নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সমাজের প্রতিটি ছোট বড় সমস্যার প্রকৃতি নির্ধারণ করা, আমাদের আচার ব্যবহার, সমাজের প্রচলিত কৃষ্টি কালচার, সৃষ্টিশীলতা, চারিত্রিক উদারতা এবং বক্রতা, অপরাধ প্রবৃত্তি, অপরাধ সঙ্ঘঠনের ধাঁচ ইত্যাদির স্থানীয় জ্ঞানের আলোকে সমাজের সমস্যার সমাধান বাতলে দেয়াই অগ্রসর নাগরিকের দায়িত্ব। বাংলাদেশে দুর্নীতি রোধ, প্রাতিষ্ঠানিক শুদ্ধিকরন এবং টেকনোলজির কার্যকরীতার সাথে স্থানীয় অপরাধের জ্ঞান কে সমন্বয় ঘটিয়ে দেশের ছোট বড় সমস্যা সমাধান এর জন্য লিখা লিখি করি। আমার নির্দিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি আছে কিন্তু দলীয় সীমাবদ্ধতা নেই বলেই মনে করি, চোর কে চোর বলার সৎ সাহস আমার আছে বলেই বিশ্বাস করি। রাষ্ট্রের অনৈতিক কাঠামোকে এবং দুর্নীতিবাজদের সবাইকে তীক্ষ্ণ ভাবে চ্যালেঞ্জ করার চেষ্টা করি। রাষ্ট্র কে চ্যালেঞ্জ করতে চাই প্রতিটি অক্ষমতার আর অজ্ঞতার জন্য, তবে আঘাত নয়। ব্যক্তিগত ভাবে নাগরিকের জীবনমান উন্নয়ন কে দেশের ঐক্যের ভিত্তিমূল মনে করি। ডাটাবেইজ এবং টেকনোলজি বেইজড পলিসি দিয়ে সমস্যা সমাধানের প্রোপজাল দেবার চেষ্টা করি। আমি মূলত সাস্টেইন এবল ডেভেলপমেন্ট (টেকসই উন্নয়ন) এর নিরিখে- অবকাঠামো উন্নয়ন এবং ডিজাইন ত্রুটি, কৃষি শিক্ষা খাতে কারিগরি ব্যবস্থাপনা ভিত্তিক সংস্কার, জলবায়ু পরিবর্তন, মাইক্রো ইকনমিক ব্যাপার গুলো, ফিনান্সিয়াল মাইগ্রেশন এইসব ক্রিটিক্যাল ব্যাপার নিয়ে লিখার চেষ্টা করি। মাঝে মাঝে চোরকে চোর বলার জন্য দুর্নিতি নিয়ে লিখি। পেশাঃ প্রকৌশলী, টেকনিক্যাল আর্কিটেক্ট, ভোডাফোন।
চট্রগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে দেশের প্রায় ৮৭% আমদানি রপ্তানি পরিচালিত হয়। চট্রগ্রাম কাস্টম হাউজে দেশের মোট আমদানির প্রায় ৫৩% এবং রপ্তানির প্রায় ৭০% শুল্ক সংক্রান্ত কাজ সম্পাদিত হয়।
বন্দর এবং কাস্টম হাউজে অটোমেশন বাস্তবায়নের কিছু ইতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হলেও এক্ষেত্রে প্রত্যাশা অনুযায়ী প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রমের কার্যকর সফলতা অর্জিত হয়নি, মূলত অসম্পূর্ণতা, আমলা তান্ত্রিক ধাপ বিলোপ না করা, ম্যানুয়াল ইন্টারভেনশন এবং ধাপে ধাপে স্বাক্ষর নেবার বাধ্যবাধকতা, সফটওয়্যার এর সীমাবদ্ধতা, অনলাইন শুল্ক পরিশোধ, বিলিং মডিউল এর অভাব, ঘুষ এবং তদবারকারি দের দোউরাত্ব ইত্যাদি বহুবিধ কারনে।
কাস্টম হাউজে অটোমেশনের মাধ্যমে কাগজবিহীন অফিস প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হলেও এখনো প্রতিটি ধাপে ম্যানুয়াল স্বাক্ষরের বাধ্যবাধকতা বিদ্যমান।
অন্যান্য সীমাবদ্ধতার মধ্যে রয়েছে অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে কমার্শিয়াল পণ্যের শুল্কমূল্য পরিশোধ চালু না হওয়া; কাস্টম হাউজের কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত সহায়তাকারী হিসেবে অবৈধভাবে ৬০-৭০ জন ব্যক্তির নিয়ম বহির্ভূত নিয়োগ; বন্দরে সংশ্লিষ্ট সকল ব্যবহারকারীদের আগ্রহ ও আধুনিক প্রযুক্তিগত জ্ঞানের অভাব; ইয়ার্ডে কন্টেইনার স্ট্রিপিং বন্ধ করা; বন্দরের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মতে কন্টেইনার টার্মিনাল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিটিএমএস) এর প্রয়োজনীয় মডিউলসমূহ তাদেরকে সরবরাহ না করা বা ব্যবহারের নির্দেশ না দেয়া ইত্যাদি।
এছাড়া শুল্কায়ন ও পণ্য ছাড় প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন পর্যায়ে নিয়ম বহির্ভূতভাবে অর্থ আদায়ের চিত্র প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। বন্দরে অটোমেশনে চুক্তি অনুযায়ী প্রকল্পের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের পূর্বেই প্রকল্পের মূল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে সম্পূর্ণ বিল পরিশোধের অভিযোগ রয়েছে।
এছাড়া শুল্কায়নে বিভিন্ন ধাপে সর্বনি ১০০ থেকে সর্বোচ্চ ৩,০০০ টাকা, কায়িক পরীক্ষণে ১০০-৪,০০০ টাকা; কাস্টম হাউজে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে দৈনিক নূন্যতম ৪৭.৫ লক্ষ টাকা এবং পণ্য ছাড়ে দৈনিক নূন্যতম ১৭.২ লক্ষ টাকা নিয়ম বহির্ভূতভাবে আদায়ের অভিযোগের প্রাক্কলন করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
চট্টগ্রামবন্দর নিয়ন্ত্রণ করছে ‘ফালতু’ ও ‘বদি আলম’ নামের দু’টি চক্র। যারাপ্রতিনিয়তই শুল্কায়নের বিভিন্ন পর্যায়ে নিয়ম-বহির্ভূতভাবে অর্থ লেনদেনকরছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, কাস্টম হাউজের কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগতসহায়তাকারী হিসেবে অবৈধভাবে নিজস্ব নিয়োগে ৬০-৭০ জন ‘বদি আলম’ বা ‘ফালতু’ কর্মরত। এরা শুল্কায়নের বিভিন্ন পর্যায়ে নিয়ম ভেঙে লেনদেন সমঝোতা করে।
কাস্টম হাউজে দুর্নীতির মাত্রার ব্যাপকতা রীতিমত ভীতি জাগানিয়া। আমদানি প্রক্রিয়ায় কন্টেইনার টার্মিনাল ছাড়া বাকি প্রায় সব কাজ অটোমেশনের বাইরে রাখা হয়েছে (কার্গো সার্ভিস, বার্থিং)। রপ্তানি প্রক্রিয়ায় "পন্য স্টাফিং এবং পন্য স্ক্যানিং" এই দুই ধাপ অটোমেশন এর আওতায় না এনে, ম্যানুয়াল সিস্টেম জারি রেখে রপ্তানি কারকদের হয়রানির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। অটোমেশন বাস্তবায়নের পরও- ১। পন্যের শুল্কায়ন প্রক্রিয়ায় নূন্যতম ১১ টি ধাপ- (ছবিতে প্রদর্শিত)
এবং ২। পন্য ছাড় প্রক্রিয়ায় নয়ন্যতম ১৬ টি ধাপ (ছবিতে প্রদর্শিত) অতিক্রম করতে হয়।
দুর্নীতির ধারণা সূচকের বৈশ্বিক মানে এই অতিরিঞ্জিত ধাপ একদিকে ব্যাপক দুর্নীতির ক্ষেত্র কে উর্বর করে অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা কে কমিয়ে ফেলে বহু গুনে।
আমরা সত্যিকারের অটোমেশন চাই বন্দর এবং কাস্টম হাউজ উভয় প্রতিষ্ঠানে। ক্যাপাবল কোম্পানি কে দিতে হবে অটোমেশন এর কাজ। ম্যানুয়াল সফটওয়ার লক এবং আনলক এর সিস্টেম কে একেবারেই সীমিত করে ফেলতে হবে (সফটওয়্যার বাগ ডিফেন্ড ব্যাতিত)। অপ্রয়োজনীয় সার্ভিস ধাপ লোপ করে বন্দর এবং কাস্টম হাউজ উভয় প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বাড়াতে হবে, কর্ম ঘন্টা সেইভ করতে হবে।
সত্যিকারের অটোমেশন এর মাধ্যমে দুর্নীতি থামাতে পারলে বন্দরের জাহাজ নোঙরের এবং পন্য খালাসের সময় কমে আসবে, বন্দরের ধারন ক্ষমতা বহু গুনে বাড়বে। অন্যদিকে কাস্টম হাউজ কে পুরোপুরি অটোমেশনের আওতায় আনা গেলে শুল্ক ফাঁকি কমে গিয়ে রাষ্ট্রের রাজস্ব ব্যয় বহুগুনে বাড়বে। পন্যের আমদানী আর ইম্পোরট বিলের সামাঞ্জস্য রাখা যাবে। কিছু ক্ষেত্রে সফস্টিকেটেড টুলস এর সংস্থান করা গেলে রাষ্ট্রের খাদ্য নিরাপত্তা, জৈব নিরাপত্তাও বাড়ানো যাবে। অন্যথায় ম্যানুয়াল চেক আপ করে মিথ্যা এল সি ঠেকানো সম্ভভপর হবে না।
চট্রগ্রাম বন্দরের ধারণক্ষমতা, পন্য খালাস এবং জাহাজীকরনে ইফেসিয়েন্সি আনা গেলে, এবং সময় ব্যাবস্থাপনা মেইন্টেইন করা গেলে বন্দরের আয় বাড়বে বহু গুনে। সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়বে কাস্টম হাউজের শুক আদায়। শুধু মাত্র এই বর্ধিত আয় দিয়েই, নিজস্ব অর্থায়নে কর্ণফুলী নদীর মোহনায় একটি সেমি-ডিপ সী পোর্ট করা এবং তার ব্যবস্থাপনা সম্ভভ। চট্রগ্রাম বন্দরের সুদীর্ঘ অভিজ্ঞতা কে কাজে লাগিয়ে একটি নিজস্ব অর্থায়ন এবং ব্যবস্থাপনায় চালিত সেমি-ডিপ সী পোর্ট দেশের অর্থনীতি কে অভাবনীয় বেগ দিতে পারে। দুর্নীতি কমিয়ে বিদেশ নির্ভরতা কমিয়ে, নিজস্ব কর্ম পন্থায় আমাদের বন্দর ব্যবস্থাপনা, রাজস্ব- শুল্কায়ন এবং আমদানি রপ্তানি ভিত্তিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড শক্ত কাঠামোর উপর দাঁড়িয়ে উঠুক, এই সংকল্পই হক আগামীর বন্দর ব্যবস্থাপনার বাস্তব ভিশন।
দুর্নীতি থামাতে হবে, এখনই।
দুর্নীতিবাজ আমলা - ব্যবসায়ী- রাজনিতিক নিপাত যাক,
বাংলাদেশ এগিয়ে যাক।
তথ্য সুত্রঃ টি আই বি গবেষণা প্রতিবেদন।
গবেষণা সময়ঃ জানুয়ারি-জুন ২০১৪
©somewhere in net ltd.