নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দুঃখের কবিতাই শ্রেষ্ঠ কবিতা। ভালোবাসা হলো দুঃখ, এক ঘরে কবিতা ও নারী।
হয়ত আপনাদেরও এমন হয়। শৈশবের কিছু কিছু জিনিস কল্পনা করলেই নাকের কাছে তার তাজা ঘ্রাণ পাই। আমাদের অল্প ক'টি জমি ছিল। ধান কাটা হলে বাড়ির মাঝখানের দুয়ারে গরু চরিয়ে ধান মলন দেয়া হতো। এই যে এখন আমি লিখছি, চোখের সামনে সেই ধান মাড়ানোর দৃশ্য ভেসে উঠছে, আর নাকের কাছে ভুরভুর করছে তাজা খ্যাড়ের গন্ধ। খ্যাড় শুকানোর পর জড়ো করার সময় ভাইবোনেরা খ্যাড়ের গাদায়, আকাশে খ্যাড়ের গুচ্ছ উড়িয়ে দিয়ে, আবার সারা শরীরে খ্যাড় মেখে খেলা করতাম। এখনো সেই খ্যাড়ের গন্ধ নাকে ভাসছে। বাড়ির বাইরে, রাস্তার ধারে আমন ধানের নাড়ার পালা দেয়া হতো। নাড়ার গাঁদায় আমরা পলানতি খেলতাম। নাড়ার গন্ধটা খুব শুকনো, এখনো সজীব।
ঘরের এককোণে একটা ডোল ছিল। ডোলের ভেতর ধান রাখা হতো। ওখানে ঢুকে জোরাসিন দিয়ে বসে উবু হয়ে দু’হাতে ধান নাড়তাম। কাঁচাগাবের কষ-মাখানো ডোলের একটা গন্ধ ছিল। ধান আর ডোলের গন্ধ মিশে অন্য একটা গন্ধ হতো। চোখ বন্ধ করে শ্বাস নিলে ঐ গন্ধটা পাই, আর আমার ছোট্ট ‘আমি’কে দেখি – মুঠো ভরে ধান নাড়ছে, আর গভীর হয়ে ভাবছে, একটা বছর পার হবে তো এই এক-ডোল ধানে!
খুব ভোরে মা-চাচিরা ধান সিদ্ধ করতো। সিদ্ধ ধানের ভাঁপের একটা গন্ধ ছিল। দুয়ারে সেই ধান শুকানো হতো। দুয়ার থেকে ধানের গন্ধ চারদিকে ছড়িয়ে পড়তো। ঢেঁকিতে ধান ভানতো। কুঁড়ার গন্ধ, নতুন চাউলের গন্ধ, তূষের গন্ধ- প্রতিটা গন্ধই ছিল খুব আলাদা।
তেমনি, মুড়ি ভাঁজার দিনও খুব ভোরে উঠতো মা-চাচিরা। অনেকক্ষণ লবণ-রঁসুন-মসলা-মাখানো মুড়ির চাউল জ্বাল দেওয়ার পর আগুন-গরম বালুর হাঁড়িতে সেই চাল ফেলে অপরূপ এক ছন্দের মাধ্যমে হাঁড়িটি দোলানো হতো। পুটপুট পুটপুট শব্দে চাউল থেকে মুড়ি ফুটতো, ক্ষুদ্র ধবল পোনামাছের মতো লাফাতো; তারপর বালুসমেত মুড়ির হাঁড়িটি কাত করে ঝাঁঝরে ফেলা হতো। যারা এ দৃশ্য দেখেছেন, ভাবুন, সেই দৃশ্যটি- আর সেই মৌ মৌ মুড়ির গন্ধ, রঁসুনে মাখা।
আমাদের কয়েকটা গাভী ছিল। আমাদের পরিবারের অংশ ছিল ওরা। আমাদের সবাইকে আলাদা আলাদাভাবে ওরা চিনতো। একদিন গাভীগুলো এক গ্রামবাসীর কাছে বিক্রি করে দিলাম। যতদিন ও-বাড়ির পাশ দিয়ে গিয়েছি, কিংবা রাস্তায় ওদের সাথে দেখা হয়েছে, ওরা ছুটে আমার কাছে দৌড়ে আসতো। আমার শরীর ঘেঁষতো। মুখ দিয়ে শরীরের গন্ধ শুঁকতো। গোয়াল থেকে ছুটতে না পারলে আমার চলার পথে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতো, ওদের চোখের কোণ ভিজে যেত, আমার বুকও হুহু করে উঠতো। ওদের শরীরের গন্ধ আমার সারা শরীরে লেগে আছে, এমন মনে হয় ওদের কথা ভাবলেই।
গোয়ালার মতো গাভীর দুধ দোহাতাম আমি। দুধ দোহানোর সময় প্রায়ই একটা দুষ্টুমি করতাম। গাভীর বাঁছুরের মতো আমিও গাভীর বানে মুখ দিয়ে দুধ টানতাম।
আরেকটা মজার খাবার ছিল, জানি না আপনারা কেউ কখনো খেয়েছেন কিনা। দুধ দোহানোর পর কাঁচা দুধ দিয়ে শুধু লবণে মেখে পান্তাভাত দারুণ লাগে। এটা আমি প্রায়ই খেতাম। হায়, ঐ মজাটা পাওয়ার আর কোনো সুযোগই নাই এখন আর।
আরো কিছু গন্ধ আছে। ঘাস কাটার সময়, বিশেষ করে আড়িয়াল বিলে, কিছু কিছু ঘাসে খুব মাদকতাময় গন্ধ ছিল। মাঝে মাঝেই সেই গন্ধের কথা মনে পড়ে, গন্ধেরা যেন লাফিয়ে লাফিয়ে নাচতে থাকে, নাকের খুব গভীরে ঢুকে সুড়সুড়ি দেয়।
বর্ষায় শাপলা, কচুরিপানা তুলতাম আড়িয়াল বিল থেকে, বাড়ির উত্তরের ধানভাসা চক থেকে। ডুব দিয়ে শাপলার গোড়া থেকে ঝুঁটিওয়ালা শালুক তুলতাম। কাদার সেই গন্ধটা খুব অদ্ভুত ছিল, শাপলা আর কচুরিফুলের ঘ্রাণটা ছিল বুকজুড়ানো শান্তির মতো। গন্ধগুলো নাকে ভাসে, মনে হলেই।
আষাঢ়ের ক্ষেতে কোমর পানিতে উবু হয়ে পাট কাটা হতো। পাটক্ষেতের পানিতেই সেই পাট জাগ দেয়া হতো। পাট জাগ হলে নৌকা করে বাড়ির ঘাটে আনা হতো। খালের পাড়ে যেন মেলা বসতো- সারি সারি মানুষ, বিশেষ করে মহিলারা, মা-চাচিরা, বোনেরা, পিঁড়িতে বসে পাট বাছতো, অর্থাৎ, পাটের কাণ্ড থেকে পাটের আঁশ আলাদা করতো। সামনে পাটখড়ি, একপাশে আঁটিবাঁধা পাটের আঁশ। চারদিকটা তখন পাটের গন্ধে ছেয়ে যেত। শরীরেও সেই গন্ধটা লেগে থাকতো। পানিতে পাট খাঁচার সময় (অর্থাৎ, পাট ধোয়ার সময়) শরীরে গন্ধটা আরো বেশি লাগতো। পাটের সেই পঁচাগন্ধ, ঘষির গন্ধ (গোবর শুকিয়ে বানানো ঘুঁটে), আথালের গন্ধ, আধুনিক পারফিউমের গন্ধের চাইতেও অনেক মধুর ও সহজাত ছিল। এখনো ভাবলেই কোমর-ডোবা পানিতে পাট-জাগের পাশে দাঁড়িয়ে নৌকায় পাট-তোলা আমাকে দেখতে পাই, ভুরভুর করে পাটের গন্ধ ছুটে এসে নাক ভাসিয়ে দিচ্ছে। আহ! আমার শৈশবের গন্ধ। তোমার জন্য আমার বুকভরা এত কান্না কেন?
নুরুদের বাড়িতে ডঙ্গলফল, খাঁয়গো বাড়ির ঝুপড়ি গাবগাছেরর পাকা গাব, এগুলো এত খেয়েছি, মনে হলেই গন্ধে মাতাল হয়ে যাই।
আরো অনেক গন্ধ আছে, ফল, ফুল, গাছ ও পাখি আছে, আছে আবুল, জসীম, করিমের সান্নিধ্যের গন্ধ, আছে ধাপারি খালের মাছ গাবানির গন্ধ, আড়িয়াল বিলের নৌকা বাইচের গন্ধ।
এগুলো হলো শৈশবের গন্ধ, মনে হলেই বুঁদ হয়ে যাই, মায়ের গন্ধের মতো, যা কোনোদিন ভোলা যায় না, সতত নাকের কাছেই বাতাসে মায়া জড়িয়ে ঘুমিয়ে থাকে।
আপনাদের গ্রামে কেউ কি এখনো এই গন্ধগুলো পান? কিংবা, কারো কাছে কি এসব গন্ধের কোনো সন্ধান আছে? কিংবা কখনো এসব গন্ধের কথা শুনেছেন?
অথচ এ গন্ধ আমাকে বাঁচিয়ে রাখে, নতুন গন্ধের বীজ বোনার প্রণোদনা দেয়। আর এ গন্ধগুলোই হলো বাংলার আদি ও এক্কেবারে অকৃত্রিম গন্ধ।
০৪ মে ২০২১
০৭ ই মে, ২০২১ দুপুর ১:৫০
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: হারিকেন বা কুপিবাতিতে কেরোসিন ব্যবহার করা হতো। তবে, কেরোসিন নিয়ে অনেক তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে। মাঝে মাঝেই তরকারিতে কেরোসিনের গন্ধ পাওয়া যাইত, আর খাওয়া দাওয়া সব বরবাদ। কেরোসিন দিয়ে চুলার আগুন জ্বালানো হতো, সেই হাতে আবার তরকারি নুন চাখা, ধোয়া-পাকলি করা হতো (ভুলে)। বুঝতেই পারছেন
তবে, সর্ষের তেলের একটা গন্ধ ছিল।
২| ০৬ ই মে, ২০২১ রাত ৯:৩৪
স্বর্ণবন্ধন বলেছেন: অসাধারণ লিখেছেন। ফিল্মের চেয়েও বেশি বাস্তবতার অনুভূতি দিল লেখাটা। চোখের সামনে চলে এসেছিল হারানো শৈশব। বিশুদ্ধ বাতাসের বুকভরা শ্বাস নেয়ার সুযোগই তো হয়না আজকাল।
আড়িয়াল নামের বিল বোধ হয় অনেক জায়গায় আছে। আমিও এই নামের এক বিলের পাশে বড়ো হয়েছি।
০৭ ই মে, ২০২১ দুপুর ২:০১
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: আড়িয়াল বিল নামে বড়ো একটা বিলই আছে বাংলাদেশে- ঢাকা জেলার দোহার-নবাবগঞ্জ উপজেলা থেকে শুরু হয়ে মুন্সীগন্ধ জেলার শ্রীনগরে গিয়ে পড়েছে। উইকিপিডিয়াতে দেখতে পারেন
ফিল্মের চেয়েও বেশি বাস্তবতার অনুভূতি দিল লেখাটা। চোখের সামনে চলে এসেছিল হারানো শৈশব।
- মন্তব্যে অনেক ভালো লাগা।
শুভেচ্ছা
৩| ০৬ ই মে, ২০২১ রাত ৯:৪৪
মিরোরডডল বলেছেন:
ধুলো এটা কি লিখলো ! এতো সুন্দর মধুর স্মৃতিগুলো মনে করিয়ে দিলো ।
ছোটবেলায় প্রতিবছর গ্রামে যাওয়া হতো । ওপরে মেনশন করা অনেকগুলো ঘ্রাণ আমি এখনও পাই,
চোখ বন্ধ করে ভাবলেই সেটা ফিল করতে পারি ।
শুধু গ্রামে না, ঢাকায়ও এমন অনেক আছে । যেমন বৃষ্টি শেষে গাছপালার একটা ঘ্রাণ, আবার শীতের সন্ধ্যায় রাস্তায় পাতা পোরানো, অথবা রাস্তার পাশে বসে যে পিঠা বানায় সেটার, ফুলের দোকানের সামনে থেকে যাবার সময় গোলাপ, বেলী,
বিশেষ করে রজনীগন্ধা । নতুন বই খাতারও একটা ঘ্রাণ ছিলো আরও কতো শত ।
যখন ছোট ছিলাম ইরেজারের মধ্যে একটা চকোলেট স্মেল, মনে হতো ওটা খেয়ে ফেলি ।
থ্যাংকস ধুলো, পোষ্টটা পড়ে মনটা কোথায় যেনো উড়ে গেলো !
০৭ ই মে, ২০২১ দুপুর ২:১৭
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন:
শুধু গ্রামে না, ঢাকায়ও এমন অনেক আছে। যেমন বৃষ্টি শেষে গাছপালার একটা ঘ্রাণ, আবার শীতের সন্ধ্যায় রাস্তায় পাতা পোরানো, অথবা রাস্তার পাশে বসে যে পিঠা বানায় সেটার, ফুলের দোকানের সামনে থেকে যাবার সময় গোলাপ, বেলী, বিশেষ করে রজনীগন্ধা । নতুন বই খাতারও একটা ঘ্রাণ ছিলো আরও কতো শত । আমরা যখন যেখানেই থাকি না কেন, ঐ জায়গাটার সাথে আমাদের অনেক ঘনিষ্ঠতা সৃষ্টি হয়, ফলে প্রতিটা খুটিনাটিই আমাদের মগজে গেঁথে যায়। আমাদের ছোটোবেলাটা প্রধানত গ্রামকেন্দ্রিক, যখন প্রকৃতির সাথে নিবিড় সংযোগের প্রচুর সময় ও সুযোগ থাকে। ফলে, সেই স্মৃতিগুলো আমাদের মগজে খুব সাবলীল ভাবে ঠাঁই পায়। সেই তুলনায়, শহর বা কর্মক্ষেত্রে আমাদের অতখানি সুযোগ ঘটে না। কর্মব্যস্ততার জন্য কর্মক্ষেত্রেই সময়টা চলে যায়, ঘরের কার্নিশে চড়ুই পাখি, পাশের গাছে বনপাখির দিকে তাকাবার ফুরসত তেমন থাকে না। তবু, এগুলোও আমাদের মস্তিষ্কের কোষে ঢুকে পড়ে। আমার ধারণা, মানুষ যে জায়গায় যত ঘনিষ্ঠভাবে বসবাস করে, সেখানকার স্মৃতিগুলোই তার মনে সবথেকে বেশি উজ্জ্বল থাকে।
যখন ছোট ছিলাম ইরেজারের মধ্যে একটা চকোলেট স্মেল, মনে হতো ওটা খেয়ে ফেলি । ছোটোবেলায় প্রাইমারি স্কুলে একবার খাতা ও রঙিন পেন্সিল দিয়েছিল আঁকাআঁকির জন্য- হায় হায়- এখনই আমার কাছে যেন সেই ঘ্রাণটা ছুটে এলো ওটা আমার অনেক প্রিয় ছিল। ক্লাস টু-তে ছিলাম তখন। ১৯৭৩/৭৪ হবে। নতুন বইয়ের, দোয়াত-কালিরও গন্ধ ছিল।
৪| ০৬ ই মে, ২০২১ রাত ৯:৫৭
ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন:
অনেকটা আমার শৈশবের গল্পর মতোই। নতুন ধানের চিড়া, ধান ভেঙ্গে চাল করে সেই চাল থেকে মুড়ি। আখের গুড় দিয়ে মুড়ি খেতাম। মাটির পাতিলে করে চিড়া গুড় নতুন চালের পিঠা চলে যেতো ফুফুদের বাড়িতে। তখন বাড়ির পিঠা চিড়া মেয়েদের শশুরবাড়িতে দেওয়ার খুব রেওয়াজ ছিলো। খুব সম্মানের সাথে নিয়ে পৌছে দিয়ে আসতে হতো। বিনিময়ে মেয়েদের শশুরবাড়ি থেকে আবার আসতো মাটির পাতিলে করে রসগোল্লা, পান সুপারি। - এগুলো এখন আর কেউ মানেন না। তবে সেই রেওয়াজ খুব ভালো ছিলো, আথিতেয়তায় সম্পর্ক আরোও মজবুত হতো।
০৭ ই মে, ২০২১ দুপুর ২:৩৭
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: মাটির পাতিলে করে চিড়া গুড় নতুন চালের পিঠা চলে যেতো ফুফুদের বাড়িতে। তখন বাড়ির পিঠা চিড়া মেয়েদের শশুরবাড়িতে দেওয়ার খুব রেওয়াজ ছিলো। খুব সম্মানের সাথে নিয়ে পৌছে দিয়ে আসতে হতো। বিনিময়ে মেয়েদের শশুরবাড়ি থেকে আবার আসতো মাটির পাতিলে করে রসগোল্লা, পান সুপারি। - এগুলো এখন আর কেউ মানেন না।
আপনার কথায় আরো অনেক স্মৃতিই মনে পড়ে গেল প্রিয় ঠাকুর মাহমুদ ভাই। প্রতি মরসুমেই নানা বাড়ি, ফুফুর বাড়ি, চাচির ঘরে, মামির ঘরে দাওয়াতের রেওয়াজ ছিল। দাওয়াত, প্রতি-দাওয়াত। একেকটা দাওয়াতের দিন ছিল একেকটা ইদের দিনের মতো। আম-কাঁঠালের দাওয়াত, শীতের পিঠার দাওয়াত- মনে পড়লে মনটা উদাস হয়ে যায়, দুঃখে বুক জমে ওঠে। আপনার লাস্ট কথাটাই ঠিক, এগুলো এখন আর কেউ মানেন না। আমাদের দিন যাপন এখন খুব আত্মকেন্দ্রিক ও যান্ত্রিক হয়ে যাওয়ায় ওসব আনুষ্ঠানিকতা বা সামাজিকতা এখন আর কেউ মানি না। অত সময়ই বা কোথায়?
সুন্দর কমেন্টের জন্য শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ রইল ঠাকুর মাহমুদ ভাই।
৫| ০৬ ই মে, ২০২১ রাত ১০:৫২
স্প্যানকড বলেছেন: ইস! আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম । আসলে এসব স্মৃতি ভুলে যাওয়ার নয়। খুব ছোট হতে ইচ্ছে করছে আগের মতন।ভালো থাকবেন ।
০৭ ই মে, ২০২১ দুপুর ২:৪৮
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: মানুষের ছোটোবেলাটা থাকে আনন্দ, উল্লাস, হৈ-হুল্লোড়ে ভরা, চিন্তা-ভাবনাহীন। সেজন্য ছোটোবেলাটা আমাদের এত প্রিয়। আমাকে একটা বর দেয়া হলে আমি আমার ৪ বছর বয়সে ফিরে যেতাম।
কমেন্টের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
৬| ০৬ ই মে, ২০২১ রাত ১১:১০
মোঃমোস্তাফিজুর রহমান তমাল বলেছেন: সবকিছুর সাথে না মিললেও কয়েকটা জিনিসের গন্ধের সাথে মিলে গেছে। এসব ঘ্রাণ এখনো তাজা। সবুজ মাঠে ঘাসের ভেতর সাদা,হলুদ রঙের ছোট ছোট ফুল ফোঁটে। সেগুলোর মধ্যে অদ্ভুত মাদকতাপূর্ণ একটা ঘ্রাণ আছে। চাল ভাজার সময় একটা ঘ্রাণ আসে।সেটা এখনো নিয়মিত পাই। মাছ ধরার সময় কাঁদার মধ্য থেকে একটা ঘ্রাণ বের হয়। এরকম অনেক ঘ্রাণে শৈশব ভরে আছে।
পোস্টের জন্য ধন্যবাদ।
০৭ ই মে, ২০২১ বিকাল ৩:১১
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন:
চাল ভাজার সময় একটা ঘ্রাণ আসে। সেটা এখনো নিয়মিত পাই। মাছ ধরার সময় কাঁদার মধ্য থেকে একটা ঘ্রাণ বের হয়। বৃষ্টির দিনে চাল ভাজা একটা কমন ব্যাপার ছিল, সাথে মটর ভাজা। এটার ঘ্রাণটা দারুণ। কাদার ঘ্রাণটা সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের। এগুলোও কমন।
অতীতের ঘ্রাণ শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ তমাল ভাই।
৭| ০৬ ই মে, ২০২১ রাত ১১:২০
নান্দনিক নন্দিনী বলেছেন: পাট পানিতে জাগ দেয়ার (ভিজিয়ে রাখা) ঘ্রাণটা আমার খুব ভালো লাগে। ধান যখন পাকতে শুরু করে, আশ্বিন মাসের সেই হালকা কুয়াশাময় সন্ধ্যায় যে ঘ্রাণ সেটাও আমার প্রিয়।
০৭ ই মে, ২০২১ বিকাল ৩:২৩
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: পাট জাগ দেয়ার গন্ধটাও খুব সতেজ এখনো। ওটা ইচ্ছে করেই পোস্টে উল্লেখ করি নি। পাট কাটা ও জাগ দেয়ার কিছু পদ্ধতি আছে। আমাদের ক্ষেতে বর্ষার পানি আসার পর পাট কেটে ক্ষেতের পানিতেই জাগ দেয়া হতো। পাট পুরা পঁচে গেলে (একটা টার্ম আছে, ভুলে গেছি) সেখান থেকে নৌকায় করে বাড়ির ঘাটে পাট আনা হতো। মানুষসহ পাটখড়ি থেকে পাট আলাদা করা হতো। ঘাটে যখন প্রচুর মানুষ (এরা প্রধানত মহিলা) পাট বাছতো (পাটখড়ি থেকে পাট আলাদা করা), সেখানে মনে হতো বাজার/মেলা বসেছে। তখন পাটের গন্ধটা চারদিকে ছড়িয়ে পড়তো। শরীরেও সেই গন্ধটা লেগে থাকতো। পাট যখন পানিতে খাচা (মানে ধোয়া) হতো, তখন শরীরে গন্ধটা আরো বেশি লাগতো। যাই হোক, কৃষক পরিবারের জন্য পাটের গন্ধ, ঘষির গন্ধ (গোবর শুকিয়ে বানানো ঘুঁটে), আথালের গন্ধ, আধুনিক পারফিউমের গন্ধের চাইতেও মূল্যবান ও সহজাত। আমরা খুব অভ্যস্ত ছিলাম এতে।
কমেন্টের জন্য ধন্যবাদ আপু।
৮| ০৬ ই মে, ২০২১ রাত ১১:২২
কবিতা পড়ার প্রহর বলেছেন: শৈশবের এমন অনেক গন্ধ আছে আমারও।
বৃষ্টির গন্ধ, নানুবাড়ির গন্ধ, দাদুবাড়ির গন্ধ, নতুন স্কুল ব্যাগ, ক্রেয়নের গন্ধ।
০৭ ই মে, ২০২১ বিকাল ৩:২৮
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: শৈশবের গন্ধগুলো আসলে ভোলা যায় না, ওগুলো মন ও শরীর দুটোতেই লেগে আছে সারাটা জীবন ভর।
কমেন্টের জন্য ধন্যবাদ প্রহর।
৯| ০৬ ই মে, ২০২১ রাত ১১:৪১
মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন: আমার অনুভূতিতে মিশে আছে আমার গ্রামের মটির গন্ধ। আড়িয়াল বিল আর কুমের সবুজ শ্যামলিমা সৌন্দর্যের কথা মনে হলে আজও মনটা মোচড় দিয়ে উঠে। আপনার লেখা পড়ে হারিয়ে যাওয়া সোনালি দিনগুলো আবার নতুন করে ফিরে পেলাম। +++
০৭ ই মে, ২০২১ বিকাল ৩:৩৮
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: কুমের কথা আমার বাবা খুব বলতো। কুম বলতে পুকুর বা ডোবা জাতীয় কিছু বোঝায়। আমাদের মাঠটা আগে কুম ছিল। সেখানে নাকি গোসল, গরুর গোসল ইত্যাদি হতো।
আমরা কোনোদিন বলি নাই - মাঠে যাচ্ছি, বলেছি 'কুম যাচ্ছি।' কুম বলতে আমরা মাঠই বুঝতাম।
কমেন্টের জন্য ধন্যবাদ সাখাওয়াত।
১০| ০৭ ই মে, ২০২১ রাত ১২:০৪
রাজীব নুর বলেছেন: দুনিয়াতে সব কিছুর গন্ধ আছে।
আদর ভালোবাসা, দুঃখ কষ্ট সব কিছুর গন্ধ আছে। আমি টের পাই।
০৭ ই মে, ২০২১ বিকাল ৩:৪৫
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: এটা ঠিক, দুনিয়ার সবকিছুরই গন্ধ আছে। তবে, কিছু কিছু গন্ধ খুব প্রিয়, যা কোনোদিন ভোলা যায় না। শৈশবের গন্ধগুলো এমনই, যা সারাজীবন মনের ভেতর জ্বলতে থাকে
১১| ০৭ ই মে, ২০২১ রাত ১২:৩০
ঢুকিচেপা বলেছেন: আমার কয়েকটি পরিচিত গন্ধ আছে, যে গন্ধ নাকে এলে সেই ক্ষণের স্মৃতিতে ফিরে যাই।
তখন সে গন্ধে বুদ হয়ে যেতে ইচ্ছা করে।
০৭ ই মে, ২০২১ বিকাল ৩:৫১
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: সেই পরিচিত গন্ধগুলো কী? জানতে পারলে ভালো লাগতো।
আপনার বিষয়টা অবশ্য একটু ভিন্ন মনে হচ্ছে আমার কাছে। কিছু গন্ধের সাথে আপনার স্মৃতি বিজড়িত আছে। সেই গন্ধটা কোথাও পেলে সেই স্মৃতিটার কথা মনে পড়ে। তো, সেই স্মৃতিগুলো একদিন আমাদের শোনাবেন আশা করি।
কমেন্টের জন্য ধন্যবাদ ঢুকিচেপা।
১২| ০৭ ই মে, ২০২১ দুপুর ১:০৯
আমি সাজিদ বলেছেন: চমৎকার। এক রাশ মুগ্ধতা।
০৭ ই মে, ২০২১ বিকাল ৩:৫২
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ সাজিদ ভাই। শুভেচ্ছা।
১৩| ০৮ ই মে, ২০২১ রাত ১২:০৬
ডঃ এম এ আলী বলেছেন:
অসাধারণ লিখেছেন ।
আমার সাথে মিলে যায় অনেকটাই।
ছোটকালে ধান গাছ ছড়ায়ে গরু
দিয়ে মলন দেয়ার সময় গরুর পিছনে
ছুটা সে কি আনন্দ তাকি আর ভুলা যায়
বাঁশের খুটি গেড়ে তার চারপাশে পাহাড় সমান
খড়ের গাদা তৈরীতেও ছিল সে কি আনন্দ
মনের মাঝে তা এখনো সতেজ আছে ।
আপনার লেখার কথামালা নিয়ে গেল
সেই বাল্যকালের দুরন্তপনার স্মৃতিতে ।
পোষ্টটি প্রিয়তে গেল ।
শুভেচ্ছা রইল ।
ছবিসুত্র : গুগল অন্তর্জাল ।
০৮ ই মে, ২০২১ বিকাল ৪:০৩
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: 'মলন দেয়া' - ঠিক এই শব্দটাই আমরা সারা জীবন ব্যবহার করেছি ধান মাড়ানো বোঝাতে। আপনার কমেন্টে এ শব্দটা দেখে খুব ভালো লাগলো।
খ্যাড়ের পালা দেয়া ছিল আরেকটা বড়ো কাজ। বড়ো হওয়ার পর এ কাজটা অনেক করতে হয়েছে আমাকে।
আরেকটা দুষ্টুমি করতাম। একসময় গাভী দুধ দোহাতাম আমি। দুধ দোহানো শেষে এ দুষ্টুমিটা করতাম। গাভীর বান পানি দিয়ে ধুয়ে বাঁছুরের মতো আমিও গাভীর দুধ টানতাম
আরেকটা মজার খাবার ছিল, জানি না কখনো খেয়েছেন কিনা। দুধ দোহানোর পর কাঁচা দুধ দিয়ে পান্তা ভাত শুধু লবণে মেখে দারুণ মজাদার। এটা আমি প্রায়ই খেতাম। ঐ মজাটা পাওয়ার আর কোনো সুযোগ নাই।
পোস্ট পড়ে কমেন্ট করার জন্য অনেক ধন্যবাদ প্রিয় আলী ভাই।
১৪| ১৪ ই মে, ২০২১ রাত ২:৫০
ঢুকিচেপা বলেছেন: “তো, সেই স্মৃতিগুলো একদিন আমাদের শোনাবেন আশা করি।”
একটা পারফিউমের গন্ধ একেবারে শৈশবে নিয়ে যায়। লোকালয়ের মধ্যে হঠাৎ পাই, অথচ আমি চিনি না সে গন্ধ।
আরেকটা পারফিউমের গন্ধ আছে এটাও অজানা, এই গন্ধ আমাকে মনে করিয়ে দেয় আমার খালার বিয়ের দিনের কথা।
সুপারি জাগ দেয়ার একটা গন্ধ আছে। এই গন্ধে আমার স্মৃতিতে আসে ফেরিতে করে আরিচা থেকে নগরবাড়ী যাচ্ছি। নদীর পানিতে ঢেউ সাথে ফেরির যান্ত্রিক শব্দ।
কাদার একটা গন্ধ আছে। এই গন্ধতে যে স্মৃতি আসে তা হলো, আমি মামার হাত ধরে কাদাযুক্ত ড্রেন পার হচ্ছি আর পাশের ডোবাতে হাঁস প্যাক প্যাক করে কাদা খাচ্ছে।
আপাতত এই কয়েকটাই মনে পড়লো।
২৫ শে জুন, ২০২১ সকাল ১০:৫৭
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: প্রত্যেকেরই একটা আলাদা জগৎ আছে, আলাদা গন্ধে ভরা সেই জগৎ। আপনার ফিরতি কমেন্ট পড়ে আমিও গন্ধে ডুবে গেলাম। আমারও এমনই অনেক গন্ধ আছে, তবে, সেগুলো অনেক রোমান্টিসজমে ভরপুর।
সুন্দর এ কমেন্টটির জন্য অনেক ধন্যবাদ। দেরিতে চোখে পড়লো কমেন্টটি, তাই দেরিতে উত্তর, দুঃখিত দেরিতে উত্তর দেয়ায়।
©somewhere in net ltd.
১| ০৬ ই মে, ২০২১ রাত ৯:১৮
জটিল ভাই বলেছেন: শৈশব মনে পরে গেলো! সত্যিই এসব ভুলার নয়! আমার একটা প্রিয় গন্ধ শেয়ার করি যা এখনো সুযোগ পেলেই নেই। আর তা হচ্ছে কেরসিনের গন্ধ। সুন্দর অতীতে ভ্রমণের জন্য ধন্যবাদসহ শুভকামনা