নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব,ইইই প্রকৌশলী। মতিঝিল আইডিয়াল, ঢাকা কলেজ, বুয়েট এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র।টেলিকমিউনিকেশন এক্সপার্ট। Sustainable development activist, writer of technology and infrastructural aspects of socio economy.

এক নিরুদ্দেশ পথিক

সমাজের প্রতিটি ছোট বড় সমস্যার প্রকৃতি নির্ধারণ করা, আমাদের আচার ব্যবহার, সমাজের প্রচলিত কৃষ্টি কালচার, সৃষ্টিশীলতা, চারিত্রিক উদারতা এবং বক্রতা, অপরাধ প্রবৃত্তি, অপরাধ সঙ্ঘঠনের ধাঁচ ইত্যাদির স্থানীয় জ্ঞানের আলোকে সমাজের সমস্যার সমাধান বাতলে দেয়াই অগ্রসর নাগরিকের দায়িত্ব। বাংলাদেশে দুর্নীতি রোধ, প্রাতিষ্ঠানিক শুদ্ধিকরন এবং টেকনোলজির কার্যকরীতার সাথে স্থানীয় অপরাধের জ্ঞান কে সমন্বয় ঘটিয়ে দেশের ছোট বড় সমস্যা সমাধান এর জন্য লিখা লিখি করি। আমার নির্দিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি আছে কিন্তু দলীয় সীমাবদ্ধতা নেই বলেই মনে করি, চোর কে চোর বলার সৎ সাহস আমার আছে বলেই বিশ্বাস করি। রাষ্ট্রের অনৈতিক কাঠামোকে এবং দুর্নীতিবাজদের সবাইকে তীক্ষ্ণ ভাবে চ্যালেঞ্জ করার চেষ্টা করি। রাষ্ট্র কে চ্যালেঞ্জ করতে চাই প্রতিটি অক্ষমতার আর অজ্ঞতার জন্য, তবে আঘাত নয়। ব্যক্তিগত ভাবে নাগরিকের জীবনমান উন্নয়ন কে দেশের ঐক্যের ভিত্তিমূল মনে করি। ডাটাবেইজ এবং টেকনোলজি বেইজড পলিসি দিয়ে সমস্যা সমাধানের প্রোপজাল দেবার চেষ্টা করি। আমি মূলত সাস্টেইন এবল ডেভেলপমেন্ট (টেকসই উন্নয়ন) এর নিরিখে- অবকাঠামো উন্নয়ন এবং ডিজাইন ত্রুটি, কৃষি শিক্ষা খাতে কারিগরি ব্যবস্থাপনা ভিত্তিক সংস্কার, জলবায়ু পরিবর্তন, মাইক্রো ইকনমিক ব্যাপার গুলো, ফিনান্সিয়াল মাইগ্রেশন এইসব ক্রিটিক্যাল ব্যাপার নিয়ে লিখার চেষ্টা করি। মাঝে মাঝে চোরকে চোর বলার জন্য দুর্নিতি নিয়ে লিখি। পেশাঃ প্রকৌশলী, টেকনিক্যাল আর্কিটেক্ট, ভোডাফোন।

এক নিরুদ্দেশ পথিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলাদেশ পাওয়ার সিস্টেম মাস্টার প্ল্যান এবং এনার্জি মিক্স ২০৩০ পর্যালোচনা

০৪ ঠা মে, ২০১৬ ভোর ৫:৫৫



দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সমন্বয়ে জাইকার সহায়তায় টোকিও ইলেক্ট্রিক পাওয়ার কোম্পানি বাংলাদেশ পাওয়ার সিষ্টেম মাস্টার প্ল্যান-২০১০ প্রণয়ন করেছে। ফেব্রুয়ারি ২০১১ সালে প্রকাশিত ২০৩০ সাল পর্যন্ত ৮% জিডীপি বৃদ্ধির মেঠডলজি ভিত্তিক এই মহাপরিকল্পনায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।এখানে প্রাইমারি ফুয়েল সোর্স স্ট্রাটেজিতে অভ্যন্তরী কয়লা হতে ১১২৫০ মেগাওয়াট (২৯,০৭%) এবং আমদানিকৃত কয়লা হতে ৮,৮০০ মেগা ওয়াট (২১,৭১%)-মোট ৫০.৭৮% বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা বলা হয়েছে। মাস্টার প্ল্যান-২০১০ অনুযায়ী সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে এবং পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি গ্যাস, তরল জ্বালানি, ডুয়েল ফুয়েল, নিউক্লিয়ার এবং নন নিউক্লিয়ার নবায়নযোগ্য জ্বালানি শক্তি ব্যবহার করে নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ এর কথা বলা হয়েছে। এর বাইরে ভারত ভিত্তিক ক্রস বর্ডার বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে।

ঠিক এই সময়ে জাইকার তত্ত্বাবধানে বিগ-বি (The Bay of Bengal Industrial Growth Belt," or BIG-B”) এর অনূকূলে বাংলাদেশ পাওয়ার সিষ্টেম মাস্টার প্ল্যান-২০১৫ এর কাজ এগিয়ে চলছে। এখানে পিএসএমপি-২০১০ থেকে ঠিক কি কি ডেভিয়েশান আসে তা দেখার এবং পর্যালোচনার অপেক্ষায় আছি আমরা। এটা অনুমেয় যে এই বিগ-বি পরিকল্পনায় মাতারবাড়ি-মহেশখালি কেন্দ্রিক এক বিশাল কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ এর হাব গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে যা প্রস্তাবিত পায়রা পোর্ট পর্জন্ত এক্সটেন্ডেড হবে (এমনকি মংলা!)। মহেশখলী-মাতারবাড়ি বেল্টে তাপবিদ্যুতের হাবের সাথে এল এন জি পোর্ট পরিকল্পনা নিয়েও কথা হচ্ছে।

পিএসএমপি ২০১০
প্রথমেই পাওয়ার সিস্টেম মাস্টার প্ল্যান ২০১০ এর উৎপাদনের মিক্সের দিকে একটি হাই লেভেল রিভিউ দেয়া প্রয়োজন।

ক। কয়লা ভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র


মোট টার্গেট ৩৮৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ এর বিপরীতে শুধু কয়লাভিত্তিক ১৯ হাজার ৬৫০ মেগাওয়াট উৎপাদনের কথা বলা হয়েছে যা মোট উৎপাদন টার্গেটের ৫০.৭৮%।

আমদানিমুখী কয়লা ভিত্তিক উৎপাদন টার্গেটের (৮৮০০ মেগাওয়াট) এর অনুকূলে ইতিমধ্যেই ৫টি ১৩২০ মেগাওয়াট এবং ১ টি ৭০০ মেগাওয়াট সহ মোট ৭৩০০ মেগাওয়াট পরিকল্পনা জিটুজি বেসিসে বিভিন্ন দেশের সাথে চুক্তি করা হয়েছে অথবা আন্ডারস্ট্যান্ডিং এ পৌঁছানো হয়েছে। এর বাইরে আরো কিছু বৃহৎ আমদানী নির্ভর কয়লা ভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের চুক্তির কাজ এগিয়ে নেয়া হচ্ছে।

এরই প্রেক্ষিতে দেশের অন্যান্য রিসোর্স ডোমেইন এর সাথে ডার্টি ফুয়েল এনার্জি কোল ব্যাপক ব্যবহার পরিকল্পনার সামঞ্জস্য রাখার নিরিখে এই অঞ্চলের অন্য কিছু গুরুত্বপূর্ন ম্যাক্রো ইকোনমিক ভ্যারিয়াবল সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে একটি দীর্ঘ এবং গুণগত নাগরিক আলোচনার সূত্রপাত করা দরকার। কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নীতি, বিগ-বি এবং রাষ্ট্রীয় অঙ্গীকার

আশঙ্কা থেকে যায় যে, পেপার ওয়ার্কসে বর্ণিত দুষ্প্রাপ্য উচ্চ মান কয়লা থেকে সরে এসে নিন্ম মানের ভারতীয় কয়লার বাজারে পরিণত হবে বাংলাদেশ এবং এতে বিষিয়ে উঠবে বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ উপকূলীয় অঞ্চল এবং সুন্দরবনের ইকো-সাইকেল। আমরা চাই (১) সরকার মংলা ভিত্তিক কোল প্ল্যান (যেমন-রামপাল) থেকে সরে পায়রা কিংবা মাতারবাড়ী পোর্টের অনুকূলে সকল কয়লা ভিত্তিক প্রকল্প গলাচিপা নদীর পশ্চিমে (গলাচিপা-গলাচিপা-কলাপাড়া-কুয়াকাটা জোন) সরিয়ে আনুক। (২) শুধু মাত্র উচ্চ মান কয়লা ব্যবহার এর গ্যারান্টি ক্লজ দিক এবং (৩) পরিশোধন ব্যবস্থা, ব্যবহৃত কয়লা এবং এক্সজস্ট এর উপর কোয়ার্টারলি ইন্ডিপেন্ডেন্ট আন্তর্জাতিক ওডিট নিশ্চিত করুক এবং (৪) পরিবেশ গত দায়বদ্ধতার খাতিরে শুধু সরকারি কিংবা জি-টু-জি'র বাইরে বেসরকারি খাতে কয়লা ভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র উন্মূক্ত না করুক।


খ। নিউক্লিয়ার সোর্স (রুপপুর)

রুপপুর থেকে ২০৩০ এ ৪০০০ মেগাওয়াট আসার কথা বলা হয়েছে। রুপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্পটি শুর থেকেই ভূ-চ্যুতি এবং নদী অববাহিকার পলিঘঠিত এলাকার সাইট সিলেকশন, সমীক্ষা, সম্ভাব্য এক দশক পরের উৎপাদনের সময় বিবেচনায় অপেক্ষাকৃত পুরানো প্রজন্মের রিয়েকটর, রিয়েক্টর শীতলীকরণ এবং চরম অস্পষ্ট পরমাণু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছে। উপরন্তু আন্তর্জাতিক কষ্ট স্টান্ডার্ডের বিপরীতে এর অতি উচ্চ কষ্ট মডেল (সমীক্ষা, প্ল্যান্ট ইন্সটলেশন, ইউরেনিয়াম ক্রয়, অপারেশন) নিয়ে ব্যাপক অস্পষ্টতা বিদ্যমান। বিশেষ ভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে অস্পষ্টতা সাস্টেইনেবল ডেভেলপমেন্ট এক্টিভিস্ট এবং বুদ্ধিজীবীদের ভাবিয়ে তুলেছে। আন্তর্জাতিক এটমিক এনার্জি এজেন্সির নীতিমালা অনুযায়ী প্রত্যেক দেশকে তার পারমানবিক বর্জ্যের দায়িত্ব নিজেকেই নিতে হয়। ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকারী দেশ কিংবা সব্বারোহের সোর্স - বর্জ্য গ্রহণে কোন বাধ্যবাধকতা রাখেনা। উপরন্তু এক্ষেত্রে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য আন্তর্জাতিক কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে বলেও সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায় না। এখনও পর্জন্ত পারমানবিক বর্জ্য বিষয়ক আন্তর্জাতিক কনভেনশনটিরও (Convention on the Safety of Spent Fuel Management and on the Safety of Radioactive Waste Management 1997 ১৯৯৭) কোন পার্টি নয় বাংলাদেশ। এর বাইরে পরমাণু প্রযুক্তির টেকনোলজি ট্রান্সফার বিষয়ক বাধ্যবাধকতা বিষয়ক কোন ইউন্ডো স্থাপিত না হওয়ায় এর অপারেশন খরচ এবং জটিলতা বিশয়ক প্রশ্ন থেকে গিয়েছে।

উল্লেখ্য শুরুতেই কয়েক দফায় নির্মাণ সময়সীমা বাড়িয়ে কেন্দ্রটি থেকে ২০২১ সালে ১২০০ ও ২০২২ সাল নাগাদ ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করার কথা রয়েছে। এমতাবস্থায় ২০৩০ সালে কেন্দ্রটি প্রতিশ্রুত ৪০০০ মেগাওয়াট যা মোট উৎপাদনের ১০.৩৪% জেনারেশনে(কিংবা সেই অনুকূলে সঞ্চালনে) সক্ষম না হলে টার্গেট জেনারেশনে পৌঁছার কোন বিকল্প রয়েছে কিনা তা এক বিরাট প্রশ্ন!



গ। পিএসএমপি ২০৩০- নন নিউক্লিয়ার রিনিউএবল এনার্জি খাত
নবায়নযোগ্য খাতে কাপ্তাই (২৩০ মেগাওয়াট) ক্যাপাসিটি সহ ওয়েল-হাইড্রো এবং নবায়নযোগ্য খাতের মোট কন্ট্রিবিউশন রাখা হয়েছে ২৭০০ মেগাওয়াট (৬.৯৮%) যা নবায়নযোগ্য শক্তির খাতকে নন পটেনশিয়াল করে ডিফাইন করারই নামান্তর। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, আন্তর্জাতিক পর্যায়ের আধুনিক যেকোন এনার্জি মিক্সে নবায়ন যোগ্য জ্বালানী সম্ভাবনাকে ২০% পর্জন্ত এক্সপ্লোর টার্গেটে রাখা হয়। টেকসই এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানী উন্নয়ন(স্রেডা) এর রোডম্যাপে ২০২১ এর মধ্যে মোট ২০৮ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ, ২০০ মেগাওয়াট বায়ুবিদ্যুত, ৬ মেগাওয়াট বায়োমাস, ১ মেগাওয়াট বায়োগ্যাস এর কথা বলা হয়েছে। এই হারে পরবর্তি ১০ বছরে ২০৩০ সালে মোট জ্বালানীর ১০% নন নিউক্লিয়ার সোর্স থেকে পাবার অনানুষ্ঠানিক অঙ্গীকার কোন ভাবেই পূরণ হবে না।



গ-১। সোলার

গবেষণায় দেখা গিয়েছে বাংলাদেশের গড় সোলার ইর‍্যাডিয়ান্স পশ্চিম ইউরোপের গড় বাৎসরিক নূন্যতম ১ দশমিক ৪৭৫ গুন বেশি হলেও ২০৩০ এনার্জি মিক্সে সোলার গ্রোথ এর এগ্রেসিভ এবং উল্লেখ্যযোগ্য কোন টার্গেট ধরা হয়নি। যদিও সোশ্যাল সোলার খাতে কিছু কাজ এগিয়ে যাচ্ছে এবং ২১০৬ এ নতুন কিছু পাইলট (সোলার সেচ এবং কমার্শিয়াল রুফটপ সহ ৩৪০ মেগাওয়াট) এর পরিকল্পনা হয়েছে সামগ্রিক ভাবে গ্রীড টাই আপের উপযোগী বাণিজ্যিক মডেলে সৌর প্ল্যান্ট, সোলার থার্মাল প্ল্যান্ট, বাণিজ্যিক রুফটপ, আবাসিক রুফটপ, গ্রামীণ এবং শুহুরে সৌর সোলার হোম, সোলার সেচ ইত্যাদি ম্যাক্রো এবং মাইক্রো ক্যাটাগরি ভিত্তিক কোন বিশেষ রোডম্যাপ প্রণয়ন করা হয়নি। সৌর শক্তি বাংলাদেশের একমাত্র পটেনশিয়াল রিনিউএবল সোর্স হলেও এই খাত বিকাশের কার্জকর বাণিজ্যিক উদ্যোগ শুরুই হয়নি।

গ-২।হাইড্রো-ইলেকট্রিক, টাইডাল ওয়েভ, বার্জ মাউন্টেইন
কাপ্তাই হাইড্রো-ইলেকট্রিক প্রকল্পের ২৩০ মেগাওয়াটের বাইরে এর আধুনিকায়ন এবং ক্যাপাসিটি বর্ধনের কোন ধারণা পাওয়া যায়নি। বড় ধরণের পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য সাঙ্গু (১৪০ মে. ওয়াট) এবং মাতামুহুরীতে(৭৫ মে.ওয়াট) দুইটি স্থান সনাক্ত করা হলেও কোন কারিগরি সমীক্ষা কিংবা ডীজাইন প্ল্যান শুরু হয়নি। তাছাড়া বাংলাদেশের সমতল ভূমির জন্য পানি বিদ্যুতের সম্ভাবনা সীমিত হয়ে পড়েছে। কয়েকটি সমীক্ষার মাধ্যমে কয়েকটি স্থান সনাক্ত করা হয়েছে যার সম্ভাবনা ১০ কি.ওয়াট থেকে ৫ মে.ওয়াট।

টাইডাল ওয়েভঃ স্বাভাবিক জোয়ার-ভাটা থাকা নদীর মোহনায় অথবা উপকূলীয় সমুদ্রস্রোত কাজে লাগিয়ে আধুনিক জলবিদ্যুৎ প্রকল্প (টাইডাল ওয়েব টার্বাইন) নিয়ে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে কথা হয়েছে অতি সামান্য, কিন্তু এ ধরনের প্রকল্পের সমীক্ষা কোন হয়নি। পাইলটের পরেই শুধু বোঝা যাবে— কী পরিমাণ পটেনশিয়াল রয়েছে এ খাতে।

বার্জ মাউন্টেইনঃ একই কথা প্রযোজ্য বার্জ মাউন্টেইন টাইপ প্রকল্পের বেলায়, কাপ্তাই প্লান্টে এ প্রকল্পের সমীক্ষা এবং পাইলট করা যায়। উদ্ভাবনী এসব খাতে বিলম্ব দুঃখজনক। হাইড্রো রিসোর্স স্বল্পতার জনিত কারণ এর বাইরে সঠিক পরিকল্পনার অভাব এই খাতে কোন অগ্রগতি আনতে পারেনি ষাটের দশকের পর থেকে। ২০৩০ পাওয়ার মাস্টার প্ল্যানেও এই খাত এক্সপ্লোরের তাগাদা নেই।

গ-৩। বায়ুবিদ্যুত
উইন্ড সার্ভে এবং উইন্ড ম্যাপিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থা নাজুক। পতেঙ্গা, টেকনাফ, চরফ্যাশন, কুয়াকাটা, কুতুবদিয়া এবং নোয়াখালীতে যেসব সার্ভে এবং আবহাওয়া পরিসংখ্যান নেয়া হয়েছে তাতে দেখা যায় মাত্র ৩-৪ মাসে বায়ু বিদ্যুতের কাট অফ স্পিডের উপরে (৭ মিটার/সেকেন্ড) গড় বায়ু প্রবাহ রয়েছে। ফেনির মুহুরি এবং কুতুবদিয়াতে যে দুটি পাইলট প্রকল্প হয়েছে তার ফলাফল আশাব্যঞ্জক নয়! বাতাসের গতিবেগের সঙ্গে কিউবিক রিলেশনে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয় বলে আমাদের উইন্ড এনার্জির ভবিষ্যাৎ আসলেই নাজুক। এমতাবস্থায় ২০২১ টার্গেট রোডম্যাপে রাখা ২০০ মেগাওয়াট বায়ু বিদ্যুতের অবাস্তব পরিকল্পনা নিশ্চিত ভাবেই বুমেরাং হতে যাচ্ছে।

গ-৪।বায়োমাস (ল্যান্ড ফিল ওয়েস্ট গ্যাস)
বাংলাদেশে খুব ছোট এবং মধ্য পরিসরে কার্যকর হতে পারে কিন্তু দুঃখজনক হলো, এ খাতগুলো অনাবিষ্কৃত। এদিকে বায়োগ্যাস জনপ্রিয়তা পায়নি ঠিক কিন্তু বায়োমাস ও বায়োগ্যাসের লিকুইডিফিকেশন নিয়ে পাইলটও হয়নি। অর্থাৎ ১৭ কোটি মানুষের দেশে অধিক প্রাপ্য পচনশীল ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট থেকে রিনিউএবল এনার্জি তৈরির কোন পরিকল্পনাই নেই। ২০৩০ এ এই দুটি খাতে মাত্র ৭ মেগাওয়াটের পাইলটের কথা বলা হয়েছে যা চরম অগ্রহণযোগ্য। কিছু ক্ষেত্রে ধানের তুষ (রাইস হাস্ক) থেকে গ্যাসিফিকেশন পদ্ধতিতে অতি স্বল্প পরিসরে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাইলট হয়েছে, কিন্তু তুষের বিকল্প ব্যবহার থাকায় তা বেশি দূর এগোয়নি।

আমরা দেখছি একদিকে পটেনশিয়াল সোলার এনার্জি গ্রোথ পরিকল্পনা খুবই কনজারভেটিভ, অন্যদিকে নন পটেনশিয়াল বায়ু বিদ্যুতের পরিকল্পনা খুবই এগ্রেসিভ। হাইড্রো, সোলার, বায়োমাস এবং উইন্ড রিসোর্সের এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের নন নিউক্লিয়ার রিনিউএবল পাওয়ার পরিকল্পনাকে যথেষ্ট আনাড়ি এবং অসুম্পূর্নই বলা চলে।


ঘ। ক্রস বর্ডার ট্রেডঃ
২০৩০ টার্গেটে ৩৫০০ মেগাওয়াটের প্রভিশন রেখে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানী করার ব্যাপারে সর্বাধিক গুরুত্ত্ব দিচ্ছে এবং ইতিমধ্যেই ৫+১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেনা হচ্ছে। ভবিষ্যতে এই সংখ্যাটা ৩,৫০০ মেগাওয়াট থেকে ৬,৫০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত করার জন্য স্ট্রং লবি কাজ করছে।

নেপাল, ভূটান এবং ভারতের সুবিশাল জলবিদ্যুত সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারলে ক্রস বর্ডার ট্রেড এগিয়ে যাবে তবে সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের জ্বালানী নিরাপত্তা এক বিশাল ক্রাইসিস পয়েন্টে চলে যাবে যদি এই আমদানিগুলো শুধু ভারতের মধ্যস্ততায় হয়। ভারতের মধ্যস্ততা ছাড়াই সরাসরি জি টু জি ভিত্ততেই শুধু নেপাল, ভূটান এবং মিয়ানমার থেকে সরাসরি বিদ্যুৎ আমদানিতেই আগ্রহী থাকা চাই।

এখানে আরেকটি বিষয় প্রাধান্য দেয়া দরকার সেটি হোল, জ্বলানি নিরাপত্তা যাতে শুধু মাত্র একটি দেশ বা তার মিত্রদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত না হয়। প্রতিবেশী নেপালের বিভীষিকা ময় জ্বালানী সংকট থেকে বাংলাদেশ এর শিক্ষা নেয়া আশু কর্তব্য।



ঙ। অভ্যন্তরীণ গ্যাস
অভ্যন্তরীণ ন্যাচারাল গ্যাস এর যে যোগান তার ৬০ ভাগ সরবরাহ করেছে বিদেশী (শেভরনঃ ৫৬%, তাল্লো ৪%) কোম্পানীগুলা আর ৪০ ভাগের যোগানদাতা পেট্রোবাংলা নিয়ন্ত্রানাধীন (বিজিএফসিএল ৩০%, এসজিএফএল ৫% আর বাপেক্স ৫%) কোম্পানীগুলা। ২১ টা গ্যাসকুপ যার ১৮টি সরকারী মালিকানাধীন আর বাকী তিনটা বিদেশী আইওসি কোম্পানী পি,এস,সি (প্রোডাক্ট শেয়ারিং কন্ট্রাক্ট) এর আওতাধীন। বর্তমানে আমাদের গ্যাস এস্টিমেশন হচ্ছে প্রায় ২৭ টিসিএফ, ইতিমধ্যে আমরা ১৩ টিসিএফ খরচ করে ফেলেছি, ২০২৫ এর পরে অভ্যন্তরীণ গ্যাস ব্যবহারের একটা ন্যারো স্কোপ থাকবে যা থেকে অনূর্ধ ১০০০-১৫০০ মেগাওয়াট উৎপাদন করা যাবে হয়ত।

বর্তমানের গ্যাস চাহিদা নিন্ম রূপ-
পাওয়ার জেনারেশন ৪১%, সার উতপাদন-৭%, ইপিজেড/ইন্ডাস্ট্রি ১৭%, ক্যাপ্টিভ (ব্যক্তি খাত) ১৭%, সি এন জি ৫% , গ্রিহস্থলীর চাহিদা-১২%।

সার উৎপাদন, সি এন জি এবং গ্রিহস্থলীর গ্যাস চাহিদা গুলো কৃষি, নাগরিক কম্ফোর্ট এর দিক, সামাজিক এবং মানবিক দায়বদ্ধতার সাথে জড়িত বিধায় এই খাতগুলোতে অভ্যন্তরীণ গ্যাসের জোগান দেয়া বন্ধ করা যাবে না। উল্লেখ্য এই খাত গুলোতে চাহিদা বৃদ্ধি পাবে যা বিদ্যুৎ উতপাদনে অভ্যন্তরীণ গ্যাসের ব্যবহারকে ন্যারো উইন্ডোতে নিয়ে আসবে।


চ। এল এন জি আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক বেড়াজালে

এনার্জি মিক্স ২০৩০ তে গ্যাস এবং এলেনজি থেকে মোট ৮৮৫০ মেগাওয়াটের কথা বলা হয়েছে যা মোট উৎপাদনের ২২,৮৭%। উপরের আলোচনা এবং বাস্তবতা হতে এটা স্পষ্ট, এই ২২,৮৭% এ অভ্যন্তরীণ গ্যাস মাত্র ১৫ শতাংশ ভুমিকা নিবে। বাকি ৮৫% আসবে এল এন জি থেকে।

এলপিজিঃ
বর্তমানে বিভিন্ন ছোট এবং মধ্যম আকারের ব্যবসায় সীমিত আকারে এলএনজি ( mixes-primarily propane, primarily butane) ব্যবহৃত হচ্ছে। বিপিসি এবং ৬টা বেসরকারি কোম্পানি সীমিত আকারে তাদের মংলা এবং চট্রগ্রাম ভিত্তিক নিজস্ব ছোট ছোট এলপিজি টার্মিনালের মধ্যমে আমদানি করছে। দুটি বেদেশি কোম্পানির মধ্যে LPG giant LAUGFS(Srilanka) এবং TOTAL GAZ (France ) রয়েছে। দেশি কোম্পানি গুলো মংলা ভিত্তিক এল পি জি হাব তৈরির পরিকল্পনায় আছে। তবে এই খাত লার্জ স্কেইল পাওয়ার জেনারেশনের অনুকুলে নয়।

এল এন জিঃ
২০৩০ টার্গেটের অনূকূলে আশুগঞ্জ সিদ্ধিরগঞ্জ ভেড়ামারা সিরাজগঞ্জ শাহজীবাজার এইসব বর্তমান এবং নতুন লোকেশনে ২২৫-৫০০ মেগাওয়াটের কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্ল্যান্ট এর নতুন ইউনিট পরিকল্পনায় আছে। তবে অবাক করা বিষয় হচ্ছে কোন সরকারই কখনই জেনারেল ইলেক্ট্রিক এর মত বড় বড় ম্যানুফাকচারার ভিত্তিক (লোড সেন্টারের কাছাকাছি অবস্থিত) মেগা প্ল্যান্ট (৩০০০ মেগা ওয়াট) এবং তার অনুকূলে সঞ্চালন ব্যবস্থা গড়ার প্ল্যান করেনি। এতে ছোট ছোট প্ল্যান্টে নিন্ম ইফেসিয়েন্সির গ্যাস জেনেরেটর যে পরিমান জ্বালানী পুড়ছে তার বিপরীতে উৎপাদিত গ্যাস কমই আসছে।

৮৮৫০ মেগাওয়াটের অনুকূলে বাংলাদেশের দরকার মিয়ানমার, শ্রীলংকা, কাতার, আজারবাইজান-তাজিকিস্তান রাশিয়া কিংবা ইউক্রেইন এর মত বড় বড় এল এন জি প্রডিউসারদের সাথে সরাসরি জ্বালানী কূটনীতিতে আসা এবং এই অঞ্চলের আন্তর্জাতিক পাইপলাইনে যুক্ত হবার কৌশলে জড়ানো। আজারবাইজান-তাজিকিস্তান থেকে ইরান-আফগানিস্তান-পাকিস্তান-ভারত এই পাইপলাইনে যুক্ত হওয়া বাংলাদেশের ভারত কেন্দ্রিক একমুখী কূটনীতিতে পরাস্ত হবে। মিয়ানমারের সাথে সম্পর্ক চরম অবনতিতে। অন্যদিকে অবাক করার বিষয় হচ্ছে ভারতকে দেয়া স্থল, নৌ, বিদ্যুৎ এবং ইন্টারনেট ট্রানজিটের বিপরীতে বাংলাদেশ মিয়ান্মার-ভরত গ্যাস লাইনে যুক্ত হবার দাবি উত্থাপনই করেনি। কাতার এর সাথে সম্ভাব্য চুক্তি মধ্য প্রাচ্য এবং ওআইসির সাথে সরকারের বাজে সম্পর্কের রেষে পড়তে পারে। সবমিলিয়ে এই মুহুর্তে সরকার শক্তিশালী এন এন জি ভিত্তিক জ্বালানী পররাষ্ট্রনীতির অনুকূলে কোন ভাল অবস্থানে নেই, এর ফলে আমরা দেখতে পাচ্ছি কয়লা ভিত্তিক প্রকল্পের অতি এগ্রেসিভ পরিকল্পনা। এমনকি রাশিয়ার সাথে অনিশ্চিত পরমানু প্রকল্পের চাইতে স্ট্রং গ্যাস ভিত্তিক জ্বালানি ডিলে যাওয়া সমীচীন।

এখানে একটা বিরাট প্রশ্ন হচ্ছে প্রাইমারী জ্বালানী সোর্স এর অন্যতম এল এন জি পরিকল্পনা ব্যর্থ না হবার জন্য আমাদের প্ল্যান-বি কি?

মোট কথা ২০৩০ এনার্জি মিক্সে ৫০% এর বেশি সরাসরি কোলের কথাই বলা হয়েছে, একটি ন্যারো অভ্যন্তরীণ গ্যাস উইন্ডো সহ ২২.৮৭% এলেঞ্জি ভিত্তিক বিদ্যুৎ, ১০% নিউক্লিয়ার ভিত্তিক উৎপাদনের কথা বলা হয়েছে। এছাড়া আছে আঞ্চলিক বাজার থেকে বিদ্যুৎ ক্রয় এবং সীমিত পরিসরে তেল ভিত্তিক উৎপাদনের কথা। এখানে সুস্পষ্ট হয়েছে যে নবায়নযোগ্য খাতে বাংলাদেশ তাঁর সৌর শক্তির পটেনশিয়ালকে আইডেন্টিফাই করতে ব্যর্থ হয়েছে।


কিন্তু ১০% নিউক্লিয়ার রিনিউএবল এবং ২২.৮৭% এলএনজি ভিশনের জন্য যেরকম শক্তিশালী জ্বালানী কূটনীতি দরকার তার অনুকূলে বাংলাদেশে গনতন্ত্রায়ন এবং ইন্সটিটিউশনাল গভর্নেন্স না থাকায় এই পরিকল্পনা উচ্চ ভিলাশ হয়ে রইবে।
এর বিপরীতে ব্যাপক পরিসরে মাইক্রো লেভেলে শক্তিশালী বিজনেস কেইস সহ সোলার ভিত্তিক নাগরিক এবং পরিবেশ বান্ধব নবায়নযোগ্য খাতের অনুপুস্থিতিও হতাশাজনক। সে ক্ষেত্রে কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ উৎপাদনের ভলিউম অতি অধিক হারে বৃদ্ধির সম্ভাবনাই প্রবল। এরই নিরিখে বলা যায় ২০৩০র বাস্তব মিক্সে ৩৮৭০০ মেগাওয়াট এর ৭০% এই ডার্টি এনার্জি কোল ডমিনেট করলেও সেটা অবাক করা বিষয় হবে না। এটা খুবই চিন্তার কারণ, কেননা কয়লা প্রাণ, পরিবেশ এবং প্রতিবেশের সরাসরি শত্রু। অন্যথায় আমদানি ভিত্তিক বিদ্যুৎ ই ভরসা। এতে তিনটি প্রধান সমস্যা- ১। জ্বালানি নিরাপত্তা একটি দায়িত্বীহীন এবং অর্থনৈতিক ভাবে চরম অনুদার দেশের কব্জাগত হওয়া। ২। ফারনিশড প্রডাক্ট কেনায় দেশের কর্মসংস্থানের সুযোগ বেহাত হওয়া। ৩। বিদ্যুৎ সেক্টরে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান পিডিবির ভুমিকা কমে যাওয়া। ফারনিশড প্রডাক্ট বাংলাদেশে ঢুকানোর সাথে সাথে ভারত আমাদের নিজস্ব সঞ্চালন ব্যবস্থায় ইন্টারফেয়ার করবে, ইতিমধ্যেই পিজিসিবি আউট সোর্সের একটা গুঞ্জন রয়েছে। এরকম আরো কিছু প্যাসিভ সমস্যা তৈরি হচ্ছে যা ভবিষ্যতে খুব ক্রিটিক্যাল রুপ নিবে। তবে আঞ্চলিক সহযোগিতা এবং পারস্পরিক বুঝাপড়া তৈরির জন্য সীমিত আকারে (যা জ্বালানী নিরাপত্তায় কোন ক্রিটিক্যালিটি না আনে) ক্রস বর্ডার লেনদেন অবশ্যই সমর্থন যোগ্য কিন্তু অবশ্যই সেটি বাই-ডিরেকশনাল ডীল হতে হবে। একমূখী আমদানি নীতির বিপরীতে দ্বিমুখী আমদানি-রপ্তানির মডেল চাই আমরা।

আমরা দেখতে পাচ্চি সরকার ২০৩০ মিক্সে লিটারেলি ৫০%+ কিন্তু বাস্তবতায় আনুমানিক ৭০% তাপবিদ্যুৎ ধরে এগুচ্ছে। নিউক্লিয়ার, এন এন জি এবং নন নিউক্লিয়ার রিনিউএবল ব্যর্থ হলে সরকারের সামনে মাত্র ২টি পথ খোলা। কয়লা এবং ভারত ভিত্তিক আমদানি। ১ম টি পরিবেশ গত ক্রাইসিসে এবং ২য়টি আঞ্চলিক/জ্বালানী নিরাপত্তা ক্রাইসিসে ফেলবে দেশকে। অন্যদিকে নির্বাচন বিহীন সরকার ব্যবস্থা এবং আইনের শাসনের অবনতিতে আন্তর্জাতিক লেজেটিমেসিতে পিছিয়ে পড়ে নিউক্লিয়ার এবং এল এন জি সিকিউর করতে সরকার ব্যর্থ হতে পারে। আর সোলারে ব্যর্থ হবে কার্জকর গ্রীড টাই আপ বেইড সোলার মডেলের পরিকল্পনার অভাবে, দেশে এখনো স্মার্ট গ্রীড নেই, নেই রিমোট এলাকায় ডিসি ভিত্তিক কমিউনিটি গ্রীড পরিকল্পনা-কিংবা সোলার এর উপযোগী ডিসি এপ্লাইয়েন্স এর ব্যবস্থা।


এই বাস্তবতার প্রেক্ষিতে আলোচনার পরবর্তিতে পর্যায়ে প্রবেশ প্রবেশ করবো যেখানে পাওয়ার পরিকল্পনাকে সঞ্চালন এবং বিতরণ কাঠামোর সাথে ইন্টিগ্রেটেড করার কথা বলা হবে এবং কয়লা ভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরিকে অত্যন্ত কঠোর মান নিয়ন্ত্রণের মধ্য দিয়ে নেয়ার তাগাদা দিয়ে কিছু স্ট্রাটেজিক চ্যালেঞ্জ নেয়ার আহ্বান জানানো হবে রাষ্ট্রীয় ইন্সটিটিউশন গুলোকে তথা রাষ্ট্রকে। (২য় পর্বে)।


বিদ্যুৎ পরিকল্পনা দুরদর্শী হোক,
সম্পদ ব্যবস্থাপনা নাগরিক বান্ধব হোক,
বাংলাদেশ এগিয়ে যাক।



সোর্সঃ
১। Click This Link
২। Click This Link
৩। Click This Link

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা মে, ২০১৬ দুপুর ১:৩৯

পুলহ বলেছেন: বরাবরের মতই চমৎকার পোস্ট।
"জ্বালানী কূটনীতি"র কনসেপ্টটা নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে বাংলাদেশের জন্য, আপনি যথার্থই বলেছেন।
একটা দেশের প্রাইমারি ফুয়েল নিরাপত্তার জন্য যদি আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর হেভিলি ডিপেন্ড করা লাগে- তবে সেটা নিঃসন্দেহে আশংকার কথা।
আমার মনে হয় না ভাই বাংলাদেশে রিনিউয়েবল এর খুব একটা ভালো প্রস্পেক্ট আছে। যদিও অনেক ক্ষেত্রেই এ সেক্টরের পটেনশিয়াল এখনো আন-এক্সপ্লোরড (আপনি যেমনটা লিখেছেন), তারপরো একমাত্র সোলার ছাড়া বাকিগুলো কতটা টেকসই হবে- সে ব্যাপারে আমি যথেষ্টই সন্দিহান। ইন ফ্যাক্ট- সোলারের ক্ষেত্রেও কিছু বিতর্ক আছে। আমার অত্যন্ত প্রিয় এবং শ্রদ্ধেয় একজন শিক্ষক ড. রব্বানী স্যারের একটা লেখা এ প্রসঙ্গে আপনার সাথে শেয়ার করলাম-
http://electricityall.blogspot.com/2012/05/blog-post_5457.html

ভালো থাকবেন। রূপপুর নিয়ে আমাকে আর একটু পড়ালেখা করতে হবে- তাই এ বিষয়ে এখানে কিছু বললাম না।
শুভকামনা !

০৪ ঠা মে, ২০১৬ বিকাল ৩:২৯

এক নিরুদ্দেশ পথিক বলেছেন: স্যারের লিখা শেয়ার করার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।

১। সোলার

আমার মনে হয় না ভাই বাংলাদেশে রিনিউয়েবল এর খুব একটা ভালো প্রস্পেক্ট আছে। যদিও অনেক ক্ষেত্রেই এ সেক্টরের পটেনশিয়াল এখনো আন-এক্সপ্লোরড (আপনি যেমনটা লিখেছেন), তারপরো একমাত্র সোলার ছাড়া বাকিগুলো কতটা টেকসই হবে- সে ব্যাপারে আমি যথেষ্টই সন্দিহান। ইন ফ্যাক্ট- সোলারের ক্ষেত্রেও কিছু বিতর্ক আছে। - আপনার বক্তব্যের সাথে সহমত। আমি সৌর শক্তি কথামালাঃ বাংলাদেশের নবায়ন যোগ্য জ্বালানীর সম্ভাবনা লিখায় মাইক্রো খাতে সোলার কে ওপেন করার কথা বলেছি। বর্তমানের সোলার মডেল পটেনশিয়াল কাস্টমারদের দূরে ঠেলবে।

তবে মাইক্রো স্কেইলে সোলার যে খুব সম্ভাবনাময় বাংলাদেশে এটা প্রশ্নাতীত। এই খাত বিকাশের অনুকুল নীতি এবং ইনফাস্ট্রাকচার গড়া দরকার। ম্যাক্রো খাতে আরবান রুফ টপ ভালো করবে। সেচে ভালো করবে সোলার। যায়গা জটিলতায় আমি লার্জ স্কেইল সোলার প্ল্যান্ট বা সোলার থার্মাল নিয়ে কথা বলিনা তেমন। তবে সাস্টেইনেবল মাইক্রো সাফল্য নির্ভর করছে মান সম্পন্ন প্রডাক্ট প্ল্যান, ডিসি ইনফাস্ট্রাকচার - কমিউনিটি গ্রীড এবং গ্রীড টাই আপ ভিত্তিক বিজনেস মডেলের উপর।

২। লিখাটার বিন্যাস চেঞ্জ করলাম। এল এন জি সেকশন আপডেট করেছি। (তথ্য নিয়ে আপডেট থাকলে জানাবেন প্লিজ)।
আরেকটা রিভিউ পেলে ভালো লাগবে।

৩। রুপপুর নিয়ে পড়ুন এবং লিখুন-প্লিজ।

আন্তরিক ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা।

২| ০৪ ঠা মে, ২০১৬ বিকাল ৫:৫১

এক নিরুদ্দেশ পথিক বলেছেন: জ্বালানী নিরাপত্তা নিয়ে লিখা পলাশ ভাইয়ের লিখাটা লিংকে রাখলাম কম্পারেটিভ আলোচনা রিচ করার জন্য।

আমাদেরকে সমস্যা এনালাইসিসের সাথে সাথে সল্যুশন নিয়েও কাজ করতে হবে।
জ্বালানী নিরাপত্তার ব্যাপারটি খুব সেন্সিটিভ এবং খুবই ডিফিকাল্টও বটে।

৩| ০৫ ই মে, ২০১৬ রাত ১:২৩

ভ্রমরের ডানা বলেছেন: অসাধারণ তথ্যবহুল পোষ্ট। শোকেশে রাখলাম।

০৫ ই মে, ২০১৬ রাত ৩:৩২

এক নিরুদ্দেশ পথিক বলেছেন: আন্তরিক ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা।

৪| ০৬ ই মে, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১৭

ক্লাউড বলেছেন: আরও গ্যাস না পাওয়া গেলে অবস্থা খুব খারাপ হবে। প্ল্যানই হবে, বাস্তবায়ন হবেনা। এত ঘনবসতির দেশে যাই করতে যাবেন তাতেই সমস্যা। হাইওয়ে করেন, জমি লাগবে, পাওয়ার প্ল্যান্ট, সার কারখানা কিংবা ভবিষ্যতের জন্য খুবই জরুরী একটা বিমানবন্দর, সবই জমির অভাবে আটকে যাবে বা জমি অধিগ্রহন করতে গেলেই আন্দোলনে সরকার টলে যাবে।

চমৎকার পোস্ট, আসলে ব্লগে দেয়ার জন্য অমানবিক একটা পোস্ট। অনেক শুভকামনা রইলো। :)

০৬ ই মে, ২০১৬ রাত ১০:১২

এক নিরুদ্দেশ পথিক বলেছেন: সত্য কথা বলেছেন।

জমি খুব হিসেব চন্তে করে কিনতে হবে, ডিরেক্ট ইন্টারফেইসে প্রসাশন যদি দালাল বাদ দিয়ে জমি কিনে সমস্যা কমবে।

এমবিএ র "ওরগানাইজেশন বিহেভিয়ার" এ পড়ায়- কিপ এমপ্লয়ীস ইন দি চেঞ্জ প্রসেস!


চেস্টা করি সাস্টেইনেবল ডেভেলপমেন্ট এবং ইনফাস্ট্রাকচার ডোমেইনে সচেতনতা মূলক লিখা লিখি করতে। আপনাদের অনুপ্রেরণাই সাথী!

৫| ০৭ ই মে, ২০১৬ রাত ৯:৪৭

ক্লাউড বলেছেন: এতো বড় প্রজেক্টের কাজ অধিগ্রহন ছাড়া কিনে করা সম্ভব এইদেশে? অয়াওয়ার প্ল্যান্ট করতে পারবেন, তবে রাস্তা কিংবা রেলপথের বেলায় সম্ভব না।

আপনি কোন লাইনের? এমবিএ এর আগে কি সায়েন্স ব্যাকগ্রাউন্ডের ছিলেন?

৬| ০৬ ই মে, ২০১৭ দুপুর ২:৫১

এক নিরুদ্দেশ পথিক বলেছেন:
উচ্চমূল্যে বিদ্যুৎ কেনায় গত ছয় বছরে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা পিডিবি লোকসান গুনেছে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা। অন্যদিকে রেন্টাল ও কুইক রেন্টালের অন্তর্ভুক্তিতে সর্বশেষ অর্থবছর মোট উৎপাদন সক্ষমতায় পিডিবির হিস্যা কমে দাঁড়ায় ৪৩ শতাংশে। অর্থাৎ বিদ্যুৎ খাতে রাষ্ট্র অতি উচ্চ পর্যায়ের অন্যায্য ভর্তুকি দিতে থাকলেও উৎপাদনে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান পিডিবি'র ভূমিকা দিন দিন সংকুচিতই হচ্ছে।
রেন্টাল ও কুইক রেন্টালের অন্তর্ভুক্তি, ৬ বছরে পিডিবির লোকসান ৪০ হাজার কোটি টাকা:
২০০৯ সালের জানুয়ারিতে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ছিল ৫২৪৭ মেগাওয়াট। বর্তমানে উৎপাদন সক্ষমতা বেড়ে ১০০৩০ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়েছে। (তবে ইন্সটল্ড ক্যাপাসিটি ১৫০০০, যার বিপরীতে ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হচ্ছে যদিও রাজনৈতিক বিবেচনায় দেয়া বহু প্ল্যান্ট উৎপাদন সক্ষমই নয়)। নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র যোগ হয়েছে ৭৪টি। তবে বিদ্যুতের সক্ষমতা বৃদ্ধির এ অগ্রগতি বেসরকারি উদ্যোগভিত্তিক হওয়ায় অর্থনৈতিক ক্ষত বেড়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি)। উচ্চমূল্যে বিদ্যুৎ কেনায় গত ছয় বছরে রাষ্ট্রায়ত্ত এ সংস্থা লোকসান গুনেছে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা।
কথা হচ্ছে,
১। স্বল্প মেয়াদি সমাধানের জন্য পাকিস্তানি মডেলে রেন্টাল ও কুইক রেন্টালের যাত্রা শুরু হলেও ৮ বছর পরে এসেও কেন তথাকথিত কুইক সুলিউশান বন্ধ করে দীর্ঘমেয়াদি সলিউশানের সূচনা হচ্ছে না? আর কত কত বছর কুইক রেন্টাল কুইক থাকবে?
২। সরকার আট বছরে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা দ্বিগুন করেছে, এতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। কিন্তু এর বিপরীতে ইন্সটল্ড ক্যাপাসিটি তিনগুন করেছে, কে? বিভিন্ন রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে সঞ্চালন ও বিতরনে ডেভেলপমেন্ট মাত্র ৩৫-৪০%, যেখানে ইন্সটল্ড ক্যাপাসিটি ডেভেলপমেন্ট অগ্রগতি প্রায় ৩০০%। এই অসসমন্বয় পিডীবির দেনায় দায় বাড়াচ্ছে, রাষ্ট্র ফতুর হচ্ছে!
প্রায় ৫০০০ (ইন্সটল্ড ক্যাপাসিটি, উৎপাদনে সক্ষমই নয়, কিংবা সঞ্চালন ও বিতরণ ক্যাপাসিটি না থাকায় আইডল) মেগাওয়াট সমপরিমাণ ক্যাপ্সিটি আইডল বসে আছে। ১৫০০০ মেগাওয়াট ইন্সটল্ড ক্যাপ্সিটির বিপরীতে ৮২৮৪ মেগাওয়াট উৎপাদন, প্রায় ৪৬ ভাগ আইডল বসে থাকার ব্যাপার বিস্ময়কর। তবে হ্যাঁ, মেইন্টেনেন্স এর জন্য সর্বোচ্চ ১৫-২০% ক্যাপাসিটি অতিরিক্ত দরকার পড়ে যা কোন প্ল্যান্ট নষ্ট হলে তার ব্যাকআপ সৃষ্টি করা যায়। কিন্তু ৪৬% অতি নিন্ম ইফেসিয়েন্সি কিংবা উচ্চ লুটপাট কেন্দ্রিক অসমন্বিত উন্নয়নকে ইঙ্গিত করে।
উৎপাদনের ডেটাঃ (৫-৫-২০১৭, পিজিসিবি)
Available generation capacity(MW) 10030
Forecasted demand(MW) 8800
Yesterday's actual generation(MW) 8284

http://bonikbarta.net/bangla/news/2017-05-06/116141/উৎপাদক-থেকে-ক্রেতার-ভূমিকায়-পিডিবি--/

উৎপাদক থেকে ক্রেতার ভূমিকায় পিডিবি:
----------------------------------------------------
বছর সাতেক আগেও দেশে উৎপাদিত বিদ্যুতের সিংহভাগ ছিল বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি)। ২০০৯-১০ অর্থবছর মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার ৭০ শতাংশ ছিল রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানটির। পরবর্তীতে উৎপাদনের চেয়ে বিদ্যুৎ ক্রয়ে বেশি মনোযোগী হয়ে পড়ে পিডিবি। সর্বশেষ অর্থবছর মোট উৎপাদন সক্ষমতায় প্রতিষ্ঠানটির হিস্যা কমে দাঁড়ায় ৪৩ শতাংশে। এর বিপরীতে বাড়তে থাকে বিদ্যুৎ ক্রয় বাবদ ব্যয়। বর্তমানে পিডিবির মোট পরিচালন ব্যয়ের ৭০ শতাংশই যাচ্ছে বেসরকারি, রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ ক্রয়ে। যদিও ২০০৯-১০ অর্থবছরও এ ব্যয় ছিল ৫৭ শতাংশ।


http://bonikbarta.net/bangla/news/2017-01-21/103733/৬-বছরে-পিডিবির-লোকসান-৪০-হাজার-কোটি-টাকা--/

বিএনপি আমলে বিদ্যুৎ উৎপাদন না করে সঞ্চালন ও বিতরণ কাঠামোতে ইনভেস্ট করা হয়েছিল কিছু, যা অসমন্বিত ও অদূরদর্শী ছিল। তত্ত্বাবধায়ক আমলে বিদ্যুতের দীর্ঘমেয়াদি মাস্টার প্ল্যান করার দিকে মনোযোগ দেয়া হয়েছিল তবে তাঁরা স্বল্প ক্যাপাসিটিতে উচ্চ মেইন্টেইনেন্স সক্ষমতা আনতে চেয়েছেন। বর্তমান সরকার ২ মেয়াদে বিদ্যুৎ খাতে ব্যাপক রাষ্ট্রীয় ভর্তুকি জারি রেখে উৎপাদন সক্ষমতায় ব্যাপক উন্নতি করেছে, কিন্তু সঞ্চালন ও বিতরণ সক্ষমতা এর সাথে সামঞ্জস্য পুর্ণ নয়। ফলে এই ক্যাপাসিটির ব্যাপক অংশ দেশের মানুষের কাজে আসছে না।
উন্নয়নের এই সব অসামঞ্জস্যপুর্ন ও নন টেকসই দিক নিয়ে নাগরিক সচেতনতা ও চাপ দরকার। নিরন্তর!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.