নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শব্দকবিতা : শব্দেই দৃশ্য, শব্দেই অনুভূতি [email protected]

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই

দুঃখের কবিতাই শ্রেষ্ঠ কবিতা। ভালোবাসা হলো দুঃখ, এক ঘরে কবিতা ও নারী।

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

তিনটি গল্পকণিকা

১৮ ই জানুয়ারি, ২০২২ বিকাল ৫:৩৭

একজন গৃহিণী
ও একটি পরগাছার গল্প


একবার এক সুপ্রাচীন আম্রবৃক্ষের শাখায় একটা পরগাছা জন্মালো। ওটি দেখতে অদ্ভুত সুন্দর। বাড়ির গৃহিণী রোজ সকালে পরগাছার গোড়ায়, গায়ে পানি ছিটিয়ে দেয়। পরগাছাটি মা মা বলে হেসে ওঠে, আর ঝুলে পড়ে পাতা নাড়িয়ে গৃহিণীর গা ছুঁয়ে দেয়।
একদিন গৃহিণীর অসুখ হলো এবং এক রাতে সে মারা গেলো। কেউ খেয়াল করলো না পরগাছাটিও নীরবে শুকিয়ে ঝরে গেলো।

২৯ জুন ২০১৬
---------------------

কৃতজ্ঞতা : ব্লগার স্বপ্নচারী গ্রানমা। তাঁর একটা স্টেটাসে কমেন্ট করতে গিয়ে এটি লেখা হয়ে গেলো। পাঠকদের উদ্দেশ্যে সবিনয়ে বলছি, কিছু গল্প থাকে যা শুধু গল্পই, যার কোনো অন্তর্নিহিত রহস্য বা ভাবার্থ নেই। এটিও সেরকম কিছু।



কালো মেয়ে

মেয়েটা কালো বলে লোকটা খুব আফসোস করতেন, হায়, আমার মেয়েটা সুন্দর হলো না!
আফসোস করতে করতে একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে তিনি দেখতে পেলেন, মেয়েটা খুব মিষ্টি ও সুন্দরী হয়ে গেছে। চঞ্চলতায় সে সারা বাড়ি আলো করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তার হাসিতে মুগ্ধ হয়ে আকুলভাবে 'মা, মা' ডেকে উঠলেন লোকটা। আর মেয়েটি ধীরে ধীরে তাঁর রূপবতী ‘মা’ হয়ে গেলো।
আরো একটু পর তিনি দেখতে পেলেন, 'মা'টা হয়ে গেলো একটা হলুদ পাখি। তারপর করুণ ডানা নেড়ে পাখিটা আকাশে উড়ে গেলো, লোকটার দিকে ফিরেও তাকালো না।

১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭



একটি শাদা কবুতর

ধাপারি খালের মুখে আড়িয়াল বিলে আমাদের একটুকরো বোরো জমি ছিল। একবার ধান কাটা শেষ হলে রোদ পড়ার পর আমি আর নীশু খেতের আইলে গিয়ে দাঁড়ালাম। অমনি কোথা থেকে উড়ে এলো একঝাঁক লম্বা ঠোঁট ও পা-ওয়ালা সারস পাখি। ওরা গজ-ঢঙে হাঁটছিল আর মাটির বুক থেকে ধানের দানা কুড়িয়ে খাচ্ছিল। মাঝে মাঝে আনন্দিত চোখে আমাদের দেখছিল।
সোনার জমিনে থোকা থোকা শাদা বিন্দুর মতো সারস পাখিরা বিচরণ করছিল। আমি আর নীশু খুব অবাক হয়ে ওদের দেখছিলাম। হঠাৎ, চোখের পলকে সারসগুলো ঘুঘু হয়ে গেলো। ঘুট-ঘুট-ঘুট্টস শব্দে ওরা ধান খুঁটতে লাগলো। আমাদের চোখ বিস্ময়ে ছানাবড়া হতে থাকে। আমরা একে অপরের দিকে তাকিয়ে বিমূঢ় হয়ে যাই।
এবং হঠাৎই ডানা ঝাড়া দিয়ে সবগুলো ঘুঘু একসঙ্গে উড়ে গেল এবং আমাদের মাথার উপর দিয়ে একপাক ঘুরে আবার মাটিতে নেমে এলো। এ কী দেখছি আমরা! স্বপ্ন নয় তো? সারা খেত জুড়ে বাক-বাকুম করে চরে বেড়াচ্ছে একঝাঁক শাদা কবুতর।
দেখতে দেখতে খুব মধুর সুরে ওরা গান গেয়ে উঠলো এবং গান গাইতে গাইতে উড়ে গেল আর আমাদের সামনে একটি সুন্দর পালক রেখে গেলো। আমি উবু হয়ে পালকটি হাতে তুলে নিই। পালকটিতে অমরাবতীর সুগন্ধি মাখানো ছিল। আমি নীশুর চুলে পালকটি গুঁজে দিলাম। নীশু স্বর্গীয় হাসিতে আমার বুক ভরে দিল।
সন্ধ্যার কিছু আগে আমরা বাড়ির দিকে পথ ধরলাম। আমি আগে, ছোটো ছোটো পায়ে নীশু আমার পেছনে হাঁটছিল। ও কখনো আমার হাত ধরে হাঁটে; আমি কখনো-বা পেছনে তাকিয়ে নীশুকে দেখছিলাম। নীশু আমার আদরের ছোটোবোন।

একবার পেছনে তাকিয়ে দেখি নীশু নেই।
নীশু!
নীশু!
আমি নীশুকে ডাকতে থাকি। আকুল হয়ে চারদিকে তাকাই। কোথাও নীশু নেই। কোথাও নেই নীশু।
আচানক আকাশ থেকে নীশুর মাথায় গুঁজে দেয়া শাদা পালকটি আমার সামনে ঝরে পড়ে; আমি উর্ধ্বে তাকিয়ে দেখি একটি শাদা কবুতর উড়ে যাচ্ছে, দূর অসীমের দিকে।
পালকটি তুলে নিয়ে আমি বুকের গভীরে গেঁথে রাখি।

৫ জুলাই ২০১৬



।.।.।.।.।.।.।.।.।


এসব গল্পকণিকায় পাঠকেরা কোনো অর্থ খুঁজে পাবেন না; আদতে কোনো সিরিয়াস বা হাল্কা ভাবার্থ সন্নিবিষ্ট করে এগুলো লেখা হচ্ছে না; মাথায় যা আসে তাই লেখা।
তবে, লেখক নিশ্চয়ই কিছু একটা উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই এসব লিখছে।



।.।.।.।.।.।.।.।.।

[গল্পকণিকা কী? একটা লেখা— কখনো মনে হয় গল্প, কখনো কবিতা। একটা গল্পে কাব্যরস বিদ্যমান থাকা স্বাভাবিক; একটা কবিতায়ও আমরা অনায়াসে গল্প বলে যেতে পারি। এ ধরনের ফিউশনকে কী নাম দেয়া যায় তা ভাবছি অনেকদিন ধরে। গল্পকণিকা মূলত ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র গল্প, কিন্তু রবীন্দ্রনাথের গল্প-সংকেত নয়, কারণ এগুলো স্বয়ংসম্পূর্ণ। এ নামটা আমি ব্লগে ব্যবহার করছি। কেউ এসব গল্পকণিকাকে কবিতা বলে অভিহিত করলে ভুল করবেন না মনে করি।
গল্পকণিকা হলো পারমাণবিক বোমা; ক্ষুদ্রত্বে মহাবিস্ময়!]

মন্তব্য ১৫ টি রেটিং +৭/-০

মন্তব্য (১৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:০০

জটিল ভাই বলেছেন:
একজন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাইসোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই
জীবন মানে কি? এই কঠিন শব্দের অর্থ যখন খুঁজে চলেছি যুগযুগ ধরে ঠিক তখনই এমন এক পরিব্রাজকের সন্ধান পেলাম যিনি নিজের ইচ্ছেমতো গায়ক হচ্ছেন, লেখক হচ্ছেন, সুরকার হচ্ছেন, গীতিকার হচ্ছেন, কবি হচ্ছেন, সাহিত্যিক হচ্ছেন। মন পাখি হয়ে যখন সাহিত্যের যে ডালে খুশি সে ডালে গিয়ে বসছেন। কাউকে খুশি করতে নয়, নিজের মনকে খুশি করতে, মনের খোড়াক জুটাতেই অবিরত তিনি বিনয়ীভাবে এসব করে চলেছেন। তা হোক কারো কাছে সোনা, কিংবা হোক কারো কাছে ধুলোবালিছাই। আমার কাছে এখন তা কেবলই জীবনের মানে.......

১৮ ই জানুয়ারি, ২০২২ রাত ৯:১৮

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: কমেন্ট পড়ে অনেক বেশি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়লাম। এমন কমেন্টের উত্তর দেয়ার ভাষা নেই আমার।

কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা।

২| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:২৭

ঋণাত্মক শূণ্য বলেছেন: আমার মেয়ে হবার পর যখন হসপিটালের কেয়ার ইউনিট থেকে আমার স্ত্রী ও মেয়েকে দিলো, আমি তাকে কোলে করে কেবিনে নিয়ে আসলাম। আমাকে সিড়ি বেয়ে ৪তলা থেকে ১৫ তলায় উঠতে হয়েছে। আমার স্ত্রী এত সময়ে লিফটে কেবিনে পৌছে গেছে। কেবিনে ফিরে মেয়েকে কোলে নিয়ে কথা বলতে বলতে ২মিনিটে তার বড় হওয়া, এবং বিয়ের কথায় চলে আসলাম। হুঁ হুঁ করে কেঁদে উঠেছিলাম, মা আমার আমাকে ছেড়ে অন্যের ঘরে চলে যাবে।

দ্বিতীয় গল্প পড়ে সেটাই মনে পড়ে গেলো!

১৮ ই জানুয়ারি, ২০২২ রাত ৯:২২

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: সন্তানদের নিয়ে আমাদের আবেগের অন্ত নেই। মাত্র ২ মিনিটেই শিশু থেকে বড়ো হয়ে স্বামীর ঘরে চলে যাওয়ার ভিজুলাইজেশন, অতঃপর হুঁ হুঁ করে কেঁদে ওঠায় যে আবেগ, সেটাও ভাষায় প্রকাশ করা দুঃসাধ্য। অনেক ধন্যবাদ কন্যাকে নিয়ে আবেগের কথাটা শেয়ার করার জন্য।

৩| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৩৭

শায়মা বলেছেন: হলুদ পাখির চাইতে কালোপাখিটাই বেশি ভালো ছিলো তাইনা?

১৮ ই জানুয়ারি, ২০২২ রাত ৯:২৩

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ইউ গট দ্য পয়েন্ট। কী জানি কী বেদনা ছিল কালো মেয়েটার মনে, তাই সে সুদৃশ্য হলুদ পাখি হয়ে বাবার কাছ থেকে অদৃশ্যই হয়ে গেল।

৪| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১০:৩৬

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: অনেক কিছুই যায় যে বলে, কিছুই না বলে.....

৩টির সাথেই আবেগে সম্পৃক্ত হতে পেরেছি। তবে শেষেরটা খুব বেশী ছুঁয়ে গেছে। +++++

১৯ শে জানুয়ারি, ২০২২ দুপুর ২:৩০

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ প্রিয় ব্লগার। শুভেচ্ছা নিন।

৫| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১২:১৬

আহমেদ জী এস বলেছেন: সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই,




"কণিকা"য় এসে "ক্ষনিক" এর জন্যে ভাবের পরিখায় পড়ে গেলুম। অতলান্ত পরিখা- দেয়াল আছে বটে, তল নেই। পাখি হয়ে উড়ে আসা ছাড়া সেখান থেকে বেরুনোর পথ নেই আর! আমিও একটি পাখি হয়ে গেলুম..............

১৯ শে জানুয়ারি, ২০২২ দুপুর ২:৩১

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন:
পাখি হয়ে উড়ে আসা ছাড়া সেখান থেকে বেরুনোর পথ নেই আর! আমিও একটি পাখি হয়ে গেলুম..............
গভীর তাৎপর্যময় কথা। অনেক ধন্যবাদ প্রিয় আহমেদ জী এস ভাই। শুভেচ্ছা।

৬| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০২২ ভোর ৪:৩৯

নেওয়াজ আলি বলেছেন: ভালো লাগলো পড়ে। আমার মেয়েরা সুন্দর ও ছোট। যখন ধীরে ধীরে রুপবতী মা হবে হলুব পাখির মত বাসা ছেড়ে উঠে যাবে । উফ কষ্ট!

১৯ শে জানুয়ারি, ২০২২ দুপুর ২:৩২

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: মেয়েদের জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা থাকলো। ভাগ্যবতী মেয়েদের ভাগ্যবান বাবা হয়ে থাকুন।

৭| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০২২ বিকাল ৩:৪৭

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
কন্যাগুলো বড় হয়ে পাখি হয়ে উড়ে যায় বাবার বুকের পিঞ্জরা খালি করে।

১৯ শে জানুয়ারি, ২০২২ বিকাল ৫:২৮

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: করুণ একটা কমেন্ট। গল্প ৩টা পড়ার জন্য ধন্যবাদ মাইদুল সরকার ভাই। শুভেচ্ছা।

৮| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১০:১৪

আমি তুমি আমরা বলেছেন: পরগাছার গল্পটা বেশ ভাল লেগেছে। :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.