লক্ড।
তিনি এখনো প্রচুর পোস্ট দিচ্ছেন।
কিন্তু আমি ছাড়া আর কেউ সেখানে মন্তব্য করছেন না।
আফসোস!
আমি কয়েকটাতে মন্তব্য করেছি।
০১ লা মে, ২০২১ দুপুর ১:৫৩
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: আশা করি তিনি খুব উৎসাহিত হয়েছেন।
৩| ৩০ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ১০:৪৪
দিশেহারা রাজপুত্র বলেছেন: শেষের দিকে কেমন জানি লাগল। আমার পড়ার গাফেলতি মেবি। আপনার থ্রোয়িংয়ে সহজাত একটা রসাত্মক ব্যাপার আছে। মজা নিয়ে পড়ছি লাস্ট হাফের আগ অব্দি।
০১ লা মে, ২০২১ দুপুর ১:৫৮
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: আপনার পড়ায় কোনো গাফেলতি নাই, সবই ঠিক আছে। শেষের দিকে একটা ইল্যুশন বা ঘোরের মতো আবহ তৈরি করার চেষ্টা করেছি, এই আর কী।
অনেকদিন পর ব্লগে দেখছি আপনাকে, ভুল করে নাকি?
৪| ০১ লা মে, ২০২১ রাত ১২:২০
মা.হাসান বলেছেন: গল্পে সুড়সুড়ি না থাকলে কেউ খাবে?
এই সত্য বুঝতে পেরে দেশে হাজার হাজার লেখক-প্রকাশক গড়ে উঠলো। আফসোস , সেই হারে পাঠক তৈরি হলো না।
প্লাস্টিকের চেয়ার দেখেছি, প্লাস্টিকের টেবিল দেখেছি, তবে প্লাস্টিকের চৌকি দেখিনি। আপনি যখন বলছেন তখন হয় নিশ্চয়ই। বিলাতে তো শুনি বাঙ্গি ফেটে গেলে প্লাস্টিক দিয়ে সার্জারি করে রিপেয়ার করার ব্যবস্থাও আছে।
বহুদিন পর সৈয়দ শামসুল হকের কথা মনে পড়ে গেলো।
০১ লা মে, ২০২১ দুপুর ২:২১
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: প্লাস্টিকের চেয়ার দেখেছি, প্লাস্টিকের টেবিল দেখেছি, তবে প্লাস্টিকের চৌকি দেখিনি। খুব অবাক হয়েছি আপনার এই কিন অবজারভেশন দেখে। এটা পোস্ট করার আগেও ভাবছিলাম শব্দটা পালটে দিব কিনা। কাঠের চৌকি দেখেছেন নিশ্চয়ই, যা গ্রামদেশে পিঁড়ি, চেয়ার- এ দুটোর মাঝখানে চৌকি ছিল বহুল ব্যবহৃত অভিজাত ঘরানার বসার ফার্নিচার। চৌকির চাইতে একটু উঁচু পিঁড়িটার নাম স্টুল বা টুল। প্লাস্টিকের টুল/স্টুলকে বোঝানোর ব্জন্যই চৌকি ব্যবহার করেছি বাট, এটা চৌকিও বলা হয়। প্লাস্টিক চৌকি লিখে গুগলে সার্চ দিন
বহুদিন পর সৈয়দ শামসুল হকের কথা মনে পড়ে গেলো। গল্পটা যখন লেখা হয়, তখন অবশ্য গুরু জীবিতই ছিলেন। আমাদের মনে রাখতে হবে, মহাজ্ঞানী মহাজনেরা যে পথে গমন করে স্মরণীয় হয়েছেন, স্বীয় কীর্তি ধ্বজা ধরে আমাদের সেই পথে এগিয়ে যেতে হবে। মহাজ্ঞানী মহাজনরা আমাদের মাধ্যমেই বেঁচে থাকবেন।
গল্পটায় গল্পের নায়ক ও তার বন্ধু লোকমান হোসেনের মধ্যে একটা দ্বন্দ্বের কথা আছে। লোকমান সাহেব ভালো মানুষ। লেখক যা লেখেন, তাই বিশ্বাস করেন। লেখক একটা গল্প লেখেন সায়ন্তনীকে নিয়ে। সায়ন্তনী শুরুতে লোকমানের প্রেমিকা ছিল। কিন্তু কীভাবে যেন সায়ন্তনী লেখকের প্রেমে পড়ে যায়। এ নিয়ে যৌবনে দু বন্ধুতে প্রচণ্ড মনোমালিন্য হয়েছিল। লোকমানের ছাত্রীরা এই গল্প জেনে যায়। লোকমান দেখে, তার পরাজয়ের ব্যাপারটা তার ছাত্রছাত্রীরাও জেনে গেছে। এটা তার ইগোতে লাগে। তাই সে আউট বার্স্ট করে।
কিন্তু, সে আবার খুব বন্ধুবৎসল। নিজের ভুল বুঝতে পারে।
তাড়াহুড়ো করে লিখলাম। গুছিয়ে লিখতে পারলাম না। থাক, কিছুটা ঝাঁপসা থাক, পাঠক নিজ গুণেই ক্লিয়ার করে নেবেন।
গল্পটা পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ প্রিয় হাসান ভাই।
৫| ০১ লা মে, ২০২১ দুপুর ১২:৫৫
শেরজা তপন বলেছেন: সায়ন্তনী থেকে লোকমানের বউ এগিয়ে গেল খানিকটা। আদি রসাত্মক একটা ব্যাপার ঘটতে ঘটতে মিস হয়ে গেল
০১ লা মে, ২০২১ দুপুর ২:৩৪
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: আদি রসাত্মক একটা ব্যাপার ঘটতে ঘটতে মিস হয়ে গেল সুন্দর একটা পয়েন্ট। ব্যাপারটা ঠিকই ধরেছেন। লোকমানের বউয়ের বৈশিষ্ট্য খেয়াল করলে দেখবেন, সে আগাগোড়াই খুব স্বাভাবিক ছিল। নায়ক যেভাবে তাকে জড়িয়ে ধরেছে, লোকমানের বউ কিন্তু ব্যাপারটা ওভাবে দেখে নি। সে বরং একজন মায়ের মতোই লোকমানের জ্বরের মধ্যে শুশ্রূষা করে গেছে। শেষ পর্যন্ত নায়কের মধ্যেও এই পরিবর্তনটা এসেছে। সে লোকমানের বউয়ের কোলের উপর মাথা রেখে ঘোরের মধ্যে শুয়ে পড়ে। আর দেখতে পায়, সেই বাল্যকালে সে তার মায়ের কোলে শুয়ে আছে।
গল্পটা পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ শেরজা তপন ভাই।
৬| ০১ লা মে, ২০২১ রাত ৮:৩০
মা.হাসান বলেছেন: সৈয়দ হকের খেলারাম খেলে যার একদম শেষে আছে- জাহেদা বাবরকে দাদা বলে ডাকছে আর বাবর জাহেদাকে তার ছোটোবোনের নাম ধরে ডাকছে। আপনার লেখাটা পড়ে একারনে সৈয়দ হকের কথা মনে পড়েছিলো, অন্য কিছু না।
০১ লা মে, ২০২১ রাত ৮:৪৭
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: খেলারাম খেলে যা পড়েছি অনেক বড়ো হয়ে, ৯০-এর দশকে ভুলে গিয়েছিলাম গল্পটা। কিছুদিন আগে আফরোজা সোমার এক পোস্ট পড়ে গল্পটা কিছু বোঝার চেষ্টা করি। পড়ার সময় অতো মনোযোগ দিয়ে হয়ত পড়ি নাই। কিন্তু আফরোজা সোমার আলোচনা থেকে বুঝেছি, ওটা একটা অসামান্য উপন্যাস, যদিও গল্পটা সম্পর্কে সাধারণ ভাবে তেমন ভালো ইম্প্রেশন প্রচলিত নাই।
আবার আসার জন্য ধন্যবাদ হাসান ভাই।
৭| ০১ লা মে, ২০২১ রাত ৮:৫০
শেরজা তপন বলেছেন: সোনাবীজ ভাই, আরো খানিকটা মন্তব্য করেছিলাম- কেন যে অর্ধেক আসল বোধগম্য হচ্ছে না!!!
যদিও পরেরটুকু এখন আর ঠিক ঠাক মনে পড়ছে না।
হ্যা তাতো খেয়াল করেইছি- আপনার বন্ধুও তেমন, তাঁর কোন ভাবান্তর ছিল না।
০১ লা মে, ২০২১ রাত ৮:৫৯
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: আরো খানিকটা কী লিখেছিলেন তা জানার জন্য মন আনচান করছে তবে, যা কমেন্টে এসেছে, তাতে পুরোটাই প্রকাশ পেয়েছে
হ্যাঁ, বন্ধু ক্যারেকটারটাও ওরকমই, শুধু মাঝখানে এক্সাইটেড হয়ে গেছিল, এই আর কী
আবার আসার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ রইল আলকাশ ভাই
৮| ০৩ রা মে, ২০২১ রাত ২:৩০
কল্পদ্রুম বলেছেন: শেষের দিকে বেশ একটা রহস্যময়তা ফুটে উঠেছিলো।এটা কি বিচ্ছিন্ন কোন লেখা? না কি আপনার কোন বড় লেখার অংশ?
০৩ রা মে, ২০২১ সকাল ১১:০৪
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: এটা বিচ্ছিন্ন লেখাই, স্বয়ংসম্পূর্ণ, যদিও অন্য অনেক বড়ো একটা পোস্টের সাথে এটা লেখা হয়েছিল, কিন্তু তার সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই।
বড়োসড়ো এ লেখাটা ধৈর্য নিয়ে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
নভোনীল-এর এক পর্ব লিখেছিলেন। জাদিদ ভাইয়ের পোস্টে দেখলাম, আপনি সেরা নির্বাচিত হয়েছেন। অভিনন্দন। খুশি হয়েছি, একজন সেরা গল্পকারই যথারীতি সেরা নির্বাচিত হয়েছেন। কমেন্ট থেকেও বোঝা যাচ্ছিল আপনার পর্বটা সেরা।
শুভেচ্ছা রইল।
৯| ০৩ রা মে, ২০২১ রাত ২:৪৯
ঢুকিচেপা বলেছেন: একটা মানুষের মধ্যে কয়েকটি চরিত্র ফুটে উঠেছে এবং ঘুম শেষে একটি বিশুদ্ধ মানুষের জন্ম হয়েছে।
০৩ রা মে, ২০২১ সকাল ১১:২৬
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ঘুম শেষে একটি বিশুদ্ধ মানুষের জন্ম হয়েছে। ওয়াও! দারুণ বলেছেন কথাটা। জ্বরে পড়ে সে একটা ঘোরের মধ্যে চলে যায়। ঘোরের মধ্যে তার চেতনার জন্ম হয়, সেটাই বিশুদ্ধ চেতনা।
চমৎকার কথাটায় অনেক ভালো লাগা।
গানের কী অবস্থা?
১০| ০৫ ই মে, ২০২১ রাত ১২:৪২
রাজীব নুর বলেছেন: জনাব, আমি কমেন্ট ব্যান থেকে মুক্ত হয়েছি।
চারজন আমার নামে রিপোর্ট করেছিলো।
০৯ ই মে, ২০২১ বিকাল ৪:৪০
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন রাজীব নুর ভাই।
©somewhere in net ltd.
১| ৩০ শে এপ্রিল, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:১৯
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
ব্লগার রাজিব নুর খান ব্লক্ড।
তিনি এখনো প্রচুর পোস্ট দিচ্ছেন।
কিন্তু আমি ছাড়া আর কেউ সেখানে মন্তব্য করছেন না।
আফসোস!