নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সমাজের প্রতিটি ছোট বড় সমস্যার প্রকৃতি নির্ধারণ করা, আমাদের আচার ব্যবহার, সমাজের প্রচলিত কৃষ্টি কালচার, সৃষ্টিশীলতা, চারিত্রিক উদারতা এবং বক্রতা, অপরাধ প্রবৃত্তি, অপরাধ সঙ্ঘঠনের ধাঁচ ইত্যাদির স্থানীয় জ্ঞানের আলোকে সমাজের সমস্যার সমাধান বাতলে দেয়াই অগ্রসর নাগরিকের দায়িত্ব। বাংলাদেশে দুর্নীতি রোধ, প্রাতিষ্ঠানিক শুদ্ধিকরন এবং টেকনোলজির কার্যকরীতার সাথে স্থানীয় অপরাধের জ্ঞান কে সমন্বয় ঘটিয়ে দেশের ছোট বড় সমস্যা সমাধান এর জন্য লিখা লিখি করি। আমার নির্দিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি আছে কিন্তু দলীয় সীমাবদ্ধতা নেই বলেই মনে করি, চোর কে চোর বলার সৎ সাহস আমার আছে বলেই বিশ্বাস করি। রাষ্ট্রের অনৈতিক কাঠামোকে এবং দুর্নীতিবাজদের সবাইকে তীক্ষ্ণ ভাবে চ্যালেঞ্জ করার চেষ্টা করি। রাষ্ট্র কে চ্যালেঞ্জ করতে চাই প্রতিটি অক্ষমতার আর অজ্ঞতার জন্য, তবে আঘাত নয়। ব্যক্তিগত ভাবে নাগরিকের জীবনমান উন্নয়ন কে দেশের ঐক্যের ভিত্তিমূল মনে করি। ডাটাবেইজ এবং টেকনোলজি বেইজড পলিসি দিয়ে সমস্যা সমাধানের প্রোপজাল দেবার চেষ্টা করি। আমি মূলত সাস্টেইন এবল ডেভেলপমেন্ট (টেকসই উন্নয়ন) এর নিরিখে- অবকাঠামো উন্নয়ন এবং ডিজাইন ত্রুটি, কৃষি শিক্ষা খাতে কারিগরি ব্যবস্থাপনা ভিত্তিক সংস্কার, জলবায়ু পরিবর্তন, মাইক্রো ইকনমিক ব্যাপার গুলো, ফিনান্সিয়াল মাইগ্রেশন এইসব ক্রিটিক্যাল ব্যাপার নিয়ে লিখার চেষ্টা করি। মাঝে মাঝে চোরকে চোর বলার জন্য দুর্নিতি নিয়ে লিখি। পেশাঃ প্রকৌশলী, টেকনিক্যাল আর্কিটেক্ট, ভোডাফোন।
নির্বাচনী সংস্কারের ইন্সটিটিউশনাল দিক গুলো নিয়ে ৩ টি সিরিজ লিখার উদ্যোগ নিয়েছি। ১ম সিরিজে আছে
টেকসই এবং অর্থবহ নির্বাচনী সংস্কার এবং ভোট গ্রহণ পদ্ধতি যেমন হওয়া দরকার। এখানে ভূমিকা এবং ভোট গ্রহণ পদ্ধতির অল্টারনেটিভ নিয়ে আলোচনা এসেছে।
২য় পর্বের এই আলোচনায় নির্বাচনী ইশতেহার, সংসদীয় কার্যক্রম সংস্কারের প্রকৃতি এবং কমিশনের বছর ব্যাপী কোয়ালিটেটিভ কাজের ধরণ কেমন হওয়া চাই তা নিয়ে একটু হাই লেভেল আলোচনা। তবে এই পর্বের আলোচনা নির্বাচন কমিশনের ফাংশনালিটি এবং স্কোপ অফ ওয়ার্ক নিয়ে। মুলত এই পর্বটি হচ্ছে কিভাবে নির্বাচনী অঙ্গীকারকে স্ট্যান্ট বাজির বাইরে এনে সততা-আন্তরিকতা-বাস্তবিক করা যায় এবং নির্বাচনী অঙ্গীকারগুলোতে সচল থাকলে রাজনৈতিক দলকে অঙ্গীকারবদ্ধ করা যায় তার একটা চেইন প্রসেস ডেভেলপ করা নিয়ে। ভোটের বক্স, ব্যালট পাঠানো, বিশেষ বিশেষ দলের সুবিধামত সময়ে তফসীল ঘোষণা, ভোট গননা, ফলাফল দেয়া, এমনকি সময়ে সময়ে বিশেষ বিশেষ প্রভুদের সুবিধামত ফলাফল ইঞ্জিনিয়ারিং/রিগিং/আসন বিন্যাসের গতানুগতিক কাজ কারবারের বাইরে এনে নির্বাচন কমিশন যে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে রাজনৈতিক নেতাদের প্রতারণার টুঁটি চেপে ধরতে পারে তার একটা প্রসেস নিয়ে ধারণা এবং আলোচনার প্রয়াস মাত্র এই আলোচনা, এখানে প্লাস-মাইনাস হতে পারে।
ইশ্তেহারের প্রতিশ্রুতি এবং বাস্তবায়নের পাই টু পাই এনালাইসিস
ক। একটি সংসদ চলার মধ্যবর্তি সময়ের কিছু পরেই ( মেয়াদের ৭৫% অতিবাহিত সময়ে) পরবর্তি নির্বাচনের আগাম ইশ্তেহার দেয়া হবে। বর্তমান কাজের সাথে ভবিষ্যৎ এর প্ল্যানড কাজ কানেকটেড করতে হবে। এতে চাপাবাজি করে পার পাওয়া যাবে না। যে কাজটি বর্তমান মেয়াদে ইশতেহারে ছিল তার বাস্তবায়ন পরিস্থিতি কি? কেন একই টার্গেট পর পর দুটি ইশতেহারে যুক্ত হবে এসব জবাবদিহি করতে হবে নির্বাচন কমিশনে। জবাব না এলে সরকারি সংশ্লিষ্ট দল পরবর্তি নির্বাচনে পুরো আসনে প্রার্থী দিতে পারবে না বরং মেনিফেস্টো বাস্তবায়নের আনুপাতিক হারে প্রার্থী দিতে পারবে। বর্তমান মেয়াদের কাজের অগ্রগতি ভিত্তিক প্রার্থী সংখ্যা নির্ধারন করা হবে নির্বাচন কমিশনে। দল গুলো মিথ্যা ইশতেহার দিলে বা ইশতেহার অনুযায়ী কাজ না করলে আনুপাতিক হারে আসন কমে যাবে।নির্বাচন কমিশন প্রতিশ্রুত কাজের মুল্যায়ন করবেন, সংসদ সচিবালয় এবং স্পিকার এর অফিস উনাদের সাহায্য করতে বাধ্য থাকবেন। ১৬-১৮ কোটি মানুষের ভাগ্য নির্ধারনের জন্য নেতৃত্ব নির্বাচনে ইশতেহার ঘোষণা এবং তাঁর পরবর্তীতে কেন মাত্র ১৫ দিনেরও কম সময় ব্যয় হবে? এই জালিয়াতির অবসান দরকার।
খ। ইশতেহার এ একই বিষয়ে ঐ দলের পুর্বের অবস্থান, পুর্বা পর ডেভিয়েশন, কাজের মান, কাজের কানেক্টিভিটি আলোচনা করা হবে, সাফল্য ব্যর্থতা, অপারগতা, অবহেলা ইত্যাদি জবাবদিহিতা থাকবে। এই কানেকশন নির্বাচন কমিশন যাচাই করবে।
গ। রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় ইশ্তেহারের পাশাপাশি প্রতিটি আসনের বিপরীতে স্থানীয় ভাবে ইশতেহার দিতে হবে। এই ইশতেহার আনুষ্ঠানিক ভাবে স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে প্রকাশ করতে হবে এবং নির্বাচন কমিশনে জমা দিতে হবে।
আসন ভিত্তিক স্থানীয় ইশতেহারে নিন্মোক্ত মৌলিক বিষয় সমুহ থাকা বাধ্যমূলক-
১। কৃষি ভিত্তিক বাংলাদেশের আঞ্চলিক প্রয়োজন সাপেক্ষে কৃষি নিরাপত্তা, কৃষি অবকাঠামো নির্মান, কৃষি সারঞ্জাম সার বীজ বালাই নাশক ব্যবস্থাপনা এবং কৃষি উৎপাদনে সুস্পষ্ট অঙ্গীকার।
২। সেচ ব্যবস্থাপনা, বীজতলা ব্যবস্থাপনা, ভুগর্ভস্ত সেচের ব্যবস্থাপনা, পানি সাশ্রয়ী ফলনের সমন্বিত পরিকল্পনা।
৩। গ্রামীণ পরিবেশে প্রাকৃতিক কৃষির, গৃহপালিত পশু, হাঁস মুরগী পালন এবং মৎস্য চাষ ব্যবস্থাপনায় সুনির্দিস্ট পরিকল্পনা।
৪। সড়ক যোগাযোগ (নতুন রাস্তা করা, রাস্তা পাকা করা, রাস্তার মান রক্ষা, ব্রিজ নির্মান, সড়ক বনায়ন) বিষয়ে সুস্পষ্ট অঙ্গীকার।
৫। স্থানীয় পর্যায়ে কুটির শিল্প, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশ। কর্ম সংস্থান সৃষ্টির সুনির্দিস্ট পরিকল্পনা।
৬। চাঁদাবাজি দমনে এবং আর্থিক বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রনে সুস্পষ্ট কর্মসূচী।
৭। নির্বাচনী এলায় শিক্ষার মান উন্নয়নে অকাট্য অঙ্গীকার। শিক্ষা আবোকাঠামো নির্মাণ, পরিবর্ধন এবং যোগ্য শিক্ষক তৈরিতে সত্যিকারের ভূমিকা কি হবে তার বিস্তারিত বিবরন।
৮। সামাজিক নিরাপত্তা, স্থানীয় বিচার ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন, সামাজিক শিক্ষা, স্বাক্ষরতা, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, বয়স্ক শিক্ষা এবং মানব সম্পদ উন্নয়নে সুনির্দিস্ট পরিকল্পনা।
ঘ। স্থানীয় ইশতেহারও ঘোষণা হবে চলমান সংসদের মধ্য সময় পার হবার ঠিক পরই, শেষ বছর আগেই এটা পুরাপুরি প্রসেস হয়ে যাবে। চতুর্থ বছরের শুরু তেই প্রার্থী এবং নাগরিক জেনে যাবেন পরবর্তি নির্বাচনে প্রার্থী কে হবে। সেই অনুযায়ী তারা দাবি নামা সেট করবেন। আসন ভিত্তিক স্থানীয় ইশতেহার নির্বাচন কমিশন মূল্যায়ন করবেন, এর উপর ইন্টারভিউ নিবেন। এই মূল্যায়নের আগেই যোগ্যতা নির্ধারন হবে। সম্ভাব্য এম্পি প্রার্থীকে নূন্যতম যোগ্যতা হিসেবে বিস্ববিদল্যায়ের স্লাতক হতে হবে, রেজাল্ট ফার্স্ট ক্লাস থাকতে হবে, ঋণ খেলাপি হওয়া যাবে না, মামলা থাকা যাবে না। এখানে বের করা হবে উনি কোন কোন বিষয়ে সাবজেক্ট ম্যাটার এক্সপার্ট। মন্ত্রণালয় গঠনের সময় তাঁর দল উনাকে সেই বিষয় ভিন্ন অন্য বিভাগে মন্ত্রিত্ব দিতে পারবেন না। এটা করা হলে কিছু নলেজ আর্ন করার বাধ্যবাধকতা আসবে প্রার্থীদের।
এইসব তথ্য নির্বাচন কমিশন সর্টেড করবেন, জয়ী প্রার্থীর তথ্য সংসদ সচিবালয়ে পাথাবেন।
ঙ। একটি সংসদে একজন এম্পি তাঁর মোট সময়ের নূন্যতম ৫০% অবশ্যই ইশতেহারের বিষয়ে এবং এতদসংক্রান্ত পলিসি মেকিং নিয়ে কাজ করবেন, সেই সংক্রান্ত বক্তব্য দিবেন।
বাকি এর ৩০% সময় উনি যে বিষয়ে সাবজেক্ট ম্যাটার এক্সপার্ট (সেই অনুযায়ী সংসদীয় কমিটি করা হবে) সেই বিষয়ের উপর পলিসি পরিবর্তন সংক্রান্ত কথা বলবেন। বাকি ২০% জাতীয় জনগুরুত্ব পুর্ন বিষয়ে কথা বলবেন।
এখানে পরিষ্কার করে বলি, বর্তমানের রাষ্ট্রপতির ভাষণ প্রথা এবং ঐ নকল ভাষণের উপর জাবর কাটা বিলুপ্ত করতে হবে। রাষ্ট্রপতি বিজয়ী দলের ইশতেহার সহ সকল জন গুরুত্ব পুর্ন কাজ শুরুর আহ্বান জানাবেন, রাষ্ট্রের ও সরকারের ভিশন এবং মিশন কি হওয়া উচিত তা জানাবেন। শুধু মাত্র সরকার প্রধান এর উত্তরে কর্ম পন্থা বাতলাবেন, হাই লেভেল এবং ডিটেইল লেভেল প্ল্যান বাতাবেন। সাগরেদরা (এম্পি) রা নিজ নিজ এক্সপার্টেজ অনুসারে পলিসি মেক করবেন, কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে সংসদকে অবহিত করবেন। সংসদে মন্দ কথা বলার বিধানই কিংবা সুযোগই রাখা হবে না! বিষয় ভিত্তিক ছাড়া অন্যান্য ফালতু কথা বলার সিটেম লোপ করে বক্তব্য দেবার জন্য প্রতি অধিবেশনের আগে বক্তব্যের নোট জমা দিবার বিধান চালূ হবে। মানে কোন অধিবেশনে কে কে কথা বলবেন, কি নিয়ে কথা বলবেন এটাও সিডিউল্ড এবং ডিক্লেয়ার্ড হয়ে যাবে, এতে এম্পিরাও প্রিপারেশন নিয়ে আসতে পারবেন।
সংসদের কার্যপ্রনালী বিধির আমূল সংস্কার যাতে ক্ষমতা হীন রাষ্ট্রপতির পাতানো ভাষণের উপর বক্তব্যের মত অর্থহীন আলোচনায় কোটি কোটি টাকা খরচ না হয়। বরং নির্বাচিত দলের মেনিফেস্টো, তার বাস্তবায়ন অগ্রগতি এবং আন্ত ডিপার্ট্মেন্টাল সংযোগ নিয়েই যাতে ৭৫% আলোচনা হয় তার বিধান। রাষ্ট্রপতি সংসদে গয়ে নির্বাচনি মেনিফেস্টোর বাস্তবায়ন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে বাধ্যতামূলক আহ্বান জানাবেন এবং বিশেষ বিশেষ ব্যাপারে চ্যালেঞ্জ জানাবেন।
এই সময় নিয়ন্ত্রণ সংসদ সচিবাল্য এবং স্পিকারের অফিস মেন্টেইন করবেন এবং এই তথ্য নির্বাচন কমিশনে পাঠাবেন।
চ। নির্বাচন কমিশন মেয়াদের ২ বছর পূর্তিতে একজন সংসদের কাজের প্রোগ্রেস এর সাথে উনার ইশতেহারের অঙ্গীকার নামা মিলিয়ে দেখবেন। নূন্যতম ৫০% কাজ শুরু না হলে এবং ২৫% কাজ সম্পাদন না হলে উনাকে ওয়ার্নিং দিবেন, সতর্কতা সহ পাবলিক প্রজ্ঞাপন জারি করবেন। মেয়াদের ৩ বছর পূর্তিতে ইশতেহারের ৭৫% কাজ শুরু এবং ৫০% কাজ সম্পাদিত না হলে সংশ্লিষ্ট এম্পিকে চুড়ান্ত সতর্কতা জারি করে আবারো পাবলিক প্রজ্ঞাপন দিবেন। মেয়াদের ৪ বছর পূর্তিতে ইশতেহারের ৯০% কাজ শুরু এবং ৭৫% কাজ সম্পাদিত না হলে উক্ত এম্পির আসন শূন্য ঘোষণা করে ৯০ দিনের মধ্যে উপনির্বাচন দিবেন যেখানে উক্ত প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতা করতে পারবেন না। এই ডিস্ক্রেডিট অনুসারে মূল দলের পরবর্তি নির্বাচনে আসন সংখায় কমে যাবে। মানে যতগুল ইম্পিচ হবে তত আসনে মূল দল প্রার্থী দিতে পারবে না।
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সমূহ মাথা তুলে দাঁড়াক!
বাংলাদেশ এগিয়ে যাক!
©somewhere in net ltd.