![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার ভার্চুয়াল ঘর, যেমন ইচ্ছে তেমন সাঁজাই। অতিথিকে স্বাগতম।
১। ওটা কিছু নয় - নির্মলেন্দু গুণ
২। সেই গল্পটা - পূর্ণেন্দু পত্রী
৩। মানুষ - নির্মলেন্দু গুণ
৪। অপেক্ষা - দিব্যেন্দু পালিত
৫। ফেরীঅলা - হেলাল হাফিজ
৬। প্রস্থান - হেলাল হাফিজ
৭। ইচ্ছে ছিলো - হেলাল হাফিজ
৮। যাতায়াত - হেলাল হাফিজ
৯। অমিমাংসিত সন্ধি - হেলাল হাফিজ
১০। দুই বিঘা জমি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
১১। বাতাসে লাশের গন্ধ - রুদ্র মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ
১২। নিঃসঙ্গতা - আবুল হাসান
১৩। অমলকান্তি – নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
১৪। আমার ভিতরে বাহিরে অন্তরে অন্তরে – রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ
নির্বাচিত কবিতা সমগ্র - ১
১। কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প – রুদ্র মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ
২। তোমায় আমি – জীবনানন্দ দাশ
৩। মাগো, ওরা বলে – আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ
৪। মাগো, ওরা বলে – আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ
৫। আমি যদি হতাম – জীবনানন্দ দাশ
৬। রাত্রি – অমিয় চক্রবর্তী
৭। কুড়ি বছর পরে – জীবনানন্দ দাশ
৮। তোমার চোখ এতো লাল কেন? - নির্মলেন্দু গুণ
৯। শুধু তোমার জন্য - নির্মলেন্দু গুণ
১০। বনলতা সেন - জীবনানন্দ দাস
১১। আকাশলীনা - জীবনানন্দ দাস
১২। নেশা - মোফাজ্জল করিম
১৩। তুমি জেনেছিলে - সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
নির্বাচিত কবিতা সমগ্র - ২
১। আমি কিরকম ভাবে বেঁচে আছি - সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
২। কথা আছে - সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
৩। নিজের আড়ালে - সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
৪। যে আমায় - সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
৫। ব্যর্থ প্রেম - সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
৬। স্পর্শটুকু নাও - সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
৭। রূপালি মানবী - সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
৮। এই দৃশ্য - সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
৯। ইচ্ছে - সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
১০। সত্যবদ্ধ অভিমান - সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
১১। উত্তরাধিকার - সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
১২। কেউ কথা রাখেনি - সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
নির্বাচিত কবিতা সমগ্র - ৩
১। চিল্কায় সকাল -বুদ্ধদেব বসু
২। তুই কি আমার দুঃখ হবি? - আনিসুল হক
৩। চিঠি দিও -মহাদেব সাহা
৪। চিরায়মানা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
৫। চতুর্দশপদী কবিতাবলী - শক্তি চট্টোপাধ্যায়
৬। একবার তুমি - শক্তি চট্টোপাধ্যায়
৭। যাত্রাভঙ্গ - নির্মলেন্দু গুন
৮। ছাড়পত্র - সুকান্ত ভট্টাচার্য
৯। বেঁচে আছি স্বপ্নমানুষ - মহাদেব সাহা
১০। শেষের কবিতা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
১১। মানসী – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
নির্বাচিত কবিতা সমগ্র - ৪
১। লোকেন বোসের জর্নাল - জীবনানন্দ দাস
২। শীতরাত - জীবনানন্দ দাস
৩। সে - জীবনানন্দ দাস
৪। অন্য প্রেমিককে - জীবনানন্দ দাস
৫। আমাকে একটি কথা দাও - জীবনানন্দ দাস
৬। ১৩৩৩ - জীবনানন্দ দাস
৭। শঙ্খমালা - জীবনানন্দ দাস
৮। সুচেতনা - জীবনানন্দ দাস
৯। স্বপ্নের ধ্বনিরা - জীবনানন্দ দাস
১০। তোমরা যেখানে সাধ চলে যাও - জীবনানন্দ দাস
১১। তোমাকে - জীবনানন্দ দাস
১২। পঁচিশ বছর পরে (মাঠের গল্প) - জীবনানন্দ দাস
নির্বাচিত কবিতা সমগ্র - ৫
নক্সী কাঁথার মাঠ - জসীমউদ্দিন:
নক্সী কাঁথার মাঠ - জসীমউদ্দিন --- ১ম অংশ
নক্সী কাঁথার মাঠ - জসীমউদ্দিন ---- ২য় অংশ
রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহকে লেখা চিঠি – তসলিমা নাসরিন
প্রিয় রুদ্র,
প্রযত্নেঃ আকাশ,
তুমি আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখতে বলেছিলে। তুমি কি এখন আকাশ জুরে থাকো? তুমি আকাশে উড়ে বেড়াও? তুলোর মতো, পাখির মতো? তুমি এই জগত্সংসার ছেড়ে আকাশে চলে গেছো। তুমি আসলে বেঁচেই গেছো রুদ্র। আচ্ছা, তোমার কি পাখি হয়ে উড়ে ফিরে আসতে ইচ্ছে করে না? তোমার সেই ইন্দিরা রোডের বাড়িতে, আবার সেই নীলক্ষেত, শাহবাগ, পরীবাগ, লালবাগ চষে বেড়াতে? ইচ্ছে তোমার হয় না এ আমি বিশ্বাস করি না, ইচ্ছে ঠিকই হয়, পারো না। অথচ এক সময় যা ইচ্ছে হতো তোমার তাই করতে। ইচ্ছে যদি হতো সারারাত না ঘুমিয়ে গল্প করতে – করতে। ইচ্ছে যদি হতো সারাদিন পথে পথে হাটতে – হাটতে। কে তোমাকে বাধা দিতো? জীবন তোমার হাতের মুঠোয় ছিলো। এই জীবন নিয়ে যেমন ইচ্ছে খেলেছো। আমার ভেবে অবাক লাগে, জীবন এখন তোমার হাতের মুঠোয় নেই। ওরা তোমাকে ট্রাকে উঠিয়ে মিঠেখালি রেখে এলো, তুমি প্রতিবাদ করতে পারোনি।
আচ্ছা, তোমার লালবাগের সেই প্রেমিকাটির খবর কি, দীর্ঘ বছর প্রেম করেছিলে তোমার যে নেলী খালার সাথে? তার উদ্দেশ্যে তোমার দিস্তা দিস্তা প্রেমের কবিতা দেখে আমি কি ভীষণ কেঁদেছিলাম একদিন! তুমি আর কারো সঙ্গে প্রেম করছো, এ আমার সইতো না। কি অবুঝ বালিকা ছিলাম! তাই কি? যেন আমাকেই তোমার ভালোবাসতে হবে। যেন আমরা দু’জন জন্মেছি দু’জনের জন্য। যেদিন ট্রাকে করে তোমাকে নিয়ে গেলো বাড়ি থেকে, আমার খুব দম বন্ধ লাগছিলো। ঢাকা শহরটিকে এতো ফাঁকা আর কখনো লাগেনি। বুকের মধ্যে আমার এতো হাহাকারও আর কখনো জমেনি। আমি ঢাকা ছেড়ে সেদিন চলে গিয়েছিলাম ময়মনসিংহে। আমার ঘরে তোমার বাক্সভর্তি চিঠিগুলো হাতে নিয়ে জন্মের কান্না কেঁদেছিলাম। আমাদের বিচ্ছেদ ছিলো চার বছরের। এতো বছর পরও তুমি কী গভীর করে বুকের মধ্যে রয়ে গিয়েছিলে! সেদিন আমি টের পেয়েছি।
আমার বড়ো হাসি পায় দেখে, এখন তোমার শ’য়ে শ’য়ে বন্ধু বেরোচ্ছে। তারা তখন কোথায় ছিলো? যখন পয়সার অভাবে তুমি একটি সিঙ্গারা খেয়ে দুপুর কাটিয়েছো। আমি না হয় তোমার বন্ধু নই, তোমাকে ছেড়ে চলে এসেছিলাম বলে। এই যে এখন তোমার নামে মেলা হয়, তোমার চেনা এক আমিই বোধ হয় অনুপস্থিত থাকি মেলায়। যারা এখন রুদ্র রুদ্র বলে মাতম করে বুঝিনা তারা তখন কোথায় ছিলো?
শেষদিকে তুমি শিমুল নামের এক মেয়েকে ভালোবাসতে। বিয়ের কথাও হচ্ছিলো। আমাকে শিমুলের সব গল্প একদিন করলে। শুনে … তুমি বোঝোনি আমার খুব কষ্ট হচ্ছিলো। এই ভেবে যে, তুমি কি অনায়াসে প্রেম করছো! তার গল্প শোনাচ্ছো ! ঠিক এইরকম অনুভব একসময় আমার জন্য ছিলো তোমার! আজ আরেকজনের জন্য তোমার অস্থিরতা। নির্ঘুম রাত কাটাবার গল্প শুনে আমার কান্না পায় না বলো? তুমি শিমুলকে নিয়ে কি কি কবিতা লিখলে তা দিব্যি বলে গেলে! আমাকে আবার জিজ্ঞেসও করলে, কেমন হয়েছে। আমি বললাম, খুব ভালো। শিমুল মেয়েটিকে আমি কোনোদিন দেখিনি, তুমি তাকে ভালোবাসো, যখন নিজেই বললে, তখন আমার কষ্টটাকে বুঝতে দেইনি। তোমাকে ছেড়ে চলে গেছি ঠিকই কিন্তু আর কাউকে ভালোবাসতে পারিনি। ভালোবাসা যে যাকে তাকে বিলোবার জিনিস নয়।
আকাশের সঙ্গে কতো কথা হয় রোজ! কষ্টের কথা, সুখের কথা। একদিন আকাশভরা জোত্স্নায় গা ভেসে যাচ্ছিলো আমাদের। তুমি দু চারটি কষ্টের কথা বলে নিজের লেখা একটি গান শুনিয়েছিলে। “ভালো আছি ভালো থেকো, আকাশের ঠিকানায় চিঠি দিও”। মংলায় বসে গানটি লিখেছিলে। মনে মনে তুমি কার চিঠি চেয়েছিলে? আমার? নেলী খালার? শিমুলের? অনেক দিন ইচ্ছে তোমাকে একটা চিঠি লিখি। একটা সময় ছিলো তোমাকে প্রতিদিন চিঠি লিখতাম। তুমিও লিখতে প্রতিদিন। সেবার আরমানিটোলার বাড়িতে বসে দিলে আকাশের ঠিকানা। তুমি পাবে তো এই চিঠি? জীবন এবং জগতের তৃষ্ণা তো মানুষের কখনো মেটে না, তবু মানুষ আর বাঁচে ক’দিন বলো? দিন তো ফুরোয়। আমার কি দিন ফুরোচ্ছে না? তুমি ভালো থেকো। আমি ভালো নেই।
ইতি,
সকাল
পুনশ্চঃ আমাকে সকাল বলে ডাকতে তুমি। কতোকাল ঐ ডাক শুনি না। তুমি কি আকাশ থেকে সকাল, আমার সকাল বলে মাঝে মধ্যে ডাকো? নাকি আমি ভুল শুনি?
০৯ ই মার্চ, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৩১
ফারজুল আরেফিন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।
২| ০৯ ই মার্চ, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:১০
সাবরিনা সিরাজী তিতির বলেছেন: ২য় ভালো লাগা । প্রিয় তে ।
০৯ ই মার্চ, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৩১
ফারজুল আরেফিন বলেছেন: ধন্যবাদ অনেক।
৩| ০৯ ই মার্চ, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:১০
নাজমুল আনোয়ার বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ . . .
০৯ ই মার্চ, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৩২
ফারজুল আরেফিন বলেছেন: আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।
৪| ০৯ ই মার্চ, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:১৩
অথৈ সাগর বলেছেন:
চমত্তকার এবং প্রিয়তে নিলাম । অনেক অনেক ধন্যবাদ এমন একটি কাজ করার জন্য।
০৯ ই মার্চ, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৩৩
ফারজুল আরেফিন বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া।
আরো কিছু দেয়ায় ইচ্ছে ছিল, হয়ে উঠেনি।
৫| ০৯ ই মার্চ, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:১৫
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: খুব মূল্যবান একটা সংগ্রহ।
আমি কিছুদিন আগে 'আমি কীরকম ভাবে বেঁছে আছি' খুঁজছিলাম ইন্টারনেটে, কিন্তু পাই নি। কবিতাটা 'সমিল মুক্তক অক্ষরবৃত্তের' একটা উৎকৃষ্ট উদাহরণ, যার যতিচ্ছেদ হচ্ছে পঙ্ক্তি শেষে নয়, বাক্য শেষে। যা হোক, ভালো হলো, প্রয়োজনে আপনার এখান থেকে যে-কোনো কবিতা কপি-পেস্ট করবো অনায়াসে
০৯ ই মার্চ, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৪৩
ফারজুল আরেফিন বলেছেন: আপনার ভাল লেগেছে জেনে ধন্য হলাম। আপনার মতন করে বিশ্লেষণ করলে, আমার আর এ জীবনে কিছু লেখা হবে না। :!>
কয়েকটি কবিতার আবৃত্তি শুনেছিলাম, অসম্ভব প্রিয়। সেগুলো দিতে পারলে বেশ হতো। কিন্তু শুনে শুনে লিখলে মার একটাও মাটিতে পড়বেনা।
অশেষ ধন্যবাদ, ভাল থাকবেন ভাইয়া।
৬| ০৯ ই মার্চ, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৩১
শোশমিতা বলেছেন: অনেক সুন্দর পোষ্ট!
প্রিয়তে নিয়ে গেলাম
০৯ ই মার্চ, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৪৬
ফারজুল আরেফিন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ শোশমিতা আপু।
শুভকামনা সবসময়।
৭| ০৯ ই মার্চ, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৩৯
দরিয়ানগর বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ এমন একটি কাজ করার জন্য।
০৯ ই মার্চ, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৪৮
ফারজুল আরেফিন বলেছেন: আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ ভাই।
ভাল থাকুন।
৮| ০৯ ই মার্চ, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৪০
বেঈমান আমি বলেছেন: প্রিয়তে নিলাম
০৯ ই মার্চ, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৫০
ফারজুল আরেফিন বলেছেন: ধন্যবাদ, অনেক ধন্যবাদ।
আশাকরি কবিতা নির্বাচন মন মত হয়েছে।
৯| ০৯ ই মার্চ, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৪৮
ফকির আবদুল মালেক বলেছেন: সোজা প্রিয়তে।
অসংখ্য ধন্যবাদ।
০৯ ই মার্চ, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৫১
ফারজুল আরেফিন বলেছেন: আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।
শুভকামনা রইলো।
১০| ০৯ ই মার্চ, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৫১
শিপু ভাই বলেছেন:
+++++++++++++++
২/৪ টা মনে হয় পড়েছি!!!
বেশিরভাগ কবিতাই বুঝিনা তাই ভালও লাগে না।
০৯ ই মার্চ, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৫৮
ফারজুল আরেফিন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ভাই।
আপনার জন্য একটি কবিতা দিলাম
অবুঝের সমীকরণ – আল মাহমুদ
কবিতা বোঝে না এই বাংলার কেউ আর
দেশের অগণ্য চাষী, চাপরাশী
ডাক্তার উকিল মোক্তার
পুলিস দারোগা ছাত্র অধ্যাপক সব
কাব্যের ব্যাপারে নীরব!
স্মাগলার আলোচক সম্পাদক তরুণীর দল
কবিতা বোঝে না কোনো সঙ
অভিনেত্রী নটী নারী নাটের মহল
কার মনে কাতোটুকু রঙ?
ও পাড়ার সুন্দরী রোজেনা
সারা অঙ্গে ঢেউ তার, তবু মেয়ে
কবিতা বোঝে না!
কবিতা বোঝে না আর বাংলার বাঘ
কুকুর বিড়াল কালো ছাগ,
খরগোস গিরগিটি চতুর বানর
চক্রদার যত অজগর!
কবিতা বোঝে না এই বাঙলার বনের হরিণী
জঙ্গলের পশু-পাশবিনী।
শকুনী গৃধিনী কাক শালিক চড়ুই
ঘরে ঘরে ছুঁচো আর উই;
বাংলার আকাশের যতেক খেচর
কবিতা বোঝে না তারা। কবিতা বোঝে না অই
বঙ্গোপসাগরের কতেক হাঙর!
১১| ০৯ ই মার্চ, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৫৮
অন্তরন্তর বলেছেন: প্রিয়তে রাখতেই হল। চমৎকার পোস্ট।
পরীক্ষা কেমন হল?
ভাল থাকুন অনেক অনেক। ওহ। আর একটা কথা। আরজুপনি আপুর পোস্টে আপনাকে এবং আপনার সে কে দেখলাম। দুজনের জন্য রইল অনেক শুভেচ্ছা। ভাল থাকুন, আনন্দে থাকুন।
০৯ ই মার্চ, ২০১২ রাত ৯:২২
ফারজুল আরেফিন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।
কঠিনগুলো উত্তর করতে যেয়ে যেগুলো পারতাম সেগুলোও রেখে এসেছি। অন টেস্ট খারাপ হয় নাই।
হুমমম.....সে আমার বন্ধু। বছর তিনেক পাশাপাশি হাঁটছি।
তোমার পায়ের নিচে পৃথিবীর ঘাস – নির্মলেন্দু গুণ
যখন তোমাকে বলি: ‘ভালবাসি’।
তার মানে এই নয়, আমি তুমি ছাড়া
আর কিছু ভালই বাসি না।
যখন তোমাকে বলি: ‘ভালবাসি।’
পাশাপাশি আমি কি তখন দেখি না
আকাশে মেঘ? পাতার আড়ালে ফুল?
ফুলের আড়ালে পাখি? তোমাকে দেখার আগে
আমি আড়চোখে পৃথিবীর পৃথিবীকে দেখি?
তোমার শাড়ির পাড়ে লেগে থাকে ভোরের শিশির।
তোমার পায়ের রাঙা গোড়ালিকে ঘিরে
বনের সবুজ ঘাসে মনের গোধূলি খেলা করে।
তখন হঠাৎ ভাবি তোমাকে বেসেছি ভালো,
তোমার পায়ের নিচে পৃথিবীর ঘাস আছে বলে।
১২| ০৯ ই মার্চ, ২০১২ রাত ৮:০৬
প্রীিত ওয়ােরছা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ চমৎকার একটি পোস্টের জন্য।
০৯ ই মার্চ, ২০১২ রাত ৯:২৪
ফারজুল আরেফিন বলেছেন: আপনাকেও অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আমার জীবন – মহাদেব সাহা
আমার জীবন আমি ছড়াতে ছড়াতে
এসেছি এখানে,
আমি কিছুই রাখিনি-
কুড়াইনি তার একটিও ছেঁড়া পাতা,
হাওয়ায় হাওয়ায় উড়িয়ে দিয়েছি শিমুল তুলোর মতো
সব সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, স্মৃতি,
আমি এই হারানো জীবন আর খুজি নাই
সেই ফেলে আসা পথে;
ছেঁড়া কাগজের মতো ছড়াতে ছড়াতে এসেছি আমাকে।
পথে পড়ে থাকা ছিন্ন পাপড়ির মতো
হয়তো এখানো পড়ে আছে
আমার হাসি ও অশ্রু,
পড়ে আছে খেয়ালি রুমাল, পড়ে আছে
দুই এক ফোঁটা শীতের শিশির;
এখনো হয়তো শুকায়নি কোনো কোনো অশ্রুবিন্দুকণা,
বৃষ্টির ফোঁটা
চঞ্চল করুণ দৃষ্টি, পিছু ডাক,
হয়তো এখনো আছে সকালের মেঘভাঙা রোদে,
গাছের ছায়ায়
পদ্মাপকুরের স্থির কালো জলে,
হয়তো এখনো আছে হাঁসের নরম পায়ে
গচ্ছিত আমার সেই হারানো জীবন
সেই সুখ-দুঃখ
গোপন চোখের জল।
এখনো হয়তো পাওয়া যাবে মাটিতে
পায়ের চিহ্ন
সেসব কিছুই রাখিনি আমি
ফেলতে ফেলতে ছড়াতে ছড়াতে
এখানে এসেছি;
আমি এই জীবনকে ফ্রেমে বেঁধে রাখিনি কখনো
নিখুঁত ছবির মতো তাকে আগলে রাখা হয়নি
আমার,
আমার জীবন আমি এভাবে ছড়াতে ছড়াতে এসেছি।
আমার সঞ্চয় আজ কেবল কুয়াশা, কেবল ধূসর
মেঘ
কেবল শূন্যতা
আমি এই আমাকে ফ্রেমে বেঁধে সাজিয়ে রাখিনি,
ফুটতে ফুটতে ঝরতে ঝরতে আমি এই এখানে
এসেছি;
আমি তাই অম্লান অক্ষুণ্ন নেই, আমি ভাঙাচোরা
আমি ঝরা-পড়া, ঝরতে ঝরতে
পড়তে পড়তে
এতোটা দীর্ঘ পথ এভাবে এসেছি
আমি কিছুই রাখিনি ধরে কোনো মালা, কোনো ফুল,
কোনো অমলিন স্মৃতিচিহ্ন
কতো প্রিয় ফুল, কতো প্রিয় সঙ্গ, কতো উদাসীন
উদ্দাম দিন ও রাত্রি
সব মিলে হয়ে গেছে একটিই ভালোবাসার
মুখ,
অজস্র স্মৃতির ফুল হয়ে গেছে একটিই স্মৃতির গোলাপ
সব সাম মিলে হয়ে গেছে একটিই প্রিয়তম নাম;
আমার জীবন আমি ফেলতে ফেলতে ছড়াতে ছড়াতে
এখানে এসেছি।
১৩| ০৯ ই মার্চ, ২০১২ রাত ৮:১৩
সায়েম মুন বলেছেন: চমৎকার পোষ্ট। প্লাস ও প্রিয়তে থাকলো।
০৯ ই মার্চ, ২০১২ রাত ৯:২৮
ফারজুল আরেফিন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ প্রিয় সায়েম মুন ভাই।
স্মৃতি বড় উচ্ছৃঙ্খল – পুর্ণেন্দু পত্রী
পুরনো পকেট থেকে উঠে এল কবেকার শুকনো গোলাপ।
কবেকার? কার দেওয়া? কোন মাসে? বসন্তে না শীতে?
গোলাপের মৃতদেহে তার পাঠযোগ্য স্মৃতিচিহ্ন নেই।
স্মৃতি কি আমারও আছে? স্মৃতি কি গুছিয়ে রাখা আছে
বইয়ের তাকের মত, লং প্লেইং রেকর্ড-ক্যাসেটে
যে-রকম সুসংবদ্ধ নথীভুক্ত থাকে গান, আলাপচারীতা?
আমার স্মৃতিরা বড় উচ্ছৃঙ্খল, দমকা হাওয়া যেন
লুকোচুরি, ভাঙাভাঙি, ওলোটপালটে মহাখুশি
দুঃখেরও দুপুরে গায়, গাইতে পারে, আনন্দ-ভৈরবী।
আকাঙ্খার ডানাগুলি মিশে গেছে আকাশের অভ্রে ও আবীরে
আগুনের দিনগুলি মিশে গেছে সদ্যজাত ঘাসের সবুজে
প্রিয়তম মুখগুলি মিশে গেছে সমুদ্রের ভিতরের নীলে।
স্মৃতি বড় উচ্ছৃঙ্খল, দুহাজার বছরেও সব মনে রাখে
ব্যাধের মতন জানে অরণ্যের আদ্যোপান্ত মূর্তি ও মর্মর।
অথচ কাল বা পরশু কে ডেকে গোলাপ দিল কিছুতে বলবে না।
১৪| ০৯ ই মার্চ, ২০১২ রাত ৮:৩৯
জোবায়ের নিয়ন বলেছেন: প্রিয়তে সাজিয়ে রাখলাম।
++++++++++++
০৯ ই মার্চ, ২০১২ রাত ৯:৩৩
ফারজুল আরেফিন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ও শুভকামনা।
কথোপকথন – ৪ – পূর্ণেন্দু পত্রী
- যে কোন একটা ফুলের নাম বল
– দুঃখ ।
– যে কোন একটা নদীর নাম বল
– বেদনা ।
– যে কোন একটা গাছের নাম বল
– দীর্ঘশ্বাস ।
– যে কোন একটা নক্ষত্রের নাম বল
– অশ্রু ।
– এবার আমি তোমার ভবিষ্যত বলে দিতে পারি ।
– বলো ।
– খুব সুখী হবে জীবনে ।
শ্বেত পাথরে পা ।
সোনার পালঙ্কে গা ।
এগুতে সাতমহল
পিছোতে সাতমহল ।
ঝর্ণার জলে স্নান
ফোয়ারার জলে কুলকুচি ।
তুমি বলবে, সাজবো ।
বাগানে মালিণীরা গাঁথবে মালা
ঘরে দাসিরা বাটবে চন্দন ।
তুমি বলবে, ঘুমবো ।
অমনি গাছে গাছে পাখোয়াজ তানপুরা,
অমনি জোৎস্নার ভিতরে এক লক্ষ নর্তকী ।
সুখের নাগর দোলায় এইভাবে অনেকদিন ।
তারপর
বুকের ডান পাঁজরে গর্ত খুঁড়ে খুঁড়ে
রক্তের রাঙ্গা মাটির পথে সুড়ঙ্গ কেটে কেটে
একটা সাপ
পায়ে বালুচরীর নকশা
নদীর বুকে ঝুঁকে-পড়া লাল গোধূলি তার চোখ
বিয়েবাড়ির ব্যাকুল নহবত তার হাসি,
দাঁতে মুক্তোর দানার মত বিষ,
পাকে পাকে জড়িয়ে ধরবে তোমাকে
যেন বটের শিকড়
মাটিকে ভেদ করে যার আলিঙ্গন ।
ধীরে ধীরে তোমার সমস্ত হাসির রং হলুদ
ধীরে ধীরে তোমার সমস্ত গয়নায় শ্যাওলা
ধীরে ধীরে তোমার মখমল বিছানা
ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টিতে, ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টিতে সাদা ।
– সেই সাপটা বুঝি তুমি ?
– না ।
– তবে?
– স্মৃতি ।
বাসর ঘরে ঢুকার সময় যাকে ফেলে এসেছিলে
পোড়া ধুপের পাশে ।
১৫| ০৯ ই মার্চ, ২০১২ রাত ৮:৪১
কল্পবিলাসী স্বপ্ন বলেছেন: আমার প্রিয় কবি নজরুলের কোন কবিতা নেই কেনো?
০৯ ই মার্চ, ২০১২ রাত ৯:৩৬
ফারজুল আরেফিন বলেছেন: অনেক দুঃখিত ভাই, উনার কবিতা যে আমার প্রিয় নয় সে কারণে নেই। আপনার জন্য এইটা -
মানুষ – কাজী নজরুল ইসলাম
গাহি সাম্যের গান-
মানুষের চেয়ে কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান,
নাই দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্মজাতি,
সব দেশে, সল কালে, ঘরে-ঘরে তিনি মানুষের জ্ঞাতি।
‘পূজারী, দুয়ার খোল,
ক্ষুদার ঠাকুর দাঁড়ায়ে দুয়ারে পূজার সময় হলো!’
স্বপ্ন দেখিয়া আকুল পূজারী খুলিল ভজনালয়
দেবতার বরে আজ রাজা-টাজা হ’য়ে যাবে নিশ্চয়!
জীর্ণ-বস্ত্র শীর্ণ-গাত্র, ক্ষুদায় কন্ঠ ক্ষীণ
ডাকিল পান্থ, ‘দ্বার খোল বাবা, খাইনি তো সাত দিন!’
সহসা বন্ধ হ’ল মন্দির, ভুখারী ফিরিয়া চলে,
তিমির রাত্রি, পথ জুড়ে তার ক্ষুদার মানিক জ্বলে!
ভুখারী ফুকারি’ কয়,
‘ঐ মন্দির পূজারীর, হায় দেবতা, তোমার নয়!’
মসজিদে কাল শিরনী আছিল, অঢেল গোস্ত রুটি
বাঁচিয়া গিয়াছে, মোল্লা সাহেব হেসে তাই কুটিকুটি!
এমন সময় এলো মুসাফির গায়ে-আজারির চিন্
বলে ‘বাবা, আমি ভুকা ফাকা আছি আজ নিয়ে সাত দিন!’
তেরিয়াঁ হইয়া হাঁকিল মোল্লা - “ভ্যালা হ’ল দেখি লেঠা,
ভুখা আছ মর গো-ভাগাড়ে গিয়ে! নামাজ পড়িস বেটা?”
ভুখারী কহিল, ‘না বাবা!’ মোল্লা হাঁকিল – তা’ হলে শালা
সোজা পথ দেখ!’ গোস্ত-রুটি নিয়া মসজিদে দিল তালা!
ভুখারী ফিরিয়া চলে,
চলিতে চলিতে বলে-
“আশিটা বছর কেটে গেল, আমি ডাকিনি তোমায় কভু,
আমার ক্ষুদার অন্ন তা’বলে বন্ধ করোনি প্রভু
তব মসজিদ মন্দিরে প্রভু নাই মানুষের দাবী,
মোল্লা-পুরুত লাগায়েছে তার সকল দুয়ারে চাবী!”
১৬| ০৯ ই মার্চ, ২০১২ রাত ৯:১৫
শিক্ষানবিস বলেছেন: ভালো কালেকশন।
তবে তসলিমার চিঠিটা দিয়ে সৌন্দর্য নষ্ট হয়েছে।
০৯ ই মার্চ, ২০১২ রাত ৯:৪০
ফারজুল আরেফিন বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
বাঙলা ভাষা – হুমায়ুন আজাদ
শেকলে বাঁধা শ্যামল রূপসী, তুমি-আমি, দুর্বিনীত দাসদাসী-
একই শেকলে বাঁধা প’ড়ে আছি শতাব্দীর পর শতাব্দী।
আমাদের ঘিরে শাঁইশাঁই চাবুকের শব্দ, স্তরে স্তরে শেকলের ঝংকার।
তুমি আর আমি সে-গোত্রের যারা চিরদিন উৎপীড়নের মধ্যে গান গায়-
হাহাকার রূপান্তরিত হয় সঙ্গীতে-শোভায়।
লকলকে চাবুকের আক্রোশ আর অজগরের মতো অন্ধ শেকলের
মুখোমুখি আমরা তুলে ধরি আমাদের উদ্ধত দর্পিত সৌন্দর্য:
আদিম ঝরনার মতো অজস্র ধারায় ফিনকি দেয়া টকটকে লাল রক্ত,
চাবুকের থাবায় সুর্যের টুকরোর মতো ছেঁড়া মাংস
আর আকাশের দিকে হাতুড়ির মতো উদ্যত মুষ্টি।
শাঁইশাঁই চাবুকে আমার মিশ্র মাংসপেশি পাথরের চেয়ে শক্ত হয়ে ওঠে
তুমি হয়ে ওঠো তপ্ত কাঞ্চনের চেয়েও সুন্দর।
সভ্যতার সমস্ত শিল্পকলার চেয়ে রহস্যময় তোমার দু-চোখ
যেখানে তাকাও সেখানেই ফুটে ওঠে কুমুদকহ্লার
হরিণের দ্রুত ধাবমান গতির চেয়ে সুন্দর ওই ভ্রূযুগল
তোমার পিঠে চাবুকের দাগ চুনির জড়োয়ার চেয়েও দামি আর রঙিন
তোমার দুই স্তন ঘিরে ঘাতকের কামড়ের দাগ মুক্তোমালার চেয়েও ঝলোমলো
তোমার ‘অ, আ’ –চিৎকার সমস্ত আর্যশ্লোকের চেয়েও পবিত্র অজর
তোমার দীর্ঘশ্বাসের নাম চন্ডীদাস
শতাব্দী কাঁপানো উল্লাসের নাম মধুসূদন
তোমার থরোথরো প্রেমের নাম রবীন্দ্রনাথ
বিজন অশ্রুবিন্দুর নাম জীবনানন্দ
তোমার বিদ্রোহের নাম নজরুল ইসলাম
শাঁইশাঁই চাবুকের আক্রোশে যখন তুমি আর আমি
আকাশের দিকে ছুঁড়ি আমাদের উদ্ধত সুন্দর বাহু, রক্তাক্ত আঙুল,
তখনি সৃষ্টি হয় নাচের নতুন মুদ্রা;
ফিনকি দেয়া লাল রক্ত সমস্ত শরীরে মেখে যখন আমরা গড়িয়ে পড়ি
ধূসর মাটিতে এবং আবার দাঁড়াই পৃথিবীর সমস্ত চাবুকের মুখোমুখি,
তখনি জন্ম নেয় অভাবিত সৌন্দর্যমন্ডিত বিশুদ্ধ নাচ;
এবং যখন শেকলের পর শেকল চুরমার ক’রে ঝনঝন ক’রে বেজে উঠি
আমরা দুজন, তখনি প্রথম জন্মে গভীর-ব্যাপক-শিল্পসম্মত ঐকতান-
আমাদের আদিগন্ত আর্তনাদ বিশশতকের দ্বিতীয়ার্ধের
একমাত্র গান।
১৭| ০৯ ই মার্চ, ২০১২ রাত ৯:১৬
নষ্ট কবি বলেছেন: জোশ
কবিতা গুলো সাথে থাকলে আরো ভাল লাগত
০৯ ই মার্চ, ২০১২ রাত ৯:৪৬
ফারজুল আরেফিন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ কবি। এতগুলো কবিতা এক পোস্টে দেয়া যায় না।
তোমাকে লিখবো বলে একখানি চিঠি – মহাদেব সাহা
তোমাকে লিখবো বলে একখানি চিঠি
কতোবার দ্বারস্ত হয়েছি আমি
গীতিকবিতার,
কতোদিন মুখস্ত করেছি এই নদীর কল্লোল
কান পেতে শুনেছি ঝর্ণার গান,
বনে বনে ঘুরে আহরণ করেছি পাখির শিস্
উদ্ভিদের কাছে নিয়েছি শব্দের পাঠ;
তোমাকে লিখবো বলে একখানি চিঠি
সংগ্রহ করেছি আমি ভোরের শিশির,
তোমাকে লেখার মতো প্রাঞ্জল ভাষার জন্য
সবুজ বৃক্ষের কাছে জোড়হাতে দাঁড়িয়েছি আমি-
ঘুরে ঘুরে গুহাগাত্র থেকে নিবিড় উদ্ধৃতি সব
করেছি চয়ন;
তোমাকে লিখবো বলে জীবনের গূঢ়তম চিঠি
হাজার বছর দেখো কেমন রেখেছি খুলে বুক।
১৮| ০৯ ই মার্চ, ২০১২ রাত ৯:২৫
অনিক বলেছেন: চমৎকার পোস্ট। প্রিয়তে রেখে দিলাম।
০৯ ই মার্চ, ২০১২ রাত ৯:৪৯
ফারজুল আরেফিন বলেছেন: অশেষ ধন্যবাদ।
একবার বলেছি তোমাকে – আহসান হাবীব
একবার বলেছি, তোমাকে আমি ভালোবাসি।
একবার বলেছি, তোমাকে আমি, তোমাকেই ভালোবাসি।
বল
এখন সে কথা আমি ফেরাব কেমনে!
আমি একবার বলেছি তোমাকে …
এখন তোমাকে আমি ঘৃণা করি।
এখন তোমার
দৃষ্টির কবলে এলে ক্ষতস্থান জ্বলে জ্বলে ওঠে।
তোমার সান্নিধ্যে এলে তুমি উষ্ণ নাভিমূল থেকে
বাতাসে ছড়াও তীব্র সাপিনীর তরল নিঃস্বাস। আমি
যতবার ছুটতে চাই, তোমার দৃষ্টির বাইরে যেতে চাই, তুমি
দু চোখে কী ইন্দ্রজাল মেলে রাখ! আমি ছুটতেও পারি না
আমি ফেরাতে পারি না কথা
আমি একবার বলেছি, তোমাকে …
সম্রাজ্ঞীর বেশে আছ। নতজানু আমি
দাসানুদাসের ভঙ্গি করপুটে, দেখি
তোমার মুখের রেখা অবিচল, স্থির জঙ্ঘা তোলে না টঙ্কার,
তুমি পবিত্রতা পবিত্রতা বলে
অস্পষ্ট চিত্কার কর, তুমি
কেবলি মালিন্য দেখ, অশ্লীলতা, ক্রমান্বয়ে ঘৃণা
ক্রোধ বাড়ে, উত্তেজনা বাড়ে
নামে উষ্ণ জলস্রোত। তুমি
এইভাবে প্রবল ঘৃণায়
আমাকে ভাসিয়ে দিয়ে অহঙ্কার রাখতে চাও অটুট। তবুও
পৃথিবীতে আছে কিছু মানুষের অবস্থান, তারা
অপমানে ধন্য হয়
উপেক্ষায় ঋজু;
তারা স্বভাব-কাঙাল! যদি
একবার বলে তবে ফেরাতে পারে না। আমি
ফেরাতে পারি না। আমি
একবার বলেছি, তোমাকে আমি ভালোবাসি।
ভালোবাসা ভালোবাসা ভালোবাসা
ভালোবাসা! সে কেমন, কোন দীপ্র স্বর্গীয় প্রতাপ
যার মৃত্যু নেই
জন্মান্তর নেই?
১৯| ০৯ ই মার্চ, ২০১২ রাত ৯:২৭
শায়মা বলেছেন: তসলীমা নাসরিনের এই চিঠিটা পড়লে ভীষন মন খারাপ হয়ে যায়।
০৯ ই মার্চ, ২০১২ রাত ৯:৫৫
ফারজুল আরেফিন বলেছেন: আমার তো কান্না চলে আসে। তসলীমার বইগুলো পড়েছিলাম সেই কবে, প্রিয় রুদ্রের জন্যও অনেক মায়া কাজ করে। আহারে জীবন, কোথায় তোমার স্বস্তি.....
উল্টো ঘুড়ি – রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ
এতো সহজেই ভালোবেসে ফেলি কেন!
বুঝি না আমার রক্তে কি আছে নেশা-
দেবদারু-চুলে উদাসী বাতাস মেখে
স্বপ্নের চোখে অনিদ্রা লিখি আমি,
কোন বেদনার বেনোজলে ভাসি সারাটি স্নিগ্ধ রাত?
সহজেই আমি ভালোবেসে ফেলি, সহজে ভুলিনা কিছু-
না-বলা কথায় তন্ত্রে তনুতে পুড়ি,
যেন লাল ঘুড়ি একটু বাতাস পেয়ে
উড়াই নিজেকে আকাশের পাশাপাশি।
সহজে যদিও ভালোবেসে ফেলি
সহজে থাকি না কাছে,
পাছে বাঁধা পড়ে যাই।
বিস্মিত তুমি যতোবার টানো বন্ধন-সুতো ধ’রে,
আমি শুধু যাই দূরে।
আমি দূরে যাই-
স্বপ্নের চোখে তুমি মেখে নাও ব্যথা-চন্দন চুয়া,
সারাটি রাত্রি ভাসো উদাসীন বেদনার বেনোজলে…
এতো সহজেই ভালোবেসে ফ্যালো কেন?
২০| ০৯ ই মার্চ, ২০১২ রাত ৯:৫৫
জীবনকেসি বলেছেন: মন্তব্য করলেই কবিতা মিলে
দুই পাখি এক ঢিলে।
ধন্যবাদ দিলে কম হয়
জীবন হোক কবিতা ময়।
ধন্যযোগ।
০৯ ই মার্চ, ২০১২ রাত ১০:০৬
ফারজুল আরেফিন বলেছেন: সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। চেষ্টা করছি মিল রেখে কবিতা দিতে। আপনাকেও একটা দিলাম।
এপিটাফ – নির্মলেন্দু গুণ
করতল ভরা এই ম্লান রেখাগুলো তোমাদের জন্য
রেখে গেলাম। হাড়গুলো থেকে সার হবে,
সার থেকে জন্ম নেবে হাড়ের গোলাপ।
আমার যে ছেলেটির জম্ন হয় নি, তাকে দিও
এই দুর্বিনিত শীসের কলম।
যে শব্ দুটি আমি উচ্চারণ করতে পারলুম না —
তোমাদের প্রচণ্ড ঘৃণায়, সন্দেহে, তার আত্মা
রক্তাপ্লুত হয়েছে বারবার।
যে গান গাইতে পারি নি, তার সুর বেজেছে চৈতন্যে।
যে কবিতা লেখা হল না সে-ও ছিল
সংগঠিত সীসার ভিতরে।
এই কবরগুলো সাক্ষ দেবে, ভালবেসেছিলাম।
২১| ০৯ ই মার্চ, ২০১২ রাত ১০:০২
জিসান শা ইকরাম বলেছেন:
চমৎকার পোস্ট
প্রিয়তে নিলাম ।
০৯ ই মার্চ, ২০১২ রাত ১০:১৪
ফারজুল আরেফিন বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ জিসান ভাই। আপনাকে কোনটা দিব তাই ভাবছি।
অধম ও উত্তম – সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত
কুকুর আসিয়া এমন কামড়
দিল পথিকের পায়
কামড়ের চোটে বিষদাঁত ফুটে
বিষ লেগে গেল তায়।
ঘরে ফিরে এসে রাত্রে বেচারা
বিষম ব্যথায় জাগে,
মেয়েটি তাহার তারি সাথে হায়
জাগে শিয়রের আগে।
বাপেরে সে বলে ভর্ৎসনা-ছলে
কপালে রাখিয়া হাত,
“তুমি কেন বাবা, ছেড়ে দিলে তারে
তোমার কি নেই দাঁত !”
কষ্টে হাসিয়া আর্ত কহিল
“তুই রে হাসালি মোরে,
দাঁত আছে বলে কুকুরের পায়
দংশি কেমন করে !
কুকুরের কাজ কুকুর করেছে
কামড় দিয়েছে পায়,
তা ব’লে কুকুরে কামড়ানো কি রে
মানুষের শোভা পায় ?”
২২| ০৯ ই মার্চ, ২০১২ রাত ১০:২০
সাজিদ ঢাকা বলেছেন: কবিতার প্রতি তীব্র অনাগ্রহ , , , , তবুও গত বছর আবৃতি সমন্নয় পরিষদের ৪ দিনের ৯-৫ টা প্রশিক্ষন নিলাম ,এক আনটির নাট্যদলের সদস্য হয়ে
লাভ কিছুই হয় নাই , , ৪ দিন দুপুরে লাঞ্চ , বিকালের নাস্তা , ভার্সিটি ফাঁকি , , এটাই প্রাপ্তি
ভাই পরীক্ষা কিন্তু মে মাসে
০৯ ই মার্চ, ২০১২ রাত ১০:৩৫
ফারজুল আরেফিন বলেছেন: আমার কোন প্রশিক্ষণ নেই, তবুও দু-এক বার মঞ্চে উঠেছি। পিনপতন স্তব্ধতায় মজাই পেয়েছি। ঐদিকে গেলে খারাপ করতাম না বলেই মনে হয়।
কথা বলার ভয়েস ছাড়া, আরো একটা ভয়েস আছে - ঐটাকে আবিস্কার করো। হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
আজ মনটা উদাস, কাল থেকে পড়া শুরু করবো।
দোয়া করো ভাই।
তোমার মন্তব্যে খুব প্রিয় একটা কবিতা দিচ্ছি -
প্রতীক্ষা – রফিক আজাদ
এমন অনেক দিন গেছে
আমি অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থেকেছি,
হেমন্তে পাতা-ঝরার শব্দ শুনবো ব’লে
নিঃশব্দে অপেক্ষা করেছি বনভূমিতে-
কোনো বন্ধুর জন্যে
কিংবা অন্য অনেকের জন্যে
হয়তো বা ভবিষ্যতেও অপেক্ষা করবো…
এমন অনেক দিনই তো গেছে
কারো অপেক্ষায় বাড়ি ব’সে আছি-
হয়তো কেউ বলেছিলো, “অপেক্ষা ক’রো
একসঙ্গে বেরুবো।”
এক শনিবার রাতে খুব ক্যাজুয়ালি
কোনো বন্ধু ঘোরের মধ্যে গোঙানির মতো
উচ্চারণ করেছিলো, “বাড়ি থেকো
ভোরবেলা তোমাকে তুলে নেবো।”
হয়তো বা ওর মনের মধ্যে ছিলো
চুনিয়া অথবা শ্রীপুর ফরেস্ট বাংলো;
-আমি অপেক্ষায় থেকেছি।
যুদ্ধের অনেক আগে
একবার আমার প্রিয়বন্ধু অলোক মিত্র
ঠাট্টা ক’রে বলেছিলো,
“জীবনে তো কিছুই দেখলি না
ন্যুব্জপীঠ পানশালা ছাড়া। চল, তোকে
দিনাজপুরে নিয়ে যাবো
কান্তজীর মন্দির ও রামসাগর দেখবি,
বিরাট গোলাকার চাঁদ মস্ত খোলা আকাশ দেখবি,
পলা ও আধিয়ারদের জীবন দেখবি,
গল্প-টল্প লেখার ব্যাপারে কিছু উপাদান
পেয়ে যেতেও পারিস,
তৈরী থাকিস- আমি আসবো”
-আমি অপেক্ষায় থেকেছি;
আমি বন্ধু, পরিচিত-জন, এমনকি- শত্রুর জন্যেও
অপেক্ষায় থেকেছি,
বন্ধুর মধুর হাসি আর শত্রুর ছুরির জন্যে
অপেক্ষায় থেকেছি-
কিন্তু তোমার জন্য আমি অপেক্ষায় থাকবো না,
-প্রতীক্ষা করবো।
‘প্রতীক্ষা’ শব্দটি আমি শুধু তোমারই জন্যে খুব যত্নে
বুকের তোরঙ্গে তুলে রাখলাম,
অভিধানে শব্দ-দু’টির তেমন কোনো
আলাদা মানে নেই-
কিন্তু আমরা দু’জন জানি
ঐ দুই শব্দের মধ্যে পার্থক্য অনেক,
‘অপেক্ষা’ একটি দরকারি শব্দ—
আটপৌরে, দ্যোতনাহীন, ব্যঞ্জনাবিহীন,
অনেকের প্রয়োজন মেটায়।
‘প্রতীক্ষা’ই আমাদের ব্যবহার্য সঠিক শব্দ,
ঊনমান অপর শব্দটি আমাদের ব্যবহারের অযোগ্য,
আমরা কি একে অপরের জন্যে প্রতীক্ষা করবো না?
আমি তোমার জন্যে পথপ্রান্তে অশ্বত্থের মতো
দাঁড়িয়ে থাকবো-
ঐ বৃক্ষ অনন্তকাল ধ’রে যোগ্য পথিকের
জন্যে প্রতীক্ষমান,
আমাকে তুমি প্রতীক্ষা করতে বোলো
আমি ঠায় দাঁড়িয়ে থাকবো অনড় বিশ্বাসে,
দাঁড়িয়ে থাকতে-থাকতে
আমার পায়ে শিকড় গজাবে…
আমার প্রতীক্ষা তবু ফুরোবে না…
২৩| ০৯ ই মার্চ, ২০১২ রাত ১০:২৫
সাজিদ ঢাকা বলেছেন: ও ও ও ১০০০ টাকা ও দিয়েছিল উল্টা , , , , পোস্ট সোজা প্রিয়তে , , যে কোনদিন কাজে আসতে পারে
০৯ ই মার্চ, ২০১২ রাত ১০:৩৯
ফারজুল আরেফিন বলেছেন: পরের বার সাথে নিও ভাইয়া। খাওয়া দাওয়ার সাথে পকেট খরচ হলে তো কবিতার প্রেমে যুদ্ধ করা যাইতে পারে।
২৪| ০৯ ই মার্চ, ২০১২ রাত ১০:৩৮
রেজওয়ান তানিম বলেছেন: সত্যি ভাল লাগল কবিতা নিয়ে আরেকটি কাজ হওয়ায়।
আমার তালিকাটি ক্রমাগত হালনাগাদ হচ্ছেই।
আপনিও এভাবে মন্তব্য মাত্রই কবিতা দিয়ে দিন।
বেশ লাগছে।
রেখে দিলাম সেই পোস্টে
১০ ই মার্চ, ২০১২ বিকাল ৪:২২
ফারজুল আরেফিন বলেছেন: এখন যে সংকলনগুলো হয় তাতে কোন সিন্ডিকেট সদস্যকে বিশেষ হাইলাইট করা হয়, অনেক পোস্ট বাদ দেয়া হয়, অনেককে আড়াল করা হয়। পুরোটাই নির্ভর করে সিন্ডিকেট সদস্যদের কাছে গ্রহণ যোগ্যতার মাপকাঠিতে। সেজন্য সংকলন সিন্ডিকেটকে দৃঢ় করার একটি কৌশল বলেই মনে হয়।
আপনার ওখানে আমার দেয়া পোস্ট থাকলে অনেক সেলিব্রেটি ব্লগারের রাগের কারণ হতে পারে। শুভকামনা রইলো। আপনার জন্য এই কবিতা-
কথোপকথন-২ – পুর্ণেন্দু পত্রী
এতো দেরী করলে কেন? সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছি।
– কি করবো বলুন ম্যাডাম? টিউশনি শেষ করে বাইরে তখন ঝুম বৃষ্টি। আমার জন্যে তো আর গেইটের বাইরে মার্সিডিজ দাঁড়িয়ে থাকে না যে ড্রাইভারের কুর্নিশ নিতে নিতে হুট করে ঢুকে পড়বো। তাই ঝুম বৃষ্টি মাথায় নিয়ে, কাদা-জল ভেঙ্গে, গরীবের গাড়ি মানে দু’পায়ের উপর ভরসা করেই আসতে হয় আপনার আমন্ত্রণ রক্ষা করতে। তবে আজ রিক্সায় করে এসেছি নইলে একেবারে কাকভেজা হয়ে যেতাম। রিক্সা খুঁজে পেতেই যা দেরী হলো।
: ইস্ বেশ ভিজে গেছো দেখছি। কাছে এসো তো, রুমাল দিয়ে মুছে দিই।
– ওহো, আমি তো ভেবেছিলাম তোমার শাড়ির আঁচল দিয়ে মুছিয়ে দেবে। ঠিক আছে, রুমালই সই।
: না মিস্টার, ওটা ভবিষ্যতের জন্য জমা থাকুক। যখন তোমার বউ হবো তখন ইচ্ছেটা পূরণ হবে।
– আচ্ছা। আর যদি তা না হও, তবে আমি বুড়ো বয়েসে পান চিবোতে চিবোতে কোন এক বাদলঘন দিনে বসে বসে রোমন্থন করবো আজকের এই রুমালি ভালোবাসাময় সময়টাকে। নাতিপুতিকে তখন প্রথম প্রেমিকা আর এই রুমালটার গল্প শোনাবো।
: প্লিজ, এভাবে বলো না। কেন আমি তোমাকে পাবো না? তুমি কি আমাকে চাও না? আমাকে ভালোবাসো না?
– উত্তরটা আসলে একটু কঠিন। তোমাকে চাই আবার চাই না। ভালোবাসি আবার বাসি না।
: হেয়াঁলি রাখো। আমি স্পষ্ট জানতে চাই।
– তবে শোন। আমার প্রতিদিনের জীবন সংগ্রামের নির্মম বাস্তবতা তোমার জানা নেই। সেই জীবনে তুমি কখনো অভ্যস্ত হতে পারবেও না। তোমাকে একটা প্রশ্ন করি?
: হ্যাঁ, করো।
– একটু আগে একটা টং-এর দোকানের ছাউনিতে গা বাচিয়ে রিক্সা খুঁজছিলাম। খুব শীত শীত লাগছিলো, তখন চা খেয়েছিলাম ভাঙ্গা কাপে। আধধোয়া সে কাপে লেগেছিলো অনেক মেহনতি মানুষের ঠোঁটের ছোঁয়া, লেগেছিলো থুতুও যা এখনো আমার ঠোঁটে লেগে আছে। তুমি কি পারবে সেই ঠোঁটে চুমু খেতে?
২৫| ১০ ই মার্চ, ২০১২ রাত ১২:৫৮
শব্দহীন জোছনা বলেছেন: আমি সম্ভবত খুব ছোট্ট কিছুর জন্যে মারা যাবো
খুব ছোট একটি স্বপ্নের জন্যে
খুব ছোট দুঃখের জন্যে
আমি হয়তো মারা যাবো কারো ঘুমের ভেতরে
একটি ছোটো দীর্ঘশ্বাসের জন্যে
একফোঁটা সৌন্দর্যের জন্যে।
পোষ্টা অনেক ভাল লাগল। +++++++++++++
১০ ই মার্চ, ২০১২ বিকাল ৪:২৬
ফারজুল আরেফিন বলেছেন: আপনার দেয়া হুমায়ুন আজাদের কবিতাটি অমূল্য কিছু। ধন্যবাদ।
সবকিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে – হুমায়ুন আজাদ
আমি জানি সব কিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে।
নষ্টদের দানবমুঠোতে ধরা পড়বে মানবিক
সব সংঘ-পরিষদ;- চ’লে যাবে অত্যন্ত উল্লাসে
চ’লে যাবে এই সমাজ সভ্যতা-সমস্ত দলিল-
নষ্টদের অধিকারে ধুয়েমুছে, যে-রকম রাষ্ট্র
আর রাষ্ট্রযন্ত্র দিকে দিকে চ’লে গেছে নষ্টদের
অধিকারে। চ’লে যাবে শহর বন্দর ধানখেত
কালো মেঘ লাল শাড়ি শাদা চাঁদ পাখির পালক
মন্দির মসজিদ গির্জা সিনেগগ পবিত্র প্যাগোডা।
অস্ত্র আর গণতন্ত্র চ’লে গেছে, জনতাও যাবে;
চাষার সমস্ত স্বপ্ন আস্তাকুড়ে ছুঁড়ে একদিন
সাধের সমাজতন্ত্রও নষ্টদের অধিকারে যাবে।
আমি জানি সব কিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে।
কড়কড়ে রৌদ্র আর গোলগাল পূর্ণিমার চাঁদ
নদীরে পাগল করা ভাটিয়ালি খড়ের গম্বুজ
শ্রাবণের সব বৃষ্টি নষ্টদের অধিকারে যাবে।
রবীন্দ্রনাথের সব জ্যোৎস্না আর রবিশংকরের
সমস্ত আলাপ হৃদয়স্পন্দন গাথা ঠোঁটের আঙুর
ঘাইহরিণীর মাংসের চিৎকার মাঠের রাখাল
কাশবন একদিন নষ্টদের অধিকারে যাবে।
চলে যাবে সেই সব উপকথাঃ সৌন্দর্য-প্রতিভা-
মেধা; -এমনকি উন্মাদ ও নির্বোধদের প্রিয় অমরতা
নির্বাধ আর উন্মাদদের ভয়ানক কষ্ট দিয়ে
অত্যন্ত উল্লাসভরে নষ্টদের অধিকারে যাবে।
আমি জানি সব কিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে।
সবচে সুন্দর মেয়ে দুইহাতে টেনে সারারাত
চুষবে নষ্টের লিঙ্গ; লম্পটের অশ্লীল উরুতে
গাঁথা থাকবে অপার্থিব সৌন্দর্যের দেবী। চ’লে যাবে,
কিশোরীরা চ’লে যাবে, আমাদের তীব্র প্রেমিকারা
ওষ্ঠ আর আলিঙ্গন ঘৃণা ক’রে চ’লে যাবে, নষ্টদের
উপপত্নী হবে। এই সব গ্রন্থ শ্লোক মুদ্রাযন্ত্র
শিশির বেহালা ধান রাজনীতি দোয়েলের স্বর
গদ্য পদ্য আমার সমস্ত ছাত্রী মার্ক্স-লেনিন,
আর বাঙলার বনের মত আমার শ্যামল কন্যা-
রাহুগ্রস্থ সভ্যতার অবশিষ্ট সামান্য আলোক-
আমি জানি তারা সব নষ্টদের অধিকারে যাবে।
২৬| ১০ ই মার্চ, ২০১২ রাত ১:৪৪
ব্রাত্য জন বলেছেন: ১৭ তম ভালো লাগা । প্রিয়তে .।.।.।.।।
১০ ই মার্চ, ২০১২ বিকাল ৪:৩২
ফারজুল আরেফিন বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
বিভ্রম – সমুদ্র গুপ্ত
ছেলেবেলায় একবার এক
আত্মীয় বাড়ি বেড়াতে গিয়ে
কারুকার্যময় আলমারির ভিতরে রাখা
সুন্দর পুতুল দেখে হাত বাড়িয়ে ধরতে গিয়ে
আলমারির কাঁচ ভেঙে ফেলেছিলাম
পুতুলের কাছ থেকে ফিরে এসেছিলো
রক্তাক্ত ক্ষুব্ধ আঙুল
যৌবনে-
চমৎকার তিল দেখে
হাত দিয়ে ছুঁতে যেতেই
তোমার লাল গাল থেকে
উড়ে গেলো মাছি
এখন তো
চতুর্দিকে দেখতে শুনতে
চলতে ফিরতে শুধু বিভ্রান্তই হই
খরায় বৃষ্টির আকাঙ্ক্ষা নিয়ে
আকাশ দেখতে দেখতে যখন
মেঘ দেখে উৎফুল্ল হই
অকস্মাৎ বুঝে ফেলি
মেঘ নয় আকাশ রেখেছে ঢেকে
আণবিক ধোঁয়া
গমের শিষের মতো কোমল
আমার স্বপ্ন যখন
শিশিরের স্বপ্নে বিভোর
ভোর না হতেই এই
আমাদের প্রশান্ত আকাশে জমে
পরমাণু বিস্ফোরণের ধোঁয়া
ভেজা ঠোঁট দেখে যখন ভাবি
চুম্বনের এই বুঝি উৎকৃষ্ট সময়
ঠোঁটের কাছে ঠোঁট নিয়ে যেতেই দেখি
ঘৃণা যেন জমাট চাঁচের মতো
কঠিন জমেছে
২৭| ১০ ই মার্চ, ২০১২ দুপুর ২:০০
~মাইনাচ~ বলেছেন: চমৎকার একটা পোষ্ট
অজস্র মাইনাচ
১০ ই মার্চ, ২০১২ বিকাল ৪:৩৭
ফারজুল আরেফিন বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ।
এত এত মাইনাচ পেয়ে বিষম খুশি হলাম।
আপনাকে কি দেয়া যায়....
লোকটা জানলই না – সুভাষ মুখোপাধ্যায়
বাঁ দিকের বুক পকেটটা সামলাতে সামলাতে
হায়! হায়! লোকটার ইহকাল পরকাল গেল!
অথচ আর একটু নীচে হাত দিলেই
সে পেতো আলাদ্বীনের আশ্চর্য প্রদীপ,
তার হৃদয়!
লোকটা জানলোই না!
তার কড়ি গাছে কড়ি হল ।
লক্ষ্মী এল রণ-পায়ে
দেয়াল দিল পাহাড়া
ছোটলোক হাওয়া যেন ঢুকতে না পারে!
তারপর একদিন
গোগ্রাসে গিলতে গিলতে
দু’আঙ্গুলের ফাঁক দিয়ে-
কখন খসে পড়েছে তার জীবন-
লোকটা জানলই না!
২৮| ১০ ই মার্চ, ২০১২ দুপুর ২:০১
মাহী ফ্লোরা বলেছেন: অনেক সুন্দর একটা পোষ্ট।
১০ ই মার্চ, ২০১২ বিকাল ৪:৪৩
ফারজুল আরেফিন বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ কবি।
শুভকামনা।
বড় ভয়ে গোপনে গোপনে বাঁচি – তসলিমা নাসরিন
মানুষের চরিত্রই এমন
বসলে বলবে না, বসো না
দাঁড়ালে, কি ব্যাপার হাঁটো
আর হাঁটলে, ছি: বসো।
শুয়ে পড়লেও তাড়া – নাও উঠো,
না শুলেও স্বষ্তি নেই, একটু তো শুবে !
ওঠ বস করে করে নষ্ঠ হচ্ছে দিন
এখনো মরতে গেলে বলে ওঠে – বাঁচো
না জানি কখন ও বাঁচতে দেখলে বলে উঠবে – ছি: মরো
বড় ভয়ে গোপনে গোপনে বাঁচি।
২৯| ১০ ই মার্চ, ২০১২ রাত ৮:২৩
নিশাচর ভবঘুরে বলেছেন: পোষ্ট সরাসরি প্রিয়তে
+++++++++++++++++++
১০ ই মার্চ, ২০১২ রাত ১০:৩৪
ফারজুল আরেফিন বলেছেন: অশেষ ধন্যবাদ ভাই।
আপনাকে একটা প্রেমের কবিতা দেয়া উচিত।
যে আমাকে প্রেম শেখালো – মাকিদ হায়দার
যে আমাকে প্রেম শেখালো
জোৎস্না রাতে ফুলের বনে
সে যেন আজ সুখেই থাকে
সে যেন আজ রানীর মত
ব্যক্তিগত রাজ্যপাটে
পা ছড়িয়ে সবার কাছে
বসতে পারে
বলতে পারে মনের কথা
চোখের তারায়
হাত ইশারায়
ঐ যে দেখ দুঃখি প্রেমিক
যাচ্ছে পুড়ে রোদের ভিতর
ভিক্ষে দিলে ভিক্ষে নেবে
ছিন্ন বাসে শীর্ন দেহে
যাচ্ছে পুড়ে রোদের ভিতর
কিন্তু শোন প্রজাবৃন্দ
দুঃসময়ে সেই তো ছিলো
বুকের কাছে হৃদয় মাঝে
আজকে তারে দেখলে শুধু
ইচ্ছে করে
চোখের পাতায় অধর রাখি
যে আমাকে প্রেম শেখালো
প্রেম শিখিয়ে চিনিয়েছিলো
দুষ্টু গ্রহ অরুন্ধতী
বৃষ্টি ভেজা চতুর্দশী
জোৎস্না রাতের উজ্জ্বলতা
ভোরের বকুল শুভ্র মালা
নগর নাগর ভদ্র ইতর
রাজার বাড়ি
সেই তো আবার বুঝিয়েছিলো
যাওগো চলে আমায় ছেড়ে
যে আমাকে প্রেম শেখালো
জোৎস্না রাতে ফুলের বনে
সে যেন আজ সুখেই থাকে
নিজের দেহে আগুন জ্বেলে
ভেবেছিলাম
নিখাদ সোনা হবোই আমি
শীত বিকেলের টুকরো স্মৃতি
রাখবো ধরে সবার মত
হৃদয় বীণার মোহন তারে
ভুলেই গেলাম
যখন তুমি আমায় ডেকে
বললে শুধু
পথের এখন অনেক বাকি
যাও গো শোভন
যাও গো চলে বহুদুরে
কণ্ঠে আমার অনেক তৃষা
যাও গো চলে আপন পথে
এই না বলেই
হাসলে শুধু করুন ঠোঁটে
বাজলো দুরে শঙ্খ নিনাদ
কাঁদলো আমার বুকের পাথর
কাঁদলো দুরে হাজার তারা
একলা থাকার গভীর রাতে
একলা জাগার তিন প্রহরে
তাইতো বলি সবার কাছে
যে আমাকে দুঃখ দিলো
সে যেন আজ সবার চেয়ে
সুখেই থাকে
যে আমাকে প্রেম শেখালো
প্রেম শিখিয়ে বুকের মাঝে
অনল দিলো
সে যেন আজ সবার চেয়ে
সুখেই থাকে
সুখেই থাকে
৩০| ১০ ই মার্চ, ২০১২ রাত ১০:১৬
অনাহূত বলেছেন:
সরাসরি শোকেসে। অনেক পরিশ্রম করেছেন। সফল।
ভাল থাকুন আরেফিন।
১০ ই মার্চ, ২০১২ রাত ১০:৪৫
ফারজুল আরেফিন বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।
বাস্তবিক সফলতার জন্য একটু পরিশ্রম যাতে করতে পারি সে দোয়া করবেন।
সপ্তাহ শেষে বাড়ি যাব, ফিরে আসলে দেখা হবে ইনশাআল্লাহ।
আপনার জন্য এই কবিতাটি -
প্রেমিক - প্রেমিকার মৃত্যু – শার্ল বোদলেয়ার; অনুবাদ: বুদ্ধদেব বসু
কবরের মতো গভীর ডিভানে লুটিয়ে
মৃদু বাসে ভরা রবে আমাদের শয্যা,
সুন্দরতর দুর আকাশেরে ফুটিয়ে
দেয়ালের তাকে অদ্ভুত ফুলসজ্জা।
যুগল হৃদয়, চরম দহনে গলিত,
বিশাল যুগল- মশালের উল্লাসে
হবে মুখোমুখি – দর্পনে প্রতিফলিত
যুগ্ম প্রানের ভাস্বর উদ্ভাসে।
গোলাপি এবং মায়াবী নীলের সৃষ্টি
এক সন্ধ্যায় মিলবে দুয়ের দৃষ্টি,
যেন বিদায়ের দীর্ণ দীর্ঘশ্বাস;
পরে, দ্বার খুলে, মলিন মুকুরে রাঙাবে
এক দেবদূত, সুখী ও সবিশ্বাস;
আমাদের মৃত আগুনের ঘুম ভাঙাবে।
৩১| ১০ ই মার্চ, ২০১২ রাত ১০:৩৮
মাহবু১৫৪ বলেছেন: এই পোস্টে ২১ তম ভাল লাগা ।
আর বোনাস হিসেবে সাথেসাথে সাজঘরে রেখে দিলাম।
১০ ই মার্চ, ২০১২ রাত ১১:১০
ফারজুল আরেফিন বলেছেন: ভাললাগা পাইলাম ২১টা, সাজঘরে গেছে ৩১টা - দশটা কিন্তু ঘাটতি আছে।
আপনের বোনাস বুঝিয়া লন -
পরানের গহীন ভিতর (৪) – সৈয়দ শামসুল হক
আমি কার কাছে গিয়া জিগামু সে দুঃখ দ্যায় ক্যান,
ক্যান এত তপ্ত কথা কয়, ক্যান পাশ ফিরা শোয়,
ঘরের বিছন নিয়া ক্যান অন্য ধান খ্যাত রোয়?-
অথচ বিয়ার আগে আমি তার আছিলাম ধ্যান।
আছিলাম ঘুমের ভিতরে তার য্যান জলপিপি,
বাশীঁর লহরে ডোবা পরানের ঘাসের ভিতরে,
এখন শুকনা পাতা উঠানের পরে খেলা করে,
এখন সংসার ভরা ইন্দুরের বড় বড় ঢিপি।
মানুষ এমন ভাবে বদলায়া যায়, ক্যান যায়?
পুন্নিমার চান হয় অমাবস্যা কিভাবে আবার?
সাধের পিনিস ক্যান রঙচটা রদ্দুরে শুকায়?
সিন্দুরমতির মেলা হয় ক্যান বিরান পাথার?
মানুষ এমন তয়, একবার পাইবার পর
নিতান্ত মাটির মনে হয় তার সোনার মোহর।
৩২| ১০ ই মার্চ, ২০১২ রাত ১১:৫২
চেয়ারম্যান০০৭ বলেছেন: পোস্টে ২২ তম ভালো লাগা।সুন্দর সংগ্রহ ।
১১ ই মার্চ, ২০১২ বিকাল ৫:০১
ফারজুল আরেফিন বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে চেয়ারম্যান সাহেব। আপনার জন্য এই ছোট সুন্দর কবিতাটি।
ভালোবাসার সংজ্ঞা – রফিক আজাদ
ভালোবাসা মানে দুজনের পাগলামি,
পরস্পরকে হৃদয়ের কাছে টানা;
ভালোবাসা মানে জীবনের ঝুঁকি নেয়া,
বিরহ-বালুতে খালিপায়ে হাঁটাহাঁটি;
ভালোবাসা মানে একে অপরের প্রতি
খুব করে ঝুঁকে থাকা;
ভালোবাসা মানে ব্যাপক বৃষ্টি, বৃষ্টির একটানা
ভিতরে-বাহিরে দুজনের হেঁটে যাওয়া;
ভালোবাসা মানে ঠাণ্ডা কফির পেয়ালা সামনে
অবিরল কথা বলা;
ভালোবাসা মানে শেষ হয়ে-যাওয়া কথার পরেও
মুখোমুখি বসে থাকা।
৩৩| ১১ ই মার্চ, ২০১২ ভোর ৫:৩৫
আবদুর রহমান (রোমাস) বলেছেন: খুব ভাল একটা কাজ হয়েছে.. ভাললাগা জানালুম
১১ ই মার্চ, ২০১২ বিকাল ৫:০৫
ফারজুল আরেফিন বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আগুন আগুন – ময়ুখ চৌধুরী
তোমাকে দেখবো বলে একবার কী কাণ্ডটাইনা করেছিলাম
‘আগুন আগুন’ বলে চিৎকার করে
সমস্ত পাড়াটাকে চমকে দিয়ে
তোলপাড় ক’রে
সুখের গেরস্তালিতে ডুবে-যাওয়া লোকজনদের
বড়শি-গাঁথা মাছের মতো
বাইরে টেনে নিয়ে এলাম
তুমিও এসে দাঁড়ালে রেলিঙে
কোথায় আগুন?
আমাকে পাগল ভেবে যে-যার নিজের ঘরে ফিরে গেলো ।
একমাত্র তুমিই দেখতে পেলে
তোমার শিক্ষিত চোখে
আমার বুকের পাড়ায় কী-জবর লেগেছে আগুন ।
৩৪| ১১ ই মার্চ, ২০১২ সকাল ৮:৩৪
রেজোওয়ানা বলেছেন: দারুন কালেকশন!
অভিনন্দন আরেফিন
১১ ই মার্চ, ২০১২ বিকাল ৫:০৯
ফারজুল আরেফিন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
আমি বেঁচে ছিলাম অন্যদের সময়ে – হুমায়ুন আজাদ
আমি বেঁচে ছিলাম অন্যদের সময়ে
আমার খাদ্যে ছিলো অন্যদের আঙুলের দাগ,
আমার পানীয়তে ছিলো অন্যদের জীবাণু,
আমার নিশ্বাসে ছিলো অন্যদের ব্যাপক দূষণ।
আমি জন্মেছিলাম, আমি বেড়ে উঠেছিলাম,
আমি বেঁচে ছিলাম অন্যদের সময়ে।
আমি দাঁড়াতে শিখেছিলাম অন্যদের মতো,
আমি হাঁটতে শিখেছিলাম অন্যদের মতো,
আমি পোশাক পরতে শিখেছিলাম অন্যদের মতো ক’রে,
আমি চুল আঁচড়াতে শিখেছিলাম অন্যদের মতো ক’রে,
আমি কথা বলতে শিখেছিলাম অন্যদের মতো।
তারা আমাকে তাদের মত দাঁড়াতে শিখিয়েছিলো,
তারা আমাকে তাদের মতো হাঁটার আদেশ দিয়েছিলো,
তারা আমাকে তাদের মতো পোশাক পরার নির্দেশ দিয়েছিলো,
তারা আমাকে বাধ্য করেছিলো তাদের মত চুল আঁচড়াতে,
তারা আমার মুখে গুঁজে দিয়েছিলো তাদের দূষিত কথামালা।
তারা আমাকে বাধ্য করেছিলো তাদের মত বাঁচতে।
আমি বেঁচে ছিলাম অন্যদের সময়ে।
আমি আমার নিজস্ব ভঙ্গিতে দাঁড়াতে চেয়েছিলাম,
আমি হাঁটতে চেয়েছিলাম নিজস্ব ভঙ্গিতে,
আমি পোশাক পরতে চেয়েছিলাম একান্ত আপন রীতিতে,
আমি চুল আঁচড়াতে চেয়েছিলাম নিজের রীতিতে,
আমি উচ্চারণ করতে চেয়েছিলাম আমার আন্তর মৌলিক মাতৃভাষা।
আমি নিতে চেয়েছিলাম নিজের নিশ্বাস।
আমি আহার করতে চেয়েছিলাম আমার একান্ত মোলিক খাদ্য,
আমি পান করতে চেয়েছিলাম আমার মৌলিক পানীয়।
আমি ভুল সময়ে জন্মেছিলাম। আমার সময় তখনো আসে নি।
আমি ভুল বৃক্ষে ফুটেছিলাম। আমার বৃক্ষ কখনো অঙ্কুরিত হয় নি।
আমি ভুল নদীতে স্রোত হয়ে বয়েছিলাম। আমার নদী তখনো উৎপন্ন হয় নি।
আমি ভুল মেঘে ভেসে বেরিয়েছিলাম। আমার মেঘ তখনো আকাশে জমে নি।
আমি বেঁচে ছিলাম অন্যদের সময়ে।
আমি গান গাইতে চেয়েছিলাম আমার আপন সুরে,
ওরা আমার কন্ঠে পুরে দিতে চেয়েছিলো ওদের শ্যাওলাপড়া সুর।
আমি আমার মতো স্বপ্ন দেখতে চেয়েছিলাম,
ওরা আমাকে বাধ্য করেছিলো ওদের মত ময়লাধরা স্বপ্ন দেখতে।
আমি আমার মতো দাঁড়াতে চেয়েছিলাম.
ওরা আমাকে নির্দেশ দিয়েছিলো ওদের মত মাথা নিচু ক’রে দাঁড়াতে।
আমি আমার মতো কথা বলতে চেয়েছিলাম,
ওরা আমার মুখে ঢুকিয়ে দিতে চেয়েছিলো ওদের শব্দ ও বাক্যের আবর্জনা।
আমি খুব ভেতরে ঢুকতে চেয়েছিলাম,
ওরা আমাকে ওদের মতোই দাঁড়িয়ে থাকতে বলেছিলো বাইরে।
ওরা মুখে এক টুকরো বাসি মাংস পাওয়াকে ভাবতো সাফল্য,
ওরা নতজানু হওয়াকে ভাবতো গৌরব,
ওরা পিঠের কুঁজকে মনে করতো পদক,
ওরা গলার শেকলকে মনে করতো অমূল্য অলঙ্কার।
আমি মাংসের টুকরো থেকে দূরে ছিলাম। এটা ওদের সহ্য হয় নি।
আমি নতজানু হওয়ার বদলে বুকে ছুরিকাকে সাদর করেছিলাম।
এটা ওদের সহ্য হয় নি।
আমি গলার বদলে হাতেপায়ে শেকল পরেছিলাম। এটা ওদের সহ্য হয় নি।
আমি অন্যদের সময়ে বেঁচে ছিলাম। আমার সময় তখনো আসে নি।
ওদের পুকুরে প্রথাগত মাছের কোন অভাব ছিলো না,
ওদের জমিতে অভাব ছিলো না প্রথাগত শস্য ও শব্জির,
ওদের উদ্যানে ছিলো প্রথাগত পুষ্পের উল্লাস।
আমি ওদের সময়ে আমার মতো দিঘি খুঁড়েছিলাম ব’লে
আমার দিঘিতে পানি ওঠে নি।
আমি ওদের সময়ে আমার মত চাষ করেছিলাম ব’লে
আমার জমিতে শস্য জন্মে নি।
আমি ওদের সময়ে আমার মতো বাগান করতে চেয়েছিলাম ব’লে
আমার ভবিষ্যতের বিশাল বাগানে একটিও ফুল ফোটে নি।
তখনো আমার দিঘির জন্যে পানি উৎসারণের সময় আসে নি।
তখনো আমার জমির জন্যে নতুন ফসলের সময় আসে নি।
তখনো আমার বাগানের জন্যে অভিনব ফুলের মরশুম আসে নি।
আমি বেঁচে ছিলাম অন্যদের সময়ে।
আমার সব কিছু পর্যবসিত হয়েছে ভবিষ্যতের মতো ব্যর্থতায়,
ওরা ভ’রে উঠেছে বর্তমানের মতো সাফল্যে।
ওরা যে-ফুল তুলতে চেয়েছে, তা তুলে এনেছে নখ দিয়ে ছিঁড়েফেড়ে।
আমি শুধু স্বপ্নে দেখেছি আশ্চর্য ফুল।
ওরা যে-তরুণীকে জড়িয়ে ধরতে চেয়েছে, তাকে জড়িয়ে ধরেছে দস্যুর মতো।
আমার তরুণীকে আমি জড়িয়ে ধরেছি শুধু স্বপ্নে।
ওরা যে নারীকে কামনা করেছে, তাকে ওরা বধ করেছে বাহুতে চেপে।
আমার নারীকে আমি পেয়েছি শুধু স্বপ্নে।
চুম্বনে ওরা ব্যবহার করেছে নেকড়ের মতো দাঁত।
আমি শুধু স্বপ্নে বাড়িয়েছি ওষ্ঠ।
আমি বেঁচে ছিলাম অন্যদের সময়ে।
আমার চোখ যা দেখতে চেয়েছিলো, তা দেখতে পায় নি।
তখনো আমার সময় আসে নি।
আমার পা যে-পথে চলতে চেয়েছিলো, সে-পথে চলতে পারে নি।
তখনো আমার সময় আসে নি।
আমার ত্বক যার ছোঁয়া পেতে চেয়েছিলো, তার ছোঁয়া পায় নি।
তখনো আমার সময় আসে নি।
আমি যে-পৃথিবীকে চেয়েছিলাম, তাকে আমি পাই নি।
তখনো আমার সময় আসে নি। তখনো আমার সময় আসে নি।
আমি বেঁচেছিলাম
অন্যদের সময়ে।
৩৫| ১১ ই মার্চ, ২০১২ দুপুর ২:৫৩
নাআমি বলেছেন: অসাধারন পোস্ট !!
১১ ই মার্চ, ২০১২ বিকাল ৫:১২
ফারজুল আরেফিন বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ।
চরিত্র – তসলিমা নাসরিন
তুমি মেয়ে,
তুমি খুব ভাল করে মনে রেখো
তুমি যখন ঘরের চৌকাঠ ডিঙোবে
লোকে তোমাকে আড়চোখে দেখবে।
তুমি যখন গলি ধরে হাঁটতে থাকবে
লোকে তোমার পিছু নেবে, শিস দেবে।
তুমি যখন গলি পেরিয়ে বড় রাস্তায় উঠবে
লোকে তোমাকে চরিত্রহীন বলে গাল দেবে।
যদি তুমি অপদার্থ হও
তুমি পিছু ফিরবে
আর তা না হলে
যেভাবে যাচ্ছ, যাবে।
৩৬| ১১ ই মার্চ, ২০১২ রাত ৯:১১
ছাইরাছ হেলাল বলেছেন:
এমন সময় কবিতা নিয়ে পোষ্ট দিলেন যখন সময় আমাকে
কোনই সময় দিচ্ছে না ব্লগের জন্য ।
এজন্য সবার খোঁজ নেয়াও হয় না ।
তবুও এক জায়গায় অনেক লেখা পেয়ে ভালই লাগল ।
১১ ই মার্চ, ২০১২ রাত ৯:৪৩
ফারজুল আরেফিন বলেছেন: আমারও যে সময় ফুরিয়ে আসছে, তাইতো সবকিছু জমাট বাঁধার অপেক্ষায় অপেক্ষমান। ভাল লাগায় কৃতজ্ঞতা।
আমার কুঁড়েঘরে – হুমায়ুন আজাদ
আমার কুঁড়েঘরে নেমেছে শীতকাল
তুষার জ’মে আছে ঘরের মেঝে জুড়ে বরফ প’ড়ে আছে
গভীর ঘন হয়ে পাশের নদী ভ’রে
বরফ ঠেলে আর তুষার ভেঙে আর দু-ঠোঁটে রোদ নিয়ে
আমার কুঁড়েঘরে এ-ঘন শীতে কেউ আসুক
আমার গ্রহ জুড়ে বিশাল মরুভূমি
সবুজ পাতা নেই সোনালি লতা নেই শিশির কণা নেই
ঘাসের শিখা নেই জলের রেখা নেই
আমার মরুভূর গোপন কোনো কোণে একটু নীল হয়ে
বাতাসে কেঁপে কেঁপে একটি শীষ আজ উঠুক
আমার গাছে গাছে আজ একটি কুঁড়ি নেই
একটি পাতা নেই শুকনো ডালে ডালে বায়ুর ঘষা লেগে
আগুন জ্ব’লে ওঠে তীব্র লেলিহান
বাকল ছিঁড়েফেড়ে দুপুর ভেঙেচুরে আকাশ লাল ক’রে
আমার গাছে আজ একটা ছোট ফুল ফুটুক
আমার এ-আকাশ ছড়িয়ে আছে ওই
পাতটিনের মতো ধাতুর চোখ জ্বলে প্রখর জ্বালাময়
সে-তাপে গ’লে পড়ে আমার দশদিক
জল ও বায়ুহীন আমার আকাশের অদেখা দূর কোণে
বৃষ্টিসকাতর একটু মেঘ আজ জমুক
আমার কুঁড়েঘরে নেমেছে শীতকাল
তুষার জ’মে আছে ঘরের মেঝে জুড়ে বরফ প’ড়ে আছে
গভীর ঘন হয়ে পাশের নদী ভ’রে
বরফ ঠেলে আর তুষার ভেঙে আজ দু-ঠোঁটে রোদ নিয়ে
আমার কুঁড়েঘরে এ-ঘন শীতে কেউ আসুক
৩৭| ১১ ই মার্চ, ২০১২ রাত ৯:৩১
ছাইরাছ হেলাল বলেছেন:
রসুল হামজাটফ এর দু'টো কবিতা আমিও কপি-পেষ্ট দিলাম ।
----------------------------------------------------------------
পৃথিবীতে যদি
পৃথিবীতে যদি কথা না থাকত
পৃথিবী এমনটা হতোই না ।
সৃষ্টির একশ' বছর আগেই কবি জন্মেছিলেন ।
ভাষার উপর দখল ছাড়াই যিনি কবিতা লেখার
দুঃসাহস দেখান তার সঙ্গে তুলনা করা যায়
সেই পাগলের যে সাঁতার না জেনেই খরস্রোতা
নদীতে ঝাঁপ দেয় ।
অভিশাপ
পথিক, পাশ কাটিয়ে যাও যদি অবহেলা করে
বজ্র আর শিলা যেন তোমার মাথায় ভেঙে পড়ে ।
অথিতি, তোমার মন যদি না ভরে এ পশরায়
ব্জ্র আর শিলা যেন ভেঙে পড়ে আমার মাথায় ।
১১ ই মার্চ, ২০১২ রাত ১০:১৩
ফারজুল আরেফিন বলেছেন: খুব সুন্দর কবিতা।
আমি তো রসুল হামজাটফ এর নামই শুনি নাই। :!> :!> :#>
অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।
৩৮| ১২ ই মার্চ, ২০১২ রাত ১:২৯
মিরাজ is বলেছেন: দারুণ সংগ্রহ দেখা যায়। প্রিয় কিছু কবিতা একসাথে দেখে ভালো লাগলো।
১২ ই মার্চ, ২০১২ রাত ১:৩৯
ফারজুল আরেফিন বলেছেন: আরো আছে ঢের কবিতা সংগ্রহে। ভাল লাগার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আপনাকে -
বিস্মৃতি – সমর সেন
ভুলে যাওয়া গন্ধের মতো
কখনো তোমাকে মনে পড়ে।
হাওয়ার ঝলকে কখনো আসে কৃষ্ণচূড়ার উদ্ধত আভাস।
আর মেঘের কঠিন রেখায়
আকাশের দীর্ঘশ্বাস লাগে।
হলুদ রঙের চাঁদ রক্তে ম্লান হ’লো,
তাই আজ পৃথিবীতে স্তব্ধতা এলো,
বৃষ্টির আগে শব্দহীন গাছে যে-কোমল, সবুজ স্তব্ধতা আসে।
৩৯| ১২ ই মার্চ, ২০১২ রাত ২:০১
মামুন হতভাগা বলেছেন: মোর লাগি করিয়ো না শোক,
আমার রয়েছে কর্ম, আমার রয়েছে বিশ্বলোক।
মোর পাত্র রিক্ত হয় নাই--
শূন্যেরে করিব পূর্ণ, এই ব্রত বহিব সদাই।
উৎকণ্ঠ আমার লাগি কেহ যদি প্রতীক্ষিয়া থাকে
সেই ধন্য করিবে আমাকে।
শুক্লপক্ষ হতে আনি
রজনীগন্ধার বৃন্তখানি
যে পারে সাজাতে
অর্ঘ্যথালা কৃষ্ণপক্ষ রাতে,
যে আমারে দেখিবারে পায়
অসীম ক্ষমায়
ভালো মন্দ মিলায়ে সকলি,
এবার পূজায় তারি আপনারে দিতে চাই বলি।
তোমারে যা দিয়েছিনু তার
পেয়েছ নিঃশেষ অধিকার।
হেথা মোর তিলে তিলে দান,
করুণ মুহূর্তগুলি গণ্ডূষ ভরিয়া করে পান
হৃদয়-অঞ্জলি হতে মম।
ওগো তুমি নিরুপম,
হে ঐশ্বর্যবান,
তোমারে যা দিয়েছিনু সে তোমারি দান--
গ্রহণ করেছ যত ঋণী তত করেছ আমায়।
হে বন্ধু, বিদায়।
-----------------------------------------------------------------------কেন জানি শেষের কবিতা আমার তালিকায় ১নাম্বারে থাকে
পোস্ট প্রিয়তে না রাখার কারণ খুজে পেলাম না
১২ ই মার্চ, ২০১২ রাত ২:১০
ফারজুল আরেফিন বলেছেন: লেখক বলেছেন: ধন্যবাদ অশেষ।
সুন্দরের সাথে থাকুন, সুন্দরের সাথে বাঁচুন।
"তোমারে যা দিয়েছিনু সে তোমারই দান,
গ্রহণ করেছ যত ঋণী তত করেছ আমায়।"
৪০| ১২ ই মার্চ, ২০১২ ভোর ৬:২০
আরজু পনি বলেছেন:
ওরে, এতো জটিল কালেকশান!
আমার জন্যেতো হাতে চাঁদ পাওয়া!
নিয়ে নিলাম আমার সংকলন পোস্টের জন্যে
অ.ট..........
প্রোফাইল ট্যাগে যা লেখা সেটা লেখা কি খুব জরুরী?!
স্নেহের দাবী নিয়ে বলছি, আরেকটু মাথা ঠান্ডা করা উচিত।
এতো কিছু গায়ে মাখলে কি করে হয়, অনেক কিছুই ইগনোর করতে হয়। গুরুত্ব দিলেই গুরুত্ব পায়, প্রোফাইল ট্যাগে যা লেখা আছে তা দিয়ে কি বিশেষ একটা গোষ্ঠীকে বেশিকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না?!
ব্লগাররা ফারজুলের পোস্টে আসবে কোয়ালিটি লেখা পড়তে, এটা ফারজুলের মনে রাখা উচিত। শুভ কামনা
১২ ই মার্চ, ২০১২ বিকাল ৪:৩৫
ফারজুল আরেফিন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
আমার আর্কাইভের নামটি পরিবর্তন করা হয়েছে। সংকলনে শুধু বিদেশী পড়াশুনা রেখেছেন দেখলাম, ভাবলাম পড়াশুনার জন্য বিদেশে যাচ্ছেন বুঝি! বিসিএস নিয়ে দেশী পড়াশুনার কিছু পোস্ট আছে অন্যদের ব্লগে, সেগুলো যুক্ত করতে পারেন। অবশ্য সংকলনটি শুধুমাত্র নিজের জন্য হলে আলাদা কথা।
প্রোফাইল ট্যাগে যা লেখা সেটা খুব জরুরী। ঐটাকে আরেকটু বড় করে লিখতে চাই - প্রাইভেট ভার্সিটিতে পড়েছি, এলার্জী থাকলে এড়িয়ে চলুন। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, আসুন ঘৃণার সাথে লাথি মেরে যান। সবদিক থেকেই আমি তৃতীয় শ্রেণীর নাগরিক।
বিশেষ একটা গোষ্ঠীর পায়ের নিচে যখন আছি, তখন গুরুত্ব তো দিতেই হবে।
নিকধারী কিছু আর নিক ছাড়া কিছু মানুষের জন্য লিখতে ইচ্ছা করতো, সেটা অনেক কারণেই হয়ে উঠবে হয়তো। কোয়ালিটি সম্পন্ন লেখা প্রাইভেট ভার্সিটির কেউ লিখতে পারে - এটা এখনো গ্রহণযোগ্য নয়। ব্লগে মন্তব্য ও হিট অনেকাংশেই নির্ভর করে সিন্ডিকেট সদস্য পদের উপরে। পোস্টের গ্রহণ যোগ্যতাও নির্ভর করে পোস্ট দাতার পরিচয়ের উপরে। অনেক ভাল ভাল লেখা কেউ পড়ে না কারণ সে কোন সিন্ডিকেটের সদস্য নয়।
শুভকামনা সবসময়। ভাল থাকুন।
কথা ছিলো সুবিনয় – রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ
কথা ছিলো রক্ত-প্লাবনের পর মুক্ত হবে শস্যক্ষেত,
রাখালেরা পুনর্বার বাঁশিতে আঙুল রেখে
রাখালিয়া বাজাবে বিশদ।
কথা ছিলো বৃক্ষের সমাজে কেউ কাঠের বিপনি খুলে বোসবে না,
চিত্রর তরুন হরিনেরা সহসাই হয়ে উঠবে না
রপ্তানিযোগ্য চামড়ার প্যাকেট।
কথা ছিলো, শিশু হবে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম সম্পদের নাম।
নদীর চুলের রেখা ধরে হেঁটে হেঁটে যাবে এক মগ্ন ভগীরথ,
কথা ছিলো, কথা ছিলো আঙুর ছোঁবো না কোনোদিন।
অথচ দ্রাক্ষার রসে নিমজ্জিত আজ দেখি আরশিমহল,
রাখালের হাত দুটি বড় বেশি শীর্ণ আর ক্ষীণ,
বাঁশি কেনা জানি তার কখনোই হয়ে উঠে নাই-
কথা ছিলো, চিল-ডাকা নদীর কিনারে একদিন ফিরে যাবো।
একদিন বট বিরিক্ষির ছায়ার নিচে জড়ো হবে
সহজিয়া বাউলেরা,
তাদের মায়াবী আঙুলের টোকা ঢেউ তুলবে একতারায়-
একদিন সুবিনয় এসে জড়িয়ে ধরে বলবেঃ উদ্ধার পেয়েছি।
কথা ছিলো, ভাষার কসম খেয়ে আমরা দাঁড়াবো ঘিরে
আমাদের মাতৃভূমি, জল, অরণ্য, জমিন, আমাদের
পাহাড় ও সমুদ্রের আদিগন্ত উপকূল-
আজন্ম এ-জলাভূমি খুঁজে পাবে প্রকৃত সীমানা তার।
কথা ছিলো, আর্য বা মোঘল নয়, এ-জমিন অনার্যের হবে।
অথচ এখনো আদিবাসী পিতাদের শৃঙ্খলিত জীবনের
ধারাবাহিকতা
কৃষকের রন্ধ্রে রক্তে বুনে যায় বন্দিত্বের বীজ।
মাতৃভূমি-খন্ডিত দেহের পরে তার থাবা বসিয়েছে
আর্য বণিকের হাত।
আর কী অবাক! ইতিহাসে দেখি সব
লুটেরা দস্যুর জয়গানে ঠাঁসা,
প্রশস্তি, বহিরাগত তস্করের নামে নানারঙা পতাকা ওড়ায়।
কথা ছিলো ’আমাদের ধর্ম হবে ফসলের সুষম বন্টন’,
আমাদের তীর্থ হবে শস্যপূর্ণ ফসলের মাঠ।
অথচ পান্ডুর নগরের অপচ্ছায়া ক্রমশ বাড়ায় বাহু
অমলিন সবুজের দিকে, তরুদের সংসারের দিকে।
জলোচ্ছাসে ভেসে যায় আমাদের ধর্ম আর তীর্থভূমি,
আমাদের বেঁচে থাকা, ক্লান্তিকর আমাদের দৈনন্দিন দিন।
৪১| ১২ ই মার্চ, ২০১২ রাত ৮:৩৪
হৃদয়ের ক্যানভাস বলেছেন: জটিল একখান পোষ্ট ভাইজান
আমি খুজছিলাম এমন কিছু কবিতা
বাঁকা প্রিয়তে
১২ ই মার্চ, ২০১২ রাত ১১:২৩
ফারজুল আরেফিন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ভাইজান। আপনার নিকটা আমার খুব পছন্দ হয়েছে।
আপনার সম্পর্কে ধারণা নেই, কোন কবিতা দিব বুঝতে পারছি না।
কথোপকথন – ২১ – পুর্ণেন্দু পত্রী
-তোমাদের ওখানে এখন লোডশেডিং কি রকম?
-বোলো না। দিন নেই, রাত নেই, জ্বালিয়ে মারছে।
-তুমি তখন কী করো?
-দরজা খুলে দিই
জানালা খুলে দিই
পর্দা খুলে দিই।
আজকাল হাওয়াও হয়েছে তেমনি ফন্দিবাজ ।
যেমনি অন্ধকার, অমনি মানুষের ত্রিসীমানা ছেড়ে দৌড়
-তুমি তখন কি করো?
-গায়ে জামা-কাপড় রাখতে পারি না।
সব খুলে দিই,
চোখের চশমা, চুলের বিনুনি, বুকের আঁচল লাজ-লজ্জ্বা সব ।
-টাকা থাকলে তোমার নামে ঘাট বাঁধিয়ে দিতুম কাশী মিত্তিরে
এমন তোমার উথাল – পাতল দয়া।
তুমি অন্ধকারকে সর্বস্ব, সব অগ্নিস্ফুলিঙ্গ খুলে দিত পার কত সহজে।
আর শুভঙ্কর মেঘের মত একটু ঝুঁকলেই
কি হচ্ছে কি?
শুভঙ্কর তার খিদে- তেষ্টার ডালপালা নাড়লেই
কি হচ্ছে কি?
শুভঙ্কর রোদে – পোড়া হরিণের জিভ নাড়লেই
কি হচ্ছে কি?
পরের জন্মে দশদিগন্তের অন্ধকার হব আমি।
৪২| ১৩ ই মার্চ, ২০১২ দুপুর ১:৩২
শামছুল আরেফিন বলেছেন: অনেক ভাল একটা পোস্ট ।++++++++
১৩ ই মার্চ, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৫৭
ফারজুল আরেফিন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
কথোপকথন ৫ – পূর্ণেন্দু পত্রী
আমি তোমার পান্থপাদপ
তুমি আমার অতিথশালা।
হঠাৎ কেন মেঘ চেঁচালো
– দরজাটা কই, মস্ত তালা?
তুমি আমার সমুদ্রতীর
আমি তোমার উড়ন্ত চুল।
হঠাৎ কেন মেঘ চেঁচালো
– সমস্ত ভুল, সমস্ত ভুল?
আমি তোমার হস্তরেখা
তুমি আমার ভর্তি মুঠো।
হঠাৎ কেন মেঘ চেঁচালো
– কোথায় যাবি, নৌকো ফুটো?
৪৩| ১৩ ই মার্চ, ২০১২ রাত ৮:১১
রায়হান কবীর বলেছেন: দারুন, অনেক ভালো একটা পোস্ট।
পোস্টে প্লাস ও অনেক ভালোবাসা।
১৩ ই মার্চ, ২০১২ রাত ৮:৫৪
ফারজুল আরেফিন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে, ভাল থাকুন।
প্রশ্ন – আবুল হাসান
চোখ ভরে যে দেখতে চাও
রঞ্জন রশ্মিটা চেনো তো?
বুক ভরে যে শ্বাস নিতে চাও
জানো তো অক্সিজেনের পরিমাণটা কত?
এত যে কাছে আসতে চাও
কতটুকু সংযম আছে তোমার?
এত যে ভালোবাসতে চাও
তার কতটুকু উত্তাপ সইতে পারবে তুমি?
৪৪| ১৪ ই মার্চ, ২০১২ রাত ৮:০৭
বন্ধু তুহিন প্রাঙ্গনেমোর বলেছেন: বাহ বাহ বাহ...........অনেক সুন্দর পোষ্ট........পোষ্ট পড়লাম........মন্তব্য পড়লাম.,.......কবিতা পড়লাম........আনন্দ পেলাম......অতপর আরাম পেলাম....নিদ্রাপেল......সুখ নিদ্রা........শুভকামনা......ভালো থাকবেন.............
১৪ ই মার্চ, ২০১২ রাত ১১:৩১
ফারজুল আরেফিন বলেছেন: এমনতর সুন্দর মন্তব্যের উত্তরে কি বলা যায়! কৃতজ্ঞতা পড়ার জন্য, মন্তব্যের জন্য, ভাল লাগার জন্য, শুভকামনার জন্য।
‘রাতের সব তারাই আছে
দিনের আলোর গভীরে।’
ভালো থাকুন।
হঠাৎ দেখা – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
রেলগাড়ির কামরায় হঠাৎ দেখা,
ভাবিনি সম্ভব হবে কোনদিন।।
আগে ওকে বারবার দেখেছি
লাল রঙের শাড়িতে –
দালিম-ফুলের মত রাঙা;
আজ পরেছে কালো রেশমের কাপড়,
আঁচল তুলেছে মাথায়
দোলন-চাঁপার মত চিকন-গৌর মুখখানি ঘিরে।
মনে হল, কাল রঙের একটা গভীর দূরত্ব
ঘনিয়ে নিয়েছে নিজের চার দিকে,
যে দূরত্ব সর্ষেক্ষেতের শেষ সীমানায়
শালবনের নীলাঞ্জনে।
থমকে গেল আমার সমস্ত মনটা:
চেনা লোককে দেখলেম অচেনার গাম্ভীর্যে।।
হঠাৎ খবরের কাগজ ফেলে দিয়ে
আমাকে করলে নমস্কার ।
সমাজবিধির পথ গেল খুলে:
আলাপ করলেম শুরু –
‘কেমন আছো‘, ‘কেমন চলছে সংসার‘
ইত্যাদি।
সে রইল জানালার বাইরের দিকে চেয়ে
যেন কাছের-দিনের-ছোঁয়াচ-পার-হওয়া চাহনিতে।
দিলে অত্যন্ত ছোটো দুটো-একটা জবাব,
কোনটা বা দিলেই না।
বুঝিয়ে দিলে হাতের অস্থিরতায় –
কেন এ-সব কথা,
এর চেয়ে অনেক ভাল চুপ ক’রে থাকা।।
আমি ছিলেম অন্য বেঞ্চিতে ওর সাথিদের সঙ্গে।
এক সময়ে আঙুল নেড়ে জানালে কাছে আসতে।
মনে হল কম সাহস নয় –
বসলুম ওর এক বেঞ্চিতে।
গাড়ির আওয়াজের আড়ালে
বললে মৃদুস্বরে,
‘কিছু মনে কোরো না,
সময় কোথা সময় নষ্ট করবার!
আমাকে নামতে হবে পরের স্টেশনেই;
দূরে যাবে তুমি,
তাই, যে প্রশ্নটার জবাব এতকাল থেমে আছে,
শুনব তোমার মুখে।
সত্য করে বলবে তো?’
আমি বললাম,’বলব।’
বাইরের আকাশের দিকে তাকিয়েই শুধোল,
‘আমাদের গেছে যে দিন
একেবারেই কি গেছে –
কিছুই কি নেই বাকি?’
একটুকু রইলেম চুপ করে;
তার পর বললেম,
‘রাতের সব তারাই আছে
দিনের আলোর গভীরে।’
খটকা লাগল, কী জানি বানিয়ে বললেম নাকি ।
ও বললে, ‘থাক এখন যাও ও দিকে।’
সবাই নেমে গেল পরের স্টেশনে।
আমি চললেম একা।।
৪৫| ১৫ ই মার্চ, ২০১২ সকাল ৮:৪৭
আরজু পনি বলেছেন:
অ.ট..........
সংকলনটি নিজের জন্যেই করছি না শুধু, অন্যদের কথা মাথায় রেখেও কাজ করছি। কাজটি শেষ হয়ে যায়নি। এটি চলতে থাকবে। ব্লগে দেওয়ার মতো সময় আমি কম পাই, তাই খুব দ্রুত কাজ শেষ করতে পারছিনা, এটা অবশ্য শেষ হওয়ার মতোও কাজ না।
ফারজুল ভালো থাকুক, শুভকামনা সবসময়ের জন্যে।
১৫ ই মার্চ, ২০১২ রাত ১১:১৭
ফারজুল আরেফিন বলেছেন: আপনি ভাল থাকুন।
ভাল থাকার জন্য সব করতে পারি, এমনকি ব্লগিংও ছাড়তে পারি।
শুভকামনা সবসময়।
দিন যায় – শক্তি চট্টোপাধ্যায়
সুখের বারান্দা জুড়ে রোদ পড়ে আছে
শীতের বারান্দা জুড়ে রোদ পড়ে আছে
অর্ধেক কপাল জুড়ে রোদ পড়ে আছে
শুধু ঝড় থমকে আছে গাছের মাথায়
আকাশমনির।
ঝড় মানে ঝোড়ো হাওয়া, বাদ্লা হাওয়া নয়
ক্রন্দনরঙের মত নয় ফুলগুলি
চন্দ্রমল্লিকার।
জয়দেবের মেলা থেকে গান ভেসে আসে
সঙ্গে ওড়ে ধুলোবালি, পায়ের নূপুর
সুখের চট্কা ভাঙে গৈরিক আবাসে
দিন যায় রে বিষাদে, ষাদে, মিছে দিন যায় …
৪৬| ১৫ ই মার্চ, ২০১২ রাত ১১:২৩
টুকিঝা বলেছেন: দারুন কবিতাময় পোস্ট। অনেক গুলো ভাল লাগা সহ প্রিয়তে।
১৬ ই মার্চ, ২০১২ বিকাল ৫:৪৭
ফারজুল আরেফিন বলেছেন: অশেষ ধন্যবাদ আপনাকে। শুভকামনা রইলো।
তোমার কথা ভেবে – রফিক আজাদ
তোমার কথা ভেবে রক্তে ঢেউ ওঠে—
তোমাকে সর্বদা ভাবতে ভালো লাগে,
আমার পথজুড়ে তোমারই আনাগোনা—
তোমাকে মনে এলে রক্তে আজও ওঠে
তুমুল তোলপাড় হৃদয়ে সর্বদা…
হলো না পাশাপাশি বিপুল পথ-হাঁটা,
এমন কথা ছিল চলব দুজনেই
জীবন-জোড়া পথ যে-পথ দিকহীন
মিশেছে সম্মুখে আলোর গহ্বরে…
৪৭| ১৬ ই মার্চ, ২০১২ রাত ২:৩৬
ঈষাম বলেছেন: ভালো কালেকশন!
১৬ ই মার্চ, ২০১২ বিকাল ৫:৫৬
ফারজুল আরেফিন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ঈষাম। শুভকামনা। ঈষামের জন্য অনেক সুন্দর একটি কবিতা।
এত হাসি কোথায় পেলে – জসীম উদ্দিন
এত হাসি কোথায় পেলে
এত কথার খলখলানি
কে দিয়েছে মুখটি ভরে
কোন বা গাঙের কলকলানি।
কে দিয়েছে রঙিন ঠোঁটে
কলমী ফুলের গুলগুলানি।
কে দিয়েছে চলন বলন
কোন সে লতার দোল দুলানী।
কাদের ঘরে রঙিন পুতুল
আদরে যে টইটুবানি।
কে এনেছে বরণ ডালায়
পাটের বনের বউটুবানী।
কাদের পাড়ার ঝামুর ঝুমুর
কাদের আদর গড়গড়ানি
কাদের দেশের কোন সে চাঁদের
জোছনা ফিনিক ফুল ছড়ানি।
তোমায় আদর করতে আমার
মন যে হলো উড়উড়ানি
উড়ে গেলাম সুরে পেলাম
ছড়ার গড়ার গড়গড়ানি।
৪৮| ১৬ ই মার্চ, ২০১২ রাত ১০:১৫
ছাইরাছ হেলাল বলেছেন:
গ্যেটের লেখা আমার প্রিয় একটি কবিতা দিলাম ।
পাহাড়ের চূড়ায় চূড়ায়
ছড়িয়ে শান্তি--
গাছের মাথায় মাথায় ,
--কান পেতে শোনো--
নেইকো মর্মর ।
পাখিরা ঘুমায় নীড়ে নীড়ে;
আর নেই দেরি , এম্নি
তুমিও করবে বিশ্রাম ।
১৬ ই মার্চ, ২০১২ রাত ১০:৩৮
ফারজুল আরেফিন বলেছেন: কৃতজ্ঞতা জানবেন ভাইয়া।
মনে হচ্ছে মিল রেখে আপনার প্রিয় আরেকটি কবিতা দিচ্ছি -
প্রেমিক–প্রেমিকার মৃত্যু – শার্ল বোদলেয়ার; অনুবাদ: বুদ্ধদেব বসু
কবরের মতো গভীর ডিভানে লুটিয়ে
মৃদু বাসে ভরা রবে আমাদের শয্যা,
সুন্দরতর দুর আকাশেরে ফুটিয়ে
দেয়ালের তাকে অদ্ভুত ফুলসজ্জা।
যুগল হৃদয়, চরম দহনে গলিত,
বিশাল যুগল - মশালের উল্লাসে
হবে মুখোমুখি – দর্পনে প্রতিফলিত
যুগ্ম প্রানের ভাস্বর উদ্ভাসে।
গোলাপি এবং মায়াবী নীলের সৃষ্টি
এক সন্ধ্যায় মিলবে দুয়ের দৃষ্টি,
যেন বিদায়ের দীর্ণ দীর্ঘশ্বাস;
পরে, দ্বার খুলে, মলিন মুকুরে রাঙাবে
এক দেবদূত, সুখী ও সবিশ্বাস;
আমাদের মৃত আগুনের ঘুম ভাঙাবে।
৪৯| ১৭ ই মার্চ, ২০১২ রাত ২:১৯
চারুপাঠ বলেছেন: কবিতার রাজ্যে বিচরন করি
মনানন্দে কবিতাগুলি পড়ি।
ভালো লাগল এবং অনুপম
আপনাকে শুভেচ্ছা ও স্বাগতম।
১৭ ই মার্চ, ২০১২ রাত ১০:৩২
ফারজুল আরেফিন বলেছেন: কৃতজ্ঞতা জানবেন।
অনেক ভাল থাকুন।
নিমন্ত্রণ - জসীমউদ্দিন
তুমি যাবে ভাই - যাবে মোর সাথে, আমাদের ছোট গাঁয়,
গাছের ছায়ায় লতায় পাতায় উদাসী বনের বায়;
মায়া মমতায় জড়াজড়ি করি
মোর গেহখানি রহিয়াছে ভরি,
মায়ের বুকেতে, বোনের আদরে, ভাইয়ের স্নেহের ছায়,
তুমি যাবে ভাই - যাবে মোর সাথে, আমাদের ছোট গাঁয়,
ছোট গাঁওখানি- ছোট নদী চলে, তারি একপাশ দিয়া,
কালো জল তার মাজিয়াছে কেবা কাকের চক্ষু নিয়া;
ঘাটের কিনারে আছে বাঁধা তরী
পারের খবর টানাটানি করি;
বিনাসুতি মালা গাথিছে নিতুই এপার ওপার দিয়া;
বাঁকা ফাঁদ পেতে টানিয়া আনিছে দুইটি তটের হিয়া।
তুমি যাবে ভাই- যাবে মোর সাথে, ছোট সে কাজল গাঁয়,
গলাগলি ধরি কলা বন; যেন ঘিরিয়া রয়েছে তায়।
সরু পথ খানি সুতায় বাঁধিয়া
দূর পথিকেরে আনিছে টানিয়া,
বনের হাওয়ায়, গাছের ছায়ায়, ধরিয়া রাখিবে তায়,
বুকখানি তার ভরে দেবে বুঝি, মায়া আর মমতায়!
তুমি যাবে ভাই যাবে মোর সাথে - নরম ঘাসের পাতে
চম্বন রাখি অধরখানিতে মেজে লয়ো নিরালাতে।
তেলাকুচা - লতা গলায় পরিয়া
মেঠো ফুলে নিও আঁচল ভরিয়া,
হেথায় সেথায় ভাব করো তুমি বুনো পাখিদের সাথে,
তোমার গায়ের রংখানি তুমি দেখিবে তাদের পাতে।
তুমি যদি যাও আমাদের গাঁয়ে, তোমারে সঙ্গে করি
নদীর ওপারে চলে যাই তবে লইয়া ঘাটের তরী।
মাঠের যত না রাখাল ডাকিয়া
তোর সনে দেই মিতালী করিয়া
ঢেলা কুড়িইয়া গড়ি ইমারত সারা দিনমান ধরি,
সত্যিকারের নগর ভুলিয়া নকল নগর গড়ি।
তুমি যদি যাও - দেখিবে সেখানে মটর লতার সনে,
সীম আর সীম - হাত বাড়াইলে মুঠি ভরে সেই খানে।
তুমি যদি যাও সে - সব কুড়ায়ে
নাড়ার আগুনে পোড়ায়ে পোড়ায়ে,
খাব আর যত গেঁঢো - চাষীদের ডাকিয়া নিমন্ত্রণে,
হাসিয়া হাসিয়া মুঠি মুঠি তাহা বিলাইব দুইজনে।
তুমি যদি যাও - শালুক কুড়ায়ে, খুব - খুব বড় করে,
এমন একটি গাঁথিব মালা যা দেখনি কাহারো করে,
কারেও দেব না, তুমি যদি চাও
আচ্ছা না হয় দিয়ে দেব তাও,
মালাটিরে তুমি রাখিও কিন্তু শক্ত করিয়া ধরে,
ও পাড়াব সব দুষ্ট ছেলেরা নিতে পারে জোর করে;
সন্ধ্যা হইলে ঘরে ফিরে যাব, মা যদি বকিতে চায়,
মতলব কিছু আঁটির যাহাতে খুশী তারে করা যায়!
লাল আলোয়ানে ঘুঁটে কুড়াইয়া
বেঁধে নিয়ে যাব মাথায় করিয়া
এত ঘুষ পেয়ে যদি বা তাহার মন না উঠিতে চায়,
বলিব - কালিকে মটরের শাক এনে দেব বহু তায়।
খুব ভোর ক’রে উঠিতে হইবে, সূয্যি উঠারও আগে,
কারেও ক’বি না, দেখিস্ পায়ের শব্দে কেহ না জাগে
রেল সড়কের ছোট খাদ ভরে
ডানকিনে মাছ কিলবিল করে;
কাদার বাঁধন গাঁথি মাঝামাঝি জল সেঁচে আগে ভাগে
সব মাছগুলো কুড়ায়ে আনিব কাহারো জানার আগে।
ভর দুপুরেতে এক রাশ কাঁদা আর এক রাশ মাছ,
কাপড়ে জড়ায়ে ফিরিয়া আসিব আপন বাড়ির কাছ।
ওরে মুখ - পোড়া ওরে রে বাঁদর।
গালি - ভরা মার অমনি আদর,
কতদিন আমি শুনি নারে ভাই আমার মায়ের পাছ;
যাবি তুই ভাই, আমাদের গাঁয়ে যেথা ঘন কালো গাছ।
যাবি তুই ভাই, যাবি মোর সাথে আমাদের ছোট গাঁয়।
ঘন কালো বন - মায়া মমতায় বেঁধেছে বনের বায়।
গাছের ছায়ায় বনের লতায়
মোর শিশুকাল লুকায়েছে হায়!
আজি সে - সব সরায়ে সরায়ে খুজিয়া লইব তায়,
যাবি তুই ভাই, যাবি মোর সাথে আমাদের ছোট গায়।
তোরে নিয়ে যাব আমাদের গাঁয়ে ঘন-পল্লব তলে
লুকায়ে থাকিস্, খুজে যেন কেহ পায় না কোনই বলে।
মেঠো কোন ফুল কুড়াইতে যেয়ে,
হারাইয়া যাস্ পথ নাহি পেয়ে;
অলস দেহটি মাটিতে বিছায়ে ঘুমাস সন্ধ্যা হলে,
সারা গাঁও আমি খুজিয়া ফিরিব তোরি নাম বলে বলে।
৫০| ১৯ শে মার্চ, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৪৬
মিথী_মারজান বলেছেন: টিং.. টং....
আরেফিন স্যার কি বাসায় আছেন?
অনেকদিন পর আপনার বাড়িতে বেড়াতে এলাম।
একটা সময় ছিল যখন আপনার এই কবিতার পোস্টগুলো দিন-রাত প্রাণ ভরে পড়তাম।সবসময় মন খুলে মন্তব্য করার একটা অন্যরকম প্রশান্তি পাই আমি আপনার ব্লগে।মাঝখানে একবার অভিমান করে যখন আপনার পোস্টগুলো সরিয়ে ফেলেছিলেন,তখন এই কবিতা পোস্টগুলোর জন্য ভীষণ মন খারাপ হয়েছিল আমার।
পরে নতুন করে ভাললাগা গুলো ফিরে পাওয়ায় আনন্দে আত্মহারা হয়েছিলাম।তবে এখনকার আনন্দ আরো অনেক বেশি।সবগুলো কলেকশন একসাথে প্রিয়তে নেবার সুযোগ করে দেবার জন্য অতিরিক্ত ভাললাগা রইল...
(কপি +পেস্ট)
১৯ শে মার্চ, ২০১২ রাত ৯:২৭
ফারজুল আরেফিন বলেছেন: ইয়েস মেম, বাসায় আছি।
অভিমান করে তো চলেই গিয়েছিলাম প্রায়, আপনিই তো আটকিয়ে রাখলেন। না আটকালেই বুঝি ভাল ছিল।
অনেক ধন্যবাদ ও আন্তরিক কৃতজ্ঞতা সবসময় পাশে থাকার জন্যে।
আপনার জন্য একটি নয়, সাতটি কবিতা -
স্বপ্নের হাত – জীবনানন্দ দাশ
পৃথিবীর বাধা — এই দেহের ব্যাঘাতে
হৃদয়ে বেদনা জমে — স্বপনের হাতে
আমি তাই
আমারে তুলিয়া দিতে চাই।
যেই সব ছায়া এসে পড়ে
দিনের রাতের ঢেউয়ে — তাহাদের তরে
জেগে আছে আমার জীবন;
সব ছেড়ে আমাদের মন
ধরা দিত যদি এই স্বপনের হাতে!
পৃথিবীর রাত আর দিনের আঘাতে
বেদনা পেত না তবে কেউ আর —
থাকিত না হৃদয়ের জরা —
সবাই স্বপ্নের হাতে দিত যদি ধরা!
আকাশ ছায়ার ঢেউয়ে ঢেকে
সারাদিন — সারা রাত্রি অপেক্ষায় থেকে
পৃথিবীর যত ব্যথা — বিরোধ, বাস্তব
হৃদয় ভুলিয়া যায় সব
চাহিয়াছে অন্তর যে ভাষা,
যেই ইচ্ছা, যেই ভালোবাসা,
খুঁজিয়াছে পৃথিবীর পারে পারে গিয়া —
স্বপ্নে তাহা সত্য হয়ে উঠেছে ফলিয়া!
মরমের যত তৃষ্ণা আছে —
তারই খোঁজে ছায়া আর স্বপনের কাছে
তোমরা চলিয়া আস —
তোমরা চলিয়া আস সব!
ভুলে যাও পৃথিবীর ঐ ব্যথা — ব্যাঘাত — বাস্তব!
সকল সময়
স্বপ্ন — শুধু স্বপ্ন জন্ম লয়
যাদের অন্তরে–
পরস্পরে যারা হাত ধরে
নিরালা ঢেউয়ের পাশে পাশে
গোধূলির অস্পষ্ট আকাশে
যাহাদের আকাঙক্ষার জন্ম মৃত্যু — সব
পৃথিবীর দিন আর রাত্রির রব
শোনে না তাহারা!
সন্ধ্যার নদীর জল, পাথরে জলের ধারা
আয়নার মতো
জাগিয়া উঠিছে ইতস্তত
তাহাদের তরে।
তাদের অন্তরে
স্বপ্ন, শুধু স্বপ্ন জন্ম লয়
সকল সময়!…
পৃথিবীর দেয়ালের পরে
আঁকাবাঁকা অসংখ্য অক্ষরে
একবার লিখিয়াছি অন্তরের কথা —
সে সব ব্যর্থতা
আলো আর অন্ধকারে গিয়াছে মুছিয়া!
দিনের উজ্জ্বল পথ ছেড়ে দিয়ে
ধূসর স্বপ্নের দেশে গিয়া
হৃদয়ের আকাঙক্ষার নদী
ঢেউ তুলে তৃপ্তি পায় — ঢেউ তুলে তুপ্তি পায় যদি —
তবে ঐ পৃথিবীর দেয়ালের পরে
লিখিতে যেয়ো না তুমি অস্পষ্ট অক্ষরে
অন্তরের কথা! —
আলো আর অন্ধকারে মুছে যায় সে সব ব্যর্থতা!
পৃথিবীর অই অধীরতা
থেমে যায়, আমাদের হৃদয়ের ব্যথা
দূরের ধুলোর পথ ছেড়ে
স্বপ্নেরে — ধ্যানেরে
কাছে ডেকে লয়
উজ্জ্বল আলোর দিন নিভে যায়
মানুষেরও আয়ূ শেষ হয়
পৃথিবীর পুরানো সে পথ
মুছে ফেলে রেখা তার —
কিন্তু এই স্বপ্নের জগৎ
চিরদিন রয়!
সময়ের হাত এসে মুছে ফেলে আর সব —
নক্ষত্রেরও আয়ু শেষ হয়!
একদিন এই দেহ ঘাস – জীবনানন্দ দাশ
একদিন এই দেহ ঘাস থেকে ধানের আঘ্রাণ থেকে এই বাংলায়
জেগেছিল; বাঙালী নারীর মুখ দেখে রূপ চিনেছিলো দেহ একদিন;
বাংলার পথে পথে হেঁটেছিলো গাংচিল শালিখের মতন স্বাধীন;
বাংলার জল দিয়ে ধূয়েছিল ঘাসের মতন স্ফুট দেহখানি তার;
একদিন দেখেছিল ধূসর বকের সাথে ঘরে চলে আসে অন্ধকার
বাংলার; কাঁচা কাঠ জ্বলে ওঠে — নীল ধোঁয়া নরম মলিন
বাতাসে ভাসিয়া যায় কুয়াশার করুণ নদীর মতো ক্ষীণ;
ফেনসা ভাতের গন্ধে আম — মুকুলের গন্ধ মিশে যায় যেন বার — বার;
এই সব দেখেছিল রূপ যেই স্বপ্ন আনে — স্বপ্নে যেই রক্তাক্ততা আছে,
শিখেছিল, সেই সব একদিন বাংলার চন্দ্রমালা রূপসীর কাছে;
তারপর বেত বনে, জোনাকি ঝিঝির পথে হিজল আমের অন্ধকারে
ঘুরেছে সে সৌন্দর্যের নীল স্বপ্ন বুকে করে, — রূঢ় কোলাহলে গিয়ে তারে –
ঘুমন — কন্যারে সেই — জাগাতে যায়নি আর — হয়তো সে কন্যার হৃদয়
শঙ্খের মতন রুক্ষ, অথবা পদ্মের মতো — ঘুম তবু ভাঙিবার নয়।
সারাটি রাত্রি তারাটির সাথে তারাটিরই কথা হয় – জীবনানন্দ দাশ
চোখদুটো ঘুমে ভরে
ঝরা ফসলের গান বুকে নিয়ে আজ ফিরে যাই ঘরে!
ফুরায়ে গিয়েছে যা ছিল গোপন- স্বপন কদিন রয়!
এসেছে গোধূলি গোলাপীবরণ-এ তবু গোধূলি নয়!
সারাটি রাত্রি তারাটির সাথে তারাটিরই কথা হয়,
আমাদের মুখ সারাটি রাত্রি মাটির বুকের পরে!
চোখদুটো যে নিশি ঢের-
এত দিন তবু অন্ধকারের পাই নি তো কোনো টের!
দিনের বেলায় যাদের দেখি নি-এসেছে তাহারা সাঁঝে;
যাদের পাই নি ধুলায় পথের-ধোঁয়ায়-ভিড়ের মাঝে-
শুনেছি স্বপনে তাদের কলসী ছলকে, কাঁকন বাজে!
আকাশের নীচে- তারার আলোয় পেয়েছি যে তাহাদের!
চোখদুটো ছিল জেগে
কত দিন যেন সন্ধ্যা-ভোরের নট্কান রাঙা মেঘে!
কত দিন আমি ফিরেছি একেলা মেঘলা গাঁয়ের ক্ষেতে!
ছায়াধূপে চুপে ফিরিয়াছি প্রজাপতিটির মতো মেতে
কত দিন হায়! কবে- অবেলায় এলোমেলো পথে যেতে
ঘোর ভেঙে গেল, খেয়ালের খেলাঘরটি গেল যে ভেঙে
দুটো চোখ ঘুম ভরে
ঝরা ফসলের গান বুকে নিয়ে আজ ফিরে যাই ঘরে!
ফুরায়ে গিয়েছে যা ছিল গোপন-স্বপন কদির রয়
এসেছে গোধূলি গোলাপীবরণ-এ তবু গোধুলি নয়!
সারাটি রাত্রি তারাটির সাথে তারাটিরই কথা হয়-
আমাদের মুখ সারাটি রাত্রি মাটির বুকের পরে।
স্বভাব – জীবনানন্দ দাশ
যদিও আমার চোখে ঢের নদী ছিলো একদিন
পুনরায় আমাদের দেশে ভোর হ’লে,
তবুও একটি নদী দেখা যেতো শুধু তারপর;
কেবল একটি নারী কুয়াশা ফুরোলে
নদীর রেখার পার লক্ষ্য ক’রে চলে;
সূর্যের সমস্ত গোল সোনার ভিতরে
মানুষের শরীরের স্থিরতর মর্যাদার মতো
তার সেই মূর্তি এসে পড়ে।
সূর্যের সম্পূর্ণ বড় বিভোর পরিধি
যেন তার নিজের জিনিস।
এতদিন পরে সেইসব ফিরে পেতে
সময়ের কাছে যদি করি সুপারিশ
তা’হলে সে স্মৃতি দেবে সহিষ্ণু আলোয়
দু-একটি হেমন্তের রাত্রির প্রথম প্রহরে;
যদিও লক্ষ লোক পৃথিবীতে আজ
আচ্ছন্ন মাছির মত মরে -
তবুও একটি নারী ‘ভোরের নদীর
জলের ভিতরে জল চিরদিন সূর্যের আলোয় গড়াবে’
এ রকম দু-চারটে ভয়াবহ স্বাভাবিক কথা
ভেবে শেষ হ’য়ে গেছে একদিন সাধারণভাবে।
মেঠো চাঁদ (মাঠের গল্প) – জীবনানন্দ দাশ
মেঠো চাঁদ রয়েছে তাকায়ে
আমার মুখের দিকে — ডাইনে আর বাঁয়ে
পোড়া জমি — খড়-নাড়া — মাঠের ফাটল,
শিশিরের জল!
মেঠো চাঁদ — কাস্তের মতো বাঁকা, চোখে–
চেয়ে আছে — এমনি সে তাকায়েছে কত রাত — নাই লেখাজোখা।
মেঠো চাঁদ বলে:
আকাশের তলে
ক্ষেতে ক্ষেতে লাঙলের ধার
মুছে গেছে, ফসল কাটার
সময় আসিয়া গেছে — চলে গেছে কবে!–
শস্য ফলিয়া গেছে — তুমি কেন তবে
রয়েছ দাঁড়ায়ে
একা একা! –ডাইনে আর বাঁয়ে
খড়-নাড়া — পোড়ো জমি — মাঠের ফাটল,–
শিশিরের জল।’…
আমি তারে বলি:
‘ফসল গিয়েছে ঢের ফলি,
শস্য গিয়েছে ঝরে কত–
বুড়ো হয়ে গেছ তুমি এই বুড়ি পৃথিবীর মতো!
ক্ষেতে ক্ষেতে লাঙলে ধার
মুছে গেছে কতবার, কতবার ফসল কাটার
সময় আসিয়া গেছে — চলে গেছে কবে!–
শস্য ফলিয়া গেছে– তুমি কেন তবে
রয়েছ দাঁড়ায়ে
একা একা! –ডাইনে আর বাঁয়ে
পোড়ো জমি –খড়-নাড়া –মাঠের ফাটল–
শিশিরের জল!’
জীবন – জীবনানন্দ দাশ
১
চারি দিকে বেজে ওঠে অন্ধকার সমুদ্রের স্বর —
নতুন রাত্রির সাথে পৃথিবীর বিবাহের গান!
ফসল উঠিছে ফলে — রসে রসে ভরিছে শিকড়;
লক্ষ নক্ষত্রের সাথে কথা কয় পৃথিবীর প্রাণ।
সে কোন প্রথম ভোরে পৃথিবীতে ছিল যে সন্তান
অঙ্কুরের মতো আজ জেগেছে সে জীবনের বেগে!
আমার দেহের গন্ধ পাই তার শরীরের ঘ্রাণ —
সিন্ধুর ফেনার গন্ধ আমার শরীরে আছে লেগে!
পৃথিবী রয়েছে জেগে চক্ষু মেলে — তার সাথে সেও আছে জেগে!
২
নক্ষত্রের আলো জ্বেলে পরিস্কার আকাশের পর
কখন এসেছে রাত্রি! — পশ্চিমের সাগরের জলে
তার শব্দ; উত্তর সমুদ্র তার, দক্ষিণ সাগর
তাহার পায়ের শব্দে — তাহার পায়ের কোলাহলে
ভরে ওঠে; এসেছে সে আকাশের নক্ষত্রের তলে
প্রথম যে এসেছিল, তারই মতো — তাহার মতন
চোখ তার, তাহার মতন চুল, বুকের আঁচলে
প্রথম মেয়ের মতো — পৃথিবীর নদী মঠ বন
আবার পেয়েছে তারে — সমুদ্রের পারে রাত্রি এসেছে এখন!
৩
সে এসেছে — আকাশের শেষ আলো পশ্চিমের মেঘে
সন্ধ্যার গহ্বর খুঁজে পালায়েছে! — রক্তে রক্তে লাল
হয়ে গেছে বুক তার আহত চিতার মতো বেগে
পালায়ে গিয়েছে রোদ — সরে গেছে আলোর বৈকাল!
চলে গেছে জীবনের আজ এক — আর এক কাল
আসিত না যদি আর আলো লয়ে — রৌদ্র সঙ্গে লয়ে!
এই রাত্রি নক্ষত্র সমুদ্র লয়ে এমন বিশাল
আকাশের বুক থেকে পড়িত না যদি আর ক্ষ’য়ে
রয়ে যেত — যে গান শুনি নি আর তাহার স্মৃতির মতো হয়ে!
৪
যে পাতা সবুজ ছিল, তবুও হলুদ হতে হয় —
শীতের হাড়ের হাত আজও তারে যায় নাই ছুঁয়ে —
যে মুখ যুবার ছিল, তবু যার হয়ে যায় ক্ষয়,
হেমন্ত রাতের আগে ঝরে যায় — পড়ে যায় নুয়ে —
পৃথিবীর এই ব্যথা বিহ্বলতা অন্ধকারে ধুয়ে
পূর্ব সাগরের ঢেউয়ে জলে জলে, পশ্চিম সাগরে
তোমার বিনুনি খুলে — হেঁট হয়ে — পা তোমার থুয়ে —
তোমার নক্ষত্র জ্বেলে — তোমার জলের স্বরে স্বরে
রয়ে যেতে যদি তুমি আকাশের নিচে — নীল পৃথিবীর ‘পরে!
৫
ভোরের সূর্যের আলো পৃথিবীর গুহায় যেমন
মেঘের মতন চুল — অন্ধকার চোখের আস্বাদ
একবার পেতে চায় — যে জন রয় না — যেই জন
চলে যায়, তারে পেতে আমাদের বুজে যেই সাধ —
যে ভালোবেসেছে শুধু, হয়ে গেছে হৃদয় অবাধ
বাতাসের মতো যার — তাহার বুকের গান শুনে
মনে যেই ইচ্ছা জাগে — কোনোদিন দেখে নাই চাঁদ
যেই রাত্রি — নেমে আসে লক্ষ লক্ষ নক্ষত্রেরে শুনে
যেই রাত্রি, আমি তার চোখে চোখ, চুলে তার চুল নেব বুনে!
৬
তুমি রয়ে যাবে তবু, অপেক্ষায় রয় না সময়
কোনোদিন; কোনোদিন রবে না সে পথ থেকে স’রে!
সকলেই পথ চলে — সকলেই ক্লান্ত তবু হয় —
তবুও দুজন কই বসে থাকে হাতে হাত ধরে!
তবুও দুজন কই কে কাহারে রাখে কোলে করে!
মুখে রক্ত ওঠে — তবু কমে কই বুকের সাহস!
যেতে হবে — কে এসে চুলের ঝুটি টেনে লয় জোরে!
শরীরের আগে কবে ঝরে যায় হৃদয়ের রস!
তবু, চলে — মৃত্যুর ঠোঁটের মতো দেহ যায় হয় নি অবশ!
৭
হলদে পাতার মতো আমাদের পথে ওড়াউড়ি! —
কবরের থেকে শুধু আকাঙক্ষার ভূত লয়ে খেলা!
আমরাও ছায়া হয়ে ভূত হয়ে করি ঘোরাঘুরি!
মনের নদীর পার নেমে আসে তাই সন্ধ্যাবেলা
সন্ধ্যার অনেক আগে! — দুপুরেই হয়েছি একেলা!
আমরাও চরি — ফিরি কবরের ভূতের মতন!
বিকালবেলার আগে ভেঙে গেছে বিকালের মেলা —
শরীর রয়েছে, তবু মরে গেছে আমাদের মন!
হেমন্ত আসে নি মাঠে — হলুদ পাতায় ভরে হৃদয়ের বন!
৮
শীত রাত ঢের দূরে — অস্থি তবু কেঁপে ওঠে শীতে!
শাদা হাতুদুটো শাদা হাড় হয়ে মৃত্যুর খবর
একবার মনে আনে — চোখ বুজে তবু কি ভুলিতে
পারি এই দিনগুলো! — আমাদের রক্তের ভিতর
বরফের মতো শীত — আগুনের মতো তবু জ্বর!
যেই গতি — সেই শক্তি পৃথিবীর অন্তরে পঞ্জরে —
সবুজ ফলায়ে যায় পৃথিবীর বুকের উপর —
তেমনি স্ফুলিঙ্গ এক আমাদের বুকে কাজ করে!
শস্যের কীটের আগে আমাদের হৃদয়ের শস্য তবু মরে!
৯
যতদিন রয়ে যাই এই শক্তি রয়ে যায় সাথে —
বিকালের দিকে যেই ঝড় আসে তাহার মতন!
যে ফসল নষ্ট হবে তারই ক্ষেত উড়াতে ফুরাতে
আমাদের বুকে এসে এই শক্তি করে আয়োজন!
নতুন বীজের গন্ধে ভরে দেয় আমাদের মন
এই শক্তি — একদিন হয়তো বা ফলিবে ফসল! —
এরই জোরে একদিন হয়তো বা হৃদয়ের বন
আহ্লাদে ফেলিবে ভরে অলক্ষিত আকাশের তল!
দুরন্ত চিতার মতো গতি তার — বিদ্যুতের মতো সে চঞ্চল!
১০
অঙ্গারের মতো তেজ কাজ করে অন্তরের তলে —
যখন আকাঙক্ষা এক বাতাসের মতো বয়ে আসে,
এই শক্তি আগুনের মতো তার জিভ তুলে জ্বলে!
ভস্মের মতন তাই হয়ে যায় হৃদয় ফ্যাকাশে!
জীবন ধোঁয়ার মতো, জীবন ছায়ার মতো ভাসে;
যে অঙ্গার জ্বলে জ্বলে নিভে যাবে, হয়ে যাবে ছাই —
সাপের মতন বিষ লয়ে সেই আগুনের ফাঁসে
জীবন পুড়িয়া যায় — আমরাও ঝরে পুড়ে যাই!
আকাশে নক্ষত্র হয়ে জ্বলিবার মতো শক্তি — তবু শক্তি চাই।
১১
জানো তুমি? শিখেছ কি আমাদের ব্যর্থতার কথা? —
হে ক্ষমতা, বুকে তুমি কাজ কর তোমার মতন! —
তুমি আছ — রবে তুমি — এর বেশি কোনো নিশ্চয়তা
তুমি এসে দিয়েছ কি? — ওগো মন, মানুষের মন —
হে ক্ষমতা, বিদ্যুতের মতো তুমি সুন্দর — ভীষণ!
মেঘের ঘোড়ার পরে আকাশের শিকারীর মতো —
সিন্ধুর সাপের মতো লক্ষ ঢেউয়ে তোল আলোড়ন!
চমৎকৃত কর — শরীরের তুমি করেছ আহত! —
যতই জেগেছ — দেহ আমাদের ছিঁড়ে যেতে চেয়েছে যে তত!
১২
তবু তুমি শীত রাতে আড়ষ্ট সাপের মতো শুয়ে
হৃদয়ের অন্ধকারে পড়ে থাক — কুন্ডলী পাকায়ে! —
অপেক্ষায় বসে থাকি — স্ফুলিঙ্গের মতো যাবে ছুঁয়ে
কে তোমারে! — ব্যাধের পায়ের পাড়া দিয়ে যাবে গায়ে
কে তোমারে! কোন অশ্রু, কোন্ পীড়া হতাশার ঘায়ে
কখন জাগিয়া ওঠো — স্থির হয়ে বসে আছি তাই।
শীত রাত বাড়ে আরো — নক্ষত্রেরা যেতেছে হারায়ে —
ছাইয়ে যে আগুন ছিল সেই সবও হয়ে যায় ছাই!
তবুও আরেকবার সব ভস্মে অন্তরের আগুন ধরাই।
১৩
অশান্ত হাওয়ার বুকে তবু আমি বনের মতন
জীবনেরে ছেড়ে দিছি! — পাতা আর পল্লবের মতো
জীবন উঠেছে বেজে শব্দে — স্বরে; যতবার মন
ছিঁড়ে গেছে, হয়েছে দেহের মতো হৃদয় আহত
যতবার — উড়ে গেছে শাখা, পাতা পড়ে গেছে যত —
পৃথিবীর বন হয়ে — ঝড়ের গতির মতো হয়ে,
বিদ্যুতের মতো হয়ে আকাশের মেঘে ইতস্তত;
একবার মৃত্যু লয়ে — একবার জীবনের লয়ে
ঘূর্ণির মতন বয়ে যে বাতাসে ছেঁড়ে — তার মতো গেছি বয়ে!
১৪
কোথায় রয়েছে আলো আঁধারের বীণার আস্বাদ!
ছিন্ন রুগ্ন ঘুমন্তের চোখে এক সুস্থ স্বপ্ন হয়ে
জীবন দিয়েছে দেখা — আকাশের মতন অবাধ
পরিচ্ছন্ন পৃথিবীতে, সিন্ধুর হাওয়ার মতো বয়ে
জীবন দিয়েছে দেখা — জেগে উঠে সেই ইচ্ছা লয়ে
আড়ষ্ট তারার মতো চমকায়ে গেছি শীতে — মেঘে!
ঘুমায়ে যা দেখি নাই, জেগে উঠে তার ব্যথা সয়ে
নির্জন হতেছে ঢেউ হৃদয়ের রক্তের আবেগে!
— যে আলো নিভিয়া গেছে তাহার ধোঁয়ার মতো প্রাণ আছে জেগে।
১৫
নক্ষত্র জেনেছে কবে অই অর্থ মৃঙ্খলার ভাষা!
বীণার তারের মতো উঠিতেছে বাজিয়া আকাশে
তাদের গতির ছন্দ — অবিরত শক্তির পিপাসা
তাহাদের, তবু সব তৃপ্ত হয়ে পূর্ণ হয়ে আসে!
আমাদের কাল চলে ইশারায় — আভাসে আভাসে!
আরম্ভ হয় না কিছু — সমস্তের তবু শেষ হয় —
কীট যে ব্যর্থতা জানে পৃথিবীর ধুলো মাটি ঘাসে
তারও বড় ব্যর্থতার সাথে রোজ হয় পরিচয়!
যা হয়েছে শেষ হয় শেষ হয় কোনোদিন যা হবার নয়!
১৬
সমস্ত পৃথিবীর ভরে হেমন্তের সন্ধ্যার বাতাস
দোলা দিয়ে গেল কবে! বাসি পাতা ভুতের মতন
উড়ে আসে! — কাশের রোগীর মতো পৃথিবীর শ্বাস —
যক্ষ্মার রোগীর মতো ধুঁকে মরে মানুষের মন! —
জীবনের চেয়ে সুস্থ মানুষের নিভৃত মরণ!
মরণ — সে ভালো এই অন্ধকার সমুদ্রের পাশে!
বাঁচিয়া থাকিতে যারা হিঁচড়ায় — করে প্রাণপণ —
এই নক্ষত্রের তলে একবার তারা যদি আসে —
রাত্রিরে দেখিয়া যায় একবার সমুদ্রের পারের আকাশে! —
১৭
মৃত্যুরেও তবে তারা হয়তো ফেলিবে বেসে ভালো!
সব সাধ জেনেছে যে সেও চায় এই নিশ্চয়তা!
সকল মাটির গন্ধ আর সব নক্ষত্রের আলো
যে পেয়েছে — সকল মানুষ আর দেবতার কথা
যে জেনেছে — আর এক ক্ষুধা তবু — এক বিহ্বলতা
তাহারও জানিতে হয়! এইমতো অন্ধকারে এসে! —
জেগে জেগে যা জেনেছ — জেনেছ তা — জেগে জেনেছ তা —
নতুন জানিবে কিছু হয়তো বা ঘুমের চোখে সে!
সব ভালোবাসা যার বোঝা হল — দেখুক সে মৃত্যু ভালোবেসে!
১৮
কিংবা এই জীবনের একবার ভালোবেসে দেখি!
পৃথিবীর পথে নয় — এইখানে — এইখানে বসে —
মানুষ চেয়েছে কিবা? পেয়েছে কি? কিছু পেয়েছে কি!
হয়তো পায় নি কিছু — যা পেয়েছে, তাও গেছে খসে
অবহেলা করে করে কিংবা তার নক্ষত্রের দোষে —
ধ্যানের সময় আসে তারপর — স্বপ্নের সময়!
শরীর ছিঁড়িয়া গেছে — হৃদয় পড়িয়া গেছে ধসে!
অন্ধকার কথা কয় — আকাশের তারা কথা কয়
তারপর, সব গতি থেমে যায় — মুছে যায় শক্তির বিস্ময়!
১৯
কেউ আর ডাকিবে না — এইখানে এই নিশ্চয়তা!
তোমার দু — চোখ কেউ দেখে থাকে যদি পৃথিবীতে
কেউ যদি শুনে থাকে কবে তুমি কী কয়েছ কথা,
তোমার সহিত কেউ থেকে থাকে যদি সেই শীতে —
সেই পৃথিবীর শীতে — আসিবে কি তোমারে চিনিতে
এইখানে সে আবার! — উঠানে পাতার ভিড়ে বসে,
কিংবা ঘরে হয়তো দেয়ালে আলো জ্বেলে দিতে দিতে —
যখন হঠাৎ নিভে যাবে তার হাতের আলো সে —
অসুস্থ পাতার মতো দুলে তার মন থেকে পড়ে যাব খসে!
২০
কিংবা কেউ কোনোদিন দেখে নাই — চেনে নি আমারে!
সকালবেলার আলো ছিল যার সন্ধ্যার মতন —
চকিত ভূতের মতো নদী আর পাহাড়ের ধারে
ইশারায় ভূত ডেকে জীবনের সব আয়োজন
আরম্ভ সে করেছিল! কোনোদিন কোনো লোকজন
তার কাছে আসে নাই — আকাঙক্ষার কবরের পরে
পুবের হাওয়ার মতো এসেছে সে হঠাৎ কখন! —
বীজ বুনে গেছে চাষা — সে বাতাস বীজ নষ্ট করে!
ঘুমের চোখের পরে নেমে আসে অশ্রু আর অনিদ্রার স্বরে!
২১
যেমন বৃষ্টির পরে ছেঁড়া ছেঁড়া কালো মেঘ এসে
আবার আকাশ ঢাকে — মাঠে মাঠে অধীর বাতাস
ফোঁপায় শিশুর মতো — একবার চাঁদ ওঠে ভেসে
দূরে — কাছে দেখা যায় পৃথিবীর ধান ক্ষেত ঘাস,
আবার সন্ধ্যার রঙে ভরে ওঠে সকল আকাশ —
মড়ার চোখের রঙে সকল পৃথিবী থাকে ভরে!
যে মরে যেতেছে তার হৃদয়ের সব শেষ শ্বাস
সকল আকাশ আর পৃথিবীর থেকে পড়ে ঝ’রে!
জীবনে চলেছি আমি সে পৃথিবী আকাশের পথ ধরে ধরে!
২২
রাত্রির ফুলের মতো — ঘুমন্তের হৃদয়ের মতো
অন্তর ঘুমায়ে গেছে — ঘুমায়েছে মৃত্যুর মতন!
সারাদিন বুকে ক্ষুধা লয়ে চিতা হয়েছে আহত —
তারপর, অন্ধকার গুহা এই ছায়াভরা বন
পেয়েছে সে! অশান্ত হাওয়ার মতো মানুষের মন
বুজে গেছে — রাত্রি আর নক্ষত্রের মাঝখানে এসে!
মৃত্যুর শান্তির স্বাদ এই খানে দিতেছে জীবন
জীবনের এইখানে একবার দেখি ভালোবেসে!
শুনে দেখি — কোন্ কথা কয় রাত্রি, কোন্ কথা নক্ষত্র বলে সে!
২৩
পৃথিবীর অন্ধকার অধীর বাতাসে গেছে ভরে —
শস্য ফলে গেছে মাঠে — কেটে নিয়ে চলে গেছে চাষা;
নদীর পারের বন মানুষের মতো শব্দ করে
নির্জন ঢেউয়ের কানে মানুষের মনের পিপাসা
মৃত্যুর মতন তার জীবনের বেদনার ভাষা —
আবার জানায়ে যায়! কবরের ভূতের মতন
পৃথিবীর বুকে রোজ লেগে থাকে যে আশা — হতাশা —
বাতাসে ভাসিতেছিল ঢেউ তুলে সেই আলোড়ন!
মড়ার — কবর ছেড়ে পৃথিবীর দিকে তাই ছুটে গেল মন!
২৪
হলুদ পাতার মতো — আলোয়ার বাষ্পের মতন,
ক্ষীণ বিদ্যুতের মতো ছেড়া মেঘ আকাশের ধারে,
আলোর মাছির মতো — রুগ্নের স্বপ্নের মতো মন
একবার ছিল ঐ পৃথিবীর সমুদ্রে পাহাড়ে —
ঢেউ ভেঙে ঝরে যায় — মরে যায় — কে ফেরাতে পারে!
তবুও ইশারা করে ফাল্গুন রাতের গন্ধে বয়ে
মৃত্যুরেও তার সেই কবরের গহ্বরে আঁধারে
জীবন ডাকিতে আসে — হয় নাই — গিয়েছে যা হয়ে,
মৃত্যুরেও ডাক তুমি সেই ব্যথা — আকাঙক্ষার অস্থিরতা লয়ে!
২৫
মৃত্যুরে বন্ধুর মতো ডেকেছি তো — প্রিয়ার মতন!
চকিত শিশুর মতো তার কোলে লুকায়েছি মুখ;
রোগীর জরের মতো পৃথিবীর পথের জীবন;
অসুস্থ চোখের পরে অনিদ্রার মতন অসুখ;
তাই আমি প্রিয়তম প্রিয়া বলে জড়ায়েছি বুক —
ছায়ার মতন আমি হয়েছি তোমার পাশে গিয়া!
যে — ধূপ নিভিয়া যায় তার ধোঁয়া আঁধারে মিশুক —
যে ধোঁয়া মিলায়ে যায় তারে তুমি বুকে তুলে নিয়া
ঘুমানো গন্ধের মতো স্বপ্ন হয়ে তার ঠোটে চুমো দিয়ো, প্রিয়া!
২৬
মৃত্যুকে ডেকেছি আমি প্রিয়ের অনেক নাম ধরে।
যে বালক কোনোদিন জানে নাই গহ্বরের ভয়,
পুবের হাওয়ার মতো ভূত হয়ে মন তার ঘোরে! —
নদীর ধারে সে ভূত একদিন দেখেছে নিশ্চয়!
পায়ের তলের পাতা — পাপড়ির মতো মনে হয়
জীবনেরে খসে ক্ষয়ে গিয়েছে যে, তাহার মতন
জীবন পড়িয়া থাকে — তার বিছানায় খেদ — ক্ষয় —
পাহাড় নদীর পারে হাওয়া হয়ে ভূত হয়ে মন
চকিত পাতার শব্দে বাতাসের বুকে তারে করে অম্বেষণ।
২৭
জীবন, আমার চোখে মুখ তুমি দেখেছ তোমার —
একটি পাতার মতো অন্ধকারে পাতা — ঝরা — গাছে —
একটি বোঁটার মতো যে ফুল ঝরিয়া গেছে তার —
একাকী তারার মতো, সব তারা আকাশের কাছে
যখন মুছিয়া গেছে — পৃথিবীতে আলো আসিয়াছে —
যে ভালোবেসেছে, তার হৃদয়ের ব্যথার মতন —
কাল যাহা থাকিবে না — আজই যাহা স্মৃতি হয়ে আছে —
দিন রাত্রি — আমাদের পৃথিবীর জীবন তেমন!
সন্ধ্যার মেঘের মতো মুহুর্তের রঙ লয়ে মুহুর্তে নূতন!
২৮
আশঙ্কা ইচ্ছার পিছে বিদ্যুতের মতো কেঁপে ওঠে!
বীণার তারের মতো কেঁপে কেঁপে ছিঁড়ে যায় প্রাণ!
অসংখ্য পাতার মতো লুটে তারা পথে পথে ছোটে —
যখন ঝড়ের মতো জীবনের এসেছে আহ্বান!
অধীর ঢেউয়ের মতো — অশান্ত হাওয়ার মতো গান
কোন্দিকে ভেসে যায়! — উড়ে যায় কয় কোন্ কথা! —
ভোরের আলোয় আজ শিশিরের বুকে যেই ঘ্রাণ,
রহিবে না কাল তার কোনো স্বাদ — কোনো নিশ্চয়তা!
পান্ডুর পাতার রঙ গালে, তবু রক্তে তার রবে অসুস্থতা!
২৯
যেখানে আসে নি চাষা কোনোদিন কাস্তে হাতে লয়ে,
জীবনের বীজ কেউ বোনে নাই যেইখানে এসে,
নিরাশার মতো ফেঁপে চোখ বুজে পলাতক হয়ে
প্রেমের মৃত্যুর চোখে সেইখানে দেখিয়াছি শেষে!
তোমার চোখের পরে তাহার মুখেরে ভালোবেসে
এখানে এসেছি আমি — আর একবার কেঁপে উঠে
অনেক ইচ্ছার বেগে — শান্তির মতন অবশেষে
সব ঢেউ ভেঙে নিয়ে ফেনার ফুলের মতো ফুটে,
ঘুমাব বালির পরে — জীবনের দিকে আর যাব নাকো ছুটে!
৩০
নির্জন রাত্রির মতো শিশিরের গুহার ভিতরে —
পৃথিবীর ভিতরের গহ্বরের মতন নিঃসাড়
রব আমি — অনেক গতির পর — আকাঙক্ষার পরে
যেমন থামিতে হয়, বুজে যেতে হয় একবার —
পৃথিবীর পারে থেকে কবরের মৃত্যুর ওপার
যেমন নিস্তব্ধ শান্ত নিমীলিত শূন্য মনে হয় —
তেমন আস্বাদ এক কিংবা সেই স্বাদহীনতার
সাথে একবার হবে মুখোমুখি সব পরিচয়!
শীতের নদীর বুকের মৃত জোনাকির মুখ তবু সব নয়!
৩১
আবার পিপাসা সব ভূত হয়ে পৃথিবীর মাঠে —
অথবা গ্রহের পরে — ছায়া হয়ে, ভূত হয়ে ভাসে! —
যেমন শীতের রাতে দেখা যায় জোছনা ধোঁয়াটে,
ফ্যাকাশে পাতার পরে দাঁড়ায়েছে উঠানের ঘাসে —
যেমন হঠাৎ দুটো কালো পাখা চাঁদের আকাশে
অনেক গভীর রাতে চমকের মতো মনে হয়;
কার পাখা? — কোন্ পাখি? পাখি সে কি! অথচ সে আসে! —
তখন অনেক রাতে কবরের মুখ কথা কয়!
ঘুমন্ত তখন ঘুমে, জাগিতে হতেছে যার সে জাগিয়া রয়!
৩২
বনের পাতার মতো কুয়াশায় হলুদ না হতে
হেমন্ত আসার আগে হিম হয়ে পড়ে গেছি ঝরে! —
তোমার বুকের পরে মুখ আমি চেয়েছি লুকোতে;
তোমার দুইটি চোখ প্রিয়ার চোখের মতো করে
দেখিতে চেয়েছি, মৃত্যু পথ থেকে ঢের দুরে সরে
প্রেমের মতন হয়ে! — তুমি হবে শান্তির মতন!
তারপর সরে যাব — তারপর তুমি যাবে মরে —
অধীর বাতাস লয়ে কাঁপুক না পৃথিবীর বন! —
মৃত্যুর মতন তবু বুজে যাক — ঘুমাক মৃত্যুর মতো মন।
৩৩
নির্জন পাতার মতো আলেয়ার বাষ্পের মতন,
ক্ষীণ বিদ্যুতের মতো ছেড়া মেঘে আকাশের ধারে,
আলোর মাছির মতো — রুগ্নের স্বপ্নের মতো মন
একবার ছিল ঐ পৃথিবীর সমুদ্রে পাহাড়ে —
ঢেউ ভেঙে ঝরে যায় — মরে যায় — কে ফেরাতে পারে!
তবুও ইশারা ক’রে ফাল্গুনরাতের গন্ধে বয়ে
মৃত্যুরেও তার সেই কবরের গহ্বরে আঁধারে
জীবন ডাকিতে আসে — হয় নাই — গিয়েছে যা হয়ে —
মৃত্যুরেও ডাক তুমি সেই স্মৃতি — আকাঙক্ষার অস্থিরতা লয়ে!
৩৪
পৃথিবীর অন্ধকার অধীর বাসাতে গেছে ভ’রে —
শস্য ফলে গেছে মাঠে — কেটে নিয়ে চলে গেছে চাষা;
নদীর পারের বন মানুষের মতো শব্দ করে
নির্জন ঢেউয়ের কানে মানুষের মনের পিপাসা —
মৃত্যুর মতন তার জীবনের বেদনার ভাষা —
আবার জানায়ে যায় — কবরের ভূতের মতন
পৃথিবীর বুকে রোজ লেগে থাকে যে আশা — হতাশা —
বাতাসে ভাসিতেছিল ঢেউ তুলে সেই আলোড়ন!
মড়ার কবর ছেড়ে পৃথিবীর দিকে তাই ছুটে গেল মন!
তুমি – জীবনানন্দ দাশ
নক্ষত্রের চলাফেরা ইশারায় চারি দিকে উজ্জ্বল আকাশ;
বাতাসে নীলাভ হয়ে আসে যেন প্রান্তরের ঘাস;
কাঁচপোকা ঘুমিয়েছে — গঙ্গাফড়িং সেও ঘুমে;
আম নিম হিজলের ব্যাপ্তিতে পড়ে আছ তুমি।
‘মাটির অনেক নীচে চলে গেছ? কিংবা দূর আকাশের পারে
তুমি আজ? কোন্ কথা ভাবছ আধারে?
ওই যে ওকানে পায়রা একা ডাকে জমিরের বনে;
মনে হয় তুমি যেন ওই পাখি-তুমি ছাড়া সময়ের এ-উদ্ভাবনে
আমার এমন কাছে — আশ্বিনের এত বড় অকূল আকাশে
আর কাকে পাব এই সহজ গভীর অনায়াসে –’
বলতেই নিখিলের অন্ধকার দরকারে পাখি গেল উড়ে
প্রকৃতিস্থ প্রকৃতির মতো শব্দে — প্রেম অপ্রেম থেকে দূরে।
৫১| ২২ শে মার্চ, ২০১২ রাত ৯:৫৬
টুকিঝা বলেছেন: ধন্যবাদ সুন্দর কবিতাটির জন্য, অথবা সুন্দর সুন্দর কবিতাগুলোর জন্য!
২৩ শে মার্চ, ২০১২ রাত ১:০৭
ফারজুল আরেফিন বলেছেন: আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আবার মন্তব্য দেয়ার জন্য।
আনন্দে কাটুক সময়, শুভ কামনা।
৫২| ২৪ শে মার্চ, ২০১২ রাত ৮:১৫
ছাইরাছ হেলাল বলেছেন:
গ্যেটের এই দুটি চতুষ্পদী তাঁর শেষ রচনা ।
১।
যদি প্রত্যেকে ক'রে যেত আপন আপন কাজ
তব শহর রক্ষা পেত কুৎসা রত্না থেকে;
মুখে যা বলা হয় তাই যদি করা হত কাজে
তবে সবারই হত ভাল ।
২।
(তরুণ কবিদের উদ্দেশ্যে)
হে তরুণ , রেখ মনে
-যখন হৃদয় মন উচ্ছসিত-
কল্পনাদেবী সুন্দরী সঙ্গিনী বটেন
কিন্তু অক্ষম তিনি পথ-নির্দেশে।
৩০ শে মার্চ, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:২১
ফারজুল আরেফিন বলেছেন: চমৎকার তো!
অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।
৫৩| ২৫ শে মার্চ, ২০১২ রাত ১০:৪৯
শর্বরী-শর্মী বলেছেন: নির্বাপিত কবি
কিন্নরী কন্ঠ নয়, শুনিতে চাহি বজ্র-নিদাঘ!
শোষিত-নিষ্পেষিত বা অভূক্ত-নাংগার আমি...
কিঙ্কর কিংবা মোদিতে আমার অতৃপ্ততা;
ক্ষুধিতের অন্ন-জ্বালায়...
শত-সহস্র কাব্যের রচিয়তার পন্য কি তৃষ্ণা মেটায়?
বিস্ময়-আভিভুতো আজো জেগে উঠি নিশিথের শিহরনে!
তর্জনীর উম্মত্ততায় উম্মাদ প্রায় মুক্তির আকুলতায়~
’৭১-এর সেই অপরাহ্নের মুগ্ধ আবেশতায়~~~
বরংবার ডেকে যায় শয়ন পরশে...
লক্ষ নরের পদচারণায় মুখরিত রমনার রেসকোর্সের মঞ্চ থেকে!
মুক্তির আকুলতার কাব্য চাই... কাব্য!
কাব্যের সহস্র ব্যকরণের ঋদ্ধতায় ব্যকুল আমি;
পড়ে রয় থোক থোক প্যপিরাসসকল,
বুকের শোণিতে লিখিতে চাই নব-বারতা...
খুজে ফিরি সেই তর্জনীর হেয়ালী!
দুঃস্বপ্নের প্রত্যুষের কর্কশ স্বর শুনে চমকে উঠি!
হাহাকারে গুমরে মরি অবিরত~~~
সাড়ে ৭ কোটি জনতার বক্ষ-বিদীর্ন আবীরে লেখা...
৩২ নম্বরের সোপান ধাপে নির্বাপিত...
বাঙ্গালীর মুক্তির কাব্যের মৃত্যুর যবনিকা পত্র!!!...
_________________________________________________
প্রভাষক-এর লেখা এই কবিতাটি আমার খুব প্রিয়।
> পোষ্ট অবশ্যই প্রিয়তে। রেটিং + দিলাম।
৩০ শে মার্চ, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:২৩
ফারজুল আরেফিন বলেছেন: আপনার প্রভাষক অনেক ভাল লেখেন।
অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
৫৪| ২৫ শে মার্চ, ২০১২ রাত ১১:৫৬
শাদা-অন্ধকার বলেছেন: ধন্যবাদ এমন একটা পোষ্টের জন্য। প্রিয়তে নিলাম। আর সেই সাথে আমার প্রিয় একখানি কবিতা শেয়ার করলাম...
আট বছর আগের একদিন/জীবনানন্দ দাশ…
শোনা গেলো লাশকাটা ঘরে
নিয়ে গেছে তারে;
কাল রাতে - ফাল্গুনের রাতের আঁধারে
যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ
মরিবার হলো তার সাধ।
বধূ শুয়ে ছিলো পাশে - শিশুটিও ছিলো;
প্রেম ছিলো, আশা ছিলো - জোৎস্নায়, - তবু সে দেখিল
কোন ভূত? ঘুম কেন ভেঙে গেলো তার?
অথবা হয়নি ঘুম বহুকাল - লাশকাটা ঘরে শুয়ে ঘুমায় এবার।
এই ঘুম চেয়েছিলো বুঝি !
রক্তফেনামাখা মুখে মড়কের ইঁদুরের মতো ঘাড় গুঁজি
আঁধার ঘুজির বুকে ঘুমায় এবার;
কোনোদিন জাগিবে না আর।
‘কোনোদিন জাগিবে না আর
জানিবার গাঢ় বেদনার
অবিরাম - অবিরাম ভার
সহিবে না আর - ‘
এই কথা বলেছিলো তারে
চাঁদ ডুবে চলে গেলে - অদ্ভুত আঁধারে
যেন তার জানালার ধারে
উটের গ্রীবার মতো কোনো-এক নিস্তব্ধতা এসে।
তবুও তো প্যাঁচা জাগে;
গলিত স্থবির ব্যাং আরো দুই মুহূর্তের ভিক্ষা মাগে
আরেকটি প্রভাতের ইশারায় - অনুমেয় উষ্ণ অনুরাগে।
টের পাই যূথচারী আঁধারের গাঢ় নিরুদ্দেশে
চারিদিকে মশারির ক্ষমাহীন বিরুদ্ধতা;
মশা তার অন্ধকার সঙ্ঘারামে জেগে থেকে জীবনের স্রোত ভালোবাসে।
রক্ত ক্লেদ বসা থেকে রৌদ্রে ফের উড়ে যায় মাছি;
সোনালি রোদের ঢেউয়ে উড়ন্ত কীটের খেলা কতো দেখিয়াছি।
ঘনিষ্ঠ আকাশ যেন - যেন কোন বিকীর্ণ জীবন
অধিকার করে আছে ইহাদের মন;
দূরন্ত শিশুর হাতে ফড়িঙের ঘন শিহরণ
মরণের সাথে লড়িয়াছে;
চাঁদ ডুবে গেলে পর প্রধান আঁধারে তুমি অশ্বথের কাছে
এক গাছা দড়ি হাতে গিয়েছিলে তবু একা - একা;
যে জীবন ফড়িঙের, দোয়েলের - মানুষের সাথে তার হয় নাকো দেখা
এই জেনে।
অশ্বথের শাখা
করেনি কি প্রতিবাদ? জোনাকির ভিড় এসে সোনালি ফুলের স্নিগ্ধ ঝাঁকে
করেনি কি মাখামাখি?
থুরথুরে অন্ধ প্যাঁচা এসে
বলেনি কি : ‘বুড়ি চাঁদ গেছে বুঝি বেনো জলে ভেসে?
চমৎকার! -
ধরা যাক দু -একটা ইঁদুর এবার!’
জানায়নি প্যাঁচা এসে এ তুমুল গাঢ় সমাচার?
জীবনের এই স্বাদ - সুপক্ব যবের ঘ্রাণ হেমন্তের বিকেলের -
তোমার অসহ্য বোধ হলো;
মর্গে কি হৃদয় জুড়োলো
মর্গে - গুমোটে
থ্যাঁতা ইঁদুরের মতো রক্তমাখা ঠোঁটে!
শোনো
তবু এ মৃতের গল্প; - কোনো
নারীর প্রণয়ে ব্যর্থ হয় নাই;
বিবাহিত জীবনের সাধ
কোথাও রাখে নি কোন খাদ,
সময়ের উর্ধ্বতনে উঠে এসে বধূ
মধু - আর মননের মধু
দিয়েছে জানিতে;
হাড়হাভাতের গ্লানি বেদনার শীতে
এ জীবন কোনোদিন কেঁপে ওঠে নাই;
তাই
লাশকাটা ঘরে
চিৎ হয়ে শুয়ে আছে টেবিলের’পরে।
জানি - তবু জানি
নারীর হৃদয় - প্রেম - শিশু - গৃহ - নয় সবখানি;
অর্থ নয়, কীর্তি নয়, স্বচ্ছলতা নয় -
আরো এক বিপন্ন বিস্ময়
আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভিতরে
খেলা করে;
আমাদের ক্লান্ত করে;
ক্লান্ত - ক্লান্ত করে;
লাশকাটা ঘরে
সেই ক্লান্তি নাই;
তাই
লাশকাটা ঘরে
চিৎ হয়ে শুয়ে আছে টেবিলের ‘পরে।
তবু রোজ রাতে আমি চেয়ে দেখি, আহা,
থুরথুরে অন্ধ পেঁচা অশ্বথের ডালে বসে এসে,
চোখ পালটায়ে কয় : ‘বুড়ি চাঁদ গেছে বুঝি বেনো জলে ভেসে?
চমৎকার !
ধরা যাক দু - একটা ইঁদুর এবার -’
হে প্রগাঢ় পিতামহী, আজও চমৎকার?
আমিও তোমার মতো বুড়ো হব - বুড়ি চাঁদটারে আমি করে দেব
কালীদহে বেনো জলে পার;
আমরা দুজনে মিলে শূন্য করে চলে যাব জীবনের প্রচুর ভাঁড়ার।
৩০ শে মার্চ, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:২৫
ফারজুল আরেফিন বলেছেন: পড়েছিলাম আগে। জীবনানন্দের সব কবিতাই প্রিয়, প্রতিটি ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের।
কৃতজ্ঞতা জানবেন।
৫৫| ২৫ শে মার্চ, ২০১২ রাত ১১:৫৮
শাদা-অন্ধকার বলেছেন: এটিও ভীষন পছন্দের---
আলো — অন্ধকারে যাই — মাথার ভিতরে
স্বপ্ন নয়, কোন এক বোধ কাজ করে!
স্বপ্ন নয় — শান্তি নয় — ভালোবাসা নয়,
হৃদয়ের মাঝে এক বোধ জন্ম লয়!
আমি তারে পারি না এড়াতে
সে আমার হাত রাখে হাতে;
সব কাছ তুচ্ছ হয়, পন্ড মনে হয়,
সব চিন্তা — প্রার্থনার সকল সময়
শূন্য মনে হয়,
শূন্য মনে হয়!
সহজ লোকের মতো কে চলিতে পারে!
কে থামিতে পারে এই আলোয় আঁধারে
সহজ লোকের মতো! তাদের মতন ভাষা কথা
কে বলিতে পারে আর! — কোন নিশ্চয়তা
কে জানিতে পারে আর? — শরীরের স্বাদ
কে বুঝিতে চায় আর? — প্রাণের আহ্লাদ
সকল লোকের মতো কে পাবে আবার!
সকল লোকের মতো বীজ বুনে আর
স্বাদ কই! — ফসলের আকাঙক্ষায় থেকে,
শরীরে মাটির গন্ধ মেখে,
শরীরে জলের গন্ধ মেখে,
উৎসাহে আলোর দিকে চেয়ে
চাষার মতণ প্রাণ পেয়ে
কে আর রহিবে জেগে পৃথিবীর পরে?
স্বপ্ন নয়, শান্তি নয়,কোন এক বোধ কাজ করে
মাথার ভিতরে!
পথে চলে পারে — পারাপারে
উপেক্ষা করিতে চাই তারে:
মড়ার খুলির মতো ধ’রে
আছাড় মারিতে চাই, জীবন্ত মাথার মতো ঘোরে
তবু সে মাথার চারি পাশে!
তবু সে চোখের চারি পাশে!
তবু সে বুকের চারি পাশে!
আমি চলি, সাথে সাথে সেও চলে আসে!
আমি থামি —
সেও থেমে যায়;
সকল লোকের মাঝে বসে
আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা?
আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
আমার পথেই শুধু বাধা?
জন্মিয়াছে যারা এই পৃথিবীতে
সন্তানের মতো হয়ে —
সন্তানের জন্ম দিতে দিতে
যাহাদের কেটে গেছে অনেক সময়
কিংবা আজ সন্তানের জন্ম দিতে হয়
যাহাদের ; কিংবা যারা পৃথিবীর বীজক্ষেতে আসিতেছে চলে
জন্ম দেবে — জন্ম দেবে বলে;
তাদের হৃদয় আর মাথার মতন
আমার হৃদয় না কি? — তাহাদের মন
আমার মনের মতো না কি?
–তবু কেন এমন একাকী?
তবু আমি এমন একাকী!
হাতে তুলে দেখি নি কি চাষার লাঙল?
বালটিকে টানি নি কি জল?
কাস্তে হাতে কতবার যাই নি কি মাঠে?
মেছোদের মতো আমি কত নদী ঘাটে
ঘুরিয়াছি;
পুকুরের পানা শ্যালা — আঁষটে গায়ের ঘ্রাণ গায়ে
গিয়েছে জড়ায়ে;
–এই সব স্বাদ
–এ সব পেয়েছি আমি — বাতাসের মতন অবাধ
বয়েছে জীবন,
নক্ষত্রের তলে শুয়ে ঘুমায়েছে মন
একদিন;
এই সব সাধ
জানিয়াছি একদিন — অবাধ — অগাধ;
চলে গেছি ইহাদের ছেড়ে —
ভালোবেসে দেখিয়াছি মেয়ে মানুষেরে,
অবহেলা করে আমি দেখিয়াছি মেয়ে মানুষেরে,
ঘৃণা করে দেখিয়াছি মেয়েমানুষেরে;
আমার সে ভালোবাসিয়াছে,
আসিয়াছে কাছে,
উপেক্ষা সে করেছে আমারে,
ঘৃণা করে চলে গেছে — যখন ডেকেছি বারেবারে
ভালোবেসে তারে;
তবুও সাধনা ছিল একদিন — এই ভালোবাসা;
আমি তার উপেক্ষার ভাষা
আমি তার ঘৃণার আক্রোশ
অবহেলা করে গেছি; যে নক্ষত্র — নক্ষত্রের দোষে
আমার প্রেমের পথে বারবার দিয়ে গেছে বাধা
আমি তা ভুলিয়া গেছি;
তবু এই ভালোবাসা — ধুলো আর কাদা — ।
মাথার ভিতরে
স্বপ্ন নয় — প্রেম নয় — কোনো এক বোধ কাজ করে।
আমি সব দেবতার ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতো ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়?
অবসাদ নাই তার? নাই তার শান্তির সময়?
কোনোদিন ঘুমাবে না? ধীরে শুয়ে থাকিবার স্বাদ
পাবে না কি? পাবে না আহ্লাদ
মানুষের মুখ দেখে কোনোদিন!
মানুষীর মুখ দেখে কোনোদিন!
শিশুদের মুখ দেখে কোনোদিন!
এই বোধ — শুধু এই স্বাদ
পায় সে কি অগাধ — অগাধ!
পৃথিবীর পথ ছেড়ে আকাশের নক্ষত্রের পথ
চায় না সে? করেছে শপথ
দেখিবে সে মানুষের মুখ?
দেখিবে সে মানুষীর মুখ?
দেখিবে সে শিশুদের মুখ?
চোখে কালোশিরার অসুখ,
কানে যেই বধিরতা আছে,
যেই কুঁজ — গলগন্ড মাংসে ফলিয়াছে
নষ্ট শসা — পচা চালকুমড়ার ছাঁচে,
যে সব হৃদয়ে ফলিয়াছে
— সেই সব।
কবিঃ জীবনানন্দ দাশ
কাব্যগ্রন্থঃ ধূসর পাণ্ডূলিপি
৩০ শে মার্চ, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৩১
ফারজুল আরেফিন বলেছেন: আমারও পছন্দের। জীবনানন্দের কবিতার আরেকটা পোস্ট দেয়ার কথা ছিলো, দেয়া হয়নি। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
আপনার নিকটি চমৎকার, বিশেষ করে 'শাদা' অংশটুকু। শাদা শব্দটি আমার কাছে শোকেসে তুলে রাখা নতুন জামার মতোন।
৫৬| ৩০ শে মার্চ, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৪৪
রাহি বলেছেন: প্রিয়তে। শুধু তোমার জন্য - নির্মলেন্দু গুণ আমার খুব প্রিয় একটা কবিতা
৩০ শে মার্চ, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:১২
ফারজুল আরেফিন বলেছেন: তাই নাকি!
ধন্যবাদ আপনাকে।
৫৭| ৩০ শে মার্চ, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:০৯
আবু মোশাররফ রাসেল বলেছেন: সোজা প্রিয়তে। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
কিন্তু....
আল মাহমুদের সোনালী কাবিন-আমার খুব প্রিয়।
৩০ শে মার্চ, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৩৩
ফারজুল আরেফিন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
সোনালী কাবিন - আল মাহমুদ
আর আসবো না বলে দুধের ওপরে ভাসা সর
চামোচে নিংড়ে নিয়ে চেয়ে আছি। বাইরে বৃষ্টির ধোঁয়া
যেন সাদা স্বপ্নের চাদর
বিছিয়েছে পৃথিবীতে।
কেন এতো বুক দোলে? আমি আর আসবো না বলে?
যদিও কাঁপছে হাত তবু ঠিক অভ্যেসের বশে
লিখছি অসংখ্য নাম চেনাজানা
সমস্ত কিছুর।
প্রতিটি নামের শেষে, আসবো না।
পাখি, আমি আসবো না।
নদী আমি আসবো না।
নারী, আর আসবো না, বোন।
আর আসবো না বলে মিছিলের প্রথম পতাকা
তুলে নিই হাতে।
আর আসবো না বলে
সংগঠিত করে তুলি মানুষের ভিতরে মানুষ।
কথার ভেতরে কথা গেঁথে দেওয়া, কেন?
আসবো না বলেই।
বুকের মধ্যে বুক ধরে রাখা, কেন?
আর আসবো না বলেই।
আজ অতৃপ্তির পাশে বিদায়ের বিষণ্ণ রুমালে
কে তুলে অক্ষর কালো, ‘আসবো না’
সুখ, আমি আসবো না।
দুঃখ, আমি আসবো না।
প্রেম, হে কাম, হে কবিতা আমার
তোমরা কি মাইল পোস্ট না ফেরার পথের ওপর?
৫৮| ৩০ শে মার্চ, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:১৮
হানযালা বলেছেন: এক্কেরে কবিতার রাজ্যি বানাইছেন। মন্তব্যের ঘরেও কবিতা। বেশ ভাল লাগলো।
৩০ শে মার্চ, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৩৪
ফারজুল আরেফিন বলেছেন:
অনেক ধন্যবাদ।
৫৯| ৩০ শে মার্চ, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৩৫
আবু মোশাররফ রাসেল বলেছেন: এটা সোনালী কাবিন? হা হা হা!
৩০ শে মার্চ, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৩৯
ফারজুল আরেফিন বলেছেন: আপনার প্রিয় কবিতা, আপনিই ভাল জানেন। আমার প্রিয় হলে পোস্টেই দেয়া থাকতো। যেহেতু আপনার প্রিয় কবিতা আপনার সংগ্রহে তো থাকার কথা।
৬০| ১২ ই এপ্রিল, ২০১২ ভোর ৫:৩৫
কখনো মেঘ, কখনো বৃষ্টি বলেছেন: ওহ মাই গড!!!! এক সাথে এত্ত এত্ত কবিতা!!! "প্রিয় রোদ্র.." ভীষন বিষাদ দেয় কবিতা/চিঠিটা। আমার যখন ভীষন মন খারাপ থাকে, আমি অজানা কোন কারণে এটা একা একা মনে মনে আবৃত্তি করি! এখন এতবড় চিঠিটা একেবারে মুখস্থ হয়ে গেছে!!
এত এত কবিতা একসাথে খুব সহজে পাওয়ার পথ করে দেয়ার জন্য একটা ধন্যবাদ যে যথেষ্ট নয়!!
"শূন্যতায় ভেসে গেছে শহরের সব পথঘাট
ফিরবেনা গতকাল জানি, ফিরবেনা আগামিকাল।
তবু চাইছি তোমাকে তুলে নিতে অঞ্জলিতে-
রোদের ফোঁটায়
শোন কবি, শোন কবিতা
ভাঙো দীর্ঘ মূর্ছনা
... রাখো এইখানে হাতটুকু
তবু চলে যেতে বোলোনা
শূন্যতায় ঢেকে গেছে শহরের বাকি ইতিহাস
ফিরবনা আমি আর তুমি ফিরবেনা হয়ত আবার
তবু চাইছি তোমাকে তুলে নিতে অঞ্জলিতে
রোদের ফোঁটায়
শূন্যতার শোকসভা শূন্যতার যত গান
দিলাম তোমার মুকুটে আমার যত অভিমান"
১২ ই এপ্রিল, ২০১২ বিকাল ৫:২৯
ফারজুল আরেফিন বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
খুব সুন্দর একটি কবিতা দিয়েছেন।
আশাকরি অন্য পোস্টগুলোও আপনার ভাল লাগবে।
৬১| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১২ সকাল ৭:০৯
ডেভিড বলেছেন:
বার বাজারের তের রকম মানুষ, চৌদ্দ রকম পদ্য লেখে, আর পনের রকম খুশবু বিলায়, ষোল রকম পড়ে, সতের রকমের সময় নষ্ট হয়, আঠার রকম প্রশংসা করে, উনিশ রকম নিন্দা করে, কুড়িতে কুড়িতে কত মন্তব্যের ঠাসাঠাসি হয়,পদ্য লেখা কারো একার সম্পত্তি নয়
- অফিস ভাঙার হাটে হাজার মানুষের ভীড়ে প্যাচে প্যাচে শাপল চত্বরের মতো কবিতারাদেরও এখানে বিরাট শোরগোল, কিন্তু সাথে এমন এক সৌরভ ছড়িয়ে আছে, যে সৌরভ ছড়ানোর জন্য নির্ধারিত ফুল এখন ফোটার যোগাড় যন্তরই শেষ করে আনতে পারলনা
একটা প্রিয় কবিতা দিয়ে শেষে ধন্যবাদ রাখলাম
পরাণের গহীন ভিতর-৬, সৈ.শা.হ
তোমার খামচির দাগ এখনো কি টকটকা লাল,
এখনও জ্বলন তার চোতরার পাতার লাহান।
শয়তান, দ্যাখো না করছ কি তুমি কি সোন্দর গাল,
না হয় দুপুর বেলা একবার দিছিলাম টান?
না হয় উঠানে ছিল লোকজন কামের মানুষ,
চুলায় আছিল ভাত, পোলাপান পিছের বাগানে,
তোমারে পরাণ দিছি, তাই বইলা দেই নাই হুঁশ,
আমি তো তোমারে নিতে চাই নাই ঘরের বিছানে।
হ, জানি নিজের কাছে কোন কথা থাকেনা গোপন।
দিনের দুফর বেলা যেই তুমি আসছিলা ঘরে
আতখা এমন মনে হইছিল- আন্ধার যেমন,
আতখা এমন ছায়া সোহাগের আর্শির ভিতরে।
আবার ডাকলে পরে কিছুতেই স্বীকার হমুনা।
বুকের পাষাণ দিয়া দিমু ডুব শীতল যমুনা।।
১৮ ই এপ্রিল, ২০১২ দুপুর ২:০৫
ফারজুল আরেফিন বলেছেন: আপনার সুন্দর মন্তব্য ও কবিতা পোস্টটিতে যোগ করলো এক ভিন্ন মাত্রা। কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই।
কবিতার সৌরভে বিমোহিত হোক সকল প্রাণ।
ভাল থাকুন।
৬২| ১৪ ই আগস্ট, ২০১২ রাত ২:০৯
এক্সট্রাটেরেস্ট্রিয়াল স্বর্ণা বলেছেন: সামুতে আমার প্রিয়তে নেয়া প্রথম পোষ্ট
১৪ ই আগস্ট, ২০১২ সকাল ৯:৫৩
ফারজুল আরেফিন বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।
৬৩| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ বিকাল ৫:৫২
শাহিন বলেছেন: আমার অনেকগুলো প্রিয় কবিতা আছে এখানে তাই সোজা প্রিয়তে । ধন্যবাদ একসাথে এতগুলো সুখ-দুঃখ উপহার দেবার জন্য । শুভকামনা
০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ৮:০৭
ফারজুল আরেফিন বলেছেন: আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ ভাই।
ভালো থাকবেন, শুভকামনা।
৬৪| ১৪ ই নভেম্বর, ২০১২ রাত ১:৩১
বিবাগী বাউল বলেছেন: প্রিয়তে
১৪ ই নভেম্বর, ২০১২ রাত ১:৫১
ফারজুল আরেফিন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।
৬৫| ০১ লা মে, ২০১৩ রাত ১:৪৬
মিলনমেলা... বলেছেন:
০৩ রা মে, ২০১৩ রাত ৯:২১
ফারজুল আরেফিন বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
ভালো থাকবেন......
৬৬| ০৩ রা মে, ২০১৩ রাত ৯:২৭
হাসান মাহবুব বলেছেন: দারুণ সংগ্রহ। +++++
০৩ রা মে, ২০১৩ রাত ৯:৫৭
ফারজুল আরেফিন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ হামা ভাই।
উত্তর ও প্রতিউত্তরে আরো অনেক সুন্দর সুন্দর কবিতা যুক্ত হয়েছে।
৬৭| ২৩ শে জুন, ২০১৩ রাত ১১:৪৫
আমিনুর রহমান বলেছেন:
পোষ্ট প্রিয়তে নিতে গিয়ে দেখি আগেই প্রিয়তে নেয়া আছে
চমৎকার পোষ্ট +++
২৪ শে জুন, ২০১৩ রাত ৮:৫৫
ফারজুল আরেফিন বলেছেন:
অনেক ধন্যবাদ ভাই।
ভালো থাকবেন.......।
৬৮| ০৮ ই জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১২:৫৮
হাসান মুহিব বলেছেন: প্রিয়তে
২০ শে জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১:৪৬
ফারজুল আরেফিন বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ...।
৬৯| ২০ শে জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১:৫১
অনাহূত বলেছেন: পোস্টটি ইতিমধ্যে আপনার পছন্দের তালিকায় সংযুক্ত হয়েছে
খবর কি?
২০ শে জুলাই, ২০১৩ দুপুর ২:২৫
ফারজুল আরেফিন বলেছেন:
খবর ভালো না, বুড়া হয়ে গেছি।
একটা কোবতে লেখা দরকার....
৭০| ২০ শে জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৫:৫৭
অনাহূত বলেছেন: আপনার কি ধারণা, বুড়া মানুষই কোবতে লেখে?
এই অবস্থা কেনো?
২০ শে জুলাই, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:০৩
ফারজুল আরেফিন বলেছেন: ওরে কবি, লাইনদ্বয় আলাদা করে পড়তে হবে।
বুড়া বয়সের যাতনা নিয়ে কোবতে লিখতে চাইছিলাম, কিন্তু এখন আর লিখবোনা।
যাই, ইফতারির খুঁজ করি - খিদা লাগছে।
৭১| ২০ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ৯:২১
অনাহূত বলেছেন: ওহহো পড়লাম
লিখেন কবিতা, অপেক্ষায় থাকলাম। ফারজুল আরেফিন পর্যবেক্ষণে।
রোজা থাকেন তো, নাকি এমনি এমনি ইফতার খুঁজেন?
২১ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ৯:০৮
ফারজুল আরেফিন বলেছেন: নাহ্, কোবতে লিখতে পারিনা।
রোজা তো থাকি। নিজে নিজে রান্না করে খাই। :-<
আজকের মেন্যু - ইলিশ মাছের দোপেয়াজো আর কাতল মাছের ডিম ভাজি।
ইফতারের দাওয়াত জানি কবে দিলেন? আসতেছি।
৭২| ০১ লা আগস্ট, ২০১৩ রাত ১২:০৪
অজানিতা বলেছেন: প্রিয়তে।
১৭ ই আগস্ট, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৪৮
ফারজুল আরেফিন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ অজানিতা।
৭৩| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৩ রাত ১২:২৫
তৌফিক রেজা বলেছেন: nice
১৭ ই আগস্ট, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৪৯
ফারজুল আরেফিন বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।
৭৪| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:০৬
মৌলিক প্রেমিক বলেছেন: অনেক দিন থেকে একটা কবিতা খুজছি। সংগ্রহে থাকলে একটু পাঠাবেন তো...
"যদি অার কোন দিন দিগন্তের ওপারে মাথা তুলে দাড়াতে পারি...
১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১:৩৭
ফারজুল আরেফিন বলেছেন: যদি কোন দিন দিগন্তের ওপারে মাথা তুলে দাড়াতে পারি আমি তোমাদের সব হিসেব কড়ায় গন্ডায় মিটিয়ে দিয়ে যাব - এইটা না?
এই কবিতা নেই আমার কাছে। অবশ্য আমার কালেকশনে থাকা আবৃত্তি'র সিডিগুলোর ভেতর কোন একটাতে এই কবিতাটি আছে। সময় পেলে খুঁজে দেখবো আর পাঠানোর উপযোগী হলে অবশ্যই পাঠাবো।
ধন্যবাদ আপনাকে।
৭৫| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:১৫
ডট কম ০০৯ বলেছেন: দারুণ পোষ্ট অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:২৪
ফারজুল আরেফিন বলেছেন: আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।
৭৬| ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:৫২
শাহেদ খান বলেছেন: নাহ ! এই পোস্ট'টাকে প্রিয়তে নিতে বাধ্য হচ্ছি !
শেয়ার করার জন্য অনেক ভাল লাগা জানবেন, ফারজুল ভাই !
২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:৫৫
ফারজুল আরেফিন বলেছেন:
বাধ্য হয়েছেন জেনে আনন্দিত।
ভালো লাগা থেকে পোস্টটি বানানো, মন্তব্যে জমা হয়েছে আরো বেশ কিছু কবিতা।
অসংখ্য ধন্যবাদ কবি!
ভালো থাকবেন....।
৭৭| ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:০৪
মৌলিক প্রেমিক বলেছেন: "যদি কোনো দিন দিগন্তের উপরে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারি"
এই কবিতাটি কী অাপনাদের কারো সংগ্রহে অাছে? থাকলে একটু পাঠাবেন প্লিজ...
২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:০৫
ফারজুল আরেফিন বলেছেন: যদি কোনদিন - সুভাস গঙ্গোপাধ্যায়
৭৮| ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:১৪
মৌলিক প্রেমিক বলেছেন: যদি কোন দিন দিগন্তের ওপারে মাথা তুলে দাড়াতে পারি আমি তোমাদের সব হিসেব কড়ায় গন্ডায় মিটিয়ে দিয়ে যাব
@ আরফিন ভাই: আমি এই কবিতাটিই খুঁজছি। যদি সম্ভব হয় আমার মেইল এড্রেসে পাঠিয়ে দিতে পারেন। জানেন অনেক দিন ধরে কবিতাটি খুঁজছি। ঠিক কোখাও পাচ্ছি না।
[email protected]
আশাকরি ভালো থাকবেন।
২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:১০
ফারজুল আরেফিন বলেছেন: সিডি থেকে কপি করা গেলো না।
তৃষিত তিমির নামে আবৃতির অডিও সিডিতে কবিতাটি আছে। আবৃতিকার- মেহেদি হাসান ও শামীম সুলতানা তন্দ্রা।
দুঃখিত, এর বেশি পারলাম না। ভালো থাকবেন।
৭৯| ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:৫৫
আদ্রিজা বলেছেন: দারুণ পোষ্ট।
২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:১১
ফারজুল আরেফিন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আদ্রিজা।
৮০| ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ৯:৫২
কসমিক- ট্রাভেলার বলেছেন:
+++++++++++
২১ শে মে, ২০১৪ ভোর ৪:৫৮
ফারজুল আরেফিন বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।
৮১| ২২ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ১০:৩৬
বকুল০৮ বলেছেন:
অনেক ভালো লাগা-
প্রিয়তে রাখলাম।
২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১:১৪
ফারজুল আরেফিন বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
৮২| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:৩৭
মুনতাসির নাসিফ (দ্যা অ্যানোনিমাস) বলেছেন: সোজা প্রিয়তে.....
২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১:১৭
ফারজুল আরেফিন বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ....।
৮৩| ১৫ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ৯:১৪
পুলক দত্ত বলেছেন: প্রিয়তে রাখলাম।
৮৪| ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৫ রাত ৮:১৪
দৃষ্টিসীমানা বলেছেন: প্রিয়তে নিলাম ।আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ,ভাল থাকুন ।
©somewhere in net ltd.
১|
০৯ ই মার্চ, ২০১২ বিকাল ৫:৪৮
আশরাফুল ইসলাম দূর্জয় বলেছেন:
সোজা প্রিয় তে।
প্রথম প্লাস ও।