নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শব্দকবিতা : শব্দেই দৃশ্য, শব্দেই অনুভূতি [email protected]

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই

দুঃখের কবিতাই শ্রেষ্ঠ কবিতা। ভালোবাসা হলো দুঃখ, এক ঘরে কবিতা ও নারী।

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

সুজানা, তুমি কোথায় আছো?

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:২১

এলোমেলো পায়ে উদাসীন যাচ্ছিলাম হেঁটে, একটু এগোলেই করিমদের বাসা। দুপুরের ছায়াঢাকা পথে কী জানি কী ভাবছিলাম, মন তো ছিল না এই মনে। আমিও ছিলাম না সে-পথে, হঠাৎ 'টুং' শব্দে রিকশার ঘণ্টা বাজলো, সম্বিতে চেয়ে দেখি রাজকীয় ভঙ্গিমায় বসে আছো তুমি, চোখেমুখে বিরাট বিস্ময় – কী করে অমন সময়ে ওখানে আমি! তখনো বাতাসে বৃষ্টির গন্ধ, আকাশে মেঘেরা উড়ছে দিগ্বিদিক, পথের বুক জুড়ে ছায়াদের নাচানাচি।

‘কেমন আছেন?’ মোহনীয় কিন্নর স্বরে জানতে চেয়ে গাঢ় চোখে তাকিয়ে থাকলে চোখে।

আজও আমি সেই চোখ দেখি, আজও দেখি তেমনি তাকিয়ে আছো তুমি। আমিও স্থির তাকিয়ে তোমার চোখেই একই বিন্দুতে, নিস্পলক। অথচ কতযুগ পেরিয়ে গেল মাঝখানে!

আমি জানি না, কী তোমার বলার ছিল, কিংবা আদৌ কিছু বলার ছিল কিনা। সত্যি বলতে কী, আজও আমি সুনিশ্চিত জানি না, আমাদের মধ্যে প্রেম ছিল কিনা। কেন আমি প্রতিটা নিবিড় বেলায় তোমাকে আজও ভাবি, জানি না; তুমিও এমন করেই আমাকে ভাবো কি কখনো? কিংবা কখনো জানতে চেয়েছ কি, কোথায় আছি, আছি কিনা বেঁচে?

সুজানা, আমাকে মার্জনা করো, আমি তোমার নামটাও ভুলে গেছি, তুমি জানো - 'সুজানা' তোমার নাম নয়, তোমাকে মানুষ ডাকতো ভুল নামে; আর দেখো, কত নিষ্ঠুর তুমি, কত নিষ্ঠুর তব ভালোবাসা, আমার অন্তরে তোমার নামটিও রাখো নি।

সুজানা, এই পৃথিবী ভরে আছে প্রেম-না-পাওয়া, প্রেম-হারানো প্রেমিকদের হাহাকার আর দীর্ঘশ্বাসে। এই পৃথিবীর আলো-জল-বাতাস জুড়ে কান্নার্ত বিষণ্ণতা। চারদিকে উড়ে যায় বক্ষ-বিদীর্ণ করা সকরুণ সুর। অলস দুপুরে, ক্লান্ত বিকেলে, সন্ধ্যায়, গভীর নিশীথে বিরহী প্রেমিকেরা সার বেঁধে বসে পড়ে পাড়ভাঙা নদীর তীরে অবশ দেহ বিছিয়ে, চরাচরের বুক চিরে দূরে, অনেক অনেক দূরে ছড়িয়ে পড়ে তাদের বুকফাটা কান্নার সুর। কী করুণ সেই সুর, আমি একেবারে মিশে যাই, হারিয়ে যাই সেই বিরহী সংঘের সভ্যদের রোদন-ভরা সুরের গহিনে।

ও সুজানা, তুমি এখন কোথায় আছো
এই পৃথিবীর কোন প্রান্তে
কোন লোকালয় কোন নগরে
আমি তা কিছু জানি না
আমি কিছুই জানি না

আজও দেখি শূন্যে ভেসে সামনে এসে দাঁড়ালে
হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দিলে তুমি আমাকে
এরপর ঘুমিয়ে গিয়েছি, কতটা বছর, জানি না
আমি জানি না
আমি কিছুই জানি না
ও সুজানা

তুমি যে তারপর কোথায় হারিয়ে গেলে
পাই নি খুঁজে ঠিকানা তোমার
আমি আজও দাঁড়িয়ে আছি সেখানে
হয়ত একদিন আসবে ফিরে
হাত বাড়িয়ে আমাকে ছুঁয়ে দেবে

ও সুজানা
ও সুজানা, তুমি এখন কোথায় আছো
এই পৃথিবীর কোন প্রান্তে
তুমি এখন কোথায় আছো
এই পৃথিবীতে, নাকি অন্য কোথাও
আমি তা কিছু জানি না
আমি কিছুই জানি না
ও সুজানা
ও সুজানা …

মুখ রচনা ও মুখ-এর সুর সৃষ্টির তারিখ :২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩
অন্তরা রচনা ও অন্তরার সুর সৃষ্টির তারিখ : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

কথা, সুর ও কণ্ঠ : খলিল মাহ্‌মুদ

গানের লিংক : প্লিজ এখানে ক্লিক করুন - ও সুজানা, তুমি এখন কোথায় আছো?



ফুটনোট :

আমার স্কুলজীবনের এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু আবুল কালাম শের খান, এসএসসি পরীক্ষার সময় যার সাথে আমি এক রুমে থাকতাম, যে জুঁই-সম্পর্কিত ঘটনাবলি পূর্বাপর জানতো, ২২ এপ্রিল ২০২৪ তারিখে আমার বাসায় এসেছিল। সম্ভবত ২০০৭ সালের পর এই প্রথম ওর সাথে দেখা। অন্তর থেকে অনেক কথা অগ্নিলাভার মতো টগবগিয়ে উঠে এলো, এতদিনের জমানো কথাগুলো খইয়ের মতো ফুটছিল দুজনের মুখে। কথায় কথায় হঠাৎ শের খান উচ্চারণ করলো ‘রানু’। আরো দু’বার – ‘রানু’। ‘রানু’। আমি জিজ্ঞাসা করি, রানু কে? শের খান অবাক হয়ে উলটো প্রশ্ন করে, ‘তুই ভুলে গেছিস?’ কয়েকটা সেকেন্ড, তারপর স্মৃতিতে তুমুল ভাস্বর হয়ে উঠলো নামটি। এ নামটি আমি কত খুঁজেছি, অর্থাৎ, এ নামটি আমি কত সহস্রভার, কতভাবে মনে করার চেষ্টা করেছি, কিন্তু মনে করতে পারি নি। শেষ বার কবে এ ‘রানু’ নামটি আমার মনের কুঠরিতে স্থিত ছিল, তারপর কবে তা হারিয়ে গিয়েছিল, আমি বিলকুল টের পাই নি। ২০০৩/৪ সালে আমি ‘অন্তরবাসিনী’ লিখতে শুরু করি; ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসের মূল চরিত্র বা নায়িকাটিই হলো রানু। কিন্তু ঐ সময়ে আমি এ নাম মনে করতে পারি নি। লজ্জার কারণে করিম বা আর কাউকে জিজ্ঞাসাও করি নি। অবশ্য, অন্য কারো মনে যে এ ঘটনা গেঁথে থাকতে পারে, তাও আমি ভাবি নি তখন। আর, দৈবাৎ যদি ‘রানু’ নামটি মনে পড়তোও, নিশ্চিতভাবেই উপন্যাসে এ প্রকৃত নামটি দেয়া হতো না।

রানুকে নিয়ে আমি উপন্যাস লিখেছি ঠিকই, যদিও রানুই গল্পের মূল চরিত্র, কিন্তু বাস্তবে রানুর প্রতি আমার কোনো প্রেম গড়ে ওঠে নি। ঐ ঘটনাটাকে একটা গল্পের প্লট হিসাবেই ব্যবহার করেছি মাত্র।

ওর প্রতি আমার কোনো মোহ বা টান জন্মায় নি বলেই ওর কোনো খোঁজখবরও নেয়া হয় নি কোনোদিন। পথে যেতে যেতে কত মানুষকে পাশ কাটিয়ে যাই, কতজন চলে যায় পাশ দিয়ে, দিন শেষে কারো কথাই মনে থাকে না। রানু হয়ত এমনই একজন পথচারিণী ছিল।

শের খান জানালো, রানু আর বেঁচে নেই। কয়েক বছর আগে মারা গেছে। ক্যান্সার হয়েছিল। আমি ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারি নি, আমার এ গল্পটির মতোই রানু পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেছে।

ফুটনোট লেখার তারিখ : ২২ এপ্রিল ২০২৪

ফুটনোটের মূল লিংক : একদিন আমার 'অন্তরবাসিনী' উপন্যাসের নায়িকাকে দেখতে গেলাম

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ভোর ৫:২৯

জনারণ্যে একজন বলেছেন: স্বকরুন-কাতরোক্তি মন ছুঁয়ে গেলো।

হারিকেন নিয়ে এখনই খুঁজতে বাইর হইলাম। খোঁজ পাইলে সাথে সাথেই জানায়া দিমুনে।

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:০৬

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন:
হারিকেন নিয়ে এখনই খুঁজতে বাইর হইলাম। খোঁজ পাইলে সাথে সাথেই জানায়া দিমুনে। অল্পের জন্য আবেগে চিৎকার দিয়া উঠি নাই :)

যাই হোক, আপনার মন ছুঁয়ে গেছে জেনে বেশ ভালো লাগলো। ধন্যবাদ আপনাকে।

২| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৩

ডার্ক ম্যান বলেছেন: ইসলামিক কবিতা গজল এসবের চর্চা করবেন এখন থেকে

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৮

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: একজন মুসলিম হিসাবে ওটা করাই বরং আমার জন্য উত্তম হতো, এবং ওগুলো শোনা আপনার জন্যও উত্তম। কিন্তু কোনো ইসলামিক গান, কবিতা আমি আজও লিখতে পারি নাই। কারণ, লেখার জন্য যে জ্ঞান ও সাধনার দরকার, তা আমার নাই।

কিন্তু আমার প্রশ্ন, আপনি হুট করে কেন এই পরামর্শটা দিলেন?

৩| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩

ডার্ক ম্যান বলেছেন: অনেকদিন ধরে তো কবিতা চর্চা করছেন। তাই এবার ভিন্ন কিছু চেষ্টা করেন। আপনি তো নতুন কিছু চেষ্টা করে থাকেন।

আমি এমনিতেই গান কম শুনি।
আরবি পড়া ভুলে গেছি। নতুন করে আবার মাস দুয়েক ধরে শিখছি। মুসলিমদের তো আসল জীবন পরকাল।

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৩৯

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন:
আরবি পড়া ভুলে গেছি। নতুন করে আবার মাস দুয়েক ধরে শিখছি। মুসলিমদের তো আসল জীবন পরকাল। সুন্দর বলেছেন।

মানুষ যা ভাবে, তাই যদি বলে আর বলা ও কাজের মধ্যে যদি সামঞ্জস্য থাকে, তাহলে তার প্রতি শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস বাড়ে। অকারণ খোঁচাখুঁচি, ঠেস দিয়ে কথা বলা সম্মান ও সম্পর্ক উন্নয়নের শুধু অন্তরায়ই না, সম্পর্ক বিনষ্ট করে।

ভালো থাকবেন সৈকত ভাই। শুভ কামনা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.