![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছোটোবেলা থেকে কখনই আমার বুদ্ধি-সুদ্ধি তেমন বেশি ছিল না।বোকা-সোকা টাইপ বাচ্চা ছিলাম।যে যা বলত তাতেই বিশ্বাস করতাম।আর এই সুযোগটাই নিত আমার ভাইয়া।সে সব সময় বলত, “আম্মু-আব্বু নাকি আমাকে রাস্তা থেকে কুড়িয়ে নিয়ে এসেছে”।তারপরই আমি এমন কান্না-কাটি শুরু করতাম যে আমাকে কিছুতেই থামানো যেত না।সে এই ভয়াবহ অবস্থা।আম্মু আনেক চেষ্টা করেও আমার কান্না থামাতে না পেরে আমাকে ক্ষেপানোর জন্য ভাইয়াকে আচ্ছামত মাইর দিত।ভাইয়াকে মার দিতে দেখলে আমি আবার ভয়ে শান্ত হয়ে যেতাম।
ভাইয়া আমার চেয়ে সাত বছরের বড়।তারপরও ওর সাথে আমার খোচাখুচি লেগেই থাকত।খুব সামান্য ব্যাপার নিয়ে ঝগড়া বাধিয়ে ফেলতাম।আর ভাইয়াও ছিল যেন একটা সাক্ষাত ইবলিস।সামান্য সাবানের খোসা নিয়েও ঝগড়া বাধিয়ে দিত।ঝগড়ার এক পর্যাইয়ে লেগে যেত মারামারি।তারপর আমার গগন বিদারী কান্না আর আম্মুর মার খেয়ে তা সমাপ্ত হত।
আমার সবসময় মনে হত,কেন যে আল্লাহ আমাকে একা বানালো না।ভাইয়া না থাকলে যে কি মজা হত!সব কিছু আমার।কোনো ভাগিদার নাই।
আল্লাহ আমার দোয়া বোধহয় প্রায় কবুল করে ফেললেন।একদিন ভাইয়া আম্মুর মার খেয়ে ঘর থেকে পালিয়ে গেল।ভাইয়াকে না পেয়ে আম্মু-আব্বু তো পেরেশান।আর আমি খুশিতে আগডুম-বাগডুম।আজ থেকে আমার আর কোন শত্রু নাই।আমিই এই সম্রাজ্যের একমাত্র অধিকর্তা।প্রথমেই ভাইয়ার জিনিসগুলো হাতালাম।ভাইয়ার ডাকটিকিটের এলবামটা দেখলাম।ভাইয়া কখনই আমাকে এই জিনিসটা ধরতে দেয় না।তারপর এক এক করে কয়েন বক্স,কমিক্স বই,স্টিকারের প্যাকেটগুলো দেখলাম।সকালটা খুবই ভাল কাটল।দুপুরের দিকেই আমার কেমন কেমন জানি লাগা শুরু করল।পুরা ঘর কেমন খা-খা করে।ওদিকে আম্মু আব্বু ভাইয়াকে খুজেই পাচ্ছে না।আমিও খুব চিন্তায় পড়ে গেলাম।ভাবলাম যে এই বার যদি ভাইয়াকে পাই তাহলে আর ঝগড়া-ঝাটি করব না।যাইহোক,শেষ পর্যন্ত ভাইয়াকে পাওয়া গেল।ভাইয়েকে পাওয়ার পরদিনই আমি আমার ঝগড়া না করার পরিকল্পনা ভুলে গেলাম।পরের দিন থেকেই সমান তালে মারা-মারি শুরু।
ক্লাস সেভেনে ভাইয়া ক্যাডেট কলেজে চলে গেল।যাওয়ার আগে ভাইয়া আমাকে ওর স্টাম্পবুক,কয়েনবক্স,কমিক্স,গল্পের বই,স্টিকারের প্যাকেট সবই দিয়ে গেল।ইণ্টারে পড়ার সময় যখন বাংলায় কবিগুরুব ছুটি গল্পটা পড়তাম,তখন ফটিকের সাথে ভাইয়ার খুব মিল খুজে পেতাম।
ভাইয়া ক্যাডেট কলেজে যাওয়ার পর আমার অন্য এক জীবন শুরু হল।সারাদিন একা একা থাকতাম।ভাইয়ার সাইকেলটা ধরে দাড়াতাম,ভাইয়ার বিড়ালটাকে আদর করতাম,স্টাম্পবুকটা উল্টেপাল্টে দেখতাম।সত্যি বলতে ততদিনে আমি ভাইয়ার মর্ম বুঝে গিয়েছি।ভাইয়া প্রতিদিন স্কুল থেকে আসার সময় স্কুল থেকে দেয়া টিফিনটা না খেয়ে নিয়ে আসত।ভাইয়া ক্যাডেট কলেজে যাওয়ার পর আমি সেই সব কিছু মিস করছিলাম।ভাইয়ার কাছে মাঝে মাঝে ভাংগা লেখা নিয়ে চিঠি লিখতাম।খুবই সংখিপ্ত চিঠি।ভাইয়ার কোনো কোনো দিন চিঠির উত্তর দিত।ভাইয়ার জন্য সারা মাস জুড়ে ভালো ভালো চকলেটগুলো রেখে দিতাম।প্যারেন্স ডে-তে নিয়ে যেতাম।ভাইয়া বাসায় আসলে আর আগের মত ঝগড়া-ঝাটি হত না।আবার সেই হৃদ্যতাও কমে গেল।একসময় ভাইয়াকে আমার খুব দূরের মানুষ মনে হতে লাগল।এভাবেই ছয় সাত বছর কেটে গেল।ভাইয়া ক্যাডেট কলেজ পর্ব শেষ করে বাসায় আসল।প্রথম দিকে আমি বা ভাইয়া কেউই কারো দিকে খুব একটা ঘেষতাম না।কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই কি হল কে জানে?আমি আর ভাইয়া দুইজন দুইজনের পরম বন্ধু হয়ে গেলাম।এক সময় যে সম্পর্কটা কেবলে ভাই-বোনের ছিল,তাতে খুনসুটি যোগ হয়ে অন্য এক মাত্রা পেল।ভাইয়ার ওই সময় খুব পড়ার চাপ ছিল।আমার সামনে পরীক্ষা।আম্মু আব্বু আমাদের গল্প করতে দেখলেই বকা দিত।আর আমাদেরও গল্প শেষই হয়না।তাই দুইজন মিলে নতুন প্লান করলাম।আম্মু আব্বুকে বললাম,রাত জেগে পড়ব।যেই আম্মু-আব্বু ঘুমিয়ে পড়ত,অম্নি দুইজন মিলে গল্পের ঝুড়ি খুলে বসতাম।কত গল্প।সিনেমার গল্প,কোচিং-এর গল্প,বন্ধুদের গল্প আরো কত কি!কিন্তু সুখ বেশীদিন সইল না।ক্যাডেট থেকে আসার ছয় মাসের মাথায় ভাইয়া বি-এম-এ-তে চলে গেল ট্রেইনিং-এর জন্য।যাওয়ার আগে দুইজন দুইজনকে ধরে ফুপিয়ে কাদলাম।ভাইয়া শক্ত মানুষ।সে কান্নাটা সহজেই সামলে নিল।কিন্তু আমি তো বোকা।আমার কান্না থামেই না।রাস্তায় দাঁড়িয়ে নাক ফুলিয়ে কাদতেই লাগলাম।
দুইবছর পরই ভাইয়া আবার ঢাকায় চলে আসল।এইবার ভাইয়াকে একটু বেশি পরপক্ক মনে হল।সারাটা দিন মোবাইল নিয়েই পরে থাকে।আমি একদিন রাগ করে জিজ্ঞাসা করলাম, “ঐ তুই এতো মোবাইল টিপিস ক্যান?”
আমার প্রশ্নের জবাবতো দেয়ই না বরং রহস্যময় হাসি মারে।আমিও কি ছেড়ে দেয়ার পাত্রি নাকি?গোয়েন্দাগিরি করে কয়েকদিনের ভিতরই সব রহস্য বের করে ফেললাম।আমার ভাই দেখি বড় হয়ে গিয়েছে।তার ছোট বেলার এক স্কুল ফ্রেন্ডের সাথে চুটিয়ে প্রেম করছে।যাই হোক ধরা খাওয়ার পর সে বাসায় আসা বন্ধ করে দিল।তাকে অনেক কষ্টে বাসায় আনা হল।এর চার বছর পর ভাইয়ার সেই ফ্রেন্ডের সাথেই বিয়ে হল।ভাবি আসার পর বাসার পরিবেশ আরো আমুদে হয়ে উঠল।সম্প্রতি আরো একজন সদস্য বেড়ে গিয়েছে।আমার ভাস্তি সুহা।
আজকাল,প্রায়ই ছোটবেলার কথা মনে পড়লে হাসি আসে।একটা সময় ছিল,যখন ভাইয়াকে একটা আপদ মনে হত।আর এখন মনে হয় প্রাণের বন্ধু।আসলে বয়সের পরিপক্কতার সাথে সাথে হয়তো সম্পর্কগুলোও পরিপক্ক হয়।ভালবাসার বন্ধনগুলো আরো দৃঢ় হয়।ভাইয়ার প্রতি যে কি একটা টান!ভাইয়া যে কোন অবস্থায় ভাল থাকুক।এরচেয়ে বেশি প্রার্থনা আর কিছু নিয়েই করিনা।তুই ভালো থাকিস ভাইয়া।
০১ লা এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১২:০২
শুঁটকি মাছ বলেছেন: হাহহাহাহাহা
আপ্নের দেয়া ফটুকখানও সেইরাম হইছে ভাই।
২| ৩১ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১০:১৬
বোকামন বলেছেন:
“পরিপক্কতার সাথে সাথে হয়তো সম্পর্কগুলোও পরিপক্ক হয়” ....
পরিপক্ব পোস্ট +
আপনারা সবাই ভালো থাকুন ....
০১ লা এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১২:০৩
শুঁটকি মাছ বলেছেন: ধন্যবাদ বোকাভাই!
আপ্নিও পরিবারের সবাইকে নিয়ে ভাল থাকবেন।
৩| ৩১ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১০:৫০
*কুনোব্যাঙ* বলেছেন: লগ আউট হয়ে গিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম আজ আর লগিন করব না। বাট আপনি লগিন করিয়েই ছাড়লেন। আমারো একটি ছোট্ট বোন আছে। আমার সবচাইতে বড় বন্ধু।
অনেক ভালো লাগল। আপনাদের পরিবারের জন্য অশেষ শুভ কামনা।
০১ লা এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১২:০৬
শুঁটকি মাছ বলেছেন: কুনা ভাই,আপ্নিও একদিন আপনার ছোট আপুকে নিয়ে লিখে ফেলুন।আমরা আপনাদের ছোট বেলার গল্প শুনতে চাই।
৪| ৩১ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:০১
ক্ষণিক বলেছেন: মাতা-পিতার সাথে সন্তানের সম্পর্কের পরেই হলো ভাই-বোনের সম্পর্ক। পোস্টটা পড়ে আর কোন সন্দেহই রইলো না।
অনেক অনেক সুভকামনা রইলো। ++++
প্রিয়পোস্টে এ্যাড দিতে দেরি করলাম না।
০১ লা এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১২:০৯
শুঁটকি মাছ বলেছেন: তোমার জন্য আফসুস!!!
অনেক অনেক ধন্যবাদ।
৫| ৩১ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:১৭
আজ আমি কোথাও যাবো না বলেছেন: খুব ভালো লাগলো! +++++++++++
০১ লা এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১২:১০
শুঁটকি মাছ বলেছেন: ধন্যবাদ যাবো না ভাই!!!!!!!!!!!!!!!
৬| ১০ ই মে, ২০১৩ রাত ১:২১
সানফ্লাওয়ার বলেছেন: আপনার পরিবারের সবার জন্য শুভকামনা
১০ ই মে, ২০১৩ রাত ১০:২৮
শুঁটকি মাছ বলেছেন: ধন্যবাদ।।আপনি ও আপনার পরিবারের সবাইও ভাল থাকবে।
৭| ১৫ ই মে, ২০১৩ বিকাল ৩:২৫
গ্য।গটেম্প বলেছেন: ভাল
১৫ ই মে, ২০১৩ বিকাল ৪:০৫
শুঁটকি মাছ বলেছেন: ধন্যবাদ
৮| ১৮ ই মে, ২০১৩ ভোর ৬:৫০
নীল আদ্রিতা বলেছেন: লেখাটা ভাল্লাগসে...
১৮ ই মে, ২০১৩ সকাল ১০:১৫
শুঁটকি মাছ বলেছেন: ধন্যবাদ আপু!!!!!!!
৯| ০৬ ই জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০০
ইরফান আহমেদ বর্ষণ বলেছেন:
প্রিয়তে।
ভাই বোন থাকার মজাগুলি বুঝলাম
০৬ ই জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৪৯
শুঁটকি মাছ বলেছেন: ওরে বাবা!!!!!
নিজের লেখা কারো প্রিয়তে দেখলে নিজেরে খুব বড় বড় লাগে!!!!!
©somewhere in net ltd.
১|
৩১ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১০:১৫
ইমরাজ কবির মুন বলেছেন:

সুন্দর লিখা, ভাল্লাগসে