নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শব্দকবিতা : শব্দেই দৃশ্য, শব্দেই অনুভূতি [email protected]

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই

দুঃখের কবিতাই শ্রেষ্ঠ কবিতা। ভালোবাসা হলো দুঃখ, এক ঘরে কবিতা ও নারী।

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিশ্বকাপ ফুটবল ২০২২-এর ফিক্সার তৈরি ও ড্র এবং খেলাধুলাপ্রিয় বাঙালিদের ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা সমর্থন

২৭ শে নভেম্বর, ২০২২ বিকাল ৩:০৮

এ পোস্টটার পেছনে আমাকে প্রচুর শ্রম ও সময় দিতে হয়েছিল। শেয়ার করেছিলাম গত ২৪ নভেম্বর ২০২২-এর বিকাল ৪টার দিকে। ফুটবলপ্রেমীদের কাছে পোস্টটা বিশেষ আগ্রহ সৃষ্টি করবে এবং বিশ্বকাপের মরসুম চলছে, এটা মনে করেই এটার পেছনে এত শ্রম ও ঘাম দিয়েছিলাম। কিন্তু উইক-এন্ড হওয়ায় ব্লগারগণ পূর্বাহ্নেই পিসি গুটিয়ে রেস্টে চলে যান। এ কারণেই পোস্টটা খুবই কম সংখ্যক ব্লগারের নজরে পড়েছে। অথবা, ব্লগারগণ ঠিকই জাগ্রত ছিলেন, কিন্তু ফুটবলপ্রেমীরা কেউ উপস্থিত ছিলেন না, অথবা সবাই উপস্থিত ছিলেন, কিন্তু এ পোস্টের বিষয়বস্তুর প্রতি কারো কোনো আগ্রহই ছিল না। এত শ্রমের পোস্ট কেউ দেখবে না? তাই কি হয়? তাই আপনাদের বিশেষ কোনো অনুরোধ না থাকা সত্ত্বেও এটি মনের মুকুর থেকে পুনঃপ্রচার করা হলো। আগের বার চাঁদগাজী ভাই ও সাহাদাত উদরাজী ভাই পোস্টটিতে কমেন্ট করেছিলেন। তাদের প্রতি ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা।

এ পোস্টটা পাবলিশ করার দরকার ছিল বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা শুরু হওয়ার আগে। কিন্তু বিশ্বকাপ ক্রিকেটের উন্মাদনা আর গানের ডামাডোল নিয়া এতই উন্মত্ত ছিলাম যে, এ পোস্ট লিখতে লিখতে ফুটবল বিশ্বকাপ শুরুই হইয়া গেল। তবে, বিষয়টা খুবই ইন্টারেস্টিং এবং সার্বজনীন, যে-কোনো সময়ই এটা আগ্রহ সৃষ্টি করবে, আপনারাও পড়ে মজা পাবেন।

এ পোস্ট পড়ার আগে-পরে ফুটবল সংক্রান্ত আমার নীচের পোস্টগুলোও পড়ে দেখতে পারেন :

১। বিশ্বকাপ ফুটবল-২০১৪-এর ড্র ও ফিকশ্চার যেভাবে তৈরি করা হয়েছিল

২। বিশ্বকাপ ফুটবল ২০১৪-এর প্রেডিকশন - একটি মজার খেলা এবং প্রিয়দলকে ভালোবাসা ও অন্যান্য প্রসঙ্গ

৩। ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা বাদ পড়ে যাক। নতুন নতুন চ্যাম্পিয়ন দেখতে চাই

যে-কোনো টুর্নামেন্টের ড্র ও ফিক্সশ্চার তৈরি একটা অত্যন্ত ইন্টারেস্টিং কিন্তু জটিল বিষয়। একটা নিখুঁত ড্র সম্পন্ন করতে চাইলে এর পদ্ধতিটা জেনে নেয়া ভালো।

যে কোনো টুর্নামেন্টের ড্র ও ফিকশ্চার তৈরি করে আমি প্রচুর আনন্দ পেয়ে থাকি। আগের দিনে ফুটবল বিশ্বকাপের ফাইনাল ড্র-এর আগে নিছক মজা ও আনন্দ করার উদ্দেশ্যে আমি আমার নিজস্ব ড্র করে ২৪ বা ৩২ টিমের গ্রুপিং তৈরি করতাম। ফাইনাল ড্র-এর সাথে মিল-অমিলের তালিকা বানিয়েও অনেক মজা পেতাম যদিও এ তালিকা মূল তালিকার সাথে জীবনেও মিলবে না। মিলে যাবার সম্ভাব্যতা কত তা অঙ্ক কষে বের করতে গেলে এখন আমার ব্রেইনে আগুন ধরে যাবে। ম্যাভেরিক বা আরইউ বা সাড়ে চুয়াত্তর ভাইয়েরা এ হিসাব করে দেখতে পারেন। তবে, ৩২ টিমের লটারির কতগুলো অপশন হতে পারে, তা আমি অনলাইন ক্যালকুলেশন চেপে বের করলাম, যা হবে মিনিমাম 32!=2.6313084e+35. এ সংখ্যাটা কত? দেখি, কবি শায়মাবীন্দ্রনাথ অপ্‌সরা বলতে পারেন কিনা। আমি পারছি না :) পারমুটেশন-কম্বিনেশনের অঙ্ক আর কী :)

মূল আলোচনায় যাওয়া যাক। বর্তমান কালে, বা আগের দিনের ফুটবলেরও, বিশ্বকাপের ড্র ও ফিকশচার কীভাবে করা হয়, তা জানার আগ্রহ যাদের আছে, তারা এ পোস্টে ঢুকুন। যারা অংকে ভালো, খেলাধূলা বোঝেন ও পছন্দ করেন, তারাও এ পোস্ট ভালো বুঝবেন। ঢুকে পড়ুন। অংকে যাদের ভয়, তারা ভিতরে না ঢুকে বাদাম খান, খামাখা মাথা হ্যাং কইরেন না।

গোটা পাঁচেক ফুটবল, হকি ও ভলিবল টুর্নামেন্টের ড্র পরিচালনা ও খেলা আয়োজনের অভিজ্ঞতা. আমার ঝুলিতে জমা রয়েছে, যেখানে ২২ থেকে ২৯টা দলকে ৬ থেকে ৮টা দলে ভাগ করে গ্রুপিং করা হয়েছে। এ নিয়ে আমি যেমন গর্ব করি, খানিকটা অহংকারও করি মাঝে মাঝে :) ড্র শুরু করার আগে আমি ক্লিয়ার টার্মস অ্যান্ড ভয়েসে বলে নিতাম, আমি লটারি বা ড্র-এর কনসেপ্ট অনেক ভালো বুঝি। আমি শতভাগ স্বচ্ছতা বজায় রেখে ড্র করবো, দয়া কইরা কেউ ভেজাল কইরেন না। আর কেউ যদি মনে করেন, শুধু আপনি না, বাংলাদেশে আমার চাইতে কেউ অনেক ভালো বোঝেন ড্র, আমার সামনে/পাশে এসে বসেন, দয়া করিয়া আমাকে হেল্পান। তো, থ্রেট খাইয়া আর সামনে আগাইবার সাহস পাইত না কেউ। ড্র-এর কনসেপ্ট বুঝলে ড্র করা সহজ, ড্র-এর ভুলটাও সহজে বুঝে ফেলা সহজ। ২০০০ সালে কোনো এক টুর্নামেন্টে এক অর্গানাইজিং বডি ড্র-তে বিরাট একটা কারচুপি করে তার দুর্বল দলটা যাতে সহজেই ফাইনালে যেতে পারে, আর আমার শিরোপাপ্রত্যাশী শক্তিশালী ভলিবল দল যাতে শিরোপাধারী দলের সাথে সেমিফাইনালে মুখোমুখী হয়, এমন দুরভিসন্ধিমূলক একটা ফিকশচার আগেই বানিয়ে রাখে। ওটা দেখামাত্রই আমি ভুলটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেই। আমার আপত্তি অগ্রাহ্য করে ড্র সম্পন্ন করা হয়। এ নিয়ে প্রতিবাদ করতে করতে আমার জান শেষ হইয়া যায়, যদিও, টেকনিক্যাল কারণে ঐ ড্র বাতিল করা সম্ভব হয় নাই। ভাগ্যের কী নির্মম প্রতিশোধ। তাদের দল সেমি-ফাইনালে হেরে যায় অন্য এক দুর্বল দলের সাথে। আমার দল সেমিফাইনালে টাফ ফাইট দিয়া জিতে যায়। ফাইনালে আমার দল কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই খুব সহজে জিতে যায়।

ড্র-য়ের গীত গাইতে এসে নিজের গীত গাইলাম।

ড্র-য়ের মূলসূত্র হলো- একই গ্রুপের দুটি দল লিগ পর্যায়ের পর ফাইনালের আগে আর মুখোমুখি হবে না। কিন্তু মনে করে দেখুন, ২০০২ সালের বিশ্বকাপে ব্রাজিল আর টার্কি একই গ্রুপে ছিল, আবার তারা সেমি-ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল। এটা কীভাবে সম্ভব? সেবার পুরো ৩২টা দলকে আগেই নির্দিষ্ট শর্ত সাপেক্ষে দুইটি ডিভিশনে ভাগ করে ফেলা হয়েছিল। প্রতি ডিভিশনের চ্যাম্পিয়ন ফাইনালে উত্তীর্ণ হয়েছিল। যে-গ্রুপে ব্রাজিল ও টার্কি ছিল, মনে করে দেখুন, ব্রাজিল ও টার্কি ঐ ডিভিশনে সেমি-ফাইনালের আগে কিন্তু আর মুখোমুখি হয় নি।

আরেকটা সূত্র হলো, আগেই ফিকশচার তৈরি করে নিতে হবে। অর্থাৎ, A1 এর সাথে B2, নাকি H2 খেলবে, C1 এর সাথে D2, নাকি G2 খেলবে, পরের রাউন্ডগুলোতে কে, কার সাথে খেলবে, এটা আগে সাজিয়ে নিতে হবে। কোন খেলাটা কোন মাঠে কোন সময়ে হবে, সেই শিডিউলও যথাসম্ভব আগেই ফিক্স করে নেয়া হয়। তবে, বিশ্বকাপের মতো বড়ো আসরে ভেনু, দর্শক, হোম গ্রাউন্ড ফ্যাসিলিটিস, ইত্যাদি বিবেচনা করে কিছু কিছু শিডিউল ড্র-এর পরেও ফিক্স করা হয়। ছোটো ছোটো টুর্নামেন্টে ক্যাচাল লাগে অনেক বেশি। সেখানে আগেই গ্রাউন্ড, খেলার টাইম, ইত্যাদি কঠোরভাবে ফিক্স করে নেয়া হয়।

বর্তমান বিশ্বকাপের ড্র ০১ এপ্রিল ২০২২-এ দোহায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এ ড্র কীভাবে করা হয়েছিল, চলুন, এবার তা আলোচনা করা যাক। এটি বোঝার জন্য আপনারা এ ভিডিওটির ৪৮ মিনিটের পর থেকে দেখে নিতে পারেন : Final Draw - FIFA World Cup Qatar 2022



দেখুন এই ছবিটিও।



আমরা জানি, কোন কোন দল এবারের বিশ্বকাপে খেলছে। তবু একনজরে দলগুলো দেখে নিন। লক্ষ করুন, প্রতিটা দলের নামের পাশে ব্র্যাকেটে সংখ্যা দেয়া আছে, এটি হলো ৩১ মার্চ ২০২২ তারিখে দলগুলোর ফিফা র্যাং কিং। ঐ র্যা ঙ্কিঙের সাথে বর্তমান র্যা ঙ্কিঙের কিন্তু মিল নেই।

AFC (6)
• Iran (21)
• Japan (23)
• South Korea (29)
• Australia (42)
• Saudi Arabia (49)
• Qatar (51) (hosts)

CAF (5)
• Senegal (20)
• Morocco (24)
• Tunisia (35)
• Cameroon (37)
• Ghana (61)

CONCACAF (4)
• Mexico (9)
• United States (15)
• Costa Rica (31)
• Canada (38)

CONMEBOL (4)
• Brazil (1)
• Argentina (4)
• Uruguay (13)
• Ecuador (46)

UEFA (13)
• Belgium (2)
• France (3)
• England (5)
• Spain (7)
• Portugal (8)
• Netherlands (10)
• Denmark (11)
• Germany (12)
• Switzerland (14)
• Croatia (16)
• Wales (18)
• Serbia (25)
• Poland (26)

সিডিং বা শীর্ষদল নির্বাচন (Selection of Seeds)

মোট গ্রুপের সংখ্যা হলো ৮টা। ৮টা দলের সেরা দলকে প্রতিদলের শীর্ষদল বা সিড (Seed) বলা হয়। স্বাগতিক কাতারকে অটোম্যাটিক্যালি একটি শীর্ষদল হিসাবে এবং ১ নম্বর (এ) গ্রুপের শীর্ষদল ও ১ নাম্বার (এ-১) দল হিসাবে নির্বাচন করা হয়। এরপর ৩১ মার্চ ২০২২ তারিখে ফিফা র্যা ঙ্কিঙের শীর্ষ ৭টি দলকে (যে-দলগুলো ২০২২ বিশ্বকাপ খেলার জন্য কোয়ালিফাই করেছে) বাকি ৭টি গ্রুপের শীর্ষদল বা ‘সিড’ (Seed) হিসাবে নির্বাচন করা হয়। উপরে দলগুলোর তালিকা ও পাশে উল্লেখিত র্যা ঙ্কিং থেকে সহজেই এদেরকে বের করা যায়। কাতারসহ ৮টি শীর্ষ দল হলো :

Qatar (51) (hosts)
Brazil (1)
Belgium (2)
France (3)
Argentina (4)
England (5)
Spain (7)
Portugal (8)

নীচের ছবিতে উপস্থাপকগণের বাম পাশে যথাক্রমে 1, 2, 3 ও 4 নাম্বার লিখিত স্টিকারসহ ৪টি পট বা পাত্র বা কাচের জার রাখা আছে। এগুলোর প্রতিটিতে ৮টি করে লটারি রাখা আছে। লটারিগুলো ইন্টারেস্টিং। প্রতিটা টিমের নাম একটা রঙ্গিন ফিতায় লিখে ফিতাটা মুড়িয়ে একটা বল-আকৃতির বস্তুর ভিতর রাখা হয়েছে। এগুলোই লটারি। ৩২টি টিমের জন্য এরূপ ৩২টি বল সমান ৪ ভাগে ভাগ করে পনীচের বর্ণনা মোতাবেক ৪টি পটে রাখা হয়েছে।



১। পট নাম্বার-১। সিডভুক্ত ৮টি দলকে রাখা হয় ১ নাম্বার পটে। উপরে একবার বলেছি, বোঝার জন্য আবারও বলি। স্বাগতিক হিসাবে কাতারকে ১ নাম্বার গ্রুপের (এ গ্রুপের) সিড ধরা হয়। বাকি ৩১টা দল থেকে ফিফা র্যা ঙ্কিঙের শীর্ষ ৭টি দলকে বাকি ৭টা গ্রুপের সিড নির্বাচন করা হয়। এ ৮টা দলের লটারি রাখা হয় ১ নাম্বার পটে। দলগুলোর তালিকাও উপরে একবার দেয়া হয়েছে, আবারও নীচে দেখুন।

Qatar (51) (hosts)
Brazil (1)
Belgium (2)
France (3)
Argentina (4)
England (5)
Spain (7)
Portugal (8)

২। পট নাম্বার-২। বাকি ২৪টি দলের মধ্যে ফিফা র্যাং কিঙে থাকা পরের ৮টা দলকে (৮-১৫) রাখা হয় ২ নাম্বার পটে। এরা হলেন :

Mexico (9)
Netherlands (10)
Denmark (11)
Germany (12)
Uruguay (13)
Switzerland (14)
United States (15)
Croatia (16)

৩। পট নাম্বার-৩। বাকি দলগুলোর মধ্য থেকে অনুরূপভাবে ফিফা র্যা ঙ্কিঙের পরের ৮টা দলকে (১৬-২৩) ৩ নাম্বার পটে রাখা হয়। দলগুলো :

Senegal (20)
Iran (21)
Japan (23)
Morocco (24)
Serbia (25)
Poland (26)
South Korea (29)
Tunisia (35)

নোট : Wales (18), Costa Rica (31) ও Australia (42)-এর র্যা ঙ্কিং এখানে বিবেচনায় নেয়া হয় নি। এ ৩টি দল বিভিন্ন প্লে-অফ ম্যাচ খেলে কোয়ালিফাই করেছে। এদের রাখা হয়েছে ৪ নাম্বার পটে। ড্র-এর সময় অবশ্য এ দলগুলোর নাম চূড়ান্ত হয় নি, কারণ, এদের খেলা তখনো বাকি ছিল।

৪। ৪ নাম্বার পট। Wales (18), Costa Rica (31) ও Australia (42) সহ ফিফা র্যা ঙ্কিঙের বাকিদলগুলো।

Cameroon (37)
Canada (38)
Ecuador (46)
Saudi Arabia (49)
Ghana (60)
Wales (18)
Costa Rica (31)
Australia (42)

উপস্থাপকগণের ডানপাশে অনুরূপ আরো ৮টা পট বা কাচের জার রাখা আছে। এদের প্রতিটিতে ৪টি করে বল-আকৃতির লটারি আছে। এ বলগুলোর ভিতরে গ্রুপের ইংলিশ লেটারের সাথে ১, ২, ৩ ও ৪ সংখ্যাগুলো যুক্ত করে নাম্বারিং করা হয়েছে; যেমন A গ্রুপের জন্য A-1, A-2, A-3 ও A-4, B গ্রুপের জন্য B-1, B-2, B-3 ও B-4, এভাবে H গ্রুপ পর্যন্ত সকল গ্রুপের নাম্বারিং করা হয়েছে।

সিড বা শীর্ষদলের ড্র

প্রথমেই শীর্ষদলগুলো কে কোন গ্রুপের শীর্ষদল হবে,তার ড্র হয়। আগেই বলা হয়েছে, কাতার স্বাগতিক দেশ হওয়ায় কাতারকে শুরুতেই এ গ্রুপের শীর্ষদল, শুধু তাই নয়, ১ নাম্বার দল বা এ-১ হিসাবে নির্বাচন করা হয়েছে।

ড্র কীভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে, তা এই ভিডিওতে দেখতে পাবেন ৪৮ মিনিটের পর থেকে। যারা আগ্রহী, তারা ক্লিক করুন ভিডিওটি : Final Draw - FIFA World Cup Qatar 2022



সেই সাথে আবার লক্ষ করুন নীচের ছবিটিও।



ছবিতে উপস্থাপকগণের ডানপাশে A থেকে H পর্যন্ত ৮টা পট বা কাচের জার দেখতে পাচ্ছেন। তাদের বাম পাশে 1-4 পর্যন্ত ৪টা পট বা কাচের জার দেখতে পাচ্ছেন।

পট বা জার থেকে একটা একটা করে লটারি তোলা হয়।

প্রক্রিয়াটি নিম্নরূপ।

এটি পড়ার সময় জটিল মনে হতে পারে, তবে এটাই সবচাইতে ইন্টারেস্টিং ও গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্ট। বোঝার জন্য পড়া এবং ভিডিও দেখা একসাথে করলে অ্যাসিমিলেশন বেটার হবে।

১। প্রথমে এক ব্যক্তি ১ নাম্বার পট থেকে প্রথম লটারিটি তোলেন (বল-আকৃতির লটারি, যা উপরে বর্ণনা করা হয়েছে)। কাতার যাতে প্রথম লটারিতে ওঠে, এজন্য কাতারের লটারিটার রঙ থাকে ডিপ মেরুন বা পিংক কালারের, যাতে সহজেই চেনা যায়। বাকিগুলোর রঙ সাদা, গায়ে বিভিন্ন কালারের দাগ। আগেই প্ল্যান করা থাকে যে, কাতারের লটারিটিই সবার আগে তোলা হবে। উক্ত ব্যক্তি বলাকৃতির লটারিটি খুলে ভেতর থেকে পেঁচানো ফিতাটি বের করে দর্শকদের সামনে তুলে ধরেন। ইংরেজিতে নাম লেখা দেখা যাচ্ছে – QATAR. কাতার চলে যাবে A গ্রুপে।

২। উপস্থাপকের ডানদিকে রাখা A-H পর্যন্ত পটে ৪টি করে লটারি আছে। প্রতি পটের ১ নাম্বার লটারিটি ডিপ মেরুন/পিংক কালারের, বাকিগুলো সাদা রঙের, গায়ে বিভিন্ন রঙের দাগ। এখানেও প্ল্যান করা থাকে যে, শীর্ষদলের লটারি করার সময় ক্রমিক অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট পটের পিংক কালারের লটারিটি তোলা হবে।

৩। ১ নাম্বার পট থেকে কাতারের লটারি তোলার পর এবার অন্য এক ব্যক্তি A নাম্বার পট থেকে পিংক কালারের লটারিটি তোলেন। এটিতে লেখা থাকে A1, অতঃপর কাতারকে A গ্রুপের A1 দল হিসাবে সিলেক্ট করা হয়।

৪। এরপর, আরেক ব্যক্তি পুনরায় ১ নাম্বার পট থেকে ১টি লটারি তোলেন, যেখানে ১টি শীর্ষদলের নাম পাওয়া যায়। এ দলটি হবে B গ্রুপের B1 দল। ফরমালিটি অনুযায়ী আরেক ব্যক্তি B নাম্বার পট থেকে পিংক কালারের লটারিটি তোলেন, যেটিতে স্বভাবতই B1 লেখা থাকে। এবার এ দলটিকে B গ্রুপের B1 দল হিসাবে সিলেক্ট করা হয়।

৫। এভাবে একে একে ১ নাম্বার পট থেকে বাকি ৬টি শীর্ষদলের লটারি তোলা হয় এবং পর্যায়ক্রমে C, D, E, F, G ও H গ্রপের শীর্ষদলগুলোকে নিজ নিজ গ্রুপের ১ নাম্বার দল হিসাবে নির্বাচন করা হয়।

এভাবে ৮টি গ্রুপের ৮টি শীর্ষদল বা সিড নির্বাচনের লটারি শেষ হয়। ১ নাম্বার পটের পর এবার ২ নাম্বার পট থেকে লটারি তোলার পালা।

৬। জনৈক ব্যক্তি ২ নাম্বার পট থেকে প্রথম লটারিটি তোলেন। এটি A গ্রুপের মধ্যে পড়বে। এভাবে ২ নাম্বার পট থেকে একে একে বাকি ৭টি লটারি তোলা হয়, যেগুলো পর্যায়ক্রমে B, C, D, E, F, G ও H গ্রুপের মধ্যে ফেলা হয়। আরো খোলসা করে নীচে বলছি।

৭। ২ নাম্বার পট থেকে প্রথম লটারিটি তোলা হলো, যা A গ্রুপের মধ্যে পড়বে। অন্য এক ব্যক্তি A নাম্বার পট থেকে ১টা লটারি তোলেন। শীর্ষদলের নাম্বার A1 আগেই তোলা হয়েছে, কাজেই বাকি আছে A2, A3, ও A4; এখন যে নাম্বারটি লটারিতে উঠবে, সে অনুযায়ী এ দলটির অবস্থান হবে।

এখানে অতি গুরুত্বপূর্ণ একটা ফর্মুলা আছে। একই গ্রুপে একই কোয়ালিফিকেশন জোন বা কনফেডারেশন থেকে কোয়ালিফাই করা ২টা টিম থাকতে পারবে না। অর্থাৎ, একই গ্রুপে এশিয়া মহাদেশের ২টা টিম, বা আফ্রিকা অঞ্চলের ২টা টিম থাকতে পারবে না। তবে, ইউরোপিয়ান অঞ্চলের টিম একই গ্রুপে সর্বোচ্চ ২টা থাকতে পারবে।

এটা কীভাবে নিশ্চিত বা সম্পন্ন করা হয়? যখন দেখা যায় যে লটারিতে ওঠা দলটা যে কোয়ালিফিকেশন জোনের, সিকোয়েন্সে পড়া ওই গ্রুপে অলরেডি ঐ জোনের আরেকটা টিম আছে (ইউরোপের ক্ষেত্রে ২টা), তখন ঐ গ্রুপটা স্কিপ করে পরের গ্রুপে যাওয়া হয়। পরের গ্রুপে ওটা ফেলার পর তার পরের লটারিটা আবার আগের স্কিপ করা গ্রুপে নিয়ে যাওয়া হয়, তবে, এবারও যদি আগের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়, তবে, এবারও স্কিপ করে পরের গ্রুপে যাওয়া হয়, এবং ওটা শেষ করে আবার স্কিপ করা গ্রুপের লটারি সম্পন্ন করা হয়।

উদাহরণ। বিষয়টা একটা উদাহরণ দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করছি। শেয়ার করা ভিডিওটির ১.০৪.৪৪-এ দেখুন। G গ্রুপের লটারিতে উঠেছে উরুগুয়ের নাম। G গ্রুপের শীর্ষদল হলো ব্রাজিল। ব্রাজিল এবং উরুগুয়ে একই কোয়ালিফিকেশন জোন CONMEBOL-এর অন্তর্ভুক্ত বিধায় উরুগুয়েকে G গ্রুপে না দিয়ে পরের গ্রুপ H-এ দেয়া হলো, যেখানে শীর্ষদল হলো পর্তুগাল, যা অন্য কোয়ালিফিকেশন জোন UEFA-এর অন্তর্গত। পরের লটারিতে ওঠে সুইজারল্যান্ড, ওটিকে ফেলা হয় আগে স্কিপ করে যাওয়া G গ্রুপে।

৩। এভাবেই ৩ ও ৪ নাম্বার পটের লটারি সম্পন্ন করা হয়।



ফিকশ্চার তৈরি

এবার ফিকশ্চার কীভাবে তৈরি হয় তার উপর সংক্ষেপে আলোকপাত করছি। ড্র-এর আগেই ফিকশ্চার তৈরি করে নিতে হবে। ড্র-এর পর নম্বরযুক্ত ইংলিশ লেটারগুলো, যথা, A1, A2, B3, G-4, ইত্যাদির বিপরীতে যে-নামগুলো পাওয়া গেল, সেগুলো লিখে ফেলতে হবে।

৩২-দল টুর্নামেন্টের জন্য ৮টি গ্রুপ করাই উত্তম, অন্যথায় খেলার সংখ্যা বেড়ে যাবে। ১ম গ্রুপকে এ গ্রুপ, ২য় গ্রুপকে বি গ্রুপ, এভাবে বাকি গ্রুপগুলোকে যথাক্রমে সি থেকে এইচ পর্যন্ত চিহ্নিত করতে হবে। আবার একই গ্রুপের ভিতর শীর্ষ বাছাইকে ১ নম্বর (এ গ্রুপের হলে এ-১, বি গ্রুপের হলে বি-১, ইত্যাদি) এবং বাকিগুলোকে যথাক্রমে ২, ৩ ও ৪ নম্বর দল হিসাবে চিহ্নিত করতে হবে (এ গ্রুপের ক্ষেত্রে এ-১, এ-২, এ-৩ ও এ-৪। বাকিগুলোও এভাবেই হবে)।

ফিকশ্চার তৈরির জন্য অনেক পদ্ধতি আছে। একটি পদ্ধতি আলোচনা করছি। এ পদ্ধতির মূলসূত্র হলো গ্রুপ লিগের পরে ফাইনাল খেলা ছাড়া একই গ্রুপের দলগুলোর মধ্যে মাঝপথে আর মুখোমুখি হবার সম্ভাবনা থাকবে না। ব্যতিক্রম হিসাবে শুরুতেই আমি ২০০২ বিশ্বকাপের কথা উল্লেখ করেছি।

ধরে নিই প্রতি গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন ও রানার-আপ দল ২য় রাউন্ডে যাবে। এ প্রসঙ্গে আপনাদের স্মরণ করিয়ে দিই আগের দিনের কথা যখন ২৪টি দল খেলতো। ঐ সময়ে ২৪টি দলকে ৬ গ্রুপে ভাগ করা হতো, ১৬টি দল ২য় রাউন্ডে উঠতো। প্রতি গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন ও রানার মিলে হতো ১২টি দল, আর ৬টি ৩য় স্থান লাভকারী দলের মধ্য থেকে সেরা ৪টি ২য় স্থান লাভকারী দল ২য় রাউন্ডে উঠবার সুযোগ পেতো। ঐ ফিকশ্চার তৈরি বর্তমানের চেয়ে অনেক বেশি জটিল ছিল। তবে গ্রুপ অব ডেথ তখন বর্তমানের মতো এত মুষড়ে পড়তো না, কেননা কোনো শক্তিশালী দল দুর্ভাগ্যক্রমে গ্রুপে ৩য় স্থান লাভ করলেও সেরা ৪টি ৩য় স্থান লাভকারী হবার আশায় শেষ পর্যন্ত খেলা ধরে রাখতো।

২য় রাউন্ডের জন্য এবার ফিকশ্চার নীচের মতো করে সাজানঃ

এ-১ বনাম বি-২
সি-১ বনাম ডি-২
ই-১ বনাম এফ-২
জি-১ বনাম এইচ-২

লক্ষ করুন, উপরে কোনো গ্রুপ থেকেই একটির বেশি দল উঠে আসে নি। এবার ১ম ম্যাচবিজয়ী বনাম ২য় ম্যাচবিজয়ী এবং ৩য় ম্যাচবিজয়ী বনাম ৪র্থ ম্যাচবিজয়ী ৩য় রাউন্ডে (কোয়ার্টার ফাইনাল) খেলবে। এটা অন্যভাবেও সাজানো যায়, যেমন, এবার ১ম ম্যাচবিজয়ী বনাম ৩য় বা ৪র্থ ম্যাচবিজয়ী এবং ২য় ম্যাচবিজয়ী বনাম ৪র্থ বা ৩য় ম্যাচবিজয়ী ৩য় রাউন্ডে (কোয়ার্টার ফাইনাল) খেলবে। যেহেতু ড্র-এর আগেই ফিকশচার তৈরি হয়, এজন্য কোনো দলেরই জানার উপায় নাই কার সাথে কে, কোন রাউন্ডে মুখোমুখি হবে। এজন্যই এটা লটারি, বা ভাগ্য  এরপর দুই কোয়ার্টার ফাইনাল বিজয়ী খেলবে সেমি-ফাইনাল। সেমি-ফাইনাল বিজয়ী খেলবে ফাইনালে। তাহলে দেখুন, এখানকার কোনো গ্রুপের অপর দলের সাথেই ফাইনালের আগে আর মুখোমুখি হবার সুযোগ থাকছে না।

চলুন দেখা যাক বাকি দলগুলোর ফিকশ্চার।

এ-২ বনাম বি-১
সি-২ বনাম ডি-১
ই-২ বনাম এফ-১
জি-২ বনাম এএইচ-১

এখান থেকেও উপরের নিয়মে কোয়ার্টার ফাইনাল ও সেমি ফাইনাল খেলার পর বিজয়ী দলটি ফাইনালে উত্তীর্ণ হবে।

এ তো গেলো ২য় রাউন্ডের ফিকশ্চার। ২য় রাউন্ডে উঠবার আগে একই গ্রুপের ফিকশ্চার কীভাবে করা হয় চলুন তা জেনে নিই। অনেক ভাবেই করা যেতে পারে, তবে সহজ পন্থাটি বলি। আগেই বলেই দলগুলোকে যথাক্রমে এ-১, এ-২, এ-৩ ও এ-৪, এভাবে সাজানো হয়।

এ-১ বনাম এ-২
এ-৩ বনাম এ-৪
এ-১ বনাম এ-৩
এ-২ বনাম এ-৪
এ-১ বনাম এ-৩

এভাবে বাকি গ্রুপের ফিকশ্চার সম্পন্ন করা হয়।

উপরোক্ত ফিকশ্চার হলো একটা সেট ফরম্যাট। প্রতিটা ম্যাচ কোন মাঠে কবে অনুষ্ঠিত হবে তা ড্র-এর আগেই ঠিক করে রাখা হয়; ড্র-এর সময় কেবল দলগুলো বসিয়ে দেয়া হয় জায়গামতো (উপরে যা বর্ণনা করা হয়েছে)। কখনো কখনো দর্শক চাহিদা, হোম গ্রাউন্ড ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করে কোনো কোনো ম্যাচের মাঠ ও সময়সূচি পরিবর্তন করা হয়ে থাকে। ক্রিকেট ওয়ার্ল্ডকাপে এ ফ্যাক্টরগুলো বেশি বিবেচনা করা হয়।

এ ছিল ড্র ও ফিকশ্চার সংক্রান্ত বিষয়গুলোর সংক্ষিপ্ত বিবরণ। এ বিষয়গুলো বুঝবার জন্য যাদের আগ্রহ আছে কিন্তু আগে জানতেন না, তারা এটা পড়ে খুব মজা পাবেন। যাদের আগ্রহ আছে এবং এ ব্যাপারে বিশদ জ্ঞান রাখেন, তারা এর উপর আরও অপশন কী কী হতে পারে তা খতিয়ে দেখবেন।

তবে অনেকের কাছেই এ ব্যাপারটা জটিল মনে হতে পারে। সেটা মাথায় রেখেই যথাসম্ভব সহজ নিয়মে ড্র আর ফিকশ্চার তৈরি করার পদ্ধতি বর্ণনা করলাম। কারো যদি একটুখানি ভালো লাগে, আমি খুশি হবো।

খেলাধুলাপ্রিয় বাঙালি

আমাদের মতো এত খেলাধুলাপ্রিয় জাতি বিশ্বে দ্বিতীয়টি আর আছে কিনা সন্দেহ। তবে, আমার অভিজ্ঞতা বলে, বাংলাদেশের মানুষ খেলাধুলার দর্শক বা সমর্থক হিসাবে খুব উন্নত মানের না। এর প্রকৃত চিত্র ও প্রমাণ পাওয়া যায় বিশ্বকাপ ফুটবলের সময়। কোনো আর্জেন্টিনাদলের সমর্থক যদি জানতে পারেন, আমি ব্রাজিলের সমর্থক, অমনি তার মুখ কালো হয়ে যাবে এবং ভাইসভার্সা। আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল সমর্থক গোষ্ঠির মধ্যে ঝগড়া, খুনাখুনি কেবল বাংলাদেশেই হয়। বিশ্বকাপের সময় এ দেশে যত আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলের পতাকা উড়বে, খোদ আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলেও এত পতাকা উড়বে বলে মনে হয় না।

বাংলাদেশের মানুষ খেলাধুলা তেমন বোঝে বলেও মনে হয় না। আমরা মূলত হুজুগে গোষ্ঠি। ক্রিকেট খেলা শুরু হলে আমরা চাই বাংলাদেশ প্রতিটা ম্যাচেই জিতবে। প্রতিটা দলকেই হারাবে। আমাদের আশা এত বেশি ও এত বড়ো যে, বাংলাদেশ হেরে গেলে ক্রিকেট টিমকে তখন একহাত দেখে নিতে উঠে পড়ে লাগি।

আমাদের কিছু কিছু দর্শক আছেন, তারা শুধু বাংলাদেশ যখন কোনো খেলায় হারতে থাকে, বেছে বেছে শুধু সেই খেলাগুলো দেখেন। কিছু কিছু দর্শক আছেন, বাংলাদেশ হেরে গেলে তারা খুশি হোন, তখন বাংলাদেশকে নিয়ে ট্রল করার এলিমেন্ট পান অনেক। হেরে যাওয়া ম্যাচেও যে পজিটিভ কিছু থাকতে পারে, তা আমরা কখনো বিবেচনা করি না। এই গতবছরই অস্ট্রলিয়া, নিউজিল্যান্ড, জিম্বাবুয়েকে গুঁড়া করে দিল বাংলাদেশ। আমরা সেগুলো মনে রাখি নাই। আগামী ওডিআই বিশ্বকাপে সরাসরি খেলাত দৌড়ে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে আছে, সুপার লিগের রেজাল্ট দেখুন এই লিংকে।

যে কোনো দল আপনার ফেভারিট হতেই পারে, যেমন আমারও আছে ফেভারিট টিম। আমি সবসময়ই কামনা করবো আমার টিম যেন জিতে। কিন্তু ধরুন, আমি বললাম আজ আমার প্রিয় দল দক্ষিণ কোরিয়া হারাবে আর্জেন্টিনাকে/ব্রাজিলকে, অমনি কিছু সমর্থক তেড়ে আসবে আমাকে খুন করার জন্য। আরে ভাই, আমি বললাম বলেই কি দক্ষিণ কোরিয়া জিতে যাবে? আর দক্ষিণ কোরিয়া যদি জিতে যায়ই, তোমার ভেঙে পড়ার তো কোনো কারণ দেখি না, ভেঙে পড়বে আর্জেন্টাইন/ব্রাজিলিয়ান নাগরিকরা। কিন্তু তারা তোমার মতো এত হীনমন্য মানুষ না। তারা সুশীল, বোঝবান মানুষ। তারা খেলার আনন্দ উপভোগ করতে জানে। রম্য পোস্টের মধ্যে কিছু সিরিয়াস কথা ঢুকে গেল কিছু বালখিল্য সমর্থকের কারণে।

ফেইসবুকে বাংলার মানুষের বৈশিষ্ট্য খুব পরিষ্কারভাবে ফুটে ওঠে। হয়ত আমি স্টেটাস দিলাম - আজ আর্জেন্টিনা জিতবে - অমনি একদল তেড়ে আসবে, আমার অ্যাসেসমেন্ট ভুল, নিম্নমানের, কটূ মন্তব্যের বন্যা বয়ে যাবে। ব্রাজিল জিতবে - এরকম স্টেটাসেও একদল তেড়ে এসে পারে তো আমাকে কিডন্যাপ কইরা নিয়া যায় :) আমার দোষ হলো, কেন আমি বলতে গেলাম আজ ব্রাজিল/আর্জেন্টিনা জিতবে? আরে ভাই, ব্রাজিলও আমার দেশ না, আর্জেন্টিনাও আমার দেশ না। স্রেফ বিনোদনের জন্য তাদের খেলা দেখি। যে দলের খেলা ভালো লাগে, তাকে সাপোর্ট করে ভালোবাসা প্রকাশ করি। এ নিয়ে মুখ কালাকালি, মনোমালিন্য কেন? কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি কেন? এ পোস্টে উপরে কোথাও লিখছি কিনা মনে পড়ছে না। ফুটবল টিমকে সাপোর্ট করার ক্ষেত্রে আমার একটা বৈশিষ্ট্য আছে। সবসময়ই আমি এশিয়ান টিমের সাপোর্টার। এশিয়ান টিমের সাথে অন্য যে-কোনো টিমের খেলা হলে অটোমেটিক্যালি আমি এশিয়ান হয়ে যাই। যারা জাপান, দঃ কোরিয়া বা সউদি আরবের খেলা দেখে থাকেন, আমার বিশ্বাস, তারা এসব টিমের ভক্ত। এবারের বিশ্বকাপে জাপান ও দঃ কোরিয়া ইতিমধ্যে তাদের চমৎকার ক্রীড়ানৈপুণ্য দেখিয়েছে। আশা করছি তারা পরের রাউন্ডে চলে যাবে। আমার কাছে ভালো লাগবে, ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার যুদ্ধংদেহী দ্বৈরথী মনোভাবে থেকে সরে এসে আমাদের দর্শকগণ নির্মল আনন্দ উপভোগ করবেন প্রিয় দেশের খেলা দেখে।

ক্রিকেটে আমার প্রিয় দল আমার দেশ, আর আছে শ্রীলংকা, যাকে আমি বাংলাদেশের জন্য এক অনুপ্রেরণার উৎস মনে করি। ফুটবলে জান কোরবান করে দেয়ার মতো কোনো দলকে আমি সাপোর্ট করি না। তবে, সাপোর্টের ক্ষেত্রে আমার একটা বৈশিষ্ট্য আছে, এশিয়ান কোনো টিম যে-কোনো টিমের বিপক্ষেই খেলুক না কেন, আমি তখন এশিয়ান টিমের সাপোর্টার। আমার এ অভ্যাস সেই হদ্যিকাল থেকেই। কারো আগ্রহ থাকলে এ নিয়ে আমার ফেইসবুক স্টেটাস দেখতে পারেন

সবার জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা।

যে-সব সূত্র ব্যবহার করেছি :

১। আমার অভিজ্ঞতা। ১৯৯০ থেকে এ পর্যন্ত ফুটবল বিশ্বকাপের মাত্র ৩টা ম্যাচ, যা টিভিতে দেখিয়েছে, মিস করেছি। ১৯৯৬ থেকে এ পর্যন্ত ক্রিকেট বিশ্বকাপের ২টার ম্যাচের একটা করে ইনিংস মিস করা ছাড়া আর কোনো ম্যাচ দেখা আমি মিস করি নাই। এগুলো বললাম খেলাধুলায় আমার আগ্রহ ও অভিজ্ঞতা কী পরিমাণ তা বোঝানোর জন্য 

২। 2022 FIFA World Cup - উইকিপিডিয়া

৩। 2022 FIFA World Cup qualification

৪। 2022 FIFA World Cup seeding

৫। Video on Final Draw - FIFA World Cup Qatar 2022


মন্তব্য ১৫ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে নভেম্বর, ২০২২ বিকাল ৩:৩৩

জুল ভার্ন বলেছেন: সোনা ভাই, অনেক পরিশ্রমী পোস্ট! এই পোস্ট লিখতে যেসব রেফারেন্স ঘাটাঘাটি করতে হয়েছে- সেই সময়ে আপনি অনেকগুলো কবিতা গান লিখতে পারতেন। স্যোশাল মিডিয়ায় পরিশ্রমী লেখার পাঠক অত্যন্ত সীমিত। আমি তিন চারদিন ঘাটাঘাটি করে How the iconic FIFA World Cup Trophy is made....লিখেছিলাম। যা আমার নিয়মিত পাঠকগণও বর্জন করেছেন।

২৭ শে নভেম্বর, ২০২২ বিকাল ৩:৪০

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: এই পোস্ট লিখতে যেসব রেফারেন্স ঘাটাঘাটি করতে হয়েছে- সেই সময়ে আপনি অনেকগুলো কবিতা গান লিখতে পারতেন।

হাহাহা। অনেক দামি ও খাঁটি একটা কথা বলেছেন প্রিয় জুল ভার্ন ভাই। কিন্তু খেলাধুলাও একটাও একটা নেশা, যেমন নেশা গান ও সাহিত্যেও :) গানেই ডুবে ছিলাম, কিন্তু খুব অস্বস্তি লাগছিল এ পোস্ট লেখার সময় হয়ে উঠছিল না বলে।

আমার পোস্ট সচরাচর অনেক বড়ো হয়। ধৈর্যশীল সিরিয়াস পাঠক না হলে তাতে কেউ ঢোকেন না। আর যদি পোস্টের বিষয়বস্তু পাঠকের মনের মতো না, কিংবা পোস্টে যদি পাওয়ার মতো কিছু না থাকে, খামাখা এত লম্বা পোস্টের পেছনে সময় দিবে কে?

আপনার সবগুলো পোস্টই খুবই সাবলীল, তথ্যপূর্ণ এবং পাঠকের শেখার ও জানার জন্য কিছু না কিছু থাকে। পোস্টের সাইজও পাঠকের আয়ত্তের মধ্যেই থাকে। কিছু ব্যতিক্রম বাদে আমিসহ আপনার একটা পাঠকশ্রেণি আছেন এ ব্লগে। আপনি এগিয়ে যান।

শুভেচ্ছা রইল জুল ভার্ন ভাই।

২| ২৭ শে নভেম্বর, ২০২২ বিকাল ৩:৫৫

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
জটিল গণনা !

২৭ শে নভেম্বর, ২০২২ বিকাল ৪:০৩

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: হ্যাঁ জটিল। তবে, খুবই ইন্টারেস্টিং। অ্যালজেবরার মতো আর কী :)

৩| ২৭ শে নভেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:১২

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন:
- এই জিনিসে আমার আগ্রহ তৈরি হবে বলে মনে হয় না।

২৭ শে নভেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:০৪

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: সব জিনিসে আগ্রহ না থাকলেও চলে। অনেক মহৎ বিষয়ে আপনি লেগে আছেন। থাকুন সেটিতেই।

৪| ২৭ শে নভেম্বর, ২০২২ রাত ৯:২৩

নেওয়াজ আলি বলেছেন: বাংলাদেশের মানুষ একটু বেশী লাফায় এই দুই দল নিয়ে। সীমার অতিরিক্ত সবকিছু খারাপ।

২৭ শে নভেম্বর, ২০২২ রাত ১০:২৭

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: শতভাগ খাঁটি কথা বলেছেন নেওয়াজ আলি ভাই। দল সাপোর্ট করা নিয়ে কোন্দল আর কোনো দেশে হয় কিনা আমার জানা নাই। আমি আর্জেন্টিনা দল করি, যেমাত্র জানলাম আপনি ব্রাজিল দল করেন, অমনি আপনার বিরুদ্ধে লেগে গেলাম। এটা ফান করে হলে সেটা উপভোগ করা যেত, কিন্তু এটা হলো সিরিয়াসলি মুখ দেখা বন্ধ করে দেয়া, যা কিছু করা সম্ভব সেই আয়োজন করা। জঘন্য মনোবৃত্তি আমাদের।

৫| ২৭ শে নভেম্বর, ২০২২ রাত ১০:০৯

কল্পদ্রুম বলেছেন: বিভিন্ন গ্রুপের দলগুলো লটারির মাধ্যমে নির্ধারিত হয় এটুকুই জানতাম। এবার বিস্তারিত জানা হলো আরকি! সিডিং এর কারণ সম্ভবত সব গ্রুপে প্রতিযোগীতার একটা ভারসাম্য রক্ষা করা। আবার টপ দলগুলোর কেউ নিজেদের মধ্যে খেলে গ্রুপ পর্ব থেকেই যাতে বাদ না হয়ে যায় সেটাও হতে পারে। না কি অন্য কোন কারণ আছে?

২৭ শে নভেম্বর, ২০২২ রাত ১০:১৮

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: সিডিঙের কারণ আপনি হান্ড্রেড পারসেন্ট পারফেক্টলিই আইডেন্টিফাই করেছেন। এতবড়ো পোস্টটা পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ প্রিয় গল্পকার। অনেকদিন পর দেখছি আপনাকে ব্লগে। ব্লগে ফিরুন, নিয়মিত হোন।

শুভেচ্ছা রইল আপনার জন্য।

৬| ২৮ শে নভেম্বর, ২০২২ রাত ১:১৯

অপু তানভীর বলেছেন: আগে কেবল ভাসা ভাসা একটা জ্ঞান ছিল । লটারী হয় সেটা জানতাম তবে এভাবে পরিস্কার কোন ধারণা ছিল না । যদিও এখনও বলবো না যে শতভাগ পরিস্কার ভাবে মাথায় ঢুকেছে । ভিডিও দেখলে আশা করি পরিস্কার ভাবে ঢুকবে !
পোস্টের জন্য ধন্যবাদ ।

২৮ শে নভেম্বর, ২০২২ দুপুর ১:০৪

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: এ ভিডিওটির ৪০ মিনিট থেকে দেখতে পারেন। অল্প একটু দেখলেই পুরোটা বুঝতে পারবেন, যদি এখনো ভালোভাবে না বুঝে থাকেন।

বিশাল পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ অপু তানভীর ভাই।

৭| ২৮ শে নভেম্বর, ২০২২ সকাল ৮:২৭

বিটপি বলেছেন: একটা ব্যাপার উল্লেখ করেননি। কোন গ্রুপে দুইয়ের বেশি মহাদেশীয় টীম থাকতে পারবেনা।

২০২৬ বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী দলের সংখ্যা বেড়ে ৪৮ টি হলেও ইউরোপীয় দেশের স্লট খুব একটা বাড়ছেনা। ১৩ থেকে ১৬ হবে। মানে এক তৃতীয়াংশ হবে ইউরোপ থেকে। দক্ষিণ আমেরিকার দলগুলো র‍্যাংকিং এ উপরে থাকলেও তারা বিশ্বকাপে চান্স পায়না অসম স্লট বরাদ্দের কারণে। এজন্যে ২৬ এ দক্ষিণ আমেরিকা থেকে ৫টির জায়গায় ৬টি দল নেয়া হবে। কপাল খুলেছে এশিয়া ও আফ্রিকার। এশিয়ার জন্য ৪ টির বদলে ৮ টি এবং আফ্রিকার জন্য ৫ টির বদলে ৯ টি দলের স্লট রাখা হয়েছে। অভাগা নিউজিল্যান্ডও এখন থেকে প্রতি বিশ্বকাপে যেন অংশ নিতে পারে - সেই সুযোগ রাখা হয়েছে।

২৮ শে নভেম্বর, ২০২২ দুপুর ১:১৭

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ওটা তো উল্লেখ করেছি। প্রক্রিয়াটি নিম্নরূপ - তার নিচে অনুচ্ছেদ ৭-এর পর দেখুন, লেখা আছে :


এখানে অতি গুরুত্বপূর্ণ একটা ফর্মুলা আছে। একই গ্রুপে একই কোয়ালিফিকেশন জোন বা কনফেডারেশন থেকে কোয়ালিফাই করা ২টা টিম থাকতে পারবে না। অর্থাৎ, একই গ্রুপে এশিয়া মহাদেশের ২টা টিম, বা আফ্রিকা অঞ্চলের ২টা টিম থাকতে পারবে না। তবে, ইউরোপিয়ান অঞ্চলের টিম একই গ্রুপে সর্বোচ্চ ২টা থাকতে পারবে।

২০২৬ থেকে টিম ৪৮টা হবে। তবে, আমার কাছে কেন যেন মনে হয়, টিমের সংখ্যা যখন ২৪ ছিল, তখন প্রতিটা ম্যাচে যত উত্তেজনা ছিল, ৩২টা হওয়ায় অনেকগুলো ম্যাচই সেই তুলনায় নিস্প্রভ হয়ে গেছে। আরো ১৬টা টিম বাড়লে অনেকগুলো ম্যাচই পানসে হয়ে যেতে পারে বিশ্ব-দর্শকের কাছে।

অতিরিক্ত তথ্যগুলো যোগসহ বিরাট পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

৮| ২৯ শে নভেম্বর, ২০২২ দুপুর ১:২৩

রাজীব নুর বলেছেন: খুবই চমৎকার একটা পোষ্ট।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.