![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি যখন জন্ম হলাম ওই বছর আমার আম্মু এমএ পরীক্ষা দেবেন।আম্মু সংসারের কাজ সামলানো আর দুই বাচ্চার দেখাশুনার পর আর সময় পান না।ঐ সময় আমার মামা রাস্তায় একটা সাত-আট বছরের মেয়েকে উদ্দেশ্যবিহীনভাবে ঘুড়ে বেড়াতে দেখে তাকে আমাদের বাসায় নিয়ে আসলেন।মেয়েটার নাম মর্জিনা।মেয়েটা নিজের নাম ছাড়া আর কোনো তথ্যই দিতে পারছে না।আম্মু আব্বু কিছুতেই ঐ অপরিচিত মেয়েকে ঘরে রাখবেন না।আবার ফেলে দিতেও পারছেন না।আব্বু খুব চেষ্টা করলেন মেয়েটার বাবা-মার কাছে মেয়েটাকে পৌছে দিতে।কিন্তু পারলেন না।সেই থেকে মর্জিনা আপু আমাদের সাথেই থাকতে শুরু করল।কিন্তু মর্জিনা আপু এতই ছোট ছিল যে সে কোনো কাজই করতে পারত না।তার মাত্র তিনটা কাজ ছিল।ছাদ থেকে কাপড় নিয়ে আসা,ছোট একটা কলসে করে পানি এনে বড় কলসটা ভরা,আর আমার সাথে খেলা-ধুলা করা।কিছুদিন পর মর্জিনা আপুকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেয়া হল।মর্জিনা আপু সেই থেকে আমাদের পরিবারেরই একজন হয়ে উঠল।আব্বু-আম্মু আমাকে আর ভাইয়াকে শিখিয়ে দিলেন যাতে বাইরের কারো কাছে আমরা মর্জিনা আপুকে বোন বলে পরিচয় দেই।সব মিলিয়ে মর্জিনা আপু ছিল এক সময়ে আমার সবচেয়ে কাছের মানুষ।আম্মু তার নিজের পড়ালেখা আর ভাইয়াকে পড়ানো নিয়ে এত ব্যস্ত থাকতো যে আমাকে পুরোটা সময় মর্জিনা আপুর কাছে থাকতে হত।এর ভিতরে আব্বু প্রতিনিয়ত মর্জিনা আপুর মা-বাবাকে খোজ করতেন।একটা সময় আব্বু সফল হলেন।বরিশালের একটা প্রত্যন্ত গ্রামে মর্জিনা আপুর মায়ের সন্ধান পাওয়া গেল।তখন আমার বয়স সাত বছর।আপু আমাকে ছেড়ে তার মায়ের কাছে চলে গেল।আপু যখন চলে গেল,তখন আমি আর আম্মু খুব কান্না করলাম।আব্বু চুপ করে বসে রইলেন।তার বছর কয়েকপর আপুর বিয়ে হয়ে গেল।কিন্তু আপুর সাথে এখনও আমাদের যোগাযোগ হয়।যে কোনো উৎসবে আপু আমাদের বাসায় চলে আসে।
মর্জিনা আপুর সাথে খুব ভাল সম্পর্ক থাকার কারণেই কিনা কে জানে,এরপরে আমাদের বাসায় যতজনকে কাজে সাহায্য করার জন্য রাখা হল,তাদের সবার সাথেই আমার চমৎকার সম্পর্ক গড়ে উঠল।মর্জিনা আপুর পর আসল সাহানা।আমার থেকে চার-পাচ বছরের বড়।কিন্তু দেখতে আমার থেকেও ওকে ছোটো লাগত।আমাদের বাসায় ও প্রায় সাত বছর ছিল।সে আবার বেশ পাকনা কিসিমের মানুষ।দেশের সব পাকনামি তার জানা ছিল।আমাকেও পাকনা বানানোর জন্য তার চেষ্টার কোনো অন্ত ছিল না।কিন্তু সত্যি বলতে আমার মাথায় কোনো কালেই ঘিলু খুব বেশি ছিলনা।এই কারণে আমি সাহানার ব্যাপারগুলো ধরতে পারতাম না।সাহানাকে দেখতাম আম্মু সামনে না থাকলেই সে আশে পাশের দোকানের ছেলেদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করত।আমার তখন প্রেম-প্রীতির ব্যাপারগুলো সম্পর্কে তেমন ধারনা ছিল না।তাই আমি যে আম্মুর কাছে এই ব্যাপারটা বলব সেটা মাথাতেই আসল না।কিছুদিন পর সাহানা আমার জীবনের এক অতি গুরুত্বপর্ণ অধ্যায়ের জন্ম দিয়ে দিল।তখন ক্লাস সেভেনে কি এইটে পড়ি।ছাত্রি হিসাবে খুবই মনোযোগী।আম্মুর সারাদিনের ধ্যান-জ্ঞান-সাধনা হল আমাকে পড়ানো।তাই স্কুল-কোচিং-বাসার টিচার বাদে আমার আর কোনো কিছুর সাথে তেমন যোগাযোগ নাই।এমন একটা সময়,সাহানা আমার হাতে একটা চিঠি এনে দিল।তাও যেমন-তেমন চিঠি না।রীতিমত প্রেমপত্র!!!!!!!জীবনে প্রথম পাওয়া প্রেমের প্রস্তাব!
আমি অবাক হয়ে সাহানাকে বললাম, “এইটা কই পাইছো?কে দিছে?”
সাহানা বলল, “সামনের বাসার আসিফ ভাইয়া দিছে।”
আমি বললাম, “আসিফ ভাইয়া কে?”
সাহানার জবাব, “তুমি আসলেই একটা বলদ!সামনের বাসায় যে মোটা কইরা এক ভাইয়া থাকে তারে দেখনাই?”
সত্যি বলতেই আমি আসিফ ভাইয়ারে জিন্দেগীতেও দেখিনাই।সাহানার কাছ থেকে জানতে পারলাম সে নাকি সাহানা যখন ময়লা ফেলতে নিচে গিয়েছিল তখন চিঠিটা হাতে ধরিয়ে দিয়ে আমাকে দিতে বলেছে।আমি সেই চিঠি নিয়ে পড়লাম মহা চিন্তায়।আম্মুকে এই চিঠি দেখালে যদি মাইর দেয়?কি করি!কি করি?চিন্তায় আমার রাতের ঘুম হারাম।পরেরদিন সকালে আম্মু আমাকে করে যখন স্কুলে দিয়ে আসছিল তখন আমি চিঠিটা আম্মুর হাতে দিয়ে কেদেঁ ফেললাম।আম্মু তারপর আমাকে যা যা জিজ্ঞাসা করলেন তার সব কিছুর সঠিক জবাব দিলাম।ঐদিন আম্মু বাসায় ফিরে সাহানাকে সেই ঝাড়ি।আম্মু নির্দেশ দিল যে সাহানার সাথে আমি যেন প্রয়োজন ছাড়া কোনো কথা না বলি।কিন্তু কিসের কি?আমি আর সাহানা আগের মতই কথা বলতে লাগলাম।এর ভিতর একদিন স্কুল থেকে ফিরে দেখি সাহানা বাসা ছেড়ে পালিয়েছে।অনেক খোজাখুজির পর সাহানাকে পাওয়া গেল এক বস্তিতে।সে নাকি তার প্রেমিকের সাথে পালিয়েছে।সাহানার প্রেমিককে খুজে বের করে জিজ্ঞাসা করা হল সে সাহানাকে বিয়ে করবে কিনা।সাহানার প্রেমিক সাহানাকে বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানালো।তারপর সাহানাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হল।এরপর শুনলাম,সাহানা ওর নিজের বাড়ী থেকেও পালিয়ে গিয়েছে।
তারপর থেকে আর আমাদের বাসায় পারমানেন্ট লোক রাখা হত না।শিরিন নামের এক মহিলা আমাদের বাসায় অনেকদিন কাজ করল।তার এক ছেলে ছিল।নাম মিরাজ।মিরাজও ওর মায়ের সাথে আসত।মিরাজের বয়স ছিল তিন বছর।মিরাজের সাথে আমার সেই রকম সম্পর্ক।মিরাজও আন্টি বলতে অজ্ঞান।প্রতিদিন সকালে উঠে ওর মায়ের সাথে আমাদের বাসায় চলে আসত।এসেই ওর প্রথম ডায়ালগ ছিল, “নানি,খিদা লাগজে!!!মজা দেও!!!”
আম্মুও ওকে সাথে সাথে খাবার দিয়ে দিত।কিছুদিন পর আমি মিরাজকে একটা বই কিনে দিলাম।সে সেই বই নিয়ে প্রতিদিন আমার কাছে পড়তে বসত।তবে কষ্টের কথা হল,মিরাজ মোটেই মেধাবী ছিল না।পড়াশুনায় তার প্রচন্ড চেষ্টা থাকার পরও সে পারত না।এক এক সময় অধৈর্য হয়ে ওকে চড় দিতাম।ভাবতাম হয়তো ও ফাকিবাজি করে।কিন্তু পরে বুঝতে পারলাম মিরাজের সমস্যা অন্য কোথাও।মিরাজের বয়স যখন সাত বছর তখন ওর মা আমাদের বাসার কাজ ছেড়ে গারমেন্টসে ঢুকল।
এরপর আমাদের বাসায় আসল পারভিন আন্টি।তার ভয়াবহ মানসিক সমস্যা।কিন্তু তখন আম্মুর একজন সাহায্যকারী না হলেই না।কারন ভাইয়ার বিয়ে!বাসা ভরতি মেহমান।পারভিন আন্টি কারো সাথেই তেমন কথা বলেন না।কিন্তু কাজ করেন।তার রান্না এক কথায় অসাধারন।কারো সাথে সে কথা না বললেও আমার প্রতি সে খুব বেশি মমতা দেখাতেন।প্রতি বিকালে নিজে থেকে এসে আমার চুল বেধে দিতেন।মাঝে মাঝে চুলে তেল দিয়ে চুপচুপা করে দিতেন।আমিও কিছু বলতাম না।কারন আমরা ইতিমধ্যেই তার জীবন সম্পর্ক খোজ নিয়েছিলাম।
পারভিন আন্টি একসময় গারমেন্টসে কাজ করতেন।ওখেনাই এক লোকের সাথে তার পরিচয় হয় এবং তারা বিয়ে করেন।লোকটার বাড়ি ছিল রাঙ্গামাটি।বিয়ের পর আন্টীর পর পর দুই ছেলে হয়।সংসার বেশ ভাল চলছিল।কিন্তু এর ভিতরে একদিন তার ছোটছেলের মৃত দেহ পাওয়া যায়।কিভাবে ছেলেটা মারা গেল কেউ জানে না।ছেলেটা মারা যাওয়ার সাথে সাথেই পারভিন আন্টি খুব অস্বাভাবিক আচারণ শুরু করেন।সবাই বলতে লাগল তাকে জ্বীনে ধরেছে।কিছুদিন পারভিন আন্টি গুম মেরে বসে থাকতেন আর কাজ করতেন,আবার কিছুদিন পাগলামী করতেন।তার স্বামী তার বড় ছেলেকে সাথে নিয়ে পারভিন আন্টিকে ছেড়ে চলে গেলেন।
আমাদের বাসায় আসার মাস খানেক আন্টি ভাল ছিলেন।ভাল বলতে কথা বলতেন না,কিন্তু কাজ করতেন।কিন্তু কিছুদিন পর শুরু হল তার তান্ডব।সবার সাথে খারাপ ব্যবহার করতে লাগলেন।একটা ব্যাপার খেয়াল করলাম,সে কিছুতেই আব্বু-আম্মু,ভাইয়া-ভাবিকে দেখতে পারেন না।সত্যি বলতে বিবাহিত কোনো মানুষকেই তিনি দেখতে পারতেন না।আব্বু কিছুদিন পর আম্মুকে বলল যেন আম্মু পারভিন আন্টিকে মানসিক ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান।আম্মু পারভিন আন্টিকে ডাক্তার দেখালেন।ডাক্তার কিছু ঘুমের ঔষধ ছাড়া আর কিছুই দিলেন না।সাথে সাথে আম্মুকে এটাও বলে দিলেন যে এই রোগী কখনও সুস্থ্য হবে না।
আম্মু পারভীন আন্টিকে বাড়ি পাঠিয়ে দিলেন।বাড়ি পাঠানোর সময় তাকে তার বেতন দিয়ে দেয়া হলে সে তা কিছুতেই নিলেন না।যাওয়ার সময় আমাকে জড়িয়ে ধরে ভিষন কাদলেন।তারপর কারো সাথে কোনো কথা না বলে চলে গেলেন।
আমিও বেশ কিছুদিন পারভিন আন্টির জন্য বেশ মন খারাপ করলাম।তারপর এক সময় ভুলেও গেলাম।আসলে এদের কাছ থেকে তো আমাদের আর কিছু পাওয়ার নাই।তাই ভুলে যাওয়াটাও কষ্টের ব্যাপার না।
সত্যি বলতে এই মানুষগুলো এত উপকার করে,তারপরেও আমাদের মনে তাদের জন্য কোনো স্থান সৃষ্টি হয়না ।পরবর্তীতে আমরা এদের কোন খোজ নেয়ারও প্রয়োজন বোধ করিনা।সবসময় আমরা এদেরকে পরগাছা ভেবে ভুলে যাই।এরাও তাই হারিয়ে যায় এদের পথেই।
০৯ ই মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৪:৪০
শুঁটকি মাছ বলেছেন: চোর ধরছিল কেডা?তুমি?
২| ০৯ ই মার্চ, ২০১৩ দুপুর ২:৫৯
s r jony বলেছেন: আমি আগেই বলেছি, আপনার লেখা স্টাইল অনেক ভাল।
এবার সেম স্টাইলে গল্প লেখা শুরু করুন, ভাল লাগবে।
০৯ ই মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৪:৪৩
শুঁটকি মাছ বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।
আসলে কেবলই তো ব্লগিং শুরু করলাম।এখনও ওভাবে পরিপক্ক হয়ে উঠিনি।তবে গল্প লেখার ইচ্ছা আছে।কিছুদিন পরই শুরু করে দেব।সাথে থাকবেন
৩| ০৯ ই মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৩:৫৫
ক্ষণিক বলেছেন: সময় বড়ই নিষ্ঠুর। সময় সর্বদাই স্মৃতিকে ধুয়ে নিয়ে যায়। ছোট স্মৃতি, বড় স্মৃতি, না ভোলা স্মৃতি সব .......
খুবই ভাল লাগলো লেখাটা পড়ে। বিশাল +++
০৯ ই মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৪:৪৪
শুঁটকি মাছ বলেছেন: ধন্যবাদ!!!!!!ধন্যবাদ এবং ধন্যবাদ
৪| ০৯ ই মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৩৫
মাক্স বলেছেন: সুন্দর!
গুছিয়ে লিখেছেন।
৩য় ভালোলাগা!!
০৯ ই মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:২৮
শুঁটকি মাছ বলেছেন: ধন্যবাদ।আপ্নারা উৎসাহ দেন বলেই লেখার সাহস পাই।
©somewhere in net ltd.
১|
০৯ ই মার্চ, ২০১৩ দুপুর ২:২১
শুভ্রনীল_প্রতীক বলেছেন: আমার তেমন এক্সপেরিয়েন্স নাই। তবে ছোটবেলায় নাকি এক মধ্যবয়স্ক মহিলাকে রাখা হয়েছিলো আমাদের দেখাশুনা করতে। সে আমাদের জন্যে রাখা দুধ নিজেই খেয়ে নিতো। ধরা খাওয়ার পর তার জবাব ছিলো, দুধ-ভাত না খেলে নাকি তার ক্ষিধা মেটেনা