![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নামঃ ফারুক অহমেদ পেশাঃ শিক্ষকতা সখঃ বই পড়া , চিন্তা করা , লেখা , বেড়ানো, বাগান করা , ছেলের সাথে গল্প করা।
বরাবরের মতই শাসক শ্রেণির দুই দল এবং তাদের অংশিদাররা জনগণের উপর নির্বাচনী এক সংকট চাপিয়ে রেখেছে ।পাঁচ বছর ধরে জনগণের সকল সমস্যাকে চাপা দিয়ে রাখে এদের এই চাপিয়ে দেওয়া সংকট ।জনগণকে শোষণ করার এ এক নিয়মিত পদ্ধিততে পরিণত হয়েছে ।পাঁচ বছরের শেষে এসে এরা এই সংকটের সমাধানের দিকে যায় । তাদের সে সমাধানের দিকে যেতে হয় ।দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মুরুব্বিদের চাপে শেষ পর্যন্ত অতীতের মতই তারা এর সমাধানে যাবে ।কিন্তু জনগণকে লাগাতারভাবে এর খেসারত দিয়ে যেতে হয় ।জনগণকে এই খেসারত দিতে হয় দুইভাবে । একদিকে শাসক শ্রেণির সৃষ্ট এই সংকট জনগণের দৈনন্দিন জীবনের সংকট গুলোকে আড়াল করে রাখতে পারে ।জনগণের পক্ষের সংগঠিত শক্তির ক্ষীন উপস্থিতি অথবা অনুপস্থিতিতে সংগঠিত পেশিশক্তির শাসক শ্রেণির উভয় অংশের রাজনৈতিক কর্মসূচীর যোগান হলো এই সংকট ।বিগত পাঁচ বছরে বি.এন.পি এবং তাদের জোট জনগণের কোন সমস্যা নিয়ে আন্দোলন করেছে ?শেয়ার বাজার কেলেংকারি ,হলমার্ক কেলেংকারি , যমুনা সেতু দুর্নীতি ,দ্রব্যমূল্য ,সন্ত্রাস , নৈরাজ্য সহ শত শত জনসমস্যার কোনটি নিয়েই কি বি.এন.পি এবং তার জোট আন্দোলন সংগঠিত করেছে? করেনি ।কারণ বি.এন.পি তা করতে পারে না ।ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ এবং তাদের জোটের এই পাঁচ বছরের রাজনীতি কি ?ক্ষমতার অভ্যন্তরে জনগণের অর্থ লুটপাট ভাগাভাগির বাইরে তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচী কি ছিল ?তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের এক ইস্যু তৈরী করে তার রশি জনগণের গলায় পরিয়ে এক প্রান্তে বি.এন.পি এবং তার জোটকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে অপর প্রান্তে নিজেরা ধরে পাঁচ বছর লাগাতার টেনে চলেছে । এই হলো শাসক শ্রেণির শুকিয়ে যাওয়া রাজনৈতিক কর্মসূচীর অবশেষ ।কাজেই তাদের খুদ-কুঁড়ো আর উচ্ছ্বিষ্টভোগী সুশিল সমাজ এবং বুদ্ধিজীবীরা যতই এ নিয়ে আদরণীয় নিন্দা-মন্দ করুক তারাও ভালভাবেই জানে এ্ই হলো তাদের রাজনৈতিক পেশিশক্তি প্রদর্শণের এবং চর্চার একমাত্র ‘বৈধ’ উপায় ।অপরদিকে তাদের চাপিয়ে দেওয়া এই সংকটের ফলে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা অর্তনৈতিক এবং প্রশাসনিক কোন দিক দিয়েই নেই ।
গত পাঁচ বছরে চাপিয়ে দেওয়া এই সংকটে জনগণের জানমালের ক্ষতি এবং জনগণের জীবনকে বিপর্যস্ত করে ১৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশ্যে এক ভাষন দেন ।নির্বাচনের আগে এখন তাদের যেভাবেই হোক নিজেদের সংকট সমাধান করতে হবে ।এ নিয়ে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক মুরুব্বিদের তাগিদও আছে ।জনগণকে এখন আপাততঃ নির্বাচনের মধ্যে ফেলা যাবে ।তাই কিছু দিনের জন্য চাপিয়ে দেওয়া কোন উটকো সংকট ছাড়াই শাসকশ্রেণির দলগুলোর কর্মসূচী চলতে পারবে ।এখন তাদের একটি সমাধানের মধ্যে যেতেই হবে । কিভাবে হবে তা এখনও ঠিক হয়নি । প্রধানমন্ত্রী একটি প্রস্তাব দিয়েছেন ।এখানে সে বিষয়ের কোন আলোচনা করা হবে না ।এই প্রস্তাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী অন্যান্য যেসব কথা বলেছেন তাই নিয়েই কথা বলতে হবে । কারণ সেগুলোই জনগণের জীবনের সাথে সম্পর্কিত ।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষনে উন্নয়নের যে চিত্র তুলে ধরলেন বাস্তবে তার বিপরীত চিত্রই দেখা যায় ।কৃষির উন্নয়নের কথা তিনি বলেছেন ।কৃষির কথা বলতে গেলে একথাই বলতে হবে –‘ডিম পাড়ে হাসে খায় বাগডাশে’।কৃষক গায়ে গতরে খেটে যে ফসলটি্ই ফলান সরকার বাম্পার ফলনের গল্প শুনিয়ে বাহবা নেন বটে । এই বাহবার সাথে সাথেই তারা মধ্যসত্ত্বভোগীদের যে ইশারা-ইংগিত করেন তাতে কৃষক এই বাম্পার ফলনের ভার সইতে পারেন না ! তাঁরা ক্ষতিগ্রস্থ হন ।কৃষকদের লা্গাতারভাবে এমন ক্ষতিগ্রস্থ করতে সরকারের কৃতিত্ব আছে ।কৃষক এখন ‘ডিজিটালি’ পরাধীন ।বীজ , সার ,পানি কোন কিছুতেই কৃষক স্বাধীন নন ।মন্দ বীজে শত শত একর জমির ফসল মার খাওয়ার খবর প্রায়ই পাওয়া যায় ।শিক্ষার সবচেয়ে অন্ধকার সময় চলছে এখন ।উচ্ছ্বিষ্টভোগী কিছু লোকজন লাগাতার শিক্ষার উন্নতির প্রচার চালিয়ে গেলেও শাসক শ্রেণি শিক্ষাকে ভিতর এবং বাইরে থেকে সম্পূর্ণরূপে পণ্যে রূপান্তর করেছে ।ভিতর থেকে শিক্ষাকে এমন করা হয়েছে যে ,শিক্ষা অর্জনে দৃষ্টিভঙ্গি এবং চিন্তা সমৃদ্ধ হবে এ কথা আর বলা যায় না ।অন্যান্য পণ্য মানুষকে যা দেয় শিক্ষার ক্ষেত্রেও এখন সে কথা সত্য ।এ হলো শিক্ষাকে ভিতর থেকে পণ্য বানানো ।বাইরের পণ্যকরণ দিকটি হলো সারা পৃথিবীর রীতি উপেক্ষা করে প্রথমিক স্তরে দুটি পাবলিক পরীক্ষার ব্যবস্থা করে শিক্ষাকে প্রাথমিক স্তর পর্যন্ত পণ্যে পরিণত করা হয়েছে ।তথাকথিত সৃজনশীলতার নামে বই পুস্তকের আমূল পরিবর্তন করতে গিয়ে যা করা হয়েছে তা শিক্ষাকেই কবর দেওয়ার শামিল । বিভিন্ন ব্যাক্তি এবং প্রতিষ্ঠানকে ব্যবসায় বাণিজ্য পাইয়ে দেওয়া ছাড়া এবং শিক্ষাকে ভিতর থেকে পণ্যে পরিণত করার পরিকল্পনা ছাড়া এর কোন ব্যাখ্যা নেই ।ডিজিটালের নামে আবর্জনাতুল্য অতিরিক্ত পাট্যক্রম সংযোজন এবং তা বাধ্যতামূলক করার একমাত্র উদ্দেশ্যই হলো শিক্ষাকে ভিতর এবং বাইরে থেকে পণ্যে পরিণত করা ।
প্রধানমন্ত্রী খাদ্য নিরাপত্তার কথা বলেছেন ।বাস্তব চিত্র হলো কিবা গ্রাম কিবা শহর সর্বস্থানের মানুষ এখন খাদ্য নিয়ে রীতিমত আতংকিত ।মূল্যবৃদ্ধির আতংকতো আছেই তার সাথে যুক্ত হয়ে বিষ আতংক । দাম দিয়ে খাদ্য কিনে খেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে মৃত্যু হবে না এ নিশ্চয়তা নেই । মানুষ এখন আল্লাহ ভরসা করে ‘আল্লাহ কাফি...’বলে ,ঠাকুর দেবতার নাম করে খাদ্য গ্রহন করছে ।ফরমালিনের আতংক , কীটনাশকের আতংক ,কার্বাইডের আতংক । মানুষ একটি ফল তার বাচ্চার মুখে তুলে দিতে পারেন না ।বাচ্চার মুখে কোন ফল তুলে দিয়ে অন্ততঃ চব্বিশ ঘন্টা আতংকে সময় পার করেন ।কোরবাণীর পশু মোটাতাজা করণে ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে এই আতংকে মানুষকে উৎকন্ঠিত থাকতে হয়েছে ।এ্ই হলো খাদ্য নিরাপত্তা ।
ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা পাঁচ বছর ধরে শোনানো হচ্ছে ।যে জায়গায় ঢাকা সহ কয়েকটি বড় শহর ছাড়া শহরাঞ্চলেই ইন্টারনেটের বেহাল অবস্থা সেখানে প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভষনে বললেন ইউনিয়ন পর্যায়েই মানুষ এ কেন্দ্রীক নগদ টাকা রোজগার করছে ।তাই যদি হয় ,এভাবে যদি কেউ রোজগার করে তবে সেটা নিশ্চয় ভুক্তভোগীদের সাথে ডিজিটাল প্রতারণা । আমাদের দেশে কত ধরণের প্রতারণাইতো হচ্ছে ।রাজনৈতিক কারণে , মানুষকে বিভ্রান্ত এবং প্রতারিত করতে দুচারটি বিদ্যালয়ে তথাকথিত মাল্টি মিডিয়া প্রচার মাধ্যমের ক্যামেরার সামনে দেখানো হলেও বাস্তব অবস্থা হলো গ্রাম পর্যায়েরতো প্রশ্নই ওঠে না শহর পর্যায়েরও বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞানাগারতো দুরে থাক একটি দন্ড চুম্বক বা একটি কম্পাস কাঁটা পর্যন্ত নেই ।মজা করে চটকদারিত্বের গল্প বলা যায় । প্রকৃত উন্নতি চটকদারিত্বের মাপকাঠিতে হয় না ।
প্রধানমন্ত্রী ঈদে ভ্রমন সুবিধার কথা বলেছেন ।ভুক্তভোগীরা তাঁর এই ভাষনকে কিভাবে নেবেন ? বাস্তব চিত্র কি দেখা গেল? টিকেট সংগ্রহ থেকে যাওয়ার দিন পর্যন্ত কোথায় মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়নি ?রাস্তায় ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকা , অতিরিক্ত ভাড়া গোনা কোন্ ভোগান্তি থেকে মানুষ রেহাই পেয়েছেন ?যোগাযোগ মন্ত্রীর কোন গাড়ীর ড্রাইভারকে উদ্দেশ্য করে ক্যামেরার সামনে বলা –‘আর কিন্তু ভাড়া বেশি নিবে না খবরদার’ শুনেতো আর মানুষের কষ্ট-ভোগান্তি লাঘব হতে পারে না ।প্রধানমন্ত্রী সমরাস্ত্র ক্রয়ের কথা শোনালেন । এতে জনগণের কি লাভ?কোন্ যুদ্ধ প্রস্তুতির জন্য তিনি জনগণের টাকায় সমরাস্ত্র ক্রয় করেছেন?সমুদ্র বিজয়ের গল্প শোনাচ্ছেন একদিকে এবং অপরদিকে সমুদ্রকে কতকগুলো ব্লকে ভাগ করে বিদেশী কোম্পানির কাছে ইজারা দিচ্ছেন ।এতে জনগণের সম্পদ যেমন প্রায় বিনা মূল্যে শুধু সরকারী লোকেদের পকেট ভারি করার শর্তে বিদেশিদের হাতে চলে যাবে একদিকে অপরদিকে মৎসজীবীরা সমুদ্র থেকে স্বাধীনভাবে মাছ ধরার অধিকার হারাবে ।সমুদ্র বিজয় কতটুকু হয়েছে জনগণ সেটা না জানলেও তাদের কাছে কালে-ক্রমে সমুদ্র নিষিদ্ধ করার সকল প্রস্তুতি গ্রহন চলছে ।সে জন্যই সমুদ্র বিজয়ের এমন জোর গল্প ।প্রধানমন্ত্রী যখন ‘উন্নয়নের রোল মডেল’ বলে বিদেশী সার্টিফিকেটকে তুলে ধরেন তখন আবার আরেকটি ‘রোল মডেলকে’ অস্বীকার করেন ! বিদেশ থেকে দেওয়া সব চেয়ে বড় রোল মডেল হচ্ছেন ড. ইউনুস ।এই রোল মডেলকে তিনি অস্বীকার করে তিনিই দেখিয়ে দিয়েছেন বিদেশীরা বিশেষ করে সাম্রাজ্যবাদ তাদের প্রয়োজনে অনেক কিছুকেই রোল মডেল বানাতে পারে ।কাজেই জনগণের জীবন-বাস্তবাতার সাথে এই সব রোল মডেলের কোন সম্পর্ক নেই । যা’ আছে তা হলো এগুলোর মাধ্যমে এখনও জনগণকে না হলেও এক শ্রেণির খুদ-কুঁড়ো এবং উচ্ছ্বিষ্টভোগী তথাকথিত শিক্ষিত লোকদের চাপার জোর বাড়ানোর যোগান দেওয়া যায় ।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন এখন একজন দিনমজুর যে রোজগার করেন তা দিয়ে প্রতিদিন আট থেকে দশ কেজি চাল ক্রয়ের ক্ষমতা রাখেন ।তার মানে দাঁড়াচ্ছে একজন দিনমজুর কমপক্ষে দিনে চার থেকে পাঁচশত টাকা রোজগার করে থাকেন ।বাস্তব অবস্থা হলো কাজই পাওয়া যায় না ।যে সব অঞ্চলে কাজ একটু বেশি সেখানে মওসুম ভেদে সর্বোচ্চ মজুরী সাড়ে তিনশত টাকা । অপরদিকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দুইশত থকে আড়াইশত টাকা মজুরী সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত শ্রমের বিনিময়ে ।সবচেয়ে বড় কথা এর কোন স্থিরতা নেই।কাজ প্রাপ্তিরও কোন নিশ্চয়তা নেই ।এই মজুরী নির্ধারিত হয় সম্পূর্ণ চাহিদা-যোগানের নিয়মানুসারে ।এই যখন অবস্থা তখন মজুরী যাই পাক সরকারের তাতে কৃতিত্ব কোথায়?বরং সরকারের মজুরি নির্ধারণের এবং তা দিতে বাধ্য করার এবং কাজ নিশ্চিৎ করার যে দায় থাকে সেই দায়ীত্ব সরকারকে মোটেই পালন করতে দেখা যায়নি ।যা হোক এর মধ্যদিয়ে প্রধানমন্ত্রী নিজেই একটি সত্যকে সামনে এনেছেন ।সে সত্যটি হলো তিনি মজুরীর যে পরিমাণ উল্লেখ করেছেন বাস্তবে তা থাকুক আর না থাকুক তিনি নিজেই স্বীকার করে নিচ্ছেন এই হলো সর্বনিম্ন মজুরী হওয়া উচিৎ ।এটা খুবই সত্য ।তাহলে গার্মেন্ট শ্রমিকদের মজুরী এত কম কেন ?প্রধানমন্ত্রীর উপস্থাপিত সত্য অনুসারেইতো গার্মেন্ট শ্রমিকের সর্বনিম্ন মজুরী হওয়ার কথা ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা ।অথচ তথাকথিত বাম দলগুলো এবং গবেষনা প্রতিষ্ঠান সি.পি.ডি’র পক্ষ থেকে সর্বনিম্ন মজুরির কথা বলা হয়েছে আট হাজার টাকা ।আর বাস্তবতঃ গার্মেন্ট শ্রমিকরা তা পান তিন হাজার টাকা ।এর মধ্যদিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া তথ্য যে বাস্তবে এক অসত্য তথ্য তার প্রমাণ মেলে ।অপরদিকে তিনি স্বীকার করে নিতে বাধ্য হয়েছেন যে,সর্বনিম্ন মজুরী ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা হওয়া উচিৎ।
এ নিয়ে বিরোধী দল ,টকশোবাজ , তাদের বুদ্ধিজীবী সহ শাসক শ্রেণির কোন পদ-পর্যায়ের লোকেরই মাথা ব্যথা নেই । কারণ তাদের মাথা সেখানে থাকে না ।তাদের মাথে থাকে অন্য জায়গায় ।কিন্তু জনগণের মাথায় সব সময়ই ব্যথা কারণ জনগণের মাথা এই বাস্তবতার মধ্যেই সব সময়ের জন্য আছে ।
©somewhere in net ltd.