নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নাথিং মাচ। আপাতত বেকারত্বের অভিশাপে জর্জরিত ^_^

ফজলে মাহ্‌বুব জয়

ফজলে মাহ্‌বুব জয় › বিস্তারিত পোস্টঃ

কনফরমিটি বনাম মোরালিটি -১

২৪ শে অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৩:০১


সময়টা জানুয়ারি। সেদিন আমার ড্রাইভিং লাইসেন্স এর পরিক্ষা। লার্নারস সার্টিফিকেট এ যে ডেট দেওয়া সেই ডেট অনুযায়ী চলে গিয়েছি পরিক্ষা দিতে। শুরতে এক্টু করে বলে নেই পরীক্ষার লে আউট। পরীক্ষা তিন ধাপে। প্রথমে ২০ মার্কস এর লিখিত। পাস ১২ এবং সময় ২০ মিনিট। পরীক্ষা দেওয়ার আগেই আপনার লার্নারস তারা নিয়ে নিবে। পাস করলে ফেরত দিবে এবং আপনি ভাইভা দিতে যাবেন। ভাইভা তে রোড সাইন নিয়ে দু তিনটা প্রশ্ন, এরপর প্র্যাক্টিকাল। জনতা, এই প্র্যাকটিকাল এক্সামই অথোরিটির হাতিয়ার তথা ঘুষ হাতিয়ে নেওয়ার পন্থা। কিভাবে?
প্র্যাক্টিকাল এক্সামে আপনাকে ব্যাক গিয়ার এ পার্ক করতে হবে; দু দিকে তিনটি পতাকা দেয়া চিহ্নিত স্থানে। যদি একটি পতাকাতেও গাড়ি স্পর্শ করে তবে আপনি ফেইল। আমি আগে দেখেছি মানুষকে এই এক্সাম দিতে। ৫০ জন এক্সাম দিলে ৪৯ জন ফেইল করে। যে একজন পাশ করে, বিশ্বাস করেন আর নাই করেন, পুরাই লাক। আপনার ড্রাইভিং স্কিল এখানে প্রযোজ্য নহে। কাহিনিটা কি তাহলে? একটু পরে বলছি।
আমার লিখিত পরীক্ষার সময় অনুযায়ী আমি উপস্থিত যথাস্থানে। ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব আছেন, আছেন অফিসিয়াল আরো অনেকে। সবাইকে খাতা দেওয়া হল। এক্সাম শুরু। একটু পরেই, একজন আসলেন এটেন্ডেন্স শিট নিয়ে। সেখানে আমার রোল নেই। শুরু হল ঘটনা। উল্লেখ যে, আমি কোন প্রকার ঘুষ দেইনি।
তিনি বলছেন আপনার রোল কই? আমি লার্নারস এ লিখা রোল দেখালাম। তিনি বললেন, এটা না। পাশের জনেরটা দেখালেন। ওখানে প্রিন্টেড রোল কেটে দিয়ে কলমে লিখা একটি নাম্বার দেখতে পেলাম। তিনি বললেন ওটা কই। আমি বললাম, ওটার কি মর্ম আমি জানি না। আমার রোল দেখেন। ডেট দেখেন। সবই ঠিক আছে। আমার এক্সাম টাইমও এখন। তিনি বললেন, আপনার রোলতো এটেন্ডেন্স শিটে নাই। আমি বললাম, সেটা আপনাদের দেখার বিষয়। তিনি বললেন আমাকে অফিসে গিয়ে যোগাযোগ করতে। আমি ভেবে দেখলাম ২০ মিনিটের এক্সাম এখনি শেষ হয়ে যাবে। অফিসে গেলে আর হয়েছে আমার এক্সাম দেওয়া। আমিও তেড়িয়া হয়ে বললাম, যাব অফিসে কিন্তু পরীক্ষাটা আগে দিয়ে নেই। তিনি তবুও গাই গুই করছিলেন। কিন্তু পেছন থেকে ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব বললেন, থাক, এক্সাম দিতে দাও। পরে দেখা যাবে।
যাগগে, আমি এক্সাম দিয়ে অপেক্ষা করছি। অফিসে গিয়েছিলাম, তারা বলল কিছু হয়নি। আপনি এক্সাম দিতে পারবেন। আমার মনে হয়ে তারা ভাবছিলেন যে তুরুপের তাসটা তাদের হাতেই; ফেইল এই ছেলে করবেই।
আমি সাত পাচ ভাবছিলাম। মনে হচ্ছিল লিখিততেই পাস করাবে না। আমি মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি যে খাতা চ্যালেঞ্জ করব। ১২ তে পাস, আমার ১৮ টা সিউর কারেক্ট। একটু পর একজন সব লার্নারস নিয়ে এসে বিলি করে দিছছে। একজন একজন করে রোল ডেকে যাচ্ছে আর দিছছে। আমার রোল আসছেই না। প্রায় শেষের দিকে আমি নিজেই এগিয়ে গেলাম। এগিয়ে যেতেই, লোকটা আমার কার্ড বের করে দিল। নিজ থেকেই। বলল, এইযে রোল নাম্বার ছাড়া কার্ড। আর সাথে সাথে আশপাশ হতে বিস্ময়সুচক অভিব্যক্তি। এর আগ পর্যন্ত শুধু অফিসিয়ালরাই জানতেন যে আমি ঘুষ দেইনি। এখন আমার সাথের পরীক্ষার্থীরাও জেনে ফেললেন আর শুরু হল আমার বিভীষিকাময় কয়েকটি ঘন্টা।
সেদিন আমি টের পেলাম কনফরমিটি ব্যপারটা কতটা মারাত্মক। কেউ ইনিয়ে বিনিয়ে জিজ্ঞাস করছে ঘুষ কেন দেইনি। কেউ বলছে পাস তো করাবে না। টাকা ছাড়া কেউ পাস করতে পারে না। একজন তো রাগের স্বরে জিজ্ঞাস করে বসল কেন টাকা দেই নাই, কি সমস্যা। সবাই টাকা দিছে, আপনার টাকা দিতে কি হয়? জাগ্রত জনতা বিশ্বাস করেন আর নাই করেন, সেদিন ওখানে আমি ছাড়া বাকি সবাই ঘুষ দিয়েছে !!!
ভাইভা দিলাম, পার হয়ে গেলাম। অপেক্ষা এখন প্র্যাকটিকেল এর। ম্যানুয়াল গিয়ারের সেকেলে গাড়িতে এক্সাম নেওয়া চলছে। ফেইল ফেইল ফেইল। আমি অপেক্ষা করছিলাম অটো গিয়ার এর জন্য। ম্যানুয়ালে হালকার উপর ঝাপসা চালাতে পারি। কিন্তু যে গাড়ি দেখছি, ওটা কথায় কথায় বন্ধ হয়ে যায়। ওটা দিয়ে এক্সাম দিতে গেলে আমি সিউর ফেইল। কিছুক্ষন পর দিল অটো গাড়ি। আমিও ভদ্র ছেলের মত লাইনে গিয়ে দাঁড়ালাম। একজন একজন করে দিচ্ছে, ফেইল। আমি ভাবছি কাহিনি কি কে জানে। এমনিতে আমার নিজের উপর যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস আছে। লাইসেন্স নাই, কিন্তু গাড়ি তো আর নতুন চালাই না। তবুও মনটা খচ খচ করছিল। ইঞ্জিনিয়ারিং মাইন্ড বুঝেনই তো। অন্যরা এক্সাম দেওয়ার সময়ই আমি মনে মনে হিসেব করে করছিলাম, কোন জায়গায় এসে টার্ন নিলে গাড়ি ঠিক ঠাক ঢুকবে। বলাতো যায় না, কি কাহিনি আছে ভিতরে। নাতো সবাই এভাবে ফেইল করে কেন।
এক্সাম দিতে যাওয়ার আগেও শালার পেইন। বার বার আমাকে পিছনে ঠেলে দিচ্ছে। এর আগেও আমাকে বেশ কয়েকবার হেনস্থার শিকার হতে হয়ছে, বাহুল্য মনে হয়েছে তাই উল্লেখ করিনি। মোদ্দা কথা, আপনি কেন সৎ, কেন আপনি সৎ পথে আছেন... এ জন্য আপনার কপালে হাজার ভোগান্তি।
যাই হোক, শেষ মেষ গাড়িতে বসতে পারলাম। গাড়িতে বসেই আমার চক্ষুচড়কগাছ। এর আগে একবার ফেবুতে লিখেছিলাম যে, They make hundred & ten percent sure of your failure. সাইড মিরর এমন ভাবে ফিট করা ওখানে আকাশ দেখা যায়। যে পতাকা দেখে আমি অবস্থান বিবেচনা করব উহা ওখানে অদৃশ্য। ঠিক করতে গেলাম, ওরে বকুনি! দিক! আমিও তো তেরিয়া কম না। কিন্তু লাভ হল কচু। শালার গ্লাস নড়ানোই সার। আঠা দিয়ে লাগিয়ে দিয়েছে যেন। এই ভাবে কোনদিন পারকিং সম্ভব না। যাদের পারকিং করে আইডিয়া আছে তারা আশাকরি বুঝতে পারছেন।
তো ব্যাপারটা কি দাঁড়ালো? ব্যাপারটা দাঁড়ালো এই যে, প্রচলিত পন্থায় পারকিং অই গাড়িতে সম্ভব নহে। আমিও ভেবে দেখলাম যে, চুলায় যাক ড্রাইভিং বিদ্যা, আমার ইঞ্জিনিয়ারিংই সই। ফেইল হলে হোক। ক্যাল্কুলেশন অনুসারে জায়গামত এসে আল্লহার নামে নিলাম টার্ন, দিলাম এক্সেলেটর এ চাপ। জনতা, গাড়ি থেকে যখন বের হলাম, দেখি দুপাশে সমান সমান ফাঁকা। লাইফের বেস্ট পারকিং করেছি সেদিন।
They were bound to sign on my card & made me pass. I was happy. But I was fool. BECAUSE THE KAHINI DOESN’T END HERE…..

বিঃদ্রঃ অনেকেই আছেন, ঘুষ ছাড়া লাইসেন্স নিয়েছেন। জানিনা আপনাদের অভিজ্ঞতা কেমন। আমি শুধুমাত্র আমার অভিজ্ঞতা লিখেছি।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৩:৪৩

করুণাধারা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ কাহিনী শেয়ার করার জন্য। দয়া করে তাড়াতাড়ি কাহিনী শেষ করে ফেলুন। কারণ আপনার অভিজ্ঞতার আলোকে অনেকেই কর্তব্য ঠিক করতে পারবেন।

২| ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৫:১১

বটপাকুড় বলেছেন: অভিনন্দন,আর আপনার সাহসের প্রশংসা করি, কারণ এভাবে যদি সবাই মনে করে ঘুষ দেয়াটা একরকম অলিখিত নিয়ম, তাহলে দেশ জীবনেও পরিবর্তন হবে না। আপনার মত মানুষের সংখ্যা যখন এই দেশে বাড়বে, দেখবেন সেইদিন এই দেশ বদলে যাবে।
আমি নিজেও অনেক যুদ্ধ করেছি, মাঝে মাঝে ক্লান্ত লাগে। কিন্তু হাল ছাড়বো না
হাটস অফ :#)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.