নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভুল গল্প!

কে বলেগো সেই প্রভাতে নেই আমি!

শুঁটকি মাছ

এই আছি, আবার নাই!!!!

শুঁটকি মাছ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার মহীরূহ হয়ে ওঠা

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:০৬

তখন সম্ভবত ক্লাস থ্রীতে পড়তাম।থাকতাম বরিশালের ব্রজমোহন কলেজ কোয়ার্টারে।ওইবার গ্রীষ্মকালে যতগুলো আম খেয়েছিলাম,তার সবগুলো আঁটি ফেলেছিলাম বাসার পিছনের খালি জায়গায়।আমার খুব ইচ্ছা ছিল,ওই আটিগুলো মাটিতে ফেললে গাছ হবে,তাতে আম হবে।আর সেই আম বিক্রি করে আমি বিশাল ধনী হয়ে যাবো।

আমার এই আমের ব্যবসা করার পরিকল্পনা আর বাস্তবায়িত হয়নি।কারণ তার পরের বছরই আব্বুর ঢাকায় বদলি হয়ে গেল।আমার আমের ব্যবসা করার স্বপ্নও ওখানেই আমাকে টাটা-বাইবাই জানালো।তবে সুখের কথা হল,আমি যখন বরিশাল ছেড়ে চলে আসলাম তখন দেখলাম,আমার ফেলে দেয়া আমের আটিগুলো চারাগাছে পরিণত হয়েছে।

ওই আমগাছগুলোই ছিল বরিশালে ফেলে আসা আমার একমাত্র স্মৃতি।তবে আমার স্মৃতি থেকে বরিশাল কখনই হারিয়ে যায়না।কি অসম্ভব আনন্দময় ছিল আমার শৈশবটা।আমি কখনই সেই সময়টা ভুলতে পারিনা।

প্রতিদিন খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে দল বেধে স্কুলে যেতাম।বাসা থেকে স্কুলটা তেমন দূরে ছিলনা।স্কুলের নাম ছিল আশ্বীনি কুমার শিশু নিকেতন।টিনের চাল দেয়া আধাপাকা স্কুল ঘর।স্কুলে ছাত্রসংখা খুব একটা বেশী না।আমাদের ক্লাসেই ছিল মাত্র ১২ কি ১৩ জন ছেলে মেয়ে।ছাত্র-ছাত্রি কম হলে কি হবে,আমাদের ভিতর পড়ালেখায় তুমুল প্রতিযোগীতা হত।এখনও মনে আছে প্রথম দিন স্কুলে গিয়ে বসেছিলাম তুশির পাশে।ও এখন কই আছে কে জানে?তূরনা,শান্ত,গালিব,মেহেদি,মিহিকা ছিল প্রথম সারির ছাত্র ছাত্রী।ভাল স্টুডেন্ট বলেই কিনা কে জানে,এরা যেন কেমন চুপচাপ থাকত সব সময়।তূরনা আবার ছিল আমার সব চেয়ে প্রিয় বন্ধু।কিন্তু আমরা দুজন একদমই বিপরীত চরিত্রের ছিলাম।তুরনা ছিল একদম নীরিহ ধরনের।আর আমি ছিলাম মারদাঙ্গা কিসিমের।আমার কথার বাইরে কেউ গেলেই তাকে ধোলাই দিয়ে দিতাম।আমার ধোলাই-এর স্বীকার হয়েছিল ক্লাসের সবচেয়ে স্বাস্থ্যবান ছাত্র গালিব।কি কারণে যেন গালিবের গাল ধরে জোরে টান দিয়েছিলাম।এখনও মাঝে মাঝে এটা ভেবে হাসি আসে যে আমি কোন সাহসে গালিবকে মাইর দিয়েছিলাম।ও যদি তখন আমাকে পালটা মার দিত তাহলে তো আমি একদম নাই হয়ে যেতাম।ক্লাসের আরেক ভাল ছাত্র শান্ত।সে আবার ছোটবেলা থেকেই লাভারবয়।সবার সামনে শান্ত বলে বেড়াত যে সে মিহিকাকে ভালবাসে।এতছোট বয়সে ও ভালবাসার কি বুঝতো কে জানে?তবে মিহিকা কিন্তু বেজায় সুন্দর ছিল।প্রতিদিন সুন্দর করে চুলে ঝুটি করে স্কুলে আসত।কাধের ব্যাগে থাকত কার্টুনের ছবি আকা।সব মিলিয়ে একটা ফুটফুতে মেয়ে।ওকে সবাই বেশ আদর করত।কিন্ত ও কেন যেন প্রচন্ড অহংকারী ছিল।তারপর কোনো এক অজানা কারণে মাঝে মাঝেই আমার মিহিকার মত হতে ইচ্ছা করত।কে জানে হয়ত আমি একটু ছেলেদের মত ছিলাম বলেই হয়ত আমার এমন ইচ্ছা হত।আমাদের ক্লাসের ভিতর সবচেয়ে সুন্দর হাতের লেখা ছিল পিকাসোর।আমি মাঝে মাঝেই ওর মত করে লেখার চেষ্টা করতাম।পিকাসো ছবিও আকত খুব সুন্দর করে।ও যখন ছবি আকতো তখন আমরা সবাই ওর আসে পাশে ঘিরে ওর ছবি আকা দেখতাম।আমাদের সবার ধারনা ছিল,পিকাসো জীবনে অনেক বড় হবে।কিন্তু বাস্তবতা খুব বেশি কঠিন।পিকাসো খুব বেশি কিছু করতে পারেনি।জীবনের প্রথম দিকেই বাবাকে হারিয়ে ও অনেকটাই এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল।আমাদের ক্লাসের আরেক প্রতিভাবান ছিল অয়ন।ক্লাস ওয়ানে থাকতেই সে কবিতা লিখতে শুরু করে দিল।ওর প্রথম কবিতার নাম ছিল “ঘুম”।কবিতাটা শোনার পর থেকে আমি অয়নকে ভীষন সমীহ করতাম।অয়ন এখনো কবিতা লেখে।আমি মাঝে মাঝেই ব্লগে ওর কবিতা পড়ি।কবিতা পড়লেই বোঝা যায়,কি ভীষন বিষন্ন একটা অংশ ও সবার কাছ থেকে লুকিয়ে মুখে হাসির রেখা একে রাখে।আমাদের সাথে ডরিন,ইমি,বাপ্পিও পড়ত।ডরিন খুব বুদ্ধিমতি ছিল।আবার একটু দুষ্টও ছিল।আমার দুষ্টমির খুব বিশ্বস্ত সঙ্গী ছিল ডরিন।মেহেদি ছিল আমাদের ক্লাসের সবচেয়ে লক্ষী ছেলে।তারপর ওকে নিয়ে কোনো কথা বলতে কিংবা ওর কথা চিন্তা করতে আমার ভাল লাগে না।ও বড় ওবেলায় আমাদের সবাইকে ছেড়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছিল।



স্কুলের বন্ধুদের সাথে যতটা হৃদ্যতা ছিল,তার চেয়ে বেশী হৃদ্যতা ছিল কোয়ার্টারের ছেলে মেয়েদের সাথে।বিকেল হলেই সবাই খেলতে নামতাম।ফাল্গুনী আপু ছিল আমাদের মধ্য মনি।ফাল্গুনি আপু স্কুল থেকে নানান রকম খেলা শিখে এসে আমাদের তা শিখাতো।ফাল্গুনি আপু ছাড়া আমাদের খেলাই জমতো না।লিসা,তিশা,মুনা ছিল তিন বোন।আমি যেমন ছিলাম ফাল্গুনি আপুর অন্ধভক্ত,ওরা তিন বোন আবার ছিল আমার সাগরেদ।আমি যা করতাম ওরাও তাই করত।মাঝে মাঝে খেলতে খেলতে যদি ঝগড়া লেগে যেত,তাহলে ওরা তিন বোন আমার দলে চলে আসত।এটা নিয়ে আমার আবার চরম অহংকার ছিল।আমাদের সব খেলার সাথিরাই বলতে গেলে মেয়ে ছিল।কেবল সাগর আর প্রতীক ভাইয়াই আমাদের সাথে খেলত।প্রতীক ভাইয়া ছিল ভীষন সরল।মাঝে মাঝেই দেখতাম প্রতীক ভাইয়া আর তার জমজ বোন প্রত্যাশা আপুকে তার বাবা কান ধরিয়ে দাড় করিয়ে রেখেছে।আমরা খুব সহানুভূতি নিয়ে জানালার ফাক থেকে এই দৃশ্য দেখতাম।প্রতীক ভাইয়ার সাথে এখনও আমার ভীষন বন্ধুত্ব।বলতে গেলে প্রতিদিন ফেসবুকে কথা হয়।আমার দেখা এই একটা মানুষ এখনও আগের মতন সরল সেই মনটাকে বাঁচিয়ে রেখেছে।বাকি সবাই কেমন যেন বদলে গিয়েছে।সেই পুরোনো বন্ধুদের সাথে কথা বলে মাঝে মাঝেই অনুভব করি আমি কতটা বদলে গিয়েছি।

গত দুই বছ্র আগে একবার বরিশাল বেড়াতে গিয়েছিলাম।আমার ফেলে আসা আম-গাছের ছোট্ট চারাগুলো এখন মহীরূহে পরিনত হয়েছে।ওই আমগাছগুলো দেখে আবার উপলব্ধি করলাম,আসলেই জীবনের অনেক বড় একটা সময় পিছনে ফেলে এসেছি।আমরা আজকে সবাই মহীরূহ হওয়ার প্রতিযোগীতা সফল।



মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:১২

শুভ্রনীল_প্রতীক বলেছেন: হি হি হি :P :P আগে লাইক দিয়ে দিছি

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:১৪

শুঁটকি মাছ বলেছেন: ভালা কচচেন!! :-B :-B :-B :-B :-B

২| ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:২৩

খেয়া ঘাট বলেছেন: দিনগুলো মোর সোনার খাঁচায় রইলোনা,..........
চমৎকার স্মৃতিচারণ করেছেন।

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:৪৪

শুঁটকি মাছ বলেছেন: আসলেই ঐ দিনগুলোকে খুব বেশি মিস করি।পড়ার জন্য ধন্যবাদ

৩| ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:৩৭

ৎঁৎঁৎঁ বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন, ++++++

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:৪৫

শুঁটকি মাছ বলেছেন: প্লাসের জন্য ধন্যবাদ

৪| ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:৪৪

ক্ষণিক বলেছেন: অসাধারণ লেখা! পড়ার সময় নিজেকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত মনে হচ্ছিল। কান ধরে দাড়িয়ে থাকার বিষয়টা বিনোদনমূলক :D :D

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:৪৭

শুঁটকি মাছ বলেছেন: protik bhaiya-k ami bohubar uncle-er hate dholai kheteo dekhechhilam B-)) B-)) B-)) B-)) B-))

৫| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:০৫

শুভ্রনীল_প্রতীক বলেছেন: লেখক বোধহয় ভুইল্লা গেছে তার থুতু ছিটানির কথা X(( X(( ফাঁস কইরা দিবাম কইলাম

০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:৩২

শুঁটকি মাছ বলেছেন: নট কুল ম্যান..নট কুল X( X( X( X(

৬| ২৮ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ৯:২১

আপেক্ষিক বলেছেন: আমগাছ গুলা বড় হয়েছে... আমি দেখেছি সেদিন :)

২৮ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ৯:২৫

শুঁটকি মাছ বলেছেন: আমরাও তো কম বড় হইনাই।তাই না?

৭| ২৮ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ৯:৩১

ইনকগনিটো বলেছেন: বরিশাল দেখেই পোস্টে চলে আসলাম।


খুব ভালো লাগলো স্মৃতিচারণ। এবার আমিও নস্টালজিক।


ভালো থাকা হোক শু-শু, শুভকামনা।

২৮ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ৯:৫২

শুঁটকি মাছ বলেছেন: আমার পোস্টে বোধহয় আজই প্রথম।আপনার পোস্টগুলোও একদিন পড়েছিলাম।
ভাল থাকবেন।

৮| ২৮ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ৯:৫৬

বোকামন বলেছেন:







স্মৃতিচারণমূলক পোস্টে স্মৃতিময় ভালোলাগা ...

সম্মানিত ব্লগার,
ধন্যবাদ আমাদের সাখে শেয়ার করার জন্য।

ভালো থাকবেন
ব্লগে নিমন্ত্রণ

২৮ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:৪৩

শুঁটকি মাছ বলেছেন: নিমন্ত্রন করার সাথে সাথে চলে গেলাম আপনার ব্লগে।বোকা ভাই,ভাল থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.