নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব,ইইই প্রকৌশলী। মতিঝিল আইডিয়াল, ঢাকা কলেজ, বুয়েট এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র।টেলিকমিউনিকেশন এক্সপার্ট। Sustainable development activist, writer of technology and infrastructural aspects of socio economy.

এক নিরুদ্দেশ পথিক

সমাজের প্রতিটি ছোট বড় সমস্যার প্রকৃতি নির্ধারণ করা, আমাদের আচার ব্যবহার, সমাজের প্রচলিত কৃষ্টি কালচার, সৃষ্টিশীলতা, চারিত্রিক উদারতা এবং বক্রতা, অপরাধ প্রবৃত্তি, অপরাধ সঙ্ঘঠনের ধাঁচ ইত্যাদির স্থানীয় জ্ঞানের আলোকে সমাজের সমস্যার সমাধান বাতলে দেয়াই অগ্রসর নাগরিকের দায়িত্ব। বাংলাদেশে দুর্নীতি রোধ, প্রাতিষ্ঠানিক শুদ্ধিকরন এবং টেকনোলজির কার্যকরীতার সাথে স্থানীয় অপরাধের জ্ঞান কে সমন্বয় ঘটিয়ে দেশের ছোট বড় সমস্যা সমাধান এর জন্য লিখা লিখি করি। আমার নির্দিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি আছে কিন্তু দলীয় সীমাবদ্ধতা নেই বলেই মনে করি, চোর কে চোর বলার সৎ সাহস আমার আছে বলেই বিশ্বাস করি। রাষ্ট্রের অনৈতিক কাঠামোকে এবং দুর্নীতিবাজদের সবাইকে তীক্ষ্ণ ভাবে চ্যালেঞ্জ করার চেষ্টা করি। রাষ্ট্র কে চ্যালেঞ্জ করতে চাই প্রতিটি অক্ষমতার আর অজ্ঞতার জন্য, তবে আঘাত নয়। ব্যক্তিগত ভাবে নাগরিকের জীবনমান উন্নয়ন কে দেশের ঐক্যের ভিত্তিমূল মনে করি। ডাটাবেইজ এবং টেকনোলজি বেইজড পলিসি দিয়ে সমস্যা সমাধানের প্রোপজাল দেবার চেষ্টা করি। আমি মূলত সাস্টেইন এবল ডেভেলপমেন্ট (টেকসই উন্নয়ন) এর নিরিখে- অবকাঠামো উন্নয়ন এবং ডিজাইন ত্রুটি, কৃষি শিক্ষা খাতে কারিগরি ব্যবস্থাপনা ভিত্তিক সংস্কার, জলবায়ু পরিবর্তন, মাইক্রো ইকনমিক ব্যাপার গুলো, ফিনান্সিয়াল মাইগ্রেশন এইসব ক্রিটিক্যাল ব্যাপার নিয়ে লিখার চেষ্টা করি। মাঝে মাঝে চোরকে চোর বলার জন্য দুর্নিতি নিয়ে লিখি। পেশাঃ প্রকৌশলী, টেকনিক্যাল আর্কিটেক্ট, ভোডাফোন।

এক নিরুদ্দেশ পথিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

১০ টাকা কেজি দরের চাল, ভাতা দেয়ার দুর্নীতিমুক্ত টেকসই পদ্ধতি এবং দারিদ্র বিমোচনের টেকসই বিকল্প

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:০৮

ক। ১০ টাকা কেজি দরের চাল এবং ১৯৭৪
""'ক্ষুধা হবে নিরুদ্দেশ' এর মত মহৎ ভীষণ নিয়ে সরকার দেশের ৫০ লাখ হতদরিদ্র পরিবারকে ​​১০ টাকা কেজিতে প্রতিমাসে ৩০ কেজি করে চাল দিবে। প্রতি বছরের মার্চ ও এপ্রিল এবং সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, নভেম্বর- এই পাঁচ মাস কর্মসূচির আওতায় চাল পাবে পরিবারগুলো। প্র‌তি কে‌জি চাল ৩৭ টাকা দ‌রে কি‌নে ১০ টাকা দ‌রে হতদ‌রিদ্র‌দের হাতে তু‌লে দেয়ার মধ্য দি‌য়ে প্র‌তি কে‌জি চা‌লের ওপর ২৭ টাকা ভর্তু‌কি প্রদান কর‌বে সরকার। এর ফ‌লে সরকার‌কে প্র‌তি বছর দুই হাজার একশ' কো‌টি টাকা ভর্তু‌তি দিতে হ‌বে।​""

১৯৭৪ এ ​​হাভাত এবং দুর্ভিক্ষ পড়ীত মানুষকে লুকাতে, মানুষ এবং কুকুরের খাদ্য ভাগাভাগির মত বাস্তবতার প্রতীকী চিত্র বিশ্ব সম্প্রদায়ের নজর থেকে সরাতে মানুষকে জোর করে লঙ্গর খানায় না ঢুকিয়ে, ​​ক্ষুধাকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে এমন উন্মুক্ত উদ্যোগ নিলে দেশ হয়ত অনেক নৈরাজ্য থেকে নিস্তার পেত, নিস্তার পেত দুর্ভিক্ষ কবলিত লক্ষ লক্ষ নাগরিকের প্রাণহানি থেকে।

খ। স্থানীয় সরকারের ভাতা কার্যক্রমঃ
বাংলাদেশের স্থানীয় সরকারের একেবারে প্রাথমিক এবং তৃণমূল ইউনিট ​​'ইউনিয়ন পরিষদ' এর ঋণ এবং ভাতার সুবিধা সংক্রান্ত কার্যাবলী অসাধারণ। এক নজরে দেখে নেয়া যাক!

১। প্রতিবন্ধী ঋণ দান
২। বয়স্ক ভাতা প্রদান
৩। প্রতিবন্ধী ভাতা প্রদান
৪। প্রতিবন্ধী শিক্ষা উপবৃত্তি প্রদান
৫। মুক্তিযোদ্ধা ভাতা প্রদান
৬। বিধবা ভাতা
৭। এসিডদগ্ধ প্রতিবন্ধী স্কীম
৮। ​ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং বা ভিজিএফ কার্ড
৯। মাতৃত্বকালীন ভাতা
১০। ভিজিডি, বি আর বি ডি
১১। ​​একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের ঋণ বা ভাতা

এর বাইরে রয়েছে "টি আর" এবং কাবিখা'র মত নিয়মিত কর্মসূচী। (লাস্ট বাট নট দ্য লিস্ট প্রান্তিক চাষিদের সহায়তা দিতে রয়েছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক এর মত মহৎ উদ্দেশ্যে নির্মিত প্রতিষ্ঠান।

অর্থাৎ একটি মহৎ উদ্দেশ্যে অর্থনৈতিক প্রান্তিক সমাজের বৃহত্তর কল্যাণ সাধনের নিমিত্তে স্থানীয় সরকারের ভাতা কার্যক্রম গুলো সময়ে সময়ে সংযোজন করা হয়েছে যাতে সমাজ ক্ষুধা এবং দারিদ্র মুক্ত হতে পারে। ​এই ক্রমে সর্বশেষ আশাজাগানিয়া সংযোজন "১০ টাকা কেজির চাল"।


গ। কিন্তু বাস্তবতা কি বলে?
এত সব মহৎ উদ্যোগ থাকার পরেও ক্ষুধা এবং দারিদ্র কমছে না কেন? কেন প্রান্তিক নাগরিকেরা বেসরকারি ক্ষুদ্র ঋণের দায়ে জর্জরিত এবং নিজ বাসভূম থেকে পলায়নপর! আসলেই এই ভাতা গুলোর সুবিধা কারা নিচ্ছেন! ​হাভাত এবং দুর্ভিক্ষ​ জনিত কারনে ১৯৭৪ এ কম বেশি ১০ লক্ষ নাগরিক​ মারা যাবার পরেও এই ক্ষুধার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে এবং তা ডিফেন্ড করার জন্য সাস্টেইনেবল কর্ম পরিকল্পনা তৈরি করতে কেন আমাদের ৪২ বছর লেগে যাচ্ছে! সত্যিকারের টেকসই বিকল্প এখনো আসছে না কেন?


এই ২০১৬ জুন এবংজুলাইয়ে, নিজ ইউনিয়ন পরিষদের নবনির্বাচিত তরুণ চেয়ারম্যানের ট্রেনিং এন্ড ডেভেলপমেন্ট পারপাজে স্থানীয় সরকারের কার্জক্রমের উপর একটি সহায়িকা তৈরি করতে গিয়ে ​'ইউনিয়ন পরিষদ' এর ঋণ এবং ভাতার সুবিধা সংক্রান্ত​ ​অসাধারণ​​​ ​কার্যাবিবরনী​ দেখে অভিভূত হই​, একইসাথে এই ভাতার ভুক্তভোগী কারা তার উপর একটি অনুসন্ধান চালাতে উৎসাহী হয়ে উঠি, গ্রামে থাকায় ব্যাপারটি খুবই সহজ এবং ইন্টারেস্টিং ছিল। আউটকাম খুবই হতাশার, প্রথমত দলীয় কর্মীদের যাবতীয় নতুন ভাতার তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়, পুরানোদের যারা নির্দলীয় এবং অসহায় তারা তালিকা ভুক্তির পরে ২-৩ মাসের বেশি ভাতা পেয়েছেন বলে কেউ তথ্য দেননি। একজন প্রতিবন্ধী সন্তানের মা জানিয়েছেন তিনি ৩ মাস ১০০ টাকা করে পেয়েছেন এবং উনার অনেক টিপ সই নিয়ে নেয়া হয়েছে। এখানে আরো উল্লেখ্য একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের ঋণ স্রেফ শতভাগ দলীয় নেতা কর্মী তোষণের প্রকল্প।

আশা করি রাজনৈতিক দুর্বিত্তায়নের তৃণমূল পর্যায়ের পেনীট্রেশনের বাস্তব বিভীষিকা বুঝতে পারছেন। উল্লেখ্য লুটপাটকে অবাধ এবং সহজ করতে ২০১৫ সাল থেকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনকে সরাসরি দলীয় প্রতীকে আনা হয়েছে, এতে সম্পদ এবং ভাতা বন্টনের চ্যানেল শুধু মাত্র দলীয় গন্ডিতে থাকতে পারার নিশ্চয়তা এসেছে । এখানে আরো উল্লেখ্য স্বাধীনতা পরবর্তিতে সম্পদ এবং ভাতা বন্টনের মডেলকে ভেঙ্গে নির্বিচার জাতীয়করন এবং দলীয় লূটপাটের যে মডেল কায়েম হয়েছিল সরাসরি দলীয় ম্যান্ডেটের স্থানীয় প্রশাসন তাকে উর্বর করবে নিঃসন্দেহে!


ঘ। ভাতা দেয়ার টেকসই মডেল কি?

​১। বিচ্ছিন্ন ভাবে সময়ে সময়ে পরিবর্তন করার উপযোগী ভিন্ন ভিন্ন সিলেকশন ক্রাইটেরিয়া ভিত্তিক ভাতা ভোগীর তালিকা (রাজনৈতিক দুরবিত্তায়িত) তৈরি, দলীয় ডিলার ভিত্তিক চাল সংগ্রহ (সারের এবং খাদ্য মজুদের বেলাতেও) এবং চেয়ারম্যান-মেম্বার ভিত্তিক বরাদ্দ প্রক্রিয়ার পুরোটাই লুটপাটের অনুকূলে সাজানো। রাষ্ট্রীয় ভর্তুকির এই প্রকল্প গুলো আসলে দলীয় নেতা কর্মীদের পকেট পুরানোর রাজনৈতিক প্রকল্প।
বিপরীতে স্থায়ী ক্রাইটেরিয়ার অরাজনৈতিক মডেলে দরিদ্রের তালিকা করে কিংবা ন্যায্য সুবিধা ভোগীর তালিকা করুন। ডিলারশীপ উন্মুক্ত করে সেখানে ব্যক্তি কৃষকের উৎপাদনের অন্তর্ভূক্তি নিশ্চিত করুন, একই ব্যবস্থা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, খাদ্য এবং ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত খাদ্য সংগ্রহের বেলায়ও প্রযোজ্য!

২। খাদ্য এবং ভাতা বরাদ্দ প্রক্রিয়া অরাজনৈতিক, ব্যাংকিং চ্যানেলে অটোমাইজ করুন।

৩। ভাতা, ঋণ এবং খাদ্য বিতরণ স্বাধীন বেসরকারি অডিটের আওতায় আনুন এবং অডিটের উঠে আসা জালিয়াতি অটোমেটিক ভিত্তিতে শাস্তির গন্ডিতে নিয়ে আসুন।


তবে কথা হচ্চে বর্তমানে যেভাবে নেতা কর্মীদের মাঝে বিতরন হচ্ছে - প্রস্তাবিত এই চ্যানেল ও প্রক্রিয়া চালু হবার পরে বর্তমান সুবিধায় অভ্যস্ত সুবিধাভোগীরা কোন না কোন ভাবে ঠিকই পুষিয়ে নিবার চেস্টা করবে। এটা ঠেকাতে হলে অটোমেশন প্রসেসে ম্যানুয়াল ইনপুট দেয়া কিংবা ম্যানিয়াল ইন্টারভেনশন রাখার মত অটোমেশন সফটওয়্যার ডিজাইনের চলমান প্রথা গুলো এলিমিনেট করতে হবে। টেকনোলোজির বাস্তবায়নে দুর্নিতির টুটি চেপে ধরা যায়, দরকার রাজনৈতিক সততা এবং ইচ্ছা।

৪। তবে স্থানীয় সরকারের রাজনীতিকরণ (পড়ুন ধ্বংস) থেকে বেরিয়ে না আসলে টেকসই সমাধান কঠিন। তাই বিকল্প হিসেবে আর্থিক সক্ষমতার স্টান্ডার্ড কিছু ইন্ডীকেশনের (চাকুরি, জমি, বসত ভিটা, স্থাবর এবং অস্তাবর ব্যাংক সম্পত্তি) এইসবের নিচে থাকা সব নাগরিককে (সর্ব দলীয় এবং নির্দলীয় সাধারণ) ইন্ডিস্ক্রেমিনেটলি সাধারণ গণ রেশনের আওতায় আনা যায় উপরোক্ত ডিস্ট্রিবিউশন চ্যানেলে। এতে বাজেট বরাদ্দ বেশি দিতে হবে কিন্তু দুর্বিত্তায়ন কমে আসবে। দেশের মধ্য-উচ্চ বেতন এবং মান্সম্পন্ন আবাসন সুবিধাভোগী সেনা এবং পুলিশ রেশন পায় কিন্তু দেশের বস্তিবাসী এবং কৃষকরা পায় না, এটা ডিস্ক্রিমিনেশন যার এলিমিনেশন দরকার।

৫। প্রস্তাবিত রেশন দিবার পদ্ধতিও আটোমাইজ করাঃ
প্রথমেই ভিজিএফ/রেশন কার্ডের কন্সেপ্ট থেকে সরে আসতে হবে, ফিঙ্গার প্রিন্ট বেইজড সিটিজেন ডেটাবেইজ রয়েছে আমাদের। দরকার সেখানে এড্রেস ভেরিফিকেশন সমন্বিত করা এবং সেখানে আর্থিক সক্ষমতার তথ্য (ব্যাংকিং এবং ডিজিটাল ভূমি ব্যবস্থাপনা) ইঙ্কোওপারেট করা। যাবতীয় ভাতা ন্যাশনাল কার্ডের বিপরিতে আসবে, এর তথ্য লোকালি টেম্পার করা না বরং সেন্ট্রালি রেশন এবং ভাতা প্রাপ্তির লিস্ট কনট্রোল করা যাবে এবং যা ওয়েবে এবং টেলি মেসেজে ওপেন থাকবে। রেশন কার্ড তৈরিতে স্থানীয় জন প্রতিনিধির স্বাক্ষর এবং মানহীন তথাকথিত পেপার ওয়ার্ক্স যার অধিকাংশই জাল হয়, রাখা যাবে না।

ঙ। টেকসই দারিদ্র বিমোচন কর্মসূচী বনাম টেকসই ভাতা প্রদান কর্মসূচীঃ

ক্ষুধাকে ডিফেন্ড করার প্রাথমিক লেভেলের পদক্ষেপ হিসেবে ১০ কেজি দরের চাল বিতরণের প্রকল্প গুরুত্ব পূর্ণ তাই এটিকে দুর্নিতিমুক্ত এবং টেকসই করতে হবে। তবে ক্ষুধা এবং দারিদ্র দূরীকরণের জন্য স্থায়ী পরিকল্পনা নেয়াও খুব গুরুত্বপূর্ণ।

বলা হয়েছে, ​“হতদরিদ্রদের মাঝে বছরে পাঁচ মাস এই চাল দেওয়া হবে। যখন কাজের একটু অভাব থাকে তখন।” এই উপ্লভধি গুরুত্ব পূর্ন। কথা হচ্ছে প্রান্তিক মানুষ হতদরিদ্র কিভাবে হচ্ছেন তার ব্যাকগ্রাউন্ড গবেষণায় এনে এতদসংক্রান্ত বাকি বুঝা পড়ার ব্যাপার গুলো উপ্লভধি আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ।


প্রেক্ষাপট ১- পানি প্রাপ্তি এবং উতপাদন মূল্য
গঙ্গায় ৩২০০০ কিউসেকের বিপরিতে ২০১৬'র শুস্ক মৌসূমে পানি এসেছে ৭৫০০ কিউসেক করে, যমূনায় এসেছে ৫০০০-৭০০০ কিসুসেকের মত, তিস্তায় অনূর্ধ ১০০০ কিউসেক। ভারতের একচেটিয়া অন্যায্য পানি প্রত্যাহারের প্রেখাপটে গঙ্গা-কপোতাক্ষ এবং তিস্তা সেচ প্রকল্প সহ দেশের নদির পানি কেন্দ্রিক সারফেইস ওয়াটার প্রকল্প গুলো একেবারেই বসে গেছে। গত ২-৩ দশকের কৃষি বিপ্লবে ভূগর্ভস্থ পানির এত বেশি ব্যবহার হয়েছে যে, ভূগর্ভস্থ পানির স্তরও নীচে নামছে, এক সময় যা উঠিয়ে ফলন করে কৃষক দাম উঠাতে পারবে না।
প্রেক্ষাপট ২- অতি খরুচে রাসায়নিক চাষ, কৃষকের বীজ/সার/কীটনাশক নির্ভরতা এবং ঋণের দায়
নির্বিচার সারায়নিক ফলনে জমির উর্বরতা শেষ হচ্ছে দ্রুত, এতে একই ফলন উতপাদন করতে বেশি সার এবং পতঙ্গ-ছত্রাক নাশক দরকার। অন্য দিকে কোম্পানির হাইব্রিড আগ্রাসনে কৃষকের বীজের জাত নেই, জৈব সারের প্রোমোশন এবং নলেজ নাই। সব ছাড়া হয়ে কৃষকের উতপাদন মূল বেড়েছে অনেক বেশি, বাজার মূল্যে তা উঠে আসে না। তাই কৃষক কৃষিতে ডিস্কানেক্টেড হচ্ছেন।

প্রেক্ষাপট ৩- ঋণের দায়ে ফলন সংরক্ষণ এবং দাম বিচার করে বিপননের সুযোগ কমে গেছে, কৃষককে র'ফলন কম দামে বেচতে হচ্ছে।

প্রেক্ষাপট ৪- কৃষির জমিতে শিল্পের আগ্রাসন এবং চাষের জমি কমে আসা!

অর্থাৎ কোম্পানি নির্ভর কৃষির মডেল (হাইব্রিড জাত, রাসায়নিক ব্যবস্থাপনা এবং ঋণ) কৃষককে কিংবা ক্ষুদ্র ঋণের মডেলে গ্রামীণ মানুষের হতদরিদ্র হওয়া ঠেকাতে পারছে না বা হতদরিদ্র অবস্থান থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমান নাগরিককে উত্তরণ করছে না। সুতরাং রাসায়নিক কৃষি এবং ক্ষুদ্র ঋণের এর একচেটিয়া কোম্পানি মুনাফা এবং সুদ মূখী মডেল ক্ষুধা এবং দারিদ্র মুক্তিতে টেকসই নয়। উপরন্তু জলবায়ু পরিবর্তন, ভারতীয় পানি আগ্রাসন এবং ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাবার বাস্তবতায় বাংলাদেশের কৃষি এবং খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মূখে যা হতদরিদ্র নাগরিকের সংখ্যা বাড়াবে বই কমাবে না।

প্রেক্ষাপট ৫- বন্যা, বন্যা ফসলের সাইকেল এলোমেলো করে দিচ্ছে,এটা কৃষি নির্ভর সমাজে দারিদ্র্যের বড় কারণ।


টেকসই দারিদ্র বিমোচন কর্মসূচী

​প্রতি বছরের মার্চ ও এপ্রিল এবং সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, নভেম্বর- এই পাঁচ মাসে বড় ২টি ফসল সাইকেলের গ্যাপ (বা ধান বেড়ে উঠার সময়ে) এবং বন্যা জনিত কারনে কৃষক পরিবারগুলোতে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান থাকে না। তাই এই সময়ে ভাতা প্রদান প্রাথমিক পর্যায়ের দারিদ্র বিমোচন কর্মসূচী হিসেবে গ্রহনযোগ্য। তবে দীর্ঘমেয়াদে কর্মসংস্থানের স্থায়ী টেকসই বিকল্প ভাবতে হবে।

কৃষির রোটেশন এবং সমন্বয়- বৈচিত্রময় ফলনের আধিক্য, কৃষি ছাড়া অন্য এমপ্লয়মেন্ট অপরচূনিটির যোগ রাখা, সমন্বিত ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট, বৃষ্টির পানির সংরক্ষণ, টেকসই বিকল্প সেচ ব্যবস্থা, উন্নত যাতায়াত ব্যবস্থা এইসব ঠিক করে পণ্য (কৃষি এবং শিল্পের) উৎপাদন বিপনন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির সমন্বিত পদক্ষেপে দারিদ্র মুক্তির স্থায়ী পথ খুজতে হবে।

ট্যাক্স রিবেট দিয়ে বা অন্য আর্থিক-নিরাপত্তা-উন্নত শিক্ষা প্রণোদনা দিয়ে শিল্প এবং ব্যবসাকে বিকেন্দ্রীভূত করাও টেকসই আঞ্চলিক কর্মসংস্থান সৃষ্টির আধুনিক উপায়।

......
বাইরে স্ট্যান্ট বাজি নির্ভর কিন্তু ভিতরে ভিতরে সরকারি দলীয় কর্মী তোষণের রাষ্ট্রীয় এবং সিস্টেমেটিক অপ প্রকল্প হিসেবে স্থানীয় সরকারের ভাতা প্রদান এবং চাল বিতরণের মত মহৎ প্রকল্প গুলোকে বের করে এনে সত্যিকারের হতদরিদ্রতা ঠেকানোর জন্য দূর্নিতি মূক্ত টেকসই সিস্টেম ডেভেলপ করুন। সেই সাথে ক্ষুধা এবং দারিদ্র বিমোচনের জন্য জাতীয় এবং আঞ্চলিক পর্যায়ে সত্যিকারের টেকসই বিকল্প বের করুন।

অন্যথায় স্বাধীনতার ৪২ কেন, ৮৪ বছর পরেও মধ্য আয়ের দেশ দাবি করা দেশে আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে এক চতুর্থাংশ থেকে এক অস্টমাংশ দামে রাষ্ট্রীয় ভর্তুকিতে চাল সরবারহ করতে হবে। দেশের অর্থনৈইতিক প্রান্তিক সমাজের ক্রয় ক্ষমতার এই চিত্র মোছন করা হয়ে উঠবে দুঃসাধ্য!

দুর্বিত্তায়ন নিপাত যাক,
ক্ষুধা এবং দারিদ্র পরাজিত হোক,
বাংলাদেশ এগিয়ে যাক!

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:৩৫

ভ্রমরের ডানা বলেছেন: তৃনমূল জনগোষ্ঠীদের (যারা নিতান্তপক্ষে একমুঠো ভাতের জন্য হাহাকার করে) উন্নয়ন পদক্ষেপের সফলতা কামনা করছি। সেই সাথে যারা এই গরীব দুঃখী মানুষের হক নষ্ট করছে তাদের প্রতি ঘৃনা ও ধিক্কার জানাচ্ছি!

প্রযুক্তিগত কারিগরি সহায়তা ও রেগুলার নিবিড় ও নিরপেক্ষ অডিট ব্যবস্থাদি গ্রহন করলে দুর্নীতি আসলেই কমে আসবে। তবে এক্ষেত্রে আমাদের আরো জনসচেতনতার প্রয়োজন!

বরাবরের মত সচেতনতামূলক পোষ্ট করায় ও এমন সংবেদনশীল একটি গুরুত্ববহ বিষয়ে আলোকপাত ক্ক্রায় আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ও শুভকামনা!!

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:৫৭

এক নিরুদ্দেশ পথিক বলেছেন: শুরু করেছিলাম শুধু ভাতা দেয়ার টেকসই পদ্ধতির আলোচনা নিয়ে, পরে আরো কিছু কথা আলোচনায় আনলাম। মানে দারিদ্র্য বিমোচনের স্থায়ী পদ্ধতির খোঁজ নিবার একটা তাগাদা সংযোজন করলাম।


আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ। পড়ার এবং মন্তব্যের জন্য।

২| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১:১৯

রায়হানুল এফ রাজ বলেছেন: কোন লাভ নাই ভাই।

৩| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০৬

গেম চেঞ্জার বলেছেন: প্রথমেই বলে রাখছি, জনস্বার্থ বিবেচনায় এনে পোস্টটা স্টিকি হওয়া উচিত! স্থানীয় সরকারের ব্যবস্থা আমাদের দেশের জন্য উপযোগী বলে মনে করি না। এর ডিজিটালাইজেশন করে লোকাল সরকারের কাঠামোর আমূল পরিবর্তন দরকার আছে। দলীয়করণ শোষণের জন্য দরজা খুলে দেয় এবং এবার সেদিকেই নজর দেওয়া হয়েছে।

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:৫২

এক নিরুদ্দেশ পথিক বলেছেন: এই লিখাটি নির্বাচিত তালিকাতে ঠাই পায়নি! ঠিক বুঝতে পারছিনা, কোথাও সমস্যা হয়েছে কিনা আমার লিখা নিয়ে!!
একটু ভাবিত বটে!

৪| ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:০৯

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: বাইরে স্ট্যান্ট বাজি নির্ভর কিন্তু ভিতরে ভিতরে সরকারি দলীয় কর্মী তোষণের রাষ্ট্রীয় এবং সিস্টেমেটিক অপ প্রকল্প হিসেবে স্থানীয় সরকারের ভাতা প্রদান এবং চাল বিতরণের মত মহৎ প্রকল্প গুলোকে বের করে এনে সত্যিকারের হতদরিদ্রতা ঠেকানোর জন্য দূর্নিতি মূক্ত টেকসই সিস্টেম ডেভেলপ করুন। সেই সাথে ক্ষুধা এবং দারিদ্র বিমোচনের জন্য জাতীয় এবং আঞ্চলিক পর্যায়ে সত্যিকারের টেকসই বিকল্প বের করুন।

জিষ্টে শতভাগ সহমত।

দুর্বিত্তায়ন নিপাত যাক,
ক্ষুধা এবং দারিদ্র পরাজিত হোক,
বাংলাদেশ এগিয়ে যাক!
----------------------------আম কোটি নাগরিকের হৃদয়ের শ্লোগান :)

++++++

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:৫২

এক নিরুদ্দেশ পথিক বলেছেন: দুর্বিত্তায়ন নিপাত যাক,
ক্ষুধা এবং দারিদ্র পরাজিত হোক,
বাংলাদেশ এগিয়ে যাক!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.